পঞ্চায়েতিরাজমন্ত্রক
পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানগুলির মহিলা জনপ্রতিনিধিদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে “সশক্ত পঞ্চায়েত-নেত্রী অভিযান”-এর সূচনা
Posted On:
04 MAR 2025 6:40PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ৪ মার্চ, ২০২৫
নতুন দিল্লিতে পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানগুলির মহিলা জনপ্রতিনিধিদের জাতীয় কর্মশালায় পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রক আজ ‘সশক্ত পঞ্চায়েত-নেত্রী অভিযান’-এর সূচনা করেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আগে এই ঐতিহাসিক সমাবেশে সারা দেশের ১,২০০-রও বেশি মহিলা পঞ্চায়েত নেত্রী এই কর্মশালায় যোগ দেন। ‘সশক্ত পঞ্চায়েত-নেত্রী অভিযান’ হল পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানগুলির মহিলা জনপ্রতিনিধিদের সক্ষমতার লক্ষ্যে এক সার্বিক ও সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ। এর মাধ্যমে নেতৃত্বদান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তৃণমূলস্তরে শাসন প্রতিষ্ঠায় মহিলাদের ভূমিকার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ শাসন ব্যবস্থায় মহিলা জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে মন্ত্রক তাঁদের নেতৃত্বদানের দক্ষতা বাড়াতে এবং সিদ্ধান্তগ্রহণে সক্রিয় অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে একটি কৌশলগত পথনির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে।
অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী শ্রী রাজীব রঞ্জন সিং ওরফে লালন সিং, কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শ্রীমতী অন্নপূর্ণা দেবী, কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এস পি সিং বাঘেল এবং কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শ্রীমতী রক্ষা নিখিল খাডসে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রকের সচিব শ্রী বিবেক ভরদ্বাজ, পানীয় জল ও নিকাশি দপ্তরের সচিব শ্রী অশোক কে কে মীনা, পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব শ্রী সুশীল কুমার লোহানি, বিভিন্ন মন্ত্রক / দপ্তরের প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
উদ্বোধনী ভাষণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী রাজীব রঞ্জন সিং গ্রামীণ শাসন ব্যবস্থার রূপান্তরে মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের দিকে আমাদের যাত্রায় ‘সশক্ত পঞ্চায়েত-নেত্রী অভিযান’ এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এর মাধ্যমে তৃণমূলস্তরে মহিলাদের নেতৃত্বে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশে, বিশেষত গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে মহিলাদের নেতৃত্বদানের ক্ষমতাকে আরও জোরদার করতে তাঁদের সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বদ্ধপরিকর। মহিলাদের ক্ষমতায়ন হলে তা তৃণমূলস্তর থেকে জাতীয় স্তর পর্যন্ত গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে। সংবিধানের ৭৩তম সংশোধনীর ইতিবাচক প্রভাবের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানগুলিতে ১৪ লক্ষেরও বেশি নির্বাচিত মহিলা জনপ্রতিনিধি স্থান পেয়েছেন। বিহার সহ বিভিন্ন রাজ্যে সংরক্ষণের সীমা ছাড়িয়ে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব চোখে পড়ছে। মহিলাদের বহুমাত্রিক ভূমিকার প্রশংসা করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, বাড়ি সামলানো থেকে শুরু করে গোষ্ঠীশাসন, এমনকি সরকার পরিচালনাতেও তাঁদের অবদান উল্লেখযোগ্য। মহিলারা প্রমাণ করেছেন যে যথাযথ সহায়তা ও সুযোগ পেলে তাঁরা যে কোন ক্ষেত্রেই নিজেদের বিকশিত করে তুলতে পারেন। মহিলা ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর দিয়ে তিনি বলেন, এর থেকে আত্মবিশ্বাসের জন্ম হয়, যে কোন লক্ষ্য অর্জন করা যে সম্ভব, মহিলারা তা বিশ্বাস করতে পারেন। তৃণমূলস্তরের গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে এই বিপ্লব এক ন্যায় ও সাম্য-ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য।
মহিলা ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শ্রীমতী অন্নপূর্ণা দেবী বলেন, মহিলা নেতৃত্বাধীন শাসনে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও শৌচ-ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বাড়ে, অর্থনৈতিক সুস্থিতি সুনিশ্চিত হয়। নির্বাচিত মহিলা জনপ্রতিনিধিদের তিনি পুরুষদের প্রভাব অগ্রাহ্য করে স্বাধীনভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মহিলা ক্ষমতায়ন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সাম্যের পথ প্রশস্ত করে। ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর মতো উদ্যোগ গত ১০ বছরে সমাজের মানসিকতা পরিবর্তনে অনুঘটকের কাজ করেছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে ‘লাখপতি দিদি’ ও ‘ড্রোন দিদি’র মতো উদ্যোগ মহিলাদের ক্ষমতায়নে সাহায্য করেছে। ‘উজ্জ্বলা’, ‘পিএম আবাস যোজনা’, ‘মুদ্রা যোজনা’ প্রভৃতির মতো সরকারি প্রয়াস দেশে মহিলা ক্ষমতায়নের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এস পি সিং বাঘেল বলেন, ‘মুখিয়া পতি’, ‘প্রধান পতি’, ‘সরপঞ্চ পতি’র সংস্কৃতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ফসল, যেখানে নির্বাচিত মহিলা জনপ্রতিনিধিদের সামনে রেখে পুরুষরা বকলমে শাসন চালান। মহিলা নেত্রীদের তিনি স্বাধীনভাবে সতর্কতার সঙ্গে সরকারি কর্তব্য পালনের আহ্বান জানান। ‘নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম’-এর উল্লেখ করে তিনি পুষ্টিগত বৈষম্য, মহিলা ভ্রূণ হত্যা ও গার্হস্থ্য হিংসার অবসানে সুসমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন। তিনি বলেন, মহিলারা মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। তাই, তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া বিকশিত ভারতের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়।
কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শ্রীমতী রক্ষা নিখিল খাডসে বলেন, তাঁর নিজের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল মহারাষ্ট্রের একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সরপঞ্চ হিসেবে। এক্ষেত্রে পুরুষরা বকলমে কিভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতেন, তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি। মহিলা জনপ্রতিনিধিদের নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থেকে অধিকার প্রয়োগের ওপর জোর দেন শ্রীমতী খাডসে।
পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রকের সচিব শ্রী বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, মহিলা জনপ্রতিনিধিরা কখনই রাবার স্ট্যাম্প হয়ে থাকবেন না। তাঁদের তৃণমূলস্তরে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। মহিলা নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের ধারণা বাস্তবায়নের জন্যই আজ পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানগুলিতে ৪৩ শতাংশ জনপ্রতিনিধি মহিলা। যেসব গ্রাম পঞ্চায়েত জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছে, সেগুলির বেশিরভাগই মহিলা নেতৃত্বাধীন।
কর্মশালায় পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানগুলির মহিলা জনপ্রতিনিধিদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্টভাবে প্রস্তুত প্রশিক্ষণ মডিউলের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করা হয়। লিঙ্গ-ভিত্তিক হিংসা ও ক্ষতিকর কাজকর্ম প্রতিরোধে একটি সার্বিক নীতি-নির্দেশিকাও প্রকাশ করা হয় অনুষ্ঠানে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পঞ্চায়েতগুলিতে যেসব মহিলা নেত্রী দৃষ্টানমূলক কাজ করেছেন, তাঁদের সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। ‘পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানগুলিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বদান : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের গতিশীলতায় পরিবর্তন’ এবং ‘মহিলা নেতৃত্বাধীন স্থানীয় শাসন : মহিলা জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্র-ভিত্তিক ভূমিকা’ শীর্ষক দুটি আলোচনাসভারও আয়োজন করা হয় এই কর্মশালায়।
SC/SD/DM
(Release ID: 2108379)
Visitor Counter : 15