তথ্যওসম্প্রচারমন্ত্রক
#কেন আইএফএফআই : আইএফএফআই২ থেকে প্রেরণার ঝলক
“জনগণের পছন্দ পূরণ আমাদের ধারণা হওয়া উচিত নয় বরং তাদের পছন্দকে উন্নত করায় উদ্দেশ্য হওয়া উচিত”
মুম্বাই, ১৪ নভেম্বর, ২০২২
ভারতের ৫৩তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হতে আর মাত্র ৬ দিন বাকি। উদযাপন যতো জমে উঠছে উৎসবের চেতনা বাতাসকে মুখরিত করছে, আমাদের হৃদয়কে আন্দোলিত করছে। সেইসঙ্গে মনে হচ্ছে যে আইএফএফআই-এর বিস্মৃত গলিপথ পরিক্রমার পর আমরা আমাদের ভালোবাসার শ্রম নিবিড় এই সৃষ্টি কর্ম কেন আরও গভীরতা এবং প্রেক্ষাপটকে সংযোজিত করবো না? যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেই ফেলে আসা পথে ফিরে তাকাতে হবে যাতে করে আমরা আমাদের শিকড়ের সঙ্গে নিবদ্ধ হতে পারি যাতে অতীতের প্রজ্ঞা বর্তমানকে বুঝতে এবং ভবিষ্যতের দিশা পথ তৈরি করে দিতে পারে।
বস্তুতই গত সপ্তাহে আমরা সংক্ষিপ্ত অন্বেষণ চালিয়েছি যাতে করে এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম সংস্করণ ভার্চুয়াল মাধ্যমে খুঁজে পেতে পারি। আজ ১৯৫২র প্রথম উৎসবের পর ১৯৬১-তে আয়োজিত দ্বিতীয় উৎসবের দিকে চলুন আমরা অতীতের স্মৃতি পথে একটু পথ পরিক্রমা করি। হ্যাঁ আপনারা ঠিকই অনুধাবন করেছেন। প্রথমবার এই চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজিত হওয়ার পর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজিত হয়েছিল নতুন দিল্লিতে ১৯৬১-র ২৭ অক্টোবর থেকে দোসরা নভেম্বর পর্যন্ত।
#কেন আইএফএফআই?
ফলে #কেন আইএফএফআই? শোনা যাক তৎকালীন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ডঃ বি ভি কেসকার আইএফএফআই-এর এই চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কী বলেছেন।
“আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্দেশ্য হল অংশগ্রহণকারী দেশগুলিকে তাদের নান্দনিক, সাংস্কৃতিক, মূল্যবোধ সম্বন্ধীয় এবং উচ্চপ্রযুক্তি মান সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র পরিবেশনের একটি জায়গা করে দেওয়া। এই জাতীয় প্রদর্শনী কেবলমাত্র চলচ্চিত্র শিল্পের অগ্রগতি সাধনই করে না, সাংস্কৃতিক মত বিনিময় প্রসারের পাশাপাশি নতুন ধারণার জন্ম দেয়। অংশগ্রহণকারী দেশগুলিকে এবং তাদের চলচ্চিত্র শিল্পকে পরস্পরের কাছে নিয়ে আসতেও তা সাহায্য করে।”
নতুন দিল্লিতে ১৯৬১র ২৭ অক্টোবর দ্বিতীয় আইএফএফআই-তে উদ্বোধনী ভাষণে মন্ত্রী এই মন্তব্য করেছিলেন। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন, বিভিন্ন দেশে জাতীয় চলচ্চিত্র প্রযোজক সংস্থাগুলি ভালো চলচ্চিত্র পছন্দের ক্ষেত্রে যথেষ্ট যত্নশীল। এর মধ্যে দিয়ে নান্দনিক এবং কারিগরি উৎকর্ষ সমৃদ্ধ প্রযোজনাগুলি পারস্পরিক মূল্যবোধ বিনিময়ের ক্ষেত্রও প্রস্তুত হয়।
বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে মন্ত্রী বলেছিলেন যে তাঁর আশ্বাস “এদের ভারতে আসার মধ্যে দিয়ে চলচ্চিত্রের শৈলী এবং তার প্রযোজনার ধারা নিয়ে নিয়মিত মত বিনিময়ের ফলে আমরা ভালো চলচ্চিত্র প্রযোজনা অনেক বেশি জ্ঞান সমৃদ্ধ হব।”
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী উল্লেখ করেছিলেন যে প্রথম আইএফএফআই শৈল্পিক মূল্যমান এবং ধারনা বিনিময়ের এক সফল ক্ষেত্র হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল।
“স্বাধীনতার পর ১৯৫২র জানুয়ারি মাসে ভারত প্রথম এই চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করে। ২১টি দেশ এই উৎসবে অংশ নেয় এবং পারস্পরিক ধারনা ও নান্দনিক শিল্পমানের ক্ষেত্রে মত বিনিময় ক্ষেত্র হিসেবে এই উৎসব প্রভূত সাহায্য করেছিল। আমাদের দেশে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় এর এক সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়ে। সেই সময় থেকে অনেক ভারতীয় চলচ্চিত্র বিদেশের উৎসবে অংশ নিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শিরোপা লাভ করেছে।”
দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনী ভাষণ দিতে গিয়ে উপরাষ্ট্রপতি ডঃ এস রাধাকৃষ্ণণ পারস্পরিক সাংস্কৃতিক এবং ধারণাগত মত-বিনিময়ের ক্ষেত্র হিসেবে একে অভিহিত করে বলেছিলেন, এ থেকে অনেক নতুন শিক্ষা এবং উন্নতি সাধনের সুযোগ তৈরি হবে।
“বেশ কয়েক বছর আগে প্রথম উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ভারত চলচ্চিত্রের আঙিনায় অনেক উন্নতি সাধন করেছে। আমি জানতে পেরেছি যে বিশ্বে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ চলচ্চিত্র নির্মাণকারী দেশ হল ভারত। চলচ্চিত্রে অভিনয় আমাদের বেশ কয়েকজন বিশ্বস্তরে স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং আমাদের চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করেছে। এতৎসত্ত্বেও আমাদের সন্তুষ্ট হওয়ার অবকাশ নেই। আরও বেশি করে উন্নতি সাধন করতে হবে এবং এই চলচ্চিত্র উৎসব দূরবর্তী দেশগুলি থেকে আসা চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং প্রযোজকদের কাছ থেকে পারস্পরিক মত-বিনিময়ের শিক্ষা নিয়ে আমরা চলচ্চিত্রকে আগামীদিনে আরও বেশি উন্নতির পথে নিয়ে যেতে পারবো।”
ডঃ রাধাকৃষ্ণণ মানবতা গড়ে তুলতে চলচ্চিত্রের যে বহুমাত্রিক অবদান রয়েছে তার ওপরে আলোকপাত করেন।
“সাধারণভাবে একটি চলচ্চিত্র দর্শক মন্ডলীর বিনোদন, তাদের শিক্ষা এবং তাদের চেতনাকে উন্নত স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়। মানুষের বৌদ্ধিক এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। একটা যথাযথ চলচ্চিত্র যদি নির্মিত হয় তাহলে এই সমস্ত দিকগুলির যথাযথ সম্পূরণ হওয়া সম্ভব।”
উপরাষ্ট্রপতি যেসব চলচ্চিত্রকার শৈল্পিক নান্দনিক উৎকর্ষকে বিসর্জন দিয়ে কেবলমাত্র অধিক মুনাফার লোভে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন তাদেরকে তিনি আত্মসম্বরণের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের ধারনা জনসাধারণের পছন্দকে তৈরি করায় নয়, বরং তাদের পছন্দকে উন্নত করার অভিপ্রায় স্বরূপ।
“ইদানিংকালে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে শৈল্পিক উৎকর্ষতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে অধিক মুনাফা লাভ অভিপ্রায় হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের চলচ্চিত্র প্রযোজকরা এই প্রলোভনের ফাঁদে পা দেবেন না বলে আমি আশা করবো। লাভের দিকটা আমাদেরকে দেখতেই হবে, এবং আমাদের সতর্ক নজর রাখতে হবে একটা চলচ্চিত্র কতখানি উপার্জনক্ষম। তবে জনগণের পছন্দকে তৈরি করার পরিবর্তে তাদের পছন্দকে উন্নত করার অভিপ্রায় হিসেবে চলচ্চিত্রকে নির্মাণ করতে হবে।
আমার এ ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই যে আমাদের শিল্পী পরিচালক, প্রযোজকরা যথেষ্ট দক্ষ এবং কর্মক্ষম। তাঁরা স্বতঃপ্রণোদিত এবং সাফল্যেও অবিচলিত। বিশ্বের যেকোন শিল্পীরই তাঁরা সম দক্ষ। পছন্দের মানকে নিম্নমুখী না করতে এই সমস্তগুলি আমাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় রক্ষা কবচ এবং আমাদেরকে প্রতিনিয়ত তা রক্ষা করবে ও আগামী দিনগুলিতে চলচ্চিত্রের আঙিনায় ভারতের সামনে আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা রয়েছে। চলচ্চিত্র প্রযোজনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তা সে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা, অভিনেত্রী যেই হোন না কেন তাদের সংকল্প হওয়া উচিত যে তাঁরা তাঁদের জ্ঞান, দক্ষতা, তাঁদের উদ্ভাবনী শক্তি এবং তাঁদের শৈল্পিক নৈপুণ্যকে ন্যায় বিচার, স্বাধীনতা, শান্তি, আত্মমর্যাদার স্বার্থে কাজে লাগাবেন। কোনোভাবেই তা যেন বিপথে চালিত না হয়। কয়েকজন ব্যক্তির নির্মম অভিপ্রায় চরিতার্থ করতে এবং কেবলমাত্র আর্থিক লাভের স্বার্থে মানব প্রকৃতিকে দূর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার পথে তা যেন পা না বাড়ায়। মানবতার মর্যাদাকে কালিমালিপ্ত করতে এবং পছন্দকে কুরূচিপূর্ণ করার পথ যেন তা প্রশস্ত না করে। এই বিপদ আমরা এড়িয়ে চলবো এবং আমার কোনো সংশয় নেই যে প্রকৃত ভালো ছবি আমরা দেখতে পাবো এবং অন্য দেশগুলি চলচ্চিত্রের যে শিল্প মান অর্জন করেছে তা প্রত্যক্ষ করে আমরা লাভবান হতে পারবো। এটা আমাদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেবে এবং এই চলচ্চিত্র উৎসব থেকে আমরা প্রকৃতভাবে উপকৃত হতে পারবো।”
উপরাষ্ট্রপতি জাতীয় সংহতি এবং বিশ্ব সৌহার্দ্য রক্ষায় চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের ওপর আলোকপাত করেন।
“রাজনৈতিক পরিবেশ যখন হতাশা ব্যাঞ্জক, চারিদিকে অন্ধকারের মেঘ যখন ঘণীভূত হচ্ছে, বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলি যখন পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করছে এবং সারা বিশ্ব যখন থার্মো পারমাণবিক যুদ্ধের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে এবং এই জাতীয় যুদ্ধজয় আকাশকে আরও বেশি অন্ধকারে ঢাকবে, পৃথিবীর বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠবে ঠিক তখন সারা বিশ্বের প্রতিনিধিরা যুদ্ধের স্মরণীকা প্রস্তুত করতে নয়, বরং পারস্পরিক শৈল্পিক নৈপূণ্যের মত-বিনিময়ের ক্ষেত্র হিসেবে এই চলচ্চিত্র উৎসবের আঙিনায় যখন উপস্থিত তখন তা নিঃসন্দেহে আশাব্যাঞ্জক। ভয় থেকে বিপদের সূত্রপাত। এই ভয়কে যদি আস্থা এবং বিশ্বাসে রূপান্তরিত করা যায় তাহলে আমরা চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে বিশ্বের সৌভ্রাতৃত্বপূর্ণ বোঝাপড়া এবং শান্তির বাতাবরণ তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারি। আমাদের জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রে এবং বিশ্ব সৌহার্দ্যের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এই দুটি ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।”
ডঃ রাধাকৃষ্ণণ তাঁর বক্তব্য শেষ করেন এই আশা নিয়ে যে এই চলচ্চিত্র উৎসব অভ্যাগতদের দৃষ্টিনন্দন করবে এবং তা বছরের এক ঐক্যসুর রচনা করে দেবে।
“এটা প্রকৃতপক্ষেই একটি উৎসব হয়ে উঠুক যা আমাদের দৃষ্টি নন্দন করে এবং বছরের ঐক্যসুর রচনা করে। চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিল্পের সমন্বয় ঘটানোর এক আধার হয়ে উঠুক। অনেক কিছু রয়েছে যেমন নৃত্য, নাটক, কথোপকথন, সঙ্গীত, থিয়েটার, নকশা এই সমস্ত কিছু এক মহান চলচ্চিত্র নির্মাণে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠতে পারে এবং আমার কোনো সন্দেহ নেই এই উৎসবে অংশ নিয়ে আমাদের লোকেরা প্রকৃতপক্ষেই লাভবান হবেন। আমি পুনরায় এই উৎসবের সার্বিক শুভ কামনা করছি।”
PG/AB/NS
(Release ID: 1875902)
Visitor Counter : 224