Farmer's Welfare
খাদ্য বিকিরণ: নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যের জন্য ভারতের কোল্ড চেইনকে উন্নত করা
Posted On:
02 DEC 2025 2:11PM
২ ডিসেম্বর ২০২৫
পিএমকেএসওয়াই-এর "কোল্ড চেইন স্কিম"-এর আওতায় "ইন্টিগ্রেটেড কোল্ড চেইন অ্যান্ড ভ্যালু অ্যাডিশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার" অনুযায়ী খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রক বহু পণ্য খাদ্য বিকিরণ কেন্দ্র স্থাপনে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
২০২৫ সালের জুলাই মাসে সরকার ৫০-টি নতুন খাদ্য বিকিরণ কেন্দ্র স্থাপনের অর্থায়ন সহ ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত কোল্ড চেইন স্কিমের অধীনে ৩৯৫-টি সুসংহত কোল্ড চেইন বা হিম শৃঙ্খল প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৯১-টি প্রকল্প শুরু হয়ছে, যার ফলে ২৫.৫২ লক্ষ মেট্রিক টন সংরক্ষণের ক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত বহু পণ্য খাদ্য বিকিরন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ১৬-টি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি বর্তমানে কার্যকর।
সূচনা
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের বিকাশ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে হয়েছে। আগুনে খাবার ঝলসানো থেকে শুরু করে 'পিক্লিং', 'ফারমেনটেশন', জমানো ও শুকানোর মতো প্রাচীন কৌশল। আর এখন ত্রিমাত্রিক খাদ্য মুদ্রণের মত আধুনিক কৌশল সম্ভব। আজকের শিল্পনির্ভর খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বৃহৎ পরিসরের প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতি। এর মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য নিরাপদ, স্থিতিশীল, সুস্বাদু এবং উচ্চমানের পণ্যে রূপান্তরিত হয়। এগুলি খাদ্যের আয়ু বৃদ্ধি করে এবং ক্রয়যোগ্যতা উন্নত করে মূল্য সংযোজন করে।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ক্ষেত্র। লক্ষ্য মানুষের জন্য খাদ্যকে আরও নিরাপদ, পুষ্টিকর এবং সামগ্রিকভাবে সুবিধাজনক করে তোলা। পাস্তুরাইজেশন, জীবাণুমুক্তীকরণ, শুকানো, জমানো এবং বিকিরণের মতো কৌশল ক্ষতিকর জীবাণু দূর করে, পচন কমায় এবং খাদ্যের স্থায়িত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। অতিরিক্ত ফলন সংরক্ষণ করে খাদ্য অপচয় কমাতেও প্রক্রিয়াকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ প্রক্রিয়াকরণ ল্যাকটোজমুক্ত দুধ বা গ্লুটেনমুক্ত আটার মতো পণ্য তৈরি করতেও সক্ষম। পাশাপাশি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কৃষি খাদ্য মূল্যশৃঙ্খলকে শক্তিশালী করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল করে এবং ভোক্তাদের জন্য বৈচিত্র্যময়, সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও সহজলভ্য খাদ্য নিশ্চিত করে।
বিকিরণ কি?
তেজস্ক্রিয়তা এড়িয়ে জীবাণুমুক্ত করে ফলমূলের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সেগুলিকে নিয়ন্ত্রিত আয়োনাইজিং রশ্মির সংস্পরশে আনা
বিভিন্ন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির মধ্যে খাদ্য বিকিরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অত্যন্ত দৃঢ় এবং এর নিরাপত্তা বহু পরীক্ষায় প্রমাণিত। বিকিরণ প্রক্রিয়াজাত খাদ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণাগারে কঠোর মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হয়ছে। এসব গবেষণায় কোনও বিষক্রিয়া, পুষ্টিগত ক্ষতি অথবা জীবাণুবিষয়ক সমস্যার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর নিরাপত্তা আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, আমেরিকান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, আমেরিকান ডায়াটেটিক অ্যাসোসিয়েশন এবং ইনস্টিটিউট অফ ফুড টেকনোলজিস্ট-সহ বহু স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক সংস্থার দ্বারা স্বীকৃত।
ভারতে খাদ্য বিকিরণ ব্যবহৃত হয় আলু, পেঁয়াজ, মসলা, আম, শস্য, ডাল এবং তৈলবীজ জাতীয় পণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য। এই প্রযুক্তির কিছু সুফল:
• আলু, পেঁয়াজ এবং অন্যান্য কন্দজাত পণ্যে অঙ্কুর বৃদ্ধি রোধ
• ফল ও শাকসবজির আয়ু বৃদ্ধি
• পোকামাকড়ের আক্রমণ সম্পূর্ণ নির্মূল
• জীবাণুজনিত দূষণ কমানো
• কোয়ারেন্টাইন ও রপ্তানি সংক্রান্ত শর্ত পূরণ
খাদ্য বিকিরণে প্রয়োগ ও প্রয়োজন অনুযায়ী তিন ধরনের বিকিরণ উৎস ব্যবহার করা হয়:
গামা রশ্মি: তেজস্ক্রিয় কোবাল্ট ৬০-র থেকে গামা রশ্মি উৎপন্ন হয়। ভারতে পারমাণবিক শক্তি বিভাগের অধীনে বোর্ড আ রেডিয়েশন অ্যান্ড আইসোটোপ টেকনোলজি কোবাল্ট ৬০ খাদ্য বিকিরণের জন্য সরবরাহ করে। এর ব্যবহারের জন্য বোর্ডের সঙ্গে একটি সমঝোতাপত্র বা চুক্তি থাকা প্রয়োজন।
এক্স রে: উচ্চ শক্তির ইলেকট্রনের প্রবাহকে সাধারণত ভারী ধাতুর উপর প্রতিফলিত করে তৈরি হওয়া এক্স রে খাদ্য বিকিরণে ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসা ও শিল্পে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
ইলেকট্রন বিম বা ই-বিম: একটি আক্সেলারেটর থেকে নির্গত উচ্চ-শক্তির ইলেকট্রনের স্রোত সরাসরি খাদ্যের ওপর প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতিতে দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ করা যায়।
বিকিরণ পদ্ধতি ক্রেতাদের প্যাকেজড খাদ্য কেনার সময় সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। ক্রেতাদের উচিত অনুমোদিত পণ্য বেছে নেওয়া। এফএসএসএআই লাইসেন্স নম্বর, আয়রন বা ভিটামিন ডি-তে সমৃদ্ধ লেখা, এইচএসি সিপি, আইএসও ২২০০০, এফএসএসসি, এবং অন্যান্য স্বীকৃতি চিহ্ন অনুমোদনের প্রমাণস্বরূপ।
উপরের বিভিন্ন মানপত্র ছাড়াও ক্রেতাদের উচিত প্যাকেজড খাদ্যের পুষ্টির তালিকা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা। বিশেষ করে প্রতি পরিবেশনে কত ক্যালোরি, সোডিয়াম, যোগ করা চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ফাইবার এবং প্রোটিন রয়েছে তা পরীক্ষা করা জরুরি। উপাদান তালিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে লুকানো চিনি, কৃত্রিম সংযোজক এবং অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি বোঝা যায়।
সামগ্রিকভাবে, খাদ্য বিকিরণ খাদ্যের নিরাপত্তা ও মান বজায় রাখতে নির্ভরযোগ্য সুরক্ষা প্রদান করে। এর ফলে, মানুষের কাছে পৌঁছানো খাদ্য টাটকা, পরিচ্ছন্ন এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। পাশাপাশি, বিকিরণ পরিকাঠামো তৈরির জন্য সরকারি সহায়তাও পাওয়া যায়।
খাদ্য বিকিরণে সহায়ক পরিকল্পনা– সমন্বিত কোল্ড চেইন বা হিম শৃঙ্খলও মূল্য সংযোজন পরিকাঠামো
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রক খাদ্য বিকিরণ কেন্দ্র স্থাপনে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এই কেন্দ্রগুলি অত্যন্ত দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়া কৃষিজ পণ্যের আয়ু বাড়িয়ে ফসল কাটার পর ক্ষতি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সহায়তা প্রদান করা হয় প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্পদ যোজনার আইসিসিভিএআই-র অধীনে।
ভারতের কৃষকরা দীর্ঘকাল ধরে ফসল কাটার পর বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হন। চাষ, পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের প্রতিটি ধাপে এই ক্ষতি সম্ভব। এর ফলে কৃষকের আয় কমে যায়, ক্রয়মূল্য বাড়ে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা খর্ব হয়। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য এক নিরবচ্ছিন্ন কোল্ড চেইন ব্যবস্থা স্থাপন করা।
আগে শুরু হলেও ২০১৬–১৭ অর্থবর্ষে এটি পুনর্গঠন করে প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্পদ যোজনার অধীনে আনা হয়। প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্পদা যোজনা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রকের একটি প্রকল্প। উদ্দেশ্য- সর্বত্র আধুনিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ পরিকাঠামো ও দক্ষ সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলা।
অগ্রগতি এবং কৃতিত্ব
বর্ধিত আর্থিক বরাদ্দ
জুলাই ২০২৫-এ সরকার পিএমকেএসওয়াই কর্মসূচির জন্য অতিরিক্ত ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকার বরাদ্দ করে। এর ফলে ১৫-তম অর্থ কমিশনের সময় মোট বরাদ্দ দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এটি কার্যকর থাকবে ৩১ মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত।
প্রস্তাবিত ৫০-টি মাল্টি প্রোডাক্ট ফুড আইরেডিয়েশন ইউনিট থেকে খাদ্যপণ্যের ধরণ অনুযায়ী, বছরে মোট ২০ থেকে ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন এলএমটি সংরক্ষণ ক্ষমতা তৈরি হবে।
কোল্ড প্রকল্পগুলির অগ্রগতি
জুন ২০২৫ পর্যন্ত কোল্ড চেইন স্কিমে ২০০৮ সাল থেকে মোট ৩৯৫-টি সুসংহত কোল্ড চেইন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৯১টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়ে শুরু হয়ে বছরে ২৫.৫২ লক্ষ মেট্রিক টন এলএমটি সংরক্ষণ ক্ষমতা এবং ১১৪.৬৬ এলএমটি প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা তৈরি করেছে। সম্পন্ন ও শুরু হওয়া প্রকল্পগুলির ফলে দেশে মোট ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬০০-টি চাকরি সৃষ্টি হয়েছে।
২০১৬ থেকে ২০১৭ পর্বের পর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এই সময়ে ২৬৯-টি অনুমোদিত প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৬৬.৩৩ কোটি টাকার অনুমোদিত অনুদানের মধ্যে ১ হাজার ৫৩৫.৬৩ কোটি টাকা ইতিমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। একই সময়ে দেশে ১৬৯-টি কোল্ড চেইন প্রকল্প সম্পন্ন হয়ে কার্যকর হয়েছে।
মাল্টি প্রোডাক্ট ফুড আইরেডিয়েশন ইউনিটের পরিস্থিতি
আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত সারা দেশে মাল্টি প্রোডাক্ট ফুড আইরেডিয়েশন ইউনিট স্থাপনের জন্য ১৬-টি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি সম্পন্ন বা শুরু হয়েছে এবং সাতটির কাজ চলছে। মোট ১১২.৯৯ কোটি টাকার অনুদান অনুমোদিত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৮.৩৮ কোটি টাকা ইতিমধ্যে প্রদান করা হয়ছে।
সমাপ্তি
খাদ্য বিকিরণ পদ্ধতি ভারতের কৃষিপণ্যের গুণমান সংরক্ষণে বিশ্বাসযোগ্য সমাধান হিসেবে এগিয়ে আসছে। নিরাপত্তা ও সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি এবং ফসল কাটার পর ক্ষতির হ্রাস কৃষক, প্রক্রিয়াকারী এবং ক্রেতাদের আস্থা বাড়ায়। সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিকিরণ পরিকাঠামো সম্প্রসারণের ফলে ভারত আরও সক্ষম, আধুনিক এবং দক্ষ খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তুলছে।
তথ্যসূত্র
Ministry of Food Processing Industries
Food Safety and Standards Authority of India
Lok Sabha
Rajya Sabha
PIB Press Releases:
PIB Backgrounders:
Click here to see pdf
SSS/RS
(Backgrounder ID: 156290)
आगंतुक पटल : 3
Provide suggestions / comments