প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

আন্তর্জাতিক অভিধম্ম দিবসের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 17 OCT 2024 12:56PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি,  ১৭  অক্টোবর, ২০২৪

 

নমো বুদ্ধায়া !

সংস্কৃতি মন্ত্রী শ্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত জি, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী কিরেন রিজিজু জি, ভদন্ত রাহুল বোধি মহাথেরো জি, প্রণম্য ইয়াংচুক ছোদেন জি, মহাসঙ্ঘের সকল বিশিষ্ট সদস্যগণ, মাননীয়গণ, কূটনীতিক জগতের সদস্যগণ, বৌদ্ধ বিদ্বৎজন, ধম্মের অনুসরণকারীরা, মহোদয়া এবং মহোদয়গণ

আরও একবার আন্তর্জাতিক অভিধম্ম দিবস অনুষ্ঠানের অঙ্গ হতে পেরে আমি সম্মানিত। অভিধম্ম দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শুধুমাত্র সহমর্মিতা এবং শুভেচ্ছা দিয়ে আমরা পৃথিবীকে একটি ভালো স্থানে পরিণত করতে পারি। ২০২১-এ কুশিনগরে একই অনুষ্ঠান হয়েছিল এবং আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার। আমার সৌভাগ্য, ভগবান বুদ্ধের সঙ্গে আমার সংযোগের যাত্রা শুরু হয়েছিল আমার জন্ম থেকে এবং তা চলেছে অবিচ্ছিন্নভাবে। আমি গুজরাটের ভাদনগরে জন্ম নিই। যে জায়গাটি ছিল বৌদ্ধ ধর্মের মহান কেন্দ্র। এই অনুপ্রেরণার মধ্যে আমি ধম্ম এবং বুদ্ধের বাণী প্রচারে অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।

গত ১০ বছরে বহু ঐতিহাসিক বৌদ্ধ তীর্থক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। নেপালের লুম্বিনী ভগবান বুদ্ধের জন্মস্থল থেকে শুরু করে মঙ্গোলিয়ায় মূর্তির আবরণ উন্মোচন থেকে শ্রীলঙ্কায় ভেষক উদযাপনে অংশ নেওয়া পর্যন্ত। আমি বিশ্বাস করি সংঘ এবং সাধকদের ঐক্য ভগবান বুদ্ধের আশীর্বাদের ফল। আজ অভিধম্ম দিবস উপলক্ষ্যে আমি আপনাদের সকলকে এবং ভগবান বুদ্ধের সকল অনুসরণকারীকে আমার শুভেচ্ছা জানাই। আজ শারদ পূর্ণিমার পবিত্র উৎসব। আজকের দিনটি ভারতের মহা ঋষি বাল্মীকি জিরও জন্মবার্ষিকী। সেই উপলক্ষ্যে আমি সমগ্র দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানায়।

মাননীয় বন্ধুগণ,

এ বছর অভিধম্ম দিবসের উদযাপনের সঙ্গে একটি সাফল্যও জড়িত। ভগবান বুদ্ধের অভিধম্মে এই ঐতিহ্য পালি ভাষায় উচ্চারিত হয়েছিল বিশ্বে, সেটিকে এই মাসেই ভারত সরকার ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেইজন্য আজকের দিনটি আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে। ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে পালির এই স্বীকৃতি ভগবান বুদ্ধের মহান পরম্পরার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। আপনারা সকলে জানেন ধম্ম অভিধম্মের অন্তর্ভুক্ত। ধম্মের নির্যাস বুঝতে পালি ভাষার জ্ঞান জরুরি। ধম্মের অর্থ- বুদ্ধের বার্তা, বুদ্ধের নীতি... ধম্মের অর্থ, মানব অস্তিত্ব সংক্রান্ত প্রশ্নের সমাধান... ধম্মের অর্থ মানবতার জন্য শান্তির পথ... ধম্মের অর্থ, বুদ্ধের প্রাসঙ্গিক শিক্ষা... এবং ধম্মের অর্থ, সমগ্র মানব সমাজের জন্য কল্যাণের নিশ্চয়তা। সমগ্র বিশ্ব ভগবান বুদ্ধের ধম্ম দ্বারা আলোকিত। 

কিন্তু বন্ধুগণ,

দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ প্রাচীন পালি ভাষা যে ভাষায় ভগবান বুদ্ধের বাণী প্রচারিত হয়েছিল, তা এখন সাধারণজন ব্যবহার করে না। ভাষা শুধুমাত্র যোগায়োগের মাধ্যম নয়, ভাষা মানব সভ্যতা এবং সংস্কৃতির অন্তরাত্মা। প্রত্যেকটি ভাষার নিজস্ব নির্যাস আছে। সেইজন্য আমাদের দায়িত্ব পালি ভাষাকে সজীব রেখে ভগবান বুদ্ধের বাণীগুলিকে তার প্রকৃত অর্থে সজীব রাখা। আমি খুশি যে আমাদের সরকার বিনয়ের সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করেছে। আমাদের বিনীত প্রয়াস, ভগবান বুদ্ধের লক্ষ লক্ষ অনুসরণকারী এবং হাজার হাজার শ্রমণের প্রত্যাশা পূরণ করা। আমি আপনাদের সকলকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য অভিনন্দন জানায়।

মাননীয় বন্ধুগণ,

ভাষা, সাহিত্য, শিল্প, আধ্যাত্মিকতা। দেশের এই সম্পদগুলি তার অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করে। সেই কারণে পৃথিবীর কোনো দেশ যদি কয়েক বছরের পুরনো কিছু আবিষ্কার করে, সে সেটিকে সারা বিশ্বের সামনে প্রদর্শন করে গর্বের সঙ্গে। প্রত্যেকটি দেশ তার ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজের অস্তিত্বকে যুক্ত করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ক্ষেত্রে ভারত অনেক পিছিয়ে। স্বাধীনতার আগে আক্রমণকারীদের লক্ষ্য ছিল ভারতের পরিচয়কে মুছে দেওয়া আর স্বাধীনতার পরে যারা ঔপনিবেশিক মানসিকতা নিয়ে শাসনভার গ্রহণ করে তাদেরও তাই মানসিকতা ছিল। ভারতে এমন একটি পরিমণ্ডলের সৃষ্টি হয় যা দেশকে উল্টো দিকে নিয়ে যায়। বুদ্ধ ভারতের আত্মায় বসবাস করেন এবং বুদ্ধের প্রতীক যা ভারতের প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়েছিল স্বাধীনতার সময় তাকে ভুলে যাওয়া হয়েছিল পরবর্তী দশকগুলিতে। সাত দশক লেগে গেল পালি ভাষাকে তার মর্যাদার আসন ফিরিয়ে দিতে। 

কিন্তু বন্ধুগণ, 

দেশ এখন হীনম্মন্যতাবোধ থেকে মুক্ত এবং এগিয়ে চলেছে আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মানের সঙ্গে। ফলে দেশ এখন বড় বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। সেইজন্য আজ পালিকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মারাঠিও পেয়েছে একই সম্মান। একটি সুন্দর সমাপতন এই যে ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর যিনি বৌদ্ধ ধর্মের মহান অনুসরণকারী, তিনি পালি ভাষায় ধম্মের দীক্ষা নিয়েছিলেন। তাঁর মাতৃভাষা ছিল মারাঠি। একইরকমভাবে আমরা বাংলা, অসমিয়া এবং প্রাকৃতকেও ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছি।

বন্ধুগণ,

ভারতের এই ভাষাগুলি আমাদের বৈচিত্র্যকে লালন করেছে। অতীতে প্রত্যেকটি ভাষা আমাদের দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। দেশের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি এই ভাষাগুলিকে সংরক্ষণের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। দেশের যুব সমাজ মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ পাওয়ায় এই ভাষাগুলি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের সংকল্প পূরণ করতে লালকেল্লা থেকে ‘পাঁচ প্রাণ’-এর আদর্শ ঘোষিত হয়েছিল। এর অর্থ- ‘বিকশিত ভারত’ গঠন! ঔপনিবেশিক মনোভাব থেকে মুক্তি! দেশের ঐক্য! কর্তব্যপালন ! এবং আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব ! সেইজন্য আজ ভারত দ্রুত উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্য সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতি পালনে কাজ করছে। আমাদের অগ্রাধিকার ভগবান বুদ্ধ সংক্রান্ত ঐতিহ্যে সংরক্ষণ। বুদ্ধ সার্কিট হিসেবে ভারত এবং নেপালে ভগবান বুদ্ধ সংক্রান্ত স্থানগুলির উন্নয়ন আমরা কেমনভাবে করছি দেখুন। কুশীনগরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়েছে। লুম্বিনীতে বৌদ্ধ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের জন্য আন্তর্জাতিক কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। লুম্বিনীতে বুদ্ধিস্ট ইউনিভার্সিটিতে বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে পড়াশোনার জন্য ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকরের নামে চেয়ার তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আরও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। তিন দিন পরে আমি বারাণসীর সারনাথে বেশ কিছু উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করবো। 

মাননীয় বন্ধুগণ,

বুদ্ধের প্রতি ভারতের বিশ্বাস শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানব সমাজের সেবায় নিযুক্ত। বিশ্বের সব দেশ এবং যাঁদের বুদ্ধের প্রতি বিশ্বাস আছে, তাঁদের একজোট করাই আমাদের লক্ষ্য। এবং এই উদ্দেশ্যে অনেক দেশই যে অনেক অর্থপূর্ণ প্রয়াস চালাচ্ছে তার জন্য আমি আনন্দিত। মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশে পালির ধারাবিবরণী সংকলন করা হচ্ছে। চিরাচরিত প্রথার সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির উপযোগ করা হচ্ছে। ভগবান বুদ্ধ সম্পর্কে আমি আগেও বলেছিলাম- “বুদ্ধ, মানে প্রজ্ঞা আবার বুদ্ধ মানে গবেষণা।”


মাননীয় বন্ধুগণ,

একবিংশ শতাব্দী এবং বর্তমানের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি... বিশ্ব আরও একবার অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। এই রকম সময়ে বুদ্ধ শুধু প্রাসঙ্গিকই নয়, তিনি জরুরি হয়ে উঠেছেন। আমি একবার রাষ্ট্রসংঘে বলেছিলাম : বিশ্বকে ভারত যু্দ্ধ দেয়নি, দিয়েছে বুদ্ধকে। আর আজ আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছি যে সমগ্র বিশ্ব যু্দ্ধে নয়, একমাত্র বুদ্ধেই খুঁজে পাবে প্রার্থিত সমাধান। শত্রুতার দ্বারা শত্রুতার অবসান ঘটে না। বিদ্বেষের অবসান ঘটে ভালোবাসায়, মানবিক সহমর্মিতায়। বুদ্ধ বলেছিলেন, “সকলে সুখী হোক, সকলে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হোক”।

মাননীয় বন্ধুগণ,

২০৪৭ পর্যন্ত আগামী ২৫ বছর অমৃতকাল। এই সময়টি ভারতে উন্নয়নের সময়। এটি হবে বিকশিত ভারত গড়ার যুগ। ভগবান বুদ্ধের বাণী অনুসরণ করেই উন্নয়নের পটচিত্র আঁকা হয়েছে। ভগবান বুদ্ধের এই ভূমিতে সকল মানুষ সম্পদের ব্যবহার নিয়ে সচেতন।  জলবায়ু পরিবর্তনের যে সঙ্কটের মুখোমুখি আজ বিশ্ব, ভারত শুধু নিজের জন্যই নয়, তার জন্যও প্রয়াস চালাচ্ছে। ভগবান বুদ্ধ বলতেন, “যেকোনো ভালো নিজেকে দিয়েই শুরু করা উচিত।” এই বুদ্ধের বাণী আমাদের মিশন লাইফে কেন্দ্রে আছে। 

ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে যে যে জোট গঠন করেছে, তাতে প্রতিফলিত হয়েছে বুদ্ধের আদর্শ। আমাদের প্রতিটি উদ্যোগ বিশ্বের চিরস্থায়ী ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের সরকারের অনেক সিদ্ধান্তই অনুপ্রাণিত হয়েছে বুদ্ধ, ধম্ম এবং সংঘ দ্বারা। আজ যখনই বিশ্ব কোনো সংকটে পড়ে, তখন সবার আগে এগিয়ে যায় ভারত। এটাই বুদ্ধের সহমর্মিতা নীতির প্রসার। তুরস্কে ভূমকম্পই হোক বা শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সঙ্কট অথবা কোভিড-১৯ অতিমারী, ভারতই সবার আগে এগিয়েছে সাহায্য নিয়ে। ভগবান বুদ্ধের অনুপ্রেরণা কাজ করেছে যোগাসন আন্দোলন, মিলেট নিয়ে প্রচার, আয়ুর্বেদ অথবা প্রাকৃতিক চাষের মতো উদ্যোগের পিছনে। 

মাননীয় বন্ধুগণ,

ভারত যেমন উন্নত হওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে তেমনিই শক্ত করছে তার শিকড়কে। আমাদের লক্ষ্য, ভারতের যুব সমাজ নিজদের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে সম্মান করার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একদিন বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। এবং এই উদ্যোগে বুদ্ধের বাণী আমাদের পথ দেখাবে। আমি দৃঢ় বিশ্বাসী, আমাদের সন্ত এবং সন্ন্যাসীদের দিক নির্দেশ এবং ভগবান বুদ্ধের বাণী সম্বল করে আমরা এগিয়ে যেতে থাকবো।

এই পবিত্র দিবসে আমি আপনাদের সকলকে আমার শুভেচ্ছা জানাই। ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে পালি নিয়ে গর্ব করার পাশাপাশি আমাদের সামগ্রিক দায়িত্ব এই ভাষাকে রক্ষা করার এবং প্রসার ঘটানোর। আসুন, আমরা সংকল্প করি এবং সেটি পূরণ করার চেষ্টা করি। এই প্রত্যাশা নিয়ে আমি আরও একবার আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।

নমো বুদ্ধায়া !


    

PG/AP/NS…



(Release ID: 2065955) Visitor Counter : 11