বিদ্যুৎমন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

বর্ষশেষ পর্যালোচনা, ২০২১ – বিদ্যুৎ মন্ত্রক

Posted On: 27 DEC 2021 2:20PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১
 
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক চলতি বছরে একাধিক সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই সমস্ত উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী শ্রী আর কে সিং জানিয়েছেন, সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবনযাপনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন আইনি ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সংস্কারমূলক উদ্যোগের দরুণ বিদ্যুৎক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি ঘটেছে। সেইসঙ্গে, বিদ্যুৎক্ষেত্রে সংস্কারের ধারা আগামী বছরগুলিতেও অব্যাহত থাকবে।
 
শ্রী সিং আরও জানান, ২০২১-এ বিদ্যুৎক্ষেত্রে চাহিদা লক্ষ্যণীয় হারে বেড়েছে। আলোচ্য বর্ষে বিদ্যুতের চাহিদা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। অর্থ ব্যবস্থায় পুনরুদ্ধারের গতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসার প্রমাণ এ থেকে মিলছে। চলতি বছরে প্রায় ২ কোটি ৮০ লক্ষ নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন। বিপুল সংখ্যক এই গ্রাহক ও বৈদ্যুতিন উপকরণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। চলতি বছরে বিদ্যুৎক্ষেত্রে যে সমস্ত সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে : 
 
*সংস্কার ও পুনর্গঠন – এই লক্ষ্যে ইলেক্ট্রিসিটি (গ্রাহক) অধিকার আইন, ২০২০ কার্যকর হয়েছে। এই আইন কার্যকর হওয়ার ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিক থেকে গ্রাহকদের একদিকে যেমন ক্ষমতায়ন ঘটেছে, তেমনই গ্রাহকরা আরও বেশি নির্ভরযোগ্য ও গুণগতমানের বিদ্যুৎ পরিষেবা পাচ্ছেন। একইসঙ্গে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থাগুলির রিফান্ড ও অন্যান্য পরিষেবা সহজলভ্য হয়েছে। গ্রাহক অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে পরিষেবাদাতাদের জন্য জরিমানা আরোপের সংস্থান রয়েছে। 
 
*বিলম্বিত মাশুলের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্ক আইন, ২০২১ – কেন্দ্রীয় সরকার গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইলেক্ট্রিসিটি (বিলম্বিত মাশুলের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্ক) আইন কার্যকর করেছে। এই আইন কার্যকর হওয়ার ফলে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থাগুলি, উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাশুল প্রদান করলে বিলম্বিত মাশুল প্রদানে জরিমানা হিসেবে অতিরিক্ত শুল্ক মেটাতে বাধ্য থাকবে। 
 
পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে মন্ত্রক ২০২০-র ৫ আগস্ট আন্তঃরাজ্য পরিবহণ ব্যবস্থায় ধার্য মাশুল এবং বিদ্যুৎ পরিবহণে লোকসান পুনরুদ্ধারের অর্ডার জারি করেছে। এছাড়াও, মন্ত্রক পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে শর্তাবলী ও বাধ্যবাধকতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও মন্ত্রক বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ট্যারিফ বা মাশুল নীতি ঘোষণা করেছে। এর ফলে, বিদ্যুৎক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষই সমান লাভবান হচ্ছে। 
 
*ইলেক্ট্রিসিটি (আইন পরিবর্তনের দরুণ সময়মতো খরচ পুনরুদ্ধার) আইন, ২০২১ – বিদ্যুৎক্ষেত্রে সময়মতো মাশুল প্রদানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, বিদ্যুৎক্ষেত্রে বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনের পরিবর্তনের দরুণ উৎপাদন খরচ পুনরুদ্ধার হওয়াও সমান জরুরি। এই বিষয়গুলিকে বিবেচনায় রেখে মন্ত্রক ২০২১-এর ২২ অক্টোবর ইলেক্ট্রিসিটি (আইন পরিবর্তনের দরুণ সময়মতো খরচ পুনরুদ্ধার) আইন জারি করেছে। 
 
*পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রে সংস্কার – মন্ত্রক পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ আরও বাড়াতে একাধিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই লক্ষ্যে পরিবেশ-বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। 
 
মন্ত্রক বিদ্যুৎ বাজারের সংস্কারে ‘গ্রিন টার্ম – অ্যাহেড মার্কেট’ ব্যবস্থার সূচনা করেছে। এই ব্যবস্থা শুরু হওয়ার ফলে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রে অতিরিক্ত উৎপাদনে সরকার যে লক্ষ্য স্থির করেছে, তা পূরণ করা সম্ভব হবে। ২০২০-২১-এ ৭৮৫.৮৩ মিলিয়ন ইউনিট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের প্রস্তাবে ছাড়পত্র দিয়েছে। ২০২১-২২-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২,৭৪৪ মিলিয়ন ইউনিট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। 
 
*সরকার সারা দেশে রিয়েল টাইম মার্কেট ব্যবস্থা চালু করেছে। এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে বিদ্যুৎ লেনদেনের ক্ষেত্রে নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে। সেইসঙ্গে, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রিডে পরিবহণ করা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ঘাটতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে গ্রিড মারফৎ অন্য এলাকার অতিরিক্ত অব্যবহৃত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তার সদ্ব্যবহার হচ্ছে। 
 
*কেন্দ্রীয় সরকার ইন্টিগ্রেটেড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট স্কিম চালু করেছে। সাব-ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কে মূলধনী ব্যয় বাড়াতে আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা / বিদ্যুৎ দপ্তরগুলির সম্পর্কের সদ্ব্যবহারে এই কর্মসূচি অত্যন্ত কার্যকর হয়ে উঠেছে। কর্মসূচি রূপায়ণে কেন্দ্রীয় সরকার ২৫,৩৫৪ কোটি টাকা বাজেট সহায়তা সহ ৩২,৬১২ কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা নিচ্ছে। 
 
এই কর্মসূচির মাধ্যমে ৪৫টি নতুন পাওয়ার সাব-স্টেশন চালু হয়েছে। বর্তমানে চালু ৫০টি পাওয়ার সাব-স্টেশনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। সাত হাজার কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ ভূগর্ভস্থ লাইন বসানো হয়েছে। প্রায় তিন হাজার নতুন ডিস্ট্রিবিউশন সংস্থাকে দেশের ছোট-বড় শহরগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার মানোন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 
 
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক বিদ্যুৎ বন্টন ক্ষেত্রে সংস্কার-ভিত্তিক পরিণাম সংযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এই কর্মসূচি খাতে ৩ লক্ষ ৩ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এই অর্থে সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং বন্টন ব্যবস্থায় যেসব ঘাটতি রয়েছে তা দূর করা হবে। 
 
*জলবিদ্যুৎ ক্ষেত্রের উন্নয়নে বাজেট সহায়তার সংস্থান করা হয়েছে। এই অর্থ বন্যার প্রভাব হ্রাস এবং জলবিদ্যুতের সঞ্চয়ভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে খরচ করা হবে। দেশে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মানোন্নয়ন তথা নতুন কেন্দ্র গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিবেশী নেপাল ও ভুটানে নতুন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলায় সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ভুটানে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইউনিট গড়ে তোলার কাজ চলছে। নেপালে ৬৭৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন লোয়ার অরুণ হাইড্রো ইলেক্ট্রিক প্রকল্পের কাজ চলছে। 
 
*তাপবিদ্যুৎ - কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে কয়লার মজুতের ওপর নজর রাখে। দৈনিক ভিত্তিতে কয়লার খরচের ওপরও নজরদারি করা হয়। কর্তৃপক্ষের লাগাতার নজরদারি ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের ফলে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে কয়লার যোগান অব্যাহত রয়েছে। তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে ১২ দিনের পরিবর্তে এখন ১৭ দিনে চাহিদা অনুযায়ী কয়লা মজুত রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কয়লা-ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে জৈব গ্যাসের ব্যবহারের জাতীয় মিশন শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে কয়লা-ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে পরিপূরক জ্বালানি হিসেবে জৈব গ্যাসের সদ্ব্যবহারে প্রয়োজনীয় নীতি-নির্দেশিকা জারি করেছে। এছাড়াও মন্ত্রক ‘শক্তি’ কর্মসূচির আওতায় একটি নতুন কয়লা বন্টন নীতি গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় এখনও পর্যন্ত ৫.৩৯ মিলিয়ন টন কয়লা বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়েক কিস্তিতে সরবরাহ করা হয়েছে। আত্মনির্ভর ভারত গঠনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক ইঁট উৎপাদনকারীদের জন্য বিদ্যুৎসাশ্রয়ী শংসাপত্র প্রদান নীতি চালু করেছে। এই ব্যবস্থার ফলে সর্বাধিক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী সংস্থাগুলিকে শংসাপত্র প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ার ও আধিকারিকদের দক্ষ করে তুলতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। 
 
*ভবন নির্মাণ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ সহ ২০টি রাজ্য বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে একাধিক কার্যকর নীতি গ্রহণ করেছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে দক্ষতার জন্য গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশের ২৬৪টি ভবনকে বিভিন্ন গ্রেডে স্টার রেটিং দেওয়া হয়েছে। 
 
*পরিবহণ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সাশ্রয় – কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘গো ইলেক্ট্রিক’ অভিযান শুরু করেছে। দেশে এ ধরনের অভিযান গ্রহণের উদ্দেশ্যই হল, ই-গতিময়তা এবং বৈদ্যুতিন যানবাহনের চার্জিং পরিকাঠামো গড়ে তোলা। এই অভিযানের আওতায় বিভিন্ন রাজ্যের নোডাল এজেন্সি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ১৫টি রোড-শো ও ৩৫টি ওয়েবিনার আয়োজন করেছে। 
 
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির দক্ষতার নিরিখে ২০২০-তে সূচক ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে পারদর্শীতার ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির ক্রমতালিকা তৈরি হয়েছে। 
 
দেশে বিদ্যুৎ পরিবহণ ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের পরিবহণ ব্যবস্থার মানোন্নয়নে এক আদর্শ মান গড়ে তোলা হচ্ছে। সেইসঙ্গে, বিদ্যুৎ বন্টন ও পরিবহণ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বাড়াতে গেজেট অফ ইন্ডিয়াতে নীতি-নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সাব-ট্রান্সমিশন ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ অপচয় কমাতে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক পাওয়ার গ্রিড সংস্থার চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডায়রেক্টরের সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি ৩১ হাজার কিলোভোল্ট বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনগুলিতে বিদ্যুতের অপচয়ের ওপর নজর রাখছে। আরও একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিদ্যুৎ মন্ত্রক উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে বিদ্যুৎ বন্টন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেই অনুসারেই উপকূলবর্তী এলাকার ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে যেখানে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল, সেই সমস্ত এলাকায় অভিনব পন্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন পাতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 
 
CG/BD/DM/

(Release ID: 1785671) Visitor Counter : 233