সংখ্যালঘুবিষয়কমন্ত্রক

তিন তালাক – বড় সংস্কার, দৃষ্টান্তমূলক পরিণাম

Posted On: 22 JUL 2020 12:27PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২২ জুলাই, ২০২০

 

 


আগস্ট মাসকে ভারতীয় ইতিহাসে বিপ্লব, উত্থান, অধিকার ও সংস্কারের মাস হিসাবে গণ্য করা হয়; ৮ই আগস্ট ভারত ছাড়ো আন্দোলন, ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস, ১৯শে আগস্ট বিশ্ব মানবাধিকার দিবস, ২০শে আগস্ট সদ্ভাবনা দিবস এবং ৫ই আগস্ট ৩৭০ ধারা বিলোপ – এই দিনগুলি ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।


পয়লা আগস্ট মুসলিম মহিলাদের কাছে এমন একটি দিন, যেদিন তাঁরা সামাজিক কুপ্রথা তিন তালাক থেকে মুক্ত হয়েছেন। পয়লা আগস্ট দিনটি দেশের ইতিহাসে মুসলিম মহিলা অধিকার দিবস হিসাবে নথিভুক্ত হয়েছে।


তিন তালাক বা তালাক এ বিদ্দত কখনই ইসলাম ধর্মের এমনকি আইনের অঙ্গ ছিল না। তা সত্ত্বেও তিন তালাকের সামাজিক কুসংস্কারকে ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থ পূরণে রাজনৈতিক রঙ দেওয়া হয়েছিল।


২০১৯ – এর পয়লা আগস্ট ভারতীয় সংসদীয় ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন। এই দিনটিতে তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে একটি আইন কার্যকর হয়েছে। এ সত্ত্বেও তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার মতবাদীরা এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন। সেদিন সংসদে এই বিলের বিরোধিতায় কংগ্রেস, বামপন্থী দলগুলি, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি এবং তৃণমূল কংগ্রেস একজোট হয়েছিল। পয়লা আগস্ট দিনটি মুসলিম মহিলাদের লিঙ্গ সমতা, সাংবিধানিক, মৌলিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকারগুলিকে সুনিশ্চিত করেছে। তাই, পয়লা আগস্ট দিনটি ভারতীয় গণতন্ত্র এবং সংসদীয় ইতিহাসে এক সোনালী মুহূর্ত হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।


সামাজিক কুপ্রথা তিন তালাকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইন ১৯৮৬ সালেই সংসদের অনুমোদন পেয়ে যেতো। সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট শাহবানো মামলায় ঐতিহাসিক এক রায় দিয়েছিল। লোকসভায় ৫৪৫টি আসনের মধ্যে ৪০০টিরও বেশি আসনে কংগ্রেসের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। এমনকি, রাজ্যসভায় ২৪৫ জন সদস্যের মধ্যে ১৫৯ জনেরও বেশি ছিলেন কংগ্রেসের। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তৎকালীন রাজীব গান্ধী সরকার সংসদে তার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়টিকে কার্যকর করতে দেয়নি। ফলস্বরূপ, মুসলিম মহিলাদের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারগুলিকে একপ্রকার অবজ্ঞা করা হয়েছিল।


তৎকালীন কংগ্রেস সরকার কিছু সংকীর্ণ মানসিকতাপূর্ণ সংস্কার বিমুখ মানুষের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিল। পক্ষান্তরে, সরকারের এই ভূমিকা ছিল মুসলিম মহিলাদের সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি অপরাধ। সেই সময় কংগ্রেসের ‘এই ভুল’ মুসলিম মহিলাদের কাছে বহু দশকের এক শাস্তির খাড়া নেমে এসেছিল। কংগ্রেস দল ‘ভোট কা উধার’ নিয়ে যথেষ্ট আতঙ্কিত হয়েছিল। অন্যদিকে, আমাদের সরকার সামাজিক সংস্কারের ব্যাপারে যথেষ্ট চিন্তিত ছিল।   


ভারত সংবিধান অনুসরণ করে পরিচালিত হয়। সাহরিয়ত মেনে নয় বা অন্য কোনও ধর্মীয় গ্রন্থ মেনে নয়। এর আগে দেশ থেকে সামাজিক কুপ্রথাগুলি দূর করার জন্য একাধিক আইন কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু, তিন তালাক প্রথা রদের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। এই আইন সামাজিক কুসংস্কার দূর করা, অমানবিক আচরণ প্রতিহত করা, নিষ্ঠুর ও অসাংবিধানিক প্রথা দূরীকরণের লক্ষ্যে লিঙ্গ সমতা বজায় রাখার জন্য কার্যকর করা হয়েছে। মুখে তিনবার তালাক শব্দ উচ্চারণ করে, তৎক্ষণাৎ বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে চিঠির মাধ্যমে, ফোনে, এমনকি মোবাইল এসএমএস বা হোয়াটস্অ্যাপের মাধ্যমেও তালাক দেওয়া হয়েছিল। সংবেদনশীল একটি রাষ্ট্রে এ ধরনের দুর্ব্যবহার যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনই নীতি বিরুদ্ধ। সার্বিক উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ একটি সরকারের কাছেও এটি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।


বিশ্বের একাধিক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তিন তালাক প্রথাকে বেআইনি এবং ইসলাম বিরোধী বলে আগেই ঘোষণা করেছে। মিশর হ’ল প্রথম মুসলিম রাষ্ট্র, যেখানে ১৯২৯ সালে সামাজিক এই কুপ্রথা বাতিল করা হয়। একইভাবে, ১৯২৯ সালে সুদানে, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে, ১৯৫৯ সালে ইরাকে, ১৯৫৩ সালে সিরিয়ায় এবং ১৯৬৯ সালে মালয়েশিয়াতে তিন তালাক প্রথা চিরতরে বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও, সাইপ্রাস, জর্ডন, আলজেরিয়া, ইরান, ব্রুনেই, মরক্কো, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমীরশাহীতে বহু বছর আগেই সামাজিক এই কুপ্রথাটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারত এই অমানবিক ও নিষ্ঠুর প্রথাটিকে নির্মূল করতে ৭০ বছর লেগে গেছে।


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর সুদক্ষ নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক সংস্কারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। কয়েকটি রাজনৈতিক দল এরকম অভিযোগ করেছে যে, মুসলিম মহিলাদের তালাকের ব্যাপারে মোদী সরকার কেন ভীত? কেনই বা মোদী সরকার মুসলিম মহিলাদের আর্থ-সামাজিক, শিক্ষার অধিকারের ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে রয়েছে? আমি সেই সমস্ত মানুষ, যাঁরা গত ৬ বছর ধরে এ ধরনের প্রশ্নবান ছুঁড়ে আসছেন, তাঁদের উদ্দেশে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, মোদী সরকার মুসলিম মহিলা সহ সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের সার্বিক ক্ষমতায়নে কাজ করেছে।


মোদী সরকারের সমস্ত প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যই হ’ল – সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের সার্বিক উন্নয়ন এবং মুসলিম মহিলাদের কল্যাণ সুনিশ্চিত করা। গত প্রায় ছয় বছরে ৩ কোটি ৮৭ লক্ষেরও বেশি সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীকে বিভিন্ন শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ বালিকা রয়েছে। বহু সংখ্যক মুসলিম মহিলাকে হুনার হাট – এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ‘শিখো অউর কামাও’, ‘গরিব নওয়াজস্বরোজগার যোজনা’, ‘উস্তাদ’, ‘নই মনজিল, নই রশনি’ প্রভৃতি দক্ষতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে ১০ লক্ষেরও বেশি সংখ্যালঘু যুবক-যুবতীকে কর্মসংস্থানের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এমনকি, এই কর্মসূচিগুলির ৫০ শতাংশেরও বেশি সুফলভোগী হলেন মহিলা। মুসলিম মহিলারা পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই হজে যেতে পারবেন বলে ২০১৮ সালে মোদী সরকারের ঘোষণার পর ৩ হাজার ৪০ জন মহিলা মেহরম বা পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই হজে গিয়েছিলেন। এ বছরও ২ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি মহিলা পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই হজে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।


মোদী সরকারের বিভিন্ন প্রয়াসে মুসলিম মহিলারাও সমানভাবে লাভবান হয়েছেন। বিরোধী পক্ষ এবং প্রথাগতভাবে যাঁরা মোদী বিরোধী, তাঁরাও কোনও গোষ্ঠীর প্রতি কল্যাণমূলক কর্মসূচিগুলিকে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে বলে প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। সার্বিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টাগুলির প্রকৃত পরিণাম পাওয়া গেছে। যখন আমাদের সরকার গরিব মানুষদের ২ কোটি বাড়ি দিয়েছে, যার মধ্যে ৩১ শতাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের – তখন বৈষম্যমূলক আচরণের কোনও ভিত্তিই থাকে না। দশকের পর দশক ধরে দেশের যে সমস্ত গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ ছিল না, আমাদের সরকার সেই সমস্ত জনপদে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। এক সময় যে সমস্ত গ্রামের মানুষ অন্ধকারে দিন কাটাতেন, এখন তাঁদের কাছে বিদ্যুতের আলো পৌঁছেছে। আমাদের সরকার কিষাণ সম্মাননিধি কর্মসূচির আওতায় ২২ কোটি কৃষককে বিভিন্ন সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে। এই ২২ কোটি কৃষকের মধ্যে ৩৩ শতাংশেরও বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় ৮ কোটিরও বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসার ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য কর্মসংস্থানমুখী আর্থিক কর্মকান্ডের জন্য মুদ্রা যোজনার আওতায় আমাদের সরকার ২৪ কোটি মানুষকে সহজশর্তে ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এই ২৪ ঋণ গ্রহীতার মধ্যে ৩৬ শতাংশেরও বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। মুসলিম মহিলারাও এই কল্যাণমূলক কর্মসূচিগুলির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। এর ফলে, তাঁরা উন্নয়নের মূলস্রোতে সমান অংশীদার হিসাবে সামিল হতে পেরেছেন।


• লেখক : মুখতার আব্বাস নাকভি, কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী

 

 


CG/BD/SB



(Release ID: 1640474) Visitor Counter : 1745