প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

স্বচ্ছ ভারত দিবস, ২০২৪-এর কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর

Posted On: 02 OCT 2024 12:52PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২ অক্টোবর, ২০২৪

 

১৫৫তম গান্ধী জয়ন্তী উপলক্ষে আজ নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ‘স্বচ্ছ ভারত দিবস, ২০২৪’-এর এক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের আজ দশম বর্ষপূর্তি। এই ঘটনার উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন যে এই দিনটি তাঁর কাছে যথেষ্ট আবেগের। কারণ এই দিনটিতেই পূণ্য বাপুজি জন্মগ্রহণ করেছিলেন, আজ আবার এই দিনটিতেই পূর্ণ হল স্বচ্ছ ভারত অভিযানের দশটি বছর। এই ঘটনাকে কোটি কোটি ভারতবাসীর পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে অবিচল অঙ্গীকারের এক প্রতীকি ব্যঞ্জনা বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন যে গত ১০ বছর ধরে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক স্বচ্ছ ভারত অভিযানকে তাঁদের জীবনের একটি অংশ করে তুলেছিলেন। সাফাইমিত্র, ধর্মীয় নেতা, ক্রীড়াবিদ, সেলিব্রিটি জগতের নামীদামী ব্যক্তিত্ব, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সংবাদমাধ্যমগুলি স্বচ্ছ ভারত মিশনকে একটি বড় ধরনের অভিযান করে তুলতে সর্বতোভাবে সহায়তা করেছেন। শ্রমদানের মধ্য দিয়ে ভারতের প্রাক্তন ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতিরা স্বচ্ছ ভারত অভিযানকে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছেন। বর্তমানে দেশের প্রতিটি শহর, গ্রাম ও কলোনিতে পৌঁছে গেছে স্বচ্ছ ভারত গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান। কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের বিভিন্ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীরাও সামিল হয়েছেন স্বচ্ছ ভারত মিশনকে সফল করে তোলার লক্ষ্যে। ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ – এই মন্ত্রকে অবলম্বন করে কোটি কোটি ভারতবাসী উদযাপন করেছেন ‘স্বচ্ছতা পক্ষকাল’। ১৫ দিন ধরে চলা সেবা পক্ষকালে দেশজুড়ে আয়োজন করা হয় ২৭ লক্ষেরও বেশি কর্মসূচি যাতে অংশগ্রহণ করেন ২৮ কোটি মানুষ। এইভাবে এক পরিচ্ছন্ন ভারত গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় যেভাবে দেশের সর্বস্তরের নাগরিক সামিল হয়েছেন, তাতে তাঁদের সকলের উদ্দেশেই কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছতা তথা পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির কাজ শুরু হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে। দেশের বিভিন্ন শহরে এই কর্মসূচির আওতায় গড়ে তোলা হবে জল ও নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে নানা কর্মসূচি। ‘মিশন অমৃত’-এর একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবেই এর সূচনা। 

শ্রী মোদী বলেন, ‘নমামি গঙ্গে’ বা ‘গোবর্ধন প্রকল্প’ – যাই হোক না কেন, এ সমস্ত কিছুই স্বচ্ছ ভারত অভিযানকে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করবে এবং এইভাবেই স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গেই দেশের ভাবমূর্তিও আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। 

প্রধানমন্ত্রী বিশেষ জোর দিয়ে বলেন যে স্বচ্ছ ভারত মিশন আজ থেকে সহস্র বছর পরেও চিরন্তন হয়ে থাকবে। ভারত সম্পর্কে পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে তা চিহ্নিত হবে এক বিশেষ অধ্যায় রূপে। কারণ, সাধারণ মানুষের নেতৃত্বে এবং তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণে স্বচ্ছ ভারত মিশন হল এই শতাব্দীর এক বৃহত্তম সফল জন-আন্দোলন। এই অভিযানের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে দেশের মানুষের অফুরন্ত প্রাণচাঞ্চল্য ও কর্মশক্তি। সেই অর্থে স্বচ্ছতা হয়ে উঠেছে উপলব্ধির এক উদযাপন। স্বচ্ছতা অভিযান যখন শুরু হয়েছিল, তখন হাতে হাত মিলিয়ে লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী তাতে অংশ নিয়েছিলেন। সরকারি কর্মসূচি থেকে শুরু করে বিবাহ বাসর – সর্বত্রই প্রতিধ্বনিত ও অনুরণিত হয়েছে স্বচ্ছতার বার্তা। এমনও দৃষ্টান্ত রয়েছে, যেখানে দেখা গেছে বৃদ্ধ মাতা তাঁর গবাদি পশু বিক্রি করে বাড়িতে নির্মাণ করেছেন একটি শৌচাগার। শুধু তাই নয়, অনেক মহিলাই বিসর্জন দিয়েছেন তাঁদের মঙ্গলসূত্র। কেউবা বিক্রি করেছেন তাঁদের জমিজমা। এমনকি, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তাঁদের পেনশনের একটি অংশ দান করেছেন পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন করে তোলার তাগিদে। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীরাও তাঁদের অবসর বাবদ প্রাপ্য অর্থের কিছুটা অংশ ব্যয় করেছেন এই অভিযানকে সফল করে তোলার কাজে। অথচ, এত বড় সাফল্য বাস্তবায়িত হয়েছে বড় ধরনের কোন প্রচার ছাড়াই। ভারতের প্রকৃত ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে এই ধরনেরই অসংখ্য দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে। একবার মাত্র ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করার যে আহ্বান তিনি জানিয়েছিলেন, তাতে সাড়া দিয়ে অসংখ্য মানুষ চিরাচরিত পাট এবং কাপড়ের ব্যাগ হাতে তুলে নিয়েছেন দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য। 

গত ১০ বছরে চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষও তাঁদের ছবির মাধ্যমে মূর্ত করে তুলেছেন স্বচ্ছতার বার্তাকে। এমনকি তিনি নিজেও তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে কম করে ৮০০ বার বক্তব্য রেখেছেন স্বচ্ছতা বিষয়টির ওপর।

আজ বাপুজির জন্মদিনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছতার এই পথ আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন মহাত্মা গান্ধী দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কালে। 

শ্রী মোদী বলেন, আজ থেকে ১০ বছর আগেও ভারতের ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ প্রকাশ্যে এবং উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কৃত্য সম্পন্ন করতে বাধ্য হতেন যা মানুষের মর্যাদা এবং দেশের ভাবমূর্তির কাছে ছিল যথেষ্ট অসম্মানের। শৌচাগারের অভাবে দিনের পর দিন দুর্দশা ভোগ করতে হয়েছে মা-বোনদের এবং দেশের কন্যাসন্তানদের। সেই পরিস্থিতি ছিল এক কথায় অস্বাস্থ্যকর ও ভয়াবহ। তাই, পরিচ্ছন্নতা রক্ষার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁরা সকলেই সিদ্ধান্ত নিলেন যে আর নয়, এবার যাবতীয় কলুষতা থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। এই বিষয়টিকে জাতীয় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে সরকার শুরু করে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’। কিছুদিনের মধ্যেই কোটি কোটি ভারতবাসী একদা অসম্ভবকে করে তুললেন সম্ভব। দেশে গড়ে উঠল ১২ কোটিরও বেশি শৌচাগার। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছ ভারত মিশনের প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনে হয়ে উঠল এক মূল্যবান পাথেয়। আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হল পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে ভারতের এই অভিযানের। স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রতি বছর ৬০-৭০ হাজার শিশুর জীবনকে রক্ষা করতে পেরেছে বলে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২০১৪ থেকে ২০১৯, ৩ লক্ষ শিশুর জীবন রক্ষা পেয়েছে অপরিচ্ছন্নতার হাত থেকে। ইউনিসেফ-এর প্রতিবেদনেও স্বচ্ছ ভারত মিশনের সাফল্যকে তুলে ধরা হয়েছে। 

স্বচ্ছ ভারত অভিযান শুরু করার ফলে ব্যাপক হারে কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোটি কোটি শৌচাগার নির্মাণের কাজে যুক্ত হয়েছেন শ্রমিক-কর্মীরা। রাজমিস্ত্রী, কলের মিস্ত্রী এমনকি দিনমজুররাও স্বচ্ছতা রক্ষার কাজে যুক্ত হয়েছেন। ইউনিসেফ-এর প্রতিবেদনে প্রকাশ, এ দেশের প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ মানুষ কোনো না কোনভাবে যুক্ত হয়েছেন স্বচ্ছ ভারত মিশনের সঙ্গে। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ফলে আরও বেশি সংখ্যক মহিলা নিজেদের কর্মসংস্থানের সন্ধান পেয়েছেন এইভাবেই। দেশে বর্তমানে স্বচ্ছতা সম্পর্কিত প্রযুক্তির কাজে নথিভুক্ত হয়েছে ৫ হাজারের মতো স্টার্ট-আপ সংস্থা। জল সরবরাহ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বর্জ্য নিষ্কাশন – সমস্ত কাজেই মানুষ কোনো না কোনভাবে তাঁদের রুটি-রুজির সন্ধান খুঁজে পেয়েছেন। এই দশকের শেষে স্বচ্ছ ভারত মিশনের সাফল্যে ৬৫ লক্ষ নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে সারা দেশজুড়ে। 

আজ এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আবসন এবং শহরাঞ্চল বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী মনোহর লাল খট্টর, কেন্দ্রীয় জল শক্তি মন্ত্রী শ্রী সি আর পাটিল, কেন্দ্রীয় আবাসন ও শহরাঞ্চল বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শ্রী তোখান সাহু এবং কেন্দ্রীয় জল শক্তি প্রতিমন্ত্রী ডঃ রাজ ভূষণ চৌধুরি।

 

PG/SKD/DM


(Release ID: 2061304) Visitor Counter : 50