প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

নৌসেনা দিবস ২০২৩ উপলক্ষে মহারাষ্ট্রের সিন্ধুদুর্গে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 04 DEC 2023 7:51PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩


ছত্রপতি বীর শিবাজি মহারাজের জয়!
ছত্রপতি বীর শিবাজি মহারাজের জয়!

মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল শ্রী রমেশ জি, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী একনাথ জি, মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী শ্রী রাজনাথ জি, শ্রী নারায়ণ রাণে জি, উপমুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ জি এবং শ্রী অজিত পাওয়ার জি, তিন বাহিনীর সম্মিলিত প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান জি, নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার, আমার নৌ বাহিনীর বন্ধুরা এবং পরিবারের সদস্যরা!
    এই ঐতিহাসিক ৪ঠা ডিসেম্বর, এই ঐতিহাসিক সিন্ধুদুর্গের কেল্লা, এই সুন্দর মালভান-তারকারলি, ছত্রপতি বীর শিবাজি মহারাজের গৌরবময় স্মৃতি বিজড়িত এই অঞ্চল, রাজকোট দুর্গে তাঁর মূর্তির উন্মোচন এবং আপনাদের বলিষ্ঠ আওয়াজ প্রতিটি ভারতীয়কে প্রাণিত করছে। আপনাদের উদ্দেশে যা বলা যায়- 

चलो नई मिसाल हो, बढ़ो नया कमाल हो,
झुको नही, रुको नही, बढ़े चलो, बढ़े चलो ।

অর্থাৎ 

এগিয়ে চল নতুন নির্দশন রাখতে, অনন্য কিছু করতে
নত হয়ো না, থেমো না, এগিয়ে চল, এগিয়ে চল।

নৌসেনা দিবসে বাহিনীর সব সদস্যকে আমি অভিনন্দন জানাই। অভিবাদন করি সেই বীর সন্তানদের যাঁরা দেশমাতৃকার জন্য চরম আত্মত্যাগ করেছেন। 

বন্ধুরা, 
    সিন্ধুদুর্গের এই রণক্ষেত্রে থেকে নৌসেনা দিবসে দেশের মানুষকে অভিনন্দন জানাতে পেরে আমি গর্বিত। সিন্ধুদুর্গের ঐতিহাসিক কেল্লা দেখে গর্বিত হয়ে পড়েন প্রতিটি ভারতবাসী। ছত্রপতি বীর শিবাজি মহারাজ নৌবাহিনীর গুরুত্ব জানতেন। তাঁর স্লোগান ছিল, ‘সমুদ্র যার নিয়ন্ত্রণে, সে সর্বশক্তিমান।’ শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন তিনি। কানহোজি আঙরে, মায়াজি নায়িক ভাটকার, হিরোজি ইন্দুলকারের মত যোদ্ধা আজও আমাদের কাছে প্রেরণার উৎস। নৌসেনা দিবসে আমি তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই।

বন্ধুরা,
দাসত্বের মনোভাব ঝেড়ে ফেলে ছত্রপতি বীর শিবাজি মহারাজের অণুপ্রেরণায় ভারত আজ এগিয়ে চলেছে। আমাদের নৌসেনা আধিকারিকদের স্কন্ধসজ্জায় ছত্রপতি বীর শিবাজি মহারাজের উত্তরাধিকারের প্রতিফলনে আমি খুশী। এই নতুন স্কন্ধসজ্জা এবার নৌবাহিনীর প্রতীক চিহ্নের মত হয়ে উঠবে। 
গত বছর নৌবাহিনীর পতাকাকে ছত্রপতি বীর শিবাজি মহারাজের উত্তরাধিকারের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছি আমি। এখন ছত্রপতি বীর শিবাজি মহারাজের বীরত্ব গাথা প্রতিফলিত নৌসৈনিকদের স্কন্ধসজ্জাতেও। আজ এখানে আরও একটি ঘোষণা করতে পেরে আমি গর্বিত। নৌবাহিনীর পদগুলির নাম হয়ে উঠবে ভারতীয় ঐতিহ্য অনুসারে। সশস্ত্র বাহিনীতে মহিলাদের যোগদান বাড়ানো আমাদের অগ্রাধিকারের বিষয়। রণতরীতে দেশের প্রথম মহিলা কম্যান্ডিং অফিসার নিয়োগ করার জন্য নৌবাহিনীকে অভিনন্দন জানাই। 
বন্ধুরা,
    আজকের ভারত নিজেই নিজের লক্ষ্য স্থির করছে এবং তা অর্জনে প্রয়োগ করছে নিজের শক্তির সবটুকু। এই শক্তির উৎস ১৪০ কোটি দেশবাসীর আস্থা ও ভালবাসা। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিই হল মানুষের বিশ্বাস। এই শক্তির প্রতিফলন আপানার দেখেছেন গতকাল দেশের ৪ টি রাজ্যে। প্রমাণিত হয়েছে যে মানুষের প্রতিজ্ঞা, আবেগ এবং উচ্চাকাঙ্খা মিলিত হলে ইতিবাচক অনেক কিছুই ঘটতে পারে। 
    বিভিন্ন রাজ্যের পরিস্থিতি ভিন্ন। কিন্তু প্রতিটি রাজ্যের মানুষই দেশকে সবার আগে রাখার মানসিকতায় জারিত। ইতিহাসের প্রেরণাকে সম্বল করে ভারত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। নেতিবাচক রাজনীতি পর্যুদস্ত হচ্ছে সবখানে। 
বন্ধুরা,
    
    ভারতের ইতিহাস হাজার বছরের দাসত্ব, পরাজয় এবং হতাশার আখ্যান নয়। ভারতের ইতিহাস হল বিজয়ের ইতিহাস, সাহসিকতার ইতিহাস, জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ইতিহাস, শিল্প ও সৃজনশীলতার ইতিহাস। এই গৌরবময় ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা জুড়ে আছে আমাদের নৌশক্তির ইতিহাস। হাজার বছর আগে যখন আজকের প্রযুক্তি ও সম্পদ কিছুই ছিল না, তখন আমরা সমুদ্র জয়ের জন্য গড়েছিলাম সিন্ধুদুর্গের মত কেল্লা। 
    সামুদ্র সম্পদ ও সম্ভাবনায় ভারত সমৃদ্ধ হাজার হাজার বছর ধরে। গুজরাটের লোথালে সিন্ধু সভ্যতার যে বন্দরের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেছে, তার মধ্যে জড়িয়ে আছে সমুদ্রপথে ভারতের বিজয়গাথার চিহ্ন। সুপ্রাচীনকালে ৮০ টিরও বেশি দেশের জাহাজ এসে ভিড়ত সুরাট বন্দরে। নৌশক্তির ওপর ভর করেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সংযোগ গড়ে তুলেছিল চোল সাম্রাজ্য। 
    সেজন্যই বিদেশী হানাদাররা প্রথমেই ভারতের নৌশক্তিকে আঘাত করতে চেয়েছে। নৌকো এবং জাহাজ তৈরির জন্য ভারত ছিল সুপ্রসিদ্ধ। হামলার ফলে এই দক্ষতা লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল একসময়। সমুদ্রপথের নিয়ন্ত্রণ হারানোর সঙ্গে সঙ্গেই আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সক্ষমতা।
    আজ ভারত যখন এগিয়ে চলেছে বিকাশের পথে, তখন আমাদের পুনরুদ্ধার করতেই হবে হৃতগৌরব। নীল অর্থনীতির বিকাশ ভারতের আজ অন্যতম অগ্রাধিকার। ‘সাগরমালা’ প্রকল্পের আওতায় বন্দর-ভিত্তিক উন্নয়নের দিশায় এগিয়ে চলেছে এই দেশ। সামুদ্র পরিসরের যাবতীয় সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ভারত গ্রহণ করেছে ‘মেরিটাইম ভিশন’। বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে গতি আনতে সরকার নতুন আইন নিয়ে এসেছে। এসবের ফলে বিগত ৯ বছরে ভারতে সমুদ্র পথে চলাচল ১৪০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। 
বন্ধুরা,
    ভারতের ইতিহাসে বর্তমান অধ্যায়টি শুধুমাত্র আগামী ৫-১০ বছরেরই নয়, বেশ কয়েক শতকের গতিপথ চিহ্নিত করে দেবে। ১০ বছরেরও কম সময়ে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে এই দেশ দশম থেকে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে। তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার পথে দ্রুত এগিয়ে চলেছে এই দেশ। 
    আত্মপ্রত্যয়ী ভারতকে বন্ধু হিসেবে পেতে চায় সারা বিশ্ব। মহাকাশ থেকে সমুদ্র-সব ক্ষেত্রেই ভারতের সম্ভাবনা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। কথা হচ্ছে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-পূর্ব ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর নিয়ে। অতীতের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া ‘স্পাইস রুট’ আবারও ভারতের সমৃদ্ধির বাহক হয়ে উঠতে চলেছে। ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ শব্দবন্ধটি  আজ সারা বিশ্বে আলোচিত। তেজস বিমান কিংবা কিষাণ ড্রোণ, ইউপিআই প্রণালী কিংবা চন্দ্রযান-৩- সব ক্ষেত্রেই তার প্রতিফলন ঘটছে। আমাদের সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ প্রয়োজন মিটছে ওই মন্ত্রেই। দেশে প্রথমবার তৈরি হয়েছে পণ্যবাহী বিমান। গত বছর দেশজ প্রণালীতে তৈরি রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত জলে ভেসেছে। ওই সমরপোত ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ তথা আত্মনির্ভর ভারতের সার্থক রূপ। 

বন্ধুরা, 
পূর্বতন জমানার সেকেলে মানসিকতা আমরা মুছে দিয়েছি। আগে সীমান্তবর্তী এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী বসতিগুলি অগ্রাধিকারের প্রশ্নে থাকত একেবারে শেষের দিকে। ফলে ওই সব অঞ্চলে জীবনযাপনের নূন্যতম সুযোগ সুবিধাগুলিও ছিল না বলা যায়। আজ কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হল উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলির জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন। 
    আমাদের সরকারই প্রথম মৎস্য চাষ ক্ষেত্রের উন্নয়নে পৃথক একটি মন্ত্রক গড়ে তোলে ২০১৯ সালে। ওই ক্ষেত্রে আমরা ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। এই পদক্ষেপের দরুণ ২০১৪-র তুলনায় ভারতে মৎস্য উৎপাদন ৮০ শতাংশরও বেশি বেড়েছে এবং রপ্তানি বেড়েছে ১১০ শতাংশের বেশি। মৎস্যজীবীদের বিমার পরিমাণ ২ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করেছে আমাদের সরকার। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম মৎস্যজীবীরাও কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন। সাগরমালা প্রকল্পের আওতায়, সমুদের উপকূলবর্তী এলাকায় আধুনিক সংযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ফলে আসছে প্রচুর পরিমাণে লগ্নি। ওই সব অঞ্চল হয়ে উঠছে বাণিজ্য ও শিল্পের বড় কেন্দ্র। 
বন্ধুরা,

বিকশিত ভারতের পরিপূর্ণ ছবির মধ্যে ঐতিহ্যের দিকটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্যই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার ছত্রপতি বীর শিবাজি মহারাজের আমলে এই অঞ্চলে তৈরি হওয়া দুর্গগুলির রক্ষণাবেক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে। এর ফলে মহারাষ্ট্র ও কোঙ্কণের ওই সব এলাকায় পর্যটনের সম্ভাবনা বাড়বে, ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও। 

বন্ধুরা, 
 
সমৃদ্ধ ভারতের প্রধান শর্ত হল উপযুক্ত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা। সাধারণত সেনাদিবস, বায়ুসেনা দিবস কিংবা নৌসেনা দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি দিল্লিতে হয়ে থাকে। এই রীতির পরিবর্তন চাই আমি। সেজন্যই নৌসেনা দিবসের মূল উদযাপন হচ্ছে এই পবিত্র ভূমিতে-যা ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্মস্থল। 
    জি-২০ শিখর সম্মেলনের সময়ে যে বিষয়টি বিশ্বের মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়েছে তা হল ভারত কেবলমাত্র বৃহত্তম গণতন্ত্রই নয়, গণতন্ত্রের ধাত্রীভূমি। ঠিক একই ভাবে নৌসেনার ধারণা ভারতেই তৈরি হয়েছে এবং এবিষয়ে ভারত তার প্রাপ্য সম্মান আদায় করে নিচ্ছে বিশ্বের মানুষের কাছ থেকে। 

সকলকে আমি আবার অভিনন্দন জানাই --- চিৎকার করে বলুন, 

ভারত মাতার জয়
ভারত মাতার জয়
ভারত মাতার জয়
ভারত মাতার জয়


PG/AC/SG



(Release ID: 1982714) Visitor Counter : 67