রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়
রাষ্ট্রপতি জাতীয় জেলা ন্যায় পালিকা সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন
Posted On:
01 SEP 2024 7:16PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু আজ (১ সেপ্টেম্বর ২০২৪) নতুনদিল্লিতে সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত দুদিনের জাতীয় জেলা ন্যায় পালিকা সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এই উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্টের পতাকা এবং প্রতীকের আবরণ উন্মোচন করেন।
সমাবেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুপ্রিম কোর্ট বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের বিচার ব্যবস্থার সতর্ক প্রহরী হিসেবে অমূল্য অবদান রেখেছে। সুপ্রিম কোর্টের জন্যই ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা একটি সম্মানজনক স্থানে প্রতিষ্ঠিত। তিনি ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত বর্তমান এবং অতীত দিনের মানুষের অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন যে, স্থাপিত হওয়ার ৭৫ বর্ষপূর্তিতে সুপ্রিম কোর্ট অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে যা মানুষের আস্থা বৃদ্ধি করেছে এবং আমাদের বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে নৈকট্য বাড়িয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন যে, বিচারের প্রতি আস্থা এবং শ্রদ্ধার ভাবনা আমাদের ঐতিহ্যের অঙ্গ। তিনি পূর্বেকার একটি অনুষ্ঠানে তাঁর ভাষণের উল্লেখ করে পুনরায় বলেন যে, মানুষ দেশের প্রত্যেক বিচারপতিকে ভগবান মনে করে। প্রত্যেক বিচারক এবং বিচার বিভাগীয় আধিকারিকদের নৈতিক দায়িত্ব ধর্ম, সত্য এবং ন্যায়কে শ্রদ্ধা করা। জেলাস্তরে এই নৈতিক দায়িত্ব বিচার ব্যবস্থার আলোকপর্তিকা স্বরূপ। জেলাস্তরের আদালত কোটি কোটি নাগরিকের মনে বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে। সেইজন্য সংবেদনশীলতা এবং দ্রুততার সঙ্গে জেলা আদালতের মাধ্যমে কম খরচে মানুষকে ন্যায়বিচার দেওয়া আমাদের বিচার ব্যবস্থার সাফল্যের ভিত্তি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জেলাস্তরে বিচার ব্যবস্থার পরিকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা, প্রশিক্ষণ এবং মানব সম্পদে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু এইসব ক্ষেত্রে আরও অনেক কিছু করার আছে। তাঁর বিশ্বাস, সংস্কারের সর্বক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি চলতেই থাকবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, যে বিচার-ব্যবস্থার সামনে বকেয়া মামলা এবং শ্লথ গতি একটি বড় সমস্যা। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ৩২ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা বকেয়া মামলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভাববার প্রয়োজনীয়তা আছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিশেষ লোক আদালত সপ্তাহের মতো কর্মসূচি মাঝে মাঝেই নিতে হবে। এতে বকেয়া মামলা কমাতে সাহায্য করবে। এই সমস্যায় অগ্রাধিকার দিয়ে সমাদান খুঁজতে হবে সব পক্ষকে। তিনি আনন্দের সঙ্গে উল্লেখ করেন যে, এই সম্মেলনে একটি পর্বে মামলা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বিশ্বাস করেন যে, এই আলোচনায় বাস্তব ফল পাওয়া যাবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন যে, আমাদের সংবিধান পঞ্চায়েত এবং পুর সংস্থার মাধ্যমে স্থানীয় স্তরে আইন প্রণেতা ও কার্যনির্বাহকদের ক্ষমতা এবং দায়িত্ব অর্পণ করেছে। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, আমরা কী স্থানীয় স্তরে বিচার ব্যবস্থাকে এরই তুল্য মনে করতে পারি? তিনি জানান যে, স্থানীয় ভাষায় এবং স্থানীয় পরিস্থিতি মেনে বিচার দেওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে প্রত্যেকের দরজায় বিচার পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্য সফল করতে সহায়ক হতে পারে।
রাষ্ট্রপতি বলেন যে, আমাদের বিচার ব্যবস্থার সামনে এমন অনেক সমস্যা আছে যার সমাধান করার জন্য সকল পক্ষের সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। উদাহরণ স্বরূপ, সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংক্রান্ত বিষয়ে সমাধান খুঁজতে বিচার বিভাগ, সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের একযোগে কাজ করা উচিত।
রাষ্ট্রপতি বলেন যে, ধর্ষণের মতো নৃশংস অপরাধের ক্ষেত্রে যদি এক প্রজন্ম পরে আদালত রায় দেয়, তাহলে সাধারণ মানুষ ভাবতেই পারেন যে বিচার প্রক্রিয়ায় সংবেদনশীলতা কম আছে। তিনি জানান যে, আমাদের সামাজিক জীবনের একটি দুঃখের দিক হল, অনেক মামলার ক্ষেত্রে সম্পদশালী মানুষ অপরাধ করার পরেও নির্ভয়ে খোলামেলা ঘুরে বেড়ায়। অথচ যারা এই অপরাধের শিকার, তাঁরা ভয়ে ভয়ে থাকেন। মনে হয় সেই গরিব মানুষরা যেন কোনো অপরাধ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন যে, গ্রামের গরিব মানুষ আদালতে যেতে ভয় পায়। খুব বাধ্য হয়েই তাঁরা আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। অনেক সময় তাঁরা মুখ বুজে অবিচার মেনে নেন, কারণ তাঁরা মনে করেন ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই করলে তাঁদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। গ্রাম থেকে আলাদতে যাওয়া, সে একবার হলেও তাঁদের কাছে মানসিক এবং আর্থিক চাপের ব্যাপার। এমন পরিস্থিতিতে অনেক মানুষই সেই যন্ত্রণার কথা ভাবতেই পারেন না যা গরিব মানুষকে ভুগতে হয় মামলা স্থগিত রাখার সংস্কৃতির কারণে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে যেভাবে হোক ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন যে, জেলবন্দী মহিলাদের সন্তান, তাঁদের গোটা জীবনটা সামনে পড়ে আছে। তাঁদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার জন্য কী করা যায় এবং কী ভাবে করা যায় তাতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি জানান যে, নাবালক অপরাধীরাও তাদের জীবনের প্রথম দিকে আছেন। তাদের ভাবনা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে ব্যবস্থা নেওয়া, তাদের জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে প্রয়োজনীয় দক্ষ করে তোলা এবং তাদের বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ দেওয়াই হোক আমাদের অগ্রাধিকার।
রাষ্ট্রপতি আনন্দের সঙ্গে উল্লেখ করেন যে, সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার পূর্বাপর প্রতিক্রিয়া সহ রূপায়ণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এতে সংস্থান আছে প্রথমবারে অপরাধীদের এবং যারা সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের মেয়াদের এক তৃতীয়াশ কাটিয়ে জামিনে আছেন, তাদের অব্যাহতি দেওয়ার। তিনি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, এই দ্রুততার সঙ্গে অপরাধীদের বিচারের নতুন ব্যবস্থা রূপায়ণের মাধ্যমে আমাদের বিচার বিভাগ ন্যায়ের নতুন যুগে প্রবেশ করবে।
PG/AP/NS
(Release ID: 2050808)
Visitor Counter : 49