PIB Headquarters
ঐতিহ্যের সঙ্গে উচ্চাকাঙ্খার মিলন
ভারতের বাণিজ্য মেলার উত্তরাধিকারকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে যুব সমাজ
Posted On:
25 NOV 2025 11:21AM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
IITF ২০২৫-এর হৃদয়ে যুবসমাজ
নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ৪৪-তম ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ার (IITF)-এ “এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত” থিম শুধু প্যাভিলিয়ন বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যেই নয়, প্রতিটি স্টলের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ কারুশিল্পী ও উদ্যোক্তাদের মুখেও জীবন্ত হয়ে ওঠে। বিজনৌর থেকে মধুবনী, আলওয়ার থেকে কচ্ছ, এমনকি ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে টিউনিসিয়া পর্যন্ত, ২০২৫-এর এই মেলায় যে নতুন প্রজন্মের উপস্থিতি দেখা যায়, তারা ভারত তথা বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভবিষ্যৎকে নতুনভাবে নির্মাণ করছে।
তাদের প্রতিটি গল্পেই প্রতিফলিত হয় এমএসএমই বা ক্ষুদ্র, মধ্যরাতের উদ্যোগের উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ জীবিকা এবং বৈশ্বিক বাজার-সংযোগে সরকারের নীতিগত প্রয়াস। এ প্রচেষ্টাকে পরিপূরক করে মেরা যুব ভারত (MY Bharat) - সরকারের এক যুগান্তকারী উদ্যোগ, যা তরুণদের নেতৃত্ব গঠন, উদ্ভাবন এবং জাতি নির্মাণে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার শক্তি প্রদান করে।
বিজনৌরের গুড় উদ্ভাবনে: উত্তরপ্রদেশের তরুণ উদ্যোক্তা
ভারতের অন্যতম বৃহৎ আখ-উৎপাদনকারী জেলা বিজনৌর থেকে আসা ২৬ বছর বয়সি নমন শর্মা এমন এক প্রজন্মের মুখ, যারা পরিবারিক ঐতিহ্যকে পিছনে ফেলে নয়, বরং আধুনিকীকরণের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিশ্রুত। তাঁর লক্ষ্য: “আমি গুড় শিল্পকে আধুনিক করতে চাই - কেমিক্যালমুক্ত ও সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পণ্য দিতে চাই।”
তাঁর ছোট ভাই (২১) ও বোন (২৩) এখন মূল টিম। তাঁরা মিলে ১৫ জন কারখানা কর্মী এবং প্যাকেজিং ইউনিটে ২৫ জন মহিলাকে কর্মসংস্থান দিয়েছেন। এ বছর তাঁর প্রথম IITF । বিজনৌর মহোৎসব থেকে বসন্ত মহোৎসব - বিভিন্ন আঞ্চলিক অনুষ্ঠানে সাড়া পাওয়ার পর তিনি এখানে এসেছেন। এখন তাঁর লক্ষ্য রপ্তানি, এবং ইউনিট বিস্তারের জন্য PMEGP-তে আবেদন করছেন।
পদ্মশ্রী ঐতিহ্যের উত্তরসূরি: মধুবনীর তরুণ শিল্পী
বিহার প্যাভিলিয়নে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে রঙিন মধুবনী শিল্প। এর কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছেন জিৎওয়ারপুর গ্রামের ১৮ বছর বয়সী মধুরাম কুমার ঝা, একটি গ্রাম যা নিজেই যেন এই শিল্পের পরিচয়পত্র।
তাঁর দিদিমা পদ্মশ্রী বউয়া দেবী, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত, মিথিলা শিল্পে অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব। ছোটবেলা থেকেই তিনি তাঁর দিদিমার পাশে বসে শিল্পকলার হাতেখড়ি নেন।
তিনি বলেন, “দিদিমা যখন আঁকতেন, আমি পাশে বসতাম। যা চাইতেন এনে দিতাম। তাঁর হাত দেখে দেখে শিখেছি।” মধুরামের স্বপ্ন বিশাল, মধুবনী শিল্পকে “প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি দেশে” পৌঁছে দেওয়া। পাশাপাশি ভবিষ্যতে IRS কর্মকর্তা হওয়া কিংবা ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাও রয়েছে।
মৃৎশিল্পী: পারিবারিক ঐতিহ্য বহন করছে রাজস্থানের কিশোরী
রাজস্থান প্যাভিলিয়নে টেরাকোটা সামগ্রী আলোর উষ্ণতায় ঝলমল করছে। এর মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন ২০ বছর বয়সি করিশ্মা পারজাপাত - নম্র, শান্ত, অথচ আত্মবিশ্বাসী। “আমরা মাটি ভাঙি, গলিয়ে ভিজিয়ে রাখি… তারপর বাবা সেটিকে আকার দেন এবং কাদা চুল্লিতে পোড়ান,” তিনি জানান।
দৌসা জেলার ছাত্রী করিশ্মা বিএ পড়ছেন। পাশাপাশি, বাবাকে, মাকে, বোনকে এবং দুই কর্মীকে এই পুরো কাজে সমর্থন করছেন।
তাঁদের স্টল ডিরেক্টরেট অফ উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট-এর মাধ্যমে স্পনসর করা হয়েছে। “সরকার আমাদের কোনো টাকা নিতে হয় না,” করিশ্মা বলেন। এবার তাঁদের দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়া।
IITF-এ প্রদর্শিত প্রতিটি টেরাকোটা হলো রাজস্থানের মাটির ছাপ, যা তরুণ হাতেই নতুন প্রাণ পাচ্ছে।
প্রায় ৮০০ বছরের ঐতিহ্য কাঁধে নিয়ে এগিয়ে চলা যুবক
ছাব্বিশ বছর বয়সী লুহার জাভেদ আবদুল্লা শুধু একটি পণ্য তৈরির কথা বলেন না, তিনি ৮০০–৯০০ বছরের ইতিহাসের কথা বলেন।
কচ্ছের এই তরুণ শিল্পী তামার ঘণ্টা তৈরি করেন, যা একসময় গরুর গলায় বাঁধা ভারতীয় কাউবেল নামে পরিচিত ছিল। এখন সেগুলি রূপান্তরিত হয়েছে বাদ্যযন্ত্র, উইন্ড চাইম, ডোরবেল ইত্যাদিতে।
তাঁর পরিবারিক ব্যবসায় ২০ জন কর্মরত, অধিকাংশই মহিলা। তাঁদের কাজ আমেরিকা-সহ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে প্রশংসা পাচ্ছে।
সীমানা পেরিয়ে: আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়নে তরুণ মুখ
IITF ২০২৫-এর আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়ন এক বহুসাংস্কৃতিক দুনিয়া। এ বছর ১২-টি দেশ অংশ নিচ্ছে, একসঙ্গে তুলে ধরছে বৈশ্বিক সংযোগ, হস্তশিল্প, তরুণ উদ্যোক্তা ও বাজার আদান-প্রদানের বিস্তৃতি। সেখানে ২৬ বছর বয়সী আহমাদ শাহিদ টিউনিসিয়া থেকে এসে দিল্লিকে উপহার দিচ্ছেন উত্তর আফ্রিকার শিল্পসত্তা। তাঁর হাতে আঁকা সিরামিক, অলিভ উডের রান্নাঘরের সামগ্রী, ল্যাম্প ও অলংকারজাত পণ্যে দর্শকরা মুগ্ধ। “মানুষ অনেক প্রশ্ন করে… জানতে চায় কিভাবে বানানো হয়,”তিনি হাসতে হাসতে জানান।
রূপান্তরের ইঞ্জিন যুবসমাজ
IITF ২০২৫ প্রকৃত অর্থে “এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত”-এর প্রতিচ্ছবি, শুধু প্রদর্শনীতে নয়, বরং তরুণ অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিতে, যারা মেলাকে শক্তি ও উদ্দেশ্য দেয়। তাঁরা কারিগর, উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক - যারা ভারতের বৈচিত্র্যকে তার সবচেয়ে প্রাণবন্ত রূপে তুলে ধরেন। তাঁদের কাজে স্থানীয় জ্ঞান ও আধুনিক আকাঙ্ক্ষার মিশেল - যা দেখায়, প্রতিটি অঞ্চলের প্রতিভা স্বীকৃতি ও সুযোগ পেলে ঐক্য আরও দৃঢ় হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাঁদের উপস্থিতি ক্ষমতায়নের প্রতীক। অনেকের জন্য IITF জীবনের প্রথম বড় প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তাঁরা নিজেদের দক্ষতা তুলে ধরার সুযোগ পান, নতুন বাজার বুঝতে পারেন, ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন এবং নিজেদের শিল্পকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মানিত হতে দেখেন।
তথ্যসূত্র
Download in PDF
**
SSS/SS
(Release ID: 2194208)
Visitor Counter : 4