পরমাণুশক্তিদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

পারমাণবিক শক্তি দপ্তর: বর্ষশেষ পর্যালোচনা ২০২২

Posted On: 01 JAN 2023 9:02AM by PIB Kolkata

 

নয়াদিল্লি, ০১  জানুয়ারি, ২০২৩

পারমাণবিক শক্তি দপ্তর ২০১৪-২২এর মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে। এপিএসএআরএ-ইউ (বার্ক) ২ এমডাব্লুটিএইচ পুল ধর্মী গবেষণা চুল্লি আইসোটোপের বর্ধিত উৎপাদনে সক্ষম এবং ঔষধ, শিল্প, কৃষি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য। ২০১৮র ১০ সেপ্টেম্বর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। এই সুবিধা রেডিও আইসোটোপের উৎপাদনে বিকিরণ নমুনা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ধ্রুব (বার্ক):  বিভিন্ন জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দ্বারা পরমাণু গবেষণার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গত ৮ বছরে এই চুল্লি থেকে প্রায় ৪ হাজার নমুনার বিকিরণ ঘটানো হয়েছে এবং তা উচ্চ ফলপ্রদ হয়েছে।

আইজিসিএআর/এফবিটিআর (ফাস্ট ব্রিডার টেস্ট রেকর্ডার) : ইউনিয়ন কার্বাইড ও প্লুটোনিয়াম কার্বাইড এফবিটিআর দ্বারা সম্পূর্ণ দেশজ পদ্ধতিতে নির্মিত এবং উদ্ভুত জ্বালানী যা থেকে ৪০ এমডাব্লুটি সক্ষমতা অর্জনকারী ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিভিন্ন গ্রিডে সংযোজিত হয়। ২০২২এ প্রায় ১২৮ দিন কার্যকর থেকে তা ২৩.৫ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করে এবং ২০১৪-২০২২ এই সময়কালের মধ্যে মোট ৭৫.৮ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদিত হয়েছে।

আইজিসিএআর/মেটেল ফুয়েল পিন ফেব্রিকেশন ফিসিলিটি : ২০১৮র মে মাসে রাষ্ট্রপতি এই সুবিধা জাতির উদ্দেশে উৎর্সগ করেন। সোডিয়াম আধারে এই ধাতব জ্বালানী পিন ইউ-পিউ-জেডআর বানোয়াট সুবিধা এফবিটিআরএ বিকিরণ প্রক্রিয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইতিবৃত্ত রচনা করেছে। এনপিসিআইএল-এর অধীন তারাপুর পরমাণু শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র (টিএপিএস)এ এক এবং দুই নম্বর ইউনিট ৫৩ বছর ধরে চালু রয়েছে এবং বিশ্বে সব থেকে পুরনো চুল্লি হিসেবে তা পরিগণিত। ২০২১-২২এ এনপিসিআইএল/সিএপিইএক্স ১৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকার শক্তি উৎপাদন করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা লভ্যাংশ এবং সিএসআর খাতে তা ব্যয় করেছে ১০১ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা।

রেডিও আইসোটোপ উৎপাদন: সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে সাড়া জাগানো রেডিও ফার্মাসিউটিক্যাল এজেন্ট কম খরচে ক্যানসার চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ ফলপ্রদ হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের মাধ্যম ৬ কেজির মতো  বিকিরণ পেনসিল তৈরি করা হয়, এছাড়াও বার্ক/ব্রিট পরমাণু বর্জ্য থেকে ১০৬ আরইউ পুনরুদ্ধার করে তাকে সাফল্যের সঙ্গে চোখের ক্যানসার পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করেছে। ১০৬-আরইউ রৌপ্য ফলকগুলিকে দিল্লির এইমস হাসপাতাল সরবরাহ করা হয়। দেশজুড়ে ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব শক্তি গবেষণা অভূতপূর্ব সারা জাগিয়েছে। টিএমসি কেবলমাত্র মুম্বাইয়েই ৮০ হাজার নতুন রোগীকে নথিভুক্ত করেছে এবং ৬ লক্ষ ৫০ হাজার রোগীর বাৎসরিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্র নির্বিশেষে ক্যান্সার চিকিৎসায় এই পদ্ধতির ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ৬০ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ বিনা খরচায় ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় ক্যান্সার গ্রিড দেশ জুড়ে ক্যান্সার চিৎসার ক্ষেত্রে অভিন্ন মান বজায় রাখার উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে। ৮ বছর পর ২৯৭ জন সদস্য, ক্যান্সার কেন্দ্র, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, রোগী পরামর্শ প্রভৃতির নিরিখে। বিশ্বে সর্ববৃহৎ ক্যানসার নেওয়ার্ক হিসেবে গড়ে উঠেছে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতি বছর সাড়ে সাত লক্ষ নতুন ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে যা ভারতের সামগ্রীর ক্যান্সার রোগীর সংখ্যার ৬০ শতাংশ। জাতীয় ক্যান্সার গ্রিড আয়ুষ্মান ভারত- প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার সঙ্গে সহযোগীর ভিত্তিতে কাজ করে যার ফলে ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যয় বাহুল্য অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে সম্ভব হয়েছে। এনএসজি রোগীর স্বাস্থ্য রেকর্ডকে নথিভুক্তে যা প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা চালু হওয়া জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের ন্যাশনাল ডিজিটাল হেল্থ মিশনের ক্ষেত্রে বিরাটাকারে ব্যবহার করা হচ্ছে। টিএমসি দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের হাসপাতাল তৈরি করেছে। এরফলে দেশের বিভিন্ন ভৌগলিক এলাকায় ক্যান্সার চিকিৎসায় তারা বহুগুণ বিস্তার লাভ করেছে।  টিএমসি অন্য আরও ৬টি হাসাপাতালে প্রসার লাভ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বারাণসীতে ২টি, গুয়াহাটি, সাংরুর, বিশাখাপত্তনম, চন্ডীগড় এবং মুজাফফর নগরে একটি করে। এই কেন্দ্র বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে ক্যান্সার রোগী কল্যাণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে। পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু-কাশ্মীর এবং মহারাষ্ট্রে সরকারকে তারা এই জাতীয় সাহায্য প্রদান করে। ৭৪০টি শয্যা নিয়ে ২০১৭ সালে তৈরি হওয়া টিএমসি ২০২২এ ২ হাজার ৪৫০ শয্যায় রূপান্তরিত হয়েছে এবং ২০২৩-এর মাঝামাঝি নাগাদ তা ২ হাজার ৭০০ শয্যায় পরিণত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কম খরচে ক্যান্সার গবেষণার ক্ষেত্রে টিএমসি কেবলমাত্র দেশের মধ্যেই নয়, দেশের বাইরেও তার প্রভাব বিস্তার করেছে। আফ্রিকা এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে ক্যান্সার চিকিৎসার নীতি-নির্দেশিকার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কম খরচে দেশজ ব্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা পদ্ধতিতে লক্ষাধিক জীবন বাঁচাতে তারা সক্ষম হয়েছে।

চিকিৎসা ছাড়াও পরমাণু শক্তিকে কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও নানাভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। বার্ক এ পর্যন্ত ৫৫টি ফসল বৈচিত্র্য তৈরি ও তা প্রকাশ করেছে। চীনা বাদাম, মুগ ডাল, অড়হর ডাল, সরষে, চাল, পাট, সূর্যমুখী প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যধর্মী এবং ১৩টি নতুন শষ্য বীজ তারা বাজারে এনেছে। বার্কের পরিবেশ বান্ধব বার্ক হাইড্রোজেল মাটিতে জল ধরে রাখার ক্ষমতা প্রায় সাড়ে ৫০০ গুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। লিচুর উৎপাদন ফলন এবং সরক্ষণের ক্ষেত্রে তাদের প্রযুক্তি, লিচুর জাতীয় গবেষণাগার চালু করা হয়েছে। লিচু ছাড়াও জাম, ভুট্টা, মটর প্রভৃতি ক্ষেতে প্রভৃতি উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণে তা বিশেষ কার্যকরী হয়েছে। এছাড়া গামা বিকিকরণ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আলুকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাচ্ছে।

প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও বার্ক গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে বার্কের প্রযুক্তি হস্তান্তর গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা প্রদান করছে। মূল্য সাশ্রয়কারী এহং অনায়াস ব্যবহারযোগ্য ১২ চ্যানেলে টেলি ইসিজি যন্ত্র বিশেষ সাহায্যকারী হিসেবে দেখা দিচ্ছে। মোবাইল ফোন এবং ব্লুটুথের মাধ্যমে এই যন্ত্র পরিচালনা করা যায়।

বার্ক/ভাবা কবচ : সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে এবং বিশেষ নকশা সমৃদ্ধ বুলেট প্রুফ জ্যাকেট নির্মাণ করা গেছে। হট প্রেস বোরন কার্বাইড এবং কার্বন ন্যানো টিউব প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই বুলেট প্রুফ জ্যাকেট তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী, সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ক্ষেত্রে এই ভাবা কবচ সাফল্যের সঙ্গে পরীক্ষা করা হয়েছে। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বার্ক-এর নিসর্গুনা প্রযুক্তি স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কেরালার কন্নুর গ্রামে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার কেজি কঠিন বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তরের কাজ করে চলেছে নিসর্গুনা প্ল্যান্ট। এই নিসর্গুনা প্ল্যান্টে তৈরি জৈব গ্যাস রান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বার্কের জল পরিশোধন প্রযুক্তি মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশার বিভিন্ন গ্রামে কাজে লাগানো হচ্ছে।

অসামরিক পরমাণু সহযোগিতা: পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে জাপান, ব্রিটেন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশের সঙ্গে অসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদিত হয় এছাড়াও বাংলাদেশে পরমাণু শক্তি কারখানা স্থাপনের জন্য রাশিয়া, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। কানাডার সঙ্গে পরমাণু গবেষণা এবং উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। পরমাণু গবেষণার ভিত্তিতে বিভিন্ন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সিইবিএস ৫১৬টি বৈজ্ঞানিক গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছে। পরমাণু শক্তি দপ্তর গত ৮ বছরে ১৫৬টি পেটেন্টের আবেদন করেছে। এর মধ্যে ১২১টি গৃহীত হয়। আরআরসিএটি-র আর অ্যান্ড ডি ল্যাবে বার্ষিক প্রায় ১২০ জন এমটেক এবং এমএসসি পাঠরত ছাত্রছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।

PG/AB/NS


(Release ID: 1888102) Visitor Counter : 365