প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়া এনার্জি উইক – ২০২৩ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 06 FEB 2023 3:17PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বাসবরাজ বোম্মাই জি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহকর্মী শ্রী হরদীপ সিং পুরীজি, শ্রী রামেশ্বর তেলী জি, অন্যান্য মন্ত্রীগণ, উপস্থিত মহামান্য রাজদূতগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ।

এই সময়ে আমাদের সকলের দৃষ্টি তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের দিকে নিবদ্ধ। অনেক মর্মান্তিক মৃত্যু এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। তুরস্কের আশপাশের দেশগুলোতেও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সকলের প্রতি ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের সহানুভূতি রয়েছে। ভারত এই ভয়ানক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরণের সাহায্য করতে প্রস্তুত।

বন্ধুগণ,

বেঙ্গালুরু প্রযুক্তি, প্রতিভা এবং উদ্ভাবনের শক্তিতে পূর্ণ একটি শহর। আমার মতো, আপনারাও নিশ্চয়ই এখানে এসে তারুণ্যের অনুপম শক্তি অনুভব করছেন। এটি ভারতের ‘G-20 প্রেসিডেন্সি ক্যালেন্ডার’-এর প্রথম প্রধান ‘এনার্জি ইভেন্ট’বা শক্তি উৎপাদন সংক্রান্ত কর্মসূচি। এবারের এই ‘ইন্ডিয়া এনার্জি উইক’ এ অংশগ্রহণের জন্য ভারতের নানা প্রান্ত ও বিদেশ থেকে আসা সকলকে আমি স্বাগত জানাই, সবাইকে অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আজ ভারত শক্তির রূপান্তরণে, শক্তির নতুন নতুন উৎস বিকাশে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অংশীদার। ভারতে শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রের জন্য অভূতপূর্ব সব সম্ভাবনার উদয় হচ্ছে, যা ক্রমোন্নতির পথে এগিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আপনারা জানেন যে সম্প্রতি আইএমএফ ২০২৩-এর জন্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অনুমান প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে যে এই অর্থবর্ষে ভারত সর্বাধিক দ্রুত অগ্রগামী প্রধান অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে চলেছে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী এবং যুদ্ধের প্রভাব থাকা সত্ত্বেও ২০২২ সালে ভারত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উজ্জ্বল অর্থনৈতিক অবস্থানে রয়েছে। বাহ্যিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অভ্যন্তরীণ স্থিতিস্থাপকতার কারণে ভারত প্রতিটি সমস্যাকে সাফল্যের সঙ্গে সমাধান করেছে। এর পিছনে একাধিক কারণ ক্রিয়াশীল ছিল। প্রথমতঃ, স্থিতিশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সরকার, দ্বিতীয়তঃ, সুদূরপ্রসারী ও টেকসই বেশ কিছু সংস্কার এবং তৃতীয়তঃ, তৃণমূল স্তরে আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ণ।

বিগত বছরগুলিতে দেশের বৃহৎ সংখ্যক সাধারণ মানুষকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে, অসংখ্য মানুষ বিনামূল্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা ও চিকিৎসার সুবিধা পেয়েছে। নিরাপদ শৌচালয়, পয়ঃ-নিষ্কাষণ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ, আধুনিক পরিষেবাযুক্ত আবাসন, নলের মাধ্যমে বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহ এবং অন্যান্য আরও অনেক সামাজিক পরিকাঠামো কোটি কোটি মানুষকে উপকৃত করেছে।

বিগত কয়েক বছরে ভারতের যতো বড় সংখ্যক মানুষের জীবনে এই পরিবর্তন এসেছে, তা অনেক উন্নত দেশের মোট জনসংখ্যা থেকেও বেশি। এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি গরিব মানুষ দারিদ্রসীমা থেকে ওপরে উঠে আসার সুযোগ পেয়েছেন। আজ কোটি কোটি ভারতবাসী দারিদ্রসীমার ওপরে উঠে মধ্যবিত্ত হয়ে উঠেছেন। আজ ভারতে কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপনের উৎকর্ষ এসেছে, তাঁদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে।

আজ গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৬ লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি অপটিক্যাল ফাইবার পাতা হচ্ছে। বিগত ৯ বছরে সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ৯ বছরে দেশে ইন্টারনেট সংযোগ ৩ গুণেরও বেশি বেড়েছে। আজ দেশে শহুরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার তুলনায় প্রতিদিন গ্রামীণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়ছে।

তাছাড়া, ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। এর ফলে ভারতে বিশ্বের সবচাইতে বেশী উচ্চাকাঙ্খী শ্রেণীর মানুষ গড়ে উঠেছে। ভারতের জনগণ এখন উন্নত মানের পণ্য, উৎকৃষ্ট পরিষেবা এবং উন্নত মানের পরিকাঠামো পেতে চান।

ভারতের জনগণের এসব আকাঙ্খাকে বাস্তবায়িত করতে শক্তি উৎপাদন একটি অনেক বড় অনুঘটকে পরিণত হতে চলেছে। ভারতে শিল্পোদ্যোগগুলি থেকে শুরু করে যে কোন অফিস ও কারখানায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে, চাষের ক্ষেতে শক্তির প্রয়োজন ও চাহিদা প্রতিদিন বাড়ছে। ভারতে যত দ্রুতগতিতে উন্নয়ন হচ্ছে, তা দেখে মনে হচ্ছে যে আগামী বছরগুলিতে ভারতে অনেক নতুন নতুন শহর গড়ে উঠতে চলেছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন থেকেও বলা হয়েছে যে, এই দশকে ভারতের শক্তির চাহিদা বিশ্বে সর্বাধিক হবে। আর এই জায়গাতেই আপনাদের মতো বিনিয়োগকারীদের জন্য, শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য ভারত নতুন নতুন সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে।

আজ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতে তেলের চাহিদা ৫ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু এই চাহিদা অদূর ভবিষ্যতে ১১ শতাংশে পৌঁছাতে চলেছে। ভারতে গ্যাসের চাহিদা ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধির অনুমান করা হচ্ছে। আমাদের শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রটি ভারতে যথাযথ বিনিয়োগ এবং একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার ক্ষেত্রে নতুন নতুন অনেক সুযোগ তৈরি করছে এবং আমরা একে আরও সম্প্রসারিত করতে চলেছি।

বন্ধুগণ,

শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে শুরু করে ভারতের রণনীতির চারটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। প্রথমতঃ, আভ্যন্তরীণ উদ্ভাবন এবং উৎপাদন বৃদ্ধি, দ্বিতীয়তঃ, সরবরাহ ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য বৃদ্ধি, তৃতীয়তঃ, ইথানল ও নানারকম জৈব জ্বালানী, কমপ্রেসড বায়ো গ্যাস এবং সৌরশক্তির মতো পরিবর্ত শক্তি কেন্দ্রগুলির বিস্তার আর চতুর্থতঃ, বিদ্যুৎ চালিত যানবাহন এবং হাইড্রোজেন ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে ডিকার্বনাইজেশন। এই চারটি ক্ষেত্রেই ভারত দ্রুতগতিতে কাজ করে যাচ্ছে। আমি আপনাদের কাছে এক্ষেত্রে কিছু বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিত কথা বলতে চাই।

বন্ধুগণ,

আপনারা জানেন যে ভারত বিশ্বে চতুর্থ সর্ববৃহৎ পরিশোধিত শক্তির উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ। ভারতের বর্তমান পরিশোধিত শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৫০ এমএমটিপিএ। এই ক্ষমতা বাড়িয়ে দ্রুতগতিতে ৪৫০ এমএমটিপিএ তে পরিণত করার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের পরিশোধন শিল্পোদ্যোগগুলিকে ক্রমাগত দেশীয়, প্রযুক্তি নির্ভর, অত্যাধুনিক এবং আগের তুলনায় উন্নত মানের করে তুলছি। আমরা আমাদের পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও অত্যন্ত দ্রুত গতিতে কাজ করছি। এখন ভারতের এই উন্নত প্রযুক্তির সম্ভাবনা আর ক্রমবর্ধমান স্টার্টআপ বাস্তুব্যবস্থাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে আপনারা সবাই নিজের নিজের শক্তি উৎপাদনের এলাকা সম্প্রসারিত করতে পারেন।

আমরা চেষ্টা করছি যাতে এলএনজি টার্মিনাল রি-ক্ল্যাসিফিকেশন, ক্ষমতা আরও বাড়ানো যায়। ২০১৪ সালে আমাদের ক্ষমতা ছিল ২১ এমএমসিপিএ। ২০২২ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। একে আরও বাড়িয়ে তোলার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভারতে ২০১৪ সালের তুলনায় সিজিডি-এর সংখ্যাও ৯ গুণ বেড়েছে। আমাদের দেশে ২০১৪ সালে প্রায় ৯০০টি সিএনজি স্টেশন ছিল। এখন এর সংখ্যাও বেড়ে ৫ হাজারে পৌঁছে গেছে।

আমরা গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যেও দ্রুত গতিতে কাজ করে চলেছি। ২০১৪ সালে আমাদের দেশে গ্যাস পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ৩৫ হাজার কিলোমিটারে পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ ভারতে প্রাকৃতিক গ্যাস পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনাদের জন্য বিনিয়োগের অনেক বড় সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

আজ ভারত দেশীয় উদ্ভাবন এবং উৎপাদনকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই উদ্ভাবন ও উৎপাদন ক্ষেত্রটি এখন সেসব ক্ষেত্রেও আগ্রহ দেখাচ্ছে যেগুলিকে আগে অসম্ভব বলে মনে করা হত। এর ফলে ১০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘নো গো এরিয়া’-র বিধিনিষেধগুলি থেকে মুক্ত করা হয়েছে। যদি আমরা পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিই, তাহলে দেখতে পাবো যে এই ‘নো গো এরিয়া’কে আমরা ৯৮ শতাংশেরও বেশি কমাতে পেরেছি। আমি সমস্ত বিনিয়োগকারীদের প্রতি অনুরোধ রাখবো আপনারা এই সুযোগগুলিকে হাতছাড়া করবেন না, নানা রকম জীবাশ্ম জ্বালানী উৎস খুঁজে বের করার ক্ষেত্রেও আপনাদের অংশগ্রহণ বাড়ান।

বন্ধুগণ,

জৈব শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রেও আমরা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছি। গত বছর আগস্ট মাসে আমরা এশিয়ার সর্বপ্রথম টু-জি ইথানল জৈব পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন করেছি। আমাদের প্রস্তুতি এ রকম আরও ১২টি বাণিজ্যিক টু-জি ইথানল প্রকল্প গড়ে তোলা। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ও টেকসই অ্যাভিয়েশন ফুয়েল বা বিমান পরিবহন জ্বালানী আর পুনর্নবীকরণযোগ্য ডিজেলের বাণিজ্যিক উপযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও আমরা কাজ করে চলেছি।

এ বছরের বাজেটে আমরা গোবর্ধন যোজনার মাধ্যমে ৫০০টি নতুন ‘বর্জ্য থেকে সম্পদ’ উৎপাদন প্রকল্প গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছি। এগুলির মধ্যে ২০০টি হবে কমপ্রেসড বায়ো গ্যাস প্ল্যান্ট। আর ৩০০টি হবে কমিউনিটি ক্লাস্টার বেসড্ প্ল্যান। এক্ষেত্রেও আপনাদের সকলের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পথ খুলতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

আর একটি ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে তা হল পরিবেশ বান্ধব হাইড্রোজেন উৎপাদন অভিযান। এই ‘ন্যাশনাল গ্রীন হাইড্রোজেন মিশন’ একবিংশ শতাব্দীর ভারতকে নতুন আলোকবর্তিকা দেখাবে। এই দশকের শেষে আমরা যাতে বার্ষিক ৫ এমএমপিটিএ পরিবেশ বান্ধব হাইড্রোজেন উৎপাদন করতে পারি - সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। এগুলির ক্ষেত্রেও ৮ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত আগামী ৫ বছরে গ্রে হাইড্রোজনের উৎপাদন কমিয়ে ২৫ শতাংশ পরিবেশ বান্ধব বা গ্রীন হাইড্রোজেনের উৎপাদন বাড়াবে। এক্ষেত্রে আপনাদের আরও বেশি করে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।

বন্ধুগণ,

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারির দাম কমানো। আজ বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারির দাম মোট দামের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। এই মূল্য হ্রাসের লক্ষ্যে আমরা ঘণ্টায় ৫০ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন উন্নতমানের রাসায়নিক ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি পিএলআই স্কিম চালু করেছি। দেশে আরও বেশি ব্যাটারি উৎপাদন কারখানা স্থাপন করার এটা একটা খুব ভালো সুযোগ।

বন্ধুগণ,

এক সপ্তাহ আগে পেশ করা এবারের বাজেটে ভারতে এই ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে আমরা আরও শক্তিশালী করেছি। এবারের বাজেটে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন, শক্তি উৎপাদনে ক্ষমতা বৃদ্ধি, টেকসই যানবাহন ব্যবস্থা এবং পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তিগুলিকে আরও উৎসাহিত করেছি। এক্ষেত্রে ৩৫ হাজার কোটি টাকা অগ্রাধিকার সম্পন্ন মূলধন বিনিয়োগের জন্য রাখা হয়েছে যাতে আমরা শক্তিক্ষেত্রে রূপান্তরণ এবং ‘নেট জিরো অবজেক্টিভ’কে আরও জোর দিতে পারি। এবারের বাজেটে আমরা মূলধনী খরচের জন্যও ১০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি। এক্ষেত্রেও পরিবেশ বান্ধব হাইড্রোজেন উৎপাদন থেকে শুরু করে সৌরশক্তি এবং সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নের মতো প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নের গতি আরও বাড়বে।

বন্ধুগণ,

২০১৪ সালের পর থেকে পরিবেশ বান্ধব শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে ভারতের দায়বদ্ধতা এবং ভারতের আন্তরিক প্রচেষ্টা গোটা বিশ্বের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। বিগত ৯ বছরে ভারতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭০ গিগাওয়াট থেকে বেড়ে প্রায় ১৭০ গিগাওয়াটে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রেও সৌরশক্তি উৎপাদন ক্ষমতা ২০ গুণের বেশি বেড়েছে। আজ ভারত বায়ুশক্তি উৎপাদন ক্ষমতার ক্ষেত্রেও বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে।

আমরা এই দশকের শেষে ৫০ শতাংশ অ-জীবাশ্ম জ্বালানী উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছি। আমরা জৈব জ্বালানী উৎপাদনে জোর দিয়েছি। ইথানল মিশ্রণে কাজ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। বিগত ৯ বছরে পেট্রলে ইথানল মিশ্রণের প্রক্রিয়া আমরা দেড় শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে পৌঁছে দিয়েছি। এখন আমরা ২০ শতাংশ ইথানল মিশ্রণের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছি।

আজ এখানে ‘ই-২০ রোলআউট’ করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে দেশের ১৫টি শহরে এটি চালু করা হবে তারপর আগামী দু বছরে সারা দেশে সম্প্রসারিত করা হবে। অর্থাৎ ই-২০ ক্ষেত্রটিও আপনাদের জন্য সারা দেশে একটি অনেক বড় বাজারে পরিণত হতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

আজ ভারতে শক্তি রূপান্তরণের ক্ষেত্রে যে গণ-আন্দোলন শুরু হয়েছে তা একটি অধ্যয়নের বিষয় হয়ে উঠেছে। এই অভিযান দুই পদ্ধতিতে হচ্ছে। প্রথমতঃ, শক্তি উৎপাদনের পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসগুলির দ্রুত গতিতে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি, দ্বিতীয়তঃ, শক্তি সংরক্ষণকে কার্যকর পদ্ধতিতে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। ভারতের নাগরিকরা আজ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে শক্তি উৎপাদনের পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসগুলিকে আপন করে নিচ্ছে। সৌরশক্তির মাধ্যমে বাড়ির সমস্ত প্রয়োজন মেটানো, সৌরশক্তির মাধ্যমে গ্রামের সমস্ত প্রয়োজন মেটানো, সৌরশক্তির মাধ্যমে গোটা বিমান বন্দর সঞ্চালনা, সৌরশক্তির মাধ্যমে চাষবাস - এ রকম অনেক উদাহরণ রয়েছে।

বিগত ৯ বছরে ভারত তার ১৯ কোটিরও বেশি পরিবারকে পরিবেশবান্ধব রন্ধন জ্বালানীতে অভ্যস্ত করেছে। আজ যে ‘সোলার কুক টপ’ উদ্বোধন করা হল তা-ও ভারতে পরিবেশবান্ধব রন্ধনকে একটি নতুন মাত্রা প্রদানের মাধ্যমে পরিবেশকে আরও নির্মল করতে চলেছে। আগামী ২-৩ বছরে ৩ কোটিরও বেশি বাড়িতে এই ‘সোলার কুক টপ’ পৌঁছে যাওয়ার আশা রয়েছে। এর ফলে ভারতীয় নাগরিকদের বাড়িতে বাড়িতে রান্নাঘরে বিপ্লব আসতে চলেছে। ভারতে ২৫ কোটিরও বেশি পরিবার রয়েছে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে শুধু ‘সোলার কুক টপ’ সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ আপনাদের জন্য কত বড় সম্ভাবনা হয়ে এসেছে!

বন্ধুগণ,

ভারতের জনগণ শক্তি সংরক্ষণের কার্যকর পদ্ধতিগুলির দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এখন অধিকাংশ বাড়িতে এবং অধিকাংশ শহরের স্ট্রিট লাইটে এলইডি বাল্ব ব্যবহৃত হয়। ভারতের বাড়িতে বাড়িতে এখন স্মার্ট মিটার লাগানো হচ্ছে। বৃহৎ সংখ্যক মানুষ দ্রুত গতিতে সিএনজি এবং এলএনজি ব্যবহার শুরু করছে। সারা দেশে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ক্রমবর্ধমান এই লক্ষ্যে আরও অনেক বড় পরিবর্তনের সংকেত প্রদান করছে।

বন্ধুগণ,

পরিবেশ বান্ধব উন্নয়নের লক্ষ্যে, শক্তি রূপান্তরনের লক্ষ্যে ভারতের এই বড় বড় প্রচেষ্টা আমাদের মূল্যবোধেও প্রতিফলিত হচ্ছে। ‘সার্কুলার ইকোনমি’ বা বৃত্তাকার অর্থনীতি একভাবে প্রত্যেক ভারতবাসীর জীবনশৈলীর অঙ্গ। রিডিউস, রিইউজ এবং রিসাইকেল বা কম ব্যবহার, পুনর্ব্যবহার এবং পুনরায় ব্যবহারের মন্ত্র যুগ যুগ ধরে আমাদের শিষ্টাচারের অঙ্গ। আজকেও এর একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমরা দেখতে পেয়েছি। প্লাস্টিকের বর্জ্য বোতল পুনরায় ব্যবহার করে যে ইউনিফর্ম তৈরি করা হয়েছে সেটাকে আপনারা এখানে দেখেছেন। ফ্যাসানের বিশ্বে, সৌন্দর্যের বিশ্বে এটি একটি অতুলনীয় সৃষ্টি। প্রত্যেক বছর এ ধরণের ১০ কোটি বোতলের পুনর্ব্যবহারের লক্ষ্য আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এই অভিযান ‘লাইফ’ অর্থাৎ ‘লাইফ স্টাইল ফর এনভাইরনমেন্ট’বা পরিবেশ বান্ধব জীবনশৈলী আপ্ন করে নেওয়ার অভিযানকেও শক্তিশালী করবে, যা আজকের বিশ্বের জন্য একটি বড় প্রয়োজন। এই শিষ্টাচারগুলি মেনেই ভারত ২০৭০ সাল পর্যন্ত নেট জিরো কার্বন নিঃসরনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। আন্তর্জাতিক সৌরসঙ্ঘের মতো প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বদানের মাধ্যমে ভারত এই সদ্ভাবনাকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চায়, শক্তিশালী করতে চায়।

বন্ধুগণ,

আমি আপনাদেরকে আর একবার আহ্বান জানাবো, আপনারা ভারতের শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সম্ভাবনাকে অবশ্যই কাজে লাগান, এর সঙ্গে যুক্ত হন। আজ ভারত, আপনাদের বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের সবচাইতে উপযুক্ত দেশ। এই ক’টি কথা বলে আজ আপনারা যাঁরা বিপুল সংখ্যায় এখানে এসেছেন, এই শক্তি রূপান্তরণ সপ্তাহের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই। আপনাদের সবাইকে এই কর্মসূচিতে স্বাগত জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভ কামনা।

ধন্যবাদ।

PG/SB/NS



(Release ID: 1897057) Visitor Counter : 191