প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

মানব কেন্দ্রিক বিশ্বায়ন : কাউকে পিছনে ফেলে না রেখে শেষপ্রান্ত পর্যন্ত জি২০-কে নিয়ে যাওয়া - নরেন্দ্র মোদী, প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 07 SEP 2023 10:41AM by PIB Kolkata

‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ – এই দুটি শব্দের নেপথ্যে রয়েছে এক গভীর দর্শন। এর অর্থ ‘সারা বিশ্ব এক পরিবার’। এ এমন এক সর্বাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি যা সব সীমানা, ভাষা এবং মতাদর্শ অতিক্রম করে সর্বজনীন এক পরিবার হিসেবে আমাদের সকলকে সামনের দিকে এগিয়ে চলার সাহস যোগায়। জি২০-তে ভারতের সভাপতিত্বে এই শব্দবন্ধ মানব কেন্দ্রিক উন্নয়নের আহ্বান হয়ে উঠেছে। এক পৃথিবীর আদর্শকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের গ্রহকে লালন করতে আমরা একত্রিত হয়েছি। এক পরিবার হিসেবে বিকাশের এই সাধনায় আমরা একে অপরের পাশে রয়েছি। আমরা এগিয়ে চলেছি এক অভিন্ন ভবিষ্যতের দিকে – অভিন্ন ভবিষ্যৎ - যা পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত এই সময়ের এক অনস্বীকার্য সত্য।

অতিমারি পরবর্তী বিশ্বের সঙ্গে আগের বিশ্বের কোনো মিল নেই। অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে। 

প্রথমত, জিডিপি কেন্দ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানব কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যাওয়া যে জরুরি, সারা বিশ্ব তা ক্রমশ আরও বেশি করে বুঝতে পারছে।

দ্বিতীয়ত, বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলে স্থিতিস্থাপকতা ও নির্ভরযোগ্যতার গুরুত্ব সারা বিশ্ব অনুভব করছে। 

তৃতীয়ত, বিশ্বজনীন প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্কারের মাধ্যমে বহুপাক্ষিকতার প্রসারের সম্মিলিত আহ্বান ক্রমশই জোরালো হচ্ছে।

জি২০ -তে আমাদের সভাপতিত্ব এই তিনটি ক্ষেত্রের পরিবর্তনেই অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে।

২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা যখন ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছিলাম, তখন আমি লিখেছিলাম যে, জি২০-র মাধ্যমে মানসিকতার পরিবর্তন আনতেই হবে। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলি, দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলি এবং আফ্রিকার প্রান্তিক কণ্ঠস্বরকে মূল ধারায় আনার জন্য এটি প্রয়োজন ছিল। 

আমাদের সভাপতিত্বের অন্যতম প্রধান প্রয়াস হল ১২৫টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত দক্ষিণ গোলার্ধ শীর্ষ সম্মেলনের কণ্ঠস্বরকে তুলে আনা। দক্ষিণ গোলার্ধের বিভিন্ন ধারণা ও মতামত সংগ্রহের ক্ষেত্রে এ ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমাদের সভাপতিত্বে আফ্রিকার দেশগুলির অংশগ্রহণ শুধু বৃহত্তম মাত্রাতেই পৌঁছয়নি, আমরা আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি২০-র স্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার উপরও বিশেষ জোর দিয়েছি। 

আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বের অর্থ হল, আমাদের সামনে থাকা সমস্যাগুলিও পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। ২০৩০ কর্মসূচির মাঝপথে আমরা পৌঁছে গেছি। অনেকেই গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে গতিবৃদ্ধির জন্য ২০২৩ সালে যে জি২০ কর্ম পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের ভবিষ্যৎ দিশা নির্দেশ করবে। 

ভারতে, সুপ্রাচীন কাল থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনধারণের প্রথা রয়েছে। আধুনিক এই সময়েও আমরা জলবায়ু সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপে আমাদের অবদান রাখছি। 

দক্ষিণ গোলার্ধের বিভিন্ন দেশ উন্নয়নের বিভিন্ন স্তরে রয়েছে। জলবায়ু সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপকে অবশ্যই এর পরিপূরক হতে হবে। জলবায়ু সংক্রান্ত যে লক্ষ্য রাখা হবে, তার সঙ্গে অবশ্যই অর্থের যোগান এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কী করা উচিত নয়, তার উপর জোর না দিয়ে গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ভাবা দরকার, কী করা উচিত। 

সুস্থিত ও প্রাণবন্ত নীল অর্থনীতির লক্ষ্যে চেন্নাই এইচএলপি আমাদের মহাসাগরগুলিকে স্বচ্ছ ও নিরাপদ করে তোলার উপর জোর দিয়েছে। 

আমাদের সভাপতিত্বে দূষণমুক্ত স্বচ্ছ হাইড্রোজেন উৎপাদনের এক বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপনা আত্মপ্রকাশ করবে, সেই সঙ্গে থাকবে দূষণমুক্ত হাইড্রোজেন উদ্ভাবনী কেন্দ্র। 

২০১৫ সালে আমরা আন্তর্জাতিক সৌর জোটের সূচনা করেছিলাম। এখন বিশ্বজনীন জৈব জ্বালানি জোটের মাধ্যমে আমরা বৃত্তীয় অর্থনীতির সুবিধার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শক্তির রূপান্তর ঘটাতে সারা বিশ্বকে সাহায্য করবো। 

জলবায়ু আন্দোলনে গতি আনার সেরা উপায় হল, একে গণতান্ত্রিক করে তোলা। একজন ব্যক্তি যেমন তাঁর দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের কথা ভেবে প্রাত্যহিক সিদ্ধান্ত নেন, তেমনি তাঁরা এই গ্রহের দীর্ঘকালীন স্বাস্থ্যের উপর প্রভাবের কথা ভেবে নিজেদের জীবনযাত্রা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও নিতে পারেন। যোগাভ্যাস আজ যেমন সুস্থতার লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে এক গণ আন্দোলনে পরিণত হয়েছে, তেমনি সুস্থিত পরিবেশের লক্ষ্যে নিজেদের জীবনযাত্রা গড়ে তোলার (লাইফ স্টাইলস ফর সাসটেনেবল এনভায়রনমেন্ট - লাইফ) অঙ্গীকার নিতে আমরা বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাও আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মিলেট বা শ্রীঅন্ন এক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হতে পারে। এর মাধ্যমে জলবায়ু উপযোগী কৃষিরও প্রসার হবে। আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষে আমরা পৃথিবীর পাতে মিলেট তুলে দিয়েছি। এক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি সংক্রান্ত দাক্ষিণাত্যের উচ্চস্তরীয় নীতিগুলিও বিশেষ সহায়ক। 

প্রযুক্তি এখন রূপান্তরমুখী, কিন্তু একে অন্তর্ভুক্তিমূলকও করে তুলতে হবে। অতীতে প্রযুক্তির অগ্রগতির সুফল সমাজের সব স্তরের কাছে সমানভাবে পৌঁছয়নি। গত কয়েক বছরে ভারত দেখিয়েছে, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে এই বৈষম্যকে কমিয়ে আনা যায়। 

যেমন ধরুন, বিশ্বজুড়ে যে কোটি কোটি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, অথবা যাঁদের ডিজিটাল অস্তিত্ব নেই তাঁদের আর্থিকভাবে ডিজিটাল জনপরিকাঠামোর পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আমরা আমাদের ডিজিটাল জনপরিকাঠামোয় যে সমাধানের পথ দেখিয়েছিলাম, সারা বিশ্ব আজ তা অনুমোদন করছে। এখন জি২০-র মাধ্যমে আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ডিজিটাল জনপরিকাঠামোর নির্মাণ, গ্রহণ ও মাত্রাবৃদ্ধিতে সাহায্য করবো, এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক বিকাশের পথ প্রশস্ত হবে। 

ভারত যে আজ বিশ্বের দ্রুততম বিকাশশীল বৃহৎ অর্থনীতি হয়ে উঠেছে, তা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। আমাদের সহজ, সরল, সুস্থিত সমাধানগুলি অসহায় মানুষের ক্ষমতায়ন ঘটিয়েছে, প্রান্তিক মানুষেরাই আমাদের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মহাকাশ থেকে খেলাধুলো, অর্থনীতি থেকে উদ্যোগ – ভারতীয় মহিলারা সব ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মহিলাদের উন্নয়নকে তাঁরা মহিলা নেতৃত্বাধীন উন্নয়নে বদলে দিয়েছেন। জি২০-তে আমাদের সভাপতিত্ব লিঙ্গ ভিত্তিক ডিজিটাল ফারাক, শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যবধানের অবসান ঘটিয়েছে এবং নেতৃত্বদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মহিলাদের বৃহত্তর ভূমিকা পালনের পরিসর সৃষ্টি করেছে। 

ভারতের কাছে জি২০-র সভাপতিত্ব কেবলমাত্র উচ্চস্তরীয় কোনো কূটনৈতিক প্রয়াস নয়। গণতন্ত্রের ধাত্রীভূমি এবং বৈচিত্র্যের আদর্শ ভূমি হিসেবে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার দরজা সারা বিশ্বের সামনে খুলে দিয়েছি। 

আজ বড় মাত্রায় কোনো কাজের কথা ভাবা হলে তার সঙ্গে ভারতের নাম যুক্ত হয়ে যায়। জি২০-র সভাপতিত্বও এর ব্যতিক্রম নয়। এটা এখন এক গণ আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। দেশজুড়ে ৬০টি শহরে ২০০-রও বেশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। ১২৫টি দেশের প্রায় ১,০০,০০০ প্রতিনিধি এইসব বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। এর আগে অন্য কোনো দেশের সভাপতিত্বের সময়ে এমন বিপুল ও ভৌগোলিক বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়োজন করা হয়নি। 

ভারতের জনজাতি, গণতন্ত্র, বৈচিত্র্য ও উন্নয়ন সম্পর্কে কারোর কাছ থেকে শোনা এক জিনিস। আর তা নিজে প্রত্যক্ষ করা সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের জি২০ প্রতিনিধিরা এর স্বপক্ষে সাক্ষ্য দেবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। 

আমাদের জি২০ সভাপতিত্ব বিভাজনের সেতুবন্ধনে, প্রতিবন্ধকতা দূর করতে এবং সহযোগিতার বীজ বপন করার লক্ষ্যে প্রয়াস চালিয়েছে। আমরা এমন এক বিশ্বের কথা ভাবি, যেখানে বিভেদকে ছাপিয়ে প্রাধান্য পায় ঐক্য, বিচ্ছিন্নতাকে অবলুপ্ত করে অভিন্ন গন্তব্য। জি২০-র সভাপতিত্ব হিসেবে আমরা বিশ্বকে আরও বৃহত্তর করে তোলার অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, যেখানে প্রতিটি কণ্ঠস্বর মান্যতা পাবে এবং প্রতিটি দেশ তার অবদান রাখবে। আমরা যে শপথ নিয়েছিলাম, আমাদের কাজ এবং ফলাফল তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।

AC/SSS/SD/SKD



(Release ID: 1955332) Visitor Counter : 257