প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

গুজরাটের গান্ধীনগরে ডিজিটাল ইন্ডিয়া সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 04 JUL 2022 10:13PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৪ জুলাই, ২০২২

 

নমস্কার, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেলজী, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবজী, শ্রী রাজীব চন্দ্রশেখরজী, বিভিন্ন রাজ্য থেকে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সকল প্রতিনিধি, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সমস্ত সুফলভোগী, স্টার্টআপস্‌ এবং শিল্প জগতের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বন্ধু ও বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, গবেষক, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!

আজকের এই কর্মসূচি একবিংশ শতাব্দীতে ক্রমাগত আধুনিক হয়ে ওঠা ভারতের একটি ঝলক নিয়ে এসেছে। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার সমগ্র মানবতার জন্য কতটা বিপ্লব এনে দিয়েছে, এর উদাহরণ ভারত ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে।

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আট বছর আগে শুরু হওয়া এই অভিযান পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে নিজেকে সম্প্রসারিত করছে। প্রত্যেক বছর ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযানে নতুন নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, নতুন প্রযুক্তি সম্মিলিত হয়েছে। আজকের এই কর্মসূচিতে যে নতুন প্ল্যাটফর্ম, নতুন প্রোগ্রাম উদ্বোধন হ’ল – তা এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আপনারা একটু আগেই ছোট ছোট ভিডিও দেখেছেন। মাইস্কিম থেকে শুরু করে ভাষিনী – ভাষাদান, ডিজিটাল ইন্ডিয়া – জেনেসিস, চিপস্‌ টু স্টার্টআপ প্রোগ্রাম, কিংবা অন্যান্য সব ডিজিটাল পণ্য এসব কিছুই আমাদের সাধারণ মানুষের ইজ অফ লিভিং এবং ব্যবসায়ীদের ইজ অফ বিজনেস-কে শক্তিশালী করতে চলেছে। এর দ্বারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে ভারতের স্টার্টআপ ইকো সিস্টেম।

বন্ধুগণ,

সময়ের সঙ্গে যে দেশ আধুনিক প্রযুক্তিকে বেছে নেয় না, সময় তাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় আর সেই দেশ পিছিয়ে পড়ে থাকে। ভারত তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ভুক্তভোগী। কিন্তু, আজ আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, ভারত চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা ইন্ডাস্ট্রি ৪.০-র সময় গোটা বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে। আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে, দেশের মধ্যে গুজরাট এক্ষেত্রে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

কিছুক্ষণ আগে এখানে ডিজিটাল গভর্ন্যান্স নিয়ে গুজরাটের বিগত দু’দশকের অভিজ্ঞতাগুলিকে তুলে ধরা হয়েছে। গুজরাট দেশের প্রথম রাজ্য ছিল, যেখানে গুজরাট স্টেট ডেটা সেন্টার, গুজরাট স্টেট ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক, ই-গ্রাম সেন্টার্স এবং এটিভিটি/জনসেবা কেন্দ্রের মতো বেশ কিছু স্তম্ভ গড়ে তুলেছে।

সুরাট, বারদোলীর কাছে যেখানে সুভাষ বাবু কংগ্রেসের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন, সেখানে সুভাষ বাবুর স্মৃতিতে কর্মসূচি আয়োজন করেছি। আর সেই সময় ই-বিশ্বগ্রাম উদ্বোধন করেছি।

গুজরাটের অভিজ্ঞতাগুলি ২০১৪’র পর জাতীয় স্তরে প্রযুক্তিকে প্রশাসনের ব্যাপক অঙ্গ করে তোলার ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হয়েছে। ধন্যবাদ গুজরাট। এই অভিজ্ঞতা ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের ভিত্তি গড়ে তুলেছে। আজ যখন আমরা পেছনে ফিরে তাকাই, তখন বুঝতে পারি, গত ৭-৮ বছরে ডিজিটাল ইন্ডিয়া আমাদের জীবনকে কতটা সহজ করে তুলেছে। একবিংশ শতাব্দীতে যাঁদের জন্ম হয়েছে, আমাদের সেই নবীন প্রজন্ম, তাঁদের জন্য আজ ‘ডিজিটাল লাইফ’ অত্যন্ত পছন্দের – তাঁদের ‘ফ্যাশন স্টেটমেন্ট’ হয়ে উঠেছে।

কিন্তু মাত্র ৮-১০ বছর আগের পরিস্থিতি কেমন ছিল স্মরণ করুন। জন্মের শংসাপত্র নিতে লাইন, বিল জমা করার জন্য লাইন, রেশনের জন্য লাইন, স্কুল-কলেজ-হাসপাতালে ভর্তির জন্য লাইন, পরীক্ষার ফল ও শংসাপত্র নেওয়ার জন্য লাইন, ব্যাঙ্কে লাইন – অনলাইন ব্যবস্থা এসে এত সব লাইনের সমাধান করে দিয়েছে। এখন উপরোক্ত সমস্ত পরিষেবা ডিজিটাল হয়েছে। না হলে আগে প্রবীণ নাগরিকরা, বিশেষ করে পেনশনভোগীদের প্রতিবছর গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে জানাতে হ’ত যে, আমি বেঁচে আছি। যে কাজ করতে কখনও বেশ কয়েকদিন লেগে যেত, তা আজ কয়েক মুহূর্তে হয়ে যাচ্ছে।

বন্ধুগণ,

আজ ডিজিটাল গভর্ন্যান্সে একটি উন্নত পরিকাঠামো ভারতে গড়ে উঠেছে। জন-ধন, মোবাইল ও আধার – এই ত্রিশক্তির মাধ্যমে দেশের গরীব ও মধ্যবিত্তরাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন। এর ফলে, গোটা প্রক্রিয়ায় যে স্বচ্ছতা এসেছে, তা দেশের কোটি কোটি পরিবারের অনেক অর্থ সাশ্রয় করছে। আট বছর আগে ইন্টারনেট ডেটার জন্য যত টাকা খরচ করতে হ’ত, এখন তার থেকে অনেক কম টাকা খরচ করতে হয়, কিংবা সেই টাকাতেই অনেক বেশি ডেটা পাওয়া যাচ্ছে। আগে বিল মেটাতে, অনেক অ্যাপ্লিকেশন জমা দিতে, রিজার্ভেশন করাতে, ব্যাঙ্কের কাজ ইত্যাদি প্রতিটি পরিষেবার জন্য অনেক দপ্তরে ঘুরে বেড়াতে হ’ত। যিনি গ্রামে থাকেন, তাঁকে রেলের আসন সংরক্ষণের জন্য শহরে গিয়ে ১০০-১৫০ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে সারা দিন কাটিয়ে আসতে হ’ত। আজ তাঁরা কমনসার্ভিস সেন্টারে গিয়ে এই সমস্ত কাজ করে ফেলেন। সেজন্য আমি এদের বলি কমার্স সার্ভিস সেন্টার। এভাবে গরীব, পরিশ্রমী, সাধারণ মানুষের অনেক অর্থ ও সময় সাশ্রয় হচ্ছে।

কখনও কখনও আমরা শুনতাম, টাইম ইজ মানি। শুনতে ও বলতে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু, মানুষের অভিজ্ঞতা অনেক নিদারুণ ও মর্মস্পর্শী ছিল। সম্প্রতি আমি কাশী গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দিনের বেলায় এদিক-ওদিক গেলে ট্রাফিক ও সাধারণ মানুষের সমস্যা হয়। সেজন্য আমি একদিন রাত একটা দেড়টা নাগাদ সরেজমিনে পরিস্থিতি বোঝার জন্য রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে চলে গিয়েছিলাম। আমি যেহেতু সেখানকার সাংসদ, কাজ তো করতেই হবে। আমি সেখানে গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কথা বলছিলাম – এটা আমার সারপ্রাইজ ভিজিট ছিল। কেউ আগে জানতেন না। আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে, বন্দে ভারত ট্রেন চলছে, তার কি অভিজ্ঞতা। যাত্রীরা বললেন, সাহেব এর এত চাহিদা যে, আমরা সবসময় টিকিট পাইনা। আমি বললাম, এর তো ভাড়া অনেক বেশি। সাধারণ মানুষ এতে যাবেন কেন? ভদ্রলোকটি বললেন, সাহেব, এতে মজুর ও গরীবরাই সবচেয়ে বেশি যান। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কিভাবে ভাই? পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে বিস্ময়ের ছিল। ভদ্রলোকটি জবাব দিলেন, দুটি কারণে যান। প্রথমত, বন্দে ভারত ট্রেনে জায়গা এতটা থাকে, বেশি জিনিস রাখার জায়গা পাওয়া যায়। গরীবদের একটা হিসাব থাকে। দ্বিতীয়বার যাত্রা করার ৪ ঘণ্টা সময় বাঁচে আর এই ট্রেনে এলে দ্রুত কাজ শুরু করে দেওয়া যায়। ৬-৮ ঘন্টায় যতটা রোজগার হয়, এতে টিকিটের বেশি দাম দিয়েও লাভ হয়। আমি বলেছিলাম না – টাইম ইজ মানি। গরীবরা কিভাবে হিসেব করেন, অনেক লেখাপড়া জানা মানুষও তা বুঝতে পারবেন না।

বন্ধুগণ,

ই-সঞ্জিবনীর মতো টেলিকনসাল্টেশনের যে পরিষেবা শুরু হয়েছে, তার মাধ্যমে মোবাইল ফোন দিয়েই বড় বড় হাসপাতালের বড় বড় চিকিৎসকের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা সেরে নেওয়া যায়। আর এর ফলে, এখনও পর্যন্ত ৩ কোটিরও বেশি মানুষ বাড়িতে বসেই তাঁদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বড় বড় হাসপাতালে নামী চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পেরেছেন। এই পরামর্শ নিতে যদি তাঁদের চিকিৎসকের কাছে যেতে হ’ত, তা হলে আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে, কতটা সমস্যা ও খরচ হ’ত। ডিজিটাল ইন্ডিয়া পরিষেবা এই সমস্ত ক্ষেত্রে অনেক সাশ্রয় করছে।

বন্ধুগণ,

সবচেয়ে বড় কথা, এখন গোটা প্রক্রিয়ায় যে স্বচ্ছতা এসেছে, তা দেশের গরীব ও মধ্যবিত্তদের অনেক স্তরের দুর্নীতি থেকে মুক্তি দিয়েছে। আমরা সেই সময় দেখেছি, যখন উৎকোচ না দিয়ে পরিষেবা পাওয়া কঠিন ছিল। ডিজিটাল ইন্ডিয়া সাধারণ পরিবারে এই অর্থ সাশ্রয় করেছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া দালালদের নেটওয়ার্ককেও ভেঙে দিয়েছে।

আমার মনে আছে, একবার বিধানসভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। আজ সেকথা মনে পড়লে প্রত্যেকেই অনুভব করবেন, আগে বিধানসভাগুলিতে এরকম বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হ’ত, কিছু সাংবাদিক হয়তো সব খুঁজে বের করে নিতে পারবেন। সেদিন আলোচনা হচ্ছিল বিধবা পেনশন নিয়ে। আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম, বিধবাদের পোস্ট অফিসে অ্যাকাউন্ট খোলানো। সেখানে ছবি ইত্যাদি জমা দিয়ে বিধবা বোনেরা গিয়ে প্রতি মাসে পেনশন তুলতে পারবেন। এই পরামর্শ শুনে বিধানসভায় ঝড় ওঠে। মোদী সাহেব, আপনি কেমন নিয়ম শুরু করতে চান। বিধবা বোনেরা কিভাবে বাড়ি থেকে বেরোবেন। কিভাবে ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে গিয়ে টাকা তুলবেন। এরকম নানা ধরনের মজাদার যুক্তি বিরোধীরা দিচ্ছিলেন। আমি বললাম, আমাকে তো এই পথেই যেতে হবে, আপনারা সাহায্য করলে খুব ভালো হয়। তাঁরা সাহায্য না করলেও সেবার আমাকে জনগণ সাহায্য করেছিলেন। আসলে তাঁদের হইচই করার উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিল। বিধবাদের জন্য কোনও দুশ্চিন্তা নয়, তখন তো আর ডিজিটাল প্রক্রিয়া চালু হয়নি। যখন পোস্ট অফিসে ফটো পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা হ’ল, তখন দেখা গেল, তালিকায় এরকম অনেক বিধবার নাম রয়েছে, যে মেয়েটির জন্মই হয়নি। কার অ্যাকাউন্টে সেই টাকা যাচ্ছিল, সেটা আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। কাজেই এর বিরোধিতা স্বাভাবিক ছিল। আজ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে সমস্ত সুফলভোগীরা তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাচ্ছেন। বিগত ৮ বছরে সুফলভোগীরা ২৩ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পেয়েছেন। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে ইতিমধ্যেই দেশে প্রায় ২ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

বন্ধুগণ,

ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য শহর ও গ্রামের মধ্যে ব্যবধান কমানো। আমাদের শহরগুলিতে তবুও কিছু পরিষেবা ছিল। কিন্তু, গ্রামের মানুষদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। কেউ কল্পনাও করতে পারতেন না যে, একদিন গ্রাম ও শহরগুলির মধ্যে ব্যবধান কমবে। গ্রামে ছোটখাটো পরিষেবার জন্য আপনাদের ব্লক অফিস, তহশিল কাছারি কিংবা জেলা সদর দপ্তরে ঘুরে বেড়াতে হ’ত। এই সমস্ত সমস্যার সমাধানও ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযান সহজ করে তুলেছে। সরকারকে নাগরিকদের দরজায় দরজায় তাঁদের গ্রামে, তাঁদের বাড়িতে, তাঁদের হাতের মুঠোয় ফোনের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছে।

গত ৮ বছরে ৪ লক্ষেরও বেশি নতুন কমন সার্ভিস সেন্টার চালু করে দেশের গ্রামে গ্রামে কয়েকশো সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

কিছুদিন আগে আমি দাহোদে এসেছিলাম। তখন সেখানকার জনজাতি ভাই-বোনেদের সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয়েছে। সেখানে এক দিব্যাঙ্গ দম্পতির সঙ্গে কথা হ’ল। তাঁদের বয়স ৩০-৩২ বছর হবে। তাঁরা মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ঋণ পেয়েছেন। সামান্য কম্পিউটার শিখেছেন, আর দু’জনে মিলে দাহোদ আদিবাসী জেলার একটি ছোট্ট গ্রামে কমন সার্ভিস সেন্টার চালু করেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম যে, তাঁদের মাসিক গড় আয় ২৮ হাজার টাকা। গ্রামের মানুষ এখন এই পরিষেবার সুযোগ নিচ্ছেন। এটাই হ’ল ডিজিটাল ইন্ডিয়ার শক্তি।

এখন ১ লক্ষ ২৫ হাজারেরও বেশি কমন সার্ভিস সেন্টার, গ্রামীণ বিপণী এখন ই-কমার্সকেও গ্রামীণ ভারত পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে।

আরেকটি অভিজ্ঞতার জানাই। কিভাবে ব্যবস্থাগুলির সুবিধা নেওয়া যেতে পারে। যখন আমি গুজরাটে ছিলাম, কৃষকদের বিদ্যুতের বিল মেটাতে সমস্যা হ’ত। সারা রাজ্যে ৮০০-৯০০ জায়গায় টাকা জমা নেওয়া হ’ত। দেরী হলে বিদ্যুতের সংযোগ কেটে যেত। আর তা কেটে গেলে আবার নতুন সংযোগ নিতে হলে বেশি টাকা দিতে হ’ত। আমরা তখন ডাকঘরের মাধ্যমে বিদ্যুতের বিল জমা করার পরিষেবা চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানাই। তখন দিল্লিতে অটলজীর সরকার ছিল। অটলজী আমার অনুরোধ শোনেন। আর গুজরাটের কৃষকরা বিল জমা দেওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পান। ব্যবস্থাগুলির ব্যবহার কিভাবে উন্নত করা যায়, তার একটি প্রয়োগ আমি দিল্লিতে গিয়ে করি। স্বভাব যায় না মলে। কারণ, আমরা তো আমেদাবাদী, সিঙ্গল তারপর ডবল জার্নির অভ্যাস রয়েছে। সেজন্য রেলের নিজস্ব ওয়াইফাই অনেক স্ট্রং নেটওয়ার্ক। ২০১৯-এর নির্বাচনের আগে আমাদের রেলওয়ের বন্ধুদের বলি যে, রেল প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যে ওয়াইফাই চালু করে দিন, যাতে আশেপাশের গ্রামের ছেলেমেয়েরা সেখানে এসে পড়াশুনা করতে পারে। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, একবার কিছু ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে কথা বলছিলাম, তখনই জানতে পারি যে, অনেক ছেলেমেয়েরা এখন রেল প্ল্যাটফর্মে এসে ফ্রি ওয়াইফাই-এর মাধ্যমে কম্পিটিটিভ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর পাশও করছে। মায়ের হাতের রুটি আর রেল প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যে পড়াশুনা - ডিজিটাল ইন্ডিয়ার শক্তিটা দেখুন।

বন্ধুগণ,

পিএম স্বামিত্ব যোজনার কথা বলি, শহরের মানুষরা হয়তো এ বিষয়ে তেমন লক্ষ্য করেননি। এই প্রথম শহরের মতো করে গ্রামের বাড়িগুলি মানচিত্রায়ন এবং আইনসম্মত ডিজিটাল দলিল ও পর্চা গ্রামবাসীদের হাতে তুলে দেওয়ার কাজ চলছে। গ্রামে গ্রামে ড্রোন ব্যবহার করে প্রতিটি বাড়ির মানচিত্রায়ন হচ্ছে। গ্রামবাসীদের আপত্তি না থাকলে প্রত্যেকে শংসাপত্র পাচ্ছেন। ফলে, কোর্ট-কাছারি যাওয়ার অনেক ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়েছে এই ডিজিটাল ইন্ডিয়া। এই ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযান দেশে বড় সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভর হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করেছে।

বন্ধুগণ,

ডিজিটাল ইন্ডিয়ার একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল দিক রয়েছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মাধ্যমে অনেক নিখোঁজ শিশুকে খুঁজে তাঁদের বাবা-মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই গল্পগুলি শুনলে আপনাদের চোখে জল চলে আসবে। একটু আগে আমি এখানে যে ডিজিটাল প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, সেটি ঘুরে দেখেছি। আপনাদের অনুরোধ জানাই, আপনারাও অবশ্যই এটি ঘুরে দেখুন। আর তারপর বাড়ির ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে আরেকবার এসে দেখে যান। সেখানে গিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন, কিভাবে বিশ্ব বদলে যাচ্ছে। সেখানে আজ একটি ছ’বছরের শিশুকন্যার সঙ্গে দেখা হয়েছে, যে হারিয়ে গিয়েছিল। রেলের প্ল্যাটফর্মে মায়ের হাত ছাড়া হয়ে অন্য একটি ট্রেনে বসে পড়ে। সে বাবা-মা সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছিল না। পরিবারের মানুষ অনেক চেষ্টা করেও তার কোনও খোঁজ পাননি। তারপর পরিবারের মানুষ আধার ডেটার মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা করে। সেই আধার তথ্য অনুসারে, সেই বাচ্চাটিকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া গেছে। আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে, আজ সেই শিশুটি তার পরিবারের মানুষের সঙ্গেই এখানে রয়েছে। এবার গ্রামে ফিরে নিজের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। আপনারা একথা জেনেও খুশি হবেন যে, অনেক বছর ধরে হারিয়ে যাওয়া এরকম ৫০০টিরও বেশি শিশুকে এই প্রযুক্তির সাহায্যে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

বন্ধুগণ,

বিগত ৮ বছরে ডিজিটাল ইন্ডিয়া দেশে যে সামর্থ্য সৃষ্টি করেছে, তা করোনা বিশ্বব্যাপী মহামারী প্রতিরোধে ভারতকে অনেক সাহায্য করেছে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে, ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযান চালু না থাকলে দেশ বিগত ১০০ বছরের সবচেয়ে বড় সঙ্কট কিভাবে কাটিয়ে উঠতো? আমরা ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি মহিলা, কৃষক, শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক ক্লিকে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তর করেছি। ‘এক জাতি, এক রেশন কার্ড’ – এর সাহায্যে আমরা ৮০ কোটিরও বেশি দেশবাসীকে বিনামূল্যে রেশন সুনিশ্চিত করেছি। এখানেই প্রযুক্তির জয়।

আমরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধিক দক্ষ প্রক্রিয়ায় কোভিড টিকাকরণ এবং কোভিড ত্রাণ কর্মসূচী সঞ্চালনা করেছি। আরোগ্য সেতু এবং কো-উইনের মতো প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে - এর সম্পূর্ণ রেকর্ড রয়েছে। কারা কারা বাকি রয়েছেন, কোথায় বাকি রয়েছেন – এই তথ্যও এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই পাওয়া যাচ্ছে। আর আমরা উদ্দিষ্ট ব্যক্তিদের টিকাকরণের কাজ করতে পারছি। সারা পৃথিবীতে আজ এই টিকাকরণ শংসায়ন নিয়ে অনেক জটিলতা রয়েছে। শংসাপত্র পেতে কয়েকদিন লেগে যায়। কিন্তু, ভারতে কেউ টিকা নিয়ে বেরনোর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর মোবাইল সাইটে শংসাপত্র পৌঁছে যায়। কো-উইনের মাধ্যমে টিকাকরণ এবং বিস্তারিত শংসায়নের তথ্য প্রদানের দক্ষতা নিয়ে সারা পৃথিবীতে প্রশংসা হচ্ছে। আর ভারতে কিছু মানুষ আপত্তি তুলেছেন যে, এই শংসাপত্রে মোদীর ছবি থাকবে কেন? এত বড় কাজ কিন্তু তাঁদের মন ওখানেই আটকে আছে।

বন্ধুগণ,

ভারতের ডিজিটাল ফিনটেক সলিউশন, আর আজ ইউ-ফিনটেক নিয়ে কিছু কথা বলবো। একবার সংসদের এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেখানে দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী মহোদয় তাঁর ভাষণে বলছিলেন, যাঁদের কাছে মোবাইল ফোন নেই, তাঁরা কিভাবে ডিজিটাল পরিষেবা নেবেন। তিনি আরও অনেক কিছুই বলেছিলেন, সেসব কথা আপনারা যদি রেকর্ড থেকে শোনেন, তা হলে আশ্চর্য হবেন। বেশি লেখাপড়া জানা মানুষের এই অবস্থাই হয়। ফিনটেক ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস বা ইউপিআই – এর দিকে আজ গোটা বিশ্ব আকর্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক সহ সবাই এই অসাধারণ প্ল্যাটফর্মের প্রশংসা করেছে। আর আমি আপনাদের বলবো, এখানকার প্রদর্শনীতে একটি সম্পূর্ণ ফিনটেক বিভাগ রয়েছে। তাঁরা কিভাবে কাজ করেন, তা সেখানে গেলে দেখা যাবে। কিভাবে মোবাইল ফোনে পেমেন্ট হয়, কিভাবে টাকা আসে-যায় – এই সবকিছুই আপনারা সেখানে দেখতে পাবেন। আর আমি বলছি, ফিনটেকের এই প্রচেষ্টা প্রকৃত অর্থেই জনগণের দ্বারা, জনগণের মাধ্যমে, জনগণের জন্য – এই ভাবনারই উন্নত সমাধান। এতে যে প্রযুক্তি রয়েছে, তা ভারতের নিজস্ব অর্থাৎ জনগণের মাধ্যমে। দেশবাসী একে জীবনের অঙ্গ করে তুলেছেন। অর্থাৎ, জনগণের দ্বারা। এটিই দেশবাসীর লেনদেনকে সহজ করে তুলেছে। অর্থাৎ জনগণের জন্য।

এ বছর মে মাসে ভারতে প্রত্যেক মিনিটে ১ লক্ষ ৩০ হাজারেরও বেশি ইউপিআই লেনদেন হয়েছে। আপনারা গর্ব করুন বন্ধুগণ। প্রত্যেক সেকেন্ডে গড়ে ২ হাজার ২০০ লেনদেন সম্পূর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ, এখন যে আপনাদের সামনে বক্তব্য রাখছি, যতক্ষণ সময়ের মধ্যে আমি ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস – এই তিনটি শব্দ উচ্চারণ করছি, ততক্ষণে ইউপিআই – এর মাধ্যমে ৭ হাজার লেনদেন সম্পূর্ণ হয়েছে। আমি যে কোনও দুটি শব্দ বললে যতটা সময় খরচ হয়, ততটা সময়ের মধ্যেই ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মাধ্যমে আজ ৭ হাজার লেনদেন সমাপ্ত হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

ভারতবাসীকে কেউ কেউ যতই মূর্খ, অশিক্ষিত বলুক না কেন, আমার দেশবাসীর শক্তি দেখুন। আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও ভারতে এখন বিশ্বের উন্নত দেশগুলির তুলনায় অনেক বেশি, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ ডিজিটাল লেনদেন, এখন আমাদের দেশে হয়।

ভীম ইউপিআই এখন সরল ডিজিটাল লেনদেনের শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হ’ল – আজ যে কোনও মলে বড় বড় ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রেতাদের লেনদেনের জন্য যে প্রযুক্তি রয়েছে, একই প্রযুক্তি দেশের ফুটপাতে, ঠেলাগাড়িতে কিংবা রেলপথের দু’পাশে পশরা সাজিয়ে বসা দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা রোজগার করা বিক্রেতাদের হাতেও রয়েছে। আগে আমরা দেখেছি যে, যখন বড় বড় দোকানে ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড চলতো, তখন দেশের ফুটপাতে, ঠেলাগাড়িতে কিংবা রেলপথের দু’পাশে পশরা সাজিয়ে বসা বিক্রেতাদের খুচরো টাকা-পয়সার জন্য গ্রাহকদের সঙ্গে বচসা হ’ত। আর সম্প্রতি আমি বিহারের একটি প্ল্যাটফর্মে এক ভিখারিকে ডিজিটাল মাধ্যমে ভিক্ষা নিতে দেখেছি। সেজন্য আজ বিশ্বের উন্নত দেশগুলি এবং যে দেশগুলি এ ধরনের প্রযুক্তির জন্য বিনিয়োগ করতে পারে না, তাদের জন্য ভারতের ইউপিআই – এর মতো ডিজিটাল প্রক্রিয়া আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আমাদের ডিজিটাল সমাধানগুলি যতটা ব্যাপক মাত্রায় কার্যকর, ততটাই সুরক্ষিত। আর এগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। আমাদের গিফট্‌ সিটির যে উদ্যোগ … এখন যে কথাটি বলবো, তা লিখে রাখতে পারেন। আর ২০০৫ কিংবা ২০০৬ সালে আমি এ বিষয়ে যে বক্তৃতা দিয়েছিলাম, সেটি শুনে নিতে পারেন। তখন আমি আমার গিফট্‌ সিটি ধারণা নিয়ে কি কি বলেছিলাম, তা আজ বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। আগামী দিনে ফিনটেক বিশ্বে তথ্য নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ফাইনান্সের বিশ্বে গিফট্‌ সিটি অনেক বড় শক্তি হয়ে উঠতে চলেছে। এটা শুধু গুজরাট নয়, গোটা ভারতের গর্বের ও শৌর্যের প্রতীক হয়ে উঠতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

ডিজিটাল ইন্ডিয়া ভবিষ্যতেও যাতে ভারতে নতুন অর্থ ব্যবস্থার শক্ত ভিত্তি হয়ে ওঠে। ইন্ডাস্ট্রি ৪.০-তে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকায় রাখে, তা সুনিশ্চিত করতে আজ অনেক ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লক-চেন, এআর-ভিআর, থ্রিডি প্রিন্টিং, ড্রোন, রোবোটিক্স, পরিবেশ-বান্ধব শক্ত উৎপাদন – এরকম অনেক আধুনিক শিল্প জগতের জন্য সারা দেশে শতাধিক দক্ষতা উন্নয়ন পাঠক্রম চালু হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মিলেমিশে আগামী ৪-৫ বছরে ১৪-১৫ লক্ষ যুবক-যুবতীকে ভবিষ্যৎ শিল্প আবহে পুনর্দক্ষ ও দক্ষতায় উন্নীত করানোর লক্ষ্যে আমরা কাজ করে চলেছি।

ইন্ডাস্ট্রি ৪.০-র জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা গড়ে তুলতে আজ বিদ্যালয় স্তরেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে প্রায় ১০ হাজার অটল টিঙ্কারিং ল্যাবে আজ ৭৫ লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন উদ্ভাবক ভাবনা-চিন্তা নিয়ে কাজ করছে। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে মুখোমুখী হচ্ছে। একটু আগেই আমি এখানে যে প্রদর্শনীটি দেখতে গিয়েছিলাম, সেখানে ১৫, ১৬ ও ১৮ বছর বয়সী মেয়েরা সুদূর ওডিশা, ত্রিপুরা কিংবা উত্তর প্রদেশের কোনও গ্রাম থেকে বিভিন্ন উদ্ভাবক সমাধান নিয়ে এসেছে। অটল টিঙ্কারিং ল্যাব স্কুলগুলিতে যে আবহ গড়ে তুলেছে, তার ফলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বড় বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে শিখেছে এবং সেগুলির সমাধানও করছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বললে আপনারা বুঝতে পারবেন যে, আমাদের দেশের শক্তি কতটা। যখন আমি একটি ১৭ বছর ছেলেকে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম, তখন সে জবাব দিল, আমি ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। অর্থাৎ, এখানে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যত যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ হচ্ছে, আমি সেগুলির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে সে কথা বলছিল, এই সামর্থ্য দেখে আমার বিশ্বাস আরও মজবুত হয়ে ওঠে। এরাই দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করবে। এরাই দেশের সংকল্প পূরণ করবে।

বন্ধুগণ,

নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি ও প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় মানসিকতা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সারা দেশে অটল ইনক্যুবেশন সেন্টার্স-এ একটি বড় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। তেমনই পিএম-গ্রামীণ ডিজিটাল সাক্ষরতা অভিযান অর্থাৎ পিএম-দিশা দেশে ডিজিটাল ক্ষমতায়নকে উৎসাহিত করার একটি অসাধারণ অভিযান। এখনও পর্যন্ত সারা দেশে গড়ে ওঠা ৪০ হাজারেরও কেন্দ্রে ৫ কোটিরও বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

বন্ধুগণ,

ডিজিটাল দক্ষতা এবং ডিজিটাল পরিকাঠামোর পাশাপাশি, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যুবসম্প্রদায়কে বেশি সুযোগ দেওয়ার জন্য বিবিধ সংস্কার আনা হচ্ছে। মহাকাশ প্রযুক্তি থেকে শুরু করে মানচিত্রায়ন, ড্রোন, গেমিং এবং অ্যানিমেশনের মতো অনেক ভবিষ্যতমুখী ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করতে এগুলিকে উদ্ভাবনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন আমেদাবাদে ইন-স্পেস হেডকোয়াটার তৈরি হয়েছে। ভারতের প্রযুক্তি সম্ভাবনাকে এই দশকে এই ইন-স্পেস এবং নতুন ড্রোন নীতি নতুন প্রাণশক্তি দেবে। গত মাসে এখানে ইন-স্পেস সদর দপ্তর উদ্বোধনে এসে কিছু স্কুলের ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা আমাকে বলে, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে আমাদের স্কুলের ছেলেমেয়েরা অন্তরীক্ষে ৭৫টি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাবে। আমাদের দেশের শিক্ষা জগতে এরকম পরিবর্তন আসছে।

বন্ধুগণ,

আজ ভারত আগামী ৩-৪ বছরে বৈদ্যুতিন পণ্য উৎপাদনকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের উপরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিইয়ে কাজ করছে। ভারত এখন চিপ টেকার থেকে চিপ মেকার হয়ে উঠতে চায়। সেমিকন্ডাক্টর্স-এর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ভারতে দ্রুতগতিতে বিনিয়োগ বাড়ছে। এক্ষেত্রে পিএলআই স্কিম সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। অর্থাৎ মেক ইন ইন্ডিয়ার শক্তি এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া শক্তির সম্মিলনে ভারত ইন্ডাস্ট্রি ৪.০-কে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

দেশের নাগরিকদের যেন আর কোনও প্রকল্পের সুফল পেতে, কিংবা কোনও নথির জন্য সরকারি অফিসে সশরীরে যেতে না হয়, ঘরে বসেই যাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব পেতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই আজ ভারত এগোচ্ছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযান এমনই নতুন নতুন মাত্রা যোগ করে ডিজিটাল পরিসরে আন্তর্জাতিক নেতৃত্বকে সুনিশ্চিত করবে। সময়ের অভাবে আজ আমি সবকিছু দেখতে পারিনি। কিন্তু সেদিনের আর দেরী নেই, যখন এই সব কিছু এখানে বাস্তবায়িত হবে। আমি গুজরাটের জনগণকে বলব যে, সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। আপনারা অবশ্যই স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের এই প্রদর্শনীতে নিয়ে আসুন এবং নিজেরাও দেখুন। এক নতুন ভারত আপনাদের চোখের সামনে উদ্ভাসিত হবে। সাধারণ মানুষের জীবনের প্রয়োজনগুলি সমাধানকারী ভারতকে দেখতে পাবেন। একটি নতুন বিশ্বাস জেগে উঠবে, নতুন সংকল্প নিতে সাহায্য করবে। সমস্ত আশা-আকাঙ্খার পূর্তির বিশ্বাস নিয়ে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মাধ্যমে দেশ ভবিষ্যতের ভারত, আধুনিক ভারত, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ভারতের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এত কম সময়ে আমরা যা অর্জন করেছি, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে, ভারতের কাছে প্রতিভা রয়েছে, ভারতের নতুন প্রজন্মের সামর্থ্য রয়েছে – তাদের শুধু সুযোগ চাই। আজ দেশে এমন একটি সরকার রয়েছে, যে সরকার দেশের জনগণকে ও দেশের নবীন প্রজন্মকে ভরসা করে। তাদেরকে নতুন নতুন প্রয়োগের সুযোগ দেয়। এর ফলে, দেশ অনেক দিশায় অভূতপূর্ব শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

এই ডিজিটাল ইন্ডিয়া সপ্তাহের জন্য আমি আপনাদের অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আগামী ২-৩ দিন ধরে এই প্রদর্শনী চালু থাকবে। আপনারা এর সুফল পাবেন। আমি আরেকবার কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকেও অভিনন্দন জানাই। তারা এত সুন্দর কর্মসূচি আয়োজন করেছে। আমি আজ সকালে তেলেঙ্গানায় ছিলাম, এরপর অন্ধ্রপ্রদেশে যাই। আর সেখান থেকে আপনাদের মাঝে আসার সৌভাগ্য হয়েছে। খুব ভালো লেগেছে। আপনাদের সকলের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি। এই কর্মসূচি গুজরাটে আয়োজন করার জন্য আমি ঐ বিভাগকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই, আর এত সফল কর্মসূচির জন্য অভিনন্দন জানাই। সারা দেশের নবীন প্রজন্মের জন্য এই কর্মসূচি প্রেরণার উৎস হয়ে উঠবে – এই বিশ্বাস নিয়ে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভকামনা।

ধন্যবাদ।  

 

PG/SB/SB



(Release ID: 1839726) Visitor Counter : 242