প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের ধন্যবাদ সূচক প্রস্তাবে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর জবাবী ভাষণ

“গত ১০ বছরে আমাদের সরকারের কাজের খতিয়ানের উপর ভারতের জনগণ আস্থা প্রকাশ করেছেন এবং তৃতীয়বারের জন্য সুশাসন অব্যাহত রাখার সুযোগ দিয়েছেন”
“’জনসেবা হি প্রভু সেবা’ অর্থাৎ মানবসেবায় ঈশ্বরের সেবা – এই নীতি অনুসরণ করে নাগরিকদের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার জনগণ আমাদের মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছেন”
“দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন নীতিকে জনগণ সম্মানিত করেছেন”
“তোষণের পরিবর্তে সকলকে সন্তুষ্ট করার জন্যই আমরা কাজ করে চলেছি অর্থাৎ প্রতিটি প্রকল্পের সুযোগ প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে”
“১৪০ কোটি নাগরিকের বিশ্বাস, প্রত্যাশা ও আস্থা উন্নয়নের চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে”
“যখন কোনও দেশ বিকাশের পথে এগিয়ে চলে তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত গড়ে তোলা হয়”
“তৃতীয়বারে আমরা তিনগুণ বেশি গতিতে কাজ করবো, তিনগুণ বেশি শক্তি প্রয়োগ করবো, যাতে তিনগুণ ফল পাওয়া যায়”

Posted On: 02 JUL 2024 8:46PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০২ জুলাই, ২০২৪ 

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের ধন্যবাদ সূচক প্রস্তাবে লোকসভায় জবাবী ভাষণ দিয়েছেন।

সংসদে বক্তব্য রাখার সময় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং বলেন, শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর ভাষণে বিকশিত ভারতের ধারণাকে তুলে ধরেছেন। রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে উল্লেখ করে শ্রী মোদী শ্রীমতী মুর্মুর পরামর্শের জন্য, তাঁকে ধন্যবাদ জানান।  

লোকসভায় গতকাল ও আজ রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর বেশ কয়েকজন সাংসদ তাঁদের বক্তব্য পেশ করেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণ প্রসঙ্গে প্রথমবার নির্বাচিত যেসব সাংসদ বক্তব্য রেখেছেন, শ্রী মোদী বিশেষ করে তাঁদের ধন্যবাদ জানান। নতুন সাংসদদের চিন্তাভাবনা, অভিজ্ঞ সাংসদদের তুলনায় কোনও অংশে কম নয় এবং তাঁদের বক্তব্য এই বিতর্ককে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।  

বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এই সরকারকে নির্বাচিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নাগরিকদের ধন্যবাদ জানান। পর পর তিনবার তাঁরা এই সরকারকে নির্বাচিত করায় তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বিষয়টি গণতান্ত্রিক বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গর্বের বলে অভিহিত করেন। গত ১০ বছরে তাঁর সরকারের কাজের খতিয়ানের উপর ভারতের জনগণ আস্থা প্রকাশ করেছেন এবং তৃতীয়বারের জন্য সুশাসন অব্যাহত রাখার সুযোগ দিয়েছেন। ’জনসেবা হি প্রভু সেবা’ অর্থাৎ মানবসেবায় ঈশ্বরের সেবা – এই নীতি অনুসরণ করে নাগরিকদের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার জনগণ বর্তমান সরকারের মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছেন। স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার খুব কম সময়ে ২৫ কোটি দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্যের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়েছেন। 

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের পর থেকে যে আপোষহীন নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে, তার জন্যই নির্বাচক মণ্ডলী আবারও তাঁদের সরকারকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনেছেন। “আজ সারা বিশ্বের কাছে ভারতের সম্মান বৃদ্ধি হয়েছে প্রত্যেক দেশবাসী ভারতীয় হিসেবে গর্ববোধ করেন”। তাঁর সরকারের প্রতিটি নীতি ও সিদ্ধান্ত দেশের কথা বিবেচনা করে নেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বের ভারতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হয়েছে। তাঁর সরকার ‘দেশ সর্বাগ্রে’ নীতি অনুসরণ করে চলে। সংস্কারের যে প্রক্রিয়া কার্যকর করা হচ্ছে, তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। গত ১০ বছরে সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্রে এবং সর্বধর্মের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গীর নীতি অনুসরণ করে চলেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত দীর্ঘসময় ধরে তোষণ নীতি অনুসরণ করেছে। কিন্তু, এই প্রথম তাঁর সরকার নাগরিকদের সন্তুষ্টির কথা বিবেচনা করে ধর্ম নিরপেক্ষতার পথ অনুসরণ করে চলে। জনগণ তাঁদের এই নীতির প্রতি আস্থা রেখেছেন। দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে যাতে সরকারের প্রতিটি প্রকল্পের সুযোগ পৌঁছে যায়, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এর মধ্য দিয়ে সামাজিক ন্যায় ও ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রকৃত নীতি অনুসরণ করা হয়। আর তাই, পর পর তিনবার দেশবাসী তাঁদের প্রতি আস্থা রেখেছেন। 

শ্রী মোদী বলেন, এবারের নির্বাচনে আরও একবার ভারতবাসীর প্রজ্ঞা ও আদর্শের পরিপূর্ণতা প্রকাশ পেয়েছে। “জনগণ আমাদের নীতি, উদ্দেশ্য ও অঙ্গীকারের প্রতি তাঁদের আস্থা প্রকাশ করেছেন”। বিকশিত ভারত গড়ার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, এবারের নির্বাচনে মানুষ তাতে সমর্থন জানিয়েছেন।  

উন্নত দেশ গড়ার উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনও রাষ্ট্রের বিকাশের মধ্য দিয়েই সেই দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বপ্ন পূরণ হয়, পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের জন্য একটি শক্তিশালী ভিতও গড়ে ওঠে। ভারতবাসীকে উন্নত রাষ্ট্রের সুফল পেতে হবে, যা আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করেছিলেন। বিকশিত ভারত গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে ভারতের গ্রাম ও শহরের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটবে, পাশাপাশি মানুষ গর্ববোধ করবেন। তাঁদের জন্য বহু ধরণের সুযোগ তৈরি হবে। “বিশ্বের উন্নত শহরগুলির সঙ্গে ভারতের শহরগুলিও এক আসনে বসবে”।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকশিত ভারতের অর্থ হ’ল, দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে নানাধরনের সুযোগ সমানভাবে পৌঁছানো এবং দক্ষতা, সম্পদ এবং সম্ভাবনার বিকাশ নিশ্চিত করা। 

সরকার সততার সঙ্গে বিকশিত ভারতের আদর্শকে অনুসরণ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী নাগরিকদের আশ্বাস দিয়েছেন। “২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ে তুলতে আমরা সর্বতোভাবে কাজ করে যাব”। 

প্রধানমন্ত্রী ২০১৪’র পূর্ববর্তী সময়কালের কথা উল্লেখ করেন। সেই সময়ে দেশবাসী আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। হতাশা সকলকে গ্রাস করেছিল। সেই সময়কাল দুর্নীতিতে জর্জড়িত ছিল এবং দেশ নীতিহীনতার পঙ্গুত্বে ভুগছিল। সাধারণ মানুষ সবধরনের আশা ত্যাগ করেছিলেন। গৃহ নির্মাণ, রান্নার গ্যাসের সংযোগ অথবা খাদ্যশস্য সংগ্রহ – সবক্ষেত্রেই উৎকোচ দেওয়া স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়।

২০১৪’র পূর্ববর্তী সময়কালে দেশের নাগরিকরা তাঁদের এই খারাপ অবস্থার জন্য নিজেদের ভাগ্যকেই দোষারোপ করতেন। “এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তাঁরা আমাদের নির্বাচিত করেন”।

শ্রী মোদী বলেন, তাঁর সরকার বিভিন্ন অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করেছে। তিনি সফলভাবে ফাইভ-জি প্রযুক্তির বাস্তবায়ন, সর্বোচ্চ কয়লা উৎপাদন, দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সংস্কারমূলক নীতি গ্রহণ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন নীতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। “সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা হয়েছে”। সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক ভোটদাতা তাঁদের মতাধিকার প্রয়োগ করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৪০ কোটি নাগরিকের বিশ্বাস, প্রত্যাশা ও আস্থা উন্নয়নের চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে”। এই আস্থা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কালে দেশবাসীর মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল, আজ আবার উন্নত রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে তাঁদের সেই মনোভাব প্রতিফলিত হচ্ছে। গত ১০ বছরে ভারতের উন্নয়ন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ ভারত নিজের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা করছে। আমাদের পুরনো রেকর্ড ভাঙতে হবে এবং দেশকে আরও উন্নত করে তুলতে হবে। আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাব”।

গত ১০ বছরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত দশম বৃহত্তম অর্থনীতি থেকে নিজেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে উন্নীত করেছে। খুব শীঘ্রই তা তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল উৎপাদক ও রপ্তানীকারক রাষ্ট্র হিসেবে ভারত আত্মপ্রকাশ করেছে। তাঁর সরকারের বর্তমান সময়ে ভারত সেমিকন্ডাক্টার ক্ষেত্রেও বৃহত্তম উৎপাদক ও রপ্তানীকারক হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

শ্রী মোদী বলেন, দেশ নতুন নতুন মাইলফলক স্পর্শ করছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় পৌঁছচ্ছে। সাধারণ নাগরিকদের জন্য পরিষেবার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৪ কোটি পাকা বাড়ি নির্মিত হয়েছে এবং এই বাড়িগুলি দরিদ্র মানুষদের হস্তান্তর করা হয়েছে। আগামী দিনে আরও তিন কোটি নতুন বাড়ি নির্মিত হবে। মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ৩ কোটি দিদিকে লাখপতি করে তোলা হবে। তৃতীয়বারে তাঁর সরকার তিনগুণ বেশি গতিতে কাজ করবে, তিনগুণ বেশি শক্তি প্রয়োগ করবে, যাতে তিনগুণ ফল পাওয়া যায় বলে প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

শ্রী মোদী বলেন, ৬০ বছর পর, ধারাবাহিকভাবে তিনবার একটি সরকারের ক্ষমতায় আসা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে নাগরিকদের আস্থা প্রতিফলিত হয়। “এই সাফল্য সস্তার রাজনীতি করে অর্জিত হয় না, নাগরিকদের আশীর্বাদ পেলেই এটি অর্জন করা যায়”। দেশবাসী স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতার প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে জনগণের রায়কে তিনি স্বাগত জানান। তাঁর ভাষণে লোকসভা নির্বাচনে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে লোকসভা নির্বাচনে তাঁর দলের বিপুল সাফল্যের প্রসঙ্গটি তিনি উল্লেখ করেন। বিভিন্ন রাজ্যে তাঁদের ভোটের হার বেড়েছে বলেও শ্রী মোদী জানান। “জনতা জনার্দন আমাদের সঙ্গে রয়েছেন”।  

সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বিরোধী দলগুলিকে স্বীকার করে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, মানুষের বার্তাকে উপলব্ধি করতে হবে। জনগণ উন্নয়নকে বেছে নিয়েছেন। বিকশিত ভারতের স্বপ্নকে তাঁরা বাস্তবায়িত করতে চান। উন্নয়ন যাত্রার নতুন উদ্যমে সকলকে একসঙ্গে অংশগ্রহণ করতে হবে। যারা বিশৃঙ্খলা, বিভেদের রাজনীতি অনুসরণ করে এবং আইনকে বুড়ো আঙুল দেখায় – তাদের থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। যারা বিভিন্ন বিষয়ে ভুল বার্তা ছড়াচ্ছে, তাদের সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভ্রান্ত অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করলে দেশে আর্থিক সঙ্কট দেখা দেবে। সংসদের রীতিনীতি বজায় রেখে চলার জন্য তিনি অধ্যক্ষের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলির কাছে আবেদন জানান। সদনের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। অধ্যক্ষকে সংসদে পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন।

জরুরি অবস্থার সময়কালের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, যাঁরা দেশে একনায়কতন্ত্রের পরিবেশ গড়ে তুলেছিলেন, তাঁদের জন্যই নাগরিকরা নির্যাতিত হতেন। এই প্রসঙ্গে মন্ত্রিসভা থেকে বাবাসাহেব আম্বেদকরের পদত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ করেন। বাবাসাহেব বলেছিলেন, সংবিধানে তপশিলি জাতি, পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষদের অধিকার রক্ষার কথা বলা থাকলেও সরকার সেই অধিকার রক্ষা করছে না। জগজীবন রামজি, চৌধুরী চরণ সিংজি এবং সীতারাম কেশরীজির মতো বিশিষ্ট নেতাদের উপর নির্যাতনের প্রসঙ্গটিও তিনি উল্লেখ করেন। 

স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগোয় অভিভাষণের উদ্বৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বামীজী বলেছিলেন, তিনি এমন এক ধর্মের অনুসারী, যে ধর্ম সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয় এবং বিশ্ব জুড়ে যার সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সহিষ্ণুতা এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার মানসিকতার জন্যই ভারতের গণতন্ত্র এবং বৈচিত্র্য আজ বিকশিত। অথচ আজ যেভাবে হিন্দু সম্প্রদায়কে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে এবং এই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। 

ভারতের সশস্ত্র বাহিনীগুলির শৌর্য্য ও শক্তির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কার বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার জন্য বাহিনীগুলিকে উন্নত ও অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রস্তুত থাকার জন্য সরকার সবধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একটি যৌথ কম্যান্ড গড়ে তোলার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এই কাজ আগেই হওয়া উচিৎ ছিল, তবে এখন এটি বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ তৈরি করে সেই পদে নিয়োগের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা হয়েছে। 

আমাদের সশস্ত্র বাহিনীগুলিকে স্বনির্ভর করে তুলতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হাতে নেওয়া হয়েছে, সেই প্রসঙ্গটিও প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই বাহিনীগুলি হবে তারুণ্যে ভরপুর। তাই, বাহিনীগুলিতে তরুণ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার সময়োচিত সংস্কার বাস্তবায়িত করছে। 

শ্রী মোদী যুদ্ধ ক্ষেত্রে যে বিপুল পরিবর্তন এসেছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বাহিনীগুলিকে শক্তিশালী করে তুলতে সরকারের দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন। সমরাস্ত্র অথবা প্রযুক্তি প্রতিটি ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলি দেখা যাচ্ছে, তার মোকাবিলা করতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীগুলিকে শক্তিশালী করে তোলা হচ্ছে।  এই প্রক্রিয়ায় ভুয়ো অভিযোগ আনা অব্যাহত রয়েছে। অথচ, অতীতে দুর্নীতির কারণে সশস্ত্র বাহিনীগুলির দক্ষতা ও শক্তিশালী করে তোলার উদ্যোগ ব্যাহত হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ‘এক পদ – এক পেনশন’ প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে। এই প্রকল্পটি বহু আগেই কার্যকর হওয়া উচিৎ ছিল। কোভিড অতিমারীর সময় নানা সমস্যা সত্ত্বেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সরকার ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করে।

সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই সমস্যাটি সমাধানে তাঁর সরকার অত্যন্ত সক্রিয়। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে না বলে তিনি যুবসম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেছেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্নাতক স্তরে নিট প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। “কেন্দ্রীয় সরকার ইতোমধ্যেই একটি কঠোর আইন বলবৎ করেছে। বাছাই প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে”।

শ্রী মোদী বলেন, গত ১০ বছর ধরে তাঁর সরকার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশকে গড়ে তুলতে, প্রত্যেকের বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করতে, প্রত্যেক দরিদ্র পরিবারের জন্য পাকা বাড়ির ব্যবস্থা করতে, সশস্ত্র বাহিনীগুলিকে আত্মনির্ভর করে তোলার জন্য শক্তিশালী করতে, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানী উৎপাদনে আরও সক্রিয় হতে, ভারতকে পরিবেশ-বান্ধব হাইড্রোজেন হাব হিসেবে গড়ে তুলতে, পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিকীকরণ, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে, উন্নত ভারতের জন্য স্বনির্ভর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে, যুবসম্প্রদায়কে ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণের জন্য দক্ষ করে তুলতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তিনি তাঁর ভাষণে সেগুলি উল্লেখ করেন। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ১৮ বছরের মধ্যে এই প্রথম বেসরকারি ক্ষেত্রে বিপুল কর্মসংস্থান হয়েছে। 

ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বের কাছে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারত উদাহরণ হয়ে উঠেছে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্ব আমাদের সফল ডিজিটাল উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য বিস্ময় প্রকাশ করেছে।

ভারতের উন্নয়ন যাত্রার সময় যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের কাছে দেশের উন্নয়ন সমস্যার কারণ, যারা ভারতের গণতন্ত্র জনবিন্যাস ও বৈচিত্র্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মনে হচ্ছে, ভারতের উন্নয়নকে ব্যাহত করার জন্য ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং উন্নয়নযাত্রার ভিতকে দুর্বল করতে কোনও কোনও মহল সক্রিয়। এদের সমূলে বিনাশ করতে হবে”। সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে, এ ধরনের শক্তির বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে নাগরিকদের আহ্বান জানান তিনি। “দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকে ভারত কখনই মেনে নেবে না”।  

শ্রী মোদী বলেন, সারা বিশ্ব ভারতের উন্নয়ন যাত্রাকে গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে, পাশাপাশি বিভিন্ন জটিল ব্যবস্থাপনার বিষয়েও খোঁজখবর রাখছে। উন্নত ভারত গড়ে তুলতে সংসদের প্রত্যেক সদস্যের সদর্থক ভূমিকার উপর তিনি গুরুত্ব দেন। “নাগরিকদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে”। বর্তমান সময়কালে ইতিবাচক রাজনীতির গুরুত্বের কথা তিনি উল্লেখ করেন। “আসুন, আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য সুপ্রশাসন এবং বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়গুলি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি”।  

ভাষণ চলার সময়  উত্তর প্রদেশের হাতরাসে পদপিষ্ট হয়ে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের নিকটাত্মীয়দের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানান। দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি। ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যে রাজ্য সরকার সক্রিয় বলে জানান তিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে চলেছেন, যাতে এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে আসা সাংসদদের বিশেষভাবে অভিনন্দন জানান। তাঁরা সংসদ থেকে অনেক কিছু শিখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পরিশেষে, শ্রী মোদী রাষ্ট্রপতিকে অভিভাষণ দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। ধন্যবাদ সূচক প্রস্তাবে সদস্যরা তাঁদের বক্তব্য জানানোয় তিনি সাংসদদেরও ধন্যবাদ জানান। 


PG/CB/SB



(Release ID: 2030432) Visitor Counter : 42