প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 12 MAY 2025 8:27PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি ১২ মে ২০২৫

 

গত কয়েকদিন ধরে আমরা সবাই আমাদের দেশের শক্তি এবং সংযম দেখেছি। সবার প্রথমে দেশবাসীর হয়ে আমি ভারতের সেনা বাহিনী, সশস্ত্র সেনা, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এবং আমাদের বিজ্ঞানীদের কুর্নিশ জানাই। অপারেশন সিঁদুরের লক্ষ্য অর্জনে আমাদের বীর সেনারা প্রভূত সাহস দেখিয়েছেন। আমি তাঁদের বীরত্ব, সাহস এবং শৌর্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। এই বীরত্বকে আমি প্রত্যেক মা, প্রত্যেক বোন এবং প্রতিটি কন্যার প্রতি উৎসর্গ করছি।

বন্ধুগণ,
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের বর্বরতা গোটা দেশ এবং বিশ্বকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে পরিবার এবং সন্তানদের সামনে নিরীহ নাগরিকদের নির্মম হত্যাকাণ্ড সন্ত্রাসবাদের নৃশংসতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। দেশের ঐক্য ও সম্প্রীতি নষ্ট করার লক্ষ্যে এটি একটি হতাশাজনক প্রয়াস। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এই জঙ্গি হামলার পর গোটা দেশ, প্রতিটি নাগরিক, প্রতিটি সম্প্রদায়, প্রতিটি শ্রেণি, প্রতিটি রাজনৈতিকদল ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। সন্ত্রাসবাদীদের নিশ্চিহ্ন করতে আমরা ভারতীয় সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। আজ প্রতিটি জঙ্গি, প্রতিটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আমাদের বোন ও কন্যাদের সিঁদুর মোছার পরিণতি দেখতে পাচ্ছে।

বন্ধুগণ,
অপারেশন সিঁদুর শুধুমাত্র একটি নাম নয়, এই অভিযান লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর অনুভূতির প্রতিফলন। অপারেশন ’সিঁদুর’ হল ন্যায় বিচারের প্রতি আমাদের অবিচল অঙ্গীকার। ৬ মে গভীর রাতে এবং ৭ মে ভোরে গোটা বিশ্ব এই অঙ্গীকারের বাস্তবতা দেখতে পেয়েছে। পাকিস্তানে জঙ্গিদের গোপনঘাঁটিগুলিতে হামলা চালায় আমাদের ভারতীয় সেনা এবং নির্ভুল লক্ষ্যে তাদের ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করে দেয়। সন্ত্রাসবাদীরা কখনও কল্পনাও করতে পারেনি যে, ভারত এই ধরনের বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যখন গোটা দেশ ঐক্যবদ্ধ, জাতীয় স্বার্থকে যখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তখন এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। যখন ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনগুলি পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে হামলা চালায়, তখন তা শুধুমাত্র জঙ্গি সংগঠনগুলির আস্তানাকেই গুঁড়িয়ে দেয়নি, সেইসঙ্গে তাদের সাহসের ভিতও নড়িয়ে দিয়েছে। বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে-র মতো জঙ্গি ঘাঁটিগুলি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের বড় বড় সন্ত্রাসবাদী হামলা, ৯/১১, লন্ডনে টিউব বোমা হানা, কিংবা গত বেশ কয়েক দশক ধরে ভারতের ওপর চালানো জঙ্গি হামলা, যাই হোক না কেন, তাদের শিকড় যুক্ত রয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের এইসব গোপন ডেরার সঙ্গে। সন্ত্রাসবাদীরা আমাদের বোনেদের সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়েছে এবং ভারত সন্ত্রাসবাদীদের মূল ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করে জবাব দিয়েছে। এই হামলায় ১০০ জনের বেশি কুখ্যাত জঙ্গি নিহত হয়েছে। গত আড়াই দশক ধরে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যুক্ত জঙ্গিরা পাকিস্তানে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বন্ধুগণ,
ভারতের এই হামলায় পাকিস্তান অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েছে। এটি পাকিস্তানকে হতভম্ব করে দিয়েছে এবং এই হতভম্ব অবস্থায় তারা অন্য একটি কাপুরুষোচিত কাজ করেছে। সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ভারতের হামলাকে সমর্থন করার পরিবর্তে তারা ভারতের ওপর আক্রমণ চালাতে শুরু করে। পাকিস্তান আমাদের স্কুল, কলেজ, গুরুদ্বার, মন্দির এবং নাগরিকদের ঘরবাড়িকে নিশানা করতে থাকে। এই হামলার মাধ্যমে পাকিস্তান তার স্বরূপ উন্মোচিত করেছে। গোটা বিশ্ব দেখল, পাকিস্তানের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলি খড়ের মতো আকাশ থেকে পড়ছে। ভারতের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেগুলিকে শূন্যেই ধ্বংস করে দিয়েছে। পাকিস্তান ভারতের সীমান্তে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু ভারত তাদের একেবারে কেন্দ্রস্থলে গিয়ে আক্রমণ শানিয়েছে। ভারতের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলি নির্ভুল লক্ষ্যে হামলা চালায় এবং বায়ুসেনার যে সব বিমান ঘাঁটি নিয়ে পাকিস্তান গর্ব করে থাকে, সেগুলির ওপর আঘাত হানে ভারত। ভারতের হামলায় প্রথম তিনদিন পাকিস্তানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা তারা কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। ভারতের আগ্রাসী হামলার মুখে পাকিস্তান পালানোর পথ খুঁজছিল। পাকিস্তান বিশ্বের কাছে উত্তেজনা প্রশমনের আবেদন জানাতে থাকে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর ১০ মে বিকেলে পাক সেনার পক্ষ থেকে আমাদের ডিজিএমও-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেই সময়ের মধ্যে আমরা জঙ্গিদের পরিকাঠামোগুলি ধ্বংস করে দিই। পাকিস্তানের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জঙ্গিদের ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। সেই কারণে পাকিস্তান যখন আবেদন করে এবং সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে প্রশ্রয় না দেওয়া এবং সামরিক হামলা না চালানোর কথা বলে, তখন ভারত বিষয়টি বিবেচনা করতে সম্মত হয়। আমি আবার বলছি, আমরা শুধুমাত্র পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী এবং সামরিক ঘাঁটিগুলির ওপর প্রত্যাঘাত স্থগিত রেখেছি। আগামী দিনগুলিতে পাকিস্তানের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর আমরা নজর রাখব।

বন্ধুগণ,
আমাদের বায়ুসেনা, স্থল সেনা এবং নৌ বাহিনী, আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, ভারতের আধা সামরিক বাহিনী সবসময় সতর্ক রয়েছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং আকাশ পথে হামলার পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এখন ভারতের নীতি হয়ে উঠেছে অপারেশন সিঁদুর। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুর এক নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে।

প্রথমত, যদি ভারতের ওপর কোনও জঙ্গি হামলা হয়, তবে যোগ্য জবাব দেওয়া হবে। যে সব জায়গায় সন্ত্রাসবাদের শিকড় রয়েছে, সেখানে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

দ্বিতীয়ত, ভারত কোনও ধরনের হামলার হুমকির মুখে নতিস্বীকার করবে না। জঙ্গিদের গোপন ঘাঁটিগুলিতে নির্ভুল লক্ষ্যে হামলা চালানে হবে।

তৃতীয়ত, সরকারি মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের মাস্টারমাইন্ডদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ করা হবে না। অপারেশন সিঁদুরের সময় গোটা বিশ্ব আবার পাকিস্তানের কুৎসিত মুখ দেখেছে। নিহত সন্ত্রাসবাদীদের শেষকৃত্যে দেখা গেছে পাকিস্তানের শীর্ষ সেনাকর্তাদের। পাকিস্তান যে সন্ত্রাসবাদে মদত দিচ্ছে, এটি হল তার স্পষ্ট প্রমাণ।

বন্ধুগণ,
প্রত্যেকবারই যুদ্ধক্ষেত্রে আমরা পাকিস্তানকে পরাস্ত করেছি। এবং এবার অপারেশন সিঁদুর তাতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। মরুভূমি এবং পর্বতে আমরা আমাদের সক্ষমতা দেখাতে পেরেছি, সেইসঙ্গে নতুন যুগের যুদ্ধে আমরা শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেছি। এই অভিযানে ভারতের তৈরি অস্ত্রের কার্যক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। আজ গোটা বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে যে, ২১ শতকের যুদ্ধে এখন ভারতের তৈরি অস্ত্রসামগ্রীর সময় এসেছে।

বন্ধুগণ,
আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হল, যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের একতা। এটি নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধের যুগ নয়, আবার এটি সন্ত্রাসবাদেরও যুগ নয়। উন্নত বিশ্ব গড়ার নিশ্চয়তা রয়েছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার মধ্যে।

বন্ধুগণ,
পাকিস্তানের সেনা, পাকিস্তান সরকার যেভাবে সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহ দিচ্ছে, একদিন এই সন্ত্রাসবাদই পাকিস্তানকে ধ্বংস করে দেবে। পাকিস্তান যদি বাঁচতে চায়, তবে তাদের জঙ্গি পরিকাঠামোকে ধ্বংস করতে হবে। এছাড়া শান্তির অন্য কোনও পথ নেই। ভারতের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট... সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না... সন্ত্রাস ও বাণিজ্য একসঙ্গে হতে পারে না... জল ও রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না।

আজ আমি বিশ্বকে বলতে চায় যে, যদি পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কথা হয়, তবে শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ নিয়েই কথা হবে; যদি পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কথা হয়, তবে শুধুমাত্র পাক- অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই কথা হবে।

প্রিয় দেশবাসীগণ,
আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা। ভগবান বুদ্ধ আমাদের শান্তির পথ দেখিয়েছেন। মানবতা...শান্তি এবং সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়। যাতে প্রত্যেক ভারতীয় শান্তি নিয়ে বাঁচতে পারেন এবং বিকশিত ভারতের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন, সেজন্য ভারতকে শক্তিশালী হতে হবে। যখনই প্রয়োজন হবে, তখনই এই শক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। গত কয়েকদিন ধরে ভারত সেই কাজই করে এসেছে।

আমি আবার ভারতীয় সেনা ও সশস্ত্র বাহিনীকে কুর্নিশ জানাই। আমি প্রত্যেক ভারতীয়র সাহস এবং  ঐক্যের প্রতি দেশবাসীর অঙ্গীকারকে কুর্নিশ জানাই।

ধন্যবাদ,

ভারত মাতা কি জয় !!!!
ভারত মাতা কি জয় !!!!
ভারত মাতা কি জয় !!!!


প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি দিয়েছেন হিন্দিতে

SC/MP/CS


(Release ID: 2128283)