প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

উত্তরপ্রদেশে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা - গ্রামীণ-এর আওতায় সুবিধাভোগীদের জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 20 JAN 2021 3:28PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২০ জানুয়ারি, ২০২১

আপনাদের সবাইকে, বিশেষ করে এখানে উপস্থিত মা ও বোনেদের অনেক অনেক অভিনন্দন। আপনাদের নিজস্ব বাড়ি, স্বপ্নের বাড়ি অতি দ্রুত আপনারা পেতে চলেছেন। কিছুদিন আগেই সূর্য উত্তরায়ণে এসেছে। কথিত আছে এই সময়টা শুভকামনার জন্য অত্যন্ত উত্তম। এই শুভ সময়ে আপনারা যে গৃহ নির্মাণের জন্য অর্থ পাচ্ছেন, তা আপনাদের আনন্দ নিশ্চয়ই বাড়িয়ে দিয়েছে। এই তো কিছুদিন আগেই বিশ্বের সবচাইতে বড় টিকাকরণ অভিযান দেশে শুরু হয়েছে। তার সঙ্গে আজকের এই অনুষ্ঠানটি আরও উৎসাহবর্ধক। আজ আপনাদের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছে। আপনারা নিজেদের মনের কথা বলেছেন, আশীর্বাদও দিয়েছেন। আর আমি দেখছিলাম, আপনাদের চেহারায় আনন্দ ও উচ্ছ্বাস, একটি সুখময় জীবনের লক্ষ্যে বড় স্বপ্ন বাস্তবায়নের আনন্দ। আপনাদের চোখে-মুখে আমি এই আনন্দের ঝলক দেখতে পেয়েছি। আপনাদের এই খুশি আপনাদের জীবনকে সচ্ছল করে তুলুক, এটাই আমার জন্য সবচাইতে বড় আশীর্বাদ। আর, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা - গ্রামীণ-এর সমস্ত সুবিধাভোগীদের আমি আরেকবার অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।

 

আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দিবেন প্যাটেলজি, প্রযুক্তির মাধ্যমে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আমাদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমরজি, উত্তরপ্রদেশের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথজি, উত্তরপ্রদেশের গ্রামীণ বিকাশ মন্ত্রী শ্রী মহেন্দ্র সিং-জি, ভিন্ন ভিন্ন গ্রাম থেকে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়া সমস্ত সুবিধাভোগী ভাই ও বোনেরা,

 

আজ দশম গুরু শ্রী গুরু গোবিন্দ সিং-এর প্রকাশ পর্ব। এই পবিত্র দিনে আমি গুরু গোবিন্দ সিং সাহেবের চরণে প্রণাম জানাই। সমগ্র দেশবাসীকে এই প্রকাশ পর্ব উপলক্ষে হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাই। এটা আমার সৌভাগ্য যে গুরু সাহেবের আমার ওপর অনেক কৃপা বর্ষিত হয়েছে। গুরু সাহেব আমার মতো সেবকের কাছ থেকে নিরন্তর সেবা গ্রহণ করেছেন। সেবা এবং সত্যের পথে চলতে চলতে কঠিন থেকে কঠিনতর সমস্যার মোকাবিলার প্রেরণাও আমরা গুরু গোবিন্দ সিং-জির জীবন থেকে পাইঃ

 "সওয়া লাখ সে এক লড়াঊঁ,

 চিড়িয়োঁ সে ম্যয়ঁ বাজ লড়াঊঁ,

তবে গোবিন্দ সিং নাম কহাঊঁ”!

অর্থাৎ, সওয়া লক্ষ শত্রুর সঙ্গে একা লড়ে, যেভাবে পাখির ঝাঁকে বাজ হামলা করে, তবেই গোবিন্দ সিংহ নাম সার্থক!

এত অদম্য সাহস, সেবা আর সত্যের শক্তি থেকেই আসে। গুরু গোবিন্দ সিং-জি প্রদর্শিত এই পথেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। গরীব, পীড়িত, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের সেবার জন্য, তাঁদের জীবন বদলানোর জন্য আজ সারা দেশে অভূতপূর্ব কাজ হচ্ছে।

 

পাঁচ বছর আগে উত্তরপ্রদেশের আগ্রা থেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এত কম সময়ে এই প্রকল্প দেশের গ্রামগুলির ছবিই বদলে দিয়েছে। এই প্রকল্পের সঙ্গে কোটি কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা যুক্ত হয়েছে, তাঁদের স্বপ্ন যুক্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষকেও আস্থা জুগিয়েছে যে, হ্যাঁ, আজ নয়তো কাল আমারও নিজস্ব বাড়ি হতে পারে!

 

বন্ধুগণ,

 

আমি এজন্য আনন্দিত যে উত্তরপ্রদেশ আজ দেশের সেই রাজ্যগুলির অন্যতম যে রাজ্যগুলির গ্রামে গ্রামে সবচাইতে দ্রুতগতিতে গরীবদের জন্য গৃহ নির্মাণ হচ্ছে। আজকের এই আয়োজনও এই গতিরই উদাহরণ। আজ একসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের ৬ লক্ষেরও বেশি পরিবারকে সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ২,৭০০ কোটি টাকা জমা করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে ৫ লক্ষের বেশি পরিবার এরকম রয়েছেন, যাঁরা গৃহ নির্মাণের জন্য প্রথম কিস্তি পেলেন। অর্থাৎ এই ৫ লক্ষেরও বেশি গ্রামীণ পরিবারের সেই প্রতীক্ষার আজ অবসান হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি, এই দিনটি আজ আপনাদের সবার জীবনে কত বড় দিন, কত শুভ দি! আমি এই আনন্দ অনুভব করছি, আর মনে মনে এই অনুভব থেকে প্রেরণা পাচ্ছি। গরীবদের জন্য আরও বেশি বেশি কাজ করার প্রেরণা। এভাবে আজ ৮০ হাজার পরিবার এমন রয়েছে যাঁরা গৃহ নির্মাণের দ্বিতীয় কিস্তি পেয়েছেন। তাঁদের জন্য আগামী শীতকাল এবারের মতো কঠিন হবে না। আগামী শীতে আপনারা নিজের বাড়িতে থাকবেন।

 

বন্ধুগণ,

 

আত্মনির্ভর ভারতের সঙ্গে নাগরিকদের আত্মবিশ্বাসের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আর বাড়ি এমন একটা ব্যবস্থা, এমন একটি সম্মানজনক উপহার, যা মানুষের আত্মবিশ্বাসকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। নিজের বাড়ি থাকলে মনের মধ্যে একটা নিশ্চিন্তভাব আসে। আর মনে হয়, জীবনে কিছু লাভ-লোকসান যাই-ই হোক না কেন, মাথার ওপর এই ছাদ তো রয়েছে! তাঁর মনে হয়, নিজেদের বাড়ি যখন রয়েছে, তখন একদিন দারিদ্র্যও দূর করতে পারব। কিন্তু আমরা দেখেছি পূর্ববর্তী সরকারগুলির সময় কী পরিস্থিতি ছিল! আপনাদের সামনে আমি বিশেষভাবে উত্তরপ্রদেশের উদাহরণই তুলে ধরছি। উত্তরপ্রদেশের গরীবদের মনে এই বিশ্বাসই ছিল না যে সরকার গৃহ নির্মাণে তাঁদের সাহায্য করতে পারে। পূর্ববর্তী যত আবাস যোজনা ছিল, যে মানের গৃহ সেই প্রকল্পগুলিতে তৈরি করা হত, সেগুলি সম্পর্কে আপনারা ভালোভাবেই জানেন। তাঁদের দোষ নয়, দোষ ছিল ভুল নীতির। সেজন্য গরীব ভাই ও বোনেদের নিয়তির নামে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া হত। গ্রামে বসবাসকারী গরীবদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য, গরীবদের মাথার ওপর পাকা ছাদ দেওয়ার জন্য, আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা - গ্রামীণ প্রকল্প চালু করেছি। দেশে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে প্রত্যেক গরীব পরিবারের মাথার ওপর পাকা ছাদ তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।  এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বিগত বছরগুলিতে প্রায় ২ কোটি বাড়ি শুধু দেশের গ্রামীণ এলাকাগুলিতে তৈরি করা হয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমেই প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি করে সুবিধাভোগীদের হাতে চাবি তুলে দেওয়া হয়েছে। এই বাড়িগুলি তৈরি করতে শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। উত্তরপ্রদেশে আবাস যোজনা বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ উঠতেই আমার কিছু পুরনো স্মৃতি মনে পড়ছিল। যখন পূর্ববর্তী সরকার ছিল যাদেরকে আপনারা পরে সরিয়ে দিয়েছেন, আমার মনে আছে, ২০১৬ সালে আমরা যখন এই প্রকল্প চালু করেছিলাম তখন বাস্তবায়নের কত সমস্যা হত। পূর্ববর্তী সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে, এমনকি, আমার দপ্তর থেকে কত চিঠি লেখা হয়েছে যে গরীব সুবিধাভোগীদের তালিকা পাঠান, যাতে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আমরা টাকা পাঠাতে পারি! আমরা টাকা পাঠানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত চিঠি, বিভিন্ন বৈঠকে সরাসরিভাবে আমরা তাদের যে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, সবই অগ্রাহ্য করা হচ্ছিল। সেই সরকারের ওই ভূমিকা আজও উত্তরপ্রদেশের গরীবরা ভোলেননি। আজ যোগীজির নেতৃত্বাধীন সরকারের সক্রিয়তার পরিণাম হিসেবে, তাঁর গোটা টিমের পরিশ্রমের পরিণাম হিসেবে, এই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কাজের গতি বেড়েছে, কাজ করার পদ্ধতিও পরিবর্তিত হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশে প্রায় ২২ লক্ষ গ্রামীণ আবাস গড়ে তোলা হবে। এর মধ্যে ইতিমধ্যেই ২১ লক্ষেরও বেশি গৃহ নির্মাণের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। এত কম সময়ে উত্তরপ্রদেশের গ্রামে গ্রামে প্রায় ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার গরীব পরিবার তাঁদের পাকা বাড়ির মালিকানা পেয়েও গেছেন। আর আমি আজ এটা দেখে অত্যন্ত আনন্দিত যে উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী আবাস যোজনার অধিকাংশ কাজও এই সরকারের সময়েই হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আমাদের দেশে গরীব মানুষের জন্য গৃহ নির্মাণের ইতিহাস অনেক দশক পুরনো। আগেও গরীবদের জন্য ভালো বাড়ি, সুলভে গৃহ নির্মাণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেই প্রকল্পগুলির অভিজ্ঞতা গরীবদের জন্য অত্যন্ত দুঃখদায়ক ছিল। সেজন্য যখনই ৪-৫ বছর আগে আমাদের সরকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে, তখন আগেকার সেই সমস্ত ভুলত্রুটি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আগের ভুল নীতিগুলিকে বদলেছি, এবং নতুন উপায়, নতুন পদ্ধতি খোঁজার জন্য আমরা সেই বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেছি। আর আমরা গ্রামের সেই গরীবদের কাছে, সবার আগে পৌঁছেছি, যাঁরা নিজেদের জন্য বাড়ি তৈরির আশা ছেড়ে বসেছিলেন। যাঁরা ভেবেই রেখেছিলেন যে তাঁদের বাকি জীবনটা ফুটপাতে কিংবা বস্তিতেই কাটবে। সবার আগে আমরা তাঁদের চিন্তা করেছি। আর আমরা তালিকা তৈরির সময় স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করেছি, স্বজনপোষণ যাতে না হয়, ভোটব্যাঙ্কের দিকে না তাকিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শুধু গরীব গৃহহীনরা যাতে বাড়ি পান - সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করেছি। মহিলাদের আত্মসম্মান ও অধিকার রক্ষার কথা মাথায় রেখে আমরা এই নির্মাণ প্রকল্পে তৈরি করে দেওয়া সমস্ত বাড়ির মালিকানা সেই পরিবারের সবচাইতে বয়স্ক মহিলা সদস্যকে দিয়েছি।  আর যে বাড়িগুলি তৈরি হয়েছে, সেগুলিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে তদারকি করা হয়েছে। আমরা লক্ষ্য রেখেছি যাতে শুধুই ইঁট-পাথর-সিমেন্ট দিয়ে জুড়ে চারটে দেওয়াল তৈরি করে কর্তব্য সারা না হয়।  প্রকৃত অর্থে জীবনধারণের উপযোগী, স্বপ্ন দেখার উপযোগী একটি বাড়ি এবং তার সমস্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবা যুক্ত করে গরীবদের হাতে বাড়ির চাবি তুলে দেওয়ার কথা ভেবেছি। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে এই বাড়ি শুধু সেই পরিবারগুলিই পাচ্ছেন, যাঁদের কাছে নিজস্ব পাকা বাড়ি নেই। তাঁরা কোথাও ঝুপড়িতে, কাঁচা বাড়িতে কিংবা কোনও বড় বাড়ির ধ্বংসাবশেষে থাকেন। তাঁদের মধ্যে গ্রামের সাধারণ কারিগর, দিনমজুর এবং ক্ষেতমজুর পরিবারগুলি রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামে বসবাসকারী ভূমিহীন ক্ষুদ্র কৃষকরা অথবা যেসব কৃষকের জমির পরিমাণ দু'বিঘার নিচে - তাঁরাও লাভবান হচ্ছেন। আমাদের দেশে এরকম অসংখ্য ভূমিহীন কৃষক রয়েছেন, যাঁরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে পরিশ্রম করে দেশবাসীর উদর পূর্তি করেন, কিন্তু নিজেদের জন্য পাকা বাড়ি কিংবা মাথার ওপর ছাদের ব্যবস্থা করতে পারেন না। আজ তেমন সমস্ত পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে তাঁদেরকে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা – গ্রামীণ, দেশের গ্রামাঞ্চলে মহিলাদের ক্ষমতায়নেরও একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠছে, কারণ আগেই বলেছি অধিকাংশ বাড়ি, বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলা সদস্যদের নামেই নথিভুক্ত হচ্ছে। যাঁদের কাছে কোনও জমি ছিল না, তাঁদেরকে সেই বাড়ির জমির পাট্টাও দেওয়া হচ্ছে। এই গোটা অভিযানে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, যতগুলি বাড়ি তৈরি হচ্ছে, সবক'টি বাড়ির জন্য নির্ধারিত টাকা সরাসরি গরীবদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কোনও সুবিধাভোগী যেন সমস্যায় না পড়েন, দুর্নীতির শিকার না হন, কেন্দ্রীয় সরকার এবং উত্তরপ্রদেশ সরকার মিলেমিশে সেই দিকে লক্ষ্য রাখছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ দেশের সরকার মৌলিক পরিষেবার ক্ষেত্রে গ্রাম এবং শহরের মধ্যে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের, গরীবদের জীবন যাত্রার মান বড় শহরগুলির মতো সহজ করে তোলার চেষ্টা করছে। সেজন্য গ্রামীণ আবাস যোজনাকে শৌচালয়, বিদ্যুৎ সংযোগ, পানীয় জল সরবরাহের মতো মৌলিক পরিষেবাগুলির সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। গরীবদের হাতে বাড়ির চাবি তুলে দেওয়ার সময়েই বিদ্যুৎ সংযোগ, রান্নার গ্যাস সংযোগ এবং শৌচালয়ের সুবিধা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে। এখন দেশের গ্রামে গ্রামে নলের মাধ্যমে স্বচ্ছ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য জল জীবন মিশন প্রকল্পের কাজ চলছে। উদ্দেশ্য হল, কোনও গরীবকে যেন এই প্রাথমিক পরিষেবাগুলির জন্য কোনও সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়, এদিক-ওদিক ছোটাছুটি না করতে হয়।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

আমাদের আরেকটি প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই গ্রামের মানুষ উপকৃত হতে শুরু করেছেন। আমি চাই যে দেশের সমস্ত গ্রামের সকল গ্রামবাসী এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হোন – সেটা হল 'প্রধানমন্ত্রী স্বামীত্ব যোজনা'। আগামীদিনে এই প্রকল্প দেশের গ্রামে বসবাসকারী মানুষের ভাগ্য বদলে দেবে। উত্তরপ্রদেশ দেশের সেই রাজ্যগুলির অন্যতম যেখানে এই 'প্রধানমন্ত্রী স্বামীত্ব যোজনা' ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। গ্রামে গ্রামে কাজ চলছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামে বসবাসকারী মানুষদের জমি এবং বাড়ির মালিকানার দলিল প্রযুক্তির মাধ্যমে মাপজোখ করে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। আজকাল উত্তরপ্রদেশের হাজার হাজার গ্রামে ড্রোনের মাধ্যমে সার্ভে করা হচ্ছে, ম্যাপিং করানো হচ্ছে যাতে জনগণের সম্পত্তি সরকারি রেকর্ডে প্রত্যেকের নিজের নামেই নথিভুক্ত হয়। এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে গ্রামে গ্রামে জমি নিয়ে বিবাদ অবলীলায় সমাপ্ত হবে। এর ফলে সবচাইতে লাভবান হবেন গ্রামবাসী, তাঁরা চাইলে এই দলিল দেখিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে পারবেন। আপনারা জানেন, ব্যাঙ্ক ঋণের ক্ষেত্রে জমির দলিল থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। অর্থাৎ, ‘স্বামীত্ব যোজনা’ গ্রামের বাড়ি এবং জমির দামকেও প্রভাবিত করতে চলেছে। 'স্বামীত্ব যোজনা’র মাধ্যমে আমাদের গ্রামের কোটি কোটি গরীব ভাই ও বোনেরা একটি নতুন শক্তি পেতে চলেছেন, আত্মবিশ্বাস পেতে চলেছেন। উত্তরপ্রদেশের ৮,৫০০-রও বেশি গ্রামে এই প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে। সার্ভের পর সেই গ্রামগুলির প্রত্যেকেই ডিজিটাল শংসাপত্র পাচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশে এই শংসাপত্রকে বলা হয় 'ঘরৌনি'। আমাকে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই ৫১ হাজারেরও বেশি 'ঘরৌনি' প্রমাণপত্র বিতরণ করা হয়েছে আর অতি দ্রুত আরও ১ লক্ষ বিতরণ হতে চলেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ যখন এতগুলি প্রকল্প গ্রামে গ্রামে পৌঁছচ্ছে, তখন এগুলির মাধ্যমে পরিষেবা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনই গ্রামীণ অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার হচ্ছে। 'প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা'র মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশে ৬০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এই সড়কগুলি গ্রামের জনগণের জীবনকে সহজ করে তোলার পাশাপাশি, গ্রামের উন্নয়নের মাধ্যম হয়ে উঠছে। এখন আপনারা দেখুন, গ্রামে এরকম অনেক যুবক রয়েছেন যাঁরা কিছুটা রাজমিস্ত্রির কাজ জানেন, কিন্তু কাজ করার সুযোগ পান না। এবার যখন 'প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা'র মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে এত বাড়ি তৈরি হচ্ছে, পথ-ঘাট তৈরি হচ্ছে, তখন সেই যুবকরাও রাজমিস্ত্রির কাজ করার অনেক সুযোগ পাবেন। সরকার সেজন্য দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণও দিচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের হাজার হাজার যুবক এই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আর এখন তো মহিলারাও রানিমিস্ত্রি হিসেবে গৃহ নির্মাণের কাজ করছেন। তাঁদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এত বেশি কাজ হচ্ছে যে সিমেন্ট, বালি এবং বাড়ি তৈরির অন্যান্য সরঞ্জামের দোকান বাড়ছে। এসব ক্ষেত্রেও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। কয়েক মাসে আগেই দেশে আরেকটি অভিযান শুরু হয়েছে যার মাধ্যমে দেশের গ্রামবাসীরা উপকৃত হচ্ছেন। এই অভিযানটি হল, দেশের ৬ লক্ষেরও বেশি গ্রামে দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া। এই অভিযানের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার পাতা হবে। এই প্রকল্পেও অনেক গ্রামবাসীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

করোনার এই সঙ্কটকালে সারা দেশ, বিশ্ব ও মানবতা যেভাবে আক্রান্ত হয়েছে, প্রত্যেক ব্যক্তির জীবন যেভাবে প্রভাবিত হয়েছে, তা সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশ তার উন্নয়নযজ্ঞকে, তার কোনও প্রকল্পকে থেমে যেতে দেয়নি। শুধু কাজ চালিয়ে যায়নি, দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়েছে। যে পরিযায়ী শ্রমিকরা আমাদের গ্রামে ফিরে এসেছিলেন, তাঁদের সুরক্ষিতভাবে বাড়ি আসার জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার যেরকম সুব্যবস্থা করেছে, তাও সমস্ত মহলে উচ্চপ্রশংসিত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ সরকার 'গরীব কল্যাণ রোজগার অভিযান'-এর মাধ্যমে ১০ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টি করে দেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এর ফলে বৃহৎ সংখ্যক গ্রামীণ মানুষের গ্রামের মধ্যেই কর্মসংস্থান হয়েছে, যার ফলে তাঁদের জীবনযাত্রাও সহজ হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলার জন্য উত্তরপ্রদেশে যে কাজ হচ্ছে তা পূর্ব থেকে শুরু করে পশ্চিম পর্যন্ত, অবধ থেকে শুরু করে বুন্দেলখণ্ড পর্যন্ত প্রত্যেক নাগরিক তা অনুভব করছেন। আয়ুষ্মান ভারত যোজনা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পোষণ মিশন, উজ্জ্বলা যোজনা কিংবা উজালা যোজনার মাধ্যমে সুলভে বিতড়িত লক্ষ লক্ষ এলইডি বাল্ব জনগণের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি তাঁদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে তুলছে। বিগত চার বছরে উত্তরপ্রদেশ সরকার যত দ্রুতগতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলি এগিয়ে নিয়ে গেছে তা উত্তরপ্রদেশ সরকারকে একটি নতুন পরিচিতি দিয়েছে। এই সরকার মানুষের জীবনে উন্নয়নের ডানা মেলেছে। একদিকে অপরাধী এবং দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, একদিকে অনেক এক্সপ্রেসওয়ে দ্রুতগতিতে তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে এইমস-এর মতো বড় হাসপাতাল, মেরঠ এক্সপ্রেসওয়ে থেকে শুরু করে বুন্দেলখণ্ড-গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করেছে। এর ফলে, আজ উত্তরপ্রদেশে বড় বড় কোম্পানি আসছে। পাশাপাশি, ছোট ছোট শিল্পোদ্যোগ স্থাপনেরও পথ খুলেছে। উত্তরপ্রদেশের 'এক জেলা এক পণ্য’ প্রকল্প থেকে স্থানীয় কারিগরদের কাজ করার সুযোগ বেড়েছে। আমাদের গ্রামে বসবাসকারী স্থানীয় কারিগর ও গরীব শ্রমিকদের এই আত্মনির্ভরতা আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করবে আর এই প্রচেষ্টাগুলির মাঝে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে গরীব ও খেটে খাওয়া মানুষ যে বাড়িগুলি পাচ্ছে সেই বাড়িগুলি তাঁদের জীবনে অনেক বড় সম্বল হয়ে উঠবে।

 

প্রার্থনা করি এবারের উত্তরায়ণের পর আপনাদের জীবনের সমস্ত স্বপ্ন যেন বাস্তবায়িত হয়। বাড়ি পাওয়া মানেই জীবনের একটি বড় সুব্যবস্থা তৈরি হওয়া। এখন দেখবেন ছেলে-মেয়েদের জীবনে পরিবর্তন আসবে। তারা লেখাপড়া করে শিক্ষিত হলে আপনাদের মনেও একটি নতুন আত্মবিশ্বাস জাগবে। আর এইসব কিছু যাতে হয়, সেজন্য আপনাদের সবাইকে আমি অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আজ বিভিন্ন জায়গা থেকে যে মা ও বোনেরা আমাকে আশীর্বাদ দিয়েছেন, আমি হৃদয় থেকে তাঁদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই আর আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

***

 

 

CG/SB/DM



(Release ID: 1690685) Visitor Counter : 202