স্বাস্থ্যওপরিবারকল্যাণমন্ত্রক

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের উদ্যোগ ও সাফল্য – ২০২১

Posted On: 04 JAN 2022 1:27PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ০৪ জানুয়ারি, ২০২২
 
কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের পাশাপাশি, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান প্রসারের উপর সরকার তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে। এই সংক্রমণ রোধে দীর্ঘমেয়াদী-ভিত্তিতে জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পরিকাঠামো গড়ে তোলা, চিকিৎসার বন্দোবস্ত এবং টিকাকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশে গত বছর মার্চ মাসে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। এর প্রেক্ষিতে কিছুদিনের জন্য লকডাউন করতে হয়। তবে, সরকার এই সংক্রমণ প্রতিরোধে সুপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য, গত ১৭ ডিসেম্বর৪ পর্যন্ত কেরল, মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু, পশ্চিমবঙ্গ ও কর্ণাটকে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা গেছে। এর মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার ‘পরীক্ষা, অনুসন্ধান, চিকিৎসা, টিকাকরণ এবং কোভিড-১৯ আচরণ বিধি মেনে চলা’র উপর বিশেষ জোর দিয়েছে। মহামারী মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অসামরিক বিমান চলাচল, স্বরাষ্ট্র, বস্ত্র, ওষুধ, বাণিজ্য মন্ত্রকের সচিবদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি রাজ্যের মুখ্যসচিব সহ অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়মিত পর্যালোচনা করে থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই সমস্যা প্রতিরোধে ‘বিপর্যয় মোকাবিলা আইন, ২০০৫’ – এর আওতায় সংশ্লিষ্ট আইন কার্যকর করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক রাজ্যগুলির সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ বজায় রেখেছে এবং নিয়মিত-ভিত্তিতে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী, স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং জেলাস্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে এ ধরনের ১১৮টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই মহামারী মোকাবিলায় অতীতের অভিজ্ঞতার কথা রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে। নজরদারি, পরীক্ষাগারে সহায়তা, হাসপাতাল পরিকাঠামো, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা, ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। 
বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এবং সার্স-কোভ-২ সংক্রমণের মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্টের উত্থানের দিকে নজর রেখে সরকার সময়ে সময়ে আন্তর্জাতিক যাতায়াতের বিষয়ে নির্দেশিকাগুলি পর্যালোচনা করেছে। এক্ষেত্রে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর সর্বশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশিকা অনুসারে কোভিড-১৯ মহামারী সংক্রান্ত পরিস্থিতি অথবা ওমিক্রন সংক্রমণ রয়েছে, এমন ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলি থেকে কোনও যাত্রী এলে তাঁদের আরটিপিসিআর পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য, অসামরিক বিমান চলাচল, নৌ-পরিবহণ, বন্দর, জলপথ এবং রেল মন্ত্রক সময়ে সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রক ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে চলেছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর, বন্দর, এলাকায় আগত যাত্রীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 
গত দু’বছরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় পরীক্ষা পরিকাঠামো ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। ২০২২ সালের পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ১ হাজার ৩৬৪টি সরকারি এবং ১ হাজার ৭৫৩টি বেসরকারি কোভিড-১৯ পরীক্ষাগার গড়ে উঠেছে। দেশে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১১-১২ লক্ষ মানুষের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ১৮ লক্ষ ১২ হাজার ১৭টি সুনির্দিষ্ট আইসোলেশন বেড, ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৪২৩টি আইসিইউ বেড রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক কোভিড-১৯ চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে কোভিড রোগীদের ভর্তির জন্য জাতীয় নীতি-নির্দেশিকা জারি করেছে। এই নীতি অনুসারে কেন্দ্র, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনের আওতায় থাকা হাসপাতালগুলি সহ বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও কোভিড রোগীদের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা হয়েছে। 
কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য চিকিৎসার সুবিধার্থে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। শিশুদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে চিকিৎসার জন্য গত বছর ১৮ জুন সর্বশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয়। দিল্লির এইমস্‌ সহ একাধিক রাজ্যের হাসপাতালগুলিকে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য সেন্টার অফ এক্সিলেন্স হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে। টেলিমেডিসিন পরিষেবার জন্য ‘ই-সঞ্জীবনী’ নিয়ে আসা হয়েছে। কোনও রোগীর কোভিড পরবর্তী সমস্যা হলে তাঁর চিকিৎসার জন্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। রাজ্যগুলিতে পিপিই কিট, এন-৯৫ মাস্ক, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সহ নানা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। ২০২১-এর ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ২২৫টি পিএসএ প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ৩৩টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের গঠিত দল পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছর অক্টোবরের শেষ নাগাদ দেশে যোগ্য নাগরিকদের ১০০ কোটি টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে দেশে কোভিড-১৯ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুতির জন্য রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে ৮২৫৭.৮৮ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ২৩ হাজার ১২৩ কোটি টাকা মূল্যের কোভিড-১৯ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুতি প্যাকেজের দ্বিতীয় পর্যায় অনুমোদিত হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বৃদ্ধির জন্য রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এমনকি, গ্রামীণ, উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত অঞ্চল, আধা-শহর এবং জেলায় জেলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে মজবুত করে তোলার পাশাপাশি, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার করোনা আক্রান্ত মৃতের নিকটাত্মীয়কে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে। এর জন্য জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল থেকে রাজ্যগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ ও অন্যান্য জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গঠন করা হয়েছে। পিএম-আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মিশনে আগামী ছ’বছরে ৬৪ হাজার ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। 
আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে জোরদার করে তোলা হয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা হয়েছে। এমনকি, সেখানে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির উন্নতিসাধনের মাধ্যমে দেশে ১ লক্ষ ৫০ হাজার স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে শিশু স্বাস্থ্য ও সংক্রামক এবং অসংক্রামক রোগ সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত – প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা প্রায় ১০.৭৪ কোটি গরিব ও প্রান্তিক পরিবারগুলিকে প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সুবিধার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ‘ফিট হেলথ ওয়ার্কার’ বিষয়ে প্রচারাভিযানও চালানো হয়েছে। এর মাধ্যমে যোগা, ধ্যান ইত্যাদির বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্রগুলিতে পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের সাহায্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মানবসম্পদের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রায় ২.৭৪ লক্ষ অতিরিক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ৩৫টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১০৮ অথবা ১০২ টেলিফোনে ডায়াল করে জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ভ্রাম্যমাণ জাতীয় চিকিৎসা ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। এই ইউনিট বিভিন্ন রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিষেবা দিয়ে থাকে। 
সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে যথাযথ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর জন্য সরবরাহ-শৃঙ্খল, ওষুধের গুণমান এবং বন্টন ব্যবস্থাপনা যাতে ঠিক থাকে তার জন্য নজরদারি চালানো হচ্ছে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় গোয়া ও চন্ডীগড় বাদে দেশে ৯.৮৩ লক্ষ আশা কর্মী গ্রামীণ এবং শহর এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজ করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মন ধন যোজনার আওতায় ১৮-৪০ বছর বয়সী অসংগঠিত কর্মীদের অবসরকালীন ভাতা সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পেনশন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ১৫ হাজার বা তার নীচে মাসিক আয় থাকলে এই প্রকল্পে আবেদনযোগ্য। দেশে তৃণস্তরে ৫.৫৫ লক্ষ গ্রামীণ স্বাস্থ্য স্যানিটেশন ও পুষ্টি কমিটি গড়ে তোলা হয়েছে। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অঙ্গ হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে দেশের ১২ হাজার ৪৩১টি চিকিৎসা কেন্দ্রকে ‘কায়াকল্প’ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক এবং জলশক্তি মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে ‘স্বচ্ছ স্বাস্থ্য সর্বত্র’ সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালু করা হয়েছে। দেশের মানুষের চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুণগত মানোন্নয়নে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। গত দু’দশকে দেশে নবজাতক শিশু মৃত্যু হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। জাতীয় শহর স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে ঢেলে  সাজানো হয়েছে। বিগত ৭ বছরে রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি, এই ক্ষেত্রে বরাদ্দও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মিশনের আওতায় ২০২৫-২৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬৪ হাজার ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বরাদ্দ ও জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে যথাযথ সহায়তা প্রদান করেছে। 
দেশব্যাপী নিউমোকোক্কাল কনজুগেট টিকা চালু করা হয়েছে। ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচির সূচনা করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় যথাযোগ্য ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকাকরণ কর্মসূচি শুরুর মাত্র ৯ মাসের মধ্যে দেশে ১০০ কোটি ডোজ দেওয়ার লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হয়েছে। টিকাকরণে গতি আনতে ২০২১ সালের তেসরা নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘হর ঘর দস্তক’ প্রচারাভিযান চালানো হয়েছে। 
মাতৃত্বকালীন অবস্থায় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সুবিধার জন্য ‘সুরক্ষিত মাতৃত্ব আশ্বাসন’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী গর্ভাবস্থায় প্রসবকালীন শিশু মৃত্যুর বিষয়ে নজরদারি চালানোর উপর একটি সফট্‌ওয়্যারের সূচনা করেছেন। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযানের আওতায় এ পর্যন্ত ৩.০২ কোটি মহিলা চিকিৎসার সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এমনকি, কোভিড-১৯ মহামারীর সময়েও মাতৃত্বকালীন অবস্থায় স্বাস্থ্য পরিষেবা জোরদার করে তোলার বিষয়ে সুনিশ্চিত করা হয়েছে। গর্ভবতী মহিলাদের যক্ষ্মা রোগ মোকাবিলার জন্য সহযোগিতামূলক পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি, ‘মেডিকেল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি (সংশোধনী) আইন ও বিধি, ২০২১’ লাগু করা হয়েছে। প্রতি বছর ১৫-২১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী নবজাতক শিশু সপ্তাহ উদযাপন করা হয়ে থাকে। নবজাতক শিশুদের বাড়িতে যত্ন নেওয়ার জন্য আশা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ১-১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের জাতীয় কৃমিনাশক কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র সহ ৭টি রাজ্যের শিশুদের জন্য স্তন্যদান ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। ২০২১-এর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অ্যানিমিয়া-মুক্ত ভারত কর্মসূচি চালানো হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ‘রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম’ কিছুটা প্রভাবিত হয়েছে। দেশে ২০২১-এর ১২ নভেম্বর থেকে ২০২২-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সফলভাবে নিউমোনিয়া মোকাবিলায় সামাজিক সচেতনতা ও কার্যকরি প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে। দেশে মৃত্যু হার কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। এর জন্য পরিবার পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের নভেম্বরে ‘মিশন পরিবার বিকাশ’ – এর সূচনা হয়। দেশে ‘রাষ্ট্রীয় কিশোর স্বাস্থ্য কার্যক্রম’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় কিশোর-কিশোরীদের বন্ধুত্বপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা, সাপ্তাহিক-ভিত্তিতে আয়রণ ফলিক অ্যাসিড প্রদান, প্রাক্‌-শিক্ষা কর্মসূচি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত স্কুল স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্রে ২০২১-এর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১.২৯ লক্ষ ‘স্বাস্থ্য ও সুস্থতা দূত’দের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। 
দেশব্যাপী জাতীয় যক্ষ্মা নির্মূল কর্মসূচি কার্যকর করা হয়েছে। যক্ষ্মা রোগ নির্মূল ও প্রতিরোধে প্রচারাভিযানও চালানো হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিতেও এই কর্মসূচি থেমে থাকেনি। ২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৫ লক্ষ ৭৯ হাজার ৪১০ জন রোগী চিকিৎসা করিয়েছেন। যক্ষ্মা রোগ পরীক্ষার জন্য পরিকাঠামোকেও শক্তিশালী করা হয়েছে। তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মাদকাসক্তির জন্য জাতীয় কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। ১৩-১৫ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহাররোধে সরকার একাধিক কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিষেবা কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনা চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রথম পর্যায়ে ৬টি এইমস্‌ হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ১৬টি এইমস্‌ হাসপাতাল অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে কল্যাণী সহ ৭টি এইমস্‌ হাসপাতালে আংশিক ওপিডি পরিষেবা চালু হয়েছে। সরকার মেডিকেল কলেজ, সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। ২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে জাতীয় চিকিৎসা কমিশন বিধি পাশ হয়েছে। এর ফলে, ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় মেডিকেল কমিশন গঠিত হয়। গত ছ’বছরে এমবিবিএস পাঠক্রমে আসনসংখ্যা ৭২ শতাংশ এবং স্নাতক স্তরে আসন সংখ্যা ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০৯টি নতুন মেডিকেল কলেজ ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে। এখন দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৫৯৬টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) জাতীয় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, মৃত্যু হার নিয়ন্ত্রণ, মাতৃত্বকালীন ও শিশু চিকিৎসা, অপুষ্টিগত রোগ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় আইসিএমআর সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। কোভিড-১৯ টিকার কার্যকারিতার বিষয়ে আইসিএমআর দীর্ঘ গবেষণার কাজ চালিয়েছে। এমনকি, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী শ্রী মনসুখ মান্ডভিয়া আইসিএমআর – এর ড্রোন-ভিত্তিক কোভিড-১৯ টিকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাপনার সূচনা করেছেন। কোভিড-১৯ তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সেরো সার্ভের কাজও করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, অন্যান্য সংক্রামক রোগ মোকাবিলাতেও সরকার কার্যকরি উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে যক্ষ্মামুক্ত করতে প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে। দেশে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা মোকাবিলায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় কোভিড-১৯ পরীক্ষা তথ্য পরিচালনা ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে। এমনকি, জাতীয় কোভিড কিট বৈধকরণ ব্যবস্থাপনার উন্নতিসাধন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী চেন্নাইয়ে আইসিএমআর স্কুল অফ পাবলিক হেলথ – এর নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। অটল বিহারী বাজপেয়ী ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস এবং ডঃ রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের এমবিবিএস পাঠক্রম চালু করা হয়েছে। এমনকি, লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও এসোসিয়েট হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর জন্য এই হাসপাতালে পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো হয়েছে। সরকার কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় সফদরজং হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। ইম্ফলের রিজিওনাল ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেসে এমবিবিএস, এমফিল, বিএসসি নার্সিং, এমএসসি নার্সিং সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এখানে চিকিৎসা পরিকাঠামোয় উন্নতিসাধনে একাধিক নতুন সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। মিজোরামের আইজলে রিজিওনাল ইন্সটিটিউট অফ প্যারামেডিকেল অ্যান্ড নার্সিং সায়েন্সেসে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি, চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতিসাধন করা হয়েছে। 
দেশে কুষ্ঠ রোগ নির্মূলে ‘জাতীয় কুষ্ঠ রোগ নির্মূল কর্মসূচি’ কার্যকর করা হয়েছে। ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জাপানি এনসেফেলাইটিস ইত্যাদি রোগ নির্মূলে ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টরবোন ডিজিজ কন্ট্রোল’ কাজ করে চলেছে। দেশের খাদ্য সুরক্ষা ও গুণমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা খাদ্যের গুণমান নির্ধারণের পাশাপাশি, উৎপাদন, সংরক্ষণ, বন্টন, বিক্রি এবং আমদানির উপর নজরদারি চালাচ্ছে। এই সংস্থা দেশব্যাপী ‘ইট রাইট ইন্ডিয়া’ প্রচারাভিযানের সূচনা করেছে। ২০২১ সালে এইডস্‌ রোগ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। সরকার এ বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে নিরন্তর প্রচার চালাচ্ছে। ‘ই-সঞ্জীবনী’ ব্যবস্থাপনার আওতায় প্রায় ২ কোটি মানুষ পরিষেবা গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরোহিত্যে জাতীয় ডিজিটাল হেলথ মিশন তথা আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশন চালু করা হয়েছে। রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় কেন্দ্র সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সুসংহত রোগ নিয়ন্ত্রণে নজরদারি কর্মসূচি কার্যকর করেছে। এমনকি, এই কেন্দ্রের আওতায় থাকা মহামারী নিয়ন্ত্রণ বিভাগ জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দক্ষতা উন্নয়ন, মহামারী প্রসারে তদন্ত ও নিয়ন্ত্রণের কাজ চালাচ্ছে। ভাইরাল হেপাটাইটিসের নজরদারির জন্য জাতীয় কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি মানুষ সুবিধা পেয়েছেন। এমনকি, ৯৪ হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। ১৩ লক্ষ ৭৬ হাজারেরও বেশি কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধাভোগী কার্ড হোল্ডার দেশের ৭৪টি শহরে ৯৫টি আয়ুষ কেন্দ্র/ইউনিটের এবং ৩৩৩টি অ্যালোপ্যাথি সুস্থতা কেন্দ্রের পরিষেবা গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে দেশে ৩১৬টি দন্ত চিকিৎসা কলেজ রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই চিকিৎসা সংক্রান্ত শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার-সাধনে ‘জাতীয় দন্ত কমিশন বিলের খসড়া’ তৈরি করেছে। প্রতি বছর পয়লা অক্টোবর দিনটি জাতীয় প্রবীণ নাগরিক দিবস হিসাবে পালন করা হয়। তাই, প্রবীণ নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরিষেবায় জাতীয় কর্মসূচি লাগু করা হয়েছে। এছাড়াও, প্রবীণ নাগরিকদের সুস্থ রাখার জন্য রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির পক্ষ থেকে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
 
 
CG/SS/SB


(Release ID: 1787544) Visitor Counter : 2089