কৃষিমন্ত্রক

জৈব চাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষকের সংখ্যায় ভারত বিশ্বের মধ্যে প্রথম এবং জৈব চাষের দিক থেকে নবম স্থানে রয়েছে ; ভারত থেকে শণ গাছের বীজ, তিল, সয়াবিন, চা, ঔষধী গাছ, চাল এবং ডালের মতো জৈব কৃষিজ পণ্য রপ্তানী করা হয়

Posted On: 13 AUG 2020 4:03PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী, ১৩ আগস্ট, ২০২০

 

 


    ভারতে জৈব কৃষিকাজ বৃদ্ধির পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপি এর ক্রমবর্ধমান চাহিদাও বাড়ছে। কোভিড মহামারীর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত সব দেশে স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ খাদ্যের চাহিদায় ইতিমধ্যে এই জৈব কৃষিজ পণ্যের উর্দ্ধমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। তাই আমাদের দেশের কৃষকদের কাছে এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর এক উপযুক্ত সময় এসেছে।


    জৈব চাষীর সংখ্যায় ভারত বিশ্বের মধ্যে প্রথম এবং জৈব চাষের দিক থেকে নবম স্থানে রয়েছে। সিকিম বিশ্বের পুরোপুরি জৈব কৃষিজ চাষযোগ্য রাজ্য হয়ে উঠেছে। ত্রিপুরা ও উত্তরাখন্ড সহ অন্যান্য রাজ্যগুলি এই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। উত্তরপূর্ব ভারতে ঐতিহ্যগতভাবে জৈব চাষ হয়ে থাকে এবং সেখানে রাসায়নিক সারের  ব্যবহার দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক কম। একইভাবে উপজাতি অঞ্চলগুলিতে জৈব চাষের ধারা অব্যাহত রয়েছে।


    জৈব চাষিদের সহায়তা প্রদান ও তাদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধিতে এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়া কৃষিকাজে উৎসাহিত করে তুলতে ২০১৫ সালে মিশন অর্গ্যানিক ভ্যালু চেইন ডেভেলপমেন্ট ফর নর্থ ইস্ট রিজিয়ন (এমওভিসিডি) এবং পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা (পিকেভিওয়াই) নামে দুটি কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এমনকি ভারত যাতে বিশ্বে জৈব চাষের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তারজন্য ২০১৮ সালে কৃষি রপ্তানী নীতিতে বেশকিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।


    ভারত থেকে মূলত শণ গাছের বীজ, তিল, সয়াবিন, চা, ঔষধী গাছ, চাল এবং ডালের মতো জৈব কৃষিজ পণ্য রপ্তানী করা হয়ে থাকে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে জৈব পণ্য রপ্তানী ক্ষেত্রে প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই অর্থবর্ষে ৫ হাজার ১৫১ কোটি টাকা মূল্যের জৈব কৃষিজ পণ্য রপ্তানী করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসম, মিজোরাম, মনিপুর এবং নাগাল্যান্ড থেকে আমেরিকা, ব্রিটেন, সুইৎজারল্যান্ড ও ইতালি জৈব কৃষিজ পণ্য রপ্তানীর পরিমাণ বাড়িয়েছে।


    জৈব উৎপাদন সম্পর্কে গ্রাহকদের মনে আস্থা জাগাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশীয় এবং বিদেশের বাজারের দিকে লক্ষ্য রেখে পিকেভিওয়াই এবং এমওভিসিডি-র শংসাপত্র প্রদানের বিষয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। এমনকি খাদ্য সুরক্ষা এবং গুণমান (জৈব খাদ্য) আইন ২০১৭তেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। গ্রাহকরা প্রয়োজনে জৈব উৎপাদন সামগ্রির গায়ে সত্যতা বিচারের জন্য এফএসএসএআই, জৈবিক ভারতের লোগো দেখে নিতে পারেন।


    পিকেভিওয়াই-এর আওতায় ৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে  চাষের সুবিধার্থে  ৪০ হাজার জৈব কৃষি গোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এমওভিসিডি-র আওতায় প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ১৬০টি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা চাষ প্রক্রিয়ায় সাহায্য  করছে। বাজারে এই জৈব পণ্যের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হয়েছে। এরজন্য চুক্তি ভিত্তিক চাষও শুরু হয়েছে। এতে একদিকে যেমন জৈব চাষের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে তেমনই শিল্প সংস্থাগুলি তাদের প্রয়োজনে গুণমানসম্পন্ন পণ্যও পাবে। এক্ষেত্রে আদা, হলুদ, কালো চাল, মশলা, আনারস, ঔষধী গাছ ইত্যাদি চাষে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে জৈব চাষ শুরু হয়েছে। কৃষকরা মধ্যস্থতাভোগীদের কাছে না গিয়ে সরাসরি এই পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। মনে রাখা প্রয়োজন বৃহত্তর অর্থনীতির উন্নয়নে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক চাষিদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এক জেলা এক পণ্য ভিত্তিক বাজারের ধারণাকে আরও বেশি উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যাতে গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও জৈব চাষের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।


    মহামারী যখনই ভারতের ওপর আঘাত হেনেছে তখন স্বাস্থ্যকর মানসম্পন্ন খাবারের চাহিদা এবং অগ্রাধিকার ক্রমশই বেড়েছে। কৃষকরা যাতে ফসলের ন্যায্য দাম পান তারও যথাযথ ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাজারে ফসলের যোগান অব্যাহত রাখতে সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে কৃষকদের কাছে বাজারের সুবিধা বৃদ্ধিতে অনলাইন ব্যবস্থাপনাও চালু করা হয়েছে। জৈব ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম- http://www.jaivikkheti.in/ এর মাধ্যমে কৃষকদের সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে। এতে কৃষকদের পণ্য পরিবহণের খরচ অনেকটাই লাঘব হবে। এর পাশাপাশি জৈব চাষের উৎপাদন বৃদ্ধি, সুসংহত পুষ্টি এবং কীটপতঙ্গের মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহারে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘ক্ষুধামুক্ত খাদ্য সুরক্ষা, উন্নত পুষ্টি অর্জন এবং স্থায়ী কৃষি উন্নতিতে’ কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে ভারতের জৈব চাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষকরা আগামীদিনে খুব শীঘ্রই বিশ্ব কৃষি বাণিজ্য ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী জায়গা  করে নেবে  বলে আশা করা যাচ্ছে।
 

 


CG/SS/NS



(Release ID: 1645593) Visitor Counter : 2535