প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

যৌথ বিবৃতি : ষষ্ঠ ভারত-জার্মানি আন্তঃসরকারি আলোচনা

Posted On: 02 MAY 2022 8:09PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী,  ২  মে, ২০২২

 

চ্যান্সেলার ওলফ স্কোলজ এবং প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর যৌথ সভাপতিত্বে আজ ভারত ও জার্মানির মধ্যে ষষ্ঠ পর্যায়ের আন্তঃসরকারি আলোচনা সম্পন্ন হয়। দুই নেতার পাশাপাশি মন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকদের নিয়ে গঠিত দুটি প্রতিনিধি দল কথাও যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে।

ভারত যখন স্বাধীনতার ৭৫-তম বার্ষিকী উদযাপন করছে তখন জার্মানি ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা, অভিন্ন স্বার্থ, অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন ও মানবাধিকার তথা বিশ্বব্যাপি চ্যালেঞ্জের বহুপাক্ষিক মোকাবিলার মধ্যে প্রোথিত রয়েছে।

দুই দেশের সরকারই রাষ্ট্রসংঘের সঙ্গে এক কার্যকর আইন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রসংঘের সনদে উল্লিখিত আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিগুলির ওপর জোর দিয়েছে। একইসঙ্গে সমস্ত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ডতার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। দুই দেশই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় বহুপাক্ষিক মঞ্চের সংস্কার ও তাকে আরও শক্তিশালী করার উপর পুনরায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

দুই নেতাই কোভিড-১৯ মহামারী থেকে অর্থ ব্যবস্থার পুনরুদ্ধারে নিজেদের অঙ্গীকারের কথা পুনরায় উল্লেখ করেছেন। একইসঙ্গে ক্রমবর্ধমান বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখতে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প বিস্তারের সময়ের তুলনায় অন্তত দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে রাখার ব্যাপারে অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে। সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০৩০-এর মধ্যে যে সমস্ত বিষয় স্থির হয়েছে তা পুরণে উভয় দেশই প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী নিজেদের জাতীয় অঙ্গীকারের কথা আরও একবার বলেছে।

রাষ্ট্রসংঘের সঙ্গে আইনের শাসন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার গুরুত্বের ওপর দুই দেশই দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। ভারত ও জার্মানী এক কার্যকর ও সংস্কার সাধিত বহুপাক্ষিক মঞ্চের গুরুত্বের কথা পুনরায় উল্লেখ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র, বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা, গণতন্ত্রের প্রতি হুমকির মতো চ্যালেঞ্জগুলির প্রেক্ষিতে দুই দেশই বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। আণবিক সরবরাহ গোষ্ঠীতে অবিলম্বে ভারতকে সামিল করার বিষয়েও জার্মানি তার সমর্থনের কথা পুনরায় উল্লেখ করেছে।

উভয় দেশই এক অবাধ, উন্মুক্ত ও সার্বিক ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তোলার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। জার্মান সরকারের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সম্পর্কিত নীতি-নির্দেশিকার প্রাসঙ্গিকতা ভারত স্বীকার করে নিয়েছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে জার্মানির ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে উল্লেখ করে উভয় পক্ষই গত জানুয়ারি মাসে মুম্বাইয়ে সেদেশের নৌবাহিনীর জাহাজ বায়ার্ণ-এর নোঙর করাকে স্বাগত জানিয়েছে। আগামী বছর জার্মানির একটি বন্দরেও ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজের নোঙর করার বিষয়টিকে সেদেশ স্বাগত জানিয়েছে।

ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে নিবিড় কৌশলগত সহযোগিতাকে ভারত ও জার্মানি স্বাগত জানিয়েছে। ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও সুদৃঢ় করার বিষয়েও সহমত হয়েছে। ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগ সম্পর্কিত অংশীদারিত্ব কার্যকর করার বিষয়েও উভয় পক্ষ অত্যন্ত আশাবাদী। এরফলে প্রযুক্তি ও নিরাপত্তাগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দূর করা সম্ভব হবে।

উভয় পক্ষই আঞ্চলিক সংগঠন যেমন বিমস্টেক এবং জি২০-র মতো বহুপাক্ষিক মঞ্চে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। ২০২৩-এ ভারতের নেতৃত্বে জি২০-র সভাপতিত্বের সময় সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করতে দুই দেশই অত্যন্ত আশাবাদী।

বর্তমানে জার্মানির নেতৃত্বে জি৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ভারত এবং জি৭-এর মধ্যে সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করার বিষয়েও উভয় পক্ষই সহমত হয়েছে। একইসঙ্গে শক্তিক্ষেত্রে রূপান্তরের লক্ষ্যে অন্য দেশের সরকারগুলির সঙ্গেও যৌথ কর্মসূচি গ্রহণে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে।

রাশিয়ার সেনাবাহিনীর তরফে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অবৈধ এবং উস্কানিমূলক আগ্রাসনের পুনরায় কঠোর সমালোচনা করেছে জার্মানি। ইউক্রেনে বর্তমানে যে মানবিক সংকট চলছে তাতে ভারত ও জার্মানি দুই দেশই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উভয় দেশই ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের আশু প্রয়োজনীয়তার কথা পুনরায় উল্লেখ করেছে। ভারত ও জার্মানি ইউক্রেনে সংঘর্ষের দরুণ অশান্ত পরিস্থিতি এবং সীমান্ত এলাকা তথা সারা বিশ্বে এর প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেছে। এই প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ইউক্রেনে চলতি সংকটের বিষয়ে ভারত ও জার্মানি উভয়ই নিজেদের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ বজায় রেখে চলবে।

আফগানিস্তানে মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেইসঙ্গে ক্রমবর্ধমান হিংসার ঘটনা তথা জঙ্গি হানার মতো বিষয়গুলিতেও দুই দেশ চিন্তা প্রকাশ করেছে। আফগানিস্তানে এক শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও স্থিতিশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দুই দেশই তাদের জোরালো সমর্থনের কথা পুনরায় ব্যক্ত করেছে। আফগানিস্তানবাসিকে মানবিক সহায়তা দেওয়া অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। আফগানিস্তানের ভূখন্ড যাতে জঙ্গিদের নিরাপদ আস্তানা, প্রশিক্ষণের কেন্দ্র অথবা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে আর্থিক মদতের কেন্দ্র না হয়ে উঠে সে ব্যাপারেও দুই দেশ নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গীর কথা পুনরায় উল্লেখ করেছে। আফগানিস্তানে পরিস্থিতি নিয়ে নিবিড় আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখার বিষয়েও ভারত ও জার্মানি সহমত হয়েছে।

দুই নেতাই সব ধরণের সন্ত্রাসবাদের কঠোর নিন্দা করেছেন। সেইসঙ্গে ছায়াযুদ্ধ ও সীমান্ত পারের সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আস্তানা ও পরিকাঠামো চিরতরে নির্মূল করতে দুই নেতাই সমস্ত দেশের প্রতি একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন কমিটির রীতি-নীতি অনুযায়ী উভয় নেতাই সমস্ত জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি ধর্মীয় মৌলবাদ দমনেও পারস্পরিক তথ্য বিনিময় অব্যাহত রাখতে দুই নেতা অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন।

অর্থ চোরাচালান এবং সন্ত্রাসবাদীদের আর্থিক মদত বন্ধ করতে উভয় নেতাই আন্তর্জাতিক আদর্শগুলি তুলে ধরার ওপর জোর দিয়েছেন।

দুই দেশের সরকার যৌথ সর্বাঙ্গীন কর্মপরিকল্পনার পূর্ণ রূপায়ণে তথা চলতি সমস্ত বোঝাপড়ার দ্রুত নিষ্পত্তিতে পৌঁছতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও নিবিড় করার লক্ষ্যে উভয় পক্ষই শ্রেণীবদ্ধ কিছু তথ্য বিনিময়ে চুক্তির জন্য বোঝাপড়া শুরু করার বিষয়ে সহমত প্রকাশ করেছে। উভয় দেশই দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও নিবিড় করার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে নিয়েছে। নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বিনিময় আরও সম্প্রসারিত করার বিষয়েও দুই দেশ সহমত হয়েছে।

দুই দেশের সরকার এই গ্রহের সুরক্ষায় নিজেদের যৌথ কর্তব্যের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। সেইসঙ্গে অভিন্ন, দীর্ঘস্থায়ী সর্বাঙ্গীন অগ্রগতির ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ব্যাপারে আরও প্রয়াস গ্রহণে উদ্যোগী হয়েছে।

উভয় পক্ষই আন্তঃসরকারি আলাপ-আলোচনার কাঠামোর মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিবার্ষিক বৈঠক আয়োজনের বিষয়েও সহমত হয়েছে।

শক্তিক্ষেত্রে রূপান্তর, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, শহরাঞ্চলের ধারাবাহিক উন্নয়ন, পরিবেশ বান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা, চক্রাকার অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিবিদ্যা, জৈব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশের সুরক্ষা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুদক্ষ ব্যবহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে দুই দেশ একযোগে কাজ করবে বলে স্থির হয়েছে।

ভারত ও জার্মানির মধ্যে পরিবেশ বান্ধব ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য যে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই অনুযায়ী ভারত-জার্মান গ্রীন হাইড্রোজেন কর্মীগোষ্ঠীর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একটি ভবিষ্যৎ রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। এছাড়াও সৌর বিদ্যুৎ ও অন্যান্য পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ ও প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থে প্রাকৃতিক সম্পদের সুদক্ষ ব্যবহার এবং কৃষিবিদ্যা সম্পর্কে সহযোগিতা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। লেহ্-হরিয়ানা গ্রীন এনার্জি করিডর বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে সহযোগিতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হবে। একইসঙ্গে অরণ্যের ভূ-প্রকৃতি পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা আরও নিবিড় করার কথা বলা হয়েছে।

ভারতের নীতি আয়োগ এবং সেদেশের বিএমজেড প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শহরাঞ্চলীয় এসডিজি সূচক ও ড্যাশবোর্ড প্রণয়নে সহযোগিতা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল স্মার্ট সিটিজ নেটওয়ার্কের মধ্যে নগরোন্নয়ন সম্পর্কিত সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করার পাশাপাশি তা অব্যাহত রাখার বিষয়েও উভয় পক্ষ একমত হয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে শহরাঞ্চলীয় উন্নয়নের জন্য ভারত-জার্মান যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর নিয়মিত বৈঠক চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কৃষি, খাদ্য শিল্প ও গ্রাহক সুরক্ষা সম্পর্কিত যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর গঠনমূলক ভূমিকা পালনের কথা উভয় দেশই স্বীকার করে নিয়েছে। এই বিষয়গুলিতে বর্তমান সমঝোতাপত্রের ভিত্তিতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং প্রত্যাশিত পরিণাম পাওয়ার বিষয়ে উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

ভারতে শষ্যবীজ ক্ষেত্রে সফল ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোয় দুই দেশের সরকার প্রশংসা জানিয়েছে। ভারতের কৃষি বিপণন ব্যবস্থার মানোন্নয়নে গত বছর আগস্ট মাসে যে দ্বিতীয় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা মূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে সে কথাও উল্লেখ করা হয়।

উভয় পক্ষই বর্তমান সহযোগিতামূলক চুক্তির ভিত্তিতে খাদ্য নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও নিবিড় করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

কৃষিক্ষেত্রে ভারত-জার্মান উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনে জার্মান এগ্রি বিজনেস অ্যালায়েন্স এবং ভারতের কৃষি দক্ষতা পরিষদের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতাপত্রকে উভয় পক্ষই স্বাগত জানিয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কৃষিকাজ ও খাদ্য সম্পর্কিত বিষয়ে প্রযুক্তি ও জ্ঞান আদান-প্রদানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সৌরজোট সম্পর্কে উভয় পক্ষই সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করতে একমত হয়েছে। সেইসঙ্গে ভারত ও জার্মানীর মধ্যে কৌশলগত অগ্রাধিকারের বিষয়গুলিতে সমন্বয় বজায় রাখার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় প্রতিরোধী পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য জোট গঠনের লক্ষ্যে উভয় পক্ষই বর্তমান সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করতে সম্মত হয়েছে।

উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের নিরিখে দুই দেশের বেসরকারি ক্ষেত্রের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়াতেও উভয় দেশ একমত হয়েছে। আগামী বছর রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে জল সম্পদ নিয়ে যে সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে তারজন্য প্রস্তুতি গ্রহণে উভয় পক্ষই একে অপরের প্রশংসা করেছে।

বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা এবং বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় উন্নয়নশীল দেশগুলির অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার গুরুত্বের কথা ভারত ও জার্মানী পুনরায় উল্লেখ করেছে। এই সংস্থার সংস্কারের ক্ষেত্রেও দুই দেশের সরকার নিজেদের অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে।

ভারত ও জার্মানি বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার দেশ। এক অবাধ বাণিজ্য চুক্তির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে আসন্ন বোঝাপড়ায় সহযোগিতার লক্ষ্যে উভয় দেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাপি কর্মসংস্থানে যে সংকট দেখা দিয়েছে তার প্রেক্ষিতে এক দীর্ঘস্থায়ী শ্রম নিবিড় বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার গুরুত্বের বিষয়টিতে উভয় পক্ষই জোর দিয়েছে। বিশ্ব শ্রম সংগঠনের ১৩৮ ও ১৮২-তম কনভেনশনে ভারতের পক্ষ থেকে যে সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, জার্মানি তাকে স্বাগত জানিয়েছে। দুই দেশ শিশু শ্রম এবং শ্রমদানে বাধ্য করার বিষয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।

দুই দেশ ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত, আর্থিক ও সামাজিক পরিবর্তনকে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। ডিজিটাল সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে ভারত-জার্মান ডিজিটাল ডায়ালগ গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

কর আরোপ ক্ষেত্রে উভয় পক্ষই গত বছরের ৮ই অক্টোবর বেস ইরোশন অ্যান্ড প্রফিট শিফ্টিং সম্পর্কিত সর্বাঙ্গীন কাঠামোয় পারস্পরিক সহমতের লক্ষ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে দুই দেশই তাকে স্বাগত জানিয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উভয় দেশ ভারত-জার্মান ফাস্ট ট্র্যাক মেকানিজমের সফল মডেল অব্যাহত রাখতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা পুনরায় উল্লেখ করেছে।

দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রসারে দুই দেশই তাদের প্রস্তুতির কথা পুনরায় উল্লেখ করেছে।

রেল ক্ষেত্রে জার্মানির সংস্থাগুলির কারিগরি দক্ষতার বিষয়টি ভারত স্বীকার করে নিয়েছে। দুই দেশই রেল সহযোগিতার ক্ষেত্রে নিজেদের আগ্রহের কথা পুনরায় উল্লেখ করেছে। ভারতীয় রেল ব্যবস্থাকে ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ কার্বন নিঃসরণ মুক্ত করে তুলতে উপযুক্ত প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে।

গ্লোবাল প্রোজেক্ট কোয়ালিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ক্ষেত্রে ভারত-জার্মান কর্মী গোষ্ঠীর ভূমিকায় দুই দেশ একে অপরের প্রশংসা করেছে।

স্টার্টআপ ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও নিবিড় করতে উভয় দেশের সরকারই তাদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছে। এই লক্ষ্যে স্টার্টআপ ইন্ডিয়া এবং জার্মান অ্যাক্সেলেটর সংস্থার মধ্যে চলতি সহযোগিতায় দুই দেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

উভয় দেশ মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ সহ পড়ুয়া, শিক্ষাবীদ বিনিময়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানের করে তুলতেও উভয় পক্ষ একে অপরের প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়েছে।

শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতায় ভারত ও জার্মানি সন্তোষ প্রকাশ করে এই উদ্যোগকে আরও নিবিড় করতে সম্মত হয়েছে। ভারত সরকার স্টাডি ইন ইন্ডিয়া বা ভারতে পঠন-পাঠনের মতো কর্মসূচিগুলিতে জার্মানীর ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করার ওপর জোর দিয়েছে। উভয় দেশ কৌশলগত অনুসন্ধান ও উন্নয়ন মূলক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে।

বিজ্ঞান ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ফেসিলিটি ফর অ্যান্টিপ্রোটোন অ্যান্ড আয়ন রিসার্চ ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে বাস্তবায়িত করতে দুই দেশ নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে।

দক্ষ স্বাস্থ্য ও শুশ্রুষা কর্মীদের অভিবাসনের জন্য কেরালা সরকার এবং জার্মান ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির পক্ষ থেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কিত চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টিকে দুই দেশের সরকার স্বাগত জানিয়েছে। কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা ও সুস্বাস্থের বিষয়ে জার্মান সোস্যাল অ্যাক্সিডেন্ট ইনস্যুরেন্স এবং ভারতের ন্যাশনাল সেফ্টি কাউন্সিলের মধ্যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরকে দুই দেশ স্বাগত জানিয়েছে।

ভারত ও জার্মানির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টিতে দুই দেশের সরকার সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর কঠিন পরিস্থিতি এখনও বিদ্যমান, একথা স্বীকার করে নিয়ে দুই দেশ চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ শৃঙ্খলে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশের বান্দায় বায়ো সেফ্টি লেভেল বা বিএসএল-৪ ল্যাবোরেটরি স্থাপনে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এবং সেদেশের রবার্ট-কচ ইন্সটিটিউটের মধ্যে যে সহযোগিতা গড়ে উঠেছে উভয় পক্ষই তাকে স্বাগত জানিয়েছে।

দুই দেশের সরকার চিকিৎসা সামগ্রী ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহযোগিতার লক্ষ্যে আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছে। এই লক্ষ্যে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কনট্রোল অর্গানাইজেশন এবং সেদেশের ফেডারেল ইন্সটিটিউট ফর ড্রাগস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে।

ষষ্ঠ পর্যায়ে অন্তঃসরকারি আলোচনায় যে সমস্ত বিষয়ে কথা হয়েছে, তা নিয়ে দুই নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভারত-জার্মান কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও সম্প্রসারিত ও নিবিড় করার বিষয়েও তারা নিজেদের অঙ্গীকারের কথা পুনরায় উল্লেখ করেছেন। ষষ্ঠ আন্তঃসরকারি আলোচনায় যোগ দিতে যাওয়া ভারতীয় প্রতিনিধি দলকে যে অভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছে তারজন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী চ্যান্সেলার ওলফ স্কোলজ-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পরবর্তী আন্তঃসরকারি আলাপ-আলোচনা আয়োজনের জন্য ভারত অত্যন্ত আশাবাদী।
 

CG/BD/NS



(Release ID: 1822432) Visitor Counter : 538