প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

দেশের প্রতিটি অঞ্চল ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজতর করে তোলাই কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য

মধ্যবিত্ত তথা নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের প্রয়োজনের বিষয়গুলি রয়েছে তাঁর সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায়

আজ রাজকোট বিমানবন্দর তথা অন্যান্য কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গকালে বললেন প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 27 JUL 2023 6:16PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৭ জুলাই, ২০২৩

 


কেন্দ্রীয় সরকার গত ৯ বছর ধরে দেশের প্রতিটি অঞ্চল ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জীবনকে সহজতর করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। দেশে ‘সুশাসন’ আমরাই নিশ্চিত করেছি এবং এইভাবেই দেশকে আমরা পরিচালনা করে আসছি। দরিদ্র, দলিত, আদিবাসী অথবা অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষ – প্রত্যেকের জীবনযাত্রাকে আরও উন্নত করে তুলতে আমরা নিরলস প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি। 

প্রধানমন্ত্রী আজ রাজকোট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গকালে তাঁর ভাষণে একথা বলেন। এছাড়াও আরও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পও জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তিনি। ৮০৭ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে এই প্রকল্পগুলি রূপায়িত হয়েছে গুজরাটের রাজকোটে।

দেশে দারিদ্র্যের হার ও মাত্রাও যে ক্রমশ নিম্নমুখী তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর মন্তব্যের সপক্ষে সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনও তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে গত পাঁচ বছরে দেশের ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ নাগরিক দারিদ্র্যসীমার ঊর্ধ্বে আসতে পেরেছেন। তাঁরা এখন এক নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণী রূপে দেশে পরিচিত হয়েছেন। এইভাবেই মধ্যবিত্ত এবং নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষকে উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে সরকার বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। 

শ্রী মোদী বলেন, আজকের দিনটি শুধুমাত্র রাজকোটেরই নয়, সমগ্র সৌরাষ্ট্র অঞ্চলেরও একটি বিশেষ দিন। তাঁর মতে, রাজকোট বর্তমানে সৌরাষ্ট্রের চালিকাশক্তি রূপে এক বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। শিল্প, সংস্কৃতি, খাদ্য বৈচিত্র্য – সমস্ত কিছুর জন্যই রাজকোটের সুখ্যাতি রয়েছে। তবে, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গড়ে তোলার যে প্রয়োজনীয়তা অনেকদিন ধরেই অনুভূত হচ্ছিল, তা আজ পূর্ণ হল। শ্রী মোদী দেশের মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষের দীর্ঘদিনের এক চাহিদার কথা উল্লেখ করে বলেন যে দেশের সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসারের প্রয়োজনীয়তার দিকে তাঁরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছিলেন। এই কারণে গত ৯ বছর ধরে দেশের সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে তুলতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০১৪ সালে মেট্রো নেটওয়ার্কের আওতায় ছিল দেশের চারটি মাত্র শহর। কিন্তু সেই সংখ্যা এখন পৌঁছে গেছে ২০টিরও বেশিতে। দেশের ২৫টি রুটে বর্তমানে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলাচল করছে। ২০১৪ সালে দেশে বিমানবন্দরের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০টি, কিন্তু সেই সংখ্যা এখন দ্বিগুণেরও বেশি। বিমান পরিবহণ পরিষেবার প্রসারের ফলে দেশের অসামরিক বিমান ব্যবস্থাও এখন এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। ভারতীয় সংস্থাগুলি এখন কোটি কোটি টাকার বিমান সংগ্রহ করছে। এমনকি, গুজরাটেও বিমান তৈরি করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহজতর জীবনযাত্রা এবং জীবনধারণের উন্নত মান নিশ্চিত করার বিষয়গুলি রয়েছে তাঁর সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায়। তিনি বলেন যে এক সময় দেশের হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার জন্য রোগীদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। সেই সময় বিমা এবং পেনশন সম্পর্কিত সমস্যার নিরসনেও তাঁদের অপেক্ষা করতে হত দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি, কর-এর রিটার্ন দাখিল করার ক্ষেত্রেও নানা ধরনের সমস্যায় তাঁদের জেরবার হতে হত। কিন্তু, ডিজিটাল ভারত গঠনের স্বপ্নকে সাকার করে তোলার মাধ্যমে এই ধরনের যাবতীয় সমস্যা এখন অতীতমাত্র। মোবাইল ব্যাঙ্কিং এবং অনলাইনে কর প্রদান ব্যবস্থা চালু হওয়ায় সাধারণ মানুষের অযথা হয়রানি বন্ধ হয়েছে। 

দেশের বাসস্থান সমস্যার প্রসঙ্গটিও এদিন স্পর্শ করে যায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। তিনি বলেন, দরিদ্র সাধারণ মানুষের বাসস্থানের চাহিদার কথা আমরা সব সময়েই মনে রেখেছি। তাই, দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নিজস্ব একটি স্বপ্নের বাসস্থান গড়ে তোলার স্বপ্নকে আমরা আজ সফল করে তুলেছি। ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র আওতায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষকে যে ১৮ লক্ষ টাকা করে সরকারি ভর্তুকি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, সে কথারও উল্লেখ করে তিনি। শ্রী মোদী বলেন যে সরকারি এই ব্যবস্থায় উপকৃত হয়েছেন ৬ লক্ষেরও বেশি পরিবার। এঁদের মধ্যে ৬০ হাজার মানুষ গুজরাটে বসবাস করেন।

বাসস্থানের নামে দীর্ঘদিন ধরে যে জালিয়াতির ঘটনা ঘটে আসছিল তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে সঠিক ও চিহ্নিত মানুষটি তাঁর নিজস্ব বাসস্থানের মালিকানা থেকে বঞ্চিত হতেন। কিন্তু বর্তমান সরকার আইনগতভাবে RERA চালু করে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে সুরক্ষিত করেছে। তাই, লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন বাসস্থানের মালিকানার ক্ষেত্রে জালিয়াতির ঘটনা থেকে পুরোপুরি মুক্ত।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে আরও বলেন যে অতীতে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার এক সময় ১০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার এই হারকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে আসছে। এমনকি, অতিমারী এবং যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও মুদ্রাস্ফীতির হারকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে যেখানে মুদ্রাস্ফীতির হার বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ, সেখানে ভারতে এই হার অনেকটাই নিচের দিকে। মুদ্রাস্ফীতির হারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সর্বতোভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এই পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে। 

দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের ব্যয়সাশ্রয় এবং সঞ্চয়ের পরিমাণ কিভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে তাঁর সরকার ব্যয়াধিক্যের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। ৯ বছর আগে ২ লক্ষ টাকা আয়ের ক্ষেত্রেও কর ধার্য করা হত। কিন্তু বর্তমানে বছরে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় ও উপার্জনের জন্য কোনরকম কর দিতে হয় না। আমাদের এই পদক্ষেপ মধ্যবিত্ত মানুষকে সঞ্চয়ের সুযোগ ও সুবিধা এনে দিয়েছে। এমনকি, ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলির জন্যও সুদের হার এখন বাড়ানো হয়েছে। ৮.২৫ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হচ্ছে ইপিএফও-তেও।

মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ব্যয় কিভাবে হ্রাস পেয়েছে তারও কিছু উদাহরণ এদিন তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ১ জিবি ডেটা ব্যবহার করার জন্য ব্যয় করতে হত ৩০০ টাকার মতো। কিন্তু বর্তমানে সেই টাকায় প্রতি মাসে গড়ে ২০ জিবি পর্যন্ত ডেটা ব্যবহার করা সম্ভব। ফলে, একজন নাগরিকের মোবাইল ফোন ও ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাসে ৫ হাজার টাকারও সাশ্রয় হচ্ছে।

শ্রী মোদী বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপিত জন ঔষধি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত সস্তায় সাধারণ মানুষের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। যাঁদের নিয়মিতভাবে ওষুধের ওপর নির্ভর করে থাকতে হয়, তাঁরা এটাকে তাঁদের জীবনে বিশেষ আশীর্বাদ বলেই মনে করছেন। এই জন ঔষধি কেন্দ্রগুলি থেকে ওষুধ সংগ্রহ করার ফলে দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ব্যয়সাশ্রয় ঘটেছে ২০ হাজার টাকারও বেশি। একটি সংবেদনশীল সরকার এইভাবেই সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যায় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। 

গুজরাট তথা সমগ্র সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকার যে সংবেদনশীল মানসিকতা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে একথা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সার্বিক কর্মসূচির আওতায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনজীবনের পরিস্থিতিকে আরও উন্নত করে তোলা হচ্ছে। হাজার হাজার বাঁধ ও চেকড্যাম সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে বর্তমানে জলের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, ‘হর ঘর জল যোজনা’র আওতায় গুজরাটের কোটি কোটি পরিবার এখন পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সংগ্রহের সুযোগ লাভ করেছেন। 

পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে তাঁর সুশাসনের এই আদর্শ গত ৯ বছর ধরে গড়ে উঠেছে। সমাজের প্রত্যেকটি স্তরের মানুষের উন্নয়নের দিকেই লক্ষ্য রয়েছে তাঁর সরকারের। এইভাবেই আমরা এক ‘বিকশিত ভারত’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। এই পথ ধরেই আমরা ‘অমৃতকাল’-এর সঙ্কল্প নিয়ে আরও আরও এগিয়ে যাব।

এদিনের অনুষ্ঠানে রাজকোট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও অন্যান্য যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী তার মধ্যে ছিল ‘সাওনি যোজনা’, দ্বারকা গ্রামীণ জল সরবরাহ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কর্মসূচি, আপারকোট ফোর্ট-এর প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মসূচি, একটি জলশোধন প্রকল্পের নির্মাণ, জল নিকাশি প্রকল্প, ফ্লাইওভার ইত্যাদি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল, কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী শ্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সাংসদ শ্রী সি আর পাতিল, গুজরাট সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এবং গুজরাট বিধানসভার সদস্যরা।

 

 

AC/SKD/DM



(Release ID: 1950596) Visitor Counter : 76