PIB Headquarters
দেশের শিল্পীবন্ধু
ভারতীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা- এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের সজীব প্রদর্শনী
Posted On:
20 NOV 2025 11:24AM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২০ নভেম্বর ২০২৫
ভারত মণ্ডপমে অনুষ্ঠিত ভারতীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বা আইআইটিএফ দেশের অন্যতম বৃহৎ ও সংস্কৃতিমণ্ডিত প্রদর্শনী। বিগত ৪৪ বছরের ঐতিহ্য এবং এ বছরের মূল ভাবনা ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ নিয়ে এই মেলা একই ছাদের নিচে অংশীদার রাজ্য, 'ফোকাস' রাজ্য, বিভিন্ন মন্ত্রক, আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারী, এমএসএমই, শিল্পী ও স্টার্ট-আপগুলি একত্রিত করে। এখানে ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য এবং তার আত্মবিশ্বাসী অর্থনৈতিক ভাবমূর্তি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। বিস্তৃত প্রাঙ্গণ জুড়ে 'মাল্টি-প্রোডাক্ট হল', রাজ্য-ভিত্তিক প্যাভিলিয়ন, আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিবৃন্দ এবং প্রাণস্পন্দিত সাংস্কৃতিক আয়োজন - সব মিলিয়ে ঐতিহ্য, উদ্ভাবন ও উদ্যোগের মেলবন্ধনে এক বর্ণাঢ্য পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
ভারতের সাংস্কৃতিক রূপের পূর্ণ পরিসর
একজন দর্শকের কাছে ভারতীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ভারতের সাংস্কৃতিক ও শিল্পকলার ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার অনন্য সুযোগ। এখানে ভাষা, শিল্প ও আঞ্চলিক বৈচিত্র্য রঙ, নকশা ও কারুকার্যের মাধ্যমে চোখের সামনে ফুটে ওঠে।
প্রতিটি প্যাভিলিয়ন তার নিজস্ব রাজ্যের স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করে। ঝাড়খণ্ডের তাঁত ও আদিবাসী শিল্প, উত্তর প্রদেশের সূক্ষ্ম ধাতুশিল্প, রাজস্থানের উজ্জ্বল ব্লক-প্রিন্ট, সবই এখানে স্থান পায়। প্রদর্শনীর আলোর নিচে ঝিলমিল করে ওঠে আয়না-শিল্পের নকশা। পথ জুড়ে সাজানো থাকে পোড়া মাটির সামগ্রী। আদিবাসী গয়না, বাঁশের কাজ, পাটশিল্প এবং নকশিকাঁথার মতো হস্তশিল্প প্রজন্মের পর প্রজন্ম সুরক্ষিত দক্ষতার পরিচয় বহন করে। আইআইটিএফের মাল্টি-প্রোডাক্ট প্রদর্শনীতে হস্তশিল্পের বৈচিত্র্যময় নকশা ও রূপ দর্শকদের মুগ্ধ করে।
মেলার সর্বত্রই ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর ভাবনা প্রতিধ্বনিত হয়। রাজ্য দিবসের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, লোকসঙ্গীত, শাস্ত্রীয় শিল্পকলার অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্মশিবির দর্শকদের মনে শিল্প, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেয়।
শিল্প, সম্প্রদায় ও বাণিজ্যের সমর্থনের মঞ্চ
প্রদর্শকদের কাছে এই মেলা শুধু এক বার্ষিক প্রদর্শনী নয়। এটি বহু বছরের অনুশীলন, পারিবারিক ঐতিহ্য এবং একেকটি সম্প্রদায়ের পরিচিতি বিশ্বের সামনে তুলে ধরার এক অনন্য সুযোগ। প্রতিটি স্টল নিয়ে রয়েছে একটি গল্পঃ ভোরবেলা উঠে তাঁতে বোনা কাপড়, বহুদূর থেকে আসা যত্নে মোড়া বাক্স, এবং নতুন ক্রেতারা তাঁদের শিল্পকে আর একটি প্রজন্ম বাঁচিয়ে রাখবে এই আশা।
বিভিন্ন শিল্পীদের গোষ্ঠী একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান। ঝাড়খণ্ডের পটশিল্পীরা বলেন, এই মেলাই ভারতের প্রাচীনতম স্ক্রোল-পেন্টিং ধারার পুনরুজ্জীবনে সাহায্য করে এবং তাঁদের সূক্ষ্ম রেখাচিত্রের মাধ্যমে গল্প বলার সুযোগ দেয়। বিহারের মধুবনী চিত্রশিল্পীরা জানান, আইআইটিএফ আগতদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করে। মানুষ হাতে আঁকা কাজের সূক্ষ্মতা এবং প্রতীকী ভাবনার সমাদর করতে পারেন।
কচ্ছের ঐতিহ্যবাহী গরুর ঘণ্টা নির্মাতারা সময়ের সঙ্গে তাঁদের শিল্পের পরিবর্তনের কথা বলেন। একসময় এই ঘণ্টা কেবল গবাদি পশুর জন্য ব্যবহার করা হত আর এখন সেই একই হাতে গড়া সুর বজায় রেখে তা বাদ্যযন্ত্র, উইন্ড চাইম এবং সজ্জাসামগ্রী হিসেবেও তৈরি হচ্ছে। তাঁরা আরও জানালেন, আইআইটিএফ তাঁদের আন্তর্জাতিক প্রদর্শক ও দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয়।
একইভাবে, রাজস্থানের 'জুত্তি' কারিগররা উল্লেখ করলেন যে এই মেলা তাঁদের চর্মশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন যন্ত্রে তৈরি জুতো বাজার দখল করে আছে। ভারতের নানা প্রান্তের তাঁতিরা জানালেন যে, আইআইটিএফ সচেতন দর্শকের সামনে তাঁদের শিল্প উপস্থাপিত করার মাত্র কয়েকটি মঞ্চের একটি।
অনেক প্রদর্শকের জন্য মেলায় অংশগ্রহণ সরাসরি জীবিকা-নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। এই আয়োজন তাঁদের এমন সব ক্রেতার সঙ্গে যুক্ত করে, যাঁদের কাছে তাঁরা হয়ত কখনো পৌঁছাতে পারতেন না। রপ্তানিকারক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এবং সেই সকল ধনী পরিবার যারা খাঁটি হস্তনির্মিত পণ্যের মূল্য বোঝেন। এই মেলা শিল্পীদের অর্ডার নিয়ে আলোচনা করতে, সংযোগ বাড়াতে এবং শিল্পের মূল্য বোঝেন এমন দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
সবচেয়ে বড় কথা, আইআইটিএফ শিল্পীদের স্বীকৃতি দেয়। এই মেলা তাঁদের নিজেদের কাজের প্রক্রিয়া, উপাদান এবং ইতিহাস নিয়ে কথা বলার সুযোগ করে দেয় এবং ভারতের সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল পরিসরে তাঁদের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে। যেসব সম্প্রদায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এসব শিল্প রক্ষা করে আসছেন, তাঁদের প্রাসঙ্গিকতার কথা এই মেলা স্মরণ করিয়ে দেয়।
অংশগ্রহণকারীদের কথা
ড. জি. দাসরথ চারী – ঐতিহ্যবাহী কাঠ খোদাই
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কাঠ খোদাইয়ের কাজ করা একটি পরিবারের সদস্য ড. জি. দাসরথ চারী। মন্দিরভিত্তিক এই ঐতিহ্য আজও তিনি এবং তাঁর অঞ্চলের কারিগরেরা এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তাঁরা লাল চন্দন, সাদা চন্দন, রোজউড এবং সেগুন কাঠ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী প্যানেল থেকে আধুনিক সামগ্রী, সবই তৈরি করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের কৌশল প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাহিত হয় এসেছে। আমরা আধুনিক জিনিস বানালেও দক্ষতা একই থাকে।”
পঁচিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি আইআইটিএফে তাঁর সৃষ্টি প্রদর্শন করছেন। তাঁর বক্তব্য, “অনলাইন বাজারের প্রতিপত্তি থাকলেও আইআইটিএফ বাস্তব একটি মঞ্চ। মানুষ আমাদের কাজ হাতে নিয়ে দেখে, অনুভব করে, বোঝে প্রতিটি পণ্যের পেছনে ঠিক কতটা পরিশ্রম আছে।”
দেবকী পরিচা – ঢোকরা শিল্প, ওড়িশা
দেবকীর কাছে ঢোকরা শুধুই শিল্প নয়, এটি তাঁর সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক পরিচয়-ও। তিনি গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে পিতলের মূর্তি, অলংকার এবং দৈনন্দিন জনজাতীয় জীবনের অনুপ্রেরণায় নানা মোটিফ তৈরি করেন।
তিনি বললেন, “প্রতিটি নকশা আমাদের পরিচয় তুলে ধরে। মানুষ আমাদের কাজ দেখলে আমাদের সংস্কৃতিকে বুঝতে পারে।” আইআইটিএফ তাঁকে দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ করিয়ে দেয়। “এখানে আমি নিজের কাজ দেখিয়ে বলি কিভাবে আমরা এগুলো বানাই। আইআইটিএফ আমাদের মতো ছোট শিল্পীদের আত্মবিশ্বাস এনে দেয়।”
ধীরজ – বাঁশ ও বেতের শিল্প, আসাম
পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রেখে ধীরজ তাঁর দলের সঙ্গে আসামের দীর্ঘদিনের বেত ও বাঁশ শিল্পকে সামনে আনছেন। তিনি বলেন, “আমাদের গ্রামে অনেক পরিবার এই কাজের ওপর নির্ভর করে। প্রতিটি জিনিস কারও না কারও জীবিকা ধরে রাখে।”
অনলাইন বিক্রি থাকলেও তিনি আইআইটিএফকে এক তুলনাহীন সুযোগ বলে মনে করেন। “এখানে মানুষ হাতে নিয়ে জিনিসটা দেখে, বোঝে কতটা দক্ষতা প্রয়োজন এগুলি বানাতে। এই স্বীকৃতিটাই আমাদের কাছে বড়,” তিনি জানান।
মাধুরী সিং – ঐতিহ্যবাহী মাটির ও পাটের পুতুল, বিহার
একসময়ের স্কুলশিক্ষিকা মাধুরী অতিমহামারির সময় মাটি ও পাটের পুতুল বানানো শুরু করেন। তাঁর পুতুলে ভারতীয় রীতি, উৎসব এবং পোশাক ফুটে ওঠে। মাটির শরীর হাতে গড়ে তিনি রঙিন পাটের পোশাকে সাজান।
তিনি বলেন, “আমি আমার বানানো পুতুলে মানুষের রুপ এবং স্থানীয় ঐতিহ্য তুলে ধরতে চেয়েছিলাম।”
তাঁর কাজ দেখে গ্রামের অনেক মেয়ে ও মহিলা এই শিল্প শিখতে আগ্রহী হয়েছে। তিনি বললেন, “যদি তারা এই কাজ শেখে, তারা নিজেরাই দাঁড়াতে পারবে। তাই আমি তাঁদের শেখাই।” বিচক্ষণ দর্শকের সামনে তাঁর কাজ তুলে ধরার জন্য তিনি আইআইটিএফের কাছে কৃতজ্ঞ।
ভারতের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পথ চলায় আইআইটিএফের বৃহত্তর তাৎপর্য
ভারতীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত ভাবনাটি শিল্পের মধুর সুরে ধরা পড়ে। এখানে মধুবনির রং মেশে ঢোকরার দীপ্তিতে; কচ্ছের ঘণ্টার ছন্দ মিলিত হয় অসমের বেতের কোমলতায়; তিরুপতির কাঠখোদাইয়ের গল্প মিশে যায় বিহারের মাটির ঐতিহ্যে।
এই স্টলগুলিতে ভারতের বৈচিত্র্য একসঙ্গে প্রদর্শিত হয়। প্রতিটি শিল্পী তাঁর মাটি, তাঁর স্মৃতি, তাঁর বংশপরম্পরার এক টুকরো নিয়ে আসেন, যা মিলেমিশে এক বৃহত্তর জাতীয় চিত্র তৈরি করে। দর্শকরা দাঁড়ান, শোনেন, শেখেন, আর এই গল্পগুলি সঙ্গে নিয়ে ফেরেন বাড়িতে।
তথ্যসূত্র :
Artisans of a Nation
****
SSS/RS......
(Release ID: 2192154)
Visitor Counter : 4