প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

তামিলনাড়ু হল ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভাষা ও সাহিত্যের এক পীঠস্থান

তামিলনাড়ুতে ৩,৭০০ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাসকালে বললেন প্রধানমন্ত্রী

কয়েকটি প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করলেন তিনি

Posted On: 08 APR 2023 8:54PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৮ এপ্রিল, ২০২৩


চেন্নাইয়ের অ্যালস্ট্রম ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আজ তামিলনাড়ুর বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। একইসঙ্গে তিনি কয়েকটি প্রকল্প উৎসর্গ করেন জাতির উদ্দেশে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী চেন্নাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন ইন্টিগ্রেটেড টার্মিনাল বিল্ডিংটির (প্রথম পর্যায়ের) উদ্বোধন করেন। চেন্নাইয়ে চেন্নাই-কোয়েম্বাটোর বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটির সূচনাও করেন তিনি।


পরে, এক সমাবেশে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তামিলনাড়ু হল ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং ভাষা ও সংস্কৃতির এক পীঠস্থান। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনেকেই জন্মেছিলেন এই রাজ্যটিতে। সেই অর্থে দেশপ্রেম ও জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল এই রাজ্যটিতে।


শ্রী মোদী বলেন, তামিলনাড়ু উথাণ্ডু আসন্নপ্রায়। এই বিশেষ সময়কালটি হল নতুন নতুন শক্তি, উৎসাহ, আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং নতুন নতুন উন্নয়ন প্রচেষ্টার সূচনাকাল। আজ থেকে অনেকগুলি নতুন পরিকাঠামো প্রকল্পের কাজ এখানে শুরু হচ্ছে। আবার বেশ কয়েকটি প্রকল্প রূপায়ণের সাফল্য আজ থেকেই প্রত্যক্ষ করা যাবে। রেল, সড়ক এবং বিমান চলাচল সম্পর্কিত নতুন নতুন প্রকল্পগুলি নববর্ষ উদযাপনের বিশেষ অঙ্গ হয়ে উঠবে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে এখন পরিকাঠামো বিপ্লব ঘটে চলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গতি। ফলে, পরিকাঠামোর প্রসার ও আয়তনও বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় সমহারে। এ বছরের বাজেটে ১০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে। ২০১৪ সালের তুলনায় এই বরাদ্দ পাঁচগুণ বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন। রেল পরিকাঠামো গড়ে তুলতেও রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় মহাসড়কগুলির দৈর্ঘ্য প্রতি বছরই প্রায় দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, রেল বৈদ্যুতিকরণের কাজ প্রতি বছর ৬০০ রুট কিলোমিটার থেকে ৪ হাজার রুট কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। আবার, দেশের বিমানবন্দরের সংখ্যাও ৭৪ থেকে উন্নীত হয়েছে ১৫০-এ। তামিলনাড়ুর বিস্তৃত উপকূলরেখা যে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল, একথার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত দেশের বন্দরগুলির ক্ষমতাও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।


দেশের সামাজিক তথা ডিজিটাল পরিকাঠামো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান যে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৮০টি। কিন্তু বর্তমানে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬০-এ। গত ৯ বছরে দেশ তিনগুণ বেশি অ্যাপ তৈরি করেছে এবং এইভাবেই ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভারত। শুধু তাই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে মোবাইল ডেটার জন্য ব্যয়ের মাত্রাও অনেকটাই কম। ৬ লক্ষ কিলোমিটার অপটিক ফাইবারের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে দেশের প্রায় ২ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতকে। শহরগুলির তুলনায় গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও এখন অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।


প্রধানমন্ত্রীর মতে, কর্মসংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গীর বিশেষ পরিবর্তন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল এনে দিয়েছে। অতীতে পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিকে বিলম্বিত এক উন্নয়ন প্রচেষ্টা বলেই সকলে ধরে নিতেন। কিন্তু বর্তমানে এই ধারণারও আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। পরিবর্তিত কর্মসংস্কৃতির আবহে বিলম্বিত প্রচেষ্টা রূপান্তরিত হয়েছে সঠিক পরিষেবায়। করদাতাদের প্রতিটি অর্থ যাতে উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হয়, সে সম্পর্কে সরকার পূর্ণ মাত্রায় সজাগ ও সচেতন। বর্তমানে পরিকাঠামো শুধুমাত্র ইঁট ও সিমেন্ট দিয়ে কংক্রিটের কোনও গাঁথনিমাত্র নয়, বরং তার মধ্যে রয়েছে মানুষ ও মানবিকতার স্পর্শ। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা রূপায়িত হয়েছে প্রচেষ্টার সাফল্যে এবং স্বপ্নের বাস্তবায়নে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, তামিলনাড়ুতে আজ যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলির সূচনা হল তা একদিকে যেমন কৃষক সমাজের প্রভূত উপকারে আসবে, অন্যদিকে তেমনই রেল ও সড়ক সংযোগ দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ক্রেতা উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা করবে। অন্যদিকে, চেন্নাই বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালটি তামিলনাড়ুকে যুক্ত করবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে নতুন নতুন বিনিয়োগের পথও প্রশস্ত হবে। ফলে, আয় ও উপার্জন বৃদ্ধির সুযোগ ঘটবে স্থানীয় যুবকদের। বন্দে ভারত-এর মতো এক্সপ্রেস ট্রেনের গতি বৃদ্ধিই শুধু নয়, একইসঙ্গে গতি সঞ্চার হবে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন পূরণের কাজেও। চাঙ্গা হয়ে উঠবে দেশের সার্বিক অর্থনীতি।


তামিলনাড়ুর উন্নয়নকে সরকারের এক বিশেষ অগ্রাধিকার বলে বর্ণনা করে শ্রী মোদী বলেন, এ বছরের বাজেটে এই রাজ্যটির অনুকূলে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে যা কিনা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। অতীতের তুলনায় অনেকগুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে এই রাজ্যের জাতীয় মহাসড়কগুলির প্রসার ও উন্নয়নে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছরে তামিলনাড়ুতে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজই শুরু বা সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রসঙ্গত তিনি প্রতিরক্ষা শিল্প করিডরের কথা উল্লেখ করেন। ‘প্রধানমন্ত্রী মিত্র মেগা টেক্সটাইল পার্ক’ এবং বেঙ্গালুরু-চেন্নাই এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কথাও উঠে আসে তাঁর এদিনের বক্তব্যে। চেন্নাইয়ের অদূরে মাল্টি-মোডাল লজিস্টিক্স পার্ক এবং মামাল্লাপুরম থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ইস্ট কোস্ট রোডের উন্নয়ন পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রকল্পগুলির কাজ তামিলনাড়ুতে শুরু হয়েছে তার মাধ্যমে চেন্নাই, মাদুরাই এবং কোয়েম্বাটোর – এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শহর প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হতে চলেছে। চেন্নাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে নতুন টার্মিনাল বিল্ডিংটির উদ্বোধন করা হয়েছে তা তামিল সংস্কৃতির সৌন্দর্যের এক প্রতীকবিশেষ। এখানে ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলন ঘটেছে আধুনিকতার। কোয়েম্বাটোরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকেন্দ্র বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটির সূচনার মধ্য দিয়ে উৎপাদনশীলতার বৃদ্ধি ও প্রসার ঘটবে। মাদুরাই শহরটিকে তামিলনাড়ুর সাংস্কৃতিক রাজধানী বলে উল্লেখ করেন তিনি।


পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তামিলনাড়ু রাজ্যটি হল ভারতের উন্নয়ন প্রচেষ্টার এক অন্যতম চালিকাশক্তি। উন্নতমানের পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির সাহায্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি সার্বিকভাবে তামিলনাড়ুর অগ্রগতিও নিশ্চিত হয়ে উঠবে। তামিলনাড়ুর উন্নয়নের সঙ্গে সার্বিকভাবে যুক্ত রয়েছে ভারতের উন্নয়নও।


আজকের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল শ্রী আর এন রবি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী এম কে স্ট্যালিন, কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী শ্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, মৎস্যচাষ, পশুপালন এবং দুগ্ধোৎপাদন তথা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শ্রী এল মুরুগান সহ তামিলনাড়ু থেকে নির্বাচিত সাংসদ ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

PG/SKD/DM



(Release ID: 1915976) Visitor Counter : 409