প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
লোকসভায় বন্দে মাতরম-এর ১৫০ বছর উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা পর্বে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী
प्रविष्टि तिथि:
08 DEC 2025 3:44PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
লোকসভায় আজ রাষ্ট্র গান বন্দে মাতরম-এর ১৫০ বছর উপলক্ষে বিশেষ আলোচনায় পর্বে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এই উপলক্ষে সম্মিলিত আলোচনার পরিসর তৈরির জন্য তিনি সভার সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্দে মাতরম মন্ত্র দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামকে প্রাণদান করেছে। এই সঙ্গীত আত্মবলিদানের আদর্শে জারিত করেছে মানুষকে। বন্দে মাতরম-এর ১৫০ বছর আমাদের সামনে ইতিহাসের নানা অধ্যায়কে আবার জীবন্ত করে তোলে। আজকের আলোচনা শুধুমাত্র এই সভার দায়বদ্ধতা নয়, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
সম্প্রতি দেশ সংবিধানের ৭৫ বছর উদযাপন করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং ভগবান বিরসা মুণ্ডার ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছে। এরই সঙ্গে সম্প্রতি উদযাপিত হয়েছে গুরু তেগ বাহাদুর জির ৩৫০তম আত্মবলিদান দিবস। সব মিলিয়ে এই সময়টি ইতিহাসের দৃষ্টিকোন থেকে নানা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে মনে করাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্দে মাতরম-এর ১৫০ বছর উপলক্ষে আলোচনার এই আয়োজন সভাকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগের বার্তা দেয়। রাষ্ট্রসঙ্গীতের ১৫০ বছরের যাত্রা বহু মাইল ফলক স্পর্শ করেছে। এই গানের ৫০ বছর পূর্তির সময় দেশ ছিল বিদেশী শাসনের অধীন। এই অমোঘ স্তোত্রের ১০০ বছর পূর্তির সময় দেশে জারি ছিল জরুরি অবস্থা। সেই সময় দেশের সংবিধানের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল। দেশের প্রতি দায়বদ্ধ বহু মানুষ কারাগারে রুদ্ধ হয়েছিলেন সেই সময়। বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
বন্দে মাতরম-এর ১৫০ বছর গৌরবময় এক অধ্যায়ের পুনর্নির্মাণের সুযোগ এনে দেয় এবং সেই সুযোগ হাত ছাড়া করা উচিত নয় বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, বন্দে মাতরম মন্ত্র ১৯৪৭-এ স্বাধীনতা অর্জনের পথে আলোকবর্তিকা হয়ে ছিল। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেশের মানুষের আবেগ।
আজকের আলোচনায় শাসক এবং বিরোধী ভেদাভেদ থাকা ঠিক নয় এবং সকলেরই স্বাধীনতা আন্দোলন এবং তার প্রাণস্বরূপ এই মন্ত্রের প্রতি মাথা নোয়ানোর সন্ধিক্ষণ বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন। বন্দে মাতরম এবং স্বাধীনতার সংগ্রাম দেশকে যেভাবে একসূত্রে বেঁধেছে, তার ভিত্তিতে বিকশিত ভারত ২০৪৭-এর স্বপ্ন পূরণ করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ শাসনের ভিত যখন নড়ে গিয়েছিল, তেমনই একটি সময় ১৮৭৫ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত এই গান ব্রিটিশদের শ্লোগান, ‘গড সেভ দ্য ক্যুইন’-এর প্রতিস্পর্ধী মন্ত্র হয়ে ওঠে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর কয়েক বছর পর ১৮৮২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র নিজের লেখা ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে গানটিকে অন্তর্ভুক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্দে মাতরম-এর বার্তা শুধুমাত্র ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মাতৃ চেতনার এক অসাধারণ দর্শন- যা আমরা পাই বৈদিক মন্ত্রে।
লঙ্কার যাবতীয় ঐশ্বর্য ও সম্পদকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ভগবান শ্রী রামও মাতৃ চেতনার দর্শন তুলে ধরেছেন এবং এই বোধ ভারতের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে চিনিয়ে দেয় বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।
বিদেশী শাসক যখন ভারতীয়দের হীনমন্যতায় ভোগাতে যাবতীয় ষড়যন্ত্র কার্যকর করার পথে হাঁটে, তখন বন্দে মাতরম মন্ত্র দেশমাতৃকাকে জ্ঞান ও সমৃদ্ধির প্রতিমূর্তি হিসেবে স্থাপন করে এদেশের মানুষকে জড়ত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে এই সঙ্গীত ফল্গুধারার মতো প্রাণ সঞ্চার করেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলার বৌদ্ধিক সম্পদ তাদের শাসনের ভিত নড়িয়ে দিতে পারে এই আশঙ্কা থেকেই ব্রিটিশরা ১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গের উদ্যোগ নেয় বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন। সেইসময়ও বন্দে মাতরম প্রতিরোধের গান হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে স্বদেশী আন্দোলনের সূচনা হয় বলে ইতিহাস থেকে উদ্ধৃত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই গানে প্রাণিত ভারতীয় নারী ও শিশুরা দেশের মর্যাদা রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন বার বার। এ প্রসঙ্গে তিনি বরিশালের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন যেখানে বন্দে মাতরম মন্ত্রের উচ্চারণের জন্য নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন বহু মানুষ। বন্দে মাতরম-এর এই অসম্মাননায় রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন সরোজিনী নায়ডু। মহারাষ্ট্রের নাগপুরেও এই গান গাওয়ায় শিশুরা অত্যাচারিত হয় ১৯০৬ সালে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্দে মাতরম-এর মন্ত্রে দীক্ষিত ক্ষুদিরাম বসু, মদনলাল ধিংড়া, রামপ্রসাদ বিসমিল, আসফাকউল্লা খান, রোশন সিং, রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ী, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের মতো দেশপ্রেমিক হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে উঠেছেন। চট্টগ্রাম বিপ্লবের নায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের অনুপ্রেরণা এই মন্ত্র। বিপিন চন্দ্র পাল এবং মহর্ষি অরবিন্দ ঘোষ ‘বন্দে মাতরম’ নামে সংবাদপত্রও বের করেন।
বন্দে মাতরম স্বাবলম্বনের বার্তাও দেয় বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি স্বদেশী আন্দোলনের নানা ঘটনা তুলে ধরেছেন। মহাত্মা গান্ধী মনে করতেন এ এক অমোঘ মন্ত্র যা বেঁধেছে ভারতের প্রতিটি প্রান্তের প্রতিটি মানুষকে। ১৯০৫-এ গান্ধীজি এই গানটিকে রাষ্ট্রসঙ্গীত হিসেবে বর্ণনা করেন। বন্দে মাতরম সম্পর্কে ভুল প্রচারের মোকাবিলায় আমাদের সচেষ্ট হতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ১৯৩৭ সালের ১৫ অক্টোবর বন্দে মাতরম-এর বিরুদ্ধে শ্লোগান তুলেছিলেন মহম্মদ আলি জিন্না। এই অবিস্মরণীয় স্তোত্রের বিষয়ে দায়িত্ব পালন করেননি জওহরলাল নেহরু এবং কংগ্রেস। এমনকি আনন্দমঠ এবং বন্দে মাতরম মন্ত্র মুসলিমদের আহত করতে পারে বলেও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসকে চিঠি লিখেছিলেন জওহরলাল নেহরু।
১৯৩৭ সালে ২৬ অক্টোবর বঙ্কিমচন্দ্রের নিজের শহর কলকাতায় শুরু হওয়া কংগ্রেসের অধিবেশনে বন্দে মাতরম ঘিরে যা হয়েছিল, তাতে সারা দেশ স্তম্ভিত হয়ে পড়িছিল এবং দেশপ্রেমিকরা চরম হতাশায় ডুবে গিয়েছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন। কংগ্রেস সে সময় বন্দে মাতরম-এর খণ্ডিত রূপ গ্রহণ করে এই মন্ত্রের চরম অমর্যাদা করেছিল বলেও তাঁর মন্তব্য। প্রাক্তন শাসক দল এক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে আপোসের পথে হেঁটেছে বলে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভাষণের শেষে তিনি বলেন, অতীতের ভুলভ্রান্তি সংশোধন করে আমাদের এগিয়ে চলতে হবে বিকশিত ভারত গঠনের লক্ষ্যে। বন্দে মাতরম ভারতের মানুষের কাছে চিরকালীন প্রেরণা।
SC/AC/NS….
(रिलीज़ आईडी: 2200527)
आगंतुक पटल : 4