Farmer's Welfare
মাঠ থেকে সোনালি ভবিষ্যৎ: সুশাসনের হাত ধরে ভারতের নবনির্মাণ
Posted On:
23 DEC 2025 4:33PM
নয়াদিল্লি, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার দাভাদি গ্রামের স্নাতক পাশ ভাবনা নীলকণ্ঠ নিকম কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে এক অনন্য নজির গড়েছেন। কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তায় তিনি ২,০০০ বর্গমিটার জায়গায় একটি পলিহাউস তৈরি করেছেন এবং ড্রিপ সেচ ব্যবস্থা ও বৃষ্টির জল সংরক্ষণের মত আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্যাপসিকাম, টমেটো ও আঙুরের মতো লাভজনক ফসল চাষ করছেন।
কৃষির পাশাপাশি, মৎস্য ও পোল্ট্রি পালন করে তিনি নিজের খামারটিকে একটি আদর্শ মিশ্র কৃষি প্রকল্পে পরিণত করেছেন, যার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে তিনি মহারাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে 'সেরা উদ্ভাবনী মহিলা কৃষক'-এর সম্মান পান। আজ তাঁর এই সাফল্য শুধু তাঁর আয়ই বাড়ায়নি বরং আশেপাশের গ্রামগুলির কৃষকদের কাছেও এটি একটি শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
বিহারের বাঁকা জেলার বিনিতা কুমারী মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ২৫-টি ব্যাগ দিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বছরে ২.৫ থেকে ৩ লক্ষ টাকা আয় করছেন এবং প্রায় ৩০০ জন মহিলা কৃষককে মাশরুম চাষে স্বনির্ভর করে তুলেছেন।
ভারতের জিডিপি বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে কৃষির অবদান প্রায় ১৬% এবং দেশের ৪৬.১% মানুষ জীবিকার জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
'পিএম-কিসান' প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৩.৮৮ লক্ষ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে। এগ্রিকালচার ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড'-এর মাধ্যমে ফসল মজুত ও পরিকাঠামো উন্নয়নে ৫৭,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া, 'প্রধানমন্ত্রী কৃষি সেচ যোজনা'-র মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার মাধ্যমে যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের ফসলের সঠিক দাম পেতে এবং সরাসরি বাজারে পণ্য বিক্রি করতে সাহায্য করছে।
দুর্যোগে ফসলের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে 'প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা' কাজ করছে।
নাবার্ড এবং আইসিএআর-এর মত প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় সেচ, বিমা, বাজার সংযোগ এবং আর্থিক সহায়তার সুসংহত সমন্বয় ভারতীয় কৃষিকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
তেলঙ্গানার সাঙ্গারেড্ডি জেলার আদিবাসী চাষিদের সাফল্য এর এক উজ্জ্বল উদাহরণ; যেখানে নাবার্ড-এর সহায়তায় আম চাষের পাশাপাশি, ডাল ও সবজির মিশ্র চাষ এবং উন্নত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এর ফলে কৃষকদের বার্ষিক আয় প্রায় তিন-চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১.০১ লক্ষ থেকে ১.৬৮ লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই উদ্যোগ কেবল চাষিদের আয়ই বাড়ায়নি, বরং গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে বাইরে চলে যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও কৃষক ক্লাবগুলিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
হরিয়ানার রেওয়ারি জেলার ধারচানা ফার্মার প্রোডিউসার কোম্পানি তৈলবীজ চাষে এক আমূল পরিবর্তন এনেছে, যার প্রায় ৯০ শতাংশ সদস্যই হলেন মহিলা। মাঝাপক্ষ বা দালালদের সরিয়ে সরাসরি ফসল কেনা এবং ভ্রাম্যমাণ সংগ্রহ কেন্দ্রের মত পরিষেবা চালু করার ফলে কৃষকরা কুইন্টাল প্রতি প্রায় ২০০ টাকা বেশি আয় করছেন। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এই সংস্থাটি ৫8.৮ লক্ষ টাকা লেনদেন করে লাভের মুখ দেখেছে। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, কৃষক উৎপাদক সংস্থার মাধ্যমে একত্রিত হয়ে ব্যবসা করলে এবং সরাসরি বাজারের সঙ্গে যুক্ত হলে কৃষকদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিনির্ভর ব্যবসায় তাঁদের অংশগ্রহণও অনেক শক্তিশালী হয়।
সুশাসন দিবসে ভারতের কৃষিক্ষেত্রের এই সাফল্যের কাহিনীগুলি একটি বিশেষ সত্যকেই তুলে ধরে : প্রকৃত সুশাসন মানে শুধু ফলন বাড়ানো নয়, বরং চাষবাসকে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও লাভজনক পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। যেখানে কৃষকদের পরিশ্রমের পাশে সরকারি ব্যবস্থা ঢাল হয়ে দাঁড়াবে, ঝুঁকি কমবে এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা হবে আরও নিশ্চিত। সুনির্দিষ্ট নীতি, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এবং বাস্তবসম্মত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ভারতের কৃষকরা আজ নিজেদের প্রয়াসে কৃষিক্ষেত্রকে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
তথ্যসূত্র
Ministry of Agriculture and Farmers Welfare
Ministry of Finance
Click here to see pdf
SSS/AS
(Features ID: 156703)
आगंतुक पटल : 7
Provide suggestions / comments