প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
‘পরীক্ষা পে চর্চা পি এম মোদী কে সাথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সারা দেশের বোর্ড পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথোপকথন
Posted On:
01 APR 2022 9:39PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১ এপ্রিল, ২০২২
আপনাদের সবাইকে নমস্কার|
এমনিতে এ আমার খুবই প্রিয় অনুষ্ঠান| কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর জন্য মাঝখানে অনেক বন্ধুর সঙ্গে মিলিত হতে পারিনি | আমার জন্য আজকের অনুষ্ঠান বিশেষ খুশির বিষয় বটে| কেন না একটা লম্বা সময়ের ব্যবধানে আপনাদের সবার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়ে গেলাম| আমার মনে হয় না যে পরীক্ষা নিয়ে আপনাদের কোন উদ্বেগ আছে| আমি ঠিক বলছি তো? আমি ঠিক বলছি তো, আপনাদের মনে কোন উদ্বেগ নেই তো? … উদ্বেগ থাকলে আপনাদের বাবা মায়ের আছে| ও কী যে করবে!
ঠিক করে বলুন তো, কাকে সময় দেবো? আপনাকে? না আপনার পরিবারের লোকদের? যাঁদের নিজেদেরই উদ্বেগ আছে তারা হাত তুলুন|
আচ্ছা এখনো তাহলে এমন পরীক্ষার্থী আছেন! বেশ! আর যাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে, তাঁদের উদ্বেগ নেই, তাঁদের মা বাবাদের উদ্বেগ আছে, তারা কারা কারা?
তাঁরাই তো সংখ্যায় বেশি দেখছি!
আগামীকাল বিক্রম সম্বত অনুসারে নববর্ষ শুরু হতে চলেছে| এমনিতে এই এপ্রিল মাস জুড়েই আমাদের দেশ অনেক উৎসব পার্বনে ছয়লাপ থাকে, পরিপূর্ণ থাকে| আসন্ন সমস্ত উৎসব-পার্বনের জন্য আপনাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভকামনা! কিন্তু উৎসব উদযাপনের মাঝেই পরীক্ষাও চলতে থাকে| সেজন্য ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকে উৎসব উদযাপনের মজাটা উপভোগ করতে পারেন না! কিন্তু যদি পরীক্ষাকেই উৎসব পার্বনের মত করে তোলা যায় তো সেই উৎসব উদযাপন অনেক বর্ণময় হয়ে ওঠে| আর এজন্য আমাদের আজকের অনুষ্ঠানে ‘আমাদের পরীক্ষাতে কী করে উৎসবের আবহ গড়ে তুলতে পারি, একে কী করে রঙিন করে তুলতে পারি, কিভাবে উৎসাহ উদ্দীপনায় ভরপুর হয়ে আমরা পরীক্ষায় বসার জন্য বাড়ি থেকে বেরোতে পারি, এই বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি|
আমাদের অনেক বন্ধু আমাকে অনেক প্রশ্নও পাঠিয়েছেন| কেউ কেউ আমাকে অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন| কেউবা ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন| মিডিয়ার বন্ধুরাও বিভিন্ন জায়গার ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে অনেক প্রশ্ন তৈরি করে পাঠিয়েছেন| সীমাবদ্ধ সময়ের মধ্যে যতটুকু করতে পারি তো অবশ্যই করবো, যে কজনকে জবাব দিতে পারি – অবশ্যই জবাব দেবো! কিন্তু এবার আমি সাহস করে নতুন কিছু করতে যাচ্ছি| বিগত পাঁচবারের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী দেখেছি যে, কারো কারো অভিযোগ থাকে যে, তাঁর কথা, তাঁর প্রশ্ন আলোচনায় আসে নি! তাই আমি এবার এটা করবো যে, সীমাবদ্ধ সময়ের মধ্যে আমরা যত বেশি সম্ভব কথা বলবো| এতে সময় পেলে ভিডিও-র মাধ্যমে, কখনো অন্যত্র যাবার পথে আমার কাছে সুযোগ এলে অডিওর মাধ্যমেও, অথবা ভিস্যুয়াল টেক্সটের মাধ্যমেও এই অনুষ্ঠান চালিয়ে যাবো| আমি নমো অ্যাপের মাধ্যমে আলোচনার সমস্ত বিষয় ফের একবার আপনাদের সামনে, মানে যে বিষয়গুলি এখানে আলোচনার বাইরে থেকে যাবে, সেগুলি দিয়ে দেবো| যাতে আপনারা নমোঅ্যাপে গিয়ে সেগুলি দেখতে পারেন| আর এতেও এবারে এক নতুন বিষয় যুক্ত করেছি। একটি মাইক্রো সাইট বানিয়েছি| সেখানে গিয়েও আপনারা এর সুবিধা নিতে পারবেন| তো চলুন আমরা অনুষ্ঠান শুরু করি| সবার আগে কে আছেন? .....
সঞ্চালিকা- ১ : ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আপনার অনুপ্রেরনাদায়ী ও জ্ঞানসঞ্চারী উদ্বোধনী কথা আমাদের সবসময় ইতিবাচক শক্তি যুগিয়ে থাকে এবং আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ করে তোলে| আপনার বিপুল অভিজ্ঞতা এবং সমৃদ্ধ দিশা নির্দেশক কথার জন্য আমরা ঔৎসুক্য নিয়ে অপেক্ষা করছি| আপনার আশির্বাদ এবং অনুমতি নিয়ে আমরা এই অনুষ্ঠান শুরু করতে চাইছি| ধন্যবাদ মহোদয়|
সঞ্চালিকা-২ : মাননীয় মহোদয় দেশের রাজধানী ঐতিহাসিক নগরী দিল্লির বিবেকানন্দ স্কুলের বারো ক্লাসের ছাত্রী খুশি জৈন আপনাকে প্রশ্ন করতে চাইছেন| খুশি প্রশ্ন করুন|
প্রধানমন্ত্রী : এটা খুব ভালো যে, খুশিকে দিয়ে প্রশ্ন শুরু হচ্ছে! আর আমিও চাই পরীক্ষা শুরুর আগে সবার মনে শুধু খুশি আর খুশিই যেন বজায় থাকে!
খুশি : নমস্কার প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আমি দিল্লির আনন্দবিহারে অবস্থিত বিবেকানন্দ স্কুলের বারো ক্লাসের ছাত্রী| আমরা যদি ঘাবড়ে যাই , তাহলে পরীক্ষার সময় প্রস্তুতি কিভাবে নেবো? ধন্যবাদ|
সঞ্চালিকা২ঃ ধন্যবাদ খুশি| এবারে ছত্তিশগড়ের সাহিত্য ঐতিহ্যের পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ নগরী বিলাসপুরের বারো ক্লাসের ছাত্র এ. শ্রীধর শর্মা অনেকটা এরকম সমস্যা নিয়েই ব্যতিব্যস্ত! তিনিও প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে নিজের কথা বলতে উন্মুখ হয়ে আছেন| শ্রীধর দয়া করে আপনার প্রশ্ন করুন!
শ্রীধর -নমস্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়| আমি ছত্তিশগড় বিলাসপুরের এ. শ্রীধর শর্মা, ১ নং দক্ষিণ পূর্ব মধ্য রেলওয়ে উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারো ক্লাসের কলা বিভাগের ছাত্র| মহোদয় আমার প্রশ্ন হচ্ছে, পরীক্ষা সংক্রান্ত উদ্বেগ কিভাবে মোকাবিলা করবো? যদি ভালো নম্বর না পাই তাহলে কী হবে? আর প্রত্যাশা মত নম্বর না পেলে কী হবে? আর শেষ প্রশ্ন হচ্ছে, আমি ভালো গ্রেড না পেলে আমার পরিবারের হতাশা কিভাবে মোকাবিলা করব?
সঞ্চালিকা- ২ : ধন্যবাদ শ্রীধর, এবারে আমরা জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরুর মাটি সাবরমতি থেকে ভাদোদরার দশম শ্রেণীর ছাত্রী কেনি প্যাটেলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি যে নাকি আন্তরিকভাবে একই ধরণের সমস্যা মোকাবিলায় আপনার দিশা-নির্দেশ পেতে আগ্রহী| কেনি দয়া করে আপনার প্রশ্ন করুন|
কেনি : অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আমি কেনি প্যাটেল| আমি গুজরাটের ভাদোদরায় ট্রি হাউজ হাই স্কুলে দশম শ্রেনীতে পড়ি| আমার প্রশ্ন হল, আমার গোটা সিলেবাস কিভাবে শেষ করা যায়, কিভাবে ভালো নম্বর ও ফলাফল পাওয়া যায়, এসব চাপ কেমন করে সামলাবো? পরীক্ষার সময় ঠিকঠাক খাওয়া ও ঘুমের বিষয়টা নিয়ে কিভাবে কী করবো একটু বলবেন? ধন্যবাদ মহোদয়!
সঞ্চালিকা- ২ : ধন্যবাদ কেনি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, খুশি, শ্রীধর ও কেনি প্যাটেল পরীক্ষা নিয়ে ভেবে কষ্ট পাচ্ছেন| তাঁদের মতই গোটা দেশের অনেক পড়ুয়া পরীক্ষার চাপ সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন| পরীক্ষার চাপ প্রায় সমস্ত পরীক্ষার্থীকেই বিড়ম্বনায় ফেলে| আর এ নিয়ে তাঁরা আপনার দিশা নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন, তাঁরা সবাই আপনার কথা শুনতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মহোদয়|
প্রধানমন্ত্রী : আপনারা একসঙ্গে অনেকগুলি প্রশ্ন করে ফেলেছেন| মনে হচ্ছে যে, আমাকেই আতঙ্কের মধ্য দিয়ে যেতে হবে| … দেখুন, আপনাদের মনে পরীক্ষা নিয়ে ভয় জাগে কেন? আমার মনেও এটাই প্রশ্ন| আপনারা কি প্রথমবার পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন? আপনাদের মধ্যে এমন কেউই নেই যে নাকি প্রথমবার পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন| অর্থাৎ, আপনারা নিজেদের জীবনে ইতিমধ্যেই অনেকগুলি পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছেন| আর একদিক থেকে তো আপনারা পরীক্ষা দেওয়ার ক্রমে প্রায় শেষের দিকের পর্যায়ে রয়েছেন| এত বড় সমুদ্র পেরিয়ে তীরে এসে তরী ডোবার ভয় কেন মনে চেপে বসছে? তাহলে প্রথম কথা হচ্ছে আপনারা, মনের মধ্যে একটা কথা স্থির করে নিন যে, পরীক্ষা জীবনের আমাদের এক সহজ স্বাভাবিক অপরিহার্য অঙ্গ| আমাদের বেড়ে ওঠার অভিযানে প্রতিটি পরীক্ষা একেকটি ছোট ছোট ধাপ| এই ধাপ গুলো আমাদের পেরোতেই হবে| আপনারা অনেককটা পেরিয়ে গেছেনও| আপনারা যখন এতবার পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছেন, আর পরীক্ষা দিতে দিতে আপনারা আজ পরীক্ষা প্রুফ হয়ে গেছেন|এই ভাবনাটি প্রত্যেকের মনে গেঁথে নিতে পারলে তা ধীরে ধীরে আপনাদের শক্তি হয়ে উঠবে| এভাবে আপনারা যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছেন, তাকে কখনোই ছোট বলে ভাববেন না| দ্বিতীয়তঃ, আপনাদের মনে যে উদ্বেগ তৈরী হয়েছে, তার কারণ আপনার প্রস্তুতিতে ত্রুটি নয়তো? বলার সময় তো আমরা অনেক কিছুই বলি, কিন্তু মনে থাকে অন্য কিছু| আপনাদের প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে, পরীক্ষা যেহেতু বেশি দূরে নয়, নিজেকে একথা বলে বোঝাতে হবে, এখন পর্যন্ত যা করেছি সেটার ওপর আস্থা রেখেই আমাদের এগোতে হবে| কারও কারও একটা দু’টো অধ্যায় ভালোভাবে পড়া হয়নি, অসম্পুর্ণ রয়ে গেছে, এমন না পড়া অধ্যায় থাকতেই পারে| এমন হয়েই থাকে| কিন্তু যতটুকু সম্পূর্ণ হয়েছে, তা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে| এতে বাকি ফাঁক ফোকরও ঠিক ভরাট হয়ে যাবে| আর এজন্যই আমি চাই যে, আপনারা এরকম চাপের মধ্যে থাকবেন না| আতংক তৈরী হয় এমন পরিস্থিতিকে প্রশ্রয়ই দেবেন না|অন্যসময় আপনারা যেরকম সহজ স্বাভাবিক থাকেন, আগামী পরীক্ষার দিনগুলিতেও তা-ই থাকুন| অতিরিক্ত কিছু যুক্ত করা বা বাদ দেওয়া থেকে দূরে থাকুন| নাহলে তা আপনার জন্য অস্বস্তি বাড়াবে| অমুক এটা করছে তো আমিও করব| সে ঐটা করেছে তো আমাকেও করতে হবে – এসব করবেন না! আপনি অন্যের বিষয় নিয়ে ভাববেন না| তা-ই করুন যা নাকি আপনি স্বাভাবিকভাবে করে থাকেন| আর সেটাতেই আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন| আমার ভরসা আছে, আপনি খুবই সরলভাবে উৎসাহের সঙ্গে মন দিয়ে উৎসবের মনোভাব নিয়ে পরীক্ষায় বসবেন| আর সে সঙ্গে আপনার সাফল্যও নিশ্চিত হবে।
সঞ্চালিকা-২ : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আপনাকে ধন্যবাদ এরকম সহজভাবে নিজেদের ওপর বিশ্বাস রেখে পরীক্ষাকে স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা হিসেবে গ্রহণের বিষয়টি আমাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য| মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, পরের প্রশ্নটি কর্ণাটক থেকে; এখন প্রশ্ন করবে, নানা ঐতিহ্যের ঠিকানা ও জাতীয় উদ্যান সমৃদ্ধ মাইসুরু জেলার জওহর নবোদয় বিদ্যালয় এর একাদশ শ্রেণীর ছাত্র তরুণ এমবি। সে আপনার কাছে তাঁর সমস্যার সমাধান চাইছে| তরুণ, আপনি অনুগ্রহ করে আপনার প্রশ্ন করুন।
তরুণ : সুপ্রভাত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আমি তরুণ এমবি কর্ণাটকের মাইসুরুতে জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র| আমি ২০২২-এর পরীক্ষা পে চর্চার পঞ্চম পর্বে অংশগ্রহনের সুযোগ পাওয়ায় আমার নিজের ও পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি| মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি মহোদয়ের প্রতি আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সকালবেলায় চারদিকে ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের কারণে মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়| এইগুলির কারণে অনলাইনে পড়াশুনো করা খুব কঠিন| এত অস্থিরতার মধ্যে একজন ছাত্র কিভাবে নিজের পড়াশোনাতে মনোযোগ বজায় রাখতে পারে? এক্ষেত্রে আপনার কাছে কোন সমাধান আছে কি মহোদয়? ধন্যবাদ মহোদয়!
সঞ্চালিকা-২ : ধন্যবাদ তরুণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, দশম শ্রেণীর ছাত্র শাহিদ আলী| দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সিলভার ওকস স্কুলে পড়ে| সে-ও একই ধরণের প্রশ্ন করতে চায়| শাহিদ আলীকে অনুরোধ করছি প্রশ্ন করতে|
শাহিদ আলী: নমস্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আমি শাহিদ আলী| দিল্লি ক্যানটনমেন্ট বোর্ডের সিলভার ওক্স স্কুলে দশম শ্রেণীর ছাত্র| আমরা বিগত দু’বছর অনলাইন পদ্ধতিতে পড়াশুনো করছি| ইন্টারনেট ও অন্য উপাদান ব্যবহার করে আমাদের মত অনেকেরই সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন গেমিং-এর প্রতি অনেকটা আসক্তির মত হয়ে গেছে| এরকম পরিস্থিতিতে কেমন করে সেগুলি থেকে বেরিয়ে আসব, সে ব্যাপারে আমাদের দিশা-নির্দেশ করুন|
সঞ্চালিকা-৩ : ধন্যবাদ শাহিদ, মাননীয় মহোদয়, কেরলের থিরুভনন্তপুরম থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রী কীর্তানা নায়ারও একইধরনের সমস্যায় আছে এবং আপনার কাছ থেকে কিছু পরামর্শ পাওয়ার প্রত্যাশী| মহোদয় কীর্তানার প্রশ্ন পাওয়া যাচ্ছে ঠিক এই সময় থেকেই| কীর্তানা আপনি দয়া করে আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন|
কীর্তানা : হাই, আমি কীর্তানা নায়ার| কেরালার থিরুভনন্তপুরমে কৃসল স্কুলে দশম শ্রেনীতে পড়ি| আমরা সবাই জানি অতিমারিতে আমাদের ক্লাস অনলাইনে পরিবর্তিত হয়েছে| পাশাপাশি আমরা নিজেদের মনকে নানাভাবে মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদিতে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেতে দেখছি| মহোদয়, আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এখন আমরা কেমন করে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শেখার ব্যাপারে উন্নতি করবো?
সঞ্চালিকা১ : ধন্যবাদ কীর্তানা! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, অনলাইন শিক্ষা শুধু ছাত্রদের জন্য নয়, শিক্ষকদেরকেও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে তুলেছে। শ্রী চন্দা চুড়েশ্বরণ এম, কৃষ্ণগিরির একজন শিক্ষক এক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ এবং নির্দেশ চাইছেন। চন্দা চুড়েশ্বরণ স্যার, আপনি অনুগ্রহ করে প্রশ্ন করুন।
চন্দা চুড়েশ্বরণ এম : নমস্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়! আমি তামিলনাড়ুর হসুর জেলার অশোক লাল্লন স্কুলের শিক্ষক চন্দা চুড়েশ্বরণ বলছি। আমার প্রশ্ন হল, একজন শিক্ষক হিসেবে অনলাইন পড়ানো এবং শেখার কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। আমরা কিভাবে এটি আরও ভালোভাবে সম্পাদন করব স্যার? ধন্যবাদ মহোদয়।
সঞ্চালিকা ১: ধন্যবাদ মহোদয়! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় তরুণ, সাহিদ কীর্তানা, চন্দা চুড়েশ্বরণ স্যার এবং সকলে অনলাইনে এডুকেশনের নানা সমস্যা তুলে ধরছেন এবং তাঁরা বলেছেন, এর ফলে তাঁরা গত দু’বছরে পড়াশোনার চাইতে অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যার, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমরা একই ধরনের অনেক প্রশ্ন পেয়েছি। এই সবক’টি থেকেই নির্বাচিত যে ক’জনের কথা শোনালাম, এগুলি নিয়ে প্রত্যেকেই চিন্তিত। আমি আপনাকে এই বিষয়ে অনুগ্রহ করে পথ দেখানোর অনুরোধ করছি স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আমার মনে একটা প্রশ্ন উঠছে, যেমন আপনারা বলেছেন যে অনলাইন ক্লাসের ফলে ছাত্রছাত্রীরা এদিকে ওদিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ছে, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে, একটু নিজেদেরকেই জিজ্ঞাসা করুন, আপনারা যখন অনলাইন পড়াশোনা করেন, তখন সত্যিই সত্যিই পড়াশোনা করেন। তখন কিন্তু আপনারা সিনেমার রিল দেখেন না। এখন আমি আপনাদের হাত ওপরে তুলতে বলব না। কিন্তু আপনারা বুঝে গেছেন যে আমি আপনাদের ধরে ফেলেছি। বাস্তবে দোষটা অনলাইন কিংবা অফলাইনের নয়। আপনারা হয়ত অনুভব করেছেন যে শ্রেণীকক্ষেও অনেকবার এরকম হয় যে আপনার শরীর শ্রেণীকক্ষে রয়েছে, আপনার চোখ দুটি শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, কিন্তু কানে একটাও কথা ঢুকছে না। কারণ, আপনার মন তখন অন্য কোথাও। মনের জন্য তো কোনও দরজা লাগানো নেই, কোনও জানালাও লাগানো নেই। কিন্তু মন যদি অন্য কোথাও থাকে, তাহলে আপনি আর কিছু শুনতে পাবেন না। শুনতে না পেলে সেসব কথা আপনার মাথায় ঢুকবে না। এই যে ব্যাপারটা অফলাইনে হয়, একই জিনিস অনলাইনেও হয়। এর মানে হল, মাধ্যমের কোনও সমস্যা নেই। সমস্যাটা মনের। সেই মাধ্যম অনলাইন হোক কিংবা অফলাইন, যদি আমার মন এর সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে যুক্ত থাকে, এর মধ্যে ডুবে থাকে, তাহলে পড়ায় ব্যাঘাত ঘটবে না। আমার একটি অনুসন্ধিৎসু মন আছে যা সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম জিনিসগুলিকে ধরার চেষ্টা করছে। তাহলে আমার জন্য অনলাইন হোক কিংবা অফলাইন, আমি যদি মনে করি কোনও পার্থক্য থাকবে না। সেজন্য আমদের জন্য যেভাবে যুগ পরিবর্তিত হয়, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেভাবে মাধ্যমও বদলাতে থাকে। এখন আগেকার সময়ের মতো যখন গুরুকুল চলত, কয়েক শতাব্দী আগে। এমনকি ৭০ বছর আগে অনেক জায়গায় প্রিন্টিং পেপারও ছিল না। সেই সময় কোনও বইও ছিল না। সব মুখস্থ করে রাখতে হত। সেজন্য তাঁদের শ্রবণশক্তি এত তীক্ষ্ণ থাকত যে তাঁরা শুনলেই মুখস্থ করে নিতে পারতেন। আর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে শ্রুতির মাধ্যমে শিখে জ্ঞান সঞ্চারিত হত। তারপর যুগ বদলে গেল। প্রিন্টেড ম্যাটেরিয়াল চলে এল, বই চলে এল, মানুষ তাঁদের ভাবনা-চিন্তা সেখানে লিপিবদ্ধ করলেন। এই বিবর্তন ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। এটা এবং এটাই তো মানব জীবনের বৈশিষ্ট্য। মানুষ তো সেই অভিযোজনেরই একটি অংশ। আমরা আজ ডিজিটাল গ্যাজেটের মাধ্যমে নতুন টেকনলজিক্যাল পুল বা প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত সহজভাবে অনেক তথ্য ও জ্ঞান পেতে পারি, আর অত্যন্ত ব্যাপক রূপে পেতে পারি। এটিকে আমাদের একটি ‘অপরচুনিটি’ বা সুন্দর সুযোগ বলে মেনে নেওয়া উচিৎ। একে আমাদের কোনও সমস্যা বলে মনে করা উচিৎ নয়। কিন্তু এটাও সত্যি যে কখনও আমাদের মনে একটা চেষ্টা থাকা উচিৎ যাতে আমরা আমাদের অনলাইন পড়াশোনাকে জীবনে একটি আশীর্বাদ রূপে গ্রহণ করি এবং আমাদের প্রতিদিনকার টাইমটেবিলে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এটা আপনারা পারবেন। মনে করুন, আপনারা শিক্ষকদের থেকে পাওয়া নোটস এবং স্ট্যান্ডার্ড স্টাডি ম্যাটেরিয়াল কোথাও অনলাইনে পেয়ে গেলেন। দুটোকেই আপনারা ভালোভাবে পড়ুন। তাহলে দেখবেন যে অনেক ‘ভ্যালু অ্যাডিশন’, অনেক মূল্য সংযোজন করতে পারবেন। আপনারা হয়তো বলবেন, হ্যাঁ, যতটা শিক্ষক বলেছিলেন, আমার ততটা তো মনে আছেই, কিন্তু এখানে দুটি আরও নতুন তথ্য পেয়ে গেলাম। সুন্দরভাবে পেয়ে গেলাম। আমি এই দুটিকে জুড়ে নেব! তাহলে দেখবেন এই জুড়ে নেওয়াটাই আপনার শক্তিকে অনেক বাড়িয়ে দেবে। অনলাইনের দ্বিতীয় লাভ হল এটি অবশেষে শিক্ষার একটি অংশ হয়ে উঠেছে। জ্ঞান অর্জন করা এখন অনলাইন এবং অফলাইন - উভয় মাধ্যমেই সম্ভব। কাজেই কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে? আমি মনে করি, অনলাইন খুঁজে পাওয়ার জন্য এবং অফলাইন তৈরি হওয়ার জন্য, নিজেদের তৈরি করার জন্য। আমি কতটা জ্ঞান পাব, কতটা জ্ঞান অর্জন করব, অনলাইনে গিয়ে বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে জ্ঞান অর্জন করব, যতটা পাব ততটা জানব, আমি নিজের মোবাইল ফোনে কিংবা আমার আইপ্যাডে সেসব তথ্য সংরক্ষণ করে রাখব। তারপর তা আমার প্রস্তুতিতে বা পরীক্ষার সময় উত্তরপত্রে রাখব। অফলাইন থেকে আমরা যা কিছু পাব, সেগুলি দিয়ে আমাদের জ্ঞানকে অঙ্কুরিত হওয়ার সুযোগ দেব। আমরা অফলাইনে দুটো জিনিস মেনে চলব। এখানে দক্ষিণ ভারতের কয়েকজন বন্ধু আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, অবশেষে ‘ভনক্কম, কম’ দিয়ে কথা শেষ হয়েছে। শিক্ষক মহাশয়ের প্রশ্নের উত্তরে আমি একথা বলব যে আপনি মায়ের কাছ থেকে কিভাবে অনলাইনে ধোসা বানানো জানতে পারেন, এতে কী কী উপাদান দিতে হবে, এর প্রক্রিয়া কী? - সব অনলাইনে দেখে নিলেন। কিন্তু তাতে কি পেট ভরবে? কম্পিউটারে খুব ভালো ধোসা বানিয়ে নিলেন। সমস্ত উপাদান ব্যবহার করলেন। তাহলে কি ভরবে? কিন্তু সেই জ্ঞান যদি আপনি নিজের রান্নাঘরে প্রয়োগ করে ধোসা তৈরি করতে পারেন, তাহলে পেট ভরবে কি ভরবে না! সেজন্য আপনারা অনলাইনে নিজের ভিত্তি শক্ত করার জন্য ব্যবহার করুন, আর অফলাইনে গিয়ে সেই জ্ঞানকে নিজের জীবনে প্রয়োগ করুন। শিক্ষার ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য। আগে আপনাদের বইয়ে যা কিছু রয়েছে, আপনাদের শিক্ষকরা যা শেখাচ্ছেন, আপনারা চারপাশ থেকে যা শিখছেন, অত্যন্ত সীমিত অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের জন্য যা যা করছেন তা করে যান। কিন্তু আজ সম্পদ অসীমিত। সেজন্য আপনারা নিজেদের মধ্যে কতটা ব্যাপকতা বাড়াতে পারবেন, নিজেকে কতটা বিস্তারিত করতে পারবেন, সে চেষ্টা করুন। যতটা পারবেন, তত কিছুই আপনার মধ্যে অভিযোজিত হতে থাকবে, আর এক্ষেত্রে অনলাইনে একটি সুযোগ হিসেবে নিন। কিন্তু যদি এদিক ওদিক ঘোরার কাজ করেন, তাহলে এক্ষেত্রেও অনেক টুল রয়েছে। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, আপনাদের প্রত্যেক গ্যাজেটে টুল রয়েছে যেগুলি আপনাদেরকে নানা ইনস্ট্রাকশন দেয়। কোনটা আবার বোরও করে তোলে। বলে এটা করো, এটা করো না, এখন থামো, একটু সময় আরাম করো, আবার ১৫ মিনিট পরে আসো। সেও আরও ১৫ মিনিট পরে আসবে। আপনারা এ ধরনের টুল ব্যবহার করলে নিজেদেরকে ডিসিপ্লিন বা নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে নিয়ে আসতে পারবেন। আমি দেখেছি, অনেক ছেলে-মেয়েরা থাকে যারা এই অনলাইন টুলসগুলির যথাসম্ভব ব্যবহার করে, নিজেদেরকে সংযতও রাখে। দ্বিতীয়ত, জীবনে নিজের সঙ্গেও যুক্ত হওয়া ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। যতটা আপডেটের মধ্যে ঢুকে আনন্দ পাওয়া যায়, যতটা মোবাইল ফোনের মধ্যে ঢুকে মজা পাওয়া যায়, তার চাইতে হাজার গুণ আনন্দ নিজের মধ্যে ঢুকলেও পাওয়া যায়। তাহলে সারাদিনে কিছু এমন মুহূর্ত বের করে আনুন যখন আপনারা অনলাইনেও থাকবেন না, অফলাইনেও থাকবেন না, শুধু ইনারলাইনে থাকবেন, মনের মধ্যে থাকবেন। যতটা মনের গভীরে যাবেন, তত বেশি আপনারা সেই প্রাণশক্তিকে অনুভব করতে পারবেন। যদি এই জিনিসগুলি করে নিতে পারেন, তাহলে আমার মনে হয় না যে এই সমস্ত সঙ্কট আপনাদের জন্য কোনও সমস্যা সৃষ্টি করবে।
সঞ্চালিকা২ : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, আপনি আমাদের মূলমন্ত্র দিয়েছেন যে যখন আমরা একাগ্র হয়ে নিজেদের পড়াশোনা করব, তখন আমরা অবশ্যই সাফল্য পাব। ধন্যবাদ মহোদয়! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, বৈদিক সভ্যতা এবং সিন্ধু সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র হরিয়ানার পানিপথ থেকে একজন শিক্ষিকা মাননীয় সুমন রানি আপনার সামনে একটা প্রশ্ন রাখতে চান। মাননীয় সুমন রানি মহোদয়া অনুগ্রহ করে নিজের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন!
সুমন রানি : নমস্কার প্রধানমন্ত্রী মহোদয়জি! আমি পানিপথের ডিএভি পুলিশ পাবলিক স্কুলের সোশ্যাল সায়েন্সের শিক্ষিকা বলছি। স্যার আপনার প্রতি আমার প্রশ্ন হল, নতুন শিক্ষানীতি ছাত্রছাত্রীদের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিভাবে সুযোগ গড়ে তুলবে? ধন্যবাদ মহোদয়।
সঞ্চালিকা২ : ধন্যবাদ ম্যাম! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি ‘প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড’ নামে প্রসিদ্ধ মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলস-এর নবম শ্রেণীর ছাত্রী শীলা বৈষ্ণবীও আপনার কাছে এই বিষয়ে প্রশ্ন করতে চায়। শীলা অনুগ্রহ করে নিজের প্রশ্ন রাখুন।
শীলা বৈষ্ণব : গুড মর্নিং স্যার! আমি মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলস-এর জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজির প্রতি আমার প্রশ্ন হল, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি কিভাবে নতুন ভারতের সমাজ ও ছাত্রছাত্রীদের ক্ষমতায়িত করবে? ধন্যবাদ স্যার!
সঞ্চালিকা২ : থ্যাঙ্ক ইউ শীলা! শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীজি, নতুন শিক্ষানীতির কথা মাথায় রেখে এ ধরনের আরও অনেক প্রশ্ন সারা দেশ থেকে এসেছে, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা একথা জানতে চেয়েছে যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের রুচি বা ইচ্ছে একরকম হয় আর স্কুল-কলেজে অন্য রকম বিষয় পড়তে হয়। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা কী করব? অনুগ্রহ করে পথ দেখিয়ে কৃতার্থ করুন স্যার!
প্রধানমন্ত্রী : অত্যন্ত কঠিন প্রশ্ন করেছেন। এত কম সময়ে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জবাব দেওয়া আরও কঠিন। প্রথম কথা হল, এই নতুন শিক্ষানীতির বদলে আমরা এটা বলব যে এটি জাতীয় শিক্ষানীতিও। এনইপি। কিছু মানুষ ‘এন’কে ‘নিউ’ বলে। বাস্তবে এটি ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি, আর আমার খুব ভালো লেগেছে যে আপনি এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন। সম্ভবত, বিশ্বে শিক্ষার নীতি নির্ধারণে এত মানুষের অংশীদারিত্ব হয়তো আগে ছিল না, এত স্তরে এটি নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে, আর প্রায় সমস্ত আলোচনা থেকে পাওয়া এত এত কিছু এতে যুক্ত হয়েছে, সেগুলি থেকে এমন কিছু ফল পেয়েছি যা নিজেই একটি অনেক বড় বিশ্ব রেকর্ড। ২০১৪ থেকে যখন আমি এই কাজের জন্য আপনাদের সবার কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, তখন শুরুতেই এই কাজ আমি করতে শুরু করেছিলাম। প্রায় ছয় বছর ধরে অনেক ‘ব্রেন স্টর্মিং’ হয়েছে, অনেক স্তরে হয়েছে, গ্রামের শিক্ষকদের মধ্যে হয়েছে, গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হয়েছে, শহরের শিক্ষকদের মধ্যে হয়েছে, শহরের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হয়েছে, ছাত্ররাও বলেছে, ছাত্রীরাও বলেছে, দূরদুরান্তের পাহাড়ে, অরণ্যে, অর্থাৎ ভারতের প্রত্যেক কোণা থেকে এই বিষয়ে ‘ব্রেন স্টর্মিং’ হয়েছে। এসব কিছু এক্ষুনি তৈরি করা হয়েছে এমন নয়! দেশের অনেক বড় বড় বিদ্বান ব্যক্তি, যাঁরা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, এরকম মানুষদের নেতৃত্বে আজকের যুগের কথা মাথায় রেখে বিশেষ আলাপ-আলোচনা, চর্চা হয়েছে। তা থেকে একটি খসড়া তৈরি হয়েছে। সেই খসড়াকে আবার জনগণের কাছে পাঠানো হয়েছে আর সারা দেশ থেকে ১৫-২০ লক্ষ মানুষের ইনপুট এসেছে। অর্থাৎ, এত বড় এক্সারসাইজ, এত ব্যাপক এক্সারসাইজ, তারপরই জাতীয় শিক্ষানীতি এসেছে, আর এই শিক্ষানীতিকে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে আমি দেখেছি যে অনেক রাজনৈতিক দল, সরকার কিছু করলেই কোথাও না কোথা থেকে বিরোধিতার স্বর নিয়ে উঠে আসে। সব সময়েই কিছু না কিছু হওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। কিন্তু আজ আমার জন্য অত্যন্ত খুশির দিন যে, ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি বা জাতীয় শিক্ষানীতিকে ভারতের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষ হাত জোড় করে স্বাগত জানিয়েছেন। সেজন্য নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরির কাজ যাঁরা যেভাবে করেছেন, প্রত্যেকেই অভিনন্দনের পাত্র। লক্ষ লক্ষ মানুষ আজকের যুগের কথা মাথায় রেখে এটি তৈরি করেছেন। এটি সরকার তৈরি করেনি, দেশের নাগরিকরা তৈরি করেছেন, দেশের ছাত্রছাত্রীরা তৈরি করেছে, দেশের শিক্ষকরা তৈরি করেছে আর দেশের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করেছে। এখন একটি ক্ষুদ্র বিষয়ের কথা বলব। আগে আমাদের দেশে খেলাধূলাকে ‘এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি’ বলে মনে করা হত। আপনাদের যারা পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণীতে পড়েছেন তারা অবশ্যই জানেন যে আজ নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে ক্রীড়াকে শিক্ষার মূল অঙ্গ করে তোলা হয়েছে। অর্থাৎ, খেলা ও খেলার মাধ্যমে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর প্রস্ফুটিত হওয়া আজ অত্যন্ত অনিবার্য। ভালোভাবে না খেললে কেউ সুন্দরভাবে প্রস্ফুটিত হতে পারে না। আপনারা যদি ভালোভাবে প্রস্ফুটিত হতে চান, যদি সুন্দরভাবে বিকাশিত হতে চান, তাহলে ক্রীড়াকে নিজেদের জীবনের অঙ্গ করে তুলতে হবে, এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভালোভাবে খেললে মানুষের মধ্যে ‘টিম স্পিরিট’ আসে, সাহস আসে। নিজের প্রতিযোগীকে অনুধাবন করার, প্রতিযোগীকে বুঝতে পারার শক্তি আসে। এই সমস্ত বিষয় বইয়ের মধ্যে থেকে যতটা শিখতে পারবেন, খেলার মাঠে তার থেকে দ্রুত এবং আরও সহজভাবে শিখতে পারবেন। কিন্তু এই ক্রীড়া আগে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে ছিল। ‘এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি’ ছিল। একে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে আমরা মূল বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। এখন আপনারা দেখবেন যে পরিবর্তন আসবেই এবং আজকাল সারা দেশে ক্রীড়ার প্রতি আগ্রহ যেভাবে বাড়ছে, এর ফলেও এই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। কিন্তু একটি এমন কথা বলব যা নিয়ে আপনারা যদি খেয়াল করেন, বুঝতে পারবেন। বলতে গেলে তো অনেক কথাই বলতে হয়। তেমনই একটি প্রশ্ন হল, আমরা কি বিংশ শতাব্দীর নীতিগুলি নিয়ে একবিংশ শতাব্দী নির্মাণ করতে পারি? এটি আমি আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করছি। বিংশ শতাব্দীর ভাবনা, বিংশ শতাব্দীর ব্যবস্থা, বিংশ শতাব্দীর নীতি – এগুলি নিয়ে আমরা কি একবিংশ শতাব্দীতে এগিয়ে যেতে পারি? একটু জোরে বলুন না!
সঞ্চালিকা ১,২,৩ এবং ছাত্রছাত্রীরা সমস্বরে : না স্যার!
প্রধানমন্ত্রী : এগোতে পারি না, তাই তো? আমাদের নিজেদের সমস্ত ব্যবস্থাকে, সমস্ত নীতিকে একবিংশ শতাব্দীর অনুকূল করে তুলতে হবে, বদলাতে হবে। যদি আমরা নিজেদেরকে ঠিকমতো ‘ইনভল্ভ’ না করি, যদি আমরা থেমে থাকি, তাহলে কী হবে? আমরা যদি থেমে থাকি তখন এমনটা নয় যে আমরা পিছিয়ে পড়ব, কিন্তু সেই সময়ে যতটা যাওয়া উচিৎ ছিল, তার থেকে কম গেলে দেশের লোকসান হয়। কিন্তু এখন যখন আমরা পৌঁছে গিয়েছি, এখন যেমন আমরা দেখছি যে কখনও কখনও বাবা-মায়ের ইচ্ছার কারণে, তাঁদের সম্পদের কারণে, কাছাকাছি ব্যবস্থা থাকার ফলে আমরা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষালাভের জন্য এগিয়ে যেতে পারি না, আর সমস্ত চাপের কারণে আর প্রতিষ্ঠার কারণে একটি আলপথে হেঁটে যেতে বাধ্য হই, ভাবতে বাধ্য হই যে, আমরা ডাক্তার হবো! কিন্তু আমাদের শরীরের যে ‘বেসিক ইন্সটিংক্ট’ সেটি হয়তো তখন ভিন্ন কিছু। আমাদের কারও হয়তো ‘ওয়াইল্ড লাইফ’ বা বন্য জীবনে নিয়ে বেশি আগ্রহ, আবার কারোর হয়তো চিত্রশিল্পের প্রতি আগ্রহ, অন্য কারও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ, আবার কেউ বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী, কারোর গবেষণায় আগ্রহ। এখন সেসব আগ্রহ ছেড়ে কেউ চলে গেল ডাক্তারি পড়তে। শুরুতে তো বাড়ির চাপে গেল, কিন্তু তারপর সেই পাইপলাইনেই ঢুকে গেল। পাইপলাইনে ঢুকলে কী হয়? একদিক থেকে ঢোকা তো যায়, কিন্তু মাঝখান থেকে বেরোনো যায় না। বেরোতে হয় সেই শেষ প্রান্ত দিয়েই। এখন নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে একথা বলে দেওয়া হয়েছে যে, এটা জরুরি নয় যে, আপনারা যে পাইপলাইনে ঢুকে পড়েছেন সেটাকেই পেশা করতে হবে! এক বছর, দু’বছর পরে আপনার মনে হতেই পারে যে ভাই, এটা নয়, এটা আমার পথই নয়। আমার পথ তো ওইটা। আমি সেখানে যেতে চাই। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী এই নতুন ভাবনাকে, নতুন ইচ্ছাশক্তিকে নতুন পথে নিয়ে যাওয়ার সম্মান দেওয়ার পাশাপাশি অনেক সুযোগ খুলে দেয়। আজ আমরা জানি যে গোটা বিশ্বে ক্রীড়ার গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। শুধুই শিক্ষা, শুধুই জ্ঞানের ভাণ্ডার হয়ে ওঠা আজ যথেষ্ট নয়। সঙ্গে দক্ষতাও চাই, স্কিল চাই ভাই! এখন একে আমরা সিলেবাসের অংশ করে তুলেছি, যাতে এর পূর্ণ বিকাশের জন্য তাঁরা নিজেদের এক সময় আধিকারিক হিসেবে পান। আমি আজ অত্যন্ত আনন্দিত, আমি আজ একটি প্রদর্শনী দেখে এসেছি। নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির প্রতিফলন কেমন হয় তা একটি অত্যন্ত ছোট রূপে আজ শিক্ষা বিভাগের কর্মীরা তুলে ধরেছেন। আমি শিক্ষা বিভাগের আধিকারিক ও কর্মীদের অভিনন্দন জানাই। তাঁদের এই প্রদর্শনী অত্যন্ত কার্যকর ছিল। আমার এটা দেখে খুব আনন্দ হয়েছে যে আমাদের অষ্টম থেকে দশম শ্রেণীর ছেলে-মেয়েরা থ্রি-ডি প্রিন্টার তৈরি করছে। এটা দেখেও আনন্দ হচ্ছিল যে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণীর ছেলে-মেয়েরা বৈদিক ম্যাথামেটিক্সের অ্যাপ চালাচ্ছে, আর সারা পৃথিবী থেকে ছাত্রছাত্রীরা সেই অ্যাপের মাধ্যমে বৈদিক ম্যাথামেটিক্স বা গণিত শিখছে। নন্দিতা আর নিবেদিতা নামে দুই বোনের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমি তাঁদের দেখে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়েছি। আমাদের দেশে এ ধরনের বিষয়কে খারাপ বলে মনে করেন, এরকম এক শ্রেণীর মানুষও আছেন। কিন্তু, ওই দুই বোন সারা পৃথিবী থেকে নিজেদের ছাত্রছাত্রী খুঁজে নিয়েছেন। তাঁরা নিজেরাই তো ছাত্রী। কিন্তু ইতিমধ্যেই গুরু হয়ে উঠেছেন। এখন দেখুন, তাঁরা কিভাবে প্রযুক্তিকে অসাধারণভাবে ব্যবহার করেছেন। প্রযুক্তি দেখে তাঁরা ভয় পাননি। তাঁরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেছেন। তেমনই আমি দেখেছি, কয়েকজন ছাত্রছাত্রী কিছু ভাস্কর্য তৈরি করেছেন, কিছু ভালো ভালো পেইন্টিং তৈরি করেছেন। শুধু তাই নয়, সেগুলির মধ্যে একটি আশ্চর্য দূরদৃষ্টি ছিল। নিছকই কাজ করার জন্য কোনও কাজ তাঁরা করেননি। আমি তাঁদের কাজে দূরদৃষ্টি অনুভব করছিলাম। এর মানে হল যে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য অনেক সুযোগ তৈরি করছে, আর এর অর্থ আমি বলব যে, আমরা যতটা সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্মভাবে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিকে বুঝব, আর প্রত্যক্ষভাবে একে বাস্তবায়িত করতে পারব, আপনারা দেখবেন ‘মাল্টিপল বেনিফিটস’ বা অনেক বহুমুখী লাভ আপনাদের সামনে দেখতে পাবেন। সেজন্য আমার সারা দেশের শিক্ষকদের প্রতি, দেশের সমস্ত শিক্ষাবিদদের প্রতি, সারা দেশের স্কুলগুলির প্রতি অনুরোধ যে আপনারা এই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির খুঁটিনাটিকে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্মভাবে বাস্তবায়িত করার জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি গড়ে তুলুন আর এতে যত বেশি পদ্ধতি তৈরি হবে, তত বেশি সুযোগও তৈরি হবে। আপনাদের সবাইকে আমার অনেক শুভকামনা।
সঞ্চালিকা ২: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, এখন আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ী যে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য শিক্ষার অর্থকে পুনর্সংজ্ঞায়িত করবে আর আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে তুলবে। আমরা নিয়মিত খেলতে পারলে অবশ্যই প্রস্ফুটিত হব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, গাজিয়াবাদ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনের রাজকীয় কন্যা ইন্টার-কলেজের ছাত্রী রোশনি আপনার কাছ থেকে কয়েকটি বিষয়ে কিছু সাহায্য এবং পরামর্শ চায়। রোশনি আপনি আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।
রোশনি : নমস্কার মহোদয়! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি আমি রোশনি, উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের বিজয়নগরে অবস্থিত রাজকীয় কন্যা ইন্টার-কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। মান্যবর, আমার প্রশ্ন হল যে আমি জানতে চাই, ছাত্রছাত্রীরা কি পরীক্ষাকে বেশি ভয় পায়, নাকি নিজের মা-বাবা ও শিক্ষকদেরকে। আমাদের কি পরীক্ষাকে সিরিয়াসলি নেওয়া উচিৎ যেমনটি আমাদের বাবা-মা কিংবা আমাদের শিক্ষকরা আমাদের থেকে প্রত্যাশা করেন, নাকি পরীক্ষাকে আমরা উৎসবের মতো উদযাপন করব, আনন্দ নেব। অনুগ্রহ করে আমাদের পথ দেখান। ধন্যবাদ!
সঞ্চালিকা২ : ধন্যবাদ রোশনি। পঞ্চনদীর এলাকা, গুরুদের ভূমি, সমৃদ্ধ রাজ্য, পাঞ্জাবের ভাটিন্ডা থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রী কিরণপ্রীত প্রায় একই ধরনের বিষয় নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করতে চায়। কিরণপ্রীত, অনুগ্রহ করে নিজের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।
কিরণপ্রীত : সুপ্রভাত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়! আমার নাম কিরণপ্রীত। আমি পাঞ্জাবের ভাটিন্ডা জেলার কল্যাণসুখ অঞ্চলে অবস্থিত ব্লুম পাবলিক সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। আপনাকে আমার প্রশ্ন, যদি আমার ফল ভালো না হয় তাহলে আমি কিভাবে আমার পরিবারের হতাশা মেটাব? আমার বাবা-মায়ের প্রতি কোনরকম নেতিবাচক মনোভাব নেই কারণ আমি জানি তাঁরা আমার থেকেও বেশি করে নিশ্চয়তা চান। ধন্যবাদ স্যার। আমাকে পথ দেখান।
সঞ্চালিকা২ : ধন্যবাদ কিরণপ্রীত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আমাদের অনেকের মতোই রোশনি এবং কিরণপ্রীত, তাঁদের বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জের কিভাবে মুখোমুখি হবে তা নিয়ে ভাবছে। এ বিষয়ে আমরা আপনার পরামর্শ চাই। মাননীয় মহোদয়।
প্রধানমন্ত্রী : রোশনি আপনি যখন প্রশ্নটা করলেন তখন সবচাইতে বেশি হাততালি পড়েছে। এর কারণ কী? আমার মনে হয়, আপনি এই প্রশ্ন ছাত্রছাত্রীদের জন্য জিজ্ঞাসা করেননি, আপনি অত্যন্ত চালাকি করে বাবা-মা এবং শিক্ষকদের জন্য প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করেছেন। আমার মনে হয়, আপনি এটাও চাইছেন যে আমি এখান থেকে প্রত্যেক বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এমন কিছু বলি যা আপনাদেরও কাজে লাগে। এর মানে হল, আপনাদের ওপর চাপ আছে শিক্ষকদের, আপনাদের ওপর চাপ আছে মা-বাবার, আর সেজন্যই আপনারা অনেক সমস্যার মুখোমুখি। আপনারা ভেবে পাচ্ছেন না যে আপনারা নিজেদের জন্য কিছু করবেন, নাকি তাঁরা বললেই কিছু করবেন! এখন তাঁদেরকেও বোঝাতে পারছেন না আর নিজেরটাও ছাড়তে পারছেন না। আপনাদের এই দ্বিধা, দ্বন্দ্ব আমি অনুভব করছি। আমি সবার আগে বাবা-মা এবং শিক্ষকদের এটা অবশ্যই বলতে চাইব যে, আপনারা অনুগ্রহ করে নিজেদের মনে যেসব স্বপ্ন নিয়ে বাঁচেন, কিংবা আপনাদের নিজেদের যেসব স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গেছে যেগুলি আপনারা করতে চাইতেন, পেতে চাইতেন, নিজেদের ছাত্র জীবনে, আপনাদের কর্মজীবনে যা করতে চাইতেন, যা করতে পারেননি আর সেজন্য দিন-রাত আপনাদের মনে হয় যে এখন আমার সন্তান-সন্ততিকে তো এটা বানিয়েই ছাড়ব। অর্থাৎ, আপনারা নিজেদের মনের ইচ্ছেকে, নিজেদের স্বপ্নকে, নিজেদের প্রত্যাশা আকাঙ্ক্ষাকে নিজেদের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এক প্রকার ‘ইনজেক্ট’ করার চেষ্টা করেন। বাচ্চারা আপনাদের রেসপেক্ট করে, সম্মান করে। বাবা-মায়ের বক্তব্যকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। অন্যদিকে শিক্ষকরা বলেন, দেখো, তোমাকে এটা করতে হবে এটা করো। আমাদের স্কুলে তো এমনটা হয়ে থাকে, আমাদের তো এই পরম্পরা। তাঁরা ছেলে-মেয়েদের মনকে উৎসাহিত করেন এবং আমাদের অধিকাংশ ছেলে-মেয়েদের বিকাশের সময় অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তও করেন। দ্বিধা, দ্বন্দ্ব ও সমবেদনার নানা প্রভাবের মধ্য দিয়ে তাঁদেরকে এগিয়ে যেতে হয়। এটা তাঁদের জন্য কখনও কখনও অত্যন্ত চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে, আর সেজন্যই আগেকার দিনে শিক্ষক বা গুরুদের সঙ্গে পরিবারের নিয়মিত সম্পর্ক থাকত। পরিবারের প্রত্যেক মানুষ শিক্ষকদের জানতেন আর পরিবারের প্রত্যেকেই তাঁদের ছেলে-মেয়েদের জন্য কী ভাবছেন, সে সম্পর্কে শিক্ষকরাও অবহিত থাকতেন। শিক্ষকরা কী করেন, কিভাবে করেন, সে সম্পর্কেও অভিভাবক-অভিভাবিকারা অবহিত থাকতেন। শিক্ষার প্রক্রিয়া, তা সে বিদ্যালয় হোক কিংবা বাড়ি, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক-অভিভাবিকা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রত্যেকেই একটি প্ল্যাটফর্মে থাকতেন। সেজন্য বোঝাপড়া ভালো ছিল। কিন্তু আজ পরিস্থিতি কেমন? ছাত্রছাত্রীরা সারা দিন কী করে তা সম্পর্কে মা-বাবার জানার সময় নেই। তাঁরা জানেন না। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তো সিলেবাস শেষ করার দিকে নজর। সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম নিয়েই তাঁদের যত কাজ। আমার সিলেবাস সম্পূর্ণ হয়ে গেল, আমার কাজ শেষ হয়ে গেল। আমি খুব ভালোভাবে পড়িয়েছি, খুব পরিশ্রম করে পড়িয়েছি। এমনটা নয় যে তাঁরা পড়ান না। কিন্তু তাঁদের মনে হয়, সিলেবাস শেষ করাই তাঁদের আসল দায়িত্ব। কিন্তু তাঁদের মনে হয় সিলেবাস শেষ করাই আমার দায়িত্ব। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের মনে অন্য কিছু করার ইচ্ছা থাকলে সেটা আমার দায়িত্ব নয়। এইসব কারণেই মা-বাবা থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা কিংবা বিদ্যালয়ের আবহ – সবই আমাদের ছেলে-মেয়েদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত শক্তি এবং তার সীমা, তার রুচি এবং তার প্রবৃত্তি, তার প্রত্যাশা, তার আকাঙ্ক্ষা – এই সবকিছুকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবজার্ভ করেন না, খতিয়ে দেখে না, তাদের জানা ও বোঝার চেষ্টা করে না। আমরা শুধু তাদের ধাক্কা মারতে থাকি, আর সেজন্য কোথাও না কোথাও তাঁরা টলমল হয়ে পড়ে। সেজন্য আমি রোশনির মাধ্যমে সমস্ত মা-বাবাকে, সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বলতে চাইব যে, আপনারা নিজেদের মনের আশা, আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা অনুসারে ছেলে-মেয়েদের বোঝা বাড়াবেন না। এই চেষ্টা থেকে নিজেদের দূরে রাখুন। প্রত্যেক শিশু-কিশোরের একটি নিজস্ব আভ্যন্তরীণ শক্তি থাকে। প্রত্যেক মা-বাবাকে এটা মেনে নিতে হবে যে আপনার দাড়ি-পাল্লায় সে ফিট হোক কিংবা না হোক, কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে কোনও না কোনও বিশেষ শক্তি দিয়ে পাঠিয়েছেন। তাঁর মধ্যে কোনও বিশেষ সামর্থ্য রয়েছে। সেটা যে আপনারা বুঝতে পারছেন না সেটা আপনাদের সমস্যা, সেটা আপনাদের দৌর্বল্য যে আপনারা তাঁদের সামর্থ্যকে সঠিকভাবে বুঝতে পারছেন না। আপনারা তাঁর স্বপ্নগুলি বুঝতে পারছেন না সেজন্য দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। আমি চাইব, আপনাদের ওপর যত চাপই থাকুক না কেন, আমি ছেলে-মেয়েদেরকে বলছি। আপনাদের ওপর যত চাপই থাকুক না কেন, আমি বলব না যে মা-বাবার কথা শুনবেন না, আমি বলব না যে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথা শুনবেন না। এই পরামর্শ দেওয়া ঠিক হবে না। তাঁদের কথা তো শুনতে হবেই। তাঁরা যে কথা বলছেন, সেটা বুঝতে হবে। কিন্তু আমাদের সেই জিনিসগুলিকেই স্বীকার করতে হবে, যা আমরা নিজেদের ভেতরে অত্যন্ত সহজ রূপে অনুভব করি। যেমন পৃথিবীকে আপাতঃভাবে নির্জীব বলে মনে হয়। কিন্তু একজন একটি বীজ বপন করলে কিছুই বেরোয় না। আবার সেই মাটিতেই যখন আরেকজন বীজ বপন করেন, তখন তা থেকে কিছু অঙ্কুরিত হয়ে বেরিয়ে আসে, আর তা থেকে বড় বটবৃক্ষও তৈরি হয়ে যেতে পারে। তার মানে সমস্যা ওই মাটির নয়, কে কিভাবে কোন বীজ বপন করছে তার ওপর নির্ভর করছে। আপনারা জানেন, কোন জিনিসটা আপনারা সহজেই মানিয়ে নিতে পারবেন, খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন, কোন জিনিসটা আপনাদের মনের সঙ্গে একদম মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, আর তা সম্বল করে আপনারা এগিয়ে যেতে পারেন। আপনারা যদি প্রাণপণে সেদিকেই এগিয়ে যান, তাহলে দেখবেন কখনই পড়াশোনাকে বোঝা বলে মনে হবে না, চাপ অনুভব করবেন না। শুরুতে হয়তো কিছুটা সমস্যা হবে, বাধা-বিপত্তি আসবে, কিন্তু তারপর পরিবারের সবাই আপনাকে নিয়ে গর্ব করতে শুরু করবে। হ্যাঁ, আমরা তো ভাবছিলামই! ও তো খুবই ভালো করেছে। আজ তো আমাদের নাম উজ্জ্বল করে দিয়েছে। চারজন মানুষের মধ্যে বৈঠকে বসলে তখন তাঁরা এ ধরনের প্রশংসা করবেন। যাঁরা গতকাল পর্যন্ত আপনাদের শক্তিকে স্বীকার করেননি, তাঁরাই আগামীদিনে আপনার শক্তির গৌরবগান করবেন, আপনার পরিশ্রমের ক্ষমতা দেখে গর্বিত হতে শুরু করবেন। সেজন্যই আপনারা হেসে, খেলে, উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে যতটা ন্যূনতম পড়াশোনা করতে হয়, পরিশ্রম করতে হয়, তা করে অতিরিক্ত যে সামর্থ্য আছে তাকে যুক্ত করে যদি এগিয়ে যেতে পারেন তাহলে আপনাদের খুবই লাভ হবে।
সঞ্চালিকা ৩ : শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আপনি অভিভাবক এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আশা ও প্রত্যাশার মাঝে ছেলে-মেয়েদের রুচি এবং আকাঙ্ক্ষাগুলি পূরণে নতুন শক্তি প্রদান করেন। আপনাকে কোটি কোটি ধন্যবাদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, এখন সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ধনী মহানগরী দিল্লির কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় জনকপুরীর দশম শ্রেণীর ছাত্র বৈভব তাঁর সমস্যা আপনার সামনে তুলে ধরতে চান এবং আপনার পরামর্শ পেতে চান। বৈভব আপনি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।
বৈভব : নমস্কার প্রধানমন্ত্রী মহোদয়! আমার নাম বৈভব কানৌজিয়া। আমি দশম শ্রেণীর ছাত্র। আমি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় জনকপুরীতে পড়ি। মহোদয়, আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হল, নিজেকে কিভাবে উজ্জীবিত রাখা যায় এবং অনেক পড়া বাকি থাকলে কিভাবে নিজেকে উদ্দীপ্ত করে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়।
সঞ্চালিকা ৩: ধন্যবাদ বৈভব! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, শুধু আমাদের ছাত্রছাত্রীরা নয়, আমাদের কয়েকজন অভিভাবকও আপনার কাছে তাঁদের সমস্যার সমাধান চান। ওড়িশার ঝাড়সুগুড়ার একজন অভিভাবক শ্রী সুজিত কুমার প্রধানজি আপনার কাছ থেকে এ বিষয়ে পথ প্রদর্শনের প্রত্যাশা রাখেন। শ্রী সুজিত প্রধানজি অনুগ্রহ করে নিজের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।
সুজিত প্রধানজি : আমার প্রিয় প্রধানমন্ত্রীজি, নমস্কার! আমার নাম সুজিত কুমার প্রধান। আমার প্রশ্ন হল, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি বা পাঠোত্তর গতিবিধি সম্পর্কে ছেলে-মেয়েদের কিভাবে প্রেরণা যোগাব? ধন্যবাদ!
সঞ্চালিকা ৩: ধন্যবাদ মহোদয়! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, স্থাপত্য এবং চিত্রকলায় সমৃদ্ধ রাজস্থানের জয়পুরের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী কোমল শর্মা আপনার কাছে তাঁর সমস্যার সমাধান চায়। কোমল অনুগ্রহ করে আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।
কোমল : নমস্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি মহোদয়! আমার নাম কোমল শর্মা। আমি জয়পুরের বগরুতে অবস্থিত রাজকীয় বালিকা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। আপনাকে আমার প্রশ্ন, আমার এক সহপাঠীর একটি পরীক্ষা ভালো হয়নি। আমি তাকে কিভাবে সান্ত্বনা দেব?
সঞ্চালিকা ৩ : ধন্যবাদ কোমল! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, কাতারের দশম শ্রেণীর ছাত্র আরেন ইপেন একই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন। আরেন আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।
আরেন : নমস্কার স্যার! আমি কাতারের দোহা শহরে অবস্থিত এম ই এস ইন্ডিয়ান স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। আমার নাম আরেন ইপেন। ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার প্রশ্ন হল, কিভাবে নিজের মন থেকে পরীক্ষার ভয় দূর করব আর কিভাবে প্রস্তুতি কম হয়েছে, সবসময়েই এমন একটা অনুভূতি থেকে বেরিয়ে আসব?
সঞ্চালিকা ৩ : ধন্যবাদ আরেন! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, একটু আগেই বৈভব, শ্রী প্রধানজি, কোমল এবং আরেন যা বললেন তা থেকে বোঝা যায় এঁরা আপনার প্রজ্ঞা থেকে উপকৃত হতে চান। তাঁরা জানতে চান কিভাবে উদ্দীপনার অভাব মেটাবেন, কিভাবে পড়াশোনার প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়াবেন। তাছাড়া ভারতের অনেক জায়গা থেকে অনেক ছাত্রছাত্রী এটাও জানতে চাইছেন যে তাঁরা কি করে সমানভাবে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজগুলি সংহতভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন। আমাদের সবাইকে পথ দেখান স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : যদি মনে করেন মোটিভেশনের কোনও ইঞ্জেকশন পাওয়া যাবে আর সেই ইঞ্জেকশন নিয়ে নিলেই মোটিভেশন বা উদ্দীপনার অ্যাস্যুরেন্স পাওয়া যাবে, কেউ যদি মনে করে এরকম কোনও ফর্মুলা পেয়ে যাবে, তাহলে আর মোটিভেশনের কোনও সমস্যা থাকবে না, তাহলে আমি মনে করি এটা অনেক বড় ভুল করছেন। সবার আগে নিজেকে অবজার্ভ করুন। এমন কী কী বিষয় রয়েছে যেখান থেকে আপনার মধ্যে নিরাশার জন্ম নেয়। সপ্তাহখানেক ধরে নিজেকে নিবিড়ভাবে দেখুন, তাহলেই বুঝতে পারবেন যে কোথা থেকে আপনার এই সমস্যার সূত্রপাত হয়। এটা দেখুন কখন আপনার মনে হয় যে আপনি কিছু করতে পারছেন না। কোন পরিস্থিতি আপনার জন্য কঠিন হয়ে ওঠে! সেজন্য নিজেকে জানাটা অত্যন্ত প্রয়োজন। নিজের হতাশা, নিরাশার সূত্রপাতকে বুঝতে পারাও অত্যন্ত প্রয়োজন। যদি একবার সেটা বুঝে নিতে পারেন, তাহলে সেই বিষয়টিকে একবার নম্বর বাক্সে ফেলুন আর তারপর বোঝার চেষ্টা করুন আপনি নিজেকে কী দিয়ে সহজভাবে উদ্দীপ্ত করতে পারছেন, মোটিভেট করতে পারছেন। এই জিনিসগুলি যদি আপনি চিহ্নিত করতে পারেন … মনে করুন, আপনি কোনও একটা ভালো গান শুনেছেন। কিন্তু শুধুই গানটি নয়, তার প্রতিটি শব্দে এমন কিছু আছে যা থেকে আপনার মনে হয় যে এটাও একটা ভাবার দৃষ্টিকোণ হতে পারে, তাহলে দেখবেন আপনি হঠাৎই নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছেন। কেউ একজন আপনাকে হয়তো বলেছিল, কিন্তু আপনি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন আর সেটা কোন বিষয় যা আপনাকে উদ্দীপ্ত করে তা আপনি বুঝে ফেলেছেন, তাহলে আপনার মনে হবে হ্যাঁ, এটা আমার জন্য খুব কাজের। কিন্তু আমি চাইব যে আপনারা স্বয়ং নিজের মধ্যের বিষয়গুলিকে অবশ্যই বিশ্লেষণ করতে থাকুন। সেক্ষেত্রে আর কারোর সাহায্যের অপেক্ষায় থাকবেন না। বারবার কাউকে গিয়ে একথা বলবেন না যে আমার মুড নেই, আমি মজা পাচ্ছি না। তাহলে আপনার মধ্যে একটি দুর্বলতার সৃষ্টি হবে আর প্রত্যেকবারই আপনি সিমপ্যাথি বা সমবেদনা পেতে চাইবেন। তারপর আপনার মনে হবে, মা আমার কাছে বসে আছে, মা একটু আমাকে আদর করুক, মাথা, পিঠ নেড়ে আদর করে দিক, আমাকে উৎসাহিত করুক, এভাবেই আমার লালন-পালন হোক। তাহলে দেখবেন সেই দুর্বলতাও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকবে। কিছুক্ষণ সময় তো খুব ভালোই লাগবে। সেজন্য কখনও এভাবে সিমপ্যাথি বা সমবেদনা পাওয়ার জন্য কিছু করবেন না, কক্ষনও করবেন না। হ্যাঁ, জীবনে কোনও একটা সমস্যা এসেছে, তা থেকে নিরাশা এসেছে, হতাশা এসেছে, তখন ভাববেন আমি নিজে অবশ্যই যাব, তার বিরুদ্ধে লড়াই করব আর আমার এই নিরাশা আমার উদাসীনতাকে আমিই শেষ করে দেব, আমিই তাকে কবরে পুঁতে দেব। আপনাদের মনে এই বিশ্বাসের জন্ম নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমরা কী কী জিনিস অবজার্ভ করি! কখনও কখনও কিছু বিষয় অবজার্ভ করলেই অনেক প্রেরণা পাওয়া যায়। এখন মনে করুন, আপনার বাড়িতে একটি তিন বছরের বাচ্চা আছে বা একটি দু’বছরের বাচ্চা আছে। সে কিছু চাইছে কিন্তু তাকে দেওয়া যাবে না। আপনি দূর থেকে দেখতে থাকুন। ও যেন পড়ে না যায়। যখন কোন কিছুর কাছে সে পৌঁছতে পারবে না, পরিশ্রান্ত হয়ে পড়বে, নিজে নিজেই থেমে যাবে। কিছুক্ষণ থেমে থাকবে, তারপর নিজে থেকেই আবার চলতে শুরু করবে, আবার চেষ্টা করবে। তাঁর এই কাজ থেকে আপনি এই জিনিসটা শিখতে পারবেন যে ঠিক আছে, এই কাজটা আমার জন্য কঠিন, কিন্তু আমি চেষ্টা ছাড়ব না। ওই বাচ্চাটাকে তো আর কোনও স্কুলে এসব পড়ানো হয়নি, এ ধরনের কোনও শিক্ষা দেওয়া হয়নি! সে এই মোটিভেশন কোথা থেকে পেল? ওই দু’বছরের বাচ্চাকে কি কোনও প্রধানমন্ত্রী উদ্দীপ্ত করতে গেছে? নাকি কোনও প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে গেছে? আরে মেরা বেটা, একটু উঠে দাঁড়াও, একটু দৌড়াও – এমনটা কি কেউ বলেছিল? বলেনি। ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটি ইনহেরেন্ট কোয়ালিটি দিয়েছেন। আমাদের প্রত্যেকের সেই আভ্যন্তরীণ শক্তি রয়েছে যা আমাদের কিছু না কিছু করার জন্য সেই চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে। ছোট শিশুদের মধ্যেও যে উদ্দীপনা জেগে ওঠে, আমরা কি কখনও সেই জিনিসগুলিকে নিবিড়ভাবে দেখেছি। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, কোনও দিব্যাঙ্গ ব্যক্তি যখন নিজের কিছু সক্রিয়তা দেখান বা চলাফেরা করেন, তখন নিজের মতো পথ খুঁজে নেন আর সেটা তিনি খুব ভালোভাবেই করেন। কিন্তু আমরা যদি ভালোভাবে অবজার্ভ করি তাহলে বুঝতে পারব যে ঈশ্বর তাঁর শরীরে এত ত্রুটি রেখেছেন কিন্তু সে হার মানেনি, সে নিজের ত্রুটিগুলিকেই শক্তিতে রূপান্তরিত করেছে আর সেই শক্তি নিজেকে তো পরিচালিত করেই, পাশাপাশি যাঁরা নিবিড়ভাবে দেখছেন, তাঁদেরকেও প্রেরণা যোগায়। আমরা যদি আমাদের চারপাশের সবকিছুকে এভাবে নিবিড়ভাবে দেখি, তার দুর্বলতাকে না দেখে সেই দুর্বলতাকে কেমন করে জয় করছে, সেই প্রক্রিয়াকে খুঁটিয়ে দেখি, আর নিজেকে তার সঙ্গে কো-রিলেট করি, তুলনামূলক বিচার করি! আমিও যদি চেষ্টা করি তাহলে আমি হয়তো এরকম করতে পারব। ঈশ্বর তো আমাকে হাত, পা সবকিছু খুব ভালোভাবে দিয়েছেন। আমার মধ্যে কোনরকম ত্রুটি নেই। আমি কেন চুপচাপ বসে থাকব? যখন এই অনুভব আপনার মনে জেগে উঠবে, তখন আপনারা নিজে থেকেই দৌড়তে শুরু করবেন। সেজন্য আমার মনে হয় আরও একটি বিষয় আপনারা ভাবুন যে আপনারা কখনও কি নিজের পরীক্ষা নেন? কখনও নিজেরও পরীক্ষা নেবেন। অন্য কেউ আপনার পরীক্ষা কেন নেবে? আমি সম্ভবত আমার লেখা ‘একজাম ওয়ারিয়র্স’ নামক যে বইটি রয়েছে, সেখানে এক জায়গায় একথা লিখেছি যে, আপনারা কখনও পরীক্ষাকেই একটি চিঠি লিখে দেবেন। হে আমার প্রিয় পরীক্ষা, … আর তারপর লিখুন যে, তুমি কী মনে কর? আমি এই বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি, আমি ওই বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি, আমি এমন পরিশ্রম করেছি, আমি এমন চেষ্টা করেছি, আমি এটা পড়েছি, আমি সেটার ওপর অনেক নোট লিখেছি, আমি শিক্ষকের সঙ্গে এত এত ঘন্টা বসেছি, আমি মায়ের সঙ্গে এতটা সময় কাটিয়েছি, আমি প্রতিবেশী অমুক ভালো ছাত্রটির সঙ্গে এতটা ভালো কাজ করেছি যে তাকে গিয়ে বলতে পারব, আরে আমি এতটা শিখে এসেছি যে, তুমি আর আমার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে পারবে না, তুমি আর আমার কোনও পরীক্ষা নিতে পারবে না। আমি এখন তোমার পরীক্ষা নেব। আমি দেখি তো তুমি আমাকে নিচে ফেলতে পার কিনা? আমি তোমাকে নিচে ফেলে দেখিয়ে দেব। কখনও এমনটা করুন! কখনও আপনার মনে হতে পারে, যে ভাই আমি এটা যে ভাবি, এটা তো ভুল। আপনারা এমনটা করুন। একবার রিপ্লে করার অভ্যাস তৈরি করুন। রিপ্লে করার অভ্যাস তৈরি করলে আপনারা একটি নতুন দৃষ্টি পাবেন। যেমন মনে করুন, ক্লাসে কিছু শিখে এসেছেন। আপনার তিন-চারজন বন্ধু আছে, তাদের সঙ্গে বসে আপনি যে জিনিসটি শিখেছেন, আপনি শিক্ষক হয়ে আপনার তিনজন বন্ধুকে শেখান। তারপর দ্বিতীয় বন্ধু এবং তৃতীয় বন্ধুও যে বিষয়টা ভালো মতো শিখে এসেছে তারা বোঝাবে। অর্থাৎ, যে যতটা পেয়েছেন, সেটাই পরিবেশন করুন। এটা করতে গিয়ে প্রত্যেকেই টের পাবেন যে অমুক এই বিন্দু পর্যন্ত বুঝতে পেরেছে যেটা আমার বাদ পড়েছিল। তমুক এই পয়েন্টকে খুব ভালোভাবে ধরেছে যেটা আমার বাদ পড়েছিল। চারজন ছাত্রছাত্রী যখন সেই বিষয়টিকে রিপ্লে করবে, আপনিও যখন রিপ্লে করবেন কোনও বই ছাড়া, কিচ্ছু সঙ্গে রাখবেন না। যতটা মনে আছে সেটা নিয়ে বলুন, লিখুন। এখন দেখুন সেই লেখাটা আপনার নিজের হয়ে উঠবে। আপনি বিষয়গুলিকে হয়তো ভালোভাবে দেখেছেন। যখনই কোনও ঘটনা ঘটেছে, বড় বড় রাজনৈতিক নেতাকে পৌঁছে যেতে দেখেছেন, বলতে শুনেছেন, সংবাদমাধ্যমের লোকেরা, টিভির সাংবাদিকদেরকে বুম নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখেছেন, সেই নেতাকে বিষয়ের বাইরে অনেক কথা বলতে শুনেছেন। রাজনৈতিক নেতাদের অনেক সময়েই বিষয়ের বাইরেও বলতে হয়। অনেককে তো পেছন থেকে প্রম্পটিং করতে হয়। এটাও হয়তো আপনারা দেখেছেন। কিন্তু একজন গ্রামের মহিলাকে যদি ওই দুর্ঘটনার পর টিভির লোকেরা জিজ্ঞাসা করেন, সেই মহিলা হয়তো টিভি কি সেটাই জানেন না, তাঁকেই যদি জিজ্ঞাসা করেন, আপনারা দেখবেন তিনি কতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পুরো ঘটনা বর্ণনা করে দিয়েছেন। কিভাবে হয়েছে, তারপর কী হয়েছে, অমুকটা এমন, তমুকটা তেমন। অর্থাৎ, নিখুঁতভাবে পুরো ঘটনা বলে দেবেন। কেন? কিভাবে? কারণ তিনি যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন, সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি আত্মসাৎ করে নিয়েছেন, আর সেজন্যই তিনি অত্যন্ত সহজেই রিপ্লে করে দিয়েছেন। সেজন্যই আমি মনে করি, আপনারা নিজেদের মধ্যে খোলা মনে এই বিষয়গুলিকে জুড়তে থাকুন, তাহলে সমাজও কখনও আপনাদের দরজায় নিরাশার রূপ নিয়ে কড়া নাড়বে না।
সঞ্চালিকা ২: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আমাদেরকে ভাবা, দেখা এবং বিশ্বাস করার মন্ত্র দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। যাই হোক না কেন, সেই প্রতিকূলতা যতই বিশাল হোক না কেন, আমরা আপনাদেরকে অ্যাসিওর করছি যে আমরা কখনও হাল ছাড়ব না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি আপনি কলা, সংস্কৃতি এবং পরম্পরার জন্য প্রসিদ্ধ তেলেঙ্গানার খম্মন থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী যাদব অনুষার কথা শুনুন। সে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। আপনার কাছেই তাঁর প্রশ্ন রেখে সমাধান পেতে চাই। অনুষা অনুগ্রহ করে নিজের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।
অনুষা : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি নমস্কার! আমার নাম অনুষা। আমি তেলেঙ্গানার খম্মন-এ গর্ভনমেন্ট জুনিয়র কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। স্যার আমার প্রশ্ন হল, যখন শিক্ষক আমাদের পড়ান তখন তো আমরা বুঝে যাই। কিন্তু কিছু সময় পর কিংবা কয়েকদিন পর আমরা ভুলে যাই। অনুগ্রহ করে এই বিষয়ে আমাকে সাহায্য করুন। ধন্যবাদ স্যার!
সঞ্চালিকা ২ : ধন্যবাদ অনুষা! মান্যবর আমরা ‘নমো অ্যাপ’-এর মাধ্যমে পাওয়া একটি প্রশ্ন এখন নেব যেখানে প্রশ্নকর্তা গায়িত্রী সাক্সেনা জানতে চাইছেন যে পরীক্ষা দেওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে প্রায়ই এরকম হয়, যা যা ভালো মতো পড়ে গেছেন, মুখস্থ করে গেছেন, সেগুলিও পরীক্ষার হল-এ গিয়ে ভুলে যান। কিন্তু পরীক্ষার আগে কিংবা পরীক্ষার পরে যখন বন্ধুদের সঙ্গে সে কথা বলে, তখন তাঁর সব মনে থাকে। এরকম পরিস্থিতি বদলানোর জন্য কী করা উচিৎ? মান্যবর, অনুষা এবং গায়িত্রী সাক্সেনার মতো প্রশ্ন এরকম আরও অনেকের মনে রয়েছে যার সম্পর্ক স্মরণশক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অনুগ্রহ করে এই লক্ষ্যে পথ দেখান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি।
প্রধানমন্ত্রী : সম্ভবত প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর মস্তিষ্কে এই বিষয়টা কখনও না কখনও একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। প্রত্যেকেরই মনে হয় যে আমার মনে থাকে না, আমি ভুলে গিয়েছি। কিন্তু, আপনারা দেখবেন যে এ ধরনের পরীক্ষার সময়ে হঠাৎই এমন সব বিষয় আপনার মনে আসতে শুরু করবে যে পরীক্ষার পর আপনার মনে হবে যে আরে! আমি তো গত এক সপ্তাহে কখনও এই বিষয়টি ছুঁয়েই দেখিনি। হঠাৎ প্রশ্ন এসে গেছে কিন্তু আমি খুব ভালো উত্তর দিয়েছি। অর্থাৎ, কোথাও সংরক্ষিত ছিল। আপনারও মনে ছিল না। কিন্তু মনের মধ্যে সংরক্ষিত ছিল কারণ, যখন সেই বিষয়টিকে আপনি মস্তিষ্কে ঢোকাচ্ছিলেন তখন দরজা খোলা ছিল, কাবার্ড খোলা ছিল, সেজন্য ভেতরে ঢুকতে পেরেছিল। যদি কাবার্ড বন্ধ থাকত তাহলে যত চেষ্টাই করুন না কেন, তা ঢুকতও না এবং যথাসময়ে আপনার মস্তিষ্ক থেকে কলমের ডগায় চলে আসত না। সেজন্য কখনও কখনও ধ্যান করতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ এই ধ্যান শব্দের সঙ্গে যোগ, মেডিটেশন, হিমালয়, ঋষি-মুনি – এ সবকিছু জুড়ে দেন। কিন্তু ধ্যানের অর্থ সম্পর্কে আমার একটা সহজ মত রয়েছে। যদি আপনি এখানে বসে থেকে ভাবেন যে মা হয়তো বাড়িতে বসে টিভি দেখছেন বা সারা ঘরে আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন আমি কোন কোণায় লুকিয়ে বসে আছি। এরকম যদি আপনি ভাবেন, তার মানে আপনি এখানে নেই, আপনি বাড়িতে আছেন। আপনার মনে এটাই রয়েছে যে মা টিভি দেখছেন কি দেখছেন না। আমি অমুক জায়গায় বসে রয়েছি বলে মা আমাকে দেখতে পাচ্ছেন কি পাচ্ছেন না। কিন্তু আসলে আপনার ধ্যান বা মনোযোগ এখানে হওয়া উচিৎ ছিল কিন্তু, আপনার ধ্যান ওখানে রয়েছে। তার মানে আপনি এখন অমনোযোগী। যদি আপনি এখানে থাকেন, তাহলে আপনি মনোযোগ বা ধ্যানের মধ্যে রয়েছেন। আপনি এখানে থাকলেও মন ওখানে আছে, তাহলে আপনি ধ্যানহীন বা অমনোযোগী রয়েছেন। সেজন্য আমি বলব ধ্যানকে জীবনে এমন সরলতার সঙ্গেই স্বীকার করুন। এটা অনেক বড় বিজ্ঞান। আমার মতে, ধ্যানের জন্য নাকে হাত দিয়ে হিমালয়ে গিয়ে বসতে হবে এমন কোনও কথা নেই। ধ্যান বিষয়টি খুবই সরল। আপনি সেই মুহূর্তগুলিতে ভালোভাবে বেঁচে থাকার বা জীবনকে উদযাপনের চেষ্টা করুন। যদি আপনি সেই মুহূর্তগুলিকে ভালোভাবে উদযাপন করতে পারেন, খুব ভালোভাবে বাঁচতে পারেন, তাহলে সেই মুহূর্তগুলি আপনার শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। আপনারা অনেক মানুষকে হয়তো দেখেছেন, যাঁরা সকালবেলায় চা খান, খবরের কাগজ পড়েন। বাড়ির মানুষজন বলে, আরে! জল গরম হয়ে গেছে, চলো তাড়াতাড়ি স্নান করতে চলো! কিন্তু সেই লোক বলে, দাঁড়াও আমি খবরের কাগজটা পড়ে নিই। তারপর বলা হবে, সকালের খাবার গরম রয়েছে, সেটা ঠান্ডা হয়ে যাবে। তখনও তিনি জবাব দেবেন, দাঁড়াও, খবরের কাগজটা পড়ে নিই। সেজন্য আমি মায়েদেরকে বলব, বোনেদেরকে বলব! যে বোনেরা এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন তাঁরা বিকেলে সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন, আজ খবরের কাগজে কী পড়েছিলে? আমি হলফ করে বলতে পারি, ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই সেই ব্যক্তি এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন না। এমনকি, আজকে খবরের কাগজের শিরোনাম কী কী ছিল সেগুলিও বলতে পারবেন না। কারণ, সেই বিষয়গুলি তখন তাঁর মনে আর জাগ্রত নেই, আর তিনি সেই মুহূর্তগুলি উদযাপনও করেননি, সেই মুহূর্তগুলি ঘিরে বেঁচেও থাকছেন না। তিনি অভ্যাসমতো খবরের কাগজ ওল্টাচ্ছিলেন। তাঁর চোখ দুটি তাকিয়ে ছিল, অক্ষরগুলি পড়ছিলেন, কিন্তু কিছুই রেজিস্টার হচ্ছিল না বা মস্তিষ্কে গেঁথে যাচ্ছিল না, আর যা রেজিস্টার হয় না, তা মেমোরি চিপে যায় না। সেজন্য আজ আপনার সবচাইতে বড় প্রয়োজন হল, আপনারা যাই করুন তাকে, সেই বর্তমানকে … আর আমি এখনও মনে করি যে পরমাত্মা তাঁর এই সৃষ্টিকে সবচাইতে বড় উপহার যদি কিছু দিয়ে থাকেন তা হল বর্তমান। আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে যে ঈশ্বরের সবচাইতে বড় উপহার কী, আমিও জবাব দেব বর্তমান। যিনি এই বর্তমানকে জানতে পারেন, যিনি এই বর্তমানকে ভালোভাবে বাঁচতে পারেন, উদযাপন করতে পারেন, যিনি এই বর্তমানকে আত্মস্থ করতে পারেন, তাঁর সামনে ভবিষ্যতে কখনও প্রশ্নচিহ্ন হয়ে ঝুলে থাকে না, আর আমাদের মেমোরি বা স্মৃতিশক্তিরও এটাই কারণ, আমরা সেই মুহূর্তগুলিকে উদযাপন করি না বলেই মনে থাকে না, আমাদের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, স্মৃতির সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক থাকে। শুধু পরীক্ষায় কাজে লাগবে, এই দৃষ্টিকোণ থেকে যদি ভাবেন, যদি পরীক্ষায় পাশ করার জন্য যদি পড়াশোনা করেন, তাহলে সেই শিক্ষার মানে আপনি বোঝেন না। এর মূল্য আপনি বোঝেন না। মনে করুন, আপনার কোনও বন্ধুর জন্মদিন আপনার মনে আছে আর আপনি সেই জন্মদিনে তাঁকে ফোন করলেন। আপনার স্মৃতিতে ছিল বলেই আপনি সেই জন্মদিন মনে রাখতে পেরেছেন। সেই স্মৃতি আপনার জীবনের বিস্তারের কারণ হয়ে উঠেছে। এখন সেই বন্ধুকে যখন টেলিফোন করেন, তখন বন্ধুও ভাববেন, আরে বাহ! ও আমার জন্মদিন এতটাই মনে রেখেছে? অর্থাৎ, তাঁর জীবনে আমার জীবনের গুরুত্ব রয়েছে। তিনি তখন সারা জীবনের জন্য আপনার হয়ে যান। এর কারণ কি? সেই স্মৃতি। স্মৃতি মানুষের জীবনকে বিস্তারিত করতে অনেক বড় অনুঘটকের কাজ করে। সেজন্য আমরা আমাদের স্মৃতিকে নিছকই পরীক্ষা পর্যন্ত, প্রশ্নোত্তর পর্যন্ত যেন সীমাবদ্ধ না রাখি। আপনারা এগুলির বিস্তার করে এগিয়ে যান। যত বেশি বিস্তারিত হবেন, বিষয়গুলি নিজে থেকেই যুক্ত হতে থাকবে। তৃতীয়ত, আপনারা কখনও যদি দুটি বাসন হাতে নেন, আর সেই দুটিতে জল ভরেন, তারপর সেই জলে একটি করে কয়েন বা মুদ্রা রাখেন, তাহলে কী দেখবেন? দুটো জলই শুদ্ধ, স্বচ্ছ, এক ধরনেরই জল, দুটো বাসনও একই রকম আর দুটিতেই কয়েন ডোবানো রয়েছে। কিন্তু একটি বাসন নড়ছে, জল এদিক থেকে ওদিকে যাচ্ছে, নিচে মুদ্রা রয়েছে, অন্যটি স্থির। আপনি দেখবেন স্থির জলের পাত্রে যে মুদ্রাটি রয়েছে সেটিকে আপনি খুব ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছেন। এমনও হতে পারে, মুদ্রার গাঁয়ে উৎকীর্ণ লেখাগুলিও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, আর যে জল নড়ছে, সেখানেও সেই মুদ্রাটি সেই সাইজেরই, আর জলও ততটা গভীর, কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। কারণ জল নড়ছে, বাসন নড়ছে। যদি মনেও এরকম দোলাচল চলতে থাকে, আর আমরা ভাবি যে তাতে যে মুদ্রা রয়েছে তা আমাদের দেখা দেবে, আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে পরীক্ষায় আপনাদের এই সমস্যা হয় যে পাশে বসা ছাত্রটি ওপর দিকে তাকাচ্ছেই না, শুধু লিখে যাচ্ছে, এখন আমার কিছু মনে পড়ছে না, আমি পিছিয়ে পড়ব। অর্থাৎ, মস্তিষ্ক এই না লিখতে পারার দিকেই ঝুঁকে পড়েছে। জলে স্মৃতিরূপী যে মুদ্রাটি রয়েছে, যেটা আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, একবার মন স্থির করে নিন। মন স্থির করাটাই সমস্যা। সেজন্য আপনি গভীরভাবে শ্বাস দিন, ডিপ ব্রিথিং করুন। কিন্তু চারবার গভীর শ্বাস নিন। একদম বুক চিতিয়ে, চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ সময় বসুন। মন স্থির হয়ে যেতেই সেই মুদ্রাটি এমনভাবে দেখা যাবে, যেমনভাবে আপনার স্মৃতির মধ্যে সংরক্ষিত থাকা বিষয়গুলি কোন স্মৃতির ওপার থেকে আপনার মস্তিষ্কের মাধ্যমে কলমের ডগায় আসা শুরু হয়ে গেছে। সেজন্য ঈশ্বর বেশি স্মৃতি দিয়েছেন। তিনিই এগিয়ে যাবেন। সেজন্য ঈশ্বর যাঁকে বেশি স্মৃতি দিয়েছেন, তাঁকে যে অতিরিক্ত শক্তি দিয়েছেন এমনটা কিন্তু নয়। আমরা সবাই আমাদের সকলের যে ইন্টারনাল প্রোডাক্টস রয়েছে তা পরমাত্মা অনেক প্রভাবশালী প্রক্রিয়ায় তৈরি করেছেন। আমরা কোন জিনিসটা ঘটাই, কাকে কী বলি - তার ওপর নির্ভর করে। সেজন্য আমরা অত্যন্ত সহজে এটা করতে পারি।
আপনাদের মধ্যে যাঁরা পুরনো শাস্ত্র সম্পর্কে জানেন কিংবা যাঁরা জানেন না, তাঁরা ইউটিউবে পুরনো শাস্ত্র নিয়ে অনেক কিছু থাকে, সেগুলি দেখে নিতে পারেন। কিছু আশ্চর্য স্মৃতিধর মানুষ থাকেন, যাঁরা একসঙ্গে ১০০টি জিনিস মনে রাখতে পারেন। আমাদের দেশে এই জিনিসগুলির, এ ধরণের জ্ঞানচর্চার তখনও ভালো প্রচলন ছিল। আমাদের দেশ থেকে এই জ্ঞান বিদেশে রপ্তানি হত। আমরাও এসব জ্ঞানে নিজেদেরকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারি। আপনাদের মনকেও প্রশিক্ষিত করা যেতে পারে। কিন্তু আজ আপনারা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন, সেজন্য আমি সেই দিকে আপনাদের নিয়ে যাব না। কিন্তু আমি বলব, মনকে স্থির রাখুন। আপনাদের চারপাশে এমন জিনিস রয়েছে যা নিজে থেকেই আসতে শুরু করেছে। আপনাদের দেখা শুরু হয়েছে। আপনারা এর স্মরণ করাও শুরু করবেন আর সেটাই অনেক বড় শক্তি হয়ে উঠবে।
সঞ্চালিকা ১ : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, আপনি যে ভালোবাসামাখা সারল্য দিয়ে আমাদের ধ্যানের নিয়ম শেখালেন, নিশ্চিতভাবেই আমার মতো সকলের মন এতে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠবে। ধন্যবাদ মহোদয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ রাজ্য, মনোরম পর্যটন স্থল ঝাড়খণ্ডের রারামগড়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী শ্বেতা কুমারী আপনাকে তাঁর প্রশ্ন করতে চান। শ্বেতা অনুগ্রহ করে আপনার প্রশ্ন করুন।
শ্বেতা : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি নমস্কার! আমি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় পটারাতু-র দশম শ্রেণীর ছাত্রী। আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই। আমার পড়া বেশি মনে থাকে রাতের দিকে পড়লে, কিন্তু সকলেই আমাকে দিনের বেলা পড়তে বলে। আমি কী করব? ধন্যবাদ!
সঞ্চালিকা ১ : ধন্যবাদ শ্বেতা! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি ‘নমো অ্যাপ’-এর মাধ্যমে পাওয়া আরও একটি প্রশ্ন, যেখানে রাঘব যোশীর সামনে একটি আশ্চর্য দ্বিধা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর মা-বাবা সবসময়ই বলেন, আগে পড়াশোনা করো তারপর খেলাধূলা। কিন্তু রাঘবের মনে হয় যে সে খেলাধূলার করার পর যদি পড়ে, তাহলেই সবকিছু খুব সুন্দরভাবে বুঝতে পারে। আপনি অনুগ্রহ করে রাঘব এবং শ্বেতার পাশাপাশি এ ধরনের অনেক ছাত্রছাত্রীকে বোঝান যে এমন ক্ষেত্রে তাঁরা কী করবে, কী করলে তাঁদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে আর সবচাইতে বেশি পড়াশোনা মনে থাকবে। আমাদের সকলের দ্বিধার সমাধান করার জন্য আপনি অনুগ্রহ করে কিছু বলুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি।
প্রধানমন্ত্রী : একথা সত্যি যে প্রত্যেকেই চায় যে তাঁর সময়ের সদ্ব্যবহার হোক। যে কাজের জন্য তিনি সময় ব্যয় করবেন তা যেন ততটাই লাভজনক হয়, আর এটা খুব ভালো ভাবনা। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভাবনা, আর আমাদের সবসময় জাগ্রত রূপে চেষ্টা করা উচিৎ যাতে আমরা যে সময় ব্যয় করছি, যে সময়টা পড়াশোনার পেছনে দিচ্ছি, তা থেকে যেন আউটকাম পাই, ভালো ফল পাই। আউটপুট তো দেখা যাবে, কিন্তু আউটকাম দেখা যাবে না। সেজন্য আগে নিজের মধ্যে একটি অভ্যাস তৈরি করতে হবে, যাতে এটা বুঝতে পারা যায় যে যতটা সময় ব্যয় করেছি, ততটা ফল আমি পেয়েছি কিনা। এখন আমরা এই হিসাব করতে পারি, আর এই অভ্যাস আমাদের তৈরি করতেই হবে যে ভাই! আজ গণিতের পেছনে এক ঘন্টা সময় লাগিয়েছি। যদি আমি সেই এক ঘন্টায় কিছু করতাম তাহলে আমি কী করতাম আর কী না করতাম! এতে যে প্রশ্ন রয়েছে তা আমার খুব কঠিন লাগত, আর এখন তা আমার কাছে সহজ হয়ে গেছে। অর্থাৎ, আমার আউটকাম ইমপ্রুভ হচ্ছে। এটা আমাদের অ্যানালিসিস বা বিশ্লেষণ করার অভ্যাস করতে হবে। অনেক কম মানুষেরই বিশ্লেষণ করার অভ্যাস থাকে। তাঁরা একের পর এক কাজ করে যান তো করেই যান, আর করতেই থাকেন। তারপর জানতেই পারেন না যে এতটা মনোযোগ দিয়ে কাজ করার প্রয়োজন ছিল কি ছিল না। কখনও এমন হয় যে আমরা নিজেদের টাইমটেবিলে যা সবচাইতে সহজ আর সবচাইতে প্রিয়, ঘুরে ফিরে আমরা সেই বিষয়টিই বেশি করতে থাকি, পড়তে থাকি। আমাদের মনে হয় যেন এটাকেই নিই কারণ এতে আমরা আনন্দ পাই। এখন এর কারণ, যা কম পছন্দ, একটু কঠিন, আমরা তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি, তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, আমাদের যে বডি আছে না, শরীর, এই ‘বডি’ শব্দটা আমার খুব ভালো লাগে না। কিন্তু সরলভাবে বোঝানোর জন্য বলছি। কখনও কখনও মনে হয় আমার বডি একটু চিটার। আমাকে ধোকা দিচ্ছে। আপনি ঠিক করেছেন আমাকে এভাবে বসতে হবে, কিন্তু আপনি এটাই জানেন না যে কিভাবে বসতে হবে, আর অবশেষে কিভাবে বসলেন সেটাও আপনি জানেন না। অর্থাৎ, আপনার সঙ্গে আপনার বডি চিটিং করে, আপনাকে ধোঁকা দেয়। আপনি মন থেকে ঠিক করেছেন, এভাবে বসতে হবে, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ঢিলে হয়ে পড়েন। অর্থাৎ, যে অরিজিনাল স্বভাব, সেদিকেই আপনার শরীর আপনাকে নিয়ে যায়। তারপর সচেতন হয়ে এমনটা করবেন, আবার হয়তো আগের মতো বসবেন। অর্থাৎ, শরীর যেমন ধোঁকা দেয়, তেমনই কখনও কখনও মনও ধোঁকা দেয়। সেজন্য আমাদের এই ধোকা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে, বাঁচতে হবে। আমাদের মনকেও ধোঁকা দিতে দেওয়া চলবে না। মন কেমন তৈরি হবে? যেসব জিনিস মন পছন্দ করে আমরা কিন্তু সেদিকেই চলে যাই। আমাদের জন্য যেটা প্রয়োজন সেদিকে যাই না। মহাত্মা গান্ধীজি ‘শ্রেয়’ এবং ‘প্রিয়’র কথা বলতেন। যে জিনিস শ্রেয়স্কর আর যা প্রিয়, ব্যক্তি শ্রেয়স্করের পরিবর্তে প্রিয়র দিকে চলে যায়। কিন্তু আমাদের শ্রেয়স্করের সঙ্গেই আঠার মতো লেগে থাকা উচিৎ। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, আর এই সময়েই আমাদের মন ধোকা দেয়। সেখানে নিয়ে যায়, আবার টেনে এখানে নিয়ে আসে। এভাবেই আপনার প্রোডাক্টিভিটি বা উৎপাদনশীলতা এবং আপনার আউটকাম বাড়াতে পারবেন আর তার জন্য চেষ্টা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এই যে ভাবছেন আমি রাতে পড়লে ভালো হয়, কেউ বলে আমি সকালে পড়লে ভালো হয়, কেউ বলে খাবার খেয়ে পড়লে ভালো হয়, কেউ বলে খালি পেটে পড়াশোনা করলে ভালো হয় – এরকম প্রত্যেকের নিজের নিজের প্রকৃতি থাকে। আপনি অবজার্ভ করুন, নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন। যে বিষয়ে আপনি নিজে কমফর্টেবল, নিজের যেভাবে সুবিধা হয়, সেটাই আপনি করুন। অ্যাকচ্যুয়ালি, আপনার কমফর্ট থাকতে হবে। আপনি যেন সহজভাবে পড়াশোনা করতে পারেন। যদি আপনি সহজ না হন, তাহলে বসে পড়লেন কি দাঁড়িয়ে থাকলেন, আপনি কিন্তু যা চাইছেন তা করে উঠতে পারবেন না। এখন কিছু মানুষ এমনও থাকেন যে তাঁরা এক ধরনের জায়গায় শুলে তবেই ঘুম আসবে। আমার মনে আছে, আমি অনেক বছর আগে একটি সিনেমা দেখেছিলাম। সেই সিনেমায় একটি দৃশ্য ছিল। এক ব্যক্তি বস্তির কাছে নিজের জীবন কাটিয়েছেন আর তারপর হঠাৎ কোনও ভালো জায়গায় থাকতে গেছেন। তাঁর ভাগ্যে তিনি এই ভালো জায়গায় থাকার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু ঘুমই আসছে না। এখন ঘুম কেন আসছে না, তা নিয়ে তিনি ভাবতে শুরু করলেন। তিনি রেলওয়ে স্টেশনে গেলেন। রেল লাইনের যে খটাখট আওয়াজ সেটা টেপ করলেন আর বাড়িতে এনে সেই টেপ রেকর্ডার বাজাতে শুরু করলেন। তখন তাঁর ঘুম এসে গেল। এটাই তাঁর কমফর্ট, ওটাই তাঁর ঘুমের সময় কমফর্টের আবহ তৈরি করল। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি …। এখন সবার ক্ষেত্রে তো আর এরকম হয় না যে ট্রেনের আওতাজ শুনলেই ঘুম আসবে! প্রত্যেকের জন্য এটা প্রয়োজনীয় নয়। কিন্তু ওই ব্যক্তির জীবনে এটা প্রয়োজন ছিল।
আমি মনে করি, আমাদেরও জানা থাকা উচিৎ, আবারও বলছি এ কথাটা নিয়ে একদমই চাপে থাকবেন না। যে কাজে আপনি আনন্দ পান, যে জিনিসে আপনি আনন্দ পান, তার জন্য আপনাকে সবচাইতে কম অ্যাডজাস্ট করতে হয়। সেই পথ ছেড়ে দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু সেই কমফর্ট অবস্থাতেই আপনার কাজ হল পড়াশোনা, আপনার কাজ হল ম্যাক্সিমাম আউটকাম – যা থেকে একটুও সরলে চলবে না, আর আমি দেখেছি যে মানুষ কিভাবে কাজ করেন। কখনও কখনও আমদের শুনতে তো ভালো লাগে যে অমুক ব্যক্তি ১২ ঘন্টা কাজ করেন, ১৪ ঘন্টা কাজ করেন, ১৮ ঘন্টা কাজ করেন। এসব শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু বাস্তবে প্রতিদিন ১৮ ঘন্টা কাজ করা কাকে বলে, তা কেমন হয়, এ বিষয়ে আমার জীবনে একটি অনেক বড় শিক্ষা আমি পেয়েছি। আমি যখন গুজরাটে ছিলাম, তখন কেকা শাস্ত্রীজি নামক একজন বড় বিদ্বান ছিলেন। তিনি স্বয়ং পঞ্চম, ষষ্ট বা সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু তিনি অনেক বই লিখেছেন। কয়েক ডজন বই লিখেছেন, আর তিনি পদ্ম সম্মানেও ভূষিত হয়েছেন। তিনি ১০৩ বছর বয়স অবধি বেঁচে ছিলেন আর যখন আমি সেখানে ছিলাম, তখন আমি তাঁর শতাব্দীকালের অফিশিয়াল কর্মসূচি সরকারি উদ্যোগে পালন করেছিলাম। তাঁর সঙ্গে আমার অনেক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, তিনি আমাকে খুবই ভালোবাসতেন। আমি অনেক বছর আগে যখন মুখ্যমন্ত্রীও হইনি, তখন একবার কর্মসূচি তৈরি হয় যে তাঁকে রাজস্থানের তীর্থক্ষেত্রগুলিকে দর্শন করানোর জন্য নিয়ে যাব। তখন আমি তাঁকে নিয়ে রওনা হলাম। একটি ভেহিকেলে আমরা সবাই ছিলাম। আমি দেখছিলাম যে তাঁর কাছে খুব কম লাগেজ ছিল। কিন্তু তার থেকেও বেশি মালপত্র ছিল তাঁর লেখাপড়ার। কখনও রেলওয়ে ক্রসিং এলে সেটাও তো বন্ধ হয়ে যেত, থেমে যেতে হত। যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রেন পার না হয়ে যেত, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্রসিং-এর দরজা খুলত না। আমরাও এগোতে পারতাম না। এখন সেই সময় আমরা আর কী করতাম! আমরা নিচে নেমে সামান্য ঘুরতাম অথবা যে অঙ্কুরিত ছোলা বেচত, তাঁর থেকে কিছুটা কিনে খেতাম। আমরা নিজেদের সময় দেখতাম যে কোনও দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি, তাঁর থলে থেকে কাগজ বের করতেন আর তৎক্ষণাৎ লিখতে শুরু করে দিতেন। তখন তাঁর যা বয়স, সম্ভবত তখন ৮০ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছেন। অর্থাৎ, সময়কে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, আউটকাম কাকে বলে, তা এত সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্মভাবে তাঁর কাছে দেখেছিলাম। সম্ভবত তীর্থযাত্রার সময়েও তিনি রিল্যাক্স করতেন, ঘুরতেন, ফিরতেন, দেখতেন আর বাকি সময় দু’হাত দিয়ে কাজ করতে থাকতেন। কোনও পরিস্থিতিতে কাতর হওয়া, এটা তাঁর স্বভাবের মধ্যে ছিল না। যে কোনও পরিস্থিতিতে কাজ করে যাওয়াটাকেই আমি মনে করি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। জীবনে এ থেকে অনেক কিছু পাবেন।
সঞ্চালিকা ২: মাননীয় মহোদয়, আমাদেরকে আত্মবিশ্লেষণের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এবং আনন্দের সঙ্গে শ্রেষ্ঠত্বে পৌছনোর পদ্ধতি শিখতে উদ্দীপিত করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের উধমপুরের সবুজ ইউক্যালিপ্টাস অরণ্যবেষ্টিত এলাকার নবম শ্রেণীর ছাত্রী এরিকা জর্জ আপনার পরামর্শ প্রার্থনা করছেন। এরিকা আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।
এরিকা জর্জ : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আমি জম্মু ও কাশ্মীরের এ পি এস উধমপুর স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী এরিকা জর্জ। আমার প্রশ্ন হল যে ভারতের মতো দেশে অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে অনেক প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে অনেক প্রকৃত মেধাবী ও জ্ঞানী মানুষেরা রয়েছেন কিন্তু কিছু কারণে তাঁরা পরীক্ষায় বসতে পারেননি। হয়তো তাঁরা সঠিক পথ বেছে নেননি, অথবা তাঁরা যথাযথ কাউন্সেলিং পাননি। সেজন্য স্যার, এ ধরনের মানুষদের জন্য আমরা কী করতে পারি যাতে এই ছাত্রছাত্রীদের মেধা নষ্ট না হয়? তাঁদের মেধাকে দেশের কাজে খুব ভালোভাবে লাগানো যায়। ধন্যবাদ স্যার!
সঞ্চালিকা২ : ধন্যবাদ এরিকা! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় গৌতম বুদ্ধ নগরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র হরিওম মিশ্রও বোর্ডের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সেও একই ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছে। জি-টিভির প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন হরিওম মিশ্র। হরিওম আপনি আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।
হরিওম : নমস্কার স্যার! আমি হরিওম মিশ্র। আমি নয়ডার কেম্বরিক স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। আজ প্রধানমন্ত্রীজির কাছে আমার একটি প্রশ্ন হল, এ বছর কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে, আর এ বছর বোর্ড পরীক্ষার প্যাটার্নও অনেকটা বদলে দেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত পরিবর্তনের মধ্যে আমাদের মতো শিক্ষার্থীরা এখন বোর্ডের পরীক্ষার দিকে বেশি নজর দেব নাকি কলেজ অ্যাডমিশনের প্রক্রিয়ার দিকে বেশি নজর দেব। আমরা কোনদিকে নজর দেব, কিভাবে প্রস্তুতি নেব!
সঞ্চালিকা ২: ধন্যবাদ হরিওম! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়। এরিকা ও হরিওমের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আরও অনেক ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা নিয়ে তাদের উত্তেজনার কথা প্রকাশ করেছে এবং তারা এটাও জানতে চেয়েছে তারা কী বোর্ডের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবে নাকি কলেজে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নেবে। এই বিষয় নিয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে জানতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়।
প্রধানমন্ত্রী : এমনিতে তো এই দুটি প্রশ্নই ভিন্ন। একটি বিষয় হল প্রতিযোগিতার আর আরেকটি বিষয় হল এই পরীক্ষা দেব নাকি ওই পরীক্ষা দেব, আর একই সময়ে দুটো পরীক্ষা হলে কী করব! আমার মনে হয়, আপনাদের পরীক্ষার জন্য পড়ার প্রয়োজন রয়েছে। এখানেই ভুল হয়ে যায়। আমি অমুক অমুক পরীক্ষার জন্য পড়ব, তারপর তমুক পরীক্ষার জন্য পড়ব, এর মানে হল আপনারা আসলে পড়ছেন না, আপনারা সেই জড়িবুটিগুলির খোঁজ করছেন যেগুলি আপনাদের কাজ সহজ করে দেবে আর হয়তো এগুলির কারণেই আমাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষা ভিন্ন রকম মনে হয়, কঠিন মনে হয়। বাস্তব হল এটাই, আমরা যাই পড়ছি সেটাকেই পূর্ণ রূপে পড়া উচিৎ। সম্পূর্ণ রূপে সেটাকেই আত্মস্থ করা উচিৎ। তাহলে আমরা বোর্ডের পরীক্ষা দিই কিংবা ভর্তির পরীক্ষা অথবা চাকরিতে যোগাদানের পরীক্ষা দিই, কোনও ইন্টারভিউ দিই বা একজাম দিই। যে কোনও জায়গায়, যে কোনও পরীক্ষায় এই শিক্ষা কাজে লাগবে। যদি আপনারা ভালোভাবে শিক্ষা গ্রহণ করেন, ভালোভাবে পড়ার বিষয় বুঝে বুঝে পড়েন ও আত্মস্থ করেন, তাহলে আপনাদের সামনে কোন পরীক্ষা রয়েছে, সেই পরীক্ষার রূপ কেমন, তা কোনও প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠার কথা নয়। সেজন্য আপনাদের উচিৎ কোনও নির্দিষ্ট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির কথা মাথা থেকে বের করে দেওয়া, আর নিজেদেরকে একজন যোগ্য প্রকৃত শিক্ষিত ব্যক্তি করে গড়ে তোলার জন্য মন দিয়ে পড়াশোনা করা। কোনও বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য আমাদের পরিশ্রম করতে হয়, তারপর পরিণাম যা আসবে তা দেখা যাবে। যে পরীক্ষা আগে, তার জন্যই আগে প্রস্তুতি নিন। দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য তারপর নিন। কিন্তু, প্রতিযোগিতা এজন্যই আয়োজিত হয় … আপনারা হয়তো খেলোয়াড়দের দেখেছেন। সেই খেলোয়াড়েরা ক্রীড়াঙ্গনে নিজের নিজের খেলায় পারদর্শী হন। কোন পর্যায়ে তাঁরা খেলবেন সেটা তাঁদের ওপর নির্ভর করে না, সেটা নির্ভর করে তাঁরা কতটা পরিশ্রম করছেন তার ওপর। সেই পরিশ্রম থেকেই ঠিক হয়ে যায় যে তাঁরা তহসিল পর্যায়ে খেলবেন, নাকি জেলা পর্যায়ে খলবেন, নাকি রাজ্য পর্যায়ে খলবেন, নাকি জাতীয় পর্যায়ে খলবেন, নাকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাঁরা নিজেরাও এতে বিকশিত হতে থাকবেন। সেজন্য আমি মনে করি, আমাদের অমুক পরীক্ষার জন্য এই জড়িবুটি, তমুক পরীক্ষার জন্য ওই জড়িবুটি, এ ধরনের চক্কর থেকে বেরিয়ে এসে আমার কাছে এই শিক্ষার সম্পদ রয়েছে, আমি এটা নিয়ে এগিয়ে চলেছি, এর মাধ্যমে আমি এই পর্যায়ে পাশ করে বেরোব তাহলে ঠিক আছে। যদি সেখানে উত্তীর্ণ না হই তাহলে অন্য কোনও রাস্তা খুঁজে নেব। আমার মনে হয়, আমাদের এভাবে ভাবা উচিৎ। দ্বিতীয়ত, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার কথা বলি। দেখুন বন্ধুরা, প্রতিযোগিতাকে আমাদের জীবনের সবচাইতে বড় উপহার বলে মনে করা উচিৎ। যদি প্রতিযোগিতা না থাকে, তাহলে জীবন কিসের? তবুও আমরা এমনই আনন্দে থাকব ব্যাস! আর কিছু নয়, আমরাই আমাদের জীবন তৈরি করব। সবক্ষেত্রে তো শুধু আমরাই নেই। সত্যি কথা যদি জিজ্ঞাসা করেন তাহলে আমাদের প্রতিযোগিতাকে আমন্ত্রণ জানানো উচিৎ। তবেই তো আমাদের অগ্নি পরীক্ষা হয়। আমি বলব, বাড়িতেও কোনও ছুটির দিনে পড়াশোনা নয়, পরীক্ষা নয়, এমন সময়ে ভাই-বোনেরা বসে নানা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা উচিৎ। আপনি চারটে রুটি খান, আমি পাঁচটা খাই, তুমি পাঁচটা খাই, আমি ছয়টা খাই। আরে! প্রতিযোগিতার আয়োজন করো। জীবনের ক্ষেত্রে আমাদের সমস্ত প্রতিযোগিতাকে আমন্ত্রণ জানানো উচিৎ। জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি অসাধারণ মাধ্যম থাকে যা আমাদের নিজের বলে মনে হয়।
দ্বিতীয়ত, আমি যে প্রজন্মের মানুষ আর আপনাদের মা-বাবার যে প্রজন্ম সেটা অনেক কাছাকাছি। তাঁরা জীবনে সেই জিনিসগুলি পাননি যেগুলি আপনারা পাচ্ছেন। আপনারা সেই ভাগ্যবান প্রজন্ম, যাঁরা এত কিছু পেয়েছেন যা আগের কোনও প্রজন্ম পায়নি। তা হল, আপনাদের জীবনে যেমন প্রতিযোগিতা বেশি, তেমনই চয়েসও বেশি। অনেক বেছে নিতে পারেন, সুযোগও অনেক রয়েছে। আপনাদের পরিবারের অগ্রজদের জন্য এত সুযোগ ছিল না। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, দু’জন কৃষক যদি থাকেন, মনে করুন তাঁদের দুজনেরই দুই একর করে জমি রয়েছে। কিন্তু একজন কৃষক ভাবলেন, চলো ভাই! সংসার চালাতে হবে, আখের চাষ করি। তাহলে সংসার চলবে। দ্বিতীয় কৃষক বললেন না না! দুই একর জমি রয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশ অমুক ফসল করব, আরও এক-তৃতীয়াংস তমুক ফসল করব, আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ অন্য কোনকিছুর চাষ করব। গত বছর অমুক ফসলের চাষ করেছিলাম কিন্তু এবার তমুক ফসলের চাষ করব। অন্য দুটি ফসল এবার করব না। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করবেন যে, তাঁরা দুই একর জমিতেই এমন ভালোভাবে বসে গেছেন, তা দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন, যদিও তাঁদের জীবন প্রায় থেমে গেছে। যিনি ঝুঁকি নেন, নানা রকম প্রয়োগ করেন, নতুন নতুন ফসলের চারা বা বীজ বপন করেন, এভাবে নতুন নতুন জিনিস জুড়তে থাকেন যে এতটাই সামনে এগিয়ে যান যে জীবনে কখনও থামার নাম নেন না। তেমনই আমাদের জীবনেও রয়েছে। আমাদের গর্ব করা উচিৎ যে এত প্রতিযোগিতার মধ্যেও নিজেদেরকে প্রমাণিত করছি, আর আমাদের কাছে অনেক চয়েস রয়েছে। এই পছন্দ, এই প্রতিযোগিতা না থাকলে, বিদ্যালয় না খুললে এর পথ বেরোয় না। এই পথ, এটা শুধুই পথ নয়, এটা একটা বিশেষ রাস্তা। আমি মনে করি, আমাদের একে একটি সুযোগ বলে স্বীকার করা উচিৎ, আমি এই সুযোগকে ছাড়ব না, আমি আমাদের সুযোগগুলিকে কখনও হাতছাড়া হতে দেব না। এই ভাব যদি নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এই প্রতিযোগিতা আপনাদের জন্য এ যুগে যে সবচাইতে বড় উপহার রূপে এসেছে - তাআপনারা অনুভব করবেন।
সঞ্চালিকা ৩: মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, আপনি আমাদের জ্ঞানকে আত্মস্থ করার প্রেরণা দিয়েছেন যা থেকে জীবনে সাফল্য আসে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীজি, গুজরাটের নওসারি থেকে একজন অভিভাবক শ্রীমতী সীমা চিন্তন দেশাই আপনার সামনে একটি প্রশ্ন রাখতে চান। মহোদয়া, অনুগ্রহ করে নিজের বক্তব্য রাখুন।
সীমা চিন্তন দেশাই : জয় শ্রীরাম! প্রাইম মিনিস্টার মোদীজি নমস্তে। আমি নওসারির সীমা চিন্তন দেশাই একজন অভিভাবক। স্যার, আপনি এত সব ইয়ংস্টার বা নব যুবক-যুবতীদের আইকন। কারণ হল, আপনি শুধু মুখে বলেন না, যা বলেন তা করে দেখান। স্যার একটি প্রশ্ন, গ্রামীণ এলাকায় ভারতীয় বাড়িগুলিতে বালিকাদের জন্য অনেক প্রকল্প চলছে। এর প্রগতির জন্য আমাদের সমাজ কী অবদান রাখতে পারে? অনুগ্রহ করে পথ দেখান। ধন্যবাদ!
সঞ্চালিকা ৩ : ধন্যবাদ মহোদয়া! মান্যবর, সীমা চিন্তন দেশাইজি গ্রামীণ ক্ষেত্রের বালিকাদের শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত এবং তিনি ও তাঁর সমাজ তাদের নিয়ে কিছু করতে চান আর মহোদয়, তিনি এটাও জানতে চান যে এই লক্ষ্যে আপনার মন্তব্য কী; মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি।
প্রধানমন্ত্রী জি : এমনিতে আমি মনে করি যে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। আগেকার দিনে যখন শিক্ষার প্রসঙ্গ উঠত, তখন মা-বাবার মনে হত যে ছেলেকে পড়াতে হবে। নিজেদের সীমিত সম্পদ ব্যয় করে তাঁরা ছেলেকেই পড়াতে চাইতেন। ভাবতেন, ছেলেটা যদি লেখাপড়া করে তাহলে রোজগার করবে, যা সংসারের কাজে লাগবে। ছেলেটা নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কিন্তু মেয়ের পড়াশোনার প্রসঙ্গ উঠলে কিছু বাবা-মা বলতেন, আরে মেয়েকে পড়িয়ে কী হবে! ওকে দিয়ে চাকরি তো আর করাব না। আর সে তো নিজের শ্বশুরবাড়ি যাবে। সে এমনই নিজের জীবন কাটিয়ে দেবে। একটা সময়ে এই মানসিকতাই অধিকাংশ মানুষের মনে ছেয়ে ছিল। সম্ভবত আজও কিছু গ্রামে অনেক জায়গায় এ ধরনের মানসিকতার ছোঁয়া রয়েছে। কিন্তু ‘বাই অ্যান্ড লার্জ’ বা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আজ পরিস্থিতি বদলেছে আর সমাজ মেয়েদের সামর্থ্যকে জানতে পারছে। যে সমাজ যদি মেয়েদের সামর্থ্য ঠিক মতো না জানে, তারা পিছিয়ে পড়ে। সেই সমাজ কখনও সামনে এগোতে পারে না। অনেক সময় আপনারা এ ধরনের পরিবার হয়তো দেখেছেন যারা বলে যে ভাই, ছেলেই হওয়া উচিৎ যাতে বৃদ্ধাবস্থায় কাজে লাগে। মেয়ে কোন কাজে লাগবে, সে তো শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে। এরকম একটা ভাবনা সমাজের কিছু অংশে আজও আছে। কখনও এমনও ছিল, ইতিহাস এর সাক্ষী, এখন আমি এই জিনিসগুলিকে খুব সুক্ষ্মভাবে দেখি। আমি এরকম অনেক মেয়েকে দেখেছি যারা বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, বাবা-মায়ের বৃদ্ধাবস্থার কথা ভেবে সেই রোজগেরে মেয়েটি বিয়ে পর্যন্ত করেননি, আর বাবা-মায়ের সেবায় সারা জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। কোনও ছেলে যতটা করতে পারে না, তার থেকে অনেক বেশি মেয়েরা করে দেখিয়েছে। আমি এমন পরিবারও দেখেছি, যেখানে বাড়িতে চারটি ছেলে রয়েছে, চার ছেলের চারটি আলাদা বাংলো রয়েছে, ওরা খুব সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকে, দুঃখ কখনও দেখেনি, কিন্তু তাদের মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে কাটাতে হচ্ছে। এরকম অনেক সম্পন্ন ছেলে আমি দেখেছি। সেজন্য প্রথম কথা হল আমাদের সমাজে ছেলে, মেয়ে সব এক সমান। কোনও বৈষম্য নেই। এই মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে। এটাই আজকের যুগের অনিবার্যতা এবং প্রত্যেক যুগের অনিবার্যতা। এটা ঠিক যে ভারতে কিছু বিকৃতি এসেছিল। এই বিকৃতিগুলি আসার কিছু কারণ অবশ্যই ছিল। কিন্তু এই দেশ গর্ব করতে পারে, যদি গভর্ন্যান্সের কথা মনে করেন, তাহলে এক সময়ে অহিল্যা দেবী হোলকারের নাম শোনা যেত, যিনি সবচেয়ে ভালো প্রশাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কখনও বীরত্বের প্রসঙ্গ উঠলে ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ-এর নাম উঠে আসে। আমাদের সমাজে সেরা মেয়েরা তো ছিলই। অর্থাৎ কোনও যুগ এমন ছিল না যখন আমাদের বিদুষীরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেননি। এখন কে কিভাবে নেবেন, এটা যার যার নিজস্ব মানসিকতার ব্যাপার। দ্বিতীয়ত, আজ পরিস্থিতি বদলেছে। আজ তো আপনারা দেখবেন নতুন যত ছেলে-মেয়ে স্কুলে যায়, সেখানে ছেলেদের থেকে মেয়েদের সংখ্যা বেশি হয়। এই পরিসংখ্যান আমি পেয়েছি। আজ যে মেয়েদের অ্যাসপিরেশন্স আমরা দেখছি, তাঁদের যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তাঁদের মধ্যে যে কিছু করে দেখানোর উদ্দীপনা রয়েছে, সেজন্য যে কোনও ভারতবাসী গর্ব করতে পারে। এটা ঠিক, আর তাঁদেরকে আমাদের সুযোগ দিতে হবে। এই সুযোগকে আমাদের ‘ইনস্টিটিউশনালাইজ’ বা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। কোনও একটি পরিবার নিজের মতো করে কিছু করে নেবে এমনটা নয়। যেমন আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, ক্রীড়াক্ষেত্রে বেশ কিছু উদাহরণ আমাদের সামনে উঠে আসছে। আজ ক্রীড়াক্ষেত্রে যে কোনও স্তরে ভারতের মেয়েরা প্রত্যেক জায়গায় কোথাও না কোথাও নিজেদের নাম উজ্জ্বল করছেন, দেশের নাম উজ্জ্বল করছেন। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখবেন আজ দেশের বিজ্ঞানীরা এত বড় বড় সাফল্য অর্জন করছেন। তাঁদের মধ্যে যদি ভালোভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন, অর্ধেকেরও বেশি মহিলা বিজ্ঞানী রয়েছেন। অর্থাৎ, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও আমাদের মেয়েরা অনেক পরাক্রম দেখিয়েছেন। বিগত কয়েক বছরের দশম এবং দ্বাদশের রেজাল্টের দিকে যদি তাকান তাহলে দেখবেন সারা দেশেই ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো নম্বর পাচ্ছেন। পাশের সংখ্যাও মেয়েদেরই বেশি। তাহলে আজ প্রত্যেক পরিবারের জন্য মেয়েরা একটি অনেক বড় অ্যাসেট হয়ে উঠেছে, পরিবারের অনেক বড় শক্তি হয়ে উঠেছে। এই পরিবর্তন খুব ভালো। এই পরিবর্তন যত বেশি হবে তত লাভ হবে। এখন আপনারা দেখুন, সেই গুজরাট থেকেই যিনি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন তাঁর প্রশ্নের প্রসঙ্গেই বলছি, গুজরাটে যেরকম পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থা রয়েছে, সেটি খুব ভালো পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থা। সেখানে ৫০ শতাংশেরও বেশি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হলেন আমাদের মহিলারা। আইনি ব্যবস্থাই এমন রাখা হয়েছে যে ৫০ শতাংশ থাকবেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনের পর পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে নির্বাচিত মহিলাদের সংখ্যা কোথাও ৫৩ শতাংশ, কোথাও ৫৪ শতাংশ আবার কোথাও ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ, মহিলারা তাঁদের রিজার্ভ সিট থেকেই শুধু জেতেননি, তার বাইরেও সাধারণ আসন থেকে তাঁরা অধিক সংখ্যায় জিতে এসে কখনও ৫৫ শতাংশ থেকেও এগিয়ে যান আর পুরুষরা ৪৫ শতাংশে এসে থেমে যান। এর মানে, আজ সমাজও তার মা-বোনেদের বেশি বিশ্বাস করে, তাঁদের ওপরই নিজেদের কল্যাণের দায়িত্ব দিতে চায়। তবেই তো তিনি বা তাঁরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আসেন। আজ যখন আমরা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছি, আজ পর্যন্ত ভারতের সংসদে সবচাইতে বেশি মহিলা এমপি রয়েছেন। গ্রামে গ্রামে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে লেখাপড়া জানা মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে, আর সেই লেখাপড়া জানা মেয়েরাই বেশি নির্বাচিত হয়ে শাসন ক্ষমতায় আসছেন। তাঁদেরকেই মানুষ নির্বাচিত করা বেশি পছন্দ করছেন। যতই তাঁরা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বা সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে থাকুন না কেন, নির্বাচনে তাঁদের সামনে একাদশ শ্রেণীতে পাঠরত কেউ থাকুন না কেন, সাধারণ জনগণ তাঁদেরকেই বেশি পছন্দ করছে। অর্থাৎ, সমাজেও শিক্ষার প্রতি সম্মানের ভাবনা প্রত্যেক স্তরে পরিলক্ষিত হচ্ছে। আজ আপনারা শিক্ষাক্ষেত্রকেই দেখে নিতে পারেন। কখনও না কখনও … পুরুষের দিক থেকেই প্রস্তাব আসার সম্ভাবনা বেশি। আমি কাউকে পথ দেখাচ্ছি না। বিশেষ করে, রাজনৈতিক দলগুলিকে তো না-ই। কিন্তু কখনও কখনও সম্ভাবনা জেগে ওঠে যে পুরুষরা মিছিল বের করবে যে শিক্ষকদের মধ্যে তাঁরা এত শতাংশ সংরক্ষণ চাইছেন কারণ, অধিকাংশ মা ও বোনেরাই আমাদের শিক্ষক। তেমনই নার্সিং-এর ক্ষেত্রেও অধিকাংশ প্রশিক্ষিত মহিলার প্রয়োজন পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে সেবাভাব, মাতৃভাব থাকে, তা আমরা সবাই জানি। আজ নার্সিং-এর ক্ষেত্রে ভারতের গৌরব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের নার্সরা বিশ্বের যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই ভারতের মান বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এমনকি, পুলিশ মিলিটারির চাকরির ক্ষেত্রেও আজ আমাদের মেয়েরা অনেক বড় মাত্রায় আসছেন এবং সাফল্য অর্জন করছেন। এখন তো আমরা এনসিসি-তেও মেয়েদের প্রশিক্ষণ শুরু করেছি আর সৈনিক স্কুলে মেয়েদের ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন মেয়েরা আর্মিতেও যোগ দিচ্ছেন। জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে এই সমস্ত কিছু এজন্য ‘ইনস্টিটিউশনালাইজড’ হচ্ছে, আর আমার সমাজের প্রতিও এটাই অনুরোধ যে আপনারা ছেলে ও মেয়ের মধ্যে কোনও স্তরে পার্থক্য সৃষ্টি করবেন না। উভয়কে সমান সুযোগ দিন, আর আমি বলছি, হয়তো সবাই সমান ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমেই, সমান সুযোগের মাধ্যমেই যদি আপনার ছেলে ১৯ করে তাহলে দেখে নেবেন যে আপনার মেয়ে ২০ করবে।
সঞ্চালিকা ১ : শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীজি, মেয়েরা বাড়ি, সমাজ, দেশের শোভা। তাঁদের আকাঙ্ক্ষাগুলি আপনার প্রেরণায় নতুন উড়ানের দিকে যেতে পেরেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান এবং আশীর্বাদধন্য যে আপনার কাছ থেকে সরাসরি আন্তরিক এবং প্রেরণাদায়ী বক্তব্য শুনতে পেয়েছি। আপনার মূল্যবান সময়ের কথা মাথায় রেখে আমি এখন দুটি শেষ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার জন্য আমন্ত্রণ জানাব। এবার আমরা প্রথমে আমন্ত্রণ জানাব নতুন দিল্লির আর কে পুরমের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সেক্টর-৮-এর দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ডুম্পালা পবিত্রা রাও-কে। ডুম্পালা পবিত্রা রাও অনুগ্রহ করে আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।
ডুম্পালা পবিত্রা রাও : নমস্কার প্রধানমন্ত্রীজি! আমি নতুন দিল্লির আর কে পুরমের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সেক্টর-৮-এর দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ডুম্পালা পবিত্রা রাও। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, আমাদের ভারত যেমন উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে, তেমনই সেই উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বজায় রাখার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে আর কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে? আপনার পথ প্রদর্শনের মাধ্যমে ভারত পরিচ্ছন্ন তো হয়েইছে, আর আগামী প্রজন্ম এই পরিবেশকে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আর কী কী অবদান রাখবে? দয়া করে পথ দেখান। ধন্যবাদ স্যার!
সঞ্চালিকা ২ থ্যাঙ্ক ইউ পবিত্রা! মান্যবর, নতুন দিল্লি থেকে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র চৈতন্য লেলে নিজের মনে উঠে আসা এ ধরনের একটি অন্য প্রশ্নের সমাধান চাইছেন। চৈতন্য, অনুগ্রহ করে আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।
চৈতন্য লেলে : প্রণাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি! আমার নাম চৈতন্য। আমি ডি এ ভি বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। আপনার প্রতি আমার প্রশ্ন হল আমরা কিভাবে আমাদের পরিবেশকে আরও পরিচ্ছন্ন এবং ভালো করে তুলতে পারি। ধন্যবাদ!
সঞ্চালিকা ২: ধন্যবাদ চৈতন্য! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, ভারতের যুব সম্প্রদায় এই পবিত্রা এবং চৈতন্যের মতো পরিচ্ছন্ন ও সবুজ ভারতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে চায়। আমরা জানি, এই স্বপ্ন আপনারও হৃদয়ের কাছাকাছি। আমরা সবাই জানতে চাই কিভাবে আমাদের প্রিয় ভারতকে এবং আমাদের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন এবং সর্ব অর্থে বিশ্বের সর্বোত্তম করে তুলতে পারি। আমরা সবাই এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য শুনতে আগ্রহী।
প্রধানমন্ত্রী জি : এমনিতে এটি ‘পরীক্ষা পে চর্চা’র সঙ্গে যুক্ত বিষয় তো নয়। কিন্তু পরীক্ষার জন্য তো ভালো পরিবেশ চাই-ই। তেমনই পৃথিবীতে সব সময় একটি ভালো পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি, আর আমরা ভারতীয়রা তো পৃথিবীকে ‘মা’ বলে মনে করি। আমি সবার আগে আমাকে আপনাদের সামনে এভাবে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য সার্বজনিক রূপে আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েদের, বালক-বালিকাদের হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, আর আমি অনুভব করছি যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করার পর প্রথমবার যখন ১৫ আগস্ট তারিখে লালকেল্লার প্রাকার থেকে ভাষণ দিয়েছিলাম, সেই ভাষণের পর অধিকাংশ মানুষ আমার দিকে নানা রকম প্রশ্ন সহ আঙুল তুলেছিলেন যে, ঠিক আছে, মোদীজি বলে তো দিয়েছেন, কিন্তু এটা কী হতে পারে? সেই সময় আমি প্রথমবার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কথা বলেছিলাম। অনেকেই অবাক হয়েছিলেন যে দেশের প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলছেন! এই লালকেল্লার প্রাকার এমন একটা পরিসর, এখান থেকে মহাকাশ নিয়ে কথা বলা উচিৎ, বিদেশ নীতি নিয়ে কথা বলা উচিৎ, সৈন্যশক্তি নিয়ে কথা বলা উচিৎ। এ কেমন প্রধানমন্ত্রী যে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কথা বলছে? অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা যে যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন, সেই সব আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়েছে, আর এগুলিকে ভুল প্রমাণ করার কাজ যদি কেউ করে থাকে বা আমার পরিচ্ছন্নতার ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার কাজে যাঁরা সবচাইতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা হলেন আমার দেশের বালক-বালিকারা। তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত পরিচ্ছন্নতা অভিযানের ফলেই আজ আমরা এখানে পৌঁছেছি। সেজন্যই এই স্বচ্ছ ভারত অভিযানে আমি সবচাইতে বেশি ক্রেডিট, সবচাইতে বেশি যদি কাউকে দিই তাহলে আমাদের দেশের বালক-বালিকাদের দিতে হয়। আমি এরকম হাজার হাজার প্রশ্ন শুনেছি যেখানে ৫-৬ বছরের বাচ্চারা, তাদের ঠাকুরদা-ঠাকুমা, দাদু-দিদাকে বলেছে, দিনে দশ বার বলেছে যে, এখানে ময়লা ফেলোনা, মোদীজি মানা করেছে, ওখানে ময়লা ফেলো না, ভালো লাগবে না! - এটা অনেক বড় শক্তি। সম্ভবত সেই প্রজন্মের মানুষ হওয়ার ফলে আপনারাও সেই ভাবনা থেকেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি আপনার প্রশ্নকে স্বাগত জানাই। একথা সত্যিই যে আজ গোটা বিশ্ব ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ বা বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে, পরিবেশে পরিবর্তনের ফলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন, আর এর মূল কারণ হল আমরা নিজেদের সম্পদগুলিকে মিসইউজ করেছি, ভুলভাবে ব্যবহার করেছি। আমাদের জন্য ঈশ্বর যেসব ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, সেগুলিকে আমরা নষ্ট করে রেখে দিয়েছি। এখন আমাদের দায়িত্ব হল, যদি আজ আমি জল পান করি বা আমার ভাগ্যে যদি জল থাকে, যদি কোথাও নদী দেখতে পাই, যদি কোনও গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকি, তাহলে এতে আমাদের কোনও ‘কন্ট্রিবিউশন’ বা অবদান নেই। এগুলি আমাদের পূর্বজরা আমাদের জন্য রেখে গেছেন যেগুলি আমরা আজ উপভোগ করছি। সেগুলি আমাদেরকে পূর্বজরা উত্তরাধিকার সূত্রে দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমাদের পরের প্রজন্মকে আমাদের কী দেওয়া উচিৎ? কিছু কি দেওয়া উচিৎ? আপনারাই বলুন, দেওয়া উচিৎ কি উচিৎ নয়! যদি আমরা নিজেদের পরিবেশকে বাঁচাতে পারি তবেই তো পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়ে যেতে পারব, না হলে কোথা থেকে দেব? আর সেজন্য আমাদের পূর্বজরা যেমন আমাদেরকে দিয়ে গেছেন, তার ঋণ স্বীকার করার জন্য, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী দিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব স্বীকার করে আমাদের কর্তব্য পালন করতে হবে। এটাই আমাদের কর্তব্য। এটা নিছকই কোনও সরকারি কর্মসূচির মাধ্যমে সফল হবে না। যেমন মনে করুন, আমি বলছি যে, ভাই, ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’কে বর্জন করা উচিৎ। কিন্তু আমাদেরই পরিবারে ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ ব্যবহৃত হচ্ছে। ভাষণও আমরা করছি, আবার ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ও ব্যবহার করছি। এই দ্বিচারিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারোর বাড়িতে যদি বিয়ের কার্ড আসে, আমরা দেখি যে তার ওপর প্লাস্টিকের একটি সুন্দর র্যাপার মোড়া থাকে। আমরা সেটা বের করে ফেলে দিই। এটা তো আমরা যা ভাবছি তার সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ। তাহলে সহজ স্বভাব কী রকম হওয়া উচিৎ। সহজ স্বভাব হওয়া উচিৎ, কমপক্ষে প্রত্যেকের নিজের পরিবারে ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’-এর ব্যবহার বন্ধ করা। আমরা পরিবেশের জন্য যদি কিছু করতে পারি, আর দেশের স্বার্থে সকল শিশু-কিশোররা যদি এ কাজের দায়িত্ব নেয়, তাহলে আমরা অবশ্যই সফল হব। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, আমি গুজরাটে পশু আরোগ্য মেলা উদ্বোধনে গিয়েছিলাম। যখন আমি মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, আর পশু আরোগ্য মেলা চালু করেছিলাম, আপনারা হয়তো শুনলে অবাক হবেন, আমি গুজরাটে পশুদের দাঁতের চিকিৎসার জন্য ডেন্টাল ট্রিটমেন্ট করাতাম। পশুদের চোখে কর্নিয়া অপারেশন করাতাম। ছানি কাটাতাম। কিছু পশুর বড় অপারেশন করতে হত। এই কাজ করতে গিয়ে আমি একটি এমন গরুকে দেখেছি যার পেট থেকে ন্যূনতম ৪০ কেজি প্লাস্টিক বেরিয়ে এসেছিল। এটা তো মানবতা বিরোধী কাজ! যদি আমাদের মনে সমবেদনা সৃষ্টি হয় যে, আমার তো ভালো লাগে যে হালকা থলে নিয়ে যাচ্ছি আর কাজ হয়ে গেলে ফেলে দেব, এটা ঠিক নয়। আমাদের এখন ‘ইউজ অ্যান্ড থ্রো’ সংস্কৃতি থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে আনতে হবে, আর আমাদের ‘রিইউজ, রিসাইকেল’-এর দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এই পুনর্ব্যবহার বা পুনর্নবীকরণ – এটা ভারতে নতুন কিছু নয়। আমাদের দেশে অনেক যুগ ধরেই প্রত্যেক পরিবারে এই অভ্যাস ছিল। আমরা যা কিছু ব্যবহার করি, সবকিছুই আমরা পুনর্ব্যবহার ও পুনর্নবীকরণ করি। এটা যাঁরা করেন না তাঁরা পরিবেশকে ধ্বংস করছেন। আমরা সম্পদের যতটা অপটিমাম ইউটিলাইজেশন করব, ততটাই পরিবেশকে রক্ষা করব। আজ দেখুন, আমাদের ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটগুলি পরিবেশের জন্য সঙ্কট সৃষ্টি করে চলেছে। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার এখন নতুন স্ক্র্যাপ পলিসি প্রণয়ন করেছে যাতে পুরনো গাড়িগুলিকে বসিয়ে দেওয়া যায়। যেগুলি দূষণ সৃষ্টি করছে, সেই পুরনো গাড়িগুলিকে বসিয়ে দেওয়া হবে। তারপর সেগুলিকে স্ক্র্যাপ করার মাধ্যমে সেগুলি থেকে গাড়ির মালিকরা যাতে কিছু রোজগার করতে পারেন, আর নতুন গাড়ি কিনতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা। এই লক্ষ্যেও অনেক বড় মাত্রায় কাজ শুরু হতে চলেছে। তেমনই আমরা জানি জলের গুরুত্ব কতটা, গাছপালার গুরুত্ব কতটা, প্রকৃতির গুরুত্ব কতটা। আমরা কি এসবের প্রতি সেন্সিটিভ? আমাদের কি প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানের জন্য সমবেদনা রয়েছে? অথচ, এই সমবেদনাকেই আমাদের সহজ স্বভাব করে তোলা উচিৎ। এই স্বভাব যদি তৈরি হয় তাহলে আমরা পরিবেশকে রক্ষা করতে পারব। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন সিওপি-২৬-এ আমি একটি বিষয় তুলে ধরেছি। ইউনাইটেড কিংডম বা যুক্তরাজ্যে যে কনফারেন্স হয়েছিল সেখানে আমি বলেছিলাম যে – ‘লাইফস্টাইল ইজ আ প্রবলেম’। অর্থাৎ, আমাদের যে জীবনশৈলী, সেখানেই যত সমস্যা আর সেজন্যই আমি উপদেশ দিয়েছিলাম যে বিশ্ববাসীকে ‘মিশন লাইফ’-এর পথে যেতে হবে। এই ‘লাইফ’ হল ‘লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। সেজন্য আমি ‘মিশন লাইফ’ – এই শব্দ ব্যবহার করেছি। আমি মনে করি, আমরাও আমাদের জীবনে কিছু করে যেতে পারব। আমাদের চারতলা বাড়ি, তবুও আমরা লিফটে ওঠা-নামা করি। কিন্তু অল্প বয়সে আমাদের কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করা উচিৎ। লিফটের ব্যবহার যত কম করব ততই আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। পাশাপাশি এভাবে আমরা পরিবেশেরও উন্নতি ঘটাব। এরকম ছোট ছোট বিষয় যদি আমরা আমাদের জীবনে মেনে চলি, তাহলেই দেখবেন অনেক পরিবর্তন আসবে। সেজন্যই আমি বলেছিলাম যে আমাদের বিশ্বে ‘প্রি-থ্রি মুভমেন্ট’ বা পি-থ্রি অভিযান শুরু করার প্রয়োজন রয়েছে। এই ‘পি-থ্রি’ হল ‘প্রো প্ল্যানেট পিপল’। এই ‘পি-থ্রি’ অভিযানের সঙ্গে যত বেশি মানুষ যুক্ত হবেন আর সচেতনভাবে এই চেষ্টা করে যাবেন, তত দ্রুত আমি মনে করি আমরা সবকিছুকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারব। দ্বিতীয়ত আজ যখন আমাদের দেশ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপনে আজকের যে প্রজন্ম তাঁদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা যখন নিজেদের জীবনের সবচাইতে সফল সময়ে পা রাখবে, তখন দেশ স্বাধীনতার শতবর্ষ পালন করবে। অর্থাৎ, এই ২৫ বছর আপনাদের জীবনের সোনালী বছর। আপনাদের জন্য, আপনাদের অবদান এই ২৫ বছরে কী হবে, যাতে আমাদের দেশ সেই স্থানে পৌঁছয়, আমরা গর্বের সঙ্গে দেশের শতবর্ষকে অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে যাতে পালন করতে পারি, আমাদের নিজেদের জীবনকে তার সঙ্গে যুক্ত করতে পারি। সেজন্য একটি সহজ, সাধারণ পথ রয়েছে। সেটি হল – কর্তব্যের ওপর জোর দেওয়া। যদি আমি আমার কর্তব্য ঠিকঠাক পালন করি, অর্থাৎ আমি যদি অন্যের অধিকারকে রক্ষা করতে পারি তাহলে তাঁকে তাঁর অধিকার রক্ষার জন্য পথে পা রাখতে হবে না। আজ কিন্তু আমাদের সমাজের মূল সমস্যা এটাই যে আমরা নিজেদের কর্তব্য পালন করি না। সেজন্য অধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়। আমাদের দেশে কাউকে নিজেদের অধিকারের জন্য যাতে লড়তে না হয় তা সুনিশ্চিত করতে আমাদের প্রত্যেককে নিজেদের কর্তব্য পালন করে যেতে হবে। আর এটাই আমাদের কর্তব্য। সেই কর্তব্যের উপায়গুলিই আমাদের কর্তব্যের পালন। যদি আমরা কর্তব্য পালন করি, আমাদের প্রত্যেকের যা যা দায়িত্ব রয়েছে সেগুলিই যদি পালন করি, তাহলেই দেখবেন আমাদের দেশ … গোটা বিশ্বের মানুষ … আমাদের এখানে তো এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করলে মানুষ ভয় পান। কোথাও মোদী কৃতিত্ব না নিয়ে নেয়, মোদীর জয়জয়কার না হয়। সেজন্য একটু সঙ্কোচ করেন। মোদীর জয়জয়কার করতে তাঁদের সঙ্কোচ। কিন্তু আমাদের দেশে যে টিকাকরণ অভিযান হয়েছে তা বিশ্বে অতুলনীয়, তাতেও যখন আমাদের স্কুলের ছেলে-মেয়েদের জন্য টিকাকরণ অভিযান শুরু হয়েছে, আর যত দ্রুতগতিতে আমাদের দেশে শিশুরা দৌড়ে দৌড়ে নিজের টিকা নিয়ে নিয়েছে এটা নিজেই একটি বড় ঘটনা। আপনাদের সকলেরও টিকাকরণ হয়ে গেছে। কাদের হয়েছে হাত তুলুন তো? বাহ! সবারই তো দেখছি টিকাকরণ হয়েছে! যদি বিশ্বে কোনও দেশে এরকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার হিম্মত কোনও প্রধানমন্ত্রী করে, তাহলে তাঁর কী জবাব ছেলে-মেয়েরা দিতে পারে, তা আপনারা জানেন! ভারতের ছেলে-মেয়েরা যথাসময়ে সঠিক জবাব দিতে পারে। অর্থাৎ, আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করেছি। এই কর্তব্য পালন ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠেছে। তেমনই আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, প্রকৃতিকে বাঁচাতে হলে, পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে আমরা যদি আমাদের কর্তব্যগুলিকে সচেতনভাবে পালন করি, নিজেদের কাজ করে যাই তাহলে আমরা ঈপ্সিত পরিণাম পেতে পারি।
সঞ্চালিকা ১ : প্রধানমন্ত্রীজি দ্বারা ‘পরীক্ষা পে চর্চা, ২০২২’ অনুষ্ঠানে আমাদের মতো কোটি কোটি ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক-অভিভাবিকাদের উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং সাফল্যের আকাঙ্ক্ষায় বদলে গেছে। আমরা কৃতজ্ঞ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, আপনার এই সোনালী বক্তব্যের জন্য আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। এখানেই আমরা আজকের অনুষ্ঠানের ইতি টানব। এই অসাধারণ সকালের চেতনা ও উদ্দীপনা আমাদের মুহূর্তগুলিকে সারা জীবনের জন্য প্রেরণা যুগিয়ে গেল। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজিকে আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি যেভাবে নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করে এখানে আমাদের সঙ্গে এতটা সময় কাটালেন, আমাদেরকে তাঁর চুম্বকীয় ব্যক্তিত্বের ছোঁয়ায় উদ্দীপ্ত করলেন, প্রেরণা যোগালেন, সেজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ মহোদয়।
প্রধানমন্ত্রী : আমার মনে একটা প্রশ্ন উঠছে, আপনারা বলেছেন যে, আপনাদের মন এদিকে সেদিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়| কিন্তু আমি বলব আপনারা নিজেদের মনকে প্রশ্ন করুন, যখন আপনারা অন লাইনে পড়াশুনো করেন তখন আপনারা সত্যি পড়াশুনো করেন না ছবি দেখেন| আমি আপনাদের হাত তুলতে বলবো না কিন্তু আপনারা বুঝে গেছেন আমি আপনাদের ঠিক জায়গাটা ধরে ফেলেছি| আসলে দোষ অফলাইন বা অনলাইনের নয়| আপনারা এটা খেয়াল করেছেন যে, আপনাদের শরীর অনেকসময় ক্লাসরুমে থাকলেও মন এদিকে সেদিকে ঘুরে বেড়ায়| তাকিয়ে আছেন শিক্ষকের দিকে, কানে একটা কথাও যাচ্ছে না| মন অন্য কথাও থাকার কারণে আপনি কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছেন না| আসলে যা অফলাইনে হয় অনলাইনে সেরকমই হয়| মাধ্যম কোন সমস্যা নয়, মনই হল সমস্যা|
২০১৪-তে আপনারা যখন আমাকে দায়িত্বে আনলেন অনেক ব্রেন স্টর্মিং হল, গ্রামের শিক্ষক, শহরের অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রী সবার কাছে পরামর্শ চাওয়া হলো বিশেষজ্ঞরা ৬-৭ বছর ধরে কাজ করলেন, জনগণের কাছ থেকে ১৫-২০ লক্ষ ইনপুটস পাওয়া গেল| সমস্ত ভাবনা চিন্তার পর সরকার নয় শিক্ষা জগতের সবাই মিলে নয়া শিক্ষা নীতি তৈরী করলেন| নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি, ২০২০| এই নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি, ২০২০-তে একুশ শতকের প্রত্যাশা পূরণের ভাবনা রয়েছে| এর মাধ্যমে ভারতকে ভাবিকালের দিকে এগিয়ে নেওয়া যাবে| বিশ শতকের পুরনো ধ্যান ধারণা একুশ শতকে ভারতের বিকাশের উপযোগী নয়| দেশকে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে হবে|প্রযুক্তিকে প্রতিবন্ধকতা না ভেবে একে স্বাগত জানিয়ে উপযোগী ঢঙে ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে| আপনারা যখন কোন বিষয়কে খোলা মনে গ্রহন করবেন তখন তা সবার পক্ষে কার্যকর হবে|
স্মৃতিশক্তি প্রসঙ্গে বলতে গেলে বন্ধুর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়ই ধরুন। একজন যখন আরেকজনকে শুভেচ্ছা জানান তখন অপ্র্জনের মনে হয় আরে ও তো আমার জন্মদিন মনে রেখেছে| এভাবে একজন আরেকজনের জীবনে নিজের গুরুত্ব বুঝতে পারেন| এখানে মূল কথা হচ্ছে স্মৃতিশক্তি| কাজেই পড়াশুনো মানে শুধু যদি পরীক্ষা পাশের জন্য হয় তাহলেত আমরা ভুলে যাবো কিন্তু যদি বপ্ন্ধুর জন্মদিন মনে রাখার মত হয় তাহলে তা আপনি কখনই ভুলবেন না| আপনি মন স্থির করে নিন| তিন চারবার শ্বাস নিন| তখনই আপনার স্মৃতিতে থাকা বিষয় আপনি ঠিক মনে করে রাখতে পারবেন| ঈশ্বর আমাদের সব একইরকম দিয়েছেন| আমরা নিজেকে কিভাবে প্রয়োগ করছি তার ওপর সব নির্ভর করে| নিজের মনকে আমাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে| তবেই সে আমার প্রয়োজন এবং ইচ্ছে অনুসারে কাজ করবে| পরীক্ষার আগে এটা মনে রাখুন, আপনাদের মন স্থির রাখলেই যা পড়েছেন সব মনে পড়তে শুরু করবে|
সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার প্রতি সম্মানের ভাবনা চোখে পড়া খুবই জরুরি| শিক্ষকতার জায়গায় মহিলারা কিন্তু বিশিষ্ট জায়গায় আছেন| আমি রাজনৈতিক দলগুলিকে আশ্বস্ত করা মত বলছি না এমন দেখা যেতেই পারে যে, পুরুষরা আগামীদিনে শিক্ষকতায় নিজেদের জন্য সংরক্ষণ দাবি করে বসলেন| কারণ এই পেশায় একটা বড় অংশ জুড়ে আমাদের মা ও বোনেরা আছেন| নার্সিংয়ের পেশাতেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা মহিলাদের নিযুক্ত থাকতে দেখি| সেবাভাবনা, মাতৃসুলভ ভাবনার ক্ষেত্রে তাঁরাই দেশের গৌরব বাড়াচ্ছেন| পুলিশের পেশাতেও মহিলারা ব্যাপক সংখ্যায় আসছেন| এনসিসি, সৈনিক স্কুলে মেয়েরা যোগ দিচ্ছেন| সেনাবাহিনীতে মেয়েরা যোগ দিচ্ছেন| জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়েরা নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছেন| কাজেই আমার সমাজের সবার প্রতি এই আবেদন, আপনারা কোনমতেই ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে বৈষম্য করার চেষ্টা করবেন না| সমান সুযোগ দেবেন| আমি বিশ্বাস করি সাম্যের মাধ্যমেই এমন অগ্রগতি হবে যে ছেলে যদি উনিশ হয় তো মেয়ে কুড়ি হয়ে দেখাবে|
আজ গোটা বিশ্ব ভবন উষ্ণায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন| আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের অপচয় করেছি| আমরা আজকে যে নদী দেখছি, যে গাছের ছায়া দেখছি তা আমাদের পূর্বপুরুষদের অবদান| আমাদের কোন কৃতিত্ব নেই| আমরা শুধু সব কিছু নষ্টই করেছি| আমরা যদি সঞ্চয় না করি, তাহলে আমরা কিছু দিতে পারবো না| অথচ আমাদের ভাবীকালের জন্য কিছু সঞ্চয় করে যাওয়া নৈতিক দায়িত্ব| এজন্যই আমাদের পূর্বপুরুষদের ঋণ স্বীকার করে বর্তমানে আমাদের আগামী প্রজন্মকে দিয়ে যাওয়ার দায়বদ্ধতা নিয়ে আমাদের দায়িত্ব পালনের কর্তব্য রয়েছে| আর সেটা শুধুমাত্র সরকারী কর্মসূচিতেই সম্পন্ন করা সম্ভব নয়| জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে| এজন্য একক ব্যবহারের প্লাস্টিক থেকে সতর্ক থাকতে হবে| আমাদের পরিবেশকে যেকোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে| বর্তমান ভারত সরকার এজন্যই পুরনো দূষণ ছড়ানো গারিগুলিকে রাস্তা থেকে অপসারণের সংকল্প নিয়েছে|
হয়ত আপনারা কেউ প্রশ্ন করেননি কিন্তু আমি তবুও বলব যে, জীবনে যে কোনও ভাবেই আনন্দের উপস্থিতি অবশ্যই থাকতে হবে| প্রত্যেকেরই নিজেদের মধ্যে সেজন্য গুণপনা বিকশিত করতে হবে| সেটাকে যদি বিকশিত করতে পারি তাহলে আমরা সব সময় আনন্দে সময় কাটাতে পারব| তৃপ্তির পরিসরে নিজেদের খুঁজে পাব| আর সেটা পাব তখনই যখন আমরা গুণপনাকে পূজা করতে পারব| যখনই আমরা ভালো কিছু দেখব সেটাকে পূজা করতে চেষ্টা করব| প্রশংসা করব| এর ফলে গুনী ব্যক্তির মনের জোর বাড়বে| সেই সঙ্গে আমাদের মধ্যেও নতুন শক্তির উন্মেষ হবে| আমাদের যে কোনও ভালো বিষয়কে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণের স্বভাব গড়ে তুলতে হবে| ঈর্ষাপরায়ণতা ত্যাগ করতে হবে| সারাক্ষণ প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব রাখলে মন ছোট হয়ে যায়| আমাদের অন্যের ভালো গুনকে, শক্তিকে জানা বোঝার শক্তি অর্জন করতে হবে| তাহলেই সেই ভালো গুণগুলি নিজের মধ্যে অর্জনের শক্তি নিজে থেকেই এসে যাবে| কাজেই নিজের জীবনকে সফল করার জন্য আমি আবেদন জানাব, আপনাদের আশেপাশে যা কিছু ভালো, যা কিছু অনন্য সেগুলির প্রতি বিনম্র হতে হবে| অপরের সমস্ত ভালো কিছুকে সহজভাবে নিতে পারলেই মনে কখনো ঈর্ষা, প্রতিশোধের ভাবনা থাকবে না| আমরা আনন্দময় জীবনযাপন করতে পারব| এই কথার মধ্য দিয়েই আমি আরও একবার আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি| পড়ুয়াদের অভিনন্দন জানাচ্ছি, শিক্ষা বিভাগকে অভিনন্দিত করছি এরকম অসাধারণ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য| এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই নবীন বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ আমি পেয়েছি| কারও কারো মনে হতে পারে, মোদী এরকম পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা কেন করেন| আমি জানি না, আপনাদের লাভ হল কি হল না, কিন্তু আমার যে লাভ হয় সেটা নিয়ে আমার মনে কোন দ্বিধা নেই| আপনাদের মাঝখানে যখন আসি আমি যেন নিজের পঞ্চাশ বছর কমিয়ে ফেলতে পারি| আমার প্রজন্ম পাল্টায় না| কিন্তু আমি আপনাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই| আর তাতে আমি আপনাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা জানতে পারি, বুঝতে পারি| আমার জীবনকে সেই মত সাজিয়ে নিতে চেষ্টা করি| এজন্য এই অনুষ্ঠান নিজেকে গড়ে তোলার কাজে লাগাতে পারছি| আর আমাকে এই যে সুযোগ আপনারা দিচ্ছেন সে জন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ| আপনারা সবাই, যাঁরা ঘোষকরা রয়েছেন, সবাই এখানে আসুন। সবাইকে মঞ্চে ডেকে নিন। কয়েকজন এ পাশে কয়েকজন ওপাশে দাঁড়ান। দেখুন, আজ আমি সবার আগে এই মানুষদের শুভকামনা জানাতে চাই, এঁরা সবাই এত ভালোভাবে এই সমস্ত অনুষ্ঠানটিকে আয়োজন করেছেন, পরিচালনা করেছেন। কোনও পর্যায়েই তাঁদের আত্মবিশ্বাসে কোনও খামতি নজরে আসেনি। আপনারা সুক্ষ্মতাসুক্ষ্মভাবে অবজার্ভ করেছেন, তাঁদেরকে দেখেছেন। আমিও এরকম সবাইকে অবজার্ভ করতাম। এরকম সামর্থ্য এখানে বসে থাকা প্রত্যেকের মধ্যেই রয়েছে। যাঁরা টিভিতে এই অনুষ্ঠান দেখছেন, তাঁদের মধ্যেও এই সামর্থ্য রয়েছে, আর যাঁরা দেখছেন না, তাঁদের মধ্যেও রয়েছে। জীবনে যেসব প্রশ্ন আমাদের আওতার মধ্যে নেই, তবুও আমি বলতে চাইব যে আমরা প্রকৃতপক্ষেই জীবনে যদি আনন্দের অনুভূতি অনুভব করতে পারি তাহলে নিজের মধ্যে একটি ক্ষমতা বা উৎকর্ষ বিকশিত করার চেষ্টা করতে হবে। যদি এই লক্ষ্যে আপনারা নিজেদের ডেভেলপ করতে পারেন, নিজেদের গড়ে তুলতে পারেন তাহলে আপনারা সর্বদাই আনন্দিত থাকবেন, আর এর মূল মন্ত্র হল গুণের পুজো করা, গুণের পূজারী হয়ে ওঠা। আমরা যাঁর মধ্যেই গুণ দেখি, উৎকর্ষ দেখি, আমরা তাঁরই পূজারী হয়ে পড়ি। এর ফলে তিনি যতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠেন, আমরাও তেমনই শক্তি অনুভব করি। আমাদের স্বভাব তৈরি হয়ে যাক যে, যেখানেই ভালো কিছু দেখব, অবজার্ভ করব, তেমন ভালোটা অবজার্ভ করব, তাকে আমরা স্বীকার করার চেষ্টা করব। নিজেকে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ফেলে তৈরি করার চেষ্টা করব, আবিষ্কার করার চেষ্টা করব, যুক্ত করার চেষ্টা করব। যদি আমরা ঈর্ষাভাবকে অঙ্কুরিত হতে দিই, লক্ষ্য করুন, এটা তো আমার মাধ্যমে আগেই হয়ে গেল, দেখো ওখানে পাঞ্জাবী তো রয়েছে, আর সেটি আমার থেকেও অনেক বেশি ভালো। দেখুন বন্ধুগণ, এই পরিবারে তো এত ভালো আবহ রয়েছে, ওঁর তো কোনও সমস্যাই নেই। যদি এই প্রতিযোগিতা মনের মধ্যেই পড়ে থাকে, তাহলে আমরা ধীরে ধীরে ধীরে ধীরে নিজেকে অত্যন্ত ছোট করে তুলতে থাকি। তাহলে আমরা কখনও বড় হতে পারব না। আমরা যদি অন্যদের সামর্থ্যকে, অন্যদের বৈশিষ্ট্যকে, অন্যদের শক্তিকে জানা এবং বোঝার সামর্থ্য নিজের মধ্যে বিকশিত করতে পারি, তাহলে সেই বৈশিষ্ট্যগুলিকে নিজের মধ্যে আনার সামর্থ্য নিজেই বিকশিত হতে শুরু করবে, আর সেজন্য আমি নিজের জীবনে সফল হওয়ার জন্য আপনাদের সবার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করব যে, জীবনে যেখানেই সুযোগ পাবেন যা বিশেষ, যা ভালো, যা সামর্থ্যবান, সেগুলির দিকে আপনাদের লক্ষ্য থাকা উচিৎ। সেগুলির দিকে আপনাদের আনুকূল্য থাকা উচিৎ। এতে জানার এবং বোঝার ও স্বীকার করার অনেক সাহসী মন হওয়া চাই। কখনও ঈর্ষাভাব থাকলে চলবে না। কখনও আমাদের মনে প্রতিরোধের ভাবনা সৃষ্টি হবে না। আমরাও অত্যন্ত আনন্দ এবং সুখের জীবন বাঁচতে পারব। আমি আরও একবার সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানাই, আর আমি এখন শিক্ষা বিভাগকে অভিনন্দন জানাব কারণ, আপনারা সবাই এই অসাধারণ কর্মসূচির আয়োজন করেছেন, আপনারা সবাই বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে দিন রাত এক করে কাজ করে চলেছেন। … এখানে আমার এতজন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। সমস্ত নব যুবক-যুবতী আমার সঙ্গে মিলিত হওয়ার সৌভাগ্য পেয়েছেন। কিন্তু কিছু মানুষের এরকম হয়তো মনে হবে যে মোদী এই ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন কেন করেন? পরীক্ষার দিন তো নির্ধারিত আছে, শিক্ষকমশাই তাঁদেরকে অনেক কিছু শিখিয়ে দেন। এখানে প্রত্যেকেরই লাভ হয় কিংবা হয় কিনা - সেটা আমি জানি না। আমার লাভ হয়। আমার লাভ হল, আমার সন্তানদের প্রত্যেকের নামে যখন এখানে থাকি, তখন আপনার, আমার লাভ এটা হত যে, যখন আমি আপনাদের মাঝে আসি, তখন আমার বয়স ৫০ বছর কমে যায় আর আমি নিজেকে আপনাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের থেকে কিছু শিখে গ্রো করার চেষ্টা করি। অর্থাৎ, আমি … আমার প্রজন্ম বদলায় না। আসলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে আমি সব সময়ই আপনাদের মন বুঝতে পারি, আপনাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলি বুঝতে পারি, আমি জীবনকে সেই ছাঁচে ফেলার চেষ্টা করি। সেজন্য এই কর্মসূচি আমার নিজেকে তৈরি করার কাজে লাগছে। আমার সামর্থ্যকে বৃদ্ধি করার কাজে লাগে আর সেজন্য আমি বারবার আপনাদের মাঝে আসি। আজও আমি নিজেকে নতুন করে তৈরি করার জন্য, নিজেকে কিছু শেখানোর চেষ্টা করেছি। আপনারা সবাই আমাকে সময় দিয়েছেন এজন্য আমি আপনাদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
CG/SB/DM/
(Release ID: 1814640)
Visitor Counter : 2020
Read this release in:
Gujarati
,
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam