প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
৭৪-তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লালকেল্লার প্রাকার থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ
Posted On:
15 AUG 2020 2:20PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১৫ অগাস্ট, ২০২০
আমার প্রিয় দেশবাসী,
স্বাধীনতার এই পবিত্র উৎসবে সমস্ত দেশবাসীকে অভিনন্দন। আর অনেক অনেক শুভকামনা। আজ যে আমরা স্বাধীন ভারতে শ্বাস নিচ্ছি, এর পেছনে ভারতমাতার লক্ষ লক্ষ পুত্রকন্যার ত্যাগ, তাঁদের বলিদান, আর ভারতমাতাকে স্বাধীন করে তোলার প্রতি তাঁদের সমর্পন, আজ এমন সব আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের, স্বাধীনতার বীরদের, নরসিংহদের, বীর শহীদদের প্রণাম জানানোর এই অনুষ্ঠান।
আমাদের সেনার লড়াকু জওয়ান, আমাদের আধাসামরিক দল, আমাদের পুলিশ জওয়ানরা, নিরাপত্তা বাহিনীগুলির সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক, ভারতমাতা রক্ষায় মোতায়েন থাকেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকেন। আজ তাঁদের সবাইকেও অন্তর থেকে সমাদরে স্মরণ করার, তাঁদের মহান ত্যাগ তপস্যাকে প্রণাম জানানোর উৎসব। আরও একটি নাম – শ্রী অরবিন্দ ঘোষ। বিপ্লবের দূত থেকে আধ্যাত্মিক যাত্রা, আজ তাঁর সংকল্প, তাঁর জন্মজয়ন্তী। আজ তাঁর সংকল্পকে আমাদের সংকল্পকে পূর্ণ করার জন্য তাঁর আশীর্বাদ যেন বর্ষিত হতে থাকে।
আমরা একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আজ ছোট ছোট শিশুদের আমার সামনে দেখা যাচ্ছে না। ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যত ওরা, কেন? করোনা তাঁদের সবাইকে আটকে রেখেছে। এই করোনার সময়কালে লক্ষ লক্ষ করোনা যোদ্ধা, তা তাঁরা ডাক্তার, নার্স, সাফাইকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালক, কার কার নাম বলবো? তাঁরা এত দীর্ঘ সময় ধরে যেভাবে ‘সেবা পরমো ধর্ম’ এই মন্ত্রকে পালন করে দেখিয়েছেন, পূর্ণ সমর্পনভাব নিয়ে ভারতমাতার সন্তানসন্ততিকে সেবা করেছেন, এমন সমস্ত করোনা যোদ্ধাদেরও আজ আমি প্রণাম জানাচ্ছি।
এই করোনার সময়কালে আমাদের অনেক ভাইবোন এই করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন, অনেক পরিবারের ওপর প্রভাব পড়েছে। অনেকে নিজেদের প্রাণ হারিয়েছেন। আমি এমন পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই। আর এই করোনার বিরুদ্ধে, আমার বিশ্বাস, ১৩০ কোটি দেশবাসীর অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সংকল্প শক্তি, আমাদের এক্ষেত্রেও জয় এনে দেবে, আমরা অবশ্যই বিজয়ী হবোই।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিগতদিনেও আমরা একপ্রকারে অনেক সংকটের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। বন্যার প্রকোপ, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব, পূর্ব ভারত, দক্ষিণ ভারত, পশ্চিম ভারতের কিছু এলাকা, কোথাও ধ্বস – মানুষকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, অনেক মানুষ নিজের প্রাণ হারিয়েছেন, আমি সেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রতিও সমবেদনা জানাই। আর রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এমন সঙ্কট সময়ে হামেশা, দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে, কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি মিলেমিশে দ্রুত যথাসম্ভব সাহায্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব, তা সাফল্যের সঙ্গেও করছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আমাদের জন্যে, এটা স্বাধীনতার অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা মনে করে, নতুন সংকল্পের প্রাণশক্তির উৎসে পরিণত হয়। এক প্রকার দিবসটি আমাদের জন্য নতুন প্রেরণা নিয়ে আসে, নতুন উদ্দীপনা, নতুন উৎসাহ নিয়ে আসে। আর এবার তো আমাদের জন্যে সংকল্প করা খুব জরুরীও। কারণ আগামী বছর যখন আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করবো, তখন আমরা ৭৫ বছরে প্রবেশ করবো। এটি নিজেই একটি অনেক বড় সুযোগ। সেজন্য আজ আগামী দু-বছরের জন্য, অনেক বড় সংকল্প নিয়ে আমাদের এগোতে হবে, ১৩০ কোটি দেশবাসীকে এগোতে হবে। স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষে যখন প্রবেশ করবো, আর স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ যখন পূর্ণ হবে, আমরা আমাদের সংকল্প পূর্তির এক মহা উৎসব রূপে তা পালন করবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের পূর্বজরা, অখণ্ড, একনিষ্ট তপস্যা করে, ত্যাগ ও বলিদানের উচ্চ ভাবনাগুলিকে উৎসাহ দানের মাধ্যমে আমাদের যে রকম স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু আমাদের একথা ভুললে চলবে না, যে দাসত্বের এত দীর্ঘ সময়কালে কোনও সময় এমন ছিল না, কোনও অ়ঞ্চল এমন ছিল না, যখন স্বাধীনতার আকাঙ্খা মূর্ত হয়নি, স্বাধীনতার ইচ্ছা নিয়ে কেউ না কেউ প্রচেষ্টা করেনি, লড়াই লড়েনি, ত্যাগ করেনি। আর এক প্রকার যৌবন জেলে কাটিয়ে দিয়েছেন, জীবনের সমস্ত স্বপ্নকে ফাঁসির দড়িকে চুম্বন করে আহুতি দিয়েছেন, এমন বীরদের প্রণাম জানিয়ে, অদ্ভূত... তাঁরা নিজেরা একদিকে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ধারা, আর অন্যদিকে গণ আন্দোলনের ধারা, পূজনীয় বাপুজীর নেতৃত্বে রাষ্ট্র- জাগরণের সঙ্গে গণআন্দোলনের ধারা স্বাধীনতা আন্দোলনকে একটি নতুন প্রাণশক্তি দিয়েছে। আর আমরা আজ স্বাধীনতা দিবস পালন করতে পারছি।
এই স্বাধীনতা আন্দোলন ও ভারত-আত্মাকে দাবিয়ে দেওয়ারও নিরন্তর প্রচেষ্টা হয়েছে, অসংখ্য চেষ্টা হয়েছে। ভারতকে নিজের সংস্কৃতি, রীতি, রেওয়াজ – এই সবকিছু থেকে উপড়ে ফেলার জন্য কত চেষ্টাই না হয়েছে। সেই সময়কাল ছিল, শত শত বছরের সময়কাল ছিল। সাম-দাম-দণ্ড-ভেদ সবকিছু তাদের চরমে ছিল, আর কিছু মানুষ এটা মেনে চলতেন, যে আমরা তো – ‘যাবৎ চন্দ্র দিবাকরঃ’ এখানে রাজত্ব করতে এসেছি। কিন্তু স্বাধীনতার আকাঙ্খা তাঁদের সমস্ত উচ্চাকাঙ্খাকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছে। তাঁদের ভাবনা ছিল, এত বড় বিশাল দেশ, অনেক রাজারাজড়া, নানা ভাষা উপভাষা, পোশাক পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, অনেক ভাষা, এত বিবিধতার ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা দেশ কখনও ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম লড়তে পারবে না। কিন্তু এই দেশের প্রাণশক্তি তাঁরা চিনে উঠতে পারেননি। আভ্যন্তরীণ প্রাণশক্তি। একতার সূত্র, যা আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছে, তা স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হলে, দেশ স্বাধীনতার যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে।
আমরা এটাও জানি যে সেই সময়কালে সাম্রাজ্যবাদী ভাবনা নিয়ে যারা ছিলেন, বিশ্বে যেখানে সম্ভব সেখানেই সাম্রাজ্য কায়েম করায় চেষ্টা করেছে। নিজেদের পতাকা পুঁতে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন বিশ্বের সর্বত্র একটি প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে, অলৌকিক স্তম্ভ হয়ে ওঠে, আর বিশ্বের সর্বত্র স্বাধীনতার আকাঙ্খা মূর্ত হয়ে ওঠে। আর যারা সাম্রাজ্যবাদের অন্ধ দৌড়ে ব্যস্ত ছিলেন, নিজেদের পতাকা পোঁতার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তাঁরা নিজেদের উচ্চাকাঙ্খা, সাম্রাজ্যবাদের উচ্চাকাঙ্খাকে কায়েম করতে বিশ্বকে দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধে ঠেলে দিয়েছে, মানবতাকে তছনছ করে দিয়েছে। জীবনকে ধ্বংস করেছে, বিশ্বকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে দিয়েছে। কিন্তু তেমন সময়কালেও যুদ্ধের বিভীষিকার মধ্যেও ভারত নিজের স্বাধীনতার আকাঙ্খাকে ত্যাগ করেনি, এতে কোনও শ্লথতা কিম্বা নমনীয়তাকে প্রশ্রয় দেয়নি, দেশ জীবন উৎসর্গ করার প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করতে থাকে, কষ্ট সহ্য করার সময় কষ্ট সহ্য করতে থাকে, গণআন্দোলনের প্রয়োজনে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে থাকে। আর ভারতের এই লড়াই বিশ্বে স্বাধীনতার আবহ গড়ে তোলে। আর ভারতের এই শক্তি বিশ্বে যে পরিবর্তন এনেছে, তা গোটা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। ইতিহাস এই কথা কখনও অস্বীকার করতে পারবে না।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
স্বাধীনতার লড়াইয়ে গোটা বিশ্বে ভারতের ঐক্যবদ্ধতার শক্তি, নিজের সমগ্রতার শক্তি, নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতি নিজেদের সংকল্প সমর্পন ও প্রেরণা, সেই প্রাণশক্তি সম্বল করে দেশ এগিয়ে যেতে থাকে।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
করোনা বিশ্বব্যাপী মহামারীর মাঝে ১৩০ কোটি ভারতবাসী সংকল্প নিয়েছে। এই সংকল্প, আত্মনির্ভর হওয়ার, আজ সব ভারতবাসীর মন মস্তিষ্কে ছেয়ে আছে আত্মনির্ভর ভারত – এই স্বপ্নকে সংকল্পে পরিবর্তিত হতে দেখছি। আত্মনির্ভর ভারত – এটি শুধুই একটি শব্দ নয়, এটি আজ ১৩০ কোটি দেশবাসীর জন্য মন্ত্র হয়ে উঠেছে।
আমরা জানি, যখন আত্মনির্ভরতার কথা বলি, আমাদের মধ্যে যাঁরাই ২৫-৩০ বছরের বেশি বয়স, তাঁরা সবাই নিজেদের পরিবারে তাঁদের বাবা-মা, অন্য প্রবীণদের কাছে হয়তো শুনেছেন, হ্যাঁ ভাই, পুত্র, কন্যা, তোমাদের ২০-২১ বছর বয়স হয়ে গেছে, এখন নিজের পায়ে দাঁড়াও। ২০-২১ বছর বয়সী সন্তানসন্ততিদের কাছে পরিবার তাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করে। আমরা তো স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি থেকে এক কদম দূরে রয়েছি। আমাদের জন্যও, ভারতের মতো দেশের নিজের পায়ে দাঁড়ানো অনিবার্য হয়ে উঠেছে। আত্মনির্ভর হয়ে ওঠা অনিবার্য। যা পরিবারের জন্য অনিবার্য প্রয়োজন, তা দেশের জন্যও প্রয়োজন। সেজন্য আমার বিশ্বাস, ভারত এই স্বপ্নকে চরিতার্থ করে ছাড়বে। আর তার কারণ, আমার দেশের নাগরিকদের সামর্থ্যের ওপর আমার আস্থা রয়েছে, আমি আমার দেশের প্রতিভাদের নিয়ে গর্বিত। দেশের যুবশক্তিতে, মহিলাদের মধ্যে – অপ্রতিম সামর্থ্যতে আমার ভরসা রয়েছে। আমার ভারতের ভাবনা, ভারতের দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর ভরসা রয়েছে। আর ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে, যে ভারত যদি একবার দৃঢ়সংকল্প হয়, তাহলে তা করে দেখায়।
আর সেজন্য আমরা যখন আত্মনির্ভরতার কথা বলি, বিশ্ববাসী তখন উৎসুক হয়ে ওঠে, ভারতের প্রতি প্রত্যাশাও রয়েছে। আর সেজন্য, আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণের জন্য নিজেদের যোগ্য করে তোলার অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের নিজেদের তৈরি করার অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। ভারতের ভাবনা-চিন্তায়, ভারতের মতো বিশাল দেশ, ভারত যুবশক্তিতে পরিপূর্ণ দেশ, আত্মনির্ভরতার প্রথম শর্ত হল, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ভারত। এটাই তার ভিত্তি। আর এটাই উন্নয়নকে নতুন গতি, নতুন প্রাণশক্তি জোগাতে সামর্থ্য রাখে।
‘বিশ্ব এক পরিবার’ এই শিষ্টাচারগুলি নিয়ে ভারত প্রতিপালিত হয়েছে। বেদে যেমন লেখা ছিল, ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’, তেমনি বিনোবা জি বলতেন, ‘জয় জগৎ’। আর সেজন্য আমাদের জন্য বিশ্ব একটি পরিবার। আর সেজন্য আর্থিক উন্নয়নও হবে, কিন্তু তার পাশাপাশি মানব এবং মানবতারও কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠতে হবে। একে গুরুত্ব দিতে হবে, এসব নিয়েই আমরা এগিয়ে চলি।
আজ, দুনিয়া ইন্টার- কানেক্টেড, এবং ইন্টার ডিপেন্ডেন্ট, আর সেজন্য সময়ের দাবি হল, বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের মতো দেশের অবদান বাড়াতে হবে। ভারতের মতো বিশাল দেশের অবদান বাড়াতে হবে, বিশ্বকল্যাণের জন্যও এটা ভারতের কর্তব্য। আর ভারতের অবদান বাড়াতে হলে, ভারতের নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। ভারতকে আত্মনির্ভর হতে হবে। আমাদের বিশ্বকল্যাণের জন্যও নিজেদের সমর্থ্য করে তুলতে হবে। আর তখনই আমাদের শিকড় মজবুত করতে হবে। আমাদের নিজেদের সামর্থ্য হলে তবেই আমরা বিশ্বকল্যাণের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারি।
আমাদের দেশে অপার প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, কী নেই বলুন তো? আজ সময়ের দাবি হল, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলির মূল্যয়াণ করতে হবে। আমাদের মানবসম্পদ মূল্য উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। আর আমরা দেশ থেকে কতদিন কাঁচামাল বিদেশে পাঠাতে থাকবো? কাঁচামাল বিদেশে পাঠিয়ে ফিনিসড প্রোডাক্ট আমদানি করতে থাকা, এই খেলা কতদিন চলতে থাকবে? আর সেজন্য, আমাদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। আমাদের প্রতিটি শক্তিতে বিশ্বের প্রয়োজন অনুসারে মূল্য যুক্ত করা আমাদের দায়িত্ব, এই ভ্যালু অ্যাডিশন করার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। বিশ্বে অবদান রাখতে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
এভাবে আমরা কৃষি ক্ষেত্রে, একটা সময় সময় ছিল যখন আমাদের বাইরে থেকে গম আমদানী করে আমাদের পেট ভরাতে হতো। কিন্তু আমাদের দেশের কৃষকরা অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। আত্মনির্ভর ভারত, আজ কৃষিক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয়েছে। আজ ভারতের কৃষকরা শুধু ভারতবাসীর পেট ভরান না, আজ ভারত সেই অবস্থায় রয়েছে যে, বিশ্বে যাদের প্রয়োজন, তাঁদেরকেও আমরা খাদ্য সরবরাহ করতে পারি। এটা যদি আমাদের শক্তি হয়, আত্মনির্ভরতার এই শক্তি, তাহলে আমাদের কৃষি ক্ষেত্রেও মূল্য সংযোজন অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশ্বের প্রয়োজন অনুসারে আমাদের কৃষিজগতে পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বের প্রত্যাশা পূরণের জন্যে আমাদের নিজেদের কৃষিজগতকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
আজ দেশ অনেক নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে, আর সেজন্য এখন আপনারা দেখুন, মহাকাশ ক্ষেত্রকে আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। দেশের যুব সম্প্রদায়ের সামনে সুযোগ এসেছে। আমরা কৃষিক্ষেত্রকে আইনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে দিয়েছি, অনেক বন্ধন থেকে মুক্ত করে দিয়েছি। আমরা নিজেদের আত্মনির্ভর করে তোলার চেষ্টা করছি। যখন ভারত মহাকাশ ক্ষেত্রে শক্তিশালী হবে, তখন প্রতিবেশীরাও অবশ্যই এর মাধ্যমে লাভবান হবেন। যখন আপনি শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে শক্তিশালী হন, তখন যে দেশ তাদের অন্ধকার দূর করতে চায়, ভারত তাদের সাহায্য করতে পারে। দেশে যখন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পরিকাঠামো আত্মনির্ভর হয়ে ওঠে, তখন বিশ্বের অনেক দেশের পর্যটন গন্তব্য হিসেবে, স্বাস্থ্য গন্তব্য হিসেবে ভারত তাদের পছন্দের দেশ হয়ে উঠতে পারে। আর সেজন্য প্রয়োজন হল, ভারতে উৎপন্ন পণ্য কিভাবে গোটা বিশ্বের প্রশংসা আদায় করে নিতে পারে। আর একটা সময় ছিল, যখন আমাদের দেশে যা উৎপন্ন হত, আমাদের দক্ষ মানবসম্পদ প্রশিক্ষিত মানব সম্পদ যে যে পণ্য উৎপাদন করতো, গোটা বিশ্বে তার প্রশংসা হত... ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে।
আমরা যখন আত্মনির্ভরতার কথা বলি, তখন শুধু আমদানী কম করতে হবে, এটাই আমাদের ভাবনা নয়। যখন আত্মনির্ভরতার কথা বলি, তখন আমাদের যে দক্ষতা, আমাদের যে মানব সম্পদের সামর্থ্য... যখন পণ্য বাইরে থেকে আসতে শুরু করে, তখন সেই সামর্থ্য বিলীন হতে শুরু করে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তা নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের নিজেদের সেই সামর্থ্যকে বাঁচাতে হবে... বাড়াতেও হবে। দক্ষতাকে বাড়াতে হবে, সৃষ্টিশীলতাকে বাড়াতে হবে... আর এই সমস্ত কিছু নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে জোর দিতে হবে – আত্মনির্ভর ভারতের জন্য, আমাদের সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমি জানি, যখন আমি আত্মনির্ভরতার কথা বলি, তখন অনেক আশঙ্কাও জাগিয়ে তোলা হয়। আমি একথা মানি, যে আত্মনির্ভর ভারতের জন্য লক্ষ লক্ষ চ্যালেঞ্জ রয়েছে, আর যখন বিশ্ব প্রতিযোগিতার মোড-এ থাকে, তখন চ্যালেঞ্জগুলিও বেড়ে যায়। কিন্তু দেশের সামনে লক্ষ লক্ষ চ্যালেঞ্জ থাকলেও, দেশে রয়েছে কোটি কোটি সমাধান সৃষ্টিকারী শক্তিও.... আমাদের দেশবাসীও রয়েছেন, যারা সমাধানের সামর্থ্য রাখেন।
আপনারা দেখুন, করোনার সঙ্কটকালে আমরা দেখেছি, অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের সামনে সমস্যা এসেছে... আমাদের অনেক কিছুই আমদানি করতে হতো, যা বাইরের দেশগুলি দিয়ে উঠতে পারছিল না। আমাদের দেশের নবীন প্রজন্ম, আমাদের দেশের শিল্পোৎদ্যোগীরা, আমাদের দেশের শিল্পজগতের মানুষেরা, সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, যেদেশে N 95 মাস্ক তৈরি হতো না, তা তৈরি হওয়া শুরু হল, পিপিই উৎপাদন হতো না, তা তৈরি হতে শুরু হল, ভেন্টিলেটর উৎপাদন হত না, তাও তৈরি হতে শুরু হল। দেশের প্রয়োজন তো পূরণ হলোই, বিশ্বের অন্যত্রও এক্সপোর্ট করার ক্ষমতাও আমাদের গড়ে উঠল। বিশ্বের প্রয়োজন ছিল। আত্মনির্ভর ভারত বিশ্বকে কিভাবে সাহায্য করতে পারে, আজ আমরা এর মধ্যে তা দেখতে পারছি। আর সেজন্য বিশ্বের কল্যাণের জন্যও ভারতের অবদান রাখার দায়িত্ব রয়েছে।
অনেক হয়েছে... স্বাধীন ভারতের মানসিকতা কেমন হওয়া উচিত, স্বাধীন ভারতের মানসিকতা হওয়া উচিত – ভোকাল ফর লোকাল.... আমাদের যে স্হানীয় উৎপাদন, তারজন্য আমাদের জয়গান করা উচিত। আমাদের নিজস্ব উৎপাদনের জন্য আমরা যদি জয়গান না করি, তাহলে উৎকৃষ্ট উৎপাদনের সুযোগও পাব না। আমাদের হিম্মতও বাড়বে না। আসুন, আমরা সবাই মিলে সংকল্প নিই, স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপনের দিকে যখন পা বাড়াচ্ছি, তখন ভোকাল ফল লোকালকে জীবনের মন্ত্র করে নিই, আর আমরা সবাই মিলে ভারতের সেই শক্তিকে উৎসাহ দিই।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের দেশ কিভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করে, কিভাবে এগিয়ে যায়, একথা আমরা খুব ভালভাবেই বুঝতে পারি। কে ভেবেছিল যে কখনও গরিবদের জনধন অ্যাকাউন্টে লক্ষ কোটি টাকা সরাসরি ট্রান্সফার হবে। কে ভাবতে পেরেছিল যে, কৃষকদের কল্যাণে এপিএমসি-র মতো আইন... এতে এত পরিবর্তন হয়ে যাবে! কে ভেবেছিল, আমাদের ব্যবসায়ীদের ওপর যে তলোয়ার ঝুলতো - এসেন্সিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট, এত বছর পর তাও বদলে যাবে, কে ভাবতে পেরেছিল, আমাদের স্পেস সেক্টর আমাদের দেশের যুব সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, জাতীয় শিক্ষানীতি, ওয়ান নেশন-ওয়ান রেশন কার্ড হোক, ওয়ান নেশন– ওয়ান গ্রিড হোক, ওয়ান নেশন–ওয়ান ট্যাক্স হোক, ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপ্সি কোড হোক, ব্যাঙ্কগুলিকে মার্জারের প্রচেষ্টা হোক.... এগুলি সব আজ দেশের বাস্তবে পরিণত হয়েছে, দেশে বাস্তব হয়েছে।
ভারতে পরিবর্তনের এই সময়কালে সংস্কারের পরিণামগুলি বিশ্ববাসী দেখছে। একের পর এক... পরস্পরের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক আমরা যে রিফর্স করছি, তাকে বিশ্ব অত্যন্ত সুক্ষভাবে দেখছে । আর সেজন্যই গত বছর ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এখন পর্যন্ত সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে – ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট... এখন পর্যন্ত সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ।
গত বছর ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে.... বেড়েছে । আর সেইজন্য করোনার সময়েও বিশ্বের বড় বড় কোম্পানীগুলি ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে । এই বিশ্বাস, এমনি গড়ে ওঠেনি, এমনিই বিশ্ব মোহিত হয় নি । সেজন্য ভারত নিজস্ব নীতির ক্ষেত্রে, ভারত নিজস্ব গণতন্ত্রে, ভারত নিজস্ব অর্থনীতির ভিত্তিকে শক্তিশালী করার যে কাজ করেছে, সেজন্য এই বিশ্বাস জেগেছে ।
সারা পৃথিবীর অনেক বিজনেস ভারতকে সাপলাই চেন-এর কেন্দ্র রূপে আজ দেখছে । এখন আমাদের মেক-ইন-ইন্ডিয়া-র সঙ্গে সঙ্গে মেক-ফর-ওয়ার্ল্ড-এই মন্ত্র নিয়েও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে ।
১৩০ কোটি ভারতবাসীর সামর্থ্য.... একটু মনে করুন.. বিগত কিছু দিনের কথা... আর ১৩০ কোটি দেশ বাসীর সামর্থ্যের জন্য গর্ব করুন । যখন একই সময়ে, করোনার এই মহাকালখণ্ডে একদিকে, ঘূর্ণিঝড়, পূর্বদিকেও ঘূর্ণিঝড়, পশ্চিমদিকেও ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাতে অনেক মানুষের মৃত্যুর খবর, কোথাও বার বার ধ্বস নামার ঘটনা, ছোট ছোট ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি.... এহ যেন কম ছিল, তার ওপর আমাদের কৃষকদের জন্য পঙ্গপালের দল বিপর্যয় ডেকে আনে । এরকম একসঙ্গে একের পর এক সমস্যার ঢেউ আসতে থাকে । কিন্তু, তা স্বত্তেও দেশ বিন্দুমাত্রও নিজের বিশ্বাস হারায় নি । দেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলেছে ।
দেশবাসীর জীবনকে দেশের অর্থনীতিকে করোনার প্রভাব থেকে যত দ্রুত সম্ভব বাইরে বের করে আনার আজ আমাদের অগ্রাধিকার । এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হবে, ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকটার পাইপলাইন প্রোজেক্ট-এর । এক্ষেত্রে ১১০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি খরচ করা হবে । সেজন্য ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় ৭ হাজার প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে । এর মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নয়ন একটি নতুন লক্ষ্যও পাবে । একটি নতুন গতিও পাবে । আর সেজন্য সর্বদাই এটা বলা হয়, এমন সঙ্কটের সময়েই যত বেশি ইনফ্রাস্ট্রাকটারে জোর দেওয়া হয়, যাতে এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক গতিবিধি বাড়ে, মানুষের কর্মসংস্থান হয়, কাজ পায়.... এর সঙ্গে যুক্ত অনেক কাজ একসঙ্গে এগুতে থাকে । ছোট, বড় শিল্পোৎদ্যোগ, কৃষক, প্রত্যেক মধ্যবিত্ত এর মাধ্যমে অনেক লাভবান হন ।
আর আজ আমি একটি কথা মনে করতে চাই... যখন শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি সোনালী চতুর্ভুজ নামক একটি অনেক বড়, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রভাবশালী প্রকল্প শুরু করেছিলেন । আর দেশের রোড নেটওয়ার্ক-এর পরিকাঠামোকে নেক্সট জেনারেশনে নিয়ে গেছিলেন । আজও সেই সোনালী চতুর্ভুজের দিকে দেশবাসী অনেক গর্ব নিয়ে তাকান, যে হ্যাঁ, আমাদের ভারত বদলাচ্ছে, এটা দেখতে পান ।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
অটলজি নিজের সময়ে এই কাজ করেছেন, কিন্তু এখন আমাদের তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে । আমাদের নতুন দিকে নিয়ে যেতে হবে, আর এখন আমারা SILOS-এ চলতে পারি না । আমাদের পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে যদি রোডের কাজ রোডওয়ালা করে, রেলের কাজ রেলওয়ালা করে, রেলের সঙ্গে রোডের কোন সম্পর্ক না থাকে, আর রোডের সঙ্গে রেলে, এয়ারপোর্টের সঙ্গে পোর্টের সম্পর্ক না থাকে, আর পোর্টের সঙ্গে এয়ারপোর্টের, রেলস্টেশনের সঙ্গে বাসের কোন সম্পর্ক না থাকে, আর বাসস্ট্যান্ডের সঙ্গে রেল পথের সম্পর্ক থাকবে না – এমন পরিস্থিতি হওয়া উচিত নয় । এখন আমাদের সমস্ত ইনফ্রাস্ট্রাকচার একটি কমপ্রিহেন্সিভ হবে, ইন্টিগ্রেটেড হবে । পরস্পরের পরিপূরক । রেল, রোডের পরিপূরক, রোড, সিপোর্টের পরিপূরক, সিপোর্ট, পোর্টের পরিপূরক... এভাবেই একটি নতুন শতাব্দীর জন্যে আমাদের মাল্টিমডেল কানেক্টিভিটি, ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে যুক্ত করার লক্ষ্যে এখন আমরা এগিয়ে চলেছি । আর এটা একটা নতুন মাত্রা যোগ করবে । অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে একাজ শুরু হয়েছে, আর আমার বিশ্বাস, যে SILOS-এর অবসান ঘটিয়ে আমরা এই গোটা ব্যবস্থাকে একটি নতুন শক্তি যোগাব ।
এর পাশাপাশি আমাদের সমুদ্রতট.... বিশ্ব বাণিজ্যে সমুদ্রতটগুলি নিজস্ব অনেক গুরুত্ব থাকে । যখন আমরা পোর্ট লেড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে এগিয়ে চলেছি, তখন আমরা আগামীদিনগুলিতে সমুদ্রতটের সমগ্র অংশে ফোর লেন রোড নির্মাণের লক্ষ্যে একটি আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ করব ।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের দেশে শাস্ত্রে একটি অত্যন্ত বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছে