Technology
ধ্রুব৬৪: ভারতের প্রথম ১.০ গিগাহার্টজ, ৬৪-বিট দ্বৈত কোর যুক্ত মাইক্রোপ্রসেসর
Posted On:
15 DEC 2025 3:08PM
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
মূল বিষয়সমূহ
- ভারতে নির্মিত প্রথম ১.০ গিগাহার্টজ, ৬৪-বিট দ্বৈত কোর যুক্ত মাইক্রোপ্রসেসর ধ্রুব৬৪ দেশীয় প্রসেসর নির্মাণ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
- ডিজিটাল ইন্ডিয়া রিস্ক-৫ কর্মসূচির মতো জাতীয় উদ্যোগগুলি ধ্রুব৬৪-সহ দেশীয় চিপের নকশা, পরীক্ষা এবং প্রোটোটাইপ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করছে।
- ধ্রুব৬৪-র সাফল্যের পর পরবর্তী প্রজন্মের ধনুষ এবং ধনুষ প্লাস প্রসেসরের কাজ শুরু হয়েছে।
ভূমিকা
ধ্রুব৬৪-র নির্মাণ ভারতের সেমিকন্ডাক্টর অভিযানের এক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। এটি মাইক্রোপ্রসেসর উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং বা সি-ড্যাকের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে তৈরি। এটি কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। এর নির্মাণ উন্নত চিপ নকশায় আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে বড় অগ্রগতি।
আপনি কি জানেন?
মাইক্রোপ্রসেসর যেকোনো আধুনিক বৈদ্যুতিন যন্ত্রের মূল অংশ। মোবাইল, কম্পিউটার, গাড়ি, চিকিৎসার সরঞ্জাম, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবংকৃত্রিম স্যাটেলাইট নির্মাণে এগুলি ব্যবহৃত হয়। ভারতের ক্ষেত্রে এই ধরনের মৌলিক প্রযুক্তির মালিকানা বিদেশী সরবরাহকারীর ওপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করে। এটি বৈদ্যুতিন ও ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নেও সহায়ক।
ধ্রুব৬৪-র নির্মাণে অত্যাধুনিক নৈপুণ্য স্পষ্ট। এর ব্যবহার অনেক কাজের একসঙ্গে পরিচালনার ক্ষমতা বাড়ায়। নির্ভরযোগ্যতাও উন্নত করে। এর উন্নত নকশা বিভিন্ন বাহ্যিক হার্ডওয়্যার ব্যবস্থার সঙ্গে সহজ সংযুক্তি সম্ভব করে। উচ্চ কর্মক্ষম চিপে ব্যবহৃত আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি এতে প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে, ৫জি পরিকাঠামো, যানবহন ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিন পণ্য, শিল্প স্বয়ংক্রিয়করণ এবং ইন্টারনেট অফ থিংস আইওটি'র মতো ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারযোগ্য।
ভারতের জন্য ধ্রুব৬৪-এর কৌশলগত গুরুত্ব
ধ্রুব৬৪ একটি নিরাপদ এবং আত্মনির্ভর সেমিকন্ডাক্টর ব্যবস্থার পথে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব। এটি ভারতের উন্নত প্রসেসর বিকাশের দক্ষতা উন্নত করে। এটির গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল পরিকাঠামোয় ব্যবহারযোগ্যতা আমদানিকৃত মাইক্রোপ্রসেসরের উপর দেশের নির্ভরতা কমায়।
বিশ্বে উৎপাদিত মোট মাইক্রোপ্রসেসরের প্রায় ২০ শতাংশ ভারত ব্যবহার করে। ধ্রুব৬৪ দেশের বৃহৎ দক্ষ মানবসম্পদকে একটি আধুনিক প্রসেসর পরিসর প্রদান করে। এটি ভারতে সেমিকন্ডাক্টর ব্যবস্থার অগ্রগতিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
ধ্রুব৬৪-র আগেই ভারত দেশীয় মাইক্রোপ্রসেসর বিকাশের পরিসর সম্প্রসারণ শুরু করেছিল। এর কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল-
- শক্তি (২০১৮, আইআইটি মাদ্রাজ): কৌশলগত, মহাকাশ এবং প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।
- অজিত (২০১৮, আইআইটি বম্বে): শিল্প ও রোবোটিক্সে ব্যবহারের জন্য মাইক্রোপ্রসেসর।
- বিক্রম (২০২৫, ইসরো এসসিএল): মহাকাশে ব্যবহারের জন্য তৈরি প্রসেসর। দিশা নির্ধারণ ও মিশন পরিচালনায় ব্যবহৃত। মহাকাশের চরম পরিস্থিতিতেও ব্যবহারযোগ্য।
- তেজস৬৪ (২০২৫, সি-ড্যাক): শিল্প স্বয়ংক্রিয়করণের জন্য প্রস্তুত।
শক্তি, অজিত, বিক্রম, তেজস এবং বর্তমানে ধ্রুব৬৪-র মতো দেশীয় প্রসেসর কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি একটি দক্ষ ভারতীয় প্রসেসর ব্যবস্থা গঠনে সহায়ক।
ভারতের গবেষণা ও উদ্ভাবনে ধ্রুব৬৪-এর প্রভাব
- ধ্রুব৬৪-র মত দেশীয় মাইক্রোপ্রসেসর প্রযুক্তি স্টার্টআপ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প সংস্থাগুলির বিদেশি প্রসেসরের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে তাদের আর্থিক কাঠিন্য লাঘব করে।
- এটি স্থাপত্যের ক্ষেত্রে কম খরচে নতুন ব্যবস্থার নিদর্শন তৈরিতে সহায়তা করে।
- বিশ্বের মোট চিপ ইঞ্জিনিয়ারের প্রায় ২০ শতাংশ ইতিমধ্যেই ভারতে রয়েছে। ধ্রুব৬৪ এই দক্ষ মানবসম্পদ পরিসর আরও উন্নত করে।
- ধ্রুব৬৪-এর সাফল্য ধনুষ এবং ধনুষ প্লাস প্রসেসরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে গতিশীল করেছে। এগুলি বর্তমানে নির্মাণাধীন।
ধ্রুব৬৪-এর বাস্তবায়ন এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া রিস্ক-৫ কর্মসূচির অগ্রগতি
ভারত সরকার আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য নিয়ে ডিজিটাল ইন্ডিয়া রিস্ক-৫ কর্মসূচি শুরু করেছে। এর উদ্দেশ্য- বৈদ্যুতিন ব্যবস্থার নকশা ও উৎপাদনে ভারতকে একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে রিস্ক-৫ ভিত্তিক মাইক্রোপ্রসেসরের একটি পূর্ণাঙ্গ পরিসর তৈরি করা হচ্ছে। এগুলি শিল্প, কৌশলগত ক্ষেত্র এবং ক্রেতা প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হবে।
ভারতের দেশীয় চিপ রূপরেখায় ধ্রুব৬৪-র ভূমিকা
ধ্রুব৬৪-এর উপস্থিতি দেশীয় মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবস্থাকে শক্তি প্রদান করেছে। বিনামুল্যে ব্যবহারযোগ্যতার ফলে অনুমোদনের খরচ কমেছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এর ব্যবহার সহজ হয়েছে।
ডিজিটাল ইন্ডিয়া রিস্ক-৫ কর্মসূচির অধীনে ধ্রুব৬৪ তৃতীয় চিপ। দেশের সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য মাইক্রোপ্রসেসর তৈরিই এই কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য।
- প্রথম চিপ তেজস৩২ মালয়েশিয়ার সিলটেরা কারখানায় নির্মিত হয়।
- দ্বিতীয় চিপ তেজস৬৪ মোহালির সেমিকন্ডাক্টর ল্যাবে দেশে নির্মিত হয়।
- এছাড়া, ধনুষ৬৪ এবং ধনুষ৬৪ প্লাস সিস্টেম অন এ চিপের নকশা ও নির্মাণকাজ বর্তমানে চলমান।
ধ্রুব৬৪-র বাস্তবায়ন দেশীয় মাইক্রোপ্রসেসর নির্মাণে ভারতের সক্ষমতাকে স্পষ্ট করে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া রিস্ক-৫ উদ্যোগের ধারাবাহিক অগ্রগতি একটি শক্তিশালী প্রসেসর ব্যবস্থা গঠনে ভারতের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।
প্রসেসর বিকাশে প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো
ভারতের সেমিকন্ডাক্টর ব্যবস্থার বিকাশ একটি সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় স্তরের সংস্থাগুলি নীতি, নির্দেশনা ও কর্মসূচি সহায়তা প্রদান করছে। এর ফলে, দেশীয় প্রসেসরের নকশা ও নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে।
বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক: এই মন্ত্রক ভারতের প্রসেসর ও সেমিকন্ডাক্টর উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নীতিগত সহায়তা, অর্থায়ন এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে মাইক্রোপ্রসেসর উন্নয়ন কর্মসূচি, ডিজিটাল ইন্ডিয়া রিস্ক-৫, 'চিপস টু স্টার্টআপ' এবং ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর মিশনের মতো উদ্যোগ পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে নকশা ব্যবস্থার উন্নত হয়েছে।
সি-ড্যাক: এই সংস্থা দেশীয় প্রসেসরের নকশায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। এটি প্রসেসর বৌদ্ধিক সম্পদ, সিস্টেম অন এ চিপ, উন্নয়ন বোর্ড এবং সহায়ক সরঞ্জাম তৈরি করছে। বর্তমানে রিস্ক-৫-এর অধীনে ধনুষ এবং ধনুষ প্লাস প্রসেসরের কাজ এগিয়ে চলছে। এগুলি কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য দেশীয় বিকল্পের পরিসর বাড়াবে।
দেশীয় চিপ নকশায় সহায়ক জাতীয় কর্মসূচি
ভারত সরকার একাধিক জাতীয় কর্মসূচির সূচনা করেছে। এগুলির মাধ্যমে নকশা সক্ষমতা বৃদ্ধি, গবেষণা পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
- ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর মিশন: ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে এই মিশন শুরু হয়। এটি দেশে বড় সেমিকন্ডাক্টর বিনিয়োগ আকর্ষণে কাজ করছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত ছয়টি রাজ্যে ১০-টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। মোট বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি এক লক্ষ ষাট হাজার কোটি টাকা।
- ডিজিটাল ইন্ডিয়া রিস্ক-৫ কর্মসূচি: ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি দেশীয় চিপ নকশায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি গবেষক, স্টার্টআপ এবং শিল্পকে একটি অভিন্ন নকশা ব্যবস্থায় যুক্ত করেছে।
- চিপস টু স্টার্টআপ কর্মসূচি: ২০২২ সালে শুরু হওয়া এই উদ্যোগটি ১১৩-টি প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর জন্য পাঁচ বছরে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর লক্ষ্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা।
- ডিজাইন লিঙ্কড ইনসেনটিভ প্রকল্প: ২০২১ সালের এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেমিকন্ডাক্টর নকশার বিভিন্ন পর্যায়ে আর্থিক ও পরিকাঠামোগত সহায়তা দেওয়া হয়।
- ইন্ডিয়ান ন্যানোইলেকট্রনিক্স ইউজার্স প্রোগ্রাম- আইডিয়া টু ইনোভেশন: এই কর্মসূচির মাধ্যমে গবেষক, ছাত্র এবং স্টার্টআপরা জাতীয় ন্যানোফ্যাব্রিকেশন সুবিধা ব্যবহার করতে পারে। এতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আট হাজারের বেশি দক্ষ কর্মী এখানে প্রশিক্ষিত হয়েছে।
সমাপ্তি
দেশীয় প্রসেসর নির্মাণে ভারতের অগ্রগতি সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার দৃঢ় অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে। ধ্রুব৬৪ এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া রিস্ক-৫, চিপস টু স্টার্টআপ, ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর মিশন, ডিজাইন লিঙ্কড ইনসেনটিভ এবং ইন্ডিয়ান ন্যানোইলেকট্রনিক্স কর্মসূচির সহায়তায় ভারত তার উন্নত প্রসেসর নকশা ও প্রোটোটাইপ তৈরির সক্ষমতা দেখিয়েছে। বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক, উন্নত কম্পিউটিং উন্নয়ন কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ভারত উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে।
তথ্যসূত্র-
Ministry of Electronics and IT
India Semiconductor Mission
Press Information Bureau Backgrounders
VEGA Processors
Special Service and Features
Design Linked Incentive
Ministry of Commerce & Industry
Rajya Sabha
DHRUV64: India’s First 1.0 GHz, 64-bit dual-core Microprocessor
SSS/RS. ...
(Backgrounder ID: 156514)
आगंतुक पटल : 5
Provide suggestions / comments