প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ – এর পরীক্ষা পে চর্চা অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবক-অভিভাবিকাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন

“যদি তোমার লক্ষ্য স্থির থাকে, তা হলে প্রত্যাশার চাপকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়”



“দিনের শুরুতেই কম ভালো লাগার বা কঠিন বিষয়গুলি নিয়ে পড়াশুনা করা উচিৎ”



“টোকাটুকির মাধ্যমে কখনই জীবনে সাফল্য আসবে না”



“গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য দৃঢ়তার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে”



“অধিকাংশ মানুষই সাধারণ মানের, কিন্তু যখন এইসব সাধারণ মানের মানুষগুলি অসাধারণ কাজ করেন, তখনই তাঁরা নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যান”



“সমৃদ্ধশালী গণতন্ত্রের মূল শর্ত হ’ল সমালোচনা, যা বিভিন্ন বিষয়কে বিশুদ্ধ করে তোলে”



“অভিযোগ ও সমালোচনার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে”



“ঈশ্বর আমাদের মুক্ত চিন্তা এবং ব্যক্তিস্বত্ত্বা দিয়েছেন, আমরা যাতে যন্ত্রের দাস না হয়ে পড়ি, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে”



“বাছাই করার প্রক্রিয়ার সময় বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক”



“একটি পরীক্ষার ফলাফল কোনও জীবনকে শেষ করে দেয় না, পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনের ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফল নিয়ে বেশি ভাবনাচিন্তাও করা উচিৎ নয়”



“একটি আঞ্চলিক ভাষা শেখার উদ্যোগের মাধ্যমে তুমি শুধুমাত্র সেই ভাষার সাহায্যে কোনও কিছু প্রকাশ

Posted On: 27 JAN 2023 2:46PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী পরীক্ষা পে চর্চার ষষ্ঠ সংস্করণে আজ দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবক-অভিভাবিকাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। অনুষ্ঠানে তিনি মতবিনিময়ের আগে ছাত্রছাত্রীদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন সামগ্রীর প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক-অভিভাবিকা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী পরীক্ষা পে চর্চার আয়োজন করে থাকেন। এ বছর ১৫৫টি দেশ থেকে প্রায় ৩৮ লক্ষ ৮০ হাজারটি নাম নিবন্ধিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সকলের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেন, এবারের পরীক্ষা পে চর্চা সাধারণতন্ত্র দিবসের উদযাপনকালে আয়োজিত হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে যাঁরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসেছেন, তাঁরাও সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ করেছেন। পরীক্ষা পে চর্চার উপযোগিতার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এই অনুষ্ঠানের জন্য লক্ষ লক্ষ প্রশ্ন তাঁর কাছে জমা পড়ে। এর মধ্য দিয়ে তিনি ভারতের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি ভাবনাচিন্তা করছে, সে বিষয়ে একটি ধারণা পান। “এই প্রশ্নগুলি আমার কাছে সম্পদের সমতুল”। এই প্রশ্নগুলি যদি সমাজ বিজ্ঞানীরা আগামী দিনে মূল্যায়ন করেন, তা হলে তাঁরা কিশোরমতি ছাত্রছাত্রীরা কি ভাবছে, সে বিষয়ে সম্যক ধারণা পাবেন।

হতাশাজনক পরিস্থিতির মোকাবিলায়:

তামিলনাডুর মাদুরাইয়ের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রীমতী অশ্বিনী, দিল্লির পিতমপুরা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের নভোতেজ, পাটনার নবীন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রিয়াঙ্কা কুমারী জানতে চায় যে, পরীক্ষার ফল খারাপ হলে পরিবারের সদস্যরা যখন হতাশ হন, তখন কি করণীয়। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবারের প্রত্যাশা থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু, সেই প্রত্যাশার মধ্যে যদি সামাজিক অবস্থানের বিষয়টি জড়িয়ে থাকে, তা হলে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। প্রত্যেক সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাশাও বাড়তে থাকে। এই প্রত্যাশার মধ্যে পিছিয়ে আসা ছাত্রছাত্রীদের জন্য যথাযথ নয়। তাদের ভাবতে হবে, নিজের ক্ষমতা, প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিজের জীবনের প্রত্যাশা কি হওয়া উচিৎ। এ বিষয়ে তিনি ক্রিকেট খেলার প্রসঙ্গটি উত্থাপিত করেন। দর্শকরা যখন একজন ব্যাটস ম্যানকে ছয় বা চার মারার জন্য বলতে থাকেন, তখন মাথা ঠান্ডা রেখে ব্যাটস্‌ ম্যান কিন্তু তাঁর খেলা চালিয়ে যান। ক্রিকেটের মাঠে ব্যাটস্‌ ম্যানের লক্ষ্যের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদেরও লক্ষ্য পূরণে স্থিরভাবে এগিয়ে চলা উচিৎ। যদি তোমার লক্ষ্য স্থির থাকে, তা হলে প্রত্যাশার চাপকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে তিনি ছাত্রছাত্রীদের বলেন, যে চাপগুলির সম্মুখীন তারা হয়, সেগুলির মূল্যায়ন করা উচিৎ, যাতে তারা নিজেদের সম্ভাবনাকে বিচার করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রত্যাশা তাঁদের ফলাফলের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।

পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং সময়ের ব্যবস্থাপনা:

ডালহৌসির কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী জানতে চান যে, পরীক্ষার প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করা উচিৎ এবং চাপের মধ্যে যখন কোনও কিছু ভুলে যায়, তখন সেই পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে। রাইপুরের কৃষ্ণা পাবলিক স্কুলের অদিতি দেওয়ান সময়ের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন করে। প্রধানমন্ত্রী জানান, পরীক্ষার সময় বা পরীক্ষা যখন থাকেব না, সেই সময়েও সময় সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাজ করতে গিয়ে কেউ ক্লান্ত হন না। তিনি ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দেন, বিভিন্ন কাজ করার জন্য তারা নিজেদের মতো করে সময় নির্ধারণ করুক। স্বাভাবিক প্রবণতায় দেখা যায়, যে বিষয়ে পড়াশুনা করতে ভালো লাগে, ছাত্রছাত্রীরা সেই বিষয়ে বেশি সময় ব্যয় করে। দিনের শুরুতেই কম ভালো লাগার বা কঠিন বিষয়গুলি নিয়ে পড়াশুনা করা উচিৎ। তিনি এই প্রসঙ্গে বাড়িতে মায়েরা বিভিন্ন কাজ করার সময় কিভাবে সময় নির্ধারণ করেন, সেদিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন। তা হলেই ছাত্রছাত্রীরা বুঝতে পারবে যে, সময়কে কিভাবে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। তা হলেই ছাত্রছাত্রীরা প্রতিটি বিষয়ের জন্য সময় ভাগ করে নিতে পারবে।

পরীক্ষার সময় টোকাটুকির প্রসঙ্গ:

বস্তারের স্বামী আত্মনন্দ রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র রূপেশ কাশ্যপ জানতে চায়, পরীক্ষার সময় টোকাটুকির অভ্যাস কিভাবে বর্জন করা উচিৎ। প্রায় একই ধরনের আরেকটি প্রশ্ন করে ওডিশার পুরীর কোনারকের তন্ময় বিসওয়াল। প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীরা যদি পরীক্ষার হলে গার্ডকে ফাঁকি দিয়ে অসৎ উপায় অবলম্বন করে, তা হলে তাদের ভাবনাচিন্তায় একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। “এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা। এই বিষয়টি নিয়ে তিনি সমাজকে গভীরভাবে ভাবনাচিন্তা করার পরামর্শ দেন। শ্রী মোদী বলেন, কোনও কোনও স্কুল বা শিক্ষক-শিক্ষিকা আলাদাভাবে টিউশনি করান, যেখানে তাঁরা তাঁদের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য বিভিন্ন অসৎ উপায় অবলম্বনের পন্থা-পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করেন। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের এই পথ সম্পূর্ণভাবে পরিহারের পরামর্শ দেন। “বর্তমান পরিবর্তনশীল সময়ে আমাদের জীবনধারা পরিবর্তিত হচ্ছে। তোমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পরীক্ষার মুখোমুখী হতেই হবে। টোকাটুকির মাধ্যমে কখনই জীবনে সাফল্য আসবে না। তুমি হয়তো একটি বা দুটি পরীক্ষায় সাফল্য পাবে। কিন্তু, তা সারা জীবনের জন্য প্রশ্নবোধক চিহ্ন হিসাবে থাকবে”। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীরা সাময়িক সাফল্যের জন্য কঠোর পরিশ্রমের পরিবর্তে অসৎ উপায় অবলম্বন করলে ভবিষ্যতে তাদেরই ক্ষতি হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি রেল স্টেশনের উদাহরণ তুলে ধরেন। মানুষ যখন একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে যান, তখন তাঁরা রেল লাইন পারাপার না করে ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, শর্টকাট অবলম্বন করলে তোমার সাফল্যের সময়ও হ্রাস পাবে।

কঠোর পরিশ্রম বনাম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করা:

কেরলের কোজিকোড়ের একজন ছাত্র কঠোর পরিশ্রম এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করার মধ্যে কোনটি শ্রেয়, সে বিষয়ে জানতে চায়। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে তৃষ্ণার্ত কাকের গল্প উল্লেখ করেন। একটি কাক পাথর ফেলে কলসির উপর জল নিয়ে এসে তার তৃষ্ণা মিটিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী এই গল্পের রেশ টেনে বলেন, যে কোনও কাজ করার আগে প্রথমে তা ভালো করে বুঝে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, একজন দক্ষক কারিগর দু’মিনিটের মধ্যে একটি চেন সারাই করে ২০০ টাকা আয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা তাঁর সহায়ক হয়। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই সবকিছু অর্জন করা যায় না। আবার খেলাধূলার ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্ব রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য দৃঢ়তার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেওয়া:

গুরুগ্রামের জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর জবিতা পাত্র জানতে চায়, সাধারণ মানের একজন পড়ুয়া হিসাবে সে কিভাবে ভালো ফল লাভ করতে পারে। শ্রী মোদী এই প্রসঙ্গে বাস্তবসম্মত মূল্যায়নের উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, একজন পড়ুয়া নিজের বিষয়ে মূল্যায়ন করতে পারলেই অভীষ্ট লক্ষ্য ও দক্ষতা অর্জনে সে সফল হবে। তিনি বাবা-মা’কে তাঁদের সন্তানের বিষয়ে যথাযথ মূল্যায়নের পরামর্শ দেন। অধিকাংশ মানুষই সাধারণ মানের, কিন্তু যখন এইসব সাধারণ মানের মানুষগুলি অসাধারণ কাজ করেন, তখনই তাঁরা নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যান। শ্রী মোদী বলেন, এখন আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ভারতকে নতুন আশা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অথচ, এমন সময় ছিল, যখন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ বা প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হ’ত না। আজ তুলনামূলক অর্থনীতির নিরীখে ভারতকে একটি উজ্জ্বল গন্তব্য বলে বিবেচনা করা হয়। “আমরা কখনই কোনও চাপের কাছে নত হব না। আমরা যদি সাধারণ মানেরও হই, তা হলে আমাদের মধ্যে কিছু অসাধারণ গুণাবলী থেকেই যায়। আমাদের সেগুলিকে শনাক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে”।

সমালোচনার মুখোমুখী হওয়া:

চন্ডীগড়ের সেন্ট জোসেফ সেকেন্ডারি স্কুলের মান্নত বাজোয়া, আমেদাবাদের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী কুমকুম প্রতাপভাই সোলাঙ্কি এবং ব্যাঙ্গালোরের হোয়াইটফিল্ড গ্লোবাল স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আকাশ দারিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, যাঁরা তাঁদের বিষয়ে নেতিবাচক ভাবনা পোষণ করে, সেইসব মানুষদের কিভাবে প্রভাবিত করা যায়। দক্ষিণ সিকিমের ডিএভি পাবলিক স্কুলের একাদশ শ্রেণীর অষ্টমী সেন’ও এ ধরনেরই একটি প্রশ্ন করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমৃদ্ধশালী গণতন্ত্রের মূল শর্ত হ’ল সমালোচনা, যা বিভিন্ন বিষয়কে বিশুদ্ধ করে তোলে। তিনি বলেন, ফিটব্যাকের প্রয়োজন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি একজন প্রোগ্রামারের উদাহরণ তুলে ধরেন, যিনি মানোন্নয়নের জন্য তাঁর কোটগুলিকে নানাভাবে ব্যবহার করেন। এর ফলে, যে সংস্থায় তিনি কর্মরত, সেই সংস্থা যখন তাদের পণ্য বাজারজাত করে, সেই সময় উপভোক্তাদের ঐ পণ্যের বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়। শ্রী মোদী বলেন, বর্তমান যুগের বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের গঠনমূলক সমালোচনার পরিবর্তে বিভিন্ন কাজে বাধা দান করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সংসদে অধিবেশন চলাকালীন বিভিন্ন পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। অনেক সময় দেখা যায়, একজন সাংসদ কোনও বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখছেন, সেই সময় বিরোধী সদস্যরা তাঁকে নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি তাঁর বক্তব্য পেশ থেকে বিরত থাকছেন না। বর্তমান যুগে শ্রমশক্তি এবং গবেষণার বিভিন্ন কাজে সমালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু, অনেকেই নানা বিষয়ে সমালোচনা না করে অভিযোগ করে থাকেন, যা বাঞ্ছনীয় নয়। তিনি উপস্থিত সকলের কাছে অনুরোধ করেন যে, অভিযোগ জানাতে সমালোচনা থেকে বিরত থাকতে। “অভিযোগ ও সমালোচনার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে”।

গেম খেলা ও অনলাইনের প্রতি ঝোঁক:

ইডিয়া টিভির মাধ্যমে ভোপালের দীপেশ আহিওয়ার, রিপাবলিক টিভির মাধ্যমে কামাক্ষী এবং জি-টিভির মাধ্যমে মনন মিত্তল অনলাইন গেম ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তির কারণে যথাযথ মনোনিবেশের প্রসঙ্গটি জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমরা স্মার্ট না আমাদের যন্ত্রগুলি স্মার্ট। আমরা যখন আমাদের যন্ত্রগুলিকে নিজেদের থেকে বেশি স্মার্ট ভাবতে শুরু করি, তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, একজন ভারতীয় গড়পড়তা ৬ ঘন্টা কম্প্যুটার বা মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন। “ঈশ্বর আমাদের মুক্ত চিন্তা এবং ব্যক্তিস্বত্ত্বা দিয়েছেন, আমরা যাতে যন্ত্রের দাস না হয়ে পড়ি, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে”। তিনি জানান, তিনি নিজে খুব কমই মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করেন। এর জন্য তিনি দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করেছেন। প্রযুক্তিকে এড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু, চাহিদা অনুযায়ী আমাদের প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সৃজনশীলতাকে রক্ষা করতে কৃত্রিম মেধার এই যুগেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি প্রতিটি বাড়িতে একটি জায়গা বাছাই করতে বলেন, যেখানে প্রযুক্তির কোনও ছোঁয়া থাকবে না। এর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের জীবনের আনন্দকে উপভোগ করতে পারবো এবং যন্ত্রপাতির দাসত্ব থেকে মুক্ত হব।

পরীক্ষার পরের চাপ:

জম্মুর সরকারি মডেল উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের দশম শ্রেণীর পড়ুয়া নিদা জানতে চায় যে, কঠোর পরিশ্রমের পর কাঙ্খিত ফল না পেলে মনের উপর যে চাপ সৃষ্টি হয়, তা থেকে বেরিয়ে আসা কিভাবে সম্ভব। হরিয়ানার পালওয়ালে শহীদ নায়েক রাজেন্দ্র সিং রাজকীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র প্রশান্ত জানতে চায় যে, পরীক্ষার ফলের উপর মানসিক চাপ কতটা বিস্তার করে। প্রধানমন্ত্রী জবাবে বলেন, পরীক্ষার পরও যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, তার মূল কারণ হ’ল – পরীক্ষা খারাপ হয়েছে, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণেই এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। তিনি সকলকে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি থেকে অভিজ্ঞতা অর্জনের পরামর্শ দেন। একটি পরীক্ষার ফলাফল কোনও জীবনকে শেষ করে দেয় না, পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনের ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফল নিয়ে বেশি ভাবনাচিন্তাও করা উচিৎ নয়।

নতুন ভাষা শিক্ষার উপযোগিতা:

তেলেঙ্গার রঙ্গারেড্ডির জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র আর অক্ষরশ্রী এবং ভোপালের রাজকীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণী ছাত্রী রিতিকা জানতে চায় যে, কিভাবে তারা অনেক ভাষা শিখতে পারে এবং এর ফলে তারা কতটা উপকৃত হবে। শ্রী মোদী তাদের ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্যের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে বলেন, ভারতে শত শত ভাষা ও হাজার হাজার উপ-ভাষা রয়েছে। এটি অত্যন্ত গর্বের বিষয়। নতুন ভাষা শিক্ষা অনেকটা নতুন একটি বাদ্যযন্ত্র শেখার সামিল। “একটি আঞ্চলিক ভাষা শেখার উদ্যোগের মাধ্যমে তুমি শুধুমাত্র সেই ভাষার সাহায্যে কোনও কিছু প্রকাশ করতেই সক্ষম হবে না, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে নানা তথ্য তোমার সামনে এসে উপস্থিত হবে”। শ্রী মোদী আরও বলেন, এদেশে ২ হাজার বছরের পুরনো স্মারক রয়েছে। এর জন্য দেশবাসী গর্বিত। একইভাবে, বিশ্বের প্রাচীনতম তামিল ভাষায় এদের মানুষ কথা বলেন, যা আরেকটি গর্বের বিষয়। এ প্রসঙ্গে তিনি রাষ্ট্রসংঘে তামিল ভাষার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন বলে জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর ভারতের অনেকের দক্ষিণ ভারতের ভাষাগুলি সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। একইভাবে, দক্ষিণ ভারতের অনেকেরই উত্তর ভারতের ভাষা সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। তিনি বলেন, এদেশের সকলের মাতৃভাষার পাশাপাশি, আরেকটি ভাষা শেখা প্রয়োজন। তিনি গুজরাটের এক পরিযায়ী শ্রমিকের ৮ বছরের কন্যার উদাহরণ তুলে ধরেন। ঐ মেয়েটি বাংলা, মালয়ালম, মারাঠী এবং গুজরাটি ভাষা জানে। শ্রী মোদী গত বছর লালকেল্লার প্রকার থেকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ৫টি শপথের কথা আবারও উল্লেখ করেন। যেখানে তিনি বলেছিলেন, প্রতিটি ভারতবাসীর এদেশের ভাষাগুলি সম্পর্কে গর্ববোধ করা উচিৎ।

ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা:

সুনন্যা ত্রিপাঠী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান যে, কিভাবে তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বিষয়ে উৎসাহিত করবেন। এক্ষেত্রে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বজায় রাখার গুরুত্বের কথাটিও তিনি উল্লেখ করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোনও একটি বিষয়ে বা পাঠক্রমের উপর বেশি জোর দেওয়া উচিৎ নয়। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের মনে অনুসন্ধিৎসা জাগিয়ে তুলতে হবে। দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের হেনস্থা করার পরিবর্তে ভালো ছাত্রছাত্রীদের নানাধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন করতে হবে। এক্ষেত্রে শৃঙ্খলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। “আমি বিশ্বাস করি যে, শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শারীরিকভাবে আঘাত করে শাসন করার পন্থা অবলম্বন করা উচিৎ নয়, আমাদের আলোচনা ও আস্থা অর্জনের পথ গ্রহণ করতে হবে”।

ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার প্রসঙ্গে:

নতুন দিল্লির এক অভিভাবিকা শ্রীমতী সুমন মিশ্র জানতে চান যে, সমাজে ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার কি হওয়া উচিৎ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের আচরণের বিষয়টি শুধুমাত্র সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তাদের বিকাশের জন্য একটি সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের ছোট একটি গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ না রেখে বৃহদংশে মেলামেশার সুযোগ দিতে হবে। দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার পর অন্য রাজ্যে যেতে তাঁদের উৎসাহিত করতে হবে। অভিভাবক-অভিভাবিকাদের নিজেদের সন্তানকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে উৎসাহিত করতে হবে। তবে, পরিস্থিতির দিকে বাবা-মা’কে সতর্ক থাকতে হবে।

পরিশেষে, প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবক-অভিভাবিকাদের বলেন, চাপ মুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে পরীক্ষার চাপ কমিয়ে তাকে উৎসবে পরিণত করা যায়। ফলস্বরূপ, পরীক্ষা একটি উৎসবে পরিণত হবে, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রচুর উৎসাহ থাকবে এবং এই উৎসাহ তাদের আগামী দিনে আরও ভালো ছাত্র হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

PG/CB/SB



(Release ID: 1894176) Visitor Counter : 209