প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

ইটি নাও গ্লোবাল বিজনেস সামিট, ২০২৪-এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 09 FEB 2024 11:09PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

 

গিয়ানার প্রধানমন্ত্রী শ্রী মার্ক ফিলিপ্স, শ্রী বিনীত জৈনজি, শিল্প জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা, বিভিন্ন সংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকরা, ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ।

বন্ধুগণ, এ বছরে গ্লোবাল বিজনেস সামিটের মূল ভাবনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ‘ডিজরাপশন’ অর্থাৎ, বিঘ্ন ঘটা, ‘ডেভেলেপমেন্ট’ অর্থাৎ, উন্নয়ন এবং ‘ডাইভারসিফিকেশন’ অর্থাৎ, বৈচিত্র্য। আজকে যখন এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়, তখন সকলে একটি বিষয়ে সহমত পোষণ করেন- এখন সময় ভারতের। ডাভোসেও এই একই ভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে। সারা বিশ্বের নীতি নির্ধারকরা সেখানে বলেছেন, ভারত এক অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদাহরণ। এক বিশিষ্টজন একথাও বলেছেন, সারা পৃথিবীতে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে ভারতের শক্তিশালী উপস্থিতি অনুভূত হচ্ছে না। আর তাই, আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে বলেছিলাম – ‘এটিই সময়, সঠিক সময়’। 

বন্ধুগণ,

যেকোনো দেশের সব পরিস্থিতি যখন অনুকূলে থাকে, তখন তার উন্নয়ন যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ভারত সেই সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছে। আজ থেকে হাজার বছর আগের কথা যদি আমরা তুলনা করি, তাহলে দেখব, কালচক্রের সেই ধারা আজ আবারও ফিরে এসেছে। বর্তমানে আমাদের উন্নয়নের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে আর আর্থিক ঘাটতি ক্রমহ্রাসমান। ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ রেকর্ড পরিমাণে হ্রাস পেয়েছ। উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে আর আমাদের যাঁরা সমালোচক, তাঁরা এখন চুপ হয়ে গেছেন। 

বন্ধুগণ,

আমাদের অন্তর্বর্তী বাজেটের প্রশংসা বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যমের বন্ধুরা – সকলেই করেছেন। আমাদের বাজেটের কয়েকটি নীতি রয়েছে। সেগুলি হল - স্থিতাবস্থা ও ধারাবাহিকতা। সঙ্কটের সময়ের পরিস্থিতি যদি কেউ বিবেচনা করেন, তাহলে দেখবেন কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কাল, সারা পৃথিবীর প্রতিটি সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি, দুটি চ্যালেঞ্জেরই কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে তা নিয়ে কারোর কোনো ধারণা ছিল না। সেই সময় প্রতিটি মুহূর্ত আমি জনসাধারণের পাশে থেকেছি। আমরা বিনামূল্যে দরিদ্রদের রেশন সরবরাহ করেছি, দেশে তৈরি টিকার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে যাতে দ্রুত টিকা পৌঁছয় তা নিশ্চিত করেছি। আমরা স্বাস্থ্য এবং জীবিকা – দুটির চাহিদাই সমানভাবে পূরণ করার চেষ্টা করেছি। সরকার মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়েছে। আবার, রাস্তার হকার ও ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছে। সেই সময় অনেকেই বলছিলেন বেশি করে টাকা ছাপাও। এমনকি, একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীও এই একই কথা বলেছিলেন। বিশ্বের অনেক সরকার সেই পথ অনুসরণ করেছিল, কিন্তু তার জন্য ভালো কিছু হয়নি। তবে, আমরা আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার পরিচালনা করেছি এবং মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি।

বন্ধুগণ,

আমরা হচ্ছি কল্যাণকামী রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা যাতে সহজ হয়, তার যাতে মানোন্নয়ন ঘটে, সেদিকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। আমরা নতুন নতুন প্রকল্প চালু করেছি। আবার, ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনমত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগও করেছি। মূলধনী ব্যয় রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার, বাজে খরচের ওপর হ্রাস টানা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ যথাযথ সময়ে শেষ করা হয়েছে। বকেয়া প্রকল্পগুলিকেও আমরা শেষ করেছি।

বন্ধুগণ,

আমাদের সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে দেশের অর্থ সাশ্রয় করেছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হয়েছে। কংগ্রেস সরকারের আমলের ১০ কোটি ভুয়ো সুবিধাভোগীকে চিহ্নিত করে বাদ দেওয়া হয়েছে। একজন প্রধানমন্ত্রী একবার বলেছিলেন, যদি কেন্দ্র থেকে ১ টাকা কোনো প্রকল্পের জন্য দেওয়া হয়, তাহলে সুবিধাপ্রাপকের কাছে মাত্র ১৫ পয়সা পৌঁছয়। আমরা প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর নীতির প্রচলন করেছি। ফলে, এখন প্রত্যেক সুবিধাভোগী, কেন্দ্রের দেওয়া ১ টাকার পুরো ১০০ পয়সাই পাচ্ছেন। সরকারী স্তরে পণ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে আমাদের সরকার গভর্নমেন্ট ই-মার্কেটপ্লেস বা জেম ব্যবস্থার সূচনা করেছে। এর ফলে আমরা ৬৫,০০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি। তেল সংগ্রহের ক্ষেত্রেও আমরা নতুন ব্যবস্থা নিয়েছি, যার ফলে ২৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। কেউ কেউ স্বচ্ছতা অভিযান বা পরিচ্ছন্নতা অভিযান নিয়ে মজা করেছেন। কিন্তু, এই অভিযানের মাধ্যমে সরকারি ভবনগুলি থেকে ১,১০০ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ বিক্রি হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আমরা প্রতিটি প্রকল্পকে এমনভাবে পরিকল্পনা করেছি যাতে দেশের অর্থের সাশ্রয় হয়। আজ জল জীবন মিশনের কারণে দরিদ্র নাগরিকরাও পরিচ্ছন্ন পানীয় জল পাচ্ছেন। ফলস্বরূপ, নানা রকমের অসুখের হাত থেকে তাঁদের রেহাই মিলেছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প দেশের দরিদ্র মানুষদের ১ লক্ষ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। পিএম জন ঔষধি কেন্দ্রগুলি থেকে ৮০ শতাংশ হারে ওষুধের দামে ছাড় পাওয়া যাচ্ছে।

বন্ধুগণ,

আমি শুধু বর্তমান প্রজন্মের কাছেই দায়বদ্ধ নই, আমি আগামী প্রজন্মের কাছেও দায়বদ্ধ। আমি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত জীবন নিশ্চিত করতে চাই। বাড়তি ভোট পাওয়ার জন্য সরকারি কোষাগারকে শূন্য করে দেওয়ার রাজনীতির থেকে আমি বহুদূরে। আপনাদের একটা উদাহরণ দিই। আপনারা জানেন, কিছু রাজনৈতিক দল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে অন্যভাবে ভাবনাচিন্তা করে। তাদের পরিকল্পনাগুলি কার্যকর হলে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। আমার ধারাটি একটু আলাদা। আমাদের সরকার ১ কোটি বাড়ির ছাদে সৌরশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে উদ্যোগী হয়েছে। অর্থাৎ, আমরা জনগণকে এমনভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে বলছি, যার ফলে, তাঁদের বিদ্যুতের বিল শূন্যে নেমে আসবে, এমনকি তাঁরা কিছু আয়ও করতে পারবেন। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে এলইডি বাল্ব ৪০০ টাকায় বিক্রি হত। আমরা পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটিয়েছি। এখন ৪০-৫০ টাকায় এই বাল্বগুলি পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে, ২০ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

এখানে অনেক পুরনো সাংবাদিক বন্ধু আছেন যাঁরা গত ৭ বছর ধরে শুনেছেন, ‘গরীবি হটাও’। এই ধরনের স্লোগান সত্ত্বেও দেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব হয়নি। তবে, ২০১৪ সালে যখন এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে, তখন দারিদ্র্য দূরীকরণের নামে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ অপচয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমি জানি, কিভাবে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। তাই, আমাদের সরকার দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করে চলেছে। ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের নাগপাশ থেকে মুক্ত করা গেছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের প্রশাসন দুটি ক্ষেত্রে সমান্তরালভাবে এগিয়ে চলেছে। একদিকে আমরা বিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা বলছি, অন্যদিকে আমাদের একবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করতে হবে। আমাদের সরকার যেমন ১১ কোটি শৌচাগার নির্মাণ করেছে, আবার মহাকাশ ক্ষেত্রেও নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। আমাদের সরকার ৩০০-র বেশি মেডিকেল কলেজ তৈরি করেছে। আবার, পণ্য ও প্রতিরক্ষা করিডরের নির্মাণ কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। 

বন্ধুগণ,

দেশ-বিদেশের বাণিজ্য জগতের বিশিষ্টজনেরা এখানে উপস্থিত রয়েছেন। আচ্ছা, আপনারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের নিরিখে কিভাবে বিবেচনা করবেন? অনেকেই বলেন, তাঁরা গত বছরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে এ বছরের সাফল্যের হিসেব তুলনা করেন। আমার মনে আছে, যখন আমি সরকার গঠন করেছিলাম, আমাদের আমলা ব্যবস্থাপনার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিই, সেই ব্যবস্থাটিকে ভেঙে নতুন করে দেশকে গড়তে হবে। আজ সারা বিশ্ব আমাদের সেই উদ্যোগের ইতিবাচক ফল দেখতে পাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গত ১০ বছরে এতটাই উন্নতি হয়েছে যা ৭০ বছরের থেকেও বেশি। গত ১০ বছরে আমাদের সরকার ৩০ হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণ করেছে। অথচ, তার আগের ৭০ বছরে এই পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার কিলোমিটার। 

বন্ধুগণ,

২০১৪ সালে ভারতে সাত দশকে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার মেট্রো রেল নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। ২০১৪-র পর আমরা গত ১০ বছরে ৬৫০ কিলোমিটার মেট্রো রেলপথ নির্মাণ করেছি। ২০১৪-র আগে প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থনীতির অবস্থা খারাপ ছিল। বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা দুর্নীতির জন্য ভারত সম্পর্কে ভুল ভাবতেন। নীতি পঙ্গুত্বও এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে ফেলেছিল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে মনে হয়, আশঙ্কাজনক অবস্থায় একজন চিকিৎসাধীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ডাক্তাররা সব আশা ছেড়ে দিয়েছেন।

বন্ধুগণ,

ভারতের উন্নয়ন এক নতুন উচ্চতায় যে পৌঁছেছে, তা আপনারা প্রত্যক্ষ করছেন। আমাদের সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিনীতজি বারবার ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা শীঘ্রই হবে। বিনীতজি অত্যন্ত নম্রভাষী। আপনারা সকলেই তাঁর ওপর আস্থা রাখতে পারেন। হ্যাঁ, আমরা তৃতীয় স্থানে পৌঁছব। আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলছি, আমাদের দেশ বিশ্ব অর্থনীতির প্রথম তিনটি দেশের তালিকায় পৌঁছবে। এর জন্য আপনারা প্রস্তুত হন। তবে, অনেকেই ভাবছেন, যেহেতু আমি একজন রাজনীতিবিদ, তাই আমি এসব কথা বলেই থাকি। কিন্তু এখন যে অভিজ্ঞতা আমি অর্জন করেছি তার নিরিখে বলতে পারি, কোনো কারণ ছাড়া আমি এটি বলছি না। আর তাই, আমি বলছি, তৃতীয় দফায় আরও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ভারত থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য গত দেড় বছর ধরে আমি অনেক নতুন নতুন প্রকল্পের সূচনা করেছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৫ লক্ষের বেশি মানুষ আমাকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। আমি এর আগে কখনও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিনি। এবারই প্রথম আমি তা প্রকাশ করব। এই নিয়ে কাজ চলছে। নতুন ভারত তীব্র গতিতে এগিয়ে চলবে। এটিই ‘মোদীর গ্যারান্টি’। আমি আশা করব, এই শীর্ষ সম্মেলন থেকে অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসবে। অনেক ভালো পরামর্শ আমাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে। আরও একবার আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছিলেন


PG/CB/DM


(Release ID: 2015706) Visitor Counter : 103