বিজ্ঞানওপ্রযুক্তিমন্ত্রক

কোটার এক কৃষকের উদ্ভাবিত আম গাছে সারা বছর ফলন হয়

Posted On: 05 APR 2021 3:02PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী, ৫  এপ্রিল, ২০২১

 

রাজস্থানের কোটার কৃষক ৫৫ বছর বয়সী শ্রীকিষাণ সুমন এমন একটি আম গাছের উদ্ভাবন করেছেন যে গাছে সারা বছর ফলন হয়। সদাবাহার প্রজাতির এই গাছটি খর্বাকৃতি। সাধারণত আম গাছে যেসমস্ত অসুখ হয় এই গাছ সেসব রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।

ল্যাঙরার থেকেও স্বাদে মিষ্টি এই আম গাছ যেহেতু খর্বাকৃতি হয় তাই ছোট ছোট জায়গাতেও গাছটি পোঁতা সম্ভব। এমনকি টবেতেও এই গাছ লাগানো যায়। সারা বছর ধরে আম পাওয়ার পাশাপাশি এই প্রজাতির আমের স্বাদ মিষ্টি হয়, আঁশ কম হয় এবং এর রঙ গাঢ় কমলা। আম পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর এবং  স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।

দারিদ্রের কারণে শ্রী কিষাণজি দ্বিতীয় শ্রেণীর পর স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর তিনি পারিবারিক পেশা ౼উদ্যান পালনে যুক্ত হন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গম ও ধান চাষের পাশাপাশি তাঁর ফুলচাষ এবং বাগিচা ব্যবস্থাপনাতেও উৎসাহ ছিল। তিনি বুঝেছিলেন বৃষ্টি, পোকামাকড় বা বিভিন্ন প্রাণীর কারণে গম অথবা ধান চাষে লাভ খুব কম হয়।

এই কারণে শ্রী কিষাণজি পরিবারের আয় বাড়াতে ফুল চাষের দিকে মন দেন। প্রথম তিনি নানা ধরণের গোলাপ চাষ করে সেই গোলাপ বাজারে বিক্রি করতেন। সেই সঙ্গে আম গাছের বিষয়েও তাঁর আকর্ষণ তৈরি হয়।

২০০০ সালে তাঁর বাগানে একটি আম গাছের বৃদ্ধি যথেষ্ট হারে হওয়ায় তিনি গাছটির ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। এই গাছে সারা বছর মুকুল ধরত। এই লক্ষ্যণগুলি নজরে আসার পর শ্রী কিষাণজি ওই গাছের থেকে পাঁচটি কলমের গাছ তৈরি করেন। পুরো প্রক্রিয়াটি করতে ১৫ বছর লেগে যায়। কলমের গাছগুলিতে এক বছর পরে ফল আসতে শুরু করে।

এই উদ্ভাবনটিকে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের স্বায়ত্ত্ব শাসিত সংস্থা ন্যাশনাল ইনোভেশন ফাউন্ডেশন (এনআইএফ) স্বীকৃতি দেয়। এরপর ব্যাঙ্গালোরের  আইসিএআর- ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ হর্টিকালচার রিসার্চের সঙ্গে রাজস্থানের জয়পুরের জোবনেরের এসকেএন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এই কলম গাছের মূল্যায়ণ করে। এখন নতুন দিল্লীর আইসিএআর- ন্যাশনাল ব্যুরো অফ প্লান্ট জেনেটিক রিসোর্সেস-এ এই প্রজাতিটিকে নথিভুক্ত করার কাজ চলছে যাতে কৃষক অধিকার আইনের আওতায় সদাবাহার প্রজাতির আম গাছকে রক্ষা করা যায়। নতুন দিল্লীতে রাষ্ট্রপতি ভবনের মুঘল গার্ডেনে এনআইএফ সাদাবাহার গাছের চারা পুঁতেছে।

চিরসবুজ এই প্রজাতির গাছটি উদ্ভাবন করার জন্য শ্রীকিষাণ সুমনকে এনআইএফ-এর নবম জাতীয় তৃণমূল উদ্ভাবন ও প্রচলিত জ্ঞান পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গায় তাঁর এই উদ্ভাবনটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন কৃষক সংগঠন, সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজ্যের কৃষি দপ্তর, অসরকারি প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি জায়গায় এনআইএফ এই কলম গাছের প্রচার চালাচ্ছে।

শ্রী কিষাণ সুমন ২০১৭-১৮ সালে দেশ-বিদেশ থেকে ৮ হাজার সদাবাহারের কলম তৈরির বরাত পেয়েছেন। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ, গোয়া, বিহার, ছত্তিশগড়, গুজরাট, হরিয়ানা, হিমাচলপ্রদেশ, ঝাড়খন্ড, কেরালা, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড, দিল্লী, চন্ডীগড় এবং পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন কৃষককে ৬ হাজার চারাগাছ সরবরাহ করেছেন। রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলিতে ৫০০র বেশি সদাবাহার প্রজাতির গাছ পোঁতা হয়েছে। এছাড়াও রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাটে বিভিন্ন গবেষণাগারে ৪০০টি কলমের চারা পাঠানো হয়েছে।

 

 CG/CB/NS


(Release ID: 1709759) Visitor Counter : 485