প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

নতুন দিল্লিতে ‘প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 14 APR 2022 5:21PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৪ এপ্রিল, ২০২২

 

আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সকল সদস্যগণ, সংসদে আমার সমস্ত বরিষ্ঠ সহযোগীগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্মানিত বন্ধুগণ, অন্যান্য উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,

দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে আজ অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে নানা উৎসব এবং পরবের উদযাপন সমারোহ চলছে। আজ দেশের নানা প্রান্তে কোথাও বৈশাখী পালিত হচ্ছে, কোথাও আবার বোহাগ বিহু!  আজ থেকেই ওড়িয়া নববর্ষও শুরু হচ্ছে, সমস্ত ওডিশাবাসীকে আমার শুভেচ্ছা জানাই।  আমাদের তামিলনাড়ুর ভাই ও বোনেরাও আজ নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছেন, আমি তাঁদের সবাইকে ‘পুত্তান্ড’-র অজস্র শুভকামনা জানাই। তাছাড়াও, দেশের অনেক অঞ্চলে নববর্ষ শুরু হচ্ছে, অনেক ধরনের পরব উদযাপন করা হচ্ছে। আমি সমস্ত দেশবাসীকে এই সকল পরব, অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই, আপনাদের সবাইকে ভগবান মহাবীর জয়ন্তী উপলক্ষেও অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

বন্ধুগণ,

আজকের এই অনুষ্ঠান অন্য কয়েকটি কারণেও অত্যন্ত বিশেষ হয়ে উঠেছে। আজ গোটা দেশ শ্রদ্ধেয় বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরজিকে তাঁর জয়ন্তী উপলক্ষে সাদর প্রণাম জানাচ্ছে, শ্রদ্ধা সহকারে স্মরণ করছে। বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর যে সংবিধানের মুখ্য শিল্পী ছিলেন, সেই সংবিধান আমাদের সংসদীয় প্রক্রিয়াকে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করেছে। এই সংসদীয় প্রক্রিয়াতে দেশের প্রধান দায়িত্ব দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদকে দেওয়া হয়েছে। এটা আমার সৌভাগ্য যে, আজ আমি দেশের নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়টি দেশকে সমর্পণ করার সুযোগ পেয়েছি। এমন সময়ে একটি অসাধারণ প্রেরণা আমাকে উজ্জীবিত করে তুলছে। বিগত ৭৫ বছরে দেশ অনেক গৌরবময় মুহূর্ত দেখেছে। ইতিহাসের পাতায় এই মুহূর্তগুলির যে গুরুত্ব রয়েছে -  তা সত্যিই অতুলনীয়। এরকম অনেক মুহূর্তের ঝলক এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়েও দেখা যাবে। আজ এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় উদ্বোধন উপলক্ষে আমি দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। কিছুক্ষণ আগে আমার এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সকল বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও পরিচয় হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এঁরা সকলেই অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। সেজন্য এই গোটা টিমকে আমি শুভেচ্ছা জানাই। আমি আজ এখানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের পরিবারের সদস্যদেরকেও দেখতে পাচ্ছি। আপনাদের সবাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই, স্বাগত জানাই। নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় উদ্বোধনের এই পূণ্য লগ্নটি আপনাদের সকলের উপস্থিতিতে আরও ধন্য হয়ে উঠেছে। আপনাদের উপস্থিতি এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ের সার্থকতাকে, এর প্রাসঙ্গিকতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

বন্ধুগণ,

দেশ আজ যে উচ্চতায় রয়েছে সেখান পর্যন্ত তাকে পৌঁছে দিতে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর গড়ে ওঠা প্রত্যেক সরকারের অবদান রয়েছে। আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকেও একথা অনেকবার উচ্চারণ করেছি। আজ এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ও স্বাধীনতা পরবর্তী প্রত্যেক সরকারের মিলিত ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতিবিম্ব হয়ে উঠেছে। দেশের প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রী তাঁর সময়ের ভিন্ন ভিন্ন সমস্যাগুলিকে সমাধান করে, চ্যালেঞ্জগুলিকে অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। সকলের ব্যক্তিত্ব, কৃতিত্ব ও নেতৃত্বের ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা ছিল। এসব কিছুই আজ লোকস্মৃতির বিষয়। দেশের জনগণ বিশেষ করে, নবীন প্রজন্ম, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি সকল প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারেন, তাহলে তাঁরা প্রেরণা পাবেন। ইতিহাস এবং বর্তমান থেকে ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথ গড়ে তোলা নিয়ে কখনও রাষ্ট্রকবি রামধারী সিং দিনকরজি লিখেছিলেন –

“প্রিয়দর্শন ইতিহাস কন্ঠ মে, আজ ধ্বনিত হো কাব্য বনে।

বর্তমান কী চিত্রপটী পর, ভূতকাল সম্ভাব্য বনে।”

অর্থাৎ, প্রিয়দর্শন ইতিহাস আজ সকলের কন্ঠে ধ্বনিত হয়ে কাব্য হয়ে উঠুক। বর্তমানের চিত্রপটে নিহিত অতীত যেন ভবিষ্যতকে সম্ভব করে তোলে। এই পংক্তির মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চাইছেন, আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনায় যে গৌরবময় অতীত সমাহিত রয়েছে তা যেন কাব্যে রূপান্তরিত হয়ে গুঞ্জরিত হয়। এ দেশের সম্পন্ন ইতিহাস আমরা বর্তমানের প্রেক্ষিতেও যেন সম্ভব করে তুলতে পারি। আগামী ২৫ বছর স্বাধীনতার এই অমৃতকাল দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় ভবিষ্যতের নির্মাণেরও একটি প্রাণশক্তি কেন্দ্র হয়ে উঠবে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ‘লিডারশিপ’ বা দেশের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ ছিল, কিভাবে তাঁরা সেই চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করেছেন, তা নিয়েও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় একটি বড় প্রেরণার মাধ্যম হয়ে উঠবে। এখানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের বিভিন্ন কাজ ও পদক্ষেপের সংশ্লিষ্ট দুর্লভ ফটো, ভাষণ, সাক্ষাৎকার, মূল রচনার মতো স্মরণীয় সামগ্রী সংরক্ষণ করা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

সার্বজনিক জীবনে যাঁরা উচ্চ পদগুলিতে কাজ করেন, যখন আমরা তাঁদের জীবনের দিকে ফিরে তাকাই তখন এটাও এক ধরনের ইতিহাসেরই অবলোকন করা হয়। তাঁদের জীবনের ঘটনাগুলি, তাঁদের সামনে উঠে আসা নানা সমস্যা, সেগুলির সমাধানে তাঁদের নানা সিদ্ধান্ত আমাদের অনেক কিছু শেখায়। অর্থাৎ, একভাবে তাঁদের জীবন চলতে থাকে, আর পাশাপাশি ইতিহাসেরও রচনা জারি থাকে। এই জীবনকে পড়া, ইতিহাসের অধ্যয়নের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ে এলে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসকে জানা যাবে। আমরা কয়েক বছর আগেই ‘সংবিধান দিবস’ পালনের সূত্রপাত করে দেশের মানুষের মনে জাতীয় চেতনা জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি। এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ও সেই লক্ষ্যে আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়।

বন্ধুগণ,

দেশের প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রী সংবিধান সম্মত গণতন্ত্রের লক্ষ্যকে সার্থকভাবে পূরণের ক্ষেত্রে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের মতো করে অবদান রেখেছেন। তাঁদেরকে স্মরণ করা, তাঁদের অবদানের কথা জানা, স্বাধীন ভারতের অগ্রগতির ইতিহাস জানার প্রক্রিয়াকে একটি নতুন মাত্রা দেবে। এখানে যাঁরা আসবেন তাঁরা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের অবদানের সঙ্গে পরিচিত হবেন। তাঁদের প্রেক্ষিত, তাঁদের সংঘর্ষ, তাঁদের সৃষ্টিকে জানবেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এখান থেকে এই শিক্ষাও পাবে যে আমাদের গণতান্ত্রিক দেশে কোন কোন প্রেক্ষিত থেকে উঠে এসে ভিন্ন ভিন্ন প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এটা আমাদের আপামর ভারতবাসীর জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, আমাদের অধিকাংশ প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। সুদূর গ্রাম, দেহাত থেকে উঠে এসে, একদম গরীব পরিবার থেকে উঠে এসে, কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসেও প্রধানমন্ত্রী পদ পর্যন্ত পৌঁছনো, ভারতীয় গণতন্ত্রের মহান পরম্পরাগুলির প্রতি বিশ্বাসকে দৃঢ় করে। এই দেশকে, এ দেশের যুব সম্প্রদায়ের মনেও বিশ্বাসের জন্ম দেয় যে ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিও তাঁদের কর্মের মাধ্যমে দেশের শীর্ষতম পদগুলিতে পৌঁছতে পারেন, সেগুলিকে অলঙ্কৃত করতে পারেন।

বন্ধুগণ,

এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ে যতটা অতীত রয়েছে, ততটাই ভবিষ্যতও রয়েছে। এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় দেশের জনগণের বিগত সময়ের যাত্রাপথের নানা পর্যায়ে নতুন লক্ষ্যগুলিকে এবং লক্ষ্য পূরণের ইতিহাসকে সংরক্ষিত করে, নতুন রূপে ভারতের উন্নয়ন যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করবে। এটি একটি এমন যাত্রাপথ যেখানে আপনারা একটি নতুন ভারতের স্বপ্নগুলিকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার নানা পর্যায়কে নিবিড়ভাবে দেখতে পাবেন। এই বিল্ডিং-এ ৪০টিরও বেশি গ্যালারি রয়েছে, আর প্রায় ৪ হাজার মানুষের একসঙ্গে ঘুরে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি, রোবোটস এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুতগতিতে পরিবর্তনশীল ভারতের চিত্রও এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ের মাধ্যমে বিশ্ববাসী দেখতে পাবেন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দর্শকদের মনে এমন সব অনুভূতি উপহার দেওয়া হবে,… যেন আমরা সত্যিই সত্যিই সেই সময়ে রয়েছি, সেই প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে সেলফি নিচ্ছি, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি।

বন্ধুগণ,

আমাদের দেশের নবীন বন্ধুদের, ছাত্রছাত্রীদের এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ে আসার জন্য বেশি করে উৎসাহিত করতে হবে। এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় তাঁদের অভিজ্ঞতাকে আরও সম্প্রসারিত করবে। আমাদের নবীন প্রজন্ম অত্যন্ত সক্ষম আর তাঁদের মধ্যে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তাঁরা নিজেদের দেশ সম্পর্কে, স্বাধীন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলি সম্পর্কে, ঘটনাগুলি সম্পর্কে যত বেশি জানবেন, যত বেশি বুঝবেন, ততটাই তাঁরা ভবিষ্যতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারঙ্গম হয়ে উঠবেন, সক্ষম হয়ে উঠবেন। এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলির জন্য জ্ঞানের, ভাবনার, অভিজ্ঞতার, অনুভবের এক একটি অনুপম দরজা খোলার কাজ করবে। এখানে এসে তাঁরা যত কিছু জানতে পারবেন, যে তথ্যগুলির সঙ্গে তাঁরা পরিচিত হবেন তা তাঁদেরকে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। ইতিহাসের ছাত্রছাত্রীরা যখন গবেষণা করতে চান, তাঁরাও এখানে এসে অনেক লাভবান হবেন।

বন্ধুগণ,

ভারত গণতন্ত্রের জননী, ‘মাদার অফ ডেমোক্র্যাসি’। ভারতের গণতন্ত্রের এটাই সবচাইতে বড় বৈশিষ্ট্য যে সময়ের সঙ্গে এই গণতন্ত্রে ক্রমাগত পরিবর্তন আসতে থাকে। প্রত্যেক যুগে, প্রত্যেক প্রজন্মে গণতন্ত্রকে আরও আধুনিক করে তুলতে, আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলার নিরন্তর প্রচেষ্টা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে যেভাবে অনেকবার সমাজের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি, কুসংস্কারে পরিণত হয়, তেমনই গণতন্ত্রের সামনেও নানা সময়ে অনেক সমস্যা এসেছে, অনেক প্রতিস্পর্ধা এসেছে। এই প্রতিস্পর্ধাগুলিকে, এই ত্রুটিগুলিকে দূর করতে থাকা, নিজেকে পরিষ্কৃত করতে থাকা, এটাই ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এটাই ভারতীয় গণতন্ত্রের আসল সৌন্দর্য, আর এক্ষেত্রে প্রত্যেক নেতাই তাঁদের অবদান রেখেছেন। দু-একটি ব্যক্তিক্রম ছেড়ে দিলে, আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই শক্তিশালী করার গৌরবময় পরম্পরা পরিলক্ষিত হয়েছে। সেজন্য আমাদেরও এই দায়িত্ব রয়েছে যে নিজেদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের গণতন্ত্রকে যেন আরও মজবুত করে যাই। আজ যেসব সমস্যা আমাদের গণতন্ত্রের সামনে রয়েছে, সময়ের সঙ্গে যেসব ত্রুটি এখন আমাদের বিড়ম্বনায় ফেলছে, সেগুলি দূর করে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি, এটাই আমাদের কাছ থেকে এ দেশের গণতন্ত্র প্রত্যাশা করে। দেশবাসীও আমাদের সকলের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা করে। আজকের এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত গণতন্ত্রকে শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ করার সঙ্কল্পকে পুনরুচ্চারণেরও একটি শুভ মুহূর্ত। আমাদের ভারতে যুগে যুগে বিভিন্ন ভাবধারা, বিভিন্ন মত, পথ ও পরম্পরার সমাবেশ হয়ে এসেছে। আমাদের গণতন্ত্র আমাদের একথাও শেখায় না যে কোনও একটি নির্দিষ্ট দর্শন, নির্দিষ্ট ভাবনাই সর্বোত্তম আর অন্যগুলি নয়। আমরা তো সেই সভ্যতার কোলে লালিত-পালিত হয়েছি, যেখানে একথা বলা হয়েছে যে –

“আ নো ভদ্রাঃ

ক্রতভো য়ন্তু বিশ্বতঃ”

অর্থাৎ, আমাদের কাছে যেন সব দিক থেকে সদ্বিচার, শুদ্ধ ভাবনা আসে! আমাদের গণতন্ত্র সর্বদাই আমাদের প্রেরণা দেয় নবীনতাকে স্বীকার করে নেওয়ার, নতুন ভাবনা-চিন্তাকে মেনে নেওয়ার, নতুন ভাবনা-চিন্তাকে গ্রহণ করার। নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ে যাঁরা দর্শক হয়ে আসবেন, তাঁরা গণতন্ত্রের এই শক্তিকেও দেখতে পাবেন, অনুভব করবেন। ভাবনা নিয়ে, দর্শন নিয়ে সহমতি, অসহমতি হতে পারে, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক ধারা থাকতে পারে, কিন্তু গণতন্ত্রে সকলের উদ্দেশ্য, সকলের ধ্যেয় একটাই থাকে তা হল – দেশের উন্নয়ন। সেজন্য এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ে শুধুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের সাফল্য, তাঁদের অবদানগুলিকে সংরক্ষণে সীমাবদ্ধ থাকেনি, এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় প্রত্যেক বিপরীত পরিস্থিতিতে, নানা কঠিন সময়ে আমাদের দেশে গণতন্ত্রের শেকড় কিভাবে আরও গভীরে পৌঁছেছে, আরও কত দৃঢ় হয়েছে – এটা অনুধাবন করাবে। এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় আমাদের সংস্কৃতিতে হাজার হাজার বছর ধরে পল্লবিত ও পুষ্পিত গণতান্ত্রিক সংস্কারগুলির দৃঢ়তা এবং সংবিধানের প্রতি মজবুত হতে থাকা আস্থারও প্রতীক হয়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ,

নিজেদের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা, সেগুলিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রত্যেক রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমাদের দেশে স্বাধীনতা আন্দোলন, আমাদের সাংস্কৃতিক বৈভবের যাবতীয় প্রেরণাদায়ী প্রসঙ্গ এবং প্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্বদের কৃতিত্বকে তুলে ধরা, জনগণের সমস্ত আন্দোলনকে তুলে ধরার জন্য আমাদের সরকার নিরন্তর কাজ করে চলেছে। দেশ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া মূর্তিগুলি এবং নানা গুরুত্বপূর্ণ কলাকৃতিকে ফিরিয়ে আনা থেকে শুরু করে পুরনো মিউজিয়াম বা সংগ্রহালয়গুলির পুনর্নির্মাণ, নতুন নতুন সংগ্রহালয় নির্মাণের একটি অনেক বড় অভিযান বিগত ৭-৮ বছর ধরে লাগাতার জারি রয়েছে, আর এই প্রচেষ্টাগুলির পেছনে একটি অনেক বড় উদ্দেশ্য রয়েছে। যখন আমাদের নবীন প্রজন্ম এই জীবন্ত প্রতীকগুলিকে দেখবেন, তখন তাঁদের মনে তথ্য সম্পর্কে বোধও যেমন জেগে উঠবে, তেমনই সত্য সম্পর্কেও নিজস্ব বোধ অঙ্কুরিত হবে। যখন কেউ জালিয়ানওয়ালা বাগ স্মারককে দেখেন তখন তিনি সেই স্বাধীনতার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন, যে স্বাধীনতার আনন্দ আজ তিনি উপভোগ করছেন। যখন কোনও জনজাতির মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংগ্রহালয় দেখেন, তখন তাঁরা জানতে পারেন যে স্বাধীনতা সংগ্রামে দূরদুরান্তের অরণ্যে বসবাসকারী আমাদের দেশের প্রত্যেক এলাকার জনজাতি ভাই-বোনেরাও কিভাবে অবদান রেখেছেন, প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষেরা কিভাবে তাঁদের সর্বস্ব উৎসর্গ করেছেন। যখন কেউ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে তৈরি সংগ্রহালয় দেখেন, তখন তাঁরা অনুভব করেন যে দেশের জন্য আত্মবলিদানের মানে কী হয়। এটা আমাদের সরকারের সৌভাগ্য যে এখানে দিল্লির আলিপুর রোডে আমরা বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের ‘মহাপরিনির্বাণ স্থলী’তে বাবাসাহেব মেমোরিয়াল নির্মাণ করিয়েছি। বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরকে নিয়ে যে ‘পঞ্চতীর্থ’ গড়ে তোলা হয়েছে, সেগুলি ইতিমধ্যেই আজকের নবীন প্রজন্ম ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সামাজিক ন্যায় এবং অটুট রাষ্ট্র নিষ্ঠার প্রেরণাকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ,

এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ও জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীদের ঐতিহ্যকে প্রদর্শিত করে আমাদের ‘সবকা প্রয়াস’-এর ভাবনার উৎসব উদযাপন করছে। এর যে লোগো, সেটার দিকেও যখন আপনারা তাকাবেন, ভালো করে দেখবেন, তখন বুঝতে পারবেন, এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ের লোগো অনেকটা এরকম যে এতে দেখা যায়, কোটি কোটি ভারতবাসীর হাত চক্রটিকে তুলে ধরেছে। এই চক্র ২৪ ঘন্টা নিরন্তরতার প্রতীক। সমৃদ্ধির সঙ্কল্পের জন্য এই চক্র পরিশ্রমের প্রতীক। এটাই সেই পণ, এটাই সেই শপথ, এটাই সেই চেতনা, এটাই সেই শক্তি যা আগামী ২৫ বছরে ভারতের উন্নয়নকে পরিভাষিত করতে থাকবে।

বন্ধুগণ,

ভারতের ইতিহাসের মহানতার সঙ্গে, ভারতের সমৃদ্ধিকালের সঙ্গে আমরা সবাই এখানে এসে পরিচিত হতে পারব। সেজন্য আমরা সব সময় গর্ব করতে পারব। ভারতের ঐতিহ্যের সঙ্গে আর ভারতের বর্তমানের সঙ্গে আজ বিশ্ববাসী যাতে সঠিকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তা সুনিশ্চিত করতে এ ধরনের সংগ্রহালয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আজ যখন একটা নতুন ওয়ার্ল্ড অর্ডার গড়ে উঠছে, বিশ্ব ভারতের দিকে একটি আশা এবং বিশ্বাসপূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে, তখন ভারতকেও প্রতি মুহূর্তে নতুন উচ্চতায় পৌঁছনোর জন্য নিজেদের প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে। এহেন সময়ে স্বাধীনতা পরবর্তী এই ৭৫ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ৭৫ বছর সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের কার্যকাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় আমাদের সাহায্য করবে, আমাদের নিরন্তর প্রেরণা যোগাবে। এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় আমাদের মনের মধ্যে ভারতের জন্য বড় সঙ্কল্পগুলির বীজ বপনের সামর্থ্য গড়ে তুলবে। এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় ভারতের ভবিষ্যতকে যাঁরা গড়ে তুলবেন, সেই যুব সম্প্রদায়ের মনে কিছু করে দেখানোর ভাবনা অঙ্কুরিত করবে। আগামী সময়ে এখানে আর যাঁদের নাম যুক্ত হবে তাঁদের কাজগুলিও যুক্ত হবে। তা থেকে আমরা সবাই একটি ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্নকে, একতি উন্নত ভারতের স্বপ্নকে সাকার হওয়ার শান্তি খুঁজে পাব। এর জন্য আজ পরিশ্রম করে যেতে হবে। এই সময়, স্বাধীনতার এই অমৃতকাল, ঐক্যবদ্ধতা, একনিষ্ঠতা আর নানা প্রচেষ্টার বাস্তবায়নের সময়। সমগ্র দেশবাসীর প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা নিজেরা এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় দেখতে আসুন, আর নিজেদের সন্তান-সন্ততিকেও এই সংগ্রহালয় দর্শন করানোর জন্য অবশ্যই নিয়ে আসুন। এই আমন্ত্রণ জানিয়ে, এই অনুরোধ জানিয়ে আরও একবার এই নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ের জন্য সমগ্র দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। ধন্যবাদ!

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1817057) Visitor Counter : 267