সড়কপরিবহণওমহাসড়কমন্ত্রক

সড়ক দুর্ঘটনা এবং তার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা

Posted On: 07 AUG 2024 1:08PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৭ আগস্ট ২০২৪

 

কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রক বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পুলিশ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতি বছর ‘ভারতে সড়ক দুর্ঘটনা’ শীর্ষক একটি তথ্য প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৪,৭০,৪০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছিল। এর ফলে ১,৫৭,৫৯৩ জন প্রাণ হারান এবং ৪,৬৪,৭১৫ জন আহত হন। 

তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে ৪,৬১,৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়। সে বছর ১,৬৮,৪৯১ জন প্রাণ হারান এবং ৪,৪৩,৩৬৬ জন আহত হন। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রক জাতীয় সড়ক এবং এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা ছাড়াও সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে। ওই বছর এক্সপ্রেসওয়ে সহ জাতীয় সড়কগুলিতে মোট দুর্ঘটনার ৩২.৯৪ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৫১,৯৯৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার ফলে মোট নিহতের ৩৬.২২ শতাংশ, অর্থাৎ ৬১,০৩৮ জনের মৃত্যু হয় এক্সপ্রেসওয়ে সহ বিভিন্ন জাতীয় সড়কে। 

মন্ত্রক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে যখন পরিকল্পনা করে, সেই সময়ে প্রযুক্তি এবং জরুরি পরিস্থিতিতে কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে সেই বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে ১২,৭০৫, ত্রিপুরায় ৫৫২, আসামে ৮,২৪৮ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ২৫৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ২০২২ সালের হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে ১৩,৬৮৬, ত্রিপুরায় ৫৭৫, আসামে ৭,০২৩ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ১৪১টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫,৭১১ জন। ত্রিপুরায় ২১৩, আসামে ২,৯৬৬ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গে ৬,০০২, ত্রিপুরায় ২৪১, আসামে ২,৯৯৪ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ১৯ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে ১১,৯৯৭ জন, ত্রিপুরায় ৭৪১ জন, আসামে ৭,৩৭৫ জন এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ২৬০ জন আহত হন। ২০২২ সালে উপরোক্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে যথাক্রমে ১২,৮৪৩ জন, ৫৪১ জন, ৫,৬৩৭ জন এবং ১৩৬ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। 

পথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেগুলি হল – 
(১) শিক্ষা – পথ নিরাপত্তা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে মন্ত্রক বিভিন্ন সংস্থাকে নানা ধরনের কর্মসূচি পালনের জন্য আর্থিক সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও, প্রতি বছর জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা মাস / সপ্তাহ পালন করা হয়। ইনস্টিটিউট অফ ড্রাইভিং, ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ, রিজিওনাল ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার এবং বিভিন্ন শহরে ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। 

(২) প্রযুক্তিগত বিভিন্ন ব্যবস্থা – প্রতিটি জাতীয় সড়কে পথ নিরাপত্তার বিষয়ে অডিট করা বাধ্যতামূলক। এই অডিট তৃতীয়পক্ষ অর্থাৎ, থার্ড পার্টি অডিটর করে থাকেন। এক্ষেত্রে সড়কের নির্মাণশৈলী, যানবাহন পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। জাতীয় সড়কের যেসব অঞ্চল দুর্ঘটনাপ্রবণ অর্থাৎ ব্ল্যাকস্পট যুক্ত, সেই অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দেশজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনা মূল্যায়ন করার জন্য বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। গাড়ির চালকরা যাতে গাড়ি চালানোর বিভিন্ন প্রতীক এবং নির্দেশনা যথাযথভাবে দেখতে পান, সে বিষয়ে মন্ত্রক প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারি করে। এক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্য দেখা দিলে, ১৯৮৮ সালের মোটর ভেহিকেল্‌স অ্যাক্ট অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

যানবাহনগুলি যাতে সব ধরনের সুরক্ষা বজায় রেখে চলাচল করে তার জন্য বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা হয়। চালকের আসনের পাশের সিটে এয়ারব্যাগ রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মোটর সাইকেলে চার বছরের নীচে কোন শিশুকে নিয়ে যাওয়া হলে তার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে গাড়ির গতি চল্লিশ কিলোমিটারের বেশী হলে চলবে না । এম ওয়ান শ্রেণিভুক্ত গাড়িগুলির চালক ও সহ-চালকের জন্য সিট বেল্ট থাকতে হবে। ‘এম’ এবং ‘এন’ শ্রেণিভুক্ত গাড়িগুলির ক্ষেত্রে অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম বাধ্যতামূলক। গাড়িগুলি চলাচলের উপযুক্ত কিনা, তা নিশ্চিত করতে ফিটনেস টেস্টিং-এ নিয়ে যেতে হবে। ভেহিক্‌ল স্ক্র্যাপিং পলিসি অনুসারে পুরনো যে গাড়িগুলি ব্যবহারের উপযুক্ত নয়, সেই গাড়িগুলি স্ক্র্যাপ করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চললে বিশেষ ছাড় পাওয়া যাবে। বাস তৈরি করার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু নিয়ম অনুসরণ করে চলতে হবে। পণ্যবাহী গাড়িগুলির কেবিনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা রাখা আগামী ২০২৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। 

(৩) বিভিন্ন নিয়ম-বিধি কার্যকর করা – প্রযুক্তি ব্যবহার করে যান চলাচল সংক্রান্ত কোনো নিয়ম যদি কেউ লঙ্ঘন করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ২০১৯ সালের মোটর ভেহিকেল্‌স সংশোধনী আইন মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। মন্ত্রক পথ নিরাপত্তার জন্য বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে নজরদারি সংক্রান্ত নিয়মাবলী প্রকাশ করেছে। এখানে জাতীয় সড়কের যে অংশে যান চলাচল বেশি হয় এবং দেশের বড় বড় শহরগুলিতে যে অংশে জাতীয় সড়ক রয়েছে, সেইসব জায়গায় বৈদ্যুতিন নজরদারি যন্ত্র বসানো হয়ে থাকে। ১৯৮৮ সালের মোটর ভেহিকেল্‌স অ্যাক্ট যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য গত ১০ জুন সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। 

(৪) আপৎকালীন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা – পথ দুর্ঘটনায় কেউ যদি আহত হন, তাহলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে যাঁরা এগিয়ে আসেন, তাঁদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রক আইনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার ঘটিয়েছে। গাড়ির ধাক্কায় আহত ব্যক্তিদের জন্য ১২,৫০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সংস্থান রাখা হয়েছে। পথ দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের নিকটাত্মীয়কে ২৫,০০০ টাকা থেকে ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স, প্যারা-মেডিকেল স্টাফ সহ চিকিৎসাক্ষেত্রের সহায়ক ব্যক্তিদের টোল প্লাজাগুলিতে রাখার ব্যবস্থা করেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের নগদবিহীন চিকিৎসার বন্দোবস্ত করার জন্য জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রক একটি কর্মসূচি তৈরি করেছে। ইতোমধ্যেই আসাম এবং চণ্ডীগড়ে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

রাজ্যসভায় আজ এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে এই তথ্য জানিয়েছেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রী শ্রী নীতীন গড়করি।

 

PG/CB/DM...



(Release ID: 2042777) Visitor Counter : 19