Global Affairs
কৌশলগত অংশীদারিত্ব থেকে বিশেষ ও স্বতন্ত্র সম্পর্ক : এক নজরে ভারত-রাশিয়া বন্ধন
Posted On:
04 DEC 2025 12:01PM
০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
মূল বিষয়
২০২৫ সালে ভারত ও রাশিয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের কৌশলগত বন্ধনকে আরও মজবুত করেছে। বিদেশমন্ত্রীর আগস্ট ২০২৫-এর সফরের সময়, উভয় দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে $১০০ বিলিয়ন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের লক্ষ্য পূরণের জন্য ভারত-ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং রাশিয়ায় দুটি নতুন ভারতীয় কনস্যুলেট স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দেয়। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা বজায় রেখে, মার্চ-এপ্রিল ২০২৫-এ উভয় পক্ষের প্রধান জাহাজ ও বিমান নিয়ে ইন্দ্র-২০২৫ নৌ-মহড়া সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, নভেম্বর ২০২৫-এ সামুদ্রিক পরামর্শ এবং ইন্ডিয়া এনার্জি উইক ২০২৫-এ রাশিয়ার অংশগ্রহণের মতো একাধিক উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশ ক্ষেত্রভিত্তিক সহযোগিতার অগ্রগতি সাধন করে।
ভারত - রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
রাশিয়া ভারতের দীর্ঘদিনের এবং সময়-পরীক্ষিত অংশীদার। ২০০০ সালের অক্টোবরে "ভারত-রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঘোষণাপত্র" স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে এই সম্পর্ক রাজনীতি, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্টের ২০১০ সালের ভারত সফরের সময় এই অংশীদারিত্বকে আরও একধাপ উপরে তুলে "বিশেষ ও সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারিত্বের" স্তরে উন্নীত করা হয়। এই অংশীদারিত্বের আওতায় নিয়মিত আলাপ-আলোচনা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ও দাপ্তরিক উভয় স্তরেই একাধিক প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ প্রক্রিয়া কার্যকর রয়েছে। কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা স্তরে নিবিড় সহযোগিতার জন্য ভারত-রাশিয়া আন্তঃসরকারি কমিশনের মতো আনুষ্ঠানিক সংস্থাগুলি রয়েছে, যার দুটি ভাগ - বাণিজ্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত IRIGC-TEC (নেতৃত্বে ভারতের বিদেশমন্ত্রী ও রাশিয়ার প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী) এবং সামরিক ও সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সংক্রান্ত IRIGC-M&MTC (নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী)। এই কাঠামোর পাশাপাশি, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একটি নতুন ব্যবস্থা হিসেবে "২+২ সংলাপ" যোগ করা হয়, যেখানে উভয় দেশের বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা একই সঙ্গে বৈঠক করেন; যা ভারত ও রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী/রাষ্ট্রপতির শীর্ষ-পর্যায়ের আলোচনার পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয়।
এই আন্তঃ-সরকারি কমিশন হল ১৯৯২ সালের মে মাসে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির মাধ্যমে গঠিত একটি ব্যবস্থা, যার উদ্দেশ্য - দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক অগ্রগতির নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
ভারত-রাশিয়া রাজনৈতিক সম্পর্ক
ভারত ও রাশিয়া নিবিড় এবং বহুস্তরীয় রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের বিশেষ ও সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারত্বকে লালন করে চলেছে। দু'দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন হল সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। এখনও পর্যন্ত ২২-টি শীর্ষ সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। ২৩-তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ০৪ থেকে ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ভারতে আসবেন। এই আসন্ন সফরে দ্বিপাক্ষিক অগ্রগতির পর্যালোচনা, অংশীদারিত্বের ভবিষ্যৎ দিক নির্ধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। ২২-তম শীর্ষ সম্মেলনটি ৮-৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে মস্কোতে অনুষ্ঠিত হয়। নেতৃবৃন্দ “ভারত-রাশিয়া: সহনশীল ও সম্প্রসারিত অংশীদারত্ব” শীর্ষক একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেন।
২০৩০ সাল পর্যন্ত কৌশলগত অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে একটি পৃথক যৌথ বিবৃতি এবং নয়টি মউ স্বাক্ষরিত হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য রাশিয়ার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান 'অর্ডার অফ সেন্ট অ্যান্ড্রু দ্য অ্যাপোস্টল দ্য ফার্স্ট-কল্ড'-এ ভূষিত করা হয়। নেতৃবৃন্দ ২২ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে কাজানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এবং ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে চিনের তিয়ানজিনে এস.সি.ও রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠকের ফাঁকে পুনরায় সাক্ষাৎ করেন। ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি, ২০ মার্চ, ৫ জুন এবং ২৭ আগস্ট, এবং পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর ৫ মে ২০২৫-সহ নেতৃবৃন্দ টেলিফোনে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন। তারা সন্ত্রাসবাদের সব রূপ ও প্রকাশনার বিরুদ্ধে সহযোগিতা জোরদার করার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
১৮ আগস্ট এবং ০৮ আগস্ট ২০২৫-এ রাষ্ট্রপতি পুতিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন এবং মার্কিন-রাশিয়া আলাস্কা শীর্ষ সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে ইউক্রেন সম্পর্কিত সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেন।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এবং রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রী লাভরভ এ বছর মোট ছয়বার সাক্ষাৎ করেছেন।
সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয় ১৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে মস্কোতে, এসসিও কাউন্সিল অফ হেডস অফ গভর্নমেন্ট বৈঠকের সময়।
আগস্ট ২০২৫-এ মস্কো সফরে বিদেশমন্ত্রী রাশিয়ার প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী মান্টুরভের সঙ্গে ২৬তম আইআরআইজিসি-টিইসি-এর সহ-সভাপতিত্ব করেন
তিনি পুতিন এবং লাভরভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে $১০০ বিলিয়ন বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা দ্রুত অর্জনের জন্য সওয়াল করেন।
কাজান ও ইয়েকাতেরিনবার্গে দুটি নতুন ভারতীয় কনস্যুলেট খোলার প্রক্রিয়া, জ্বালানি সম্পর্ক এবং ভারত-ইএইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়।বিদেশমন্ত্রী পুনরায় নিশ্চিত করেন যে, মতপার্থক্য মোকাবিলার জন্য আলোচনা ও কূটনীতিই সবচেয়ে গঠনমূলক পথ। তিনি রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ভারতীয়দের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত নিষ্পত্তির আশা করেন।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে চিনের কিংডাওতে এসসিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মিঃ আন্দ্রে বেলোসভের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। তিনি ৮-১০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মস্কো সফর করে ২১-তম ভারত-রাশিয়া সামরিক ও সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা আন্তঃ-সরকারি কমিশনের সহ-সভাপতিত্ব করেন এবং রাষ্ট্রপতি পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শ্রী অজিত দোভাল ৭-৮ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ভারত-রাশিয়া এনএসএ-স্তরের কৌশলগত আলোচনার জন্য মস্কো সফর করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং অন্যান্য উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। তিনি সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ব্রিকস এনএসএ বৈঠকের জন্য সেন্ট পিটর্সবার্গও সফর করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি ৭ মার্চ ২০২৫ তারিখে মস্কোতে উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী আন্দ্রে রুডেনকোর সঙ্গে ফরেন অফিস আলোচনা করেন।
ভারত ও রাশিয়া নয়াদিল্লিতে সামুদ্রিক পরামর্শ সভা করে (নেতৃত্বে ছিলেন সর্বানন্দ সোনয়াল ও নিকোলাই পাত্রুশেভ)। উভয় পক্ষ জাহাজ নির্মাণ, বন্দর উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা এবং আর্কটিক সহযোগিতা পর্যালোচনা করে। তারা দীর্ঘমেয়াদী সংযোগ এবং বৃদ্ধির সহায়ক একটি স্থিতিস্থাপক সামুদ্রিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য সহযোগিতা আরও গভীর করতে সম্মত হন।
ভারত-রাশিয়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক
বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য ভারত-রাশিয়া আন্তঃসরকারি কমিশন হল মূল সরকারি প্রক্রিয়া, যার ২৬-তম অধিবেশন ২০ আগস্ট ২০২৫-এ মস্কোতে অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে বাণিজ্য বাধা দূরীকরণ,ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, আর্থিক বিনিময় পদ্ধতি মসৃণ করা, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে $১০০ বিলিয়ন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভারত-ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দ্রুত সমাপ্তির ওপর জোর দেওয়া হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য রেকর্ড $৬৮.৭ বিলিয়ন-এ পৌঁছেছে, যার মধ্যে ভারতীয় রপ্তানি $৪.৯ বিলিয়ন এবং আমদানি $৬৩.৮ বিলিয়ন (প্রধানত, অশোধিত তেল)। উভয় দেশই ২০২৫ সালের মধ্যে $৫০ বিলিয়ন পারস্পরিক বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে তেল-গ্যাস, ইস্পাত, রেল এবং ফার্মাসিউটিক্যালস বা ওষুধপ্রস্তুতকারক শিল্পের মত ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা জোরদার করছে।
ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি, যা ৬ ডিসেম্বর ২০২১-এ স্বাক্ষরিত ২০২১-২০৩১ সালের সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চুক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়, যার মূল লক্ষ্য অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামাদির যৌথ গবেষণা, উন্নয়ন, উৎপাদন এবং বিক্রয়োত্তর সমর্থন। এই দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কটি এখন শুধু ক্রেতা-বিক্রেতার পর্যায় থেকে উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যৌথ উৎপাদন ও উন্নয়নের দিকে পরিবর্তিত হয়েছে; যেমন টি-৯০ ট্যাঙ্ক এবং সু-৩০ এমকেআই বিমান ভারতেই তৈরি হচ্ছে,এবং ব্রহ্মোসের মতো প্রযুক্তির সহ-উন্নয়ন করা হচ্ছে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সহ-সভাপতিত্বে পরিচালিত আন্তঃসরকারি কমিশন (IRIGC-M&MTC) এই সম্পর্ককে নিয়মিত পরিচালনা করে, যার ২১-তম বৈঠক ডিসেম্বর ২০২৪-এ এবং পঞ্চম বৈঠক অক্টোবর ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হয়। সামরিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে দুই দেশের সেনাবাহিনী নিয়মিতভাবে যৌথ সামরিক মহড়া চালায়; যার মধ্যে ইন্দিরা-২০২৫ (রাজস্থানের বিকানেরে) এবং জাপাদ-২০২৫ (রাশিয়ার নিঝনি নভগোরদে) উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, ডিসেম্বর ২০২৪ এবং জুলাই ২০২৫-এ আইএনএস তুশিল এবং আইএনএস তামাল নামের ফ্রিগেটগুলি ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে।
যৌথ গবেষণা, উন্নয়ন এবং উৎপাদনের দিকে পরিবর্তন
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিছক ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক ছাড়িয়ে উন্নত ব্যবস্থার যৌথ গবেষণা, উন্নয়ন এবং সহ-উৎপাদনকে অন্তর্ভুক্ত করে বিবর্তিত হয়েছে। নিচে কিছু অস্ত্র ব্যবস্থার নাম দেওয়া হল :

সংসদীয় সহযোগিতা
ভারত ও রাশিয়ার সংসদীয় সহযোগিতা লোকসভা এবং রাশিয়ার স্টেট ডুমার (নিম্নকক্ষ) মধ্যেকার আন্তঃ-সংসদীয় কমিশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা উভয় দেশের স্পিকার/চেয়ারপার্সন দ্বারা সহ-সভাপতিত্ব করা হয় এবং এটি এই পর্যন্ত পাঁচবার হয়েছে (শেষ বৈঠক ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়)। রাশিয়ার স্টেট ডুমার চেয়ারম্যান ভ্যাচেস্লাভ ভোলোদিন ০২-০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫-এ ভারত সফর করেন এবং লোকসভার স্পিকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন; অন্যদিকে, লোকসভার স্পিকার শ্রী ওম বিড়লাও জুলাই ২০২৪-এ ১০ম ব্রিকস সংসদীয় ফোরামে যোগ দিতে সেন্ট পিটার্সবার্গ সফর করেন এবং রুশ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া, পহেলগাম হামলার প্রেক্ষিতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরতে মে ২০২৫-এ কানিমোঝি করুণানিধির নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল রাশিয়া সফর করে; সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংসদীয় ফোরাম ও কর্মীগোষ্ঠি বৈঠকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা মৌলিক বিজ্ঞান, ন্যানোটেকনোলজি এবং ভারতের মানব মহাকাশ কর্মসূচী (গগনযান)-এর মতো অত্যাধুনিক ক্ষেত্রগুলিতে বিস্তৃত। এই সহযোগিতার একটি বড় উদাহরণ রাশিয়ার সহায়তায় স্থাপিত তামিলনাড়ুর কুডানকুলামে ভারতের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র; এছাড়া, এই সম্পর্কটি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ২১-তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে স্বাক্ষরিত নতুন সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশনের রোডম্যাপ দ্বারা পরিচালিত হয়, যা প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব সৃষ্টিকারী যৌথ প্রকল্পগুলির উপর গুরুত্ব দেয়।
আপনি কি জানেন?
ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ অভিযান 'গগনযান'-এর জন্য ইসরো (ISRO) এবং রসকসমস (Roscosmos)-এর দীর্ঘদিনের মহাকাশ সহযোগিতা রয়েছে, যার অধীনে ভারতীয় নভোচারীরা রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে :
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে বহুমুখী এবং দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা রয়েছে, যার সবচেয়ে দৃশ্যমান দিক হল, প্রায় ২০,০০০ ভারতীয় ছাত্রছাত্রীর রাশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রধানত চিকিৎসা ও প্রকৌশলের মতো বিষয়ে অধ্যয়ন। অন্যদিকে, রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হিন্দি, সংস্কৃত এবং পালি ভাষার পাশাপাশি, ইন্দোলজি পড়ানো হয়। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে, দুই সরকারের মধ্যে শিক্ষা বিনিময় কার্যক্রম, ভারত ও রাশিয়ার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নেটওয়ার্ক এবং আইটিইসি বৃত্তির মতো প্রক্রিয়াগুলি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
ভারত-রাশিয়া সাংস্কৃতিক সম্পর্ক
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে গভীর এবং শত বছরের পুরনো সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিদ্যমান, যা ভারতের স্বাধীনতারও পূর্বের। এই সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ১৫শ শতকে রুশ বণিক আফ্যানাসি নিকিতিন-এর ভ্রমণের মাধ্যমে এবং কলকাতায় হেরাসিম লেবেদেভ কর্তৃক একটি রুশ থিয়েটার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। নিকোলাস রোরিখের মতো বিশিষ্ট রুশ পণ্ডিত ও শিল্পীরা এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছেন। বহু প্রজন্মের রুশ নাগরিকরা ভারতের জনপ্রিয় ছায়াছবিগুলি দেখে বড় হয়েছেন এবং ১৯৮০-এর দশক থেকে প্রধান শহরগুলিতে যোগাভ্যাস ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
আপনি কি জানেন?
২০১৯ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ভারত-রাশিয়া বন্ধুত্ব জোরদার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে রাশিয়ার সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান, 'অর্ডার অফ দ্য হোলি অ্যাপোস্টল অ্যান্ড্রু দ্য ফার্স্ট' প্রদান করেন।
দুই দেশের মধ্যে পর্যটকদের যাতায়াত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জনগণের মধ্যে যোগাযোগ নিরন্তর শক্তিশালী হচ্ছে; ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মস্কোর জওহরলাল নেহরু কালচারাল সেন্টার নিয়মিত কথ্থক, যোগা, তবলা ইত্যাদি শেখানোর মাধ্যমে রাশিয়ায় ভারতীয় সংস্কৃতির প্রচার করে। সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির অধীনে ভারতীয় সাংস্কৃতিক দলগুলি প্রায় প্রতি বছর রাশিয়া সফর করে এবং বিভিন্ন ভারতীয় নৃত্যের মাধ্যমে সংস্কৃতি প্রদর্শন করে; এছাড়া ICCR উচ্চশিক্ষার জন্য রুশ নাগরিকদের বৃত্তি প্রদান করে।
আপনি কি জানেন?
২০২৫ সালের মে মাসে রাশিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রী ওলগা লিউবিমোভা মুম্বইতে ওয়ভেস ২০২৫ সম্মেলনে যোগ দেন এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে চলচ্চিত্র সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন।
২০২৫ সালে পাঁচটি শহরে দ্বিতীয় ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এবং জুলাই মাসে মস্কোতে প্রথমবারের মতো আয়োজিত নয় দিনের ‘ভারত উৎসব-ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়া’ বিপুল সাফল্য লাভ করে, যেখানে ৮.৫ লক্ষ মানুষ সমাগম হয়। এছাড়া, রাশিয়ার ৬০-টিরও বেশি অঞ্চলে একাদশ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালিত হয়। ভারত ৩-৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ মস্কো আন্তর্জাতিক বইমেলার অতিথি দেশ ছিল এবং ১১ অক্টোবর ভগবান বুদ্ধের পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন প্রদর্শনের জন্য কালমিকিয়াতে আনা হয়, যা উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং জম্মু ও কাশ্মীরের উপ-রাজ্যপাল দ্বারা আনীত ও প্রত্যাবর্তিত হয়।
আন্তর্জাতিক/বহুপাক্ষিক সংস্থা এবং সংযোগ প্রকল্পসমূহ
জাতিসংঘ, জি২০, ব্রিকস এবং এসসিও-এর মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলিতে ভারত ও রাশিয়া নিবিড়ভাবে সমন্বয়সাধন করে। রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের জন্য ধারাবাহিকভাবে সমর্থন জানিয়েছে। উভয় দেশের সভাপতিত্বের সময়ে (যেমন ২০২৪ সালে রাশিয়ার ব্রিকস এবং ২০২৬ সালে ভারতের ব্রিকস) এই সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
উপসংহার
বিগত ৭৮ বছর ধরে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক দৃঢ় এবং স্থিতিশীল রয়েছে। সামরিক, পারমাণবিক ও মহাকাশ সহযোগিতার বাইরে গিয়ে এই অংশীদারিত্ব বর্তমানে বহু-মেরু বিশ্ব গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিশেষত রাশিয়ার সুদূর পূর্বের সাথে আন্তঃ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডর ও চেন্নাই-ভ্লাদিভোস্তক সামুদ্রিক করিডর-এর মতো সংযোগ প্রকল্পগুলিতে মনোযোগ দিয়েছে। আত্মনির্ভর ভারত এবং মেক ইন ইন্ডিয়া বা ভারতে প্রস্তুত উদ্যোগের সঙ্গে রাশিয়ার পূর্বমুখী কৌশল ও প্রযুক্তির মধ্যে একটি সমন্বয় বিদ্যমান।
তথ্যসূত্র
Ministry of External Affairs
Press Information Bureau
Indian Embassy, Moscow
3. Defence & Technology
Click here to see PDF
SSS/AS
(Backgrounder ID: 156345)
आगंतुक पटल : 4
Provide suggestions / comments