প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্রধানমন্ত্রী উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে কিষাণ সম্মান সম্মেলনে ভাষণ দিলেন, পিএম কিষাণ-এর আওতায় ১৭-তম কিস্তিতে ২০,০০০ কোটি টাকারও বেশি প্রদান করলেন তিনি


বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৩০,০০০-এরও বেশি মহিলাকে কৃষি সখী হিসেবে শংসাপত্র প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী

“একবিংশ শতকে ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি করে তুলতে সমগ্র কৃষি ক্ষেত্রের বড় ভূমিকা রয়েছে।”

“বনাস ডেয়ারী চালু হওয়ার পরে বেনারসের বহু দুগ্ধ উৎপাদনকারীর আয় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে”

Posted On: 18 JUN 2024 6:45PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৮ জুন, ২০২৪

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে কিষাণ সম্মান সম্মেলনে ভাষণ দিলেন।  পিএম কিষাণ-এর আওতায় ১৭-তম কিস্তিতে ৯.২৬ কোটিরও বেশি কৃষককে ২০,০০০ কোটি টাকারও বেশি প্রদান করলেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৩০,০০০-এরও বেশি মহিলাকে কৃষি সখী হিসেবে শংসাপত্র প্রদান করলেন। প্রযুক্তির কল্যাণে দেশের প্রতিটি প্রান্তের কৃষকরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

তৃতীয়বার দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম নিজের সংসদীয় কেন্দ্রে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে পুনরায় নির্বাচনে জয়ী করার জন্য সেখানকার সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি কাশীরই মানুষ হয়ে উঠেছেন বলে সমাবেশে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

সম্প্রতি হয়ে যাওয়া অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন সমগ্র বিশ্বের কাছে ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আরও একবার তুলে ধরেছে বলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৬৪ কোটিরও বেশি মানুষ- যা বিশ্বে নজিরবিহীন। জি৭ শিখর সম্মেলন উপলক্ষে তাঁর সাম্প্রতিক ইতালী সফরের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে ভোটদাতার সংখ্যা জি৭-এর সবকটি দেশের ভোটদাতার সংখ্যার দেড় গুণ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলির ভোটদাতার সংখ্যার আড়াই গুণ। এ দেশের নির্বাচনে মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে ৩১ কোটিরও বেশি মহিলা ভোটদাতা নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন- যে সংখ্যাটি সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার প্রায় সমান। বারাণসীর মানুষ যেভাবে গণতন্ত্রের উৎসবে যোগ দিয়েছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় বলে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য। তাঁকে তৃতীয় বার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত করায় নিজের সংসদীয় কেন্দ্রের ভোটদাতাদের প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান।

পর পর ৩ বার প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার নজির এ দেশে ৬০ বছর আগে শেষ বার তৈরি হয়েছিল- একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ বছর মেয়াদ সম্পূর্ণ করার পর কোনো সরকারের ফের ক্ষমতাসীন হওয়া, মানুষ, বিশেষত যুব সমাজের আস্থারই প্রতিফলন। একে পুঁজি করে তিনি দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজ চালিয় যাবেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

কৃষক, নারী শক্তি, যুব শক্তি এবং দরিদ্র মানুষ উন্নত ভারতের প্রধান স্তম্ভ- ফের বলেন প্রধানমন্ত্রী। একথা মাথায় রেখেই পিএম আবাস যোজনার আওতায় আরও ৩ কোটি বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং পিএম কিষাণ সম্মান নিধির মতো প্রকল্পে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।

সমাবেশে উপস্থিত এবং প্রযুক্তির কল্যাণে এই অনুষ্ঠানে সামিল হওয়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কোটি কোটি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২০,০০০ কোটি টাকা পাঠানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কৃষি সখী উদ্যোগের প্রাসঙ্গিকতাও ব্যাখা করেন। ৩ কোটি ‘লাখপতি দিদি’ তৈরি করতে এ এক বড় পদক্ষেপ বলে তিনি মনে করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিএম কিষাণ সম্মান নিধি বিশ্বের বৃহত্তম সরাসরি সুবিধা হস্তান্তর প্রকল্প হয়ে উঠেছে। এর আওতায় অগণিত কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৩.২৫ লক্ষ টাকারও বেশি পাঠানো হয়েছে, কেবলমাত্র বারাণসীর কৃষক পরিবারগুলিকেই দেওয়া হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা গ্রাহকদের কাছে সরাসরি পৌঁছে দিতে প্রযুক্তি একটি বড় হাতিয়ার বলে প্রধানমন্ত্রী আবারও উল্লেখ করেন। বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার ফলে পিএম কিষাণ প্রকল্পে ১ কোটিরও বেশি কৃষিজীবি নাম লেখাতে পেরেছেন বলে তিনি জানান।

একবিংশ শতকে ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি করে তুলতে কৃষি পরিমণ্ডলের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে ফের মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বের বাজার সম্পর্কে যুক্তিযুক্ত ধারনা তৈরি করা এবং ডাল কিংবা তৈলবীজের মতো শস্যের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অত্যন্ত জরুরি বলে তিনি মনে করেন। ভারতকে বিশ্বের আঙিনায় অন্যতম কৃষিজ পণ্য রপ্তানীকারক দেশ হয়ে উঠতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় ভিত্তিতে তৈরি নানা পণ্য বিশ্বের বাজারে জায়গা করে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে এক জেলা এক পণ্য প্রকল্প এবং প্রতি জেলায় রপ্তানী কেন্দ্র গড়ে তোলার মতো উদ্যোগ বিশেষভাবে সহায়ক। সারা বিশ্বে মানুষের খাবারের টেবিলে অন্তত একটি ভারতীয় পণ্য জায়গা করে নিক- এমনটাই চান প্রধানমন্ত্রী। এজন্য কৃষি ক্ষেত্রেও পরিবেশ বান্ধব নিঁখুত পণ্য (জিরো ডিফেক্ট-জিরো এফেক্ট) তৈরির মন্ত্রে এগোতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কিষাণ সমৃদ্ধি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে মিলেট ও ভেষজ পণ্য উৎপাদন এবং প্রাকৃতিক কৃষির পালে হাওয়া লাগানো সরকারের লক্ষ্য বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মহিলার উপস্থিতি এবং কৃষি ক্ষেত্রে তাঁদের অবদানের কথা উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। তিনি বলেন, কৃষি সখী কর্মসূচি অনেকটা ড্রোন দিদি কর্মসূচিরই মতো। আশাকর্মী কিংবা ব্যাঙ্ক সখী হিসেবে মহিলাদের কর্মদক্ষতা ও অবদানের প্রসঙ্গও উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি সখী কর্মসূচি বর্তমানে ১১টি রাজ্যে চালু রয়েছে।

কাশী এবং পূর্বাঞ্চলের মানুষের প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে তিনি বনাস ডেয়ারী সঙ্কুল, পচনশীল পণ্য সংরক্ষণ কেন্দ্র এবং একীকৃত প্যাকেজিং হাউসের কথা বলেন। বনাস ডেয়ারীর কল্যাণে দৈনিক প্রায় ৩ লক্ষ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে এবং বেনারসে ১৪,০০০-এরও বেশি গোপালক পরিবার এর সঙ্গে যুক্ত বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। আগামী দেড় বছরে এই কর্মসূচিতে আরও ১৬,০০০ গোপালক যুক্ত হবেন বলেও তাঁর মন্তব্য। বনাস ডেয়ারী চালু হওয়ার পর বেনারসের বহু দুগ্ধ উৎপাদকের আয় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মৎস্যজীবীদের কল্যাণে সরকারের উদ্যোগের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা এবং কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের কথা বলেন। চান্দৌলিতে প্রায় ৭০ কোটি টাকা খরচে একটি আধুনিক মাছের বাজার তৈরির কথাও তিনি জানান।

বারাণসীতে পিএম সূর্যঘর মুফত বিজলী যোজনা যেভাবে রূপায়িত হচ্ছে, তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্পে প্রায় ৪০,০০০ স্থানীয় মানুষ নাম লিখিয়েছেন এবং ২,৫০০ বাড়িতে ইতিমধ্যেই সোলার প্যানেল বসে গেছে। আরও ৩,০০০ বাড়িতে সোলার প্যানেল বসানোর কাজ চলছে। এর ফলে বিদ্যুৎ বিলের অঙ্ক শূন্য হওয়া এবং অতিরিক্ত আয়- উভয় সুবিধাই পাচ্ছেন গ্রাহকরা।

বিগত ১০ বছরে বারাণসী এবং আশপাশের গ্রামগুলিতে উন্নয়ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কোনো শহরে এই প্রথম তৈরি হচ্ছে রোপওয়ে। গাজিপুর, আজমগড় এবং জৌনপুরে রিং রোড, ফুলওয়ারিয়া এবং চৌকাঘাটে একাধিক উড়ালপুলের কথা উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। কাশী, বারাণসী এবং ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনের পুনর্গঠন, বাবতপুর বিমান বন্দর, গঙ্গার ঘাটগুলির সৌন্দর্যায়ন, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন পাঠক্রম, শহরের কুন্ডগুলির পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের উল্লেখ করেন তিনি। কাশীতে ক্রীড়া পরিকাঠামোর প্রসার এবং নতুন স্টেডিয়াম যুব সমাজের কল্যাণে বড় পদক্ষেপ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জ্ঞান কেন্দ্র হিসেবে কাশীর প্রসিদ্ধির প্রসঙ্গও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই শহরে ঐতিহ্য এবং আধুনিক নগর উন্নয়ন যেভাবে হাত মিলিয়েছে তা সারা বিশ্বের সামনে এক বড় নজির। এতে শুধু এখানকারই নয়, আশপাশের মানুষও বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রীমতী আনন্দীবেন প্যাটেল, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী শ্রী শিবরাজ সিং চৌহান প্রমুখ।

 

PG/AC/NS



(Release ID: 2026721) Visitor Counter : 13