প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

গুয়াহাটিতে বিভিন্ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ ও উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 04 FEB 2024 3:10PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

 

ভারতমাতার জয়! 
ভারতমাতার জয়!

আসামের রাজ্যপাল গুলাব চাঁদ কাটারিয়াজি, মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্বশর্মাজি, মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী সর্বানন্দ সোনোয়ালজি এবং রামেশ্বর তেলিজি, আসাম সরকারের মন্ত্রীরা, সাংসদ ও বিধায়কগণ, বিভিন্ন পরিষদের প্রধান এবং আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা!

আপনাদের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই!

মা কামাক্ষ্যার আশীর্বাদে আরও একবার আসামের উন্নয়ন সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রকল্প আপনাদের উদ্দেশে উৎসর্গ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এখানে যে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পগুলির শিলান্যাস ও উদ্বোধন করা হল সেগুলি আসাম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যেও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। এর ফলে, পর্যটন ক্ষেত্রে আসামে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, রাজ্যের ডাক্তারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রসার ঘটবে। আসামে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে আমার পরিবারের সদস্যদের প্রকল্পগুলির জন্য অভিনন্দন জানাই। আপনাদের ভালোবাসা আমার জন্য এক অমূল্য সম্পদ। আপনাদের আশীর্বাদই আমার শক্তির উৎস। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের কোনো ভাষা আমার জানা নেই।

ভাই ও বোনেরা,

গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন পবিত্র স্থান সফর করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। অযোধ্যার মহোৎসবের পর আজ মা কামাক্ষ্যার দুয়ারে আমি এসেছি। এখানে মা কামাক্ষ্যা দিব্য লোক পরিযোজনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মা কামাক্ষ্যার ভক্তরা এখানে জড়ো হন। আগামীদিনে যাতে আরও বেশি সংখ্যায় ভক্তবৃন্দ এখানে মা কামাক্ষ্যাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, সেজন্য এই দিব্য লোক পরিযোজনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই দিব্য লোকের সংগে যুক্ত সুবৃহৎ প্রকল্পটির জন্য আমি হিমন্তজি এবং তাঁর সরকারের প্রশংসা করি।

বন্ধুগণ,

আমাদের তীর্থস্থান, মন্দির, ধর্মস্থানগুলি শুধুমাত্র দর্শনীয়ই নয়, এগুলি হাজার হাজার বছরের সভ্যতার নিদর্শনও। এর মধ্য দিয়ে প্রতিটি সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ভারতের শক্তি প্রতিফলিত হয়। বিজেপি-র ডবল ইঞ্জিন সরকার বিকাশ এবং ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছে। গত ১০ বছরে দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আসামেও বিজেপি সরকার গঠিত হওয়ার পর ছ’টি নতুন মেডিকেল কলেজ হয়েছে। আজ আসাম উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য সবথেকে বড় ক্যান্সার চিকিৎসার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। 

বন্ধুগণ,

আমাদের সরকার নাগরিকদের সহজ জীবনযাত্রাকে সুনিশ্চিত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। আমরা ৪ কোটির বেশি পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের পরিবারগুলিকে পাকা বাড়ি দিয়েছি। প্রত্যেক বাড়িতে জল এবং বিদ্যুতের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করেছি। উজ্জ্বলা প্রকল্পের সুবাদে আসামে লক্ষ লক্ষ বোন এবং মেয়েরা ধোঁয়ার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। স্বচ্ছ ভারত অভিযানে বহু শৌচাগার নির্মাণের মধ্য দিয়ে আসামের মা ও বোনেদের মর্যাদা রক্ষিত হয়েছে।

বন্ধুগণ,

দেশের যুব সম্প্রদায় প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের সুফল পাচ্ছেন। দেশজুড়ে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটছে। কাশী করিডরের পর সেখানে ভক্ত সমাগম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আশা করছি, মা কামাক্ষ্যা দিব্য লোকের কাজটি সম্পূর্ণ হওয়ার পর এখানেও ভক্তদের ভিড় বৃদ্ধি পাবে।

বন্ধুগণ,

যখন ভক্তরা কোন তীর্থক্ষেত্রে আসেন, তখন সমাজের দরিদ্রতম ব্যক্তিটিরও আয় হয়। রিক্সাচালক, ট্যাক্সি ড্রাইভার, হোটেলের কর্মী, রাস্তার হকার – সকলেরই আয় বৃদ্ধি হয়। আর তাই এ বছরের বাজেটে পর্যটন শিল্পের প্রসারের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানগুলির উন্নয়ন ঘটাতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সচেষ্ট। আসাম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও এর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আর তাই, বিজেপি সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছে। 

বন্ধুগণ,

গত ১০ বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পর্যটকের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অঞ্চলের সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রগুলি তো আগেও ছিল। কিন্তু তখন এত পর্যটকরা আসেননি। গত ১০ বছরে আসাম সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। রেল এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। আজ বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সব ধরনের নেতিবাচক প্রভাবকে দূর করেছে।

বন্ধুগণ,

গত ১০ বছরে আমাদের সরকার উন্নয়নের জন্য অর্থ ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে দেশে রেলপথের পরিমাণ ১,৯০০ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালের আগের সময়কালের সঙ্গে তুলনা করে বলা যায়, রেলের বাজেট ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালের পর পরিস্থিতি বদলেছে। আজ দুটি নতুন সড়ক প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। এর ফলে ইটানগরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে, এতদিন আপনারা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতেন, সেগুলি অনেকাংশে কমবে। আজ সারা দেশ বলছে, মোদীর গ্যারান্টির অর্থ যে কোনো প্রতিশ্রুতি পূরণ। আমি দরিদ্র, মহিলা, যুবক-যুবতী এবং কৃষকদের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার গ্যারান্টি দিয়েছিলাম। ‘বিকশিত ভারত সঙ্কল্প যাত্রা’র সময় আমরা এর সুফল প্রত্যক্ষ করি। দেশের ২০ কোটি মানুষ ‘বিকশিত ভারত সঙ্কল্প যাত্রা’য় প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন। আসামের বহু মানুষ এই ‘যাত্রা’ থেকে উপকৃত হয়েছেন। 

বন্ধুগণ,

বিজেপি-র ডবল ইঞ্জিন সরকার প্রত্যেক প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপকের কাছে পৌঁছতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সব নাগরিকের জীবনযাত্রা যাতে সহজতর হয়, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে চলেছি। পরিকাঠামোর জন্য এবারের বাজেটে ১১ লক্ষ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। অথচ, ২০১৪-র আগের ১০ বছরে পরিকাঠামোর জন্য মোট ব্যয় হয়েছে ১২ লক্ষ কোটি টাকা। তাহলে আপনি বুঝতেই পারছেন, বর্তমান সময়কালে পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এবারের বাজেটে আরও একটি বড় প্রকল্প হচ্ছে বাড়ির ছাদে সৌরশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এই প্রকল্পে সরকার ১ কোটি পরিবারের বাড়ির ছাদে সোলার রুফ টপ প্যানেল বসাবে। এর ফলে, ঐসব বাড়িতে বিদ্যুতের বিল শূন্যে নেমে আসবে। পাশাপাশি, পরিবারগুলি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে রোজগার করতে পারবে।

বন্ধুগণ,

আমি দেশে ২ কোটি বোনকে লাখপতি হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছি। প্রাথমিকভাবে যে তথ্য আমার কাছে রয়েছে তাতে ইতোমধ্যেই ১ কোটি বোন ‘লাখপতি দিদি’তে পরিণত হয়েছেন। এর ফলে, আসামে আমার বোনেরাও উপকৃত হবেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত বোনেদের মধ্যে থেকেই ‘লাখপতি দিদি’ বেরিয়ে আসবেন। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে এবারের বাজেটে অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে, সুবিধাপ্রাপকরা বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। যখন মোদী কাউকে গ্যারান্টি দেয়, তখন সেই অঙ্গীকার পূরণের জন্য সে দিবারাত্র পরিশ্রম করে। আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মোদীর গ্যারান্টির প্রতি আস্থা তৈরি হয়েছে। আসামকে দেখুন। এই অঞ্চল দীর্ঘদিন অশান্ত ছিল। আজ এখানে চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া বিবাদের নিরসন হয়েছে। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখানে ১০টির বেশি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত কয়েক বছরে উত্তর-পূর্বের হাজার হাজার যুবক-যুবতী হিংসার পথ ছেড়ে উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হয়েছেন। আমি আমার দলের জন্য আসামে বহু বছর কাজ করেছি। আমার মনে আছে, সেই সময় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময়ে পথ অবরোধ এবং বনধ-এর মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হত। গুয়াহাটিতে বোমা বিস্ফোরণও হত। আজ সেগুলি সবই অতীত। আসামে ৭ হাজারের বেশি যুবক-যুবতী অস্ত্র সমর্পণ করে দেশের উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হয়েছেন।

বন্ধুগণ,

ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণের জন্য পরিকল্পনা করলে কোনো দেশ, কোনো রাজ্য দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে না। পূর্ববর্তী সরকারগুলি কখনই বড় কোনো লক্ষ্য পূরণের পরিকল্পনা করত না। আমরা সেই পথ থেকে সরে এসেছি। আজ সারা বিশ্ব পূর্ব এশিয়াকে যে চোখে দেখে, আমিও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নকে সেই চোখে দেখি। দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্য দিয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকনমিক কো-অপারেশন-এর মাধ্যমে বিভিন্ন রাস্তার মানোন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠবে। আমি জানি, আসাম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিটি যুবক-যুবতী পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নের মতোই তাঁদের রাজ্যেও উন্নয়ন দেখতে চান। আমি তাঁদের বলব, আপনাদের প্রত্যেকের স্বপ্ন পূরণে মোদী অঙ্গীকারবদ্ধ। এটি ‘মোদীর গ্যারান্টি’।

ভাই ও বোনেরা,

আজ যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে তার একটিই লক্ষ্য – প্রতিটি ভারতবাসীর জন্য সুখ ও সমৃদ্ধময় জীবন নিশ্চিত করা। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারতকে গড়ে তুলতে হবে। ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এই কর্মযজ্ঞে আসাম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আরও একবার এই প্রকল্পগুলির জন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ। দু’হাত তুলে আমার সঙ্গে বলুন -
ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছিলেন


PG/CB/DM



(Release ID: 2015708) Visitor Counter : 33