স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
সন্ত্রাস তথা উগ্রপন্থী কার্যকলাপ দমনে স্থিরপ্রতিজ্ঞ কেন্দ্রীয় সরকার
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে জানালেন শ্রী অমিত শাহ
Posted On:
07 FEB 2023 9:47PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে আজ উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা সম্পর্কে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্র ও সমবায় দপ্তরের মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ। তিনি তাঁর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে গঠিত সরকার আত্মনির্ভর এক নতুন ভারত গঠনের সঙ্কল্পকে সফল করে তুলতে হিংসা ও সন্ত্রাসকে কোনরকম বরদাস্ত না করার বিষয়ে যে স্থিরপ্রতিজ্ঞ তার উল্লেখ করে জানান যে এজন্য সন্ত্রাস কবলিত কয়েকটি রাজ্যের সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার মাধ্যমে সন্ত্রাস মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনও বিশেষ দল বা মতাদর্শকে প্রাধান্য না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রসঙ্গত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী উল্লেখ করেন যে গত চার দশকের মধ্যে এই প্রথমবার ২০২২ সালে অসামরিক ব্যক্তি ও নিরাপত্তা কর্মীদের মৃত্যুর সংখ্যা ১০০-র নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
শ্রী অমিত শাহ জানান, সন্ত্রাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কয়েকটি বিশেষ স্তম্ভকে চিহ্নিত করেছে। এগুলি হল – হিংসা ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ দমনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে উন্নততর সমন্বয় এবং সন্ত্রাসকে কোনভাবে প্রশ্রয় বা মদত না দেওয়ার উদ্দেশ্যে জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রচেষ্টা। এই তিনটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশেষ তৎপরতায় গত আট বছরে উগ্রপন্থী কার্যকলাপকে দমন করার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক সাফল্যের নজির সৃষ্টি হয়েছে। ২০১০-এর তুলনায় ২০২২ সালে হিংসাত্মক ঘটনা হ্রাস পেয়েছে ৭৬ শতাংশের মতো। অন্যদিকে, ২০১০ সালের তুলনায় অসামরিক ব্যক্তি এবং নিরাপত্তা কর্মীদের মৃত্যুর হার ২০২২ সালে হ্রাস পেয়েছে ৯০ শতাংশ। শুধু তাই নয়, উগ্রপন্থী অধ্যুষিত জেলাগুলির সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে ৯০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৫টিতে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আরও জানান যে ২০১৯ সালে সন্ত্রাস কবলিত এলাকাগুলিতে ১৭৫টি নতুন শিবির স্থাপন করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে। এই বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সন্ত্রাসবাদীদের তৎপরতা অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব হয়েছে। বিহারের বুদ্ধ পাহাড় ও চাকরবান্দায় উগ্রপন্থা দমনে যেমন সাফল্য এসেছে, অন্যদিকে তেমনই ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার বহু এলাকাকেই প্রায় সন্ত্রাসমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আকাশপথে সন্ত্রাসের কার্যকর মোকাবিলায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে আরও নতুন পাইলট ও ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়োগ করা হয়েছে গত এক বছরে। সেনা জওয়ানদের প্রাণরক্ষার কাজে এবং সন্ত্রাস কবলিত অঞ্চলগুলিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগ বিশেষভাবে সফল হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, সন্ত্রাসের যে কোনও ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এখন স্থির সঙ্কল্প। আর্থিক দিক থেকে সন্ত্রাসবাদীদের মদতদানের সমস্ত রকম রাস্তাই প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে তাঁর ভাষণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অবহিত করেন যে নতুন নতুন পদ্ধতি ও উদ্ভাবন প্রচেষ্টার মাধ্যমে নকশাল দমনে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এই প্রচেষ্টাকে একটি নীতিগত পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করে তিনি জানান যে ২০২২-এর ফেব্রুয়ারি মাসে ঝাড়খণ্ডের লোহারদাগা জেলায় নতুন নিরাপত্তা শিবির স্থাপন করার মাধ্যমে ১৩ দিনের এক বিশেষ অভিযানে বাহিনী সাফল্য অর্জন করে। রাজ্য পুলিশ বাহিনীগুলিকে অত্যাধুনিক করে তুলতে মোদী সরকার আর্থিক সহায়তাদানেও পিছিয়ে নেই। সন্ত্রাস কবলিত রাজ্যগুলিতে বিশেষ বিশেষ পুলিশ চৌকি স্থাপনের মাধ্যমে সন্ত্রাস দমনের চেষ্টা চলছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শ্রী অমিত শাহ বলেন, সন্ত্রাসবাদী তৎপরতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলির দ্রুত ও সার্বিক উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার এক বিশেষ নীতিও গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান প্রধান কর্মসূচি ছাড়াও কয়েকটি বিশেষ বিশেষ কর্মসূচিও রূপায়িত হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলির উন্নয়ন প্রচেষ্টায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিতে সড়ক সংযোগ আরও উন্নত করে তুলতে ১৭,৪৬২ কিলোমিটারব্যাপী রাস্তা নির্মাণের কাজে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১১,৮১১ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে। এছাড়াও, মোবাইল সংযোগ বাড়াতে গত আট বছরে মোবাইল টাওয়ার প্রকল্পের আওতায় ২,৩৪৩টি মোবাইল টাওয়ারও সংস্থাপিত হয়েছে। মোবাইল টাওয়ার প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে এগুলি স্থাপিত হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি জানান, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে এই মোবাইল টাওয়ারগুলিকে ৪জি-তে উন্নীত করার ব্যাপারেও সরকারিভাবে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২,৫৪২টি নতুন মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের কাজ বর্তমানে চলছে।
শ্রী শাহ বলেন, সন্ত্রাসবাদের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী অধ্যুষিত ব্লকগুলিতে একলব্য বিদ্যালয় স্থাপনের কর্মসূচিকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের পূর্ববর্তী ২১ বছরে দেশে যেখানে ১৪২টি একলব্য আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবে মঞ্জুরি দেওয়া হয়, সেখানে গত তিন বছরে ১০৩টি এই ধরনের বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক পরিসংখ্যানগত তথ্য তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, উগ্রপন্থী কার্যকলাপে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে ২৪৫টি একলব্য বিদ্যালয় স্থাপনে মঞ্জুরি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২১টি ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই ধরনের অঞ্চলগুলিতে গত আট বছরে ব্যাঙ্কের ১,২৫৮টি শাখা এবং ১,৩৪৮টি এটিএম খোলা হয়েছে। সর্বস্তরের নাগরিকদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিই সরকারের এই বিশেষ প্রচেষ্টার লক্ষ্য বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বর্ণনা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আরও একটি তথ্য তুলে ধরে জানান যে একদা সন্ত্রাস কবলিত ৯০টির মতো জেলায় গত আট বছরে ডাকঘর স্থাপন করা হয়েছে ৪,৯০৩টি। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩ কিলোমিটার পরিধির মধ্যে যাতে অন্তত একটি করে ডাকঘরের সুযোগ পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করতেই সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগ। এর মধ্যে শুধুমাত্র গত আর্থিক বছরেই চালু হয়ে গেছে ৩,১১৪টি ডাকঘর।
দক্ষতা বিকাশ কর্মসূচি প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শ্রী শাহ জানান যে কর্মসূচির পরিধি ৩৪টি জেলা থেকে ২০১৬-তে উন্নীত করা হয়েছে ৪৭টি জেলায়। এর আওতায় ৪৭টি আইটিআই এবং ৬৮টি এসডিসি গড়ে তোলার ব্যাপারে মঞ্জুরি দেওয়া হয়। তার মধ্যে ৪৩টি আইটিআই এবং ৩৮টি এসডিসি-তে কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
আজকের বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শ্রী নিত্যানন্দ রাই, শ্রী অজয় কুমার মিশ্র ও শ্রী নিশীথ প্রামাণিক, সংসদের উভয় কক্ষ থেকে নির্বাচিত মন্ত্রকের সংসদীয় পরামর্শদাতা কমিটির সদস্যবৃন্দ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব, বিএসএফ ও সিআরপিএফ-এর ডিজি পর্যায়ের বরিষ্ঠ আধিকারিক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কয়েকজন পদস্থ আধিকারিক।
PG/SKD/DM/
(Release ID: 1897376)
Visitor Counter : 322