প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

লক্ষ্ণৌতে ‘আজাদি @৭৫ কনফারেন্স অ্যান্ড এক্সপো’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 05 OCT 2021 4:45PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৫ অক্টোবর, ২০২১

 

উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রীমতী আনন্দিবেন প্যাটেলজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য এবং লক্ষ্ণৌ-এর সাংসদ, আমার অগ্রজ বন্ধু শ্রী রাজনাথ সিং-জি, শ্রী হরদীপ সিং পুরীজি, শ্রী মহেন্দ্রনাথ পান্ডেজি, উত্তরপ্রদেশের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী কেশব প্রসাদ মৌর্যজি, শ্রী দীনেশ শর্মাজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী কৌশল কিশোরজি, উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকারের মন্ত্রীগণ, উপস্থিত সাংসদ ও বিধায়কগণ, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাগত সমস্ত সম্মানিত মন্ত্রীগণ, উপস্থিত অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ আর আমার উত্তরপ্রদেশের প্রিয় ভাই ও বোনেরা!

লক্ষ্ণৌ এলে অবধ-এর এই অঞ্চলের ইতিহাস, মলিহাবাদী দশহরির মতো মিষ্টি কথ্যভাষা, অনুপম খাদ্যাভ্যাস, দক্ষ কারিগরি-বিদ্যা, কলা ও স্থাপত্যের অনেক নিদর্শন সামনে চলে আসে। আমার একথা ভেবে খুব ভালো লাগছে যে তিনদিন ধরে লক্ষ্ণৌতে ‘নিউ আর্বান ইন্ডিয়া’ অর্থাৎ, ভারতের শহরগুলির নতুন স্বরূপ নিয়ে সারা দেশের বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হয়ে এখানে আলাপ-আলোচনা করবেন। এখানে যে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে তা স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবের ৭৫ বছরের সাফল্য এবং দেশের নতুন সঙ্কল্পগুলিকে খুব ভালোভাবে তুলে ধরেছে। আমি অনুভব করেছি, বিগত দিনগুলিতে যখন প্রতিরক্ষার বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলাম, সেই সময় যে প্রদর্শনী চালু হয়েছিল সেটি শুধু লক্ষ্ণৌর নয়, গোটা উত্তরপ্রদেশের মানুষ সেই প্রদর্শনী দেখতে ভেঙে পড়েছিলেন। আমি এবারেও অনুরোধ জানাই , এই যে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে এটা দেখুন।  এখানকার নাগরিকদের আমার অনুরোধ,  আপনারা অবশ্যই এটা দেখে অনুভব করুন যে আমরা সবাই মিলে দেশকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যেতে পারি! আমাদের ওপর আস্থা প্রদর্শনকারী সবাই এসে দেখুন। এটি খুব ভালো প্রদর্শনী। আপনাদের অবশ্যই দেখা উচিৎ।

আজ উত্তরপ্রদেশের শহরগুলির উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত ৭৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস কিংবা উদ্বোধন করা হয়েছে। আজই উত্তরপ্রদেশের ৭৫টি জেলায় ৭৫ হাজার সুবিধাভোগীরা তাঁদের জন্য তৈরি করা পাকা বাড়ির চাবি হাতে পেয়েছেন। এই সমস্ত বন্ধু এ বছর দশহরা, দীপাবলী, ছট, গুরুপরব, ঈদ-এ-মিলাদ ইত্যাদি আগামী অনেক উৎসব তাঁদের নিজেদের বাড়িতেই পালন করতে পারবেন। একটু আগেই এঁদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি, আর তাঁদের বাড়িতে খাওয়ার নিমন্ত্রণও পেয়েছি। আমি এজন্য অত্যন্ত আনন্দিত। দেশে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে যে পাকা বাড়ি গৃহহীনদের দেওয়া হচ্ছে, সেগুলির মধ্যে ৮০ শতাংশ বাড়ির মালিকানার অধিকার পাচ্ছেন বাড়ির বয়ঃজ্যেষ্ঠ মহিলা সদস্যা, অথবা কোনও একজন মহিলা যৌথ মালিকানা পাচ্ছেন। 

আর আমাকে এটা বলা হয়েছে যে উত্তরপ্রদেশ সরকারও মহিলাদের মালিকানাধীন বাড়ি নিয়ে একটি খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূল্যের বাড়ি রেজিস্ট্রি করাতে মহিলাদের ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটিতে ২ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা যখন এমনি বলি তখন মহিলাদের নামে মন থেকে কেউ রেজিস্ট্রি করায় না। আমি আপনাদেরকে একটু সেই দিকে নিয়ে যেতে চাই, তখন বুঝতে পারবেন যে তাঁদের নামে রেজিস্ট্রি করার সিদ্ধান্তটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। 

আপনারা দেখুন, যে কোনও বাড়িতে যখন আপনারা যান … আমি বলছি না যে এটা ভুল, আমি শুধু পরিস্থিতিটা বোঝাতে চাইছি। যদি বাড়ির মালিকানা স্বামীর নামে থাকে, জমির মালিকানা স্বামীর নামে থাকে, গাড়ির মালিকানা স্বামীর নামে থাকে, স্কুটারের মালিকানা স্বামীর নামে থাকে, দোকানের মালিকানা স্বামী কিংবা ছেলে-মেয়ের নামে থাকে কিন্তু স্ত্রী বা মায়ের নামে কিছুই থাকে না। একটি সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য, ভারসাম্য রক্ষার খাতিরে কিছু পদক্ষেপ নিতেই হয়! সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সরকার গৃহহীনদের যে গৃহ দেবে তার মালিকানার অধিকার অবশ্যই মহিলাদের দেওয়া হবে। 

বন্ধুগণ,

আজ লক্ষ্ণৌ-র জন্য আরেকটি কারণে অত্যন্ত আনন্দের দিন। লক্ষ্ণৌ আমাদের দেশকে অটলজির মতো একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ভারতমাতার প্রতি সমর্পিত রাষ্ট্র নায়ক দিয়েছে। আজ তাঁর স্মৃতিতে বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ে অটল বিহারী বাজপেয়ী চেয়ার স্থাপন করা হল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই চেয়ার অটলজির দর্শন, তাঁর কর্মধারা আর দেশ গঠনের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরবে। স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে ভারতের বিদেশ নীতিতে  অনেক নতুন মোড় এসেছে, এসবের পেছনে ছিল অটলজি প্রদর্শিত নতুন পথ নির্দেশিকা। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর প্রচেষ্টা আজকের ভারতের শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। আপনারা ভাবুন, একদিকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা আর অন্যদিকে সোনালী চতুষ্কোণ – উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম আর উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম করিডর অর্থাৎ, দু’দিকে একসঙ্গে দৃষ্টি এবং দু’দিকেই উন্নয়নের প্রচেষ্টা।

বন্ধুগণ,

অনেক বছর আগে যখন অটলজি জাতীয় মহাসড়কের মাধ্যমে দেশের মহানগরগুলিকে যুক্ত করার ভাবনা রেখেছিলেন, তখন কিছু মানুষ বিশ্বাসই করতেন না যে এটা সম্ভব হতে পারে। ৬-৭ বছর যখন আমি গরীবদের জন্য কোটি কোটি পাকা বাড়ি, কোটি কোটি শৌচালয়, দ্রুতগতির রেল, শহরে শহরে নলের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ, অপটিক্যাল ফাইবারের মতো বড় পরিকাঠামো প্রকল্প নিয়ে কথা বলতাম; তখনও কিছু মানুষ তাঁদের অভ্যাসবশত এরকমই ভাবতেন যে এত কিছু কিভাবে হওয়া সম্ভব!  কিন্তু আজ এই অভিযানগুলিতে ভারতের সাফল্য বিশ্বের সামনে দৃষ্টান্তস্বরূপ। ভারত আজ পিএম আবাস যোজনার মাধ্যমে যত পাকা বাড়ি তৈরি করে নিচ্ছে তা বিশ্বের অনেক দেশের মোট জনসংখ্যা থেকেও বেশি।

একটা সময় ছিল যখন বাড়ি তৈরি মঞ্জুর হওয়া থেকে শুরু করে বাস্তবায়িত হতে অনেক সময় লেগে যেত। যে বাড়িগুলি তৈরি হত, সেগুলি বসবাসযোগ্য কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠত। বাড়িগুলির আকার ছিল ছোট, নির্মাণের সরঞ্জাম হত নিচুমানের, অ্যালটমেন্টের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হত – এই সবকিছু আমার গরীব ভাই বোনেদের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হয়ে উঠত না। ২০১৪ সালে আমাদেরকে যখন দেশ সেবা করার সুযোগ দিয়েছে আর সেজন্য আমি উত্তরপ্রদেশবাসীর কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ, আপনারাই আমাকে দেশের সাংসদ নির্বাচন করে পাঠিয়েছেন। যখন আপনারা আমাদের দায়িত্ব দিলেন তারপর থেকে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনের সৎ প্রচেষ্টা করে গিয়েছি।

বন্ধুগণ,

২০১৪ সালের আগে যে সরকার ছিল, তারা দেশে নাগরিক আবাসন প্রকল্পগুলির মাধ্যমে মাত্র ১৩ লক্ষ বাড়ি মঞ্জুর করেছিল। এই পরিসংখ্যানটা আপনাদের মনে থাকবে? পুরনো সরকার ১৩ লক্ষ বাড়ি মঞ্জুর করেছিল, আর এর মধ্যে তাঁদের শাসনকালে মাত্র ৮ লক্ষ বাড়ি তৈরি করতে পেরেছিল। ২০১৪-র পর আমাদের সরকার পিএম আবাস যোজনার মাধ্যমে দেশের শহরাঞ্চলে ১ কোটি ১৩ লক্ষেরও বেশি বাড়ি তৈরির প্রকল্প মঞ্জুর করেছে। কোথায় ১৩ লক্ষ আর কোথায় ১ কোটি ১৩ লক্ষ! ইতিমধ্যেই আমরা ৫০ লক্ষেরও বেশি বাড়ি তৈরি করে তা গৃহহীনদের হাতে তুলে দিয়েছি। 

বন্ধুগণ,

ইঁট-পাথর জুড়ে দালান তৈরি করা সম্ভব, কিন্তু তাকে সব সময় বাড়ি বলা যায় না। একটা দালান তখনই বাড়ি হয়ে ওঠে যখন তার সঙ্গে প্রত্যেক পরিবারের সম্পর্ক যুক্ত হয়, তার মধ্যে আপনত্ব থাকে। পরিবারের সদস্যদের জীবনের লক্ষ্য পূরণে যে দালান সহায়ক হয়, সেটিই বাড়িতে পরিণত হয়।

বন্ধুগণ,

আমরা বাড়ির নকশা থেকে শুরু করে নির্মাণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা সুবিধাভোগীদের হাতেই তুলে দিয়েছি। তাঁরা বরাদ্দ করা টাকা নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো যেমন খুশি বাড়ি বানাতে পারেন। দিল্লির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে কেউ যেন ঠিক না করে দেয় যে গৃহহীনের বাড়ির জানালা এদিকে হবে না ওদিকে হবে। ২০১৪-র আগে সরকারি প্রকল্পগুলিতে গৃহহীনদের জন্য বাড়ির আকার কী হবে তার কোনও স্পষ্ট নীতিই ছিল না। কোথাও ১৫ বর্গ মিটারের বাড়ি তৈরি হত আবার কোথাও ১৭ বর্গ মিটারের বাড়ি! এত ছোট জমিতে যে বাড়িগুলি তৈরি হত সেগুলিতে বসবাসকারী মানুষ অনেক সমস্যায় পড়তেন। 

২০১৪-র পর আমাদের সরকার বাড়ির আকার নিয়েও স্পষ্ট নীতি রচনা করে। আমরা এটা ঠিক করি যে কোনও গৃহহীনকে ২২ বর্গ মিটারের ছোট বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে না। এভাবেই আমরা বাড়ির আকার বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ি তৈরির টাকা সরাসরি সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে শুরু করি। গরীবদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গৃহ নির্মাণের জন্য পাঠানো এই টাকা কত তা নিয়ে কোথাও তেমন সমালোচনা শুনিনি। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে ‘পিএম আবাস যোজনা- শহরাঞ্চলীয়’ প্রকল্পের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যেক দরিদ্র মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১ লক্ষ টাকা করে পাঠিয়েছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের দেশে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি প্রায়ই বলতে থাকেন যে, আমরা মোদীকে প্রধানমন্ত্রী তো বানিয়ে দিলাম, কিন্তু মোদী কী করেছে? আজ প্রথমবার আমি একথা বলতে চাই, এটা শোনার পর অনেক বড় বড় বিরোধী যাঁরা দিন-রাত আমাদের বিরোধিতা করার জন্যই নিজেদের প্রাণশক্তি খরচ করেন, আমি নিশ্চিত, তাঁরা আমার এই ভাষণ শোনার পর ঝাঁপিয়ে পড়বেন। আমি জানি। তবুও আমার মনে হয় আমার বলা উচিৎ।   

আমার যে বন্ধুরা, যাঁরা আমার পরিবারের মানুষ, যাঁরা বস্তিতে থাকেন, যাঁদের মাথার ওপর পাকা ছাদ নেই, এরকম ৩ কোটি পরিবারকে আমাদের শাসনকালে একটিমাত্র প্রকল্প থেকে লক্ষপতি হওয়ার সুযোগ হয়েছে। এ দেশে সব মিলিয়ে ২৫-৩০ কোটি পরিবার রয়েছে। তার মধ্যে এত ছোট শাসনকালে ৩ কোটি গরীব পরিবারকে লক্ষপতি করে দেওয়া নিজে থেকেই একটি বড় কথা। এখন আপনারা বলবেন, মোদী এত বড় দাবি জানাচ্ছে, কি করে বাস্তবায়িত করবে? প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে দেশে যে ৩ কোটির কাছাকাছি বাড়ি তৈরি হয়েছে, আপনারা সেগুলির দাম কল্পনা করুন! এই দামের কথা ভাবলেই বুঝতে পারবেন যে এই মানুষেরা প্রত্যেকেই আজ লক্ষপতি। ৩ কোটি পাকা বাড়ি বানিয়ে আমরা গরীব পরিবারগুলির জীবনে সবচাইতে বড় স্বপ্ন পূরণ করেছি।

বন্ধুগণ,

আমার সেদিনের কথা মনে পড়ে যখন সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণের কাজ আমরা বাস্তবায়িত করতে পারছিলাম না। আজ লক্ষ্ণৌতে এসে আমার কেমন মনে হচ্ছে তা আপনাদেরকে বিস্তারিত বলা উচিৎ। আপনারা কি শুনতে প্রস্তুত? আমাদের ‘আর্বান প্ল্যানিং’ কেমন রাজনীতির শিকার হয় তা বোঝার জন্যও উত্তরপ্রদেশের মানুষদের এটা জানা প্রয়োজন। 

বন্ধুগণ,

গরীবদের গৃহ নির্মাণের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছিল। তা সত্ত্বেও ২০১৭ সালের আগে, যোগীজির নেতৃত্বাধীন সরকার আসার আগের কথা বলছি, তখন উত্তরপ্রদেশে যে সরকার ছিল তারা কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো টাকা দিয়ে দরিদ্রদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে দিতে চাইছিল না। আমরা তাদের কাছে বারবার আবেদন জানিয়েছি। ২০১৭ সালের আগে পিএম আবাস যোজনার মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশের জন্য ১৮ হাজার বাড়ি তৈরির আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছিল। কিন্তু তখন এ রাজ্যে যে সরকার ছিল তারা গরীবদেরকে পিএম আবাস যোজনার মাধ্যমে ১৮টি বাড়িও বানিয়ে দেয়নি। 

আপনারা কল্পনা করতে পারেন, ১৮ হাজার বাড়ি মঞ্জুর করার পরও ১৮টি বাড়িও তারা বানায়নি। আমার দেশের ভাই-বোনেদের এটা নিয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিৎ। তাঁদের হাতে টাকা ছিল, বাড়ি বানানোর মঞ্জুরি ছিল, কিন্তু তবুও তৎকালীন সরকার এতে ক্রমাগত নানারকম বাধা সৃষ্টি করছিল। তাঁদের এই কুকর্মের কথা উত্তরপ্রদেশের গরীবরা কখনও ভুলতে পারবেন না। 

বন্ধুগণ,

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে যোগীজির নেতৃত্বাধীন সরকার আসার পর উত্তরপ্রদেশের শহুরে গরীবদের ৯ লক্ষ বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শহরে বসবাসকারী আমাদের গরীব ভাই-বোনেদের জন্য উত্তরপ্রদেশে আরও ১৪ লক্ষ বাড়ি তৈরির কাজ ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে, আর তাঁদেরকে এখন যে বাড়িগুলি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলিতে বিদ্যুৎ, পানীয় জল, রান্নার গ্যাস, শৌচালয়ের মতো পরিষেবাও রয়েছে যাতে তাঁরা গৃহ প্রবেশের আনন্দের সঙ্গেই সম্পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে সম্মানের সঙ্গে ওই বাড়িগুলিতে থাকতে পারেন।

কিন্তু আমি যখন উত্তরপ্রদেশে এসেছি, তখন আপনাদেরকেও কিছু হোম ওয়ার্ক দেওয়ার ইচ্ছা করছি। দেব? আমি হোম ওয়ার্ক দিলে আপনাদের কিন্তু করতে হবে, করবেন? অবশ্যই করবেন? দেখুন, আমি খবরের কাগজে পড়েছি, আর মঞ্চে বসে থাকা আপনাদের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রীকেও সম্ভবত আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম, এবার দীপাবলীতে নাকি অযোধ্যায় ৭.৫ লক্ষ প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের অনুষ্ঠান হবে? আমি উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দাদের আহ্বান জানাই, এই প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের প্রতিযোগিতায় আপনারাও অংশগ্রহণ করুন। দেখুন, অযোধ্যা বেশি প্রদীপ জ্বালায় নাকি যে ৯ লক্ষ পরিবারকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে সেই ৯ লক্ষ বাড়িতে ১৮ লক্ষ প্রদীপ জ্বালিয়ে দেখাবেন! এটা কি সম্ভব হতে পারে? গত সাত বছরে যে ৯ লক্ষ গৃহহীন পরিবার বিনামূল্যে নতুন বাড়ি পেয়েছেন, তাঁরা মাত্র দুটি করে প্রদীপ তাঁদের বাড়ির সামনে জ্বালাতে পারবেন? তাহলেই দেখবেন অযোধ্যায় প্রজ্জ্বলিত ৭.৫ লক্ষ প্রদীপের পাশাপাশি আমার গরীব ভাই-বোনেদের বাড়িতে ১৮ লক্ষ প্রদীপ জ্বলবে। তাহলে ভগবান রাম কত খুশি হবেন?

ভাই ও বোনেরা,

বিগত দশকগুলিতে আমাদের শহরগুলিতে অনেক অনেক বড় বড় গগনচুম্বী অট্টালিকা অবশ্যই তৈরি হয়েছে কিন্তু যাঁদের শ্রমে এই গগনচুম্বী তৈরি হয়েছে তাঁদের ভাগে পড়েছে ঘিঞ্জি বস্তিতে জীবনযাপন! সেই বস্তিগুলির এমন অবস্থা ছিল যেখানে পানীয় জল আর শৌচালয়ের মতো প্রাথমিক পরিষেবাও ছিল না। বস্তিতে বসবাসকারী আমার সেই ভাই ও বোনেরা এখন বিনামূল্যে পাকা বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে সরকার থেকে সাহায্য পাচ্ছেন। এর পাশাপাশি গ্রাম থেকে রোজগারের খোঁজে শহরে এসে শ্রমিক হয়ে ওঠা মানুষেরা যাতে যথার্থ ভাড়ায় উন্নত বসবাসের জায়গা পান সেজন্যও সরকার নতুন প্রকল্প চালু করেছে। 

বন্ধুগণ,

শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষদের কষ্ট ও সমস্যা দূর করার জন্য আমাদের সরকার অনেক আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি বা রেরা আইন এমনই একটি বড় পদক্ষেপ। এই আইনের মাধ্যমে আবাসন ক্ষেত্রে যে অবিশ্বাস ও প্রতারণার আবহ ছিল, তা থেকে এই ক্ষেত্রটিকে বের করে আনার ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হয়েছে। এই আইন প্রণয়নের পর বাড়ির ক্রেতারা যথাসময়ে সুবিচার পাচ্ছেন। আমরা শহরগুলিতে অসম্পূর্ণ পড়ে থাকা বাড়িগুলি সম্পূর্ণ করার জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গড়ে তুলেছি। 

মধ্যবিত্তদের নিজস্ব বাড়ির স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রথমবার বাড়ির ক্রেতাদের লক্ষ লক্ষ টাকা সাহায্য করা হচ্ছে। তাঁরা ন্যূনতম সুদে ঋণ নিতে পারছেন। সম্প্রতি মডেল টেনেন্সি অ্যাক্ট রচনা করেও রাজ্যগুলিকে পাঠানো হয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে উত্তরপ্রদেশ সরকার দ্রুত সেই আইন রাজ্যে কার্যকর করেছে। এই আইনের মাধ্যমে বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটে উভয়ের অনেক বছরের পুরনো সমস্যা দূর হচ্ছে। এর ফলে, ভাড়া বাড়ি পাওয়াও সহজ হবে আর ‘রেন্টাল প্রপার্টি’র বাজারও সমৃদ্ধ হবে। অধিক বিনিয়োগ আর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

ভাই ও বোনেরা,

করোনা সঙ্কটকালে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নিয়ে যে নতুন নিয়ম তৈরি হয়েছে, এর ফলে শহরের মধ্যবিত্তদের জীবন আরও সহজ হয়েছে। ‘রিমোট ওয়ার্কিং’ আরও সহজ হওয়ায় করোনাকালে বন্ধুদের অনেক সুবিধা হয়েছে।

ভাই ও বোনেরা,

আপনারা মনে করুন, ২০১৪-র আগে আমাদের শহরগুলিতে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রায়ই নেতিবাচক সমালোচনা শুনতে পেতেন। অপরিচ্ছন্নতাকে তখন নাগরিক জীবনের স্বভাব বলে মনে করা হত। পরিচ্ছন্নতার প্রতি উদাসীনতার ফলে শহরগুলির সৌন্দর্য, শহরে আসা পর্যটকদেরও যেমন প্রভাবিত করত, তেমনই শহরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও অনেক সঙ্কট সৃষ্টি করত। এই পরিস্থিতি বদলানোর জন্য দেশে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ এবং ‘অমৃত মিশন’এর মাধ্যমে অনেক বড় অভিযান শুরু করা হয়েছে। 

বিগত বছরগুলিতে শহরগুলিতে ৬০ লক্ষেরও বেশি ব্যক্তিগত শৌচালয় আর ৬ লক্ষেরও বেশি সার্বজনিক শৌচালয় তৈরি হয়েছে। ৭ বছর আগে শহরগুলির মাত্র ১৮ শতাংশ আবর্জনা নিষ্কাশন সম্ভব হত। আজ তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। উত্তরপ্রদেশেও বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা বিগত বছরগুলিতে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। আজ আমি এখানকার প্রদর্শনীতে দেখেছি, এরকম অনেক জিনিস রাখা হয়েছে যা দেখে মনে অনেক আনন্দ পেয়েছি। এখন স্বচ্ছ ভারত অভিযান ২.০-র মাধ্যমে শহরগুলির প্রান্তে গড়ে ওঠা আবর্জনার পাহাড়গুলি সরানোর অভিযানও শুরু করে দেওয়া হয়েছে। 

বন্ধুগণ,

শহরগুলির সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এলইডি লাইট। সরকার অভিযান চালিয়ে দেশে ৯০ লক্ষেরও বেশি পুরনো স্ট্রিট লাইটকে এলইডি লাইটে পরিবর্তিত করেছে। এলইডি স্ট্রিট লাইট লাগানোর ফলে শহরের পৌরসভাগুলির প্রত্যেক বছর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এখন তাঁরা এই অর্থ উন্নয়নের অন্যান্য কাজে খরচ করতে পারছেন। এলইডি লাগানোর ফলে শহরবাসীদের বিদ্যুতের বিলেও সাশ্রয় হয়েছে আর অনেক মানুষ ব্যবহার করার ফলে যে এলইডি বাল্বের দাম আগে ৩০০ টাকারও বেশি ছিল তা সরকারের ‘উজালা’ যোজনার মাধ্যমে ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমেই প্রায় ৩৭ কোটি এলইডি বাল্ব বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে, গরীব ও মধ্যবিত্তদের বিদ্যুতের বিলে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। 

বন্ধুগণ,

একবিংশ শতাব্দীর ভারতের শহরগুলির কায়াকল্পের সবচাইতে প্রধান উপায় হল বেশি করে প্রযুক্তির ব্যবহার। শহুরে উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত যত সংস্থা রয়েছে, যত সিটি প্ল্যানার্স রয়েছেন, তাঁদেরকে এই প্রযুক্তিকেই সবচাইতে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। 

বন্ধুগণ,

যখন আমরা গুজরাটের ছোট্ট এলাকায় থাকতাম আর লক্ষ্ণৌ-এর কথা শুনতাম, তখন অনেকেই বলতেন, লক্ষ্ণৌ-র মানুষ এতই ভদ্র যে, কখনও লক্ষ্ণৌ গেলে শুনতে পাবেন ‘পহেলে আপ, পহেলে আপ’। আজ মজা করে হলেও আমাদের প্রযুক্তিকে বলতে হবে ‘পহেলে আপ’! ভারতে প্রযুক্তির মাধ্যমেই বিগত ৬-৭ বছরে শহুরে এলাকায় অনেক বড় পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। দেশের ৭০টিরও বেশি শহরে আজ যে ‘ইন্টিগ্রেটেড কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’ চালু রয়েছে সেগুলির বৃদ্ধি তো প্রযুক্তিই। আজ দেশের প্রায় সমস্ত শহরে সিসিটিভি ক্যামেরার যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে, প্রযুক্তি তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। দেশের ৭৫টি শহরে এখন ৩০ হাজারেরও বেশি আধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা চালু রয়েছে। সেগুলির ফলে এখন অপরাধীদের ১০০ বার ভাবতে হয়। এই সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি অপরাধীদের ধরতে এবং সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আজ ভারতের শহরগুলি থেকে প্রতিদিন যে হাজার হাজার টন বর্জ্য নিষ্কাশিত হচ্ছে, প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে, সড়ক নির্মাণ হচ্ছে তার গতি বেড়েছে প্রযুক্তির কারণেই। বর্জ্য থেকে সম্পদ আহরণের অনেক প্রকল্প আজ আমি এই প্রদর্শনীতে দেখেছি। প্রতিটি প্রকল্পই খুঁটিয়ে দেখলে অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক।

বন্ধুগণ,

আজ সারা দেশে যে ‘সিউয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ গড়ে তোলা হচ্ছে, আধুনিক প্রযুক্তি সেগুলির ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ন্যাশনাল কমন মোবিলিটি কার্ড তো প্রযুক্তিরই উপহার। আজ এখানে এই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ৩৫টি বিদ্যুৎচালিত বাসকে সবুজ পতাকা দেখানো হয়েছে। এই অত্যাধুনিক বাসগুলিও আধুনিক প্রযুক্তিরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

বন্ধুগণ,

আমি একটু আগেই ‘লাইট হাউজ প্রোজেক্ট’এর অন্তর্গত লক্ষ্ণৌ-এ নির্মীয়মান ‘লাইট হাউজ’ বাড়িটি দেখেছি। দেখে বুঝতে পেরেছি যে এই ধরনের বাড়িগুলিতে ব্যবহৃত নতুন প্রযুক্তির ফলে এর দেওয়ালে প্লাস্টার কিংবা পেইন্টের প্রয়োজন পড়বে না। এগুলিতে আগে থেকে তৈরি সম্পূর্ণ দেওয়াল লাগিয়ে দেওয়া হবে। ফলে, অনেক দ্রুত বাড়িগুলি তৈরি করা যাবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সারা দেশ থেকে যে বন্ধুরা লক্ষ্ণৌ এসেছেন, তাঁরা এই প্রকল্প থেকে অনেক কিছু শিখে যাবেন আর নিজেদের শহরে সেগুলি প্রয়োগের চেষ্টা করবেন। 

বন্ধুগণ,

প্রযুক্তি কিভাবে গরীবদের জীবন পালটে দেয় তার একটি উদাহরণ পিএম স্বনিধি যোজনা। লক্ষ্ণৌ-এর মতো অনেক শহরে অনেক ধরনের বাজারের পরম্পরা রয়েছে। কোথাও ‘বুধ বাজার’, কোথাও ‘গুরু বাজার’ আবার কোথাও ‘শনি বাজার’ অত্যন্ত জনপ্রিয়, আর এই বাজারগুলিতে আমাদের ঠেলাওয়ালা ও রেললাইনের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা ভাই-বোনেরা তাঁদের জিনিস নিয়ে বসে বিকিকিনি করেন। আমাদের এই ভাই-বোনদের জন্যও এখন প্রযুক্তি প্রিয় বন্ধু হয়ে এসেছে। পিএম স্বনিধি যোজনার মাধ্যমে ঠেলাওয়ালা ও রেললাইনের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা হকার ভাই-বোনেরা ব্যাঙ্ক থেকে সহজেই ঋণ নিতে পারছেন। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫ লক্ষেরও বেশি বন্ধুদের ২,৫০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ৭ লক্ষেরও বেশি বন্ধু স্বনিধি যোজনার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। এখন তাঁদের ব্যাঙ্কিং হিস্ট্রি তৈরি হচ্ছে আর তাঁরা আগের থেকে অনেক বেশি ডিজিটাল লেনদেন করছেন। 

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে স্বনিধি যোজনার দ্বারা সবচাইতে উপকৃত দেশের অগ্রগামী তিনটি শহরের মধ্যে দুটিই আমাদের উত্তরপ্রদেশের শহর। গোটা দেশে এক নম্বরে রয়েছে লক্ষ্ণৌ আর দু’নম্বরে কানপুর। করোনার এই সঙ্কটকালে আমার ঠেলাওয়ালা ও রেললাইনের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা হকার ভাই-বোনেদের জন্য এটা অনেক বড় সাহায্য। এই প্রকল্প কার্যকর করার জন্য আমি যোগীজির নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করছি। 

বন্ধুগণ,

আজ যখন আমাদের ঠেলাওয়ালা ও রেললাইনের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা হকার ভাই-বোনেরা ডিজিটাল লেনদেন করছেন তখন আমার এটাও মনে পড়ছে, আগে কিভাবে এই লেনদেন নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করা হত। বলা হত যে এই কম লেখাপড়া জানা মানুষরা কিভাবে ডিজিটাল লেনদেন করবেন। কিন্তু স্বনিধি যোজনার সঙ্গে যুক্ত ঠেলাওয়ালা ও রেললাইনের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা হকার ভাই-বোনেরা ইতিমধ্যেই ৭ কোটিরও বেশি বার ডিজিটাল লেনদেন করে ফেলেছেন। এখন তাঁরা পাইকারী বিক্রেতাদের থেকেও কিছু কিনতে গেলে ডিজিটাল পেমেন্টই করেন। আজ এরকম বন্ধুদের তৎপরতার ফলেই ভারত ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি করছে। ২০২১-এর জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর অর্থাৎ, বিগত তিন মাসের প্রত্যেক মাসে ভারতে  ৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ডিজিটাল লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ, দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে মানুষের আসা-যাওয়া ততটাই হ্রাস পেয়েছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি দেশের সাধারণ মানুষের প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক এবং প্রযুক্তিক্ষেত্রে ভারতের শক্তি ও সম্ভাবনাকেই তুলে ধরে।

বন্ধুগণ,

বিগত বছরগুলিতে ভারতে ট্র্যাফিক সমস্যা এবং পরিবেশ দূষণ  – উভয় সমস্যা দূরীকরণের ক্ষেত্রে সংহত দৃষ্টিকোণ নিয়ে কাজ হয়েছে। মেট্রো যাতায়াত ব্যবস্থা এর একটি উন্নত উদাহরণ। আজ ভারতে সারা দেশের বড় শহরগুলিতে দ্রুতগতিতে মেট্রো রেল পরিষেবা সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০১৪ সালে সারা দেশে ২৫০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে মেট্রো রেল চলত। সেই জায়গায় আজ ৭৫০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে মেট্রো রেল চলে, আর আমি আজ আপনাদের গর্বের সঙ্গে বলতে পারছি, আরও ১,০৫০ কিলোমিটার মেট্রো রেল সম্প্রসারণের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ছয়টি শহরেও মেট্রো রেলের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে। ১০০টির বেশি শহরে ইলেক্ট্রিক বাস চালানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ কিংবা উড়ান যোজনা এই শহর উন্নয়নের গতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর ভারত এখন মাল্টি-মডেল কানেক্টিভিটির শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাবে আর সেজন্য প্রস্তুতি অনেক দ্রুতগতিতে চলছে।

আর বন্ধুগণ,

শহুরে পরিকাঠামো উন্নয়নের এই সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের সবচাইতে বড় ইতিবাচক লাভ হল কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। শহরগুলিতে মেট্রো রেল সম্প্রসারণের কাজ থেকে শুরু করে গৃহ নির্মাণের কাজ, বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহের কাজ যত বাড়ছে তত বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতিকে বলেন ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার। সেজন্যই আমাদের এই প্রকল্পগুলির গতি বজায় রাখতে হবে। 

ভাই ও বোনেরা,

উত্তরপ্রদেশে গোটা ভারতের তথা ভারতীয় সংস্কৃতির প্রাণভোমরা রয়েছে। এই রাজ্যই প্রভু শ্রীরামের ভূমি, শ্রীকৃষ্ণের ভূমি, ভগবান বুদ্ধের ভূমি। উত্তরপ্রদেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে সংরক্ষিত রাখা, সাজিয়ে রাখা, শহরগুলিকে আধুনিক করে তোলা আমাদের সকলের দায়িত্ব। ২০১৭ সালের আগেকার উত্তরপ্রদেশ আর তার পরের উত্তরপ্রদেশের পার্থক্য কতটা তা উত্তরপ্রদেশের মানুষ খুব ভালোভাবেই জানেন। আগে উত্তরপ্রদেশে বিদ্যুৎ যতটা আসত, তার থেকে বেশি যেত! আর সেখানেই আসত যেখানে নেতারা চাইতেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ জনগণের জন্য সুবিধা নয়, শাসন ক্ষমতায় থাকা মানুষদের হাতিয়ার ছিল। রাস্তা তখনই তৈরি হত যখন কারও তাগড়া সুপারিশ থাকত। জল সরবরাহের পরিস্থিতি কেমন ছিল তা-ও আপনারা ভালোভাবেই জানেন।

এখন বিদ্যুৎ সবাইকে, সর্বত্র, সমান মাত্রায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এখন দরিদ্র মানুষের বাড়িতেও বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। গ্রামের সড়কগুলি আর এখন কারোর সুপারিশের মুখাপেক্ষী নয়। অর্থাৎ, শহুরে উন্নয়নের জন্য যতটা ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন, তা আজ উত্তরপ্রদেশে রয়েছে। 

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আজ উত্তরপ্রদেশে যে প্রকল্পগুলির শিলান্যাস হয়েছে সেগুলি যোগীজির নেতৃত্বে দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত হবে আর যে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন হয়েছে সেগুলির জন্য আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। 

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1762922) Visitor Counter : 208