প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

নিরবচ্ছিন্ন ঋণ প্রবাহ ও আর্থিক অগ্রগতির লক্ষ্যে সামঞ্জস্য গড়ে তোলা শীর্ষক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 18 NOV 2021 9:30PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১৮ নভেম্বর, ২০২১
 
নমস্কার!
 
অর্থমন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমনজী, বিভাগীয় দুই প্রতিমন্ত্রী শ্রী পঙ্কজ চৌধুরীজী এবং ডাঃ ভগবত কারাডজী, আরবিআই – এর গভর্নর শ্রী শক্তিকান্ত দাসজী, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত অগ্রণী ব্যক্তিগণ, ভারতীয় শিল্প সংস্থার সঙ্গে যুক্ত শ্রদ্ধেয় সহকর্মী এবং এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য অতিথি তথা ভদ্র মহোদয়া ও মহোদয়গণ।
 
আমি যখন থেকে এখানে উপস্থিত হয়েছি এবং যা কিছু শুনেছি, তাতে আমার এই উপলব্ধি হয়েছে যে, এখানে এক বিশ্বাসের বাতাবরণ রয়েছে। আর তাই আমাদের বিশ্বাস এত বেশি প্রাণবন্ত যে, আমরা যদি একযোগে কাজ করি, তা হলে এটা বিপুল সম্ভাবনাকে সংকল্পে পরিণত করতে পারে। আমার মনে হয় না, এই বিশ্বাস আমাদের সংকল্পগুলি পূরণে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে। যে কোনও দেশের উন্নয়নের যাত্রাপথে এমন একটা সময় আসে, যখন সেই দেশ অগ্রগতির লক্ষ্যে নতুন সংকল্প নেয় এবং দেশের সমস্ত প্রাণশক্তি সেই সংকল্পগুলি পূরণে সামিল হয়। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম দীর্ঘ সময় ধরে চলেছিল। ঐতিহাসিকরা ১৮৫৭’কে ফোয়ারা হিসাবে দেখেন। কিন্তু, ১৯৩০-এর ডান্ডি অভিযান এবং ১৯৪২ – এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল আমাদের কাছে টার্নিং পয়েন্ট। আর এটাকেই আমরা বলতে পারি যে, দেশ এখান থেকেই অগ্রগতির লক্ষ্যে পা বাড়িয়েছিল। গত শতাব্দীর তৃতীয় দশকে দেশে উত্থানের এক বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। এর ফলে, ১৯৪২-এর দ্বিতীয় উত্থানের পরিণাম ১৯৪৭। আমি এখানে যে অগ্রগতির কথা বলছি, তা ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের সঙ্গে যুক্ত এবং আজ আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি, যা আমাদেরকে প্রকৃতপক্ষেই লক্ষ্য নির্ধারণের দিকে অগ্রসর করেছে। লালকেল্লা থেকে ১৫ই অগাস্ট আমি বলেছিলাম, এটাই সেই সময়, এটাই প্রকৃত সময়। দেশ গঠনের এই মহাযজ্ঞে আপনারা সকলেই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তাই, আপনারা যে ভবিষ্যৎ রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন এবং দু’দিনের আলোচনায় যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
 
বন্ধুগণ,
 
সরকার গত ৬-৭ বছরে যে সমস্ত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রকে যে সহায়তা যোগানো হয়েছে, তার দরুণ আজ দেশে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় হয়ে উঠেছে। আপনারা এ বিষয়ে সম্মত হবেন যে, দেশে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার স্বাস্থ্য এখন অনেকটাই ভালো। ২০১৪’র আগে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের কাছে যে সমস্ত সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ ছিল, আমরা তা দূর করেছি। আমরা ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা দূর করে তাদের পুনর্মূলধন যুগিয়ে শক্তিশালী করে তুলেছি। আমরা ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা ও দেউলিয়া বিধি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আইন ও ঋণ পুনরুদ্ধার ট্রাইব্যুনালের মতো ক্ষেত্রে সংস্কার করেছি। করোনা মহামারীর সময় দেশে একটি স্বতন্ত্র স্ট্রেসড্‌ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ভার্টিকাল গঠন করেছি। এর ফলে, ব্যাঙ্কগুলির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া আরও ভালো হয়েছে। এখন ব্যাঙ্কগুলির অবস্থা অনেক মজবুত এবং তা তাদের আর্থিক স্বাস্থ্যের মধ্যেই প্রতিফলিত হয়। ব্যাঙ্কের যে পরিমাণ অর্থ পুনরুদ্ধার হয়েছে, তা থেকে সরকারের স্বচ্ছতা ও অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটে। দেশ থেকে যখন একজন টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়, তখন সে বিষয়ে প্রচুর আলাপ-আলোচনা হয়। তবে, একটি শক্তিশালী সরকার যখন সেই টাকা ফিরিয়ে আনে, তখন তা নিয়ে কোনও তর্কের অবকাশ থাকে না। বিগত সরকারগুলির সময় ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের কাছ থেকে ৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি উদ্ধার করা হয়েছে। সমাজে উচ্চস্তরে থাকা কিছু ব্যক্তির কাছে এই ৫ লক্ষ কোটি টাকা নগণ্য মনে হতে পারে। তবে, এটা তাঁদের ধারণা মাত্র। আমি নিশ্চিত এখানে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা এরকম ধারণা পোষণকে খুব একটা আমল দেবেন না। এটা সত্যি যে, আমাদের ব্যাঙ্কগুলিরও এরকম ধারণা ছিল। তাদের মনে হ’ত, ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা আখেরে তাদের। এটা কোনও বড় বিষয় নয় যে, টাকা কোথায় রয়েছে, আপনার কাছে না আমার কাছে। একটা সময় যা চাওয়া হয়েছে, তাই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তাদের কাছে এই ধারণা ছিল না যে, ২০১৪’তে দেশ এক সম্পূর্ণ ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেবে।
 
বন্ধুগণ,
 
আমরা বিদেশ থেকে অর্থ ফিরিয়ে আনতে নীতি ও আইনের পন্থা অবলম্বন করেছি। এজন্য আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলকেও কাজে লাগিয়েছি। এ ব্যাপারে সরকারের বার্তা ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট এবং তা হ’ল বিদেশ থেকে টাকা ফিরিয়ে আনা। এমনকি, আজও সেই প্রক্রিয়া চলছে। জাতীয় সম্পদ পুনর্গঠন সংস্থা গঠন এবং ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি সরকারি গ্যারান্টির ফলে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকার স্ট্রেসড অ্যাসেট-জনিত সমস্যার শীঘ্রই সমাধান হতে চলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির একত্রীকরণ সমগ্র ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় পারদর্শিতা আরও বাড়িয়েছে এবং বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহেও ব্যাঙ্কগুলিকে সাহায্য করছে।
 
বন্ধুগণ,
 
গৃহীত যাবতীয় সংস্কারমূলক পদক্ষেপ ব্যাঙ্কগুলির এক মজবুত ও ব্যাপক মূলধনী ভিত্তি গঠন করেছে। আজ ব্যাঙ্কগুলির কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে নগদের যোগান রয়েছে এবং বকেয়া অনুৎপাদক সমস্যার কোনও সংস্থান নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ গত ৫ বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন। করোনা মহামারী সত্ত্বেও চলতি অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে আমাদের ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক সুস্বাস্থ্য প্রত্যেকের নজর কেড়েছে। এর ফলস্বরূপ, ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের প্রতি আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থাগুলির দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন ঘটেছে। 
 
বন্ধুগণ,
 
আজ ভারতের ব্যাঙ্কগুলি এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, তারা নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চারে এবং দেশের অর্থ ব্যবস্থাকে আত্মনির্ভর করে তুলতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি মনে করি, এটি ভারতে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে সাফল্যের এক মাইলফলক। আপনারা এটা অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন যে, এই মাইলফলক প্রকৃত পক্ষেই আমাদের অগ্রগতির লক্ষ্যে যাত্রাপথের সূচক হয়ে উঠেছে। আমি এই বিষয়টিকে ভারতে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের এক নতুন সূচনা হিসাবে দেখছি। এখন আপনাদের কাছে সময় এসেছে, দেশে সম্পদ সৃষ্টিতে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে সাহায্য করার। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির কথাও একটু আগেই উল্লেখ করেছেন। আমিও মনে করি, এটাই সঠিক সময়। এখন সময়ের চাহিদা হ’ল ভারতের ব্যাঙ্কগুলি নিজেদের এবং দেশের ব্যালেন্সশিট আরও বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা নিক। আপনারা ব্যাঙ্ক শাখায় গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করবেন না। পরিবর্তে, আপনারা গ্রাহকের, বিভিন্ন সংস্থা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলির চাহিদা বিশ্লেষণ করুন এবং তাদের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিন। এখানে আমি একটি উদাহরণ দিতে পারি। আপনারা জানেন, উত্তর প্রদেশের বুন্দেলখন্ড এবং তামিলানাডুতে দুটি প্রতিরক্ষা করিডর গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকার এই করিডর গড়ে তোলার কাজে জোর দিচ্ছে। করিডরগুলির আসেপাশে যে সমস্ত ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে, তাদের সঙ্গে আপনারা কখনও বৈঠকে বসেছেন কি? এই করিডরের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলি কি ভূমিকা নিতে পারে, তা জানার জন্য? প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক নতুন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উদীয়মান সম্ভাবনাগুলি কি কি? কারা (শিল্পপতিরা) এই করিডরে বিনিয়োগ করতে পারেন? কোন ক্ষুদ্র ও মাঝারি সংস্থাগুলি এর অঙ্গ হয়ে উঠতে পারে? ব্যাঙ্কগুলির পদক্ষেপ কি হতে পারে? ব্যাঙ্কগুলি কিভাবে একে-অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে? কে আরও ভালো পরিষেবা দিতে পারে – এগুলি নিয়ে আরও চিন্তভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। তাই, এগুলি পূরণ হলে সরকার প্রতিরক্ষা করিডর গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তার বাস্তবায়ন খুব দূরে নয়। প্রতিরক্ষা করিডর গড়ে তুলতে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার ফলস্বরূপ ইতিমধ্যেই আগামী ২০ বছরের ক্রেতাদের পাওয়া গেছে। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে, ব্যাঙ্কগুলিও ভালো কাজ করছে – এরকম ভাবলে চলবে না। 
 
বন্ধুগণ,
 
আপনারা এরকম ধারণা পোষণ করবেন না যে, আপনারা অনুমোদক এবং সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি আবেদক। ব্যাঙ্কগুলিকে অবশ্যই অংশীদারিত্বের মডেল গ্রহণ করতে হবে। উদাহরণ হিসাবে বলতে পারি, ব্যাঙ্ক শাখাগুলি অন্ততপক্ষে ১০ জন যুবার কাছে অথবা কোনও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থার কাছে তাঁদের ব্যবসায়িক কাজকর্মের পরিধি বাড়াতে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেতে পারে। স্কুল জীবনের কথা আমার এখন খুব মনে পড়ছে। দেশে তখনও ব্যাঙ্কগুলির জাতীয়করণ হয়নি। বছরে দু’বার ব্যাঙ্কের কর্তা-ব্যক্তিরা আমাদের স্কুলে আসতেন এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতেন। তখন সব ব্যাঙ্কই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এই কাজ করেছে। কিন্তু, এখন ব্যাঙ্কগুলির জাতীয়করণের পর হয়তো দৃষ্টিভঙ্গীও পাল্টেছে। ব্যাঙ্কগুলির সক্ষমতার কথা স্বীকার করে নিয়ে আমি ২০১৪’তে সমস্ত ব্যাঙ্ককে বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলাম, আমি জন ধন অ্যাকাউন্ট অভিযান শুরু করতে চাই। এজন্য আমাকে প্রয়োজনে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে দরিদ্র মানুষের কুঁড়েঘরেও যেতে হতে পারে। একটা সময় ছিল, যখন আমি ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতাম, তখন আস্থার এরকম পরিবেশ ছিল না। সর্বত্রই আশঙ্কার পরিবেশ ছিল। আজ এটা কিভাবে সম্ভব, বিশাল এই দেশে কেবল ৪০ শতাংশ মানুষ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত এবং বাকি ৬০ শতাংশ ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আঙিনার বাইরে রয়েছেন। জাতীয়করণের পর ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা যাঁরা এক সময় বড় বড় শিল্প সংস্থার সঙ্গে লেনদেন করতেন, আজ তাঁরা জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারেও সমান উদ্যোগী হয়েছেন। আজ আমি গর্বের সঙ্গে একথা বলতে পারি যে, বিশ্বের দৃষ্টান্তমূলক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ হিসাবে জন ধন অ্যাকাউন্ট কর্মসূচির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যাঙ্ক ও কর্মীদের বড় ভূমিকা রয়েছে। এই সাফল্য কেবল আপনাদের প্রচেষ্টাতেই অর্জিত হয়েছে। ২০১৪’তে জন ধন অভিযানের মাধ্যমে যে বীজ প্রোথিত হয়েছিল, বর্তমান করোনার কঠিন পরিস্থিতির সময় তার সুফল পাওয়া গেছে। আর এটাই জন ধন অভিযানের অন্তর্নিহিত শক্তি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এরকম দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে চলতে হবে। আপনারা এটা কল্পনা করতে পারেন যে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস কতটা বৃদ্ধি পায়, যখন ব্যাঙ্ক কর্মীরা তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ান। আপনাদের ব্যাঙ্কিং অভিজ্ঞতা থেকে ঐ ব্যবসায়ীরাও লাভবান হন।
 
বন্ধুগণ,
 
আমি জানি, ব্যাঙ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় প্রকল্পগুলিতেই কেবল বিনিয়োগ করা যায়। কিন্তু, একই সঙ্গে আমাদেরকে যে কোনও প্রকল্প বাণিজ্যিক দিক থেকে সম্ভাবনাময় করে তুলতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় প্রকল্পের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও অঞ্চল হয় না। তাই, আমাদের ব্যাঙ্কগুলি আরও একটি কাজ করতে পারে। আপনারা জানেন, নির্দিষ্ট একটি এলাকার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কতটা। তাই, যদি কোনও ঋণ গ্রহীতা সততার সঙ্গে সময়সীমার মধ্যে ৫ কোটি টাকার ঋণ মিটিয়ে দেন, তা হলেও আপনাদেরও উচিৎ ঋণ সহায়তার ক্ষমতা আরও বাড়ানো। আপনারা সকলেই উৎপাদন সংযুক্ত উৎসাহভাতা কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত আছেন। সরকার উৎপাদক সংস্থাগুলিকে উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহ দিচ্ছে, যাতে তারা উৎপাদনশীলতা কয়েকগুণ বাড়াতে পারে এবং বিশ্বের অগ্রণী সংস্থা হিসাবে নিজেদের পরিচিতি গড়ে তুলতে পারে। আজ দেশে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হ’ল – দেশে বড় মাপের পরিকাঠামো সংস্থা ক’টি? আমরা গত শতকের পরিকাঠামো, দক্ষতা ও প্রযুক্তি নিয়ে কি একবিংশ শতাব্দীর স্বপ্ন পূরণ করতে পারি? না, এটা কখনই হতে পারে না। গগণচুম্বী ভবন, বড় মাপের কর্মসূচি, বুলেট ট্রেন ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য ব্যয়বহুল যন্ত্র ও সরঞ্জামের প্রয়োজন। আর, এজন্য প্রয়োজন অর্থের। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের মধ্যে কেন এই প্রত্যাশা থাকবে না যে, বিশ্বের অগ্রণী ৫ জন গ্রাহকের মধ্যে একজন তাদের ব্যাঙ্কের সঙ্গেও যুক্ত থাকুন। আর এটা কি সেই ব্যাঙ্কের মর্যাদা বাড়াবে না! তাঁরা কি চাইবেন না যে, বিশ্বের অগ্রণী ৫টি সংস্থার মধ্যে ১টি সংস্থার অ্যাকাউন্ট তাঁদের ব্যাঙ্কে থাকুক? আর, এগুলি কি দেশের ক্ষমতায়ন ঘটাবে না! বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা কতজন অগ্রণী শিল্পপতি গড়ে তুলতে পারছি, আমাদের সেটা দেখতে হবে। যখন আমাদের খেলোয়াড়রা স্বর্ণপদক পান, তখন সারা দেশে স্বর্ণ যুগের কল্পনায় অবস্থান করে। এই সম্ভাবনা অন্যান্য ক্ষেত্রেও রয়েছে। তাই, একজন বিজ্ঞানী বা মেধাবী ব্যক্তি যখন দেশে নোবেল প্রাইজ নিয়ে আসেন, তখন সারা দেশ সেটি নিজের মনে করে। আসলে এটাই মালিকানার ধারণা। আমরা কি পারি না, ভারতীয় ব্যাঙ্ক ক্ষেত্রকে এরকম পর্যায়ে নিয়ে যেতে, যেখানে কেবল ব্যাঙ্ক লাভবান হবে। কিন্তু, ক্ষতির সম্মুখীণ হতে হবে না। 
 
বন্ধুগণ,
 
দেশে গত কয়েক বছরে যে সমস্ত বড়মাপের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, তার ফলে ডেটা বা তথ্যের যে বিরাট ভান্ডার গড়ে উঠেছে, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র তার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। যদি আমি জিএসটি-র কথা বলি, তা হলে আজ প্রত্যেক ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা মেনে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা, তাঁদের বাণিজ্যিক লেনদেনের খতিয়ান এবং কোথায় তাঁদের বাণিজ্যিক কাজকর্ম ছড়িয়ে রয়েছে, সে সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য এখন দেশের হাতে। তাই, আমাদের ব্যাঙ্কগুলি কি এই সমস্ত ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে যেতে পারে না ও প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের আর্থিক সাহায্য দিতে পারে না? ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক কর্মকান্ড আরও বাড়াতে উৎসাহিত করতে হবে। বাণিজ্যিক কাজকর্ম আরও কয়েকটি এলাকায় যদি ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে ১০ জনের মতো ব্যক্তির কর্মসংস্থানে সুবিধা হবে। এ সম্পর্কে প্রতিরক্ষা করিডরের কথা আমি আগেই বলেছি। এবার আমি আপনাদের স্বামীত্ব কর্মসূচি সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে যুক্ত আমার বন্ধুরা নিশ্চয়ই এই কর্মসূচি সম্পর্কে শুনেছেন। আপনাদের মধ্যে যাঁরা আন্তর্জাতিক খবর রাখেন, তাঁরা এ ব্যাপারে অত্যন্ত ওয়াকিবহাল যে, সারা বিশ্বই এখন মালিকানার বিষয়ে লড়াই চালাচ্ছে। তবে, ভারতের কাছে এর সমাধান রয়েছে। হতে পারে, খুব শীঘ্রই আমরা এর পরিণতি হাতে পাবো। কিন্তু, এটা কি। আজ সরকার, প্রযুক্তি ও ড্রোন পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে সম্পত্তির মানচিত্র প্রণয়ন করছে। এমনকি, গ্রামে গ্রামে মানুষকে সম্পত্তির মালিকাধীন নথিপত্র হস্তান্তর করছে। গ্রামের মানুষ কয়েক যুগ ধরে বসবাস করছেন। কিন্তু, তাঁদের সম্পত্তির কোনও সরকারি নথি নেই। এর ফলে, সেই বাড়ি বা ঘর ভাড়াতেও দেওয়া যাচ্ছে না। আর তা কাজে আসছে না বলে এর কোনও মূল্যও নেই। কিন্তু, এখন সরকার তাঁদের মালিকানার কাগজপত্র দিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলিও এখন এই কাগজপত্রের বিষয়ে আশ্বস্ত হয়েছে। তাই, কাগজপত্রের নিরিখে কৃষক, কামার এবং হস্তশিল্পীরা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ সুবিধা নিতে পারেন। এমনকি, বৈধ কাগজপত্রের বিনিময়ে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিও এখন আশ্বস্ত হতে পারে। তবে আমি বলবো, ব্যাঙ্কগুলিকে আরও বেশি করে গ্রামের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে, যাতে তাঁদের আর্থিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশে কৃষি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ অত্যন্ত কম। এমনকি, কৃষি ক্ষেত্রে কর্পোরেট সংস্থার বিনিয়োগ নগণ্য। কিন্তু, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সারা বিশ্ব জুড়ে বাজার ছড়িয়ে রয়েছে। সরকার খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, কৃষি কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, সৌরশক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এক্ষেত্রে আপনাদের সহায়তা গ্রামের পুরো চিত্রটাই বদলে দিতে পারে। একইভাবে, আমি স্বনিধি কর্মসূচির আরও একটি উদাহরণ দিতে চাই। প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি যোজনার মাধ্যমে আমাদের রাস্তার হকাররা এই প্রথম ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ইতিহাসে এই প্রথম এদের ডিজিটাল লেনদেনের খতিয়ান প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রযুক্তির এই সুযসোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যাঙ্কগুলি রাস্তার হকারদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে। আমি ব্যাঙ্ক, শহরাঞ্চল বিষয়ক মন্ত্রক এবং মেয়রদের মোবাইল ফোনে ডিজিটাল লেনদেন সম্পর্কে রাস্তার হকারদের আরও সচেতন করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণে অনুরোধ জানিয়েছি। এর ফলে, একজন হকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে জিনিসপত্র সংগ্রহ ও তা বিক্রি করতে পারবেন। ডিজিটাল লেনদেন সম্পর্কে সচেতন করে তোলা কোনও বড় কাজ নয়। ভারতে আগেও এই কাজ হয়েছে। একজন হকারের ডিজিটাল লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে আপনারা তাঁকে ৫০ হাজার টাকা বা ৮০ হাজার টাকা এমনকি ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ সহায়তা দিতে পারেন। আখেরে ব্যাঙ্ক ও সংশ্লিষ্ট হকার বাণিজ্যিকভাবে উভয়েই লাভবান হবেন। তিনি আরও বেশি জিনিস কিনতে পারবেন ও তা বিক্রি করবেন। যদি তিনি একটি গ্রামে ব্যবসা করেন, আর্থিক সাহায্য পেলে অদূর ভবিষ্যতে এই ব্যবসা আরও ৩টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে।
 
বন্ধুগণ,
 
আজ সমগ্র দেশ যখন আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ নিয়ে কঠোর প্রয়াস চালাচ্ছে, তখন নাগরিকদের উৎপাদনশীল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো অনেক বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। আমি এখানে এসে ‘আনলকিং’ শব্দটির প্রয়োগ অন্তত ৩-৪ বার শুনেছি। সম্প্রতি ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের সমীক্ষায় এটা জানা গেছে যে, যেখানে অধিক সংখ্যায় জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, সেই রাজ্যগুলিতে অপরাধ ঘটানোর প্রবণতা লক্ষ্যণীয়ভাবে কমেছে। আমি এই সমীক্ষার ফলাফলে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। এর আগে ব্যাঙ্কগুলি কি কখনও কল্পনা করেছি যে, তারাও একদিন পুলিশের মতো কাজ করবে। এক সুস্থ-সবল সমাজের বাতাবরণ গড়ে উঠেছে। তা হলে, একটি জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলার মধ্য দিয়ে যদি একজন ব্যক্তিকে অপরাধ জগতের বাইরে নিয়ে আসা সম্ভব হয়, তবে জীবনচক্রের নিয়তিতে এরচেয়ে ভালো কিছু নেই। শুধু তাই নয়, সমাজের প্রতি এরচেয়ে ভালো সেবা আর কিবা হতে পারে! সাধারণ মানুষের জন্য যখন ব্যাঙ্কের দরজা খুলে যায়, তখন তা সাধারণ মানুষের জীবনেও প্রভাব ফেলে। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের এই ক্ষতাকে উপলব্ধি করে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত আমার সহকর্মীরা আরও এগিয়ে চলবেন বলেই আমি মনে করি। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের ব্যাঙ্কই হোক বা বেসরকারি ক্ষেত্রের ব্যাঙ্ক, নাগরিক-কেন্দ্রিক খাতে যত বেশি ব্যয় করা হবে, তত বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। দেশের যুবসম্প্রদায়, মহিলা ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী তত বেশি লাভবান হবেন।
 
বন্ধুগণ,
 
আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সময় আমরা যে সমস্ত ঐতিহাসিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, তার ফলে দেশে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে গেছে। আজ যে গতিতে নতুন কর্পোরেট ও স্টার্টআপ সংস্থা গড়ে উঠছে, তা অভূতপূর্ব। বন্ধুরা, ভারতের প্রত্যাশা পূরণে, তহবিল সংস্থানে, লগ্নির জন্য এরচেয়ে ভালো সময় আর কি হতে পারে? তাই আমাদের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রকে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, বর্তমান সময়ে নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা ও আদর্শের ক্ষেত্রে লগ্নির সময়, স্টার্টআপগুলিকে সহায়তার সময়। তাই যে কোনও স্টার্টআপের মূল বিষয়ই হ’ল সৃজনশীল ধ্যান-ধারণা।
 
বন্ধুগণ,
 
আমাদের কাছে সম্পদের কোনও ঘাটতি নেই। আমাদের কাছে তথ্যের কোনও ঘাটতি নেই। তাই, আপনারা যখনই সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেছেন, সরকার তা করার চেষ্টা করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। এখন সময় হ’ল জাতীয় লক্ষ্য ও জাতীয় সংকল্পগুলিকে সঙ্গে নিয়ে আপনাদের এগিয়ে চলা। আমাদের সচিব একটু আগেই উল্লেখ করেছেন, আরও কয়েকটি মন্ত্রক ও ব্যাঙ্ককে এক ছাতার নীচে নিয়ে আসতে একটি ওয়েব-ভিত্তিক প্রোজেক্ট ফান্ডিং ট্র্যাকার বা প্রকল্প খাতে তহবিল খরচে নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে, এ ব্যাপারে আমার একটা প্রস্তাব আছে এবং তা হল – গতিশক্তি পোর্টালের সঙ্গে যদি এই নজরদারি ব্যবস্থাকে জুড়ে দেওয়া যায়, তা হলে কেমন হয়। স্বাধীনতার এই পবিত্রকালে ভারতের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র আরও বেশি সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারা নিয়ে এগিয়ে চলবে। 
 
বন্ধুগণ,
 
আরেকটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন এবং তা হল ‘ফিনটেক’ বা আর্থিক প্রযুক্তি। আমরা যদি আরও দেরী করি, তা হলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়বো। ভারতবাসীর নতুন কোনও কিছুকে গ্রহণ করার ক্ষমতা বিস্ময়কর। এখন আপনারা এটা অবশ্যই দেখতে পাচ্ছেন যে, ফল ও সব্জি বিক্রেতারাও আপনাকে বলছেন, কিউআর কোড স্ক্যান করে টাকা মিটিয়ে দিন। তাই, মন্দিরে ও দানপাত্রে কিউআর কোড ব্যবস্থা চালু করুন, যাতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে দান করা যায়। সংক্ষেপে দেশের সর্বত্রই আর্থিক প্রযুক্তির এক অনুকূল বাতাবরণ গড়ে উঠছে। তাই আমি চাই, ব্যাঙ্কগুলির মধ্যেও প্রতিযোগিতার সুস্থ বাতাবরণ গড়ে উঠুক। প্রতিটি ব্যাঙ্কের শাখায় এমন কিছু গ্রাহক থাকুন, যাঁরা ১০০ শতাংশ ডিজিটাল লেনদেন করবেন। অন্যভাবে বলতে গেলে, ব্যাপারটা এরকম দাঁড়ায় যে, ব্যাঙ্কের সমগ্র কাজকর্মই ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। দেশে ইউপিআই – এর মতো এক অত্যন্ত কার্যকর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। তাই, কেন আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন করবো না? আগে আমাদের ব্যাঙ্কগুলির পরিস্থিতি কেমন ছিল? গ্রাহকরা ব্যাঙ্ক শাখায় আসতেন, টোকেন নিতেন এবং নগদ সংগ্রহ করতেন। এরপর, হাতে পাওয়া নোট গুণে দেখতেন, তার মধ্যে কোনও জাল নোট রয়েছে কিনা! ব্যাঙ্কে এই কাজ করতে গ্রাহকের ২০-৩০ মিনিট লেগে যেত। কিন্তু, আজ মেশিনের মধ্য দিয়ে নোট গোণা হচ্ছে। আর আপনারা প্রযুক্তির সুফল উপভোগ করছেন। কিন্তু, ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে এখনও কেন এত দ্বিধা রয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়। বর্তমান সময় দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলার এবং এই কাজে আর্থিক প্রযুক্তি দিশারি হতে পারে। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আগামী বছর ১৫ই অগাস্টের পূর্বে প্রত্যেক ব্যাঙ্ক শাখায় কমপক্ষে ১০০ জন গ্রাহক এমন থাকবেন, যাঁরা ১০০ শতাংশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন করবেন। আর, তা হলেই আপনারা পরিবর্তনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করতে পারবেন। আশা করি, আপনারা জন ধন অ্যাকাউন্টের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। এমনকি, আপনারা ছোট ছোট এই সম্ভাবনাগুলির ক্ষমতা কতটা বেড়েছে, তাও উপলব্ধি করেছেন। একটি রাজ্যে দীর্ঘ সময় ধরে সেবা করার সুযোগ আমার হয়েছিল। প্রতি বছর ব্যাঙ্কগুলিকে নিয়ে বৈঠক হ’ত। বৈঠকে আমরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম। ব্যাঙ্কগুলির পক্ষ থেকেও স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হ’ত। বৈঠকে বলা হ’ত, সঠিক সময়েই সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি তাঁদের ঋণের পুরো টাকাই পরিশোধ করে দিত। তাই, আপনাদের কাছে যখন এরকম ইতিবাচক অভিজ্ঞতার ভান্ডার রয়েছে, তা হলে কেন আপনারা ঋণের পরিধি আরও বাড়াতে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করবেন না। আমাদের মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সম্ভাবনা এত বেশি যে, তাঁরা তৃণমূল স্তরে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারেন। আমি এরকম অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি এবং এটা জানতে পেরেছি যে, বাজারে এখন অনেক আধুনিক অর্থ ব্যবস্থা রয়েছে। এ ধরনের অর্থ-ব্যবস্থাগুলি সাধারণ মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতার ক্ষেত্রে বড় ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এখন সময় এসেছে আমাদের কর্তব্য পূরণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। তাই, সামনে যদি কোনও বাধা-বিপত্তি আসে আমি আগেও বলছি, আবারও বলছি, আমি আপনাদের পাশে আছি। সারা দেশে যখন অর্থ ব্যবস্থার বিস্তারে এরকম অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠেছে, গগণ স্পর্শ করার অপার সুযোগ-সুবিধা দেখা দিয়েছে, তখন আমরা যদি কেবল চিন্তাভাবনা করেই সময় কাটিয়ে দিই, তা হলে আগামী প্রজন্ম আমাদের কখনই ক্ষমা করবে না। 
 
আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা!
 
অসংখ্য ধন্যবাদ!
 
বিঃদ্রঃ : এটি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আক্ষরিক অনুবাদ নয়, মূল ভাষণ হিন্দিতে দেওয়া হয়েছিল। 
 
 
CG/BD/SB


(Release ID: 1778528) Visitor Counter : 259