প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

আন্তর্জাতিক আর্য়ুবেদ উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 12 MAR 2021 10:11PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী, ১২ মার্চ, ২০২১

            সকলকে শুভেচ্ছা জানাই,

        নমস্কার !

        আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মী কিরেণ রিজিজুজি, মুরলিথরণজি, আন্তর্জাতিক আর্য়ুবেদ উৎসবের মহাসচিব ডঃ গঙ্গাধরণজি, ফিকির সভাপতি উদয় শঙ্করজি, ডঃ সঙ্গীতা রেড্ডিজি,

        প্রিয়  বন্ধুগণ,

        চতুর্থ আন্তর্জাতিক আর্য়ুবেদ উৎসবে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। বহু বিশেষজ্ঞ এখানে এসেছেন, তাঁদের মতামত ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য। ২৫টির বেশি দেশের প্রতিনিধিরা এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন। আর্য়ুবেদ এবং চিরায়ত ওষুধের বিষয়ে উৎসাহ ক্রমশ বাড়ছে। যারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আর্য়ুবেদ নিয়ে কাজ করছেন আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। তাদের আগ্রহ ও অধ্যাবসায় সমস্ত মানবজাতির জন্য সফল নিয়ে আসবে।   

        বন্ধুগণ,

        আর্য়ুবেদ ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। আমাদের সংস্কৃতি প্রকৃতি ও পরিবেশকে শ্রদ্ধা জানাতে শেখায়। আর্য়ুবেদ সম্পর্কে একটি শ্লোকে বলা আছে : হিতাহিতম্ সুখম দুখম, আয়ুঃ তস্য হিতাহিতম্। মানম চ তচ্চ যত্র উক্তম, আয়ুর্বেদ স উচ্যতে।। আর্য়ুবেদ বিভিন্ন বিষয়ে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবন নিশ্চিত করে। আর্য়ুবেদকে যথাযথভাবে সর্বাঙ্গীন মানব বিজ্ঞান হিসেবে বর্ণনা করা যায়। বৃক্ষ থেকে আপনার খাওয়ার থালায়, শারীরিক সক্ষমতা থেকে মানসিক শক্তি- আর্য়ুবেদ ও প্রথাগত ওষুধের প্রভাব অপরিসীম।  

        বন্ধুগণ,

        স্বস্থস্য স্বাস্থ্য রক্ষনং, আতুরস্য বিকার প্রশমনং। অর্থাৎ রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি আর্য়ুবেদ সার্বিকভাবে শরীরকে বিভিন্ন রোগের থেকে সুরক্ষা যোগায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই আর্য়ুবেদ,  রোগের বদলে নিরোগ নিয়ে বেশি আলোচনা করে। অতীতে কেউ যদি বৈদ্যের কাছে যেতেন তাহলে তাকে ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি কিছু মন্ত্রও বলা হত। যেমন- ভোজন করে আরাম সে, সব চিন্তা কো মার। চাবা চাবা কর খাইয়ে, বৈদ না আবে দ্বার।। অর্থাৎ আরাম করে খাবার খান, কোনো চিন্তা করবেন না। খাবারের প্রতিটি কামড়ে আস্তে আস্তে চিবিয়ে খাবারটি খাবেন- এইভাবে চললে আপনাকে বৈদ্যরাজকে আর বাড়িতে ডাকতে হবে না।

        বন্ধুগণ,

        ২০২০র জুন মাসে ফিনানসিয়াল টাইমস-এ একটি নিবন্ধ পড়েছিলাম। এই নিবন্ধের শিরোনাম ছিল- করোনা ভাইরাস গিভ হেল্থ হ্যালো প্রোডাক্স আ বুস্ট। এই নিবন্ধে হলুদ আদা সহ অন্যান্য বিভিন্ন মশলার চাহিদা কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সারা বিশ্বজুড়ে কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি আর্য়ুবেদ ও প্রথাগত ওষুধের জন্য যথাযথ। সারা বিশ্ব জুড়ে এগুলির জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এগুলির বিষয়ে উৎসাহ বাড়ছে। কিভাবে আধুনিক ও প্রথাগত ওষুধ মানুষকে আরও সুস্থ রাখবে সারা বিশ্ব সেই বিষয়ে আলোচনা করছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহ আর্য়ুবেদের নানা গুনাবলী মানুষ আজ বুঝতে পারছে। ঘরে ঘরে কথ, তুলসী, গোল মরীচ  মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে।  

        বন্ধুগণ,

        আজ নানা ধরণের পর্যটনের বিকাশ হচ্ছে। কিন্তু ভারত বিশেষত যে পর্যটন আপনাদের উপহার দিচ্ছে সেটি হল সুস্থতার পর্যটন, আমি আবারও বলছি সুস্থতার পর্যটন। সুস্থতার পর্যটনের মূল নীতি হল- রোগের চিকিৎসা করা, আরও সুস্থ থাকা নিশ্চিত করা। আর আমি যখন সুস্থতার পর্যটনের কথা বলছি এর সবথেকে দৃঢ় স্তম্ভ হল আর্য়ুবেদ ও চিরায়ত ওষুধ। কল্পনা করুন সুন্দর রাজ্য কেরালার সবুজে ঢাকা অঞ্চলে  আপনি শরীর থেকে নানা ক্ষতিকারক জিনিস বের করে দিচ্ছেন। একবার ভাবুন উত্তরাখন্ডের পার্বত্য অঞ্চলে খরস্রোতা নদীর পাশে আপনি যোগাসন করছেন। আপনি কল্পনা করুন উত্তরপূর্ব ভারতের সবুজ অরণ্যের মাঝে আপনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আপনার ব্যস্ত জীবনে যদি আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাহলে ভারতের শাশ্বত সংস্কৃতির আস্বাদন গ্রহণ করার এটাই উপযুক্ত সময়। আপনি যদি আপনার শরীরকে সুস্থ করতে চান অথবা মনকে চাঙ্গা করতে চান তাহলে ভারতে আসুন।

        বন্ধুগণ,

        আর্য়ুবেদের জনপ্রিয়তার জন্য আপনাদের কাছে বিরাট সুযোগ অপেক্ষা করে আছে। আমরা এই সুযোগকে নষ্ট করতে দিতে পারিনা। প্রথাগত জীবনযাত্রার সঙ্গে আধুনিক জীবনযাত্রার মেলবন্ধনের অনেক সুফল রয়েছে। বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম বিভিন্ন আর্য়ুবেদ সামগ্রী ব্যবহার করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভাব থেকে আর্য়ুবেদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার একটি সচেতন উদ্যোগ এখন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে বিষয়গুলি ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে : আর্য়ুবেদ সাপ্লিমেন্ট, আর্য়ুবেদের সাহায্যে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী। আর্য়ুবেদের পণ্য সামগ্রীগুলির প্যাকেজিংও এখন উন্নত হয়েছে। শিক্ষাবীদদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা আর্য়ুবেদ ও প্রথাগত ওষুধ নিয়ে আরও গবেষণা করুন। একটি জিনিসের আমি খুব প্রশংসা করি সেটি হল যুব সম্প্রদায় এখন সারা বিশ্ব যে ভাষা বোঝে সেই ভাষাতেই আমাদের চিরায়ত ওষুধের বিষয়ে প্রচার করছেন। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশের সংস্কৃতি এবং আমাদের যুব সম্প্রদায়ের শিল্প উদ্যোগের মাধ্যমে খুব শীঘ্রই দারুণ কিছু হতে চলেছে।  

        বন্ধুগণ,

        সরকারের পক্ষ থেকে আমি আর্য়ুবেদ জগতকে সব রকমের সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছি। ভারত জাতীয় আয়ুষ মিশন গঠন করেছে।  জাতীয় আয়ুষ মিশন আয়ুষ সংক্রান্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ব্যয়সাশ্রয়ী করে তোলার কাজে সাহায্য করছে। চিকিৎসা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত শিক্ষাকেও মজবুত করার কাজ হচ্ছে। আর্য়ুবেদ, সিদ্ধা, ইউনানি এবং হোমিওপ্যাথি ওষুধের গুণমান বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকার এইসব ওষুধের কাঁচামাল সংগ্রহ করতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। আর্য়ুবেদ এবং অন্যান্য ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪-২০২৩ সালের চিরায়ত ওষুধ কৌশলের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভারতে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা চিরায়ত ওষুধের আন্তর্জাতিক কেন্দ্র গড়ে তুলবে। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আপনারা জেনে খুশি হবেন আর্য়ুবেদ ও প্রথাগত ওষুধের বিষয়ে জানার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্রছাত্রীরা এদেশে আসছেন। সারা বিশ্ব জুড়ে সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে ভাবার এটিই আদর্শ সময়। এই বিষয়ের ওপর একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা যেতে পারে। আগামীদিনে আর্য়ুবেদ ও আহার নিয়ে আমরা সম্মেলনের আয়োজন করতে পারি। আর্য়ুবেদের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী সুস্বাস্থ্যকে নিশ্চিত করে। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন দিন কয়েক আগে রাষ্ট্রসংঘ ২০২৩ সালকে আন্তর্জাতিক বাজরা বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। আসুন বাজরার গুণাবলীর বিষয়ে আমরা মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলি।  

        বন্ধুগণ,

        আমি মহাত্মা গান্ধীর একটি বাণী উদ্ধৃত করছি। ‘আমি আর্য়ুবেদ সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করি। এটি প্রাচীন ভারতে একটি বিজ্ঞান যার মাধ্যমে ভারতের হাজার হাজার গ্রামের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়েছে। আমি প্রত্যেক নাগরিককে আর্য়ুবেদের নীতি অনুযায়ী জীবনযাপনের আহ্বান জানাচ্ছি। ওষুধ, ডাক্তারখানা এবং বৈদ্যরাজ- সকলকে আমি আর্শিবাদ জানাই যে এরা সবাই আর্য়ুবেদকে সর্বশ্রেষ্ঠ সেবা প্রদানকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।’ মহাত্মা গান্ধী এই কথাগুলি শতবর্ষ আগে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই বক্তব্য আজো  সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। আর্য়ুবেদের মাধ্যমে আমরা আমাদের সাফল্যকে গড়ে তুলি। আর্য়ুবেদ সারা বিশ্বকে আমাদের দেশে নিয়ে আনার ক্ষেত্রে চালিকাশক্তি হয়ে উঠুক। এর ফলে আমাদের যুব সম্প্রদায় সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠবেন। আমি এই সম্মেলনের সাফল্য কামনা করি। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকলকে আমার শুভেচ্ছা জানাই।   

        ধন্যবাদ।

        অনেক অনেক ধন্যবাদ।

***

 

 

CG/CB/NS



(Release ID: 1704988) Visitor Counter : 235