প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেস-এর সপ্তম সংস্করণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 27 OCT 2023 3:19PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৭ অক্টোবর, ২০২৩

 

মঞ্চে উপস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারের সহকর্মীবৃন্দ, মোবাইল ও টেলিকম শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্টজনেরা, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, ভদ্রমহোদয় ও মহোদয়াগণ!

আপনাদের মাঝে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। একুশ শতকের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষের গন্তব্য পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে এই অনুষ্ঠানের। এক সময় আমরা পরবর্তী দশক বা পরবর্তী ২০-৩০ বছর কিংবা পরবর্তী শতকে কী পরিবর্তন আসবে, তা নিয়ে আলোচনা করতাম। কিন্তু এখন প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের কারণে আমরা বলি, ‘ভবিষ্যৎ রয়েছে এখানেই’। কয়েক মিনিট আগে আমি এই প্রদর্শনীর কয়েকটি স্টল পরিদর্শন করেছি। টেলিযোগাযোগ, প্রযুক্তি, ৬জি, এআই, সাইবার সুরক্ষা, সেমি-কন্ডাক্টর, ড্রোন, মহাকাশ ক্ষেত্র, গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান, পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি কিংবা অন্য যে কোনো ক্ষেত্র, সবকিছুই দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এটা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত আনন্দের। 

বন্ধুগণ,

গত বছর আমরা এখানে ৫জি নিয়ে আলোচনার জন্য সমবেত হয়েছিলাম। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার পর গোটা বিশ্ব বিস্ময়ের সঙ্গে ভারতের দিকে তাকিয়ে ছিল। ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত ৫জি পরিষেবা চালু হয়েছে। তারপরেও আমরা থেমে যাইনি। আমরা দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে ৫জি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। 

বন্ধুগণ,

৫জি চালুর এক বছরের মধ্যে আমরা প্রায় ৪ লক্ষ ৫জি ‘বেস স্টেশন’ তৈরি করেছি। এর আওতায় আনা হয়েছে দেশের ৯৭ শতাংশ শহর এবং ৮০ শতাংশের বেশি মানুষকে। মোবাইল ব্রডব্যান্ড গতির ক্ষেত্রে বিশ্বে এক সময় আমাদের স্থান ছিল ১১৮তম। এখন আমরা ৪৩তম স্থানে উঠে এসেছি। ৫জি পরিষেবার দ্রুত সম্প্রসারণের পাশাপাশি ৬জি-র ক্ষেত্রেও আমরা নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে চলেছি। আমার বিশ্বাস, ভারত এখন ৬জি পরিষেবার ক্ষেত্রেও বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। 

বন্ধুগণ,

আমরা বিশ্বাস করি, প্রত্যেক ক্ষেত্রে ‘ক্ষমতার গণতন্ত্রীকরণ’ হয়েছে। উন্নয়নের সুফল যাতে ভারতের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষ, প্রত্যেক ক্ষেত্রে দ্রুত পৌঁছতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে চলেছি। আমাদের লক্ষ্য হল, প্রত্যেকের জন্য সুবিধা সুনিশ্চিত করা, জীবনকে মর্যাদাপূর্ণ করে তোলা এবং প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করা।

আমাদের অগ্রাধিকার হল, দেশের সম্পদ এবং প্রযুক্তির সুফল যাতে প্রত্যেক নাগরিকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ‘মুদ্রা যোজনা’য় জামানতমুক্ত ঋণ হোক, ‘স্বচ্ছ ভারত’-এর আওতায় পরিচ্ছন্ন শৌচাগার কিংবা জনধন-আধার-মোবাইল-এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর হোক, সমস্ত উদ্যোগের ক্ষেত্রেই একটি অভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে। সেটি হল, দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ন এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই টেলিকম প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ভারত নেট প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতকে ব্রডব্যান্ড সংযোগের আওতায় আনা হয়েছে। 

অটল টিঙ্কারিং ল্যাব-এর আওতায় ১০ হাজার ল্যাব-এর মাধ্যমে আমরা প্রায় ৭৫ লক্ষ শিশুর কাছে প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমার বিশ্বাস, ১০০টি ৫জি 'ইউজ কেস ল্যাবস' শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে একই ধরনের পরিবর্তন আনতে চলেছে। নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। তরুণরা যত যুক্ত হবেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে অগ্রগতি তত ত্বরান্বিত হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের তরুণরা তাঁদের শক্তি, উদ্দীপনা এবং চেতনা নিয়ে সবকিছু বদলে দিতে পারে। কয়েকদিন আগে আমি একটি ভিডিও দেখছিলাম, কীভাবে আমাদের দেশের মানুষ চিন্তাভাবনা করেন এবং কীভাবে ড্রোন ব্যবহৃত হয়। 

বন্ধুগণ,

গত কয়েক বছরে দেশের সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে ভারতের স্টার্ট-আপ। বর্তমান বিশ্বে প্রথম সারিতে থাকা তিনটি স্টার্ট-আপ দেশের মধ্যে একটি হল ভারত। ২০১৪-তে দেশে মাত্র কয়েকশ’ স্টার্ট-আপ ছিল, আর এখন তা প্রায় ১ লক্ষে পৌঁছে গিয়েছে।

বন্ধুগণ,

মনে করার চেষ্টা করুন, ১০-১২ বছর আগে মোবাইল ফোন কী অবস্থায় ছিল। সে সময় মোবাইলের স্ক্রিন ব্যবস্থা এখনকার মতো এত উন্নত ছিল না। ২০১৪-র পর থেকে দেশের পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। মানুষ আমাদের পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছিলেন। সে সময় আমরা মোবাইল আমদানি করতাম। আর এখন আমরা মোবাইল রপ্তানি করি। সে সময় মোবাইল উৎপাদনে আমাদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য, আর এখন আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল উৎপাদক দেশ। আজ আমরা প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী রপ্তানি করছি। ভারতে এখন অ্যাপেল-এর আইফোন-১৫ তৈরি হচ্ছে। এটা আজ আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, গোটা বিশ্ব আজ ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ফোন ব্যবহার করছে।

বন্ধুগণ,

মোবাইল এবং ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী উৎপাদনে আমাদের এই সাফল্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেমিকন্ডাক্টরের উন্নয়নে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার পিএলআই প্রকল্প রূপায়িত করা হচ্ছে। আজ গোটা বিশ্বের সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলি ভারতে লগ্নি করতে শুরু করেছে। সেমিকন্ডাক্টর মিশনের মাধ্যমে শুধু দেশের চাহিদা মেটানো নয়, সেইসঙ্গে গোটা দুনিয়ার চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যেও কাজ করে চলেছে ভারত।

বন্ধুগণ,

উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিই হল একমাত্র হাতিয়ার। আমরা যত বেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করব, দেশ তত উন্নত হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও আমরা একই জিনিস দেখতে পাই, যেখানে ভারত উন্নত দেশের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই। বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে সরকার প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে দেশীয় নকশা ও প্রযুক্তির উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমি আপনাদের নজরে আনতে চাই। তা হল, সাইবার সুরক্ষা এবং নেটওয়ার্ক পরিকাঠামোর নিরাপত্তা। সাইবার সুরক্ষার জটিলতা সম্পর্কে আমরা অবহিত। জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে।  অতএব, সমস্যা সৃষ্টিকারীদের হাত থেকে গোটা বিশ্বকে কীভাবে মুক্ত রাখা যায়, তা নিয়ে ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেসে আলোচনা হওয়া উচিত। 

বন্ধুগণ,

দীর্ঘ সময় ধরে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারত অনেক কিছু হারিয়েছে। তারপর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের মেধার বিকাশ দেখতে পাই। আর একুশ শতক হল ভারতের নেতৃত্ব নিয়ে ভাবনার শতক। আমাকে বিশ্বাস করুন, যখন আমি কিছু বলি, তখন তা সুনিশ্চিত বলেই ধরে নিন। আমি চিন্তাশীল নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলছি। চিন্তাশীল নেতৃত্ব এক নতুন মাত্রা তৈরি করতে পারে, যা পরবর্তীকালে গোটা বিশ্ব অনুসরণ করবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা চিন্তাশীল নেতা হয়ে উঠেছি। যেমন ইউপিআই ব্যবস্থা, যা গোটা বিশ্বে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় পথ দেখাচ্ছে। 

আপনাদের সক্ষমতার ওপর আমার পুরোপুরি আস্থা রয়েছে। আপনাদের শক্তি, আপনাদের সক্ষমতা এবং আপনাদের নিষ্ঠার ওপর আমি আস্থাশীল। সেই কারণেই আমি বলছি, আমরা অবশ্যই পারব। আপনাদের সবাইকে আমার শুভেচ্ছা। দেশের নানা প্রান্ত, দিল্লি এবং আশপাশের এলাকা থেকে যেসব তরুণ এখানে এসেছেন, তাঁদের কাছে আমার আবেদন, ভারত মণ্ডপম-এর প্রদর্শনী পরিদর্শন করুন। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশ কীভাবে এগিয়ে চলেছে, তা জানার জন্য এটি একটি অনন্য সুযোগ। আমি আপনাদের সবাইকে আমার অন্তরের অভিনন্দন জানাচ্ছি। 

ধন্যবাদ! 

প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি দিয়েছেন হিন্দিতে।


PG/MP/DM



(Release ID: 1976677) Visitor Counter : 66