PIB Headquarters
আইএনএস বিক্রান্ত: আত্মনির্ভর ভারতের নৌ ক্ষমতার নতুন দিগন্ত
Posted On:
24 OCT 2025 7:15PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি,২৪ অক্টোবর, ২০২৫
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
আইএনএস বিক্রান্ত, ভারতের প্রথম নির্মিত বিমানবাহী রণতরী। ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর এটিকে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
৭৬% স্বদেশী উপকরণ (যার মধ্যে সেইল-এর ৩০,০০০ টন ইস্পাত রয়েছে) দিয়ে তৈরি এই প্রকল্পে ৫৫০-টিরও বেশি ওইএম, ১০০-টি এমএসএমই যুক্ত ছিল, যা ২,০০০-টি সরাসরি এবং ১২,৫০০-টি পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।
উন্নত সয়ংক্রিয় যন্ত্রব্যবস্থা দিয়ে সজ্জিত এই রণতরীটি ৩০-টি বিমানের একটি বিমানগোষ্ঠি পরিচালনা করে, যার মধ্যে রয়েছে মিগ-২৯কে (MiG-29K), কামোভ-৩১(Kamov-31), এমএইচ-৬০আর(MH-60R), মিগ-২৯ কেইউবি(MiG 29 KUB), চেতক(Chetak) এবং এএলএইচ(ALH)।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে গোয়ার পশ্চিম উপকূল থেকে ২৩০ নটিকালল মাইল দূরে এমভি হেইলান স্টার থেকে আহত ক্রুদের উদ্ধার করে এটি নিজের বহুমুখীতা প্রদর্শন করে।
এটি ৫,০০০ পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ তৈরি করতে সক্ষম।
ভূমিকা
আইএনএস বিক্রান্ত, দেশে নির্মিত প্রথম বিমানবাহী রণতরী (Indigenous Aircraft Carrier বা IAC 1), এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং আত্মনির্ভর ভারতের এক গর্বিত নিদর্শন হয়ে রয়েছে। এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ডিজাইন ব্যুরো দ্বারা পরিকল্পিত এবং কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড দ্বারা নির্মিত - এটি দেশে তৈরি সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ। ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর, ভারতীয় নৌবাহিনীতে নিযুক্ত করা আইএনএস বিক্রান্ত হল স্বদেশী সম্ভাবনা, স্বদেশী সম্পদ এবং স্বদেশী দক্ষতার এক জ্বলন্ত প্রতীক।
ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শ্রী নরেন্দ্র মোদী, আইএনএস বিক্রান্তে দীপাবলি ২০২৫ উদযাপন করেছেন। সেখানে তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীর নাবিক এবং সেনাবাহিনীর কর্মীদের ত্যাগ ও সাহসিকতার প্রতি সম্মান জানান। তাঁর এই সফর অগ্রবর্তী ও কৌশলগত এলাকায় নিযুক্ত থাকা সৈন্যদের সঙ্গে দীপাবলি উদযাপনের ঐতিহ্যকে অব্যাহত রেখেছে, যা যুদ্ধের সকল ক্ষেত্রে দেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী কর্মীদের প্রতি সংহতির প্রতীক। জাহাজটি ১৯ থেকে ২০ অক্টোবর ২০২৫-এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে রাতে সমুদ্র যাত্রা করে। যাত্রার সময় নিম্নলিখিত কাজগুলি সম্পন্ন করা হয়েছিল:
দিন ও রাতে বিমান শক্তির মহড়া
অ্যান্টি-সাবমেরিন রকেট ফায়ারিং
রাতে চলন্ত অবস্থায় জ্বালানি ও রসদ পূরণ
নিকট পাল্লার বিমান-বিধ্বংসী ফায়ারিং মহড়া
স্টিম পাস্ট এবং ফ্লাই পাস্ট
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সম্মিলিত ভোজসভা
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ এবং ক্রু-এর সঙ্গে আলাপচারিতা
সমুদ্রে যোগাভ্যাস এবং বিশেষ বাহিনীর মহড়া প্রত্যক্ষ করা
ইতিহাস ও অগ্রগতি
আইএনএস বিক্রান্তের নামকরণ করা হয়েছে ভারতের প্রথম বিমানবাহী রণতরী, আইএনএস বিক্রান্ত (R11)-এর নামানুসারে, যা ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। পূর্বতন আইএনএস বিক্রান্ত ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধ এবং ১৯৬১ সালের গোয়া মুক্তি অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার ফলে ভারতের নৌবাহিনীর ইতিহাসে এটির একটি সুখ্যাতি রয়েছে। বর্তমান আইএনএস বিক্রান্ত, যা ভারতের প্রথম নির্মিত বিমানবাহী রণতরী (IAC 1), সেই ঐতিহ্যকে বহন করে এবং দেশের নৌ-আত্মনির্ভরতা ও জাহাজ নির্মাণ সক্ষমতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক তুলে ধরে।
নির্মাণ শুরু: ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডে জাহাজটির তলদেশের মূল ভিত্তি স্থাপন করা হয়, যা এর নির্মাণের আনুষ্ঠানিক সূচনাকে চিহ্নিত করে।
শুভ উদ্বোধন ও পরীক্ষা: ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে উদ্বোধন করা হয়; প্রথম সামুদ্রিক যাচাইকরণ শুরু হয় ২০২১ সালের আগস্ট মাসে।
নকশা: ভারতীয় নৌবাহিনীর নিজস্ব যুদ্ধজাহাজ ডিজাইন ব্যুরো দ্বারা এটির পরিকল্পনা তৈরি ও নকশা করা হয়েছে।
নিযুক্তকরণ: ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর কোচিতে এটির কমিশনিং অর্থাৎ এটিকে নিযুক্ত করা হয়, যার মাধ্যমে ভারত স্বদেশী বিমানবাহী রণতরী নকশা ও নির্মাণ করতে সক্ষম এরকম হাতে গোনা কয়েকটি দেশের মধ্যে স্থান করে নেয়।
স্বদেশী উপকরণ: জাহাজটির ৭৬ শতাংশ স্বদেশে তৈরি, যার মধ্যে স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড-এর সরবরাহ করা প্রায় ৩০,০০০ টন বিশেষ ইস্পাত অন্তর্ভুক্ত।
শিল্পক্ষেত্রের অংশগ্রহণ: এই প্রকল্পের সঙ্গে ৫০০-টিরও বেশি মূল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক এবং উপ-ঠিকাদার, সেইসঙ্গে ১০০-টি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ যুক্ত ছিল।
কর্মসংস্থান তৈরি: কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডে প্রায় ২,০০০ জন সরাসরি এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প ও সরবরাহকারীদের মাধ্যমে প্রায় ১২,৫০০ জন পরোক্ষভাবে নিযুক্ত ছিলেন।
প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার প্রতীক আইএনএস বিক্রান্ত শুধু একটি যুদ্ধজাহাজ নয়। এটি একবিংশ শতাব্দীতে ভারতের কঠোর পরিশ্রম, প্রতিভা, প্রভাব এবং প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।
ক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্যসমূহ
আইএনএস বিক্রান্তের প্রযুক্তিগত ও কর্মক্ষমতাগত শক্তিগুলি নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে প্রতিফলিত হয়:
রণতরী টি ২৬২.৫ মিটার লম্বা এবং ৬১.৬ মিটার চওড়া, যার স্থানচ্যুতি প্রায় ৪৫,০০০ টন।
এটি চারটি গ্যাস টারবাইন দ্বারা চালিত হয়, যা একত্রে প্রায় ৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
আইএনএস বিক্রান্ত সর্বাধিক ২৮ নট পর্যন্ত গতি অর্জন করতে পারে।
জাহাজটিতে মহিলা অফিসার ও নাবিক সহ প্রায় ১,৬০০ জন কর্মী থাকতে পারেন এবং প্রায় ২,২০০টি কক্ষ রয়েছে।
এটি শর্ট টেক-অফ বাট অ্যারেস্টেড রিকভারি (STOBAR) পদ্ধতিতে কাজ করে, যা বিমানকে স্কি-জাম্প ব্যবহার করে উড্ডয়ন করতে এবং অ্যারেস্টার তারের সাহায্যে অবতরণ করতে সাহায্য করে।
রণতরীটি ৩০-টি পর্যন্ত বিমান বহন করতে পারে, যার মধ্যে মিগ-২৯কে (MiG 29K) যুদ্ধবিমান, মিগ-২৯ কেইউবি (MiG 29 KUB), চেতক (Chetak), কামোভ-৩১ (Kamov 31), এমএইচ -৬০ আর (MH 60R) হেলিকপ্টার এবং উন্নত হালকা হেলিকপ্টার অন্তর্ভুক্ত।
জাহাজটি প্রায় ৫,০০০ পরিবারকে বিদুৎ সরবরাহ করার জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, যার অভ্যন্তরীণ তারগুলি এতটাই দীর্ঘ যে তা কোচি থেকে কাশী পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে।
আইএনএস বিক্রান্তের সাফল্য
নিযুক্তিকরণের পর থেকে আইএনএস বিক্রান্ত দেশের সামুদ্রিক শক্তির মূল ভিত্তি হিসেবে তার ভূমিকা সুদৃঢ় করেছে। এই সাফল্যগুলি রণতরীটির উন্নত সক্ষমতা তুলে ধরার পাশাপাশি, এসএজিএআর (SAGAR - Security and Growth for All in the Region) দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরদার করে, যা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সহযোগিতাকে উৎসাহিত করে।
প্রথম সামুদ্রিক পরীক্ষা (৪ আগস্ট ২০২১): আইএনএস বিক্রান্ত কোচি থেকে তার প্রথম যাত্রা শুরু করে, যা ইঞ্জিন চালনা, গতিবিধি এবং অস্ত্র ব্যবস্থাকে যাচাই করে এবং পূর্ণ কর্মক্ষম প্রস্তুতির ভিত্তি স্থাপন করে।
এলসিএ (নেভি) এবং মিগ-২৯কে-এর প্রথম অবতরণ (ফেব্রুয়ারি ২০২৩): রণতরীটিতে স্বদেশে নির্মিত এলসিএ নেভি এবং মিগ-২৯-কে জেটের প্রথম অবতরণ সম্পন্ন হয়।
রাতের অবতরণ অভিযান (মে ২০২৩): আইএনএস বিক্রান্ত সফলভাবে রাতে অবতরণ অভিযান সম্পন্ন করে, যা কঠিন পরিস্থিতিতে জটিল লক্ষ্যের জন্য এর প্রস্তুতি প্রদর্শন করে।
চূড়ান্ত কর্মক্ষম ছাড়পত্র (জানুয়ারি–নভেম্বর ২০২৪): যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টারগুলির দিন ও রাতের উড্ডয়ন সহ ৭৫০ ঘন্টারও বেশি বিমান পরিচালনার মাধ্যমে রণতরীটির কর্মক্ষম প্রস্তুতি যাচাই করা হয়েছে।
মিলান ২৪ : আইএনএস বিক্রান্ত ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় নৌবাহিনী দ্বারা আয়োজিত দ্বিবার্ষিক বহুপাক্ষিক নৌ মহড়া 'মিলান ২৪'-এ অংশ নিয়েছিল, যেখানে ছয়টি মহাদেশের ৪৭-টি বন্ধুভাবাপন্ন বিদেশী দেশের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব, ৩৬-টিরও বেশি জাহাজ, দুটি ডুবোজাহাজ এবং ৫৫-টি বিমান অংশগ্রহণ করেছিল। এই ঘটনাটি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতকে একটি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যোগ্য অংশীদার হিসেবে পুনরায় নিশ্চিত করে এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর কাঠামোকে একটি যুদ্ধ-প্রস্তুত, বিশ্বাসযোগ্য, সুসংহত এবং ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত শক্তি হিসেবে সংহত করে।
রাষ্ট্রপতি পরিদর্শন এবং কার্যক্রম প্রদর্শনী (৭ নভেম্বর ২০২৪): ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রপতি উড্ডয়ন, অবতরণ, ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া এবং নৌবহরের কৌশল প্রত্যক্ষ করেন, যা আইএনএস বিক্রান্তের সামুদ্রিক শক্তির এক অপ্রতিরোধ্য প্রতীক হিসেবে এর ভূমিকাকে তুলে ধরে।
বরুণা অনুশীলন ২০২৫ : ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, আইএনএস বিক্রান্ত ফরাসি নৌবাহিনীর রণতরী স্ট্রাইক গ্রুপ শার্ল দ্য গোল-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক নৌ মহড়া 'অনুশীলন বরুণা ২৫'-এ অংশ নেয়। এই অনুশীলনে ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ এবং ফরাসি নৌবাহিনীর সিএসজিকে অন্তর্ভুক্ত করে উন্নত সাবমেরিন-বিরোধী যুদ্ধ এবং বিমান প্রতিরক্ষা মহড়া পরিচালিত হয়।
কর্মক্ষম অর্জন (মার্চ ২০২৫): আরব সাগরে মোতায়েন থাকার সময়, আইএনএস বিক্রান্ত আইএনএস দীপকের সঙ্গে পানামা-পতাকাবাহী বাল্ক ক্যারিয়ার এমভি হেইলান স্টার-এর জরুরী পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার জন্য দ্রুত দিক পরিবর্তন করে। আইএনএস বিক্রান্তের একটি সি কিং হেলিকপ্টার একটি কঠিন চিকিৎসা অপসারণ (MEDEVAC) অভিযান চালায়। হেলিকপ্টারটি এমভি হেইলান স্টার থেকে আহত তিনজন ক্রু সদস্যকে উইঞ্চিং-এর মাধ্যমে তুলে নিয়ে গোয়ার আইএনএস হংসা-তে পৌঁছে দেয়।
থিয়েটার লেভেল অপারেশনাল তৎপরতা অনুশীলন (ট্রপেক্স ২০২৫): ভারতের বৃহত্তম দ্বিবার্ষিক মহড়া ট্রপেক্স ২০২৫-এ অংশগ্রহণ করে, যা ভারত মহাসাগর অঞ্চল জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই মহড়ায় ১৫০-টিরও বেশি যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন এবং বিমান জড়িত ছিল এবং এটি সামুদ্রিক যুদ্ধের সকল ক্ষেত্রে ক্ষমতা পরীক্ষা করে।
অনুশীলন কঙ্কন ২০২৫ : মুম্বই উপকূলে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক মহড়া পরিচালিত হয়, যেখানে আকাশ, জল এবং জলের নীচে অভিযানগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অপারেশন সিন্দূর : অপারেশন সিন্দূরের সময় ভারতীয় নৌবাহিনীর আক্রমণাত্মক প্রতিরোধমূলক অবস্থানের কেন্দ্রে ছিল বিক্রান্তের ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ। উত্তর আরব সাগরে মোতায়েন এই ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপটি বাধ্য করার কৌশলে মূল ভূমিকা নেয়, যার ফলস্বরূপ পাকিস্তান নৌবাহিনী রক্ষণাত্মক অবস্থানে যেতে বাধ্য হয় এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করে।
প্রধানমন্ত্রীর সমুদ্র দিবস (অক্টোবর ২০২৫): দীপাবলি উপলক্ষে ১৯ থেকে ২০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে জাহাজটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে রাতে সমুদ্র যাত্রা করেছিল।
আইএনএস বিক্রান্ত: মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণের এক স্তম্ভ
এর কৌশলগত সামরিক সক্ষমতা ছাড়াও, মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ অভিযানে বিক্রান্ত একটি শক্তিশালী সম্পদ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।
হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড ডিজাস্টার রিলিফ অপারেশন অর্থাৎ মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ অভিযানের জন্য কৌশলগত সক্ষমতা
বিক্রান্ত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং পরিকাঠামো দিয়ে সজ্জিত, যা এটিকে বিভিন্ন অভিযানের জন্য একটি বহুমুখী মঞ্চে উন্নীত করেছে। এর নকশায় যন্ত্রপাতি পরিচালনা, জাহাজের গতিবিধি এবং স্থায়িত্বের জন্য উচ্চ-স্তরের স্বয়ংক্রিয়তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা জরুরি মোতায়েনের সময় এর দক্ষতাকে বাড়িয়ে তোলে। বিক্রান্তের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল, এর শক্তিশালী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা, যা ৫,০০০ পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সমতুল্য সরবরাহ করতে সক্ষম। এটি প্রত্যন্ত বা দুর্যোগ-পীড়িত এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী অভিযান চালাতে সহায়তা করে। এছাড়াও, রণতরীটির বিস্তৃত বিমান সুবিধাগুলি এটিকে জরুরি অবস্থার সময় একটি ভ্রাম্যমাণ কমান্ড কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দেয়।
দেশের আঞ্চলিক কৌশলের সঙ্গে সমন্বয়
মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ অভিযানে আইএনএস বিক্রান্তের ভূমিকা ভারতের বৃহত্তর সামুদ্রিক কৌশল, বিশেষ করে 'সাগর' (SAGAR - Security and Growth for All in the Region) উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলে। ভারতীয় নৌবাহিনী দুর্যোগ ও জরুরী পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এই পদক্ষেপগুলি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতকে 'পছন্দের নিরাপত্তা অংশীদার' এবং 'প্রথম উত্তরদানকারী' হিসেবে এর মর্যাদা বাড়িয়েছে।
উদ্ধার অভিযান
গোয়ার পশ্চিম উপকূল থেকে প্রায় ২৩০ নটিকাল মাইল দূরে থাকা পানামা-পতাকাবাহী জাহাজ এমভি হেইলান স্টার থেকে একটি সংকটের বার্তা পেয়ে, আইএনএস বিক্রান্তের একটি সি কিং হেলিকপ্টার সফলভাবে তিনজন আহত ক্রু সদস্যকে চিকিৎসার জন্য আইএনএস হংসাতে নিয়ে আসে। এই অভিযানটি দেশের সমুদ্রসীমার বাইরেও মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণে ভারতীয় নৌবাহিনীর অবিচল প্রতিশ্রুতির উদাহরণ তৈরি করে।
সামুদ্রিক ক্ষেত্রে ভারতের আত্মনির্ভরতার এক মাইলফলক
২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় শিপইয়ার্ডগুলি নৌবাহিনীকে ৪০টিরও বেশি স্বদেশী যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজ সরবরাহ করেছে, যেখানে গড়ে প্রতি ৪০ দিনে একটি করে নতুন প্ল্যাটফর্ম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উন্নত সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেশের উদ্যম ও উৎসাহের এটি এক প্রকৃত প্রমাণ। আইএনএস বিক্রান্তের বিকাশ ও কর্মক্ষমতা ভারতীয় নৌবাহিনীর আত্মনির্ভরতার যাত্রায় এক ঐতিহাসিক অধ্যায় চিহ্নিত করে।
স্বদেশী নকশা ও নির্মাণ
আইএনএস বিক্রান্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজটি দেশজ নকশাকারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা নকশাকৃত এবং কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডে দ্বারা নির্মিত। জাহাজটিতে দেশের প্রধান শিল্প সংস্থাগুলি যেমন বিইএল, বিএইচইএল, জিআরএসই, কেলট্রন, কির্লোস্কর, লারসেন অ্যান্ড টুব্রো, ওয়ার্টসিলা ইন্ডিয়া ইত্যাদি, সেইসঙ্গে ১০০-টিরও বেশি এমএসএমই-এর কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে স্বদেশী সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। জাহাজটির জন্য দেশীয় যুদ্ধজাহাজ-গ্রেডের ইস্পাত তৈরি ও উৎপাদনের কাজটি নৌবাহিনী, ডিআরডিও এবং স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার মধ্যে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে, যা যুদ্ধজাহাজের ইস্পাতের ক্ষেত্রে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলেছে।
সামুদ্রিক ক্ষমতা বৃদ্ধি
২০২৩ সালের জুন মাসে, ভারতীয় নৌবাহিনী আইএনএস বিক্রান্ত এবং আইএনএস বিক্রমাদিত্যের পাশাপাশি, বিভিন্ন জাহাজ, ডুবোজাহাজ এবং বিমানের একটি বহর নিয়ে একটি মাল্টি-ক্যারিয়ার এক্সপিডিশন পরিচালনা করে, যার মাধ্যমে সামুদ্রিক ক্ষেত্রে ভারতের প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রদর্শিত হয়।
কৌশলগত সংগ্রহ: রাফাল-মেরিন জেট
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, ভারত বিমানবাহী রণতরী থেকে পরিচালনা করতে সক্ষম ২৬-টি রাফাল-মেরিন যুদ্ধবিমান সংগ্রহের জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে ৬৩,০০০ কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই সংগ্রহের মধ্যে পাইলট প্রশিক্ষণ, ফ্লাইট সিমুলেটর, অস্ত্র এবং দীর্ঘমেয়াদী রক্ষণাবেক্ষণ সহায়তা অন্তর্ভুক্ত, এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদনকে বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। রাফাল-মেরিন জেটগুলি আইএনএস বিক্রান্ত এবং আইএনএস বিক্রমাদিত্য - উভয় রণতরীর বিমান শাখাকে উন্নত করবে, যা অতুলনীয় যুদ্ধ প্রস্তুতি নিশ্চিত করবে।
স্বদেশী জাহাজ নির্মাণে প্রতিশ্রুতি
দ্বিতীয় একটি স্বদেশী বিমানবাহী রণতরীর জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর পরিকল্পনা এবং পূর্ব নৌ কমান্ডকে শক্তিশালী করতে আইএনএস বিক্রান্তকে বিশাখাপত্তনমে মোতায়েন করার পরিকল্পনা আত্মনির্ভরতা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিকে আরও মজবুত করে। ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ভারতে ১৩৩-টিরও বেশি জাহাজ ও সাবমেরিন নির্মিত ও কমিশন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় নৌবাহিনী ভারতীয় জাহাজ নির্মাণ ক্ষেত্রের বিকাশের মূল ভিত্তি হিসাবে কাজ করে চলেছে। ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পরিকল্পিত ৬৪টি যুদ্ধজাহাজের মধ্যে ৬৩-টি ভারতে তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অসাধারণ আইএনএস বিক্রান্ত বিমানবাহী রণতরী এবং আইএনএস অরিহন্ত ও আইএনএস অরিঘাট-এর মত পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ডুবোজাহাজ।
উপসংহার
আইএনএস বিক্রান্ত ভারতের নৌশক্তি পুনরুত্থানের এক স্থায়ী প্রতীক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। এই দেশে নির্মিত রণতরী সমুদ্রে পথ কেটে চলেছে এবং দেশের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর আঞ্চলিক নিরাপত্তার ভূমিকা বাড়ানোর পাশাপাশি, বিক্রান্ত সম্পূর্ণ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদের দিকে ভবিষ্যতের প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করে। ভারত যখন ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার উপস্থিতি শক্তিশালী করছে, তখন এই রণতরীটি বিশ্বেও শীর্ষ প্রতিরক্ষা রপ্তানিকারকদের মধ্যে অন্যতম হওয়ার দেশের উচ্চাশাও তুলে ধরছে। আইএনএস বিক্রান্ত দেশকে এক নতুন আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে দিয়েছে এবং দেশের ভেতরেও নতুন আস্থা তৈরি করেছে।
তথ্যসূত্র
Press Information Bureau:
https://www.pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1856230
https://www.pib.gov.in/Pressreleaseshare.aspx?PRID=1856121
https://www.pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=2113906
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1856215
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2180962
https://www.pib.gov.in/newsite/PrintRelease.aspx?relid=98029
https://www.pib.gov.in/Pressreleaseshare.aspx?PRID=1768294
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1742282
https://www.pib.gov.in/PressReleseDetail.aspx?PRID=1743815
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1896759
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1927354
https://www.pib.gov.in/PressReleseDetailm.aspx?PRID=2088180
https://www.pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=2071628
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2100813
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2175054
https://www.pib.gov.in/Pressreleaseshare.aspx?PRID=1845871
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2093018
https://www.pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1931254
https://www.pib.gov.in/PressNoteDetails.aspx?ModuleId=3&NoteId=154353
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=21ADARaf24851
https://www.pib.gov.in/FactsheetDetails.aspx?Id=149099
https://www.pib.gov.in/FeaturesDeatils.aspx?NoteId=151135
https://www.pib.gov.in/newsite/erelcontent.aspx?relid=98029
https://static.pib.gov.in/WriteReadData/specificdocs/documents/2024/nov/doc2024117431801.pdf
Download in PDF
*****
SSS/AS.....
(Release ID: 2182544)
Visitor Counter : 5