স্বাস্থ্যওপরিবারকল্যাণমন্ত্রক

কোভিড-১৯ টিকার জন্য বন্ধ্যাত্বের সম্ভাবনা নেই

কোভিডের টিকাকরণের পর বেশিরভাগ মানুষের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে টিকার কোনো কার্যকারিতা নেই
‘ভারতে খুব শীঘ্রই ৬ রকমের কোভিড-১৯ টিকা আসছে, প্রতি মাসে ৩০-৩৫ কোটি ডোজ আমরা সংগ্রহ করতে পারবো, যার ফলে দৈনিক ১ কোটি মানুষের টিকাকরণ সম্ভব হবে’
এনটিএজিআই-এর কার্যনির্বাহী গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ডাঃ এন কে আরোরা কোভিড-১৯এর টিকাকরণ সংক্রান্ত সাধারণ প্রশ্নগুলির উত্তর দিয়েছেন

Posted On: 25 JUN 2021 10:29AM by PIB Kolkata

মুম্বাই, ২৫  জুন, ২০২১

 

        ভারতে খুব শীঘ্রই জাইডাস ক্যাডিলার ডিএনএ প্লাজমিড টিকা আসতে চলেছে। বিশ্বে এই ধরণের টিকা এর আগে ব্যবহৃত হয়নি। এছাড়া প্রোটিনের একটি সাব-ইউনিট টিকা౼ বায়োলজিক্যাল ই টিকাও আমরা পেতে চলেছি। ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ অন ইমিউনিজেশন (এনটিওজিআই) কার্যনিবার্হী গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ডাঃ নরেন্দ্র কুমার আরোরা এই তথ্যগুলি জানিয়ে বলেছেন, যে  টিকাগুলির কথা উল্লেখ করা হল, সেগুলির পরীক্ষা-নিরীক্ষা যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক। এই টিকাগুলি সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসে যাবে। সেরাম ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়া এবং জনসন অ্যান্ড জনসন নোভাভ্যাক্স সহ মোট ২টি টিকা ভারতে আনতে চলেছে। ভারত বায়োটেক এবং সেরামের উৎপাদন ক্ষমতা জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে দেশে টিকা সরবরাহ বাড়বে। আগস্টে আমরা ৩০-৩৫ কোটি ডোজ পাবো। অর্থাৎ প্রত্যেকদিন ১ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে।   

        কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের ইন্ডিয়া সায়েন্স চ্যানেলে ভারতের কোভিড-১৯ টিকাকরণের বিষয়ে চেয়ারপার্সন বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছেন।

        প্রশ্ন ১- নতুন টিকাগুলি কতটা কার্যকর ?

        উত্তর - যখন আমরা বলছি একটি নির্দিষ্ট টিকা ৮০ শতাংশ কার্যকর তখন তার অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে কোভিড-১৯এর কারণে অসুখের সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ কমে যায়। সংক্রমণ এবং অসুখের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। যখন কেউ কোভিডে সংক্রমিত হন অথচ তার শরীরে কোনো উপসর্গ থাকেনা সেই সময় ওই ব্যক্তিকে সংক্রমিত বলা যায়। কিন্তু যখন সংক্রমিত কোনো ব্যক্তির শরীরে উপসর্গ দেখা দেয় তখন তিনি কোভিডে অসুস্থ হয়েছেন বলা যায়। পৃথিবীতে সমস্ত টিকা রোগ প্রতিরোধ করে। টিকাকরণের পর রোগের প্রাবল্য হ্রাস পায় এবং টিকা নেওয়ার পর সংক্রমণের কারণে মৃত্যুর সম্ভাবনা নগন্য। কোনো টিকার কার্যকারিতা ৮০ শতাংশের অর্থ টিকাকরণের পর মাত্র ২০ শতাংশ মানুষের শরীরে কোভিডের হালকা সংক্রমণ হতে পারে।

        ভারতে যে টিকাগুলি পাওয়া যায় সেগুলি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সক্ষম। দেশের ৬০-৭০ শতাংশ মানুষের যদি টিকাকরণ হয় তাহলে ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব। সরকার প্রথমে প্রবীণ নাগরিকদের কোভিডের টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের প্রথমে টিকাকরণ হয়েছে। এর ফলে মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে এবং আমাদের স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর চাপ কমেছে।  

        প্রশ্ন ২- কোভিডের টিকার বিষয়ে অনেক ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। আপনি যদি এই বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করেন।

        সম্প্রতি আমি উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানা গিয়েছিলাম। ওই দুই রাজ্যের শহর এবং গ্রামাঞ্চলে মানুষ কেন টিকা নিতে দ্বিধাগ্রস্ত সেটি জানার জন্য আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ কোভিডের বিষয়টি নিয়ে বেশি ভাবনা-চিন্তাই করেন নি। তারা এটিকে সাধারণ জ্বর বলে বিভ্রান্ত হয়েছেন। মানুষকে বুঝতে হবে,  বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোভিডের উপসর্গগুলি খুব হালকা। কিন্তু যখন সংক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যায় তখন তা আর্থিক সমস্যার কারণ হয়ে দেখা দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রাণহানি হয়।  

        আমরা টিকাকরণের মাধ্যমে কোভিডের থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারছি। এটি অত্যন্ত আশাপ্রদ। ভারতে যেসব কোভিড-১৯ প্রতিরোধের  টিকা পাওয়া যাচ্ছে সেগুলি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। সারা বিশ্বে স্বীকৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলি অনুসরণ করে প্রতিটি টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে আপনাদের প্রত্যেককে আশ্বস্ত করছি। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই যে কথাটি বলতে হয় তাহল,  সব টিকার হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। হালকা জ্বর, ক্লান্তি, যেখানে ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে সেই জায়গাতে ব্যাথা- এগুলি এক-দু দিন হতে পারে, কিন্তু গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবেনা।   

        শিশুদের যখন টিকা দেওয়া হয় তখনও জ্বর, চুলকানির মতো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পরিবারের বয়স্ক মানুষরা জানেন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়া সত্ত্বেও শিশুটির স্বাস্থ্যর জন্য ওই টিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে প্রবীণদের বুঝতে হবে আমাদের সমাজ এবং আমাদের পরিবারের জন্য কোভিড টিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে আমাদের পিছিয়ে আসলে চলবে না।  

        প্রশ্ন ৩- এ ধরণের গুজবও ছড়াচ্ছে যে,  টিকা নেওয়ার পর কারুর যদি জ্বর না হয় তাহলে তার শরীরে টিকা কাজ করছে না। এটা কতটা সত্যি ?

        উত্তরঃ - কোভিড টিকাকরণের পর বেশিভাগ মানুষের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়না। মাত্র ২০-৩০ শতাংশ মানুষের জ্বর হয়। কিন্ত এর অর্থ এই নয় যে টিকার কোনো কার্যকারিতা নেই। কারো টিকার প্রথম ডোজ পাওয়ার পর জ্বর হচ্ছে। আবার দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার পর জ্বর হচ্ছেনা। কারোর আবার তার উল্টো হচ্ছে। আসলে এই বিষয়টি আগে থেকেই বলা যায়না। প্রত্যেকের শরীরে আলাদা রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।  

        প্রশ্ন ৪- অনেক সময় দেখা যাচ্ছে কোভিড-১৯এর টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার পরেও সংক্রমণ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন এই টিকার কার্যকারিতা আসলে কতটা ?

        উত্তর- টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার পরেও সংক্রমণ হতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে সংক্রমণ খুব হালকা হয় এবং সংকটাপন্ন অবস্থা হয়না বললেই চলে। এছাড়াও বলা যায় টিকা নেওয়ার পরেও সকলকে কোভিড আচরণবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ ভাইরাস আপনার শরীর থেকে আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। যদি ৪৫ ঊর্দ্ধ নাগরিকদের টিকাকরণ না করা হত তাহলে মৃত্যুর হার বেড়ে যেত এবং হাসপাতালগুলিতে যে কি চাপ সৃষ্টি হত তা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না। এখন সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ যে কমে আসছে এর জন্য সবথেকে বেশি কৃতিত্ব টিকাকরণ অভিযানের।

        প্রশ্ন ৫-আমাদের শরীরে কতদিন অ্যান্টিবডি থাকে? কয়েকদিন পর কি আমাদের বুস্টার ডোজ নিতে হবে?

        উত্তরঃ টিকাকরণের পর স্বাভাবিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। আমাদের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সে কারণেই এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। মানুষের শরীরে যে টি-সেল তৈরি হয় তার ফলে এই ভাইরাস যখন আমাদের শরীরে ঢোকার চেষ্টা করে তখন সারা শরীর সতর্ক হয়ে ওঠে এবং এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। আর তাই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিষয়ে কোনো রকমের সন্দেহ থাকা উচিত নয়। দ্বিতীয়ত কোভিড-১৯ হচ্ছে একটি নতুন অসুখ। মাত্র দেড় বছর আমরা এই অসুখটি সম্পর্কে জানতে পারছি। গত ৬ মাস ধরে টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে মনে হয় অন্যান্য টিকার মতো এই টিকাটির কার্যকালের মেয়াদ ৬ মাস থেকে ১ বছর। যতদিন যাবে কোভিড-১৯এর বিষয়ে আমাদের ধারণা তত স্পষ্ট হবে। আবার দেখুন শরীরে টি-সেলের পরিমাপও করা যায়না। টিকাকরণের ফলে মানুষ যতদিন না জটিল কোনো অসুখের সম্মুখীন হচ্ছে ততদিন এই টিকার কার্যকারিতা থাকে বলা যেতে পারে। তবে আপাতত এই টিকার কার্যকারিতা ৬ মাস থেকে ১ বছর থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রশ্ন ৬- আমরা যদি একটি নির্দিষ্ট কোম্পানীর টিকা নিই তাহলে কি আমাদের আবারও সেই  একই কোম্পানীর টিকা নিতে হবে? যদি ভবিষ্যতে আমাদের বুস্টার ডোজ নিতে হয় তাহলেও কি একই কোম্পানীর টিকা লাগবে?

উত্তরঃ কোম্পানীর কথা না ভেবে আসুন আমরা আলোচনা করি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সম্পর্কে। একই অসুখের জন্য একাধিক টিকা উদ্ভাবন মানব সভ্যতার ইতিহাসে এর আগে কখনই হয়নি। আলাদা আলাদা টিকার ডোজ নেওয়া বা প্রয়োজন হলে একটি টিকার দুটি ডোজের পর অন্য সংস্থার টিকার ডোজ নেওয়ার ঘটনাকে আন্তঃপরিবর্তনশীলতা বলা হয়। এটি করা কতটা কার্যকর সেটি নিয়ে নানা বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। এর উত্তর খোঁজার জন্য বিজ্ঞানীরা সচেষ্ট। পৃথিবীর মধ্যে খুব কম দেশেই বিভিন্ন সংস্থার কোভিড টিকা একই সময় দেওয়া হচ্ছে। ভারত তার মধ্যে অন্যতম। তিনটি কারণে এই আন্তঃপরিবর্তনশীলতাকে মেনে নেওয়া যায়। ১. এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ২. এর মাধ্যমে টিকাকরণ অভিযানে সুবিধা হয়, ৩. এই প্রক্রিয়ায় সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। কিন্তু বাজারে টিকার ঘাটতির জন্য এই আন্তঃপরিবর্তনশীলতার নীতি গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক রীতিনীতি মেনে টিকাকরণ কর্মসূচি পালন করা হয়।  

প্রশ্ন-৭ কিছু দেশে আলাদা আলাদা টিকা প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা চলছে। ভারতেও কি এ ধরণের গবেষণা শুরু হয়েছে?

উত্তরঃ- এই ধরণের আরো গবেষণার প্রয়োজন। আগামীদিনে ভারতেও এই গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা শুরু হতে পারে।

        প্রশ্ন ৮- শিশুদের টিকাকরণ নিয়ে কি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে? শিশুদের জন্য টিকা আমরা কখন পাবো?

        উত্তরঃ ২-১৮ বছর বয়সীদের ওপর কো-ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে এর ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে শিশুদের সংক্রমণ হলেও তারা জটিল সমস্যায় পরেনা। কিন্তু শিশুদের থেকে অন্যদের শরীরে ভাইরাস ছড়িয়ে পরতে পারে। তাই শিশুদের টিকাকরণের প্রয়োজন।

        প্রশ্ন৯ - টিকাকরণের কারণে কি বন্ধ্যাত্ব হয়?

        উত্তরঃ- পোলিও টিকাকরণের সময় ভারতে এবং পৃথিবীর নানা দেশে এই গুজবটি ছড়ানো হয়েছিল। সেইসময় রটানো হয়েছিল যেসব শিশুকে পোলিও টিকা দেওয়া হচ্ছে ভবিষ্যতে তারা বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় পরতে পারে। টিকাকরণ বিরোধী গোষ্ঠীগুলিই এই ধরণের ভুল তথ্য ছড়িয়ে থাকে। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন নিবিড় বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমেই টিকা তৈরি হয়। কোনো টিকারই এ ধরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়না। মানুষকে ভুল বোঝানোর জন্যই এই গুজবগুলি ছড়ানো হয়। আমাদের মূল উদ্দেশ্য করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে, পরিবারের সদস্যদের এবং সমাজকে রক্ষা করা। তাই প্রত্যেকে এগিয়ে আসুন এবং টিকা নিন।

        পুরো সাক্ষাৎকারটি দেখতে চাইলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন-

 

https://www.indiascience.in/videos/corona-ko-harana-hai-vaccination-special-with-dr-n-dot-k-arora-chairman-covid-19-working-group-of-ntagi-g

 

CG/CB/NS



(Release ID: 1730364) Visitor Counter : 1434