প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও অগ্রগতির মাধ্যমে বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্রে আজ এক বিশেষ স্থানের অধিকারী বর্তমান ভারত : প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 04 OCT 2024 7:44PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৫ অক্টোবর, ২০২৪

 

ভারত বর্তমানে বিশ্বে দ্রুততম গতিতে এগিয়ে চলা এক বৃহদায়তন অর্থনীতির দেশ। জিডিপি-র নিরিখে ভারত এখন পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির একটি দেশ বলে স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্বজুড়ে। আবার, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ফিনটেক-কে গ্রহণ ও কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে ভারত উন্নীত হয়েছে এক নম্বর দেশে। অন্যদিকে, ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে ভারত পৌঁছে গেছে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্ট-আপ সংস্থা অনুকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতির একটি দেশ রূপেও ভারত নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছে। উৎপাদন তথা নির্মাণ ক্ষেত্রে আবার ভারত মোবাইল উৎপাদনের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশের তকমা লাভ করেছে। দু’চাকার যান এবং ট্র্যাক্টর নির্মাণের ক্ষেত্রেও ভারতের অবস্থান এখন বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম। অথচ, আমাদের দেশ হল বিশ্বে সবচেয়ে নবীন একটি দেশ। ভারত থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উঠে এসেছেন অসংখ্য বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ। সেইদিক থেকে বিচার করলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন প্রচেষ্টার ক্ষেত্রেও ভারত বিশেষ গর্ব ও কৃতিত্বের সঙ্গেই বিশ্বে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। 

আজ রাজধানীতে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয়ক্রমে দ্য ইনস্টিটিউট অফ ইকনমিক গ্রোথ আয়োজিত ‘কৌটিল্য ইকনমিক কনক্লেভ’-এ ভাষণদানকালে এই তথ্য পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। 

শ্রী মোদী বলেন, সংস্কার, কর্মপ্রচেষ্টা ও রূপান্তর – এই তিনটি মন্ত্র অনুসরণ করে কেন্দ্রীয় সরকার এগিয়ে চলেছে। দেশকে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করতে প্রায় প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হচ্ছে সরকারকে। এইভাবে দেশবাসীর জীবন যখন এক বিশেষ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলেছে, তখন তাঁরা অনুভব ও উপলব্ধি করতে পারছেন যে দেশ এখন সঠিক পথের দিশারী। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর আস্থা ও বিশ্বাসই আমাদের সরকারের সবচেয়ে বড় সম্পদ। ভারতকে আরও উন্নত করে তুলতে সরকার কাঠামোগত সংস্কার প্রচেষ্টার কাজে অঙ্গীকারবদ্ধ। নীতিগত পরিবর্তন, কর্মসংস্থান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বলিষ্ঠ অঙ্গীকার, নিরন্তর উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে বিশেষ নজর, উদ্ভাবন প্রচেষ্টাকে উৎসাহদান, আধুনিক পরিকাঠামো গঠন, জীবনযাত্রার গুণগত মানকে আরও উন্নত করে তোলা – এই সমস্ত দিকেই দেশ এখন কোনভাবেই পিছিয়ে নেই। বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদকালে গত তিন মাসে আমাদের কাজে এরই প্রতিফলন ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গী অগ্রগতির এই ধারাকে আরও নিরন্তর করে তুলেছে। অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে এখানে যুক্ত হয়েছে উন্নয়ন ও অগ্রগতি। ২৫ কোটি দেশবাসীকে গত এক দশকের মধ্যেই দারিদ্র্যসীমার বাইরে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। 

বিশ্বের প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলি যে ভারত সম্পর্কে তাদের পূর্বাভাসকে সঠিক বলেই ঘোষণা করেছে, একথাও আজ আর কারোর অজানা নয়। বিশ্বব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার অথবা মুডিজ – এই বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি একথা বারবার ঘোষণা করেছে যে বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তার এক আবহ থাকলেও ভারত কিন্তু স্বাভাবিক গতিতেই তার স্থির লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। ভারতবাসীর প্রত্যাশা হল এই যে আগামীদিনে আরও ভালোভাবে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে। তাঁদের এই আস্থা ও আত্মবিশ্বাসই আমাদের এগিয়ে চলার কাজে সাহস যুগিয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে নির্মাণ, উৎপাদন বা পরিষেবা – যে কোন ক্ষেত্রেই হোক না কেন, আন্তর্জাতিক মহল এখন ভারতকে বিনিয়োগের শ্রেষ্ঠ গন্তব্য বলে মনে করে। এই ঘটনা কোনো সমাপতন মাত্র নয়, বরং গত ১০ বছর ধরে আমাদের নানা ধরনের সংস্কার প্রচেষ্টারই ফসল। যার ফলে, ভারতের বৃহদায়তন অর্থনীতির মূল বিষয়গুলির অনেকটাই আজ রূপান্তরিত। সংস্কার প্রসঙ্গে শ্রী মোদী বলেন যে ভারতের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার সংস্কার শুধুমাত্র ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক অবস্থা ফেরাতেই সাহায্য করেনি, একইসঙ্গে তা ঋণদানের ক্ষেত্রেও প্রভূত সহায়তা করেছে। একইভাবে পণ্য ও পরিষেবা কর অর্থাৎ, জিএসটি আরও সংহত করেছে অনেকগুলি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পর্যায়ের পরোক্ষ করকে। খনি, প্রতিরক্ষা ও মহাকাশের মতো ক্ষেত্রগুলিতে এখন বেসরকারি বিনিয়োগও অনেকটাই উন্মুক্ত। বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের নিয়মকানুনও এখন অনেকটাই সহজ করে তোলা হয়েছে। গত এক দশকে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বেড়েছে নজিরবিহীনভাবে। ইলেক্ট্রনিক্স, অর্থাৎ বৈদ্যুতিন ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতির বিস্ময়কর কাহিনীও এদিন তাঁর ভাষণে বিবৃত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন যে ভারত ছিল এক সময় বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনের আমদানিকারী একটি দেশ। কিন্তু বর্তমানে ৩৩ কোটিরও বেশি মোবাইল ফোন উৎপাদিত হচ্ছে এ দেশেই। এইভাবেই ভারতে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ এখন উন্মুক্ত। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, অর্থাৎ কৃত্রিম মেধাশক্তির মতো কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি এবং সেমি-কন্ডাক্টর প্রযুক্তিক্ষেত্রেও সরকার সাম্প্রতিককালে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে। ভারতের এআই মিশন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রটিতে গবেষণা ও দক্ষতা বিকাশে আরও বেশি করে সুযোগ সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে, সেমি-কন্ডাক্টার মিশনের আওতায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে ভারতের পাঁচটি সেমি-কন্ডাক্টার প্রকল্পে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ চিপ উৎপাদিত হয়ে তার যোগান দেওয়া হবে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে। 

ভারতে প্রযুক্তির দিক থেকে মেধাশক্তির কোনো অভাব নেই বলে এদিন বিশেষ জোরের সঙ্গে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এজন্য শিক্ষা, দক্ষতা বিকাশ, উদ্ভাবন প্রচেষ্টা ও গবেষণার ওপর বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মেডিকেল পঠনপাঠনের দিক থেকেও দেশ এখন অনেকটাই উন্নত। গত ১০ বছরে দেশে মেডিকেল কলেজগুলির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। দূষণমুক্ত কাজের পরিবেশের দিক থেকেও সারা বিশ্বের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে ভারত। 

প্রধানমন্ত্রীর এদিনের ভাষণে সৌরবিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতির একটি ছবিও ফুটে উঠেছে। ‘প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর’ কর্মসূচি সম্পর্কে বলতে গিয়ে শ্রী মোদী বলেন, এই প্রকল্পটির আকার-আয়তনই শুধু যে বিশাল তাই নয়, বরং তার কাজের লক্ষ্য ও গতি যথেষ্ট বৈপ্লবিক বললেও অত্যুক্তি হবে না। কারণ, তা লক্ষ লক্ষ ভারতীয় পরিবারে বিনা খরচে সৌরবিদ্যুৎ আহরণ ও ব্যবহারের এক দিশা দেখাতে পেরেছে। এর ফলে, এ দেশের পরিবারগুলির বছরে গড়ে ২৫ হাজার টাকা করে ব্যয়সাশ্রয় ঘটছে। শুধু তাই নয়, ৫০-৬০ টনের মতো কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের মাত্রাও হ্রাস পেয়েছে প্রতি ৩ কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে। এই প্রকল্পের সাহায্যে ভারতের দক্ষ শ্রমশক্তির জন্য ১৭ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে চলেছে বলে প্রসঙ্গত জানান তিনি। এই সমস্ত দিক বিচার করে ভারত যে শুধু বিশ্বের শীর্ষতম স্থানটি দখল করতে চলেছে তাই নয়, বরং সেখানে তার অবস্থান পাকা করতেও এই দেশ এখন সঙ্কল্পবদ্ধ।

আজকের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন এবং ইনস্টিটিউট অফ ইকনমিক গ্রোথ-এর প্রেসিডেন্ট শ্রী এন কে সিং।

 

PG/SKD/DM


(Release ID: 2062553) Visitor Counter : 94