প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
জল জীবনের মিশনের অঙ্গ হিসেবে দেশের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত ও পানী সমিতির সঙ্গে কথোপকথন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
Posted On:
02 OCT 2021 2:44PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২ অক্টোবর, ২০২১
নমস্কার,
আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতজি, শ্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেলজি, শ্রী বিশ্বেশ্বর টুডুজি, বিভিন্ন রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রীগণ, সারা দেশের বিভিন্ন পঞ্চায়েতের সদস্যগণ, বিভিন্ন পানী সমিতির সদস্যগণ আর দেশের নানা প্রান্তে প্রযুক্তির মাধ্যমে এই কর্মসূচির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত হয়েছেন আমার কোটি কোটি ভাই ও বোনেরা।
আজ ২ অক্টোবর। দেশের দুই মহান সুপুত্রকে আমরা এই দিনে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে স্মরণ করি। পূজনীয় বাপুজি এবং লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজি – এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের হৃদয়ে ভারতের গ্রাম সব সময়েই প্রাধান্য পেয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজকের দিনে সারা দেশের লক্ষ লক্ষ গ্রামের মানুষ গ্রামসভা রূপে জল জীবন কথোপকথনে অংশগ্রহণ করেছেন। এমন অভূতপূর্ব ও দেশব্যাপী মিশনকে এই উৎসাহ এবং প্রাণশক্তির মাধ্যমেই সফল করে তোলা যেতে পারে। জল জীবন মিশনের ভাবনা শুধু মানুষের বাড়িতে বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি বিকেন্দ্রিকরণেরও একটা বড় অভিযান। এটি গ্রাম পরিচালিত, মহিলা পরিচালিত একটি অভিযান। এর মূল ভিত্তি গণ-আন্দোলন এবং গণ-অংশীদারিত্ব। আর আজ এটা আমরা এই অনুষ্ঠানে বাস্তবায়িত হতে দেখছি।
ভাই ও বোনেরা,
জল জীবন মিশনকে আরও মজবুত, আরও স্বচ্ছ করে তুলতে আজ আরও কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জল জীবন মিশন অ্যাপে এই অভিযান সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য এক জায়গায় পাওয়া যাবে। দেশে কতগুলি বাড়িতে জল পৌঁছেছে, জলের গুণমান কেমন, জল সরবরাহ প্রকল্পের বিবরণ – সবকিছু এই অ্যাপে পাওয়া যাবে। আপনাদের প্রত্যেক গ্রামের তথ্য সেই অ্যাপে রয়েছে। জলের গুণমান তদারকি এবং সার্ভেলেন্স ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে জলের গুণমান বজায় রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক হবে। গ্রামের মানুষ যে জল পান, এই অ্যাপের মাধ্যমে তার গুণমান সম্পর্কে তাঁরা জানতে পারবেন।
বন্ধুগণ,
এ বছর আমরা পূজনীয় বাপুজির জন্ম জয়ন্তী স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের এই গুরুত্বপূর্ণ কালখণ্ডে পালন করছি। আমাদের প্রত্যেকের একটি সুখকর অনুভব হল দেশবাসী বাপুজির স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়নের জন্য নিরন্তর পরিশ্রম করেছে, ক্রমাগত এই কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করছে। আজ দেশের অধিকাংশ গ্রাম ও শহর নিজেদের উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম থেকে মুক্ত ঘোষণা করে দিয়েছে। প্রায় ২ লক্ষ গ্রামে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু হয়েছে। ৪০ হাজারেরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে উপেক্ষার শিকার খাদি ও হস্তশিল্পের বিক্রি এখন কয়েকগুণ বেড়েছে। এই সকল প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আজ দেশ আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
গান্ধীজি বলতেন যে গ্রাম স্বরাজের বাস্তবিক অর্থ হল আত্মবলে সমৃদ্ধ হওয়া। সেজন্য আমি ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে গ্রাম স্বরাজের এই ভাবনা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যায়। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অনেকদিন ধরে কাজ করতে গিয়ে আমি গ্রাম স্বরাজের এই ভাবনাকে তৃণমূলস্তরে বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়েছি। নির্মল গ্রামের সঙ্কল্প নিয়ে গ্রামগুলিকে উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম থেকে মুক্ত করা, জলমন্দির অভিযানের মাধ্যমে গ্রামের পুরনো বাউরিগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা, জ্যোতিগ্রাম যোজনার মাধ্যমে গ্রামে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ, তীর্থগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে দাঙ্গা-হাঙ্গামার পরিবর্তে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্র্যকে উৎসাহ যোগানো, ই-গ্রাম এবং ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির ই-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন – এ ধরনের অনেক প্রচেষ্টায় গ্রামগুলিকে রাজ্যের উন্নয়নের প্রধান স্তম্ভ করে তোলা সম্ভব হয়েছে। বিগত দু’দশকে গুজরাট এই ধরনের প্রকল্পগুলির জন্য বিশেষ করে, জল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার পেয়েছে।
বন্ধুগণ,
২০১৪ সালে যখন দেশ আমাকে নতুন দায়িত্ব দিয়েছে, তখন গুজরাটের সেই গ্রাম স্বরাজ আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আমি জাতীয় স্তরে প্রয়োগ করার সুযোগ পেয়েছি। গ্রাম স্বরাজের মানে শুধুই পঞ্চায়েতগুলিতে নির্বাচন করানো আর পঞ্চায়েত সদস্য ও পঞ্চায়েত প্রধান নিয়োগ করাই নয়, গ্রাম স্বরাজের আসল লাভ তখনই পাওয়া যাবে যখন গ্রামের উন্নয়ন সংক্রান্ত পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনায় গ্রামবাসীদের সক্রিয় অংশীদারিত্ব থাকবে। এই লক্ষ্য নিয়ে সরকার বিশেষ করে, জল এবং পরিচ্ছন্নতা খাতে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে সরাসরি ২ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ প্রদান করেছে। আজ একদিকে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে অনেক বেশি অধিকার দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে তাদের আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতার ওপরও সম্পূর্ণ নজর রাখা হচ্ছে। গ্রাম স্বরাজ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দায়বদ্ধতার একটি বড় প্রমাণ হল জল জীবন মিশন এবং এই পানী সমিতি গঠন।
বন্ধুগণ,
আমরা এরকম অনেক সিনেমা দেখেছি, গল্প-কবিতা পড়েছি যেখানে আমরা বিস্তারিতভাবে দেখেছি বা পড়েছি কিভাবে গ্রামের মহিলা ও শিশুরা জল আনার জন্য মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে যান। গ্রামের কথা বললেই অনেক মানুষের মনে এ ধরনের কঠিন জীবনযাপনের ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু খুব মানুষের মনেই এই প্রশ্ন ওঠে যে, এই মানুষগুলিকে রোজ কোনও নদী বা পুকুর পর্যন্ত কেন যেতে হয়? কেন এঁদের কাছে জল পৌঁছে দেওয়া হয়নি? আমি মনে করি, যাদের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব ছিল, তাঁদের উচিৎ নিজেদেরকে এই প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করা। কিন্তু এই প্রশ্নগুলি এতকাল কেউ জিজ্ঞাসা করেনি কারণ, তাঁরা যেখানে থাকেন, সেখানে তাঁরা এতটা জলের সমস্যায় ভোগেননি। জল ছাড়া জীবনের ব্যথা কেমন হয়, কত ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়, সে সম্পর্কে তাঁরা জানেনই না। তাঁদের বাড়িতে জল, সুইমিং পুলে জল। জলই জল। এই মানুষেরা কখনও দারিদ্র্য দেখেননি। সেজন্য দারিদ্র্য তাঁদের জন্য একটি আকর্ষণের বিষয়। সাহিত্য এবং বৌদ্ধিক জ্ঞান প্রদর্শনের উপায়। এঁদের মনে একটি আদর্শ গ্রামের প্রতি মোহ থাকা উচিৎ ছিল, কিন্তু তাঁরা গ্রামগুলিকে অভাবগ্রস্থ থাকতে দেখাই পছন্দ করতেন।
কিন্তু আমি তো গুজরাটের ছেলে; যেখানে বছরের অধিকাংশ সময়েই খরা থাকে। আমি এটাও দেখেছি, জলের এক একটি বিন্দুর কতটা গুরুত্ব। সেজন্য যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন আমার অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে মানুষের কাছে জল পৌঁছে দেওয়া এবং জল সংরক্ষণ গুরুত্ব পেয়েছে। শুধু মানুষের কাছে বা কৃষকের কাছে জল পৌঁছে দেওয়াই নয়, আমাকে ভূগর্ভস্থ জলস্তর উন্নত করার জন্য কাজ করতে হয়েছে। আমি গুজরাটের ভূগর্ভস্থ জলের স্তর উন্নত করা সুনিশ্চিত করেছি। এটা একটা বড় কারণ ছিল, তাই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আমি জল সংক্রান্ত সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ক্রমাগত কাজ করে চলেছি। পরিণামস্বরূপ, আমরা যে ফল পেয়েছি তা প্রত্যেক ভারতবাসীকে গর্বিত করার মতো।
স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আমাদের দেশে মাত্র ৩ কোটি বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছেছিল। ২০১৯ সালে জল জীবন মিশন শুরু হওয়ার পর থেকে ৫ কোটি বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আজ দেশের প্রায় ৮০টি জেলার ১ লক্ষ ২৫ হাজার গ্রামে প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ, বিগত সাত দশকে যতটা কাজ হয়েছে, আজকের ভারত মাত্র দু’বছরে তার থেকে বেশি কাজ করে দেখিয়েছে। সেদিন দূরে নেই, যখন দেশের কোনও মা-বোন-কন্যাকে আর জল আনতে রোজ দূরদুরান্তে পায়ে হেঁটে যেতে হবে না। যে সময়টা তাঁদের বাঁচবে, সেই সময়ে তাঁরা লেখাপড়া, স্বনির্ভরতা এবং রোজগারের জন্য কিছু করতে পারবেন।
ভাই ও বোনেরা,
ভারতের উন্নয়নে জলের অভাব যেন বাধা না হয়ে ওঠে তা সুনিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। সেজন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি জবাবদিহিতা রয়েছে। জলের অভাবে আমাদের শিশুরা তাঁদের প্রাণশক্তি দেশ নির্মাণের কাজে লাগাতে পারবে না - তেমনটা আমরা হ’তে দিতে পারি না! সেজন্য আমাদের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে গেছে। এখন আমাদের অতি দ্রুত কাজ করতে হবে। আমাদের এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে দেশের কোনও অংশে যেন আর ট্যাঙ্কার বা রেলগাড়ির মাধ্যমে জল পৌঁছে দিতে না হয়!
বন্ধুগণ,
আমি আগেও বলেছি, আমাদের জলকে প্রসাদের মতো করে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু কিছু মানুষ জলকে অত্যন্ত সহজ-সুলভ ভেবে অপচয় করেন। তাঁরা জলের মূল্য বোঝেন না। যাঁরা জলাভাবে ভুগেছেন, তাঁরাই জলের মূল্য বোঝেন। তাঁরাই জানেন এক এক বিন্দু জল জোগাড় করতে কতটা কষ্ট করতে হয়। দেশের যে যে অঞ্চলে প্রচুর জল পাওয়া যায় আর যাঁরা অনেক জলের প্রাচুর্য্যের মধ্যে বসবাস করেন, সেই নাগরিকদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা জল অপচয় করবেন না, জল বাঁচানোর চেষ্টা করুন। আপনাদের অভ্যাস বদলান। আমরা দেখেছি অনেক জায়গায় নল দিয়ে জল পড়ে যেতে থাকে, মানুষ পরোয়া করে না। অনেককে আমি দেখেছি রাতে নল খুলে তার নিচে বালতি উলটে রেখে দেয়। সকালে যখন জল আসে, বালতির পেছনে পড়তে থাকে। তার আওয়াজ তাঁদের জন্য অ্যালার্মের কাজ করে। তাঁরা এটা ভুলে যান যে সারা পৃথিবীতে জলের অভাব কতটা অ্যালার্মিং হয়ে উঠেছে।
আমি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রায়ই সেই সম্মানিত ব্যক্তিদের কথা তুলে ধরি, যাঁরা জল সংরক্ষণকে জীবনের সবচাইতে বড় অভিযান করে তুলেছেন। এই মানুষদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তাঁদের প্রেরণা দেশের নানা প্রান্তে জল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে লাগতে পারে। আজ এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত সারা দেশের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির প্রতি আমার অনুরোধ, আপনাদের গ্রামের জলের উৎসগুলির সুরক্ষা এবং পরিচ্ছন্নতার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করুন। বৃষ্টির জল বাঁচিয়ে বাড়িতে ব্যবহার করা জল ফসলের খেতে ব্যবহার করে কম জলে যেসব ফসল উৎপাদিত হয় সেগুলির চাষকে উৎসাহ দিয়ে আমরা নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারি।
বন্ধুগণ,
দেশে এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে দূষিত জলের সমস্যা রয়েছে। অনেক এলাকার জলে আর্সেনিকের মাত্রা প্রচুর পরিমাণে বেশি। সেই অঞ্চলগুলির প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত জল পৌঁছে দেওয়া সেই এলাকার মানুষের জীবনে সবচাইতে বড় আশীর্বাদের মতো। এক সময় এনসেফেলাইটিস বা মস্তিষ্কের জ্বরে প্রভাবিত দেশের ৬১টি জেলায় নলের মাধ্যমে জল সরবরাহ হয় এমন বাড়ির সংখ্যা ছিল মাত্র ৮ লক্ষ। আজ সেই জেলাগুলিতে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১ কোটি ১১ লক্ষেরও বেশি হয়েছে। দেশের যে জেলাগুলি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচাইতে পিছিয়ে রয়েছে, যে জেলাগুলিতে উন্নয়নের অভূতপূর্ব আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, সেগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে এখন নলের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা বাড়ির সংখ্যা ৩১ লক্ষ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ কোটি ১৬ লক্ষের বেশি হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ দেশে শুধু পানীয় জলের সরবরাহ নয়, জল ব্যবস্থাপনা এবং সেচের একটি ব্যাপক পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। জলের কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য প্রথমবার জল সংক্রান্ত প্রায় সমস্ত বিষয় জল শক্তি মন্ত্রকের অন্তর্গত করা হয়েছে। মা গঙ্গার পাশাপাশি, অন্যান্য নদীর জলকে দূষণমুক্ত করতে স্পষ্ট রণনীতি নিয়ে কাজ চলছে। অটল ভূ-জল যোজনার মাধ্যমে দেশের সাতটি রাজ্যে ভূগর্ভস্থ জলের স্তরকে ওপরে তোলার কাজ চলছে। বিগত সাত বছরে প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঁচাই যোজনার মাধ্যমে নলের মাধ্যমে সেচ এবং ক্ষুদ্র সেচের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৩ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি জমিকে ক্ষুদ্র সেচের আওতায় আনা হয়েছে। প্রতি বিন্দুতে অধিক ফসল – এই সঙ্কল্পকে বাস্তবায়নের জন্য এরকম অনেক প্রচেষ্টা জারি রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকা সেচের ৯৯টি বড় প্রকল্পের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের কাজ ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে, আর বাকিগুলির কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সারা দেশের বাঁধগুলির উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং সেগুলি দেখভালের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে বিশেষ অভিযান জারি রয়েছে। এর মাধ্যমে ২০০টিরও বেশি বাঁধকে সংস্কার করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জলের বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রত্যেক বাড়িতে জল পৌঁছলে বাচ্চাদের স্বাস্থ্যও ভালো হবে। সম্প্রতি সরকার পিএম পোষণ শক্তি নির্মাণ স্কিমকেও মঞ্জুর করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশের বিদ্যালয়গুলিতে শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি পুষ্টিও সুনিশ্চিত করা হবে। এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার ৫৪ হাজার কোটিরও বেশি খরচ করতে চলেছে। এর দ্বারা দেশের প্রায় ১২ কোটি শিশু লাভবান হবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে –
“উপকর্তুম য়থা সু-অল্পম, সমর্থো ন তথা মহান।
প্রায়ঃ কূপঃ তৃষাম হন্তি, সততম ন তু বারিধিঃ।।”
অর্থাৎ, জলের একটি ছোট কুঁয়ো অনেক মানুষের পিপাসা মেটাতে পারে, কিন্তু এত বড় সমুদ্র তেমনটি করতে পারে না। এটা কত বড় কথা! অনেকবার আমরা দেখি যে কারোর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা অনেক বড় সিদ্ধান্ত থেকেও বড় হয়। আজ পানী সমিতির ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য। জল ব্যবস্থাপনার দেখভাল আর জল সংরক্ষণ সংক্রান্ত কাজ পানী সমিতিগুলি নিজের নিজের গ্রামের পরিধির মধ্যেই করে, কিন্তু এর বিস্তৃতি অনেক বড়। এই পানী সমিতিগুলি দরিদ্র, দলিত, বঞ্চিত ও জনজাতির মানুষদের জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন আনছে।
যে মানুষেরা স্বাধীনতার পর সাত দশক ধরে নলের মাধ্যমে জল পাননি, আজ ছোট্ট একটি নল তাঁদের জীবনটাই বদলে দিয়েছে। আর এটাও গর্বের কথা যে জল জীবন মিশনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই পানী সমিতিগুলির ৫০ শতাংশ সদস্য অনিবার্য রূপেই মহিলা। এটা দেশের সাফল্য যে, এত কম সময়ে প্রায় ৩.৫ লক্ষ গ্রামে পানী সমিতি গড়ে উঠেছে। এই তো কিছুক্ষণ আগেই আমরা ‘জল জীবন সংবাদ’-এর সময় দেখেছি এই পানী সমিতিগুলিতে গ্রামের মহিলারা কত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ গ্রামের মহিলারা নিজেদের গ্রামে জলের গুণমান পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
বন্ধুগণ,
গ্রামের মহিলাদের সশক্তিকরণ আমাদের সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারগুলির অন্যতম। বিগত বছরগুলিতে মেয়েদের স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার ওপর বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাড়ি এবং বিদ্যালয়ে শৌচালয়, সুলভ স্যানিটারি ন্যাপকিন থেকে শুরু করে গর্ভাবস্থায় পুষ্টির জন্য হাজার হাজার টাকা সাহায্য আর ব্যাপক টিকাকরণ অভিযানের মাধ্যমে মাতৃশক্তিকে আরও শক্তিশালী করে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনার মাধ্যমে ২ কোটিরও বেশি গর্ভবতী মহিলাকে প্রায় ৮,৫০০ কোটি টাকা সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। গ্রামগুলিতে যে ২.৫ কোটিরও বেশি পাকা বাড়ি গৃহহীনদের জন্য তৈরি করে দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশের মালিকানার অধিকার মহিলাদের দেওয়া হয়েছে। উজ্জ্বলা যোজনা কোটি কোটি গ্রামীণ মহিলাকে কাঠের ধোঁয়া থেকে মুক্তি দিয়েছে।
মুদ্রা যোজনার মাধ্যমেও প্রায় ৭০ শতাংশ ঋণ মহিলা ক্ষুদ্র শিল্পপতিরা পেয়েছেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের আত্মনির্ভরতা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। বিগত সাত বছরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। তিনগুণেরও বেশি বোনেদের অংশীদারিত্ব সুনিশ্চিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আজীবিকা মিশনের মাধ্যমে ২০১৪-র আগে ৫ বছরে সরকার মা - বোনেদের যতটা সহায়তা পাঠিয়েছিল, বিগত সাত বছরে সেই সহায়তার মূল্য প্রায় ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রায় ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকার ঋণও স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মা-বোনেদের দেওয়া হয়েছে। সরকার এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে বিনা গ্যারান্টিতে ঋণ দেওয়ার সুযোগ অনেকটাই বাড়িয়েছে।
ভাই ও বোনেরা,
ভারতের উন্নয়ন গ্রামের উন্নয়নের ওপরই নির্ভরশীল। গ্রামে বসবাসকারী জনগণ, যুবক, কৃষকদেরই সরকার এই প্রকল্পগুলিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যাতে ভারতের গ্রামগুলি আরও বেশি স্বনির্ভর ও সক্ষম হয়ে ওঠে। গ্রামের গৃহপালিত পশুগুলি থেকে বাড়িতে বাড়িতে যে জৈব বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার পরিবেশ-বান্ধব সঠিক ব্যবহারের জন্য ‘গোবর্ধন’ যোজনা চালু করা হয়েছে। এই যোজনার মাধ্যমে দেশের ১৫০টিরও বেশি জেলায় ৩০০টিরও বেশি বায়ো-গ্যাস প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। গ্রামের মানুষ যাতে গ্রামেই উন্নত প্রাথমিক চিকিৎসা পেতে পারেন এবং গ্রামেই সমস্ত প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে পারেন - তা সুনিশ্চিত করতে গ্রামে গ্রামে ১.৫ লক্ষেরও বেশি হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলির মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি এবং সেখানে কর্মরত বোনেদের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়ানো হয়েছে। গ্রামগুলিতে বিভিন্ন পরিষেবার পাশাপাশি সরকারের সেবা যেন আরও দ্রুত পৌঁছোয়, তা সুনিশ্চিত করতে আজ ব্যাপকভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
পিএম স্বামীত্ব যোজনার মাধ্যমে ড্রোনের সাহায্যে মানচিত্রায়ন করে গ্রামের জমি এবং বাড়িগুলির ডিজিটাল প্রপার্টি কার্ড তৈরি করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাত বছর আগে পর্যন্ত দেশের ১০০টিরও কম পঞ্চায়েতে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি ছিল সেখানে আজ ১.৫ লক্ষ পঞ্চায়েতে অপটিক্যাল ফাইবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সস্তার মোবাইল ফোনে এবং সস্তা ইন্টারনেটের কারণে আজ গ্রামগুলিতে শহরের থেকে বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। আজ ৩ লক্ষেরও বেশি কমন সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে সরকারের কয়েক ডজন প্রকল্পে অংশীদার হয়ে হাজার হাজার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হয়েছে।
আজ গ্রামে সব ধরনের পরিকাঠামোর জন্য রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ কোটি টাকার কৃষি তহবিল, গ্রামের কাছেই কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, শিল্প ক্লাস্টার নির্মাণ কিংবা কৃষি মান্ডিগুলির আধুনিকীকরণ – প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে কাজ হচ্ছে। জল জীবন মিশনের জন্য যে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে তা দেশের গ্রামগুলিতেই খরচ করা হবে। অর্থাৎ, এই অভিযান দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে নতুন শক্তি যোগানোর পাশাপাশি গ্রামগুলিতে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে তুলবে।
বন্ধুগণ,
আমরা বিশ্বকে দেখিয়েছি যে আমরা ভারতের মানুষ দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে সমবেত প্রচেষ্টায় কঠিন থেকে কঠিনতর লক্ষ্য পূরণ করতে পারি। আমদের ঐক্য, অভিযানকেও সফল করে তুলতে হবে। জল জীবন মিশন যেন দ্রুত তার লক্ষ্যে পৌঁছয় এই কামনা নিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা!
ধন্যবাদ!
CG/SB/DM/
(Release ID: 1762919)
Read this release in:
Malayalam
,
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada