বিজ্ঞানওপ্রযুক্তিমন্ত্রক
আইআইটি গুয়াহাটি ৩০ নভেম্বর থেকে ভারতের বৃহত্তম বিজ্ঞান উৎসবের সাক্ষী থাকতে চলেছে
Posted On:
28 NOV 2024 12:57PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি), গুয়াহাটিতে চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসবের আসর বসতে চলেছে। এ বছরের বিজ্ঞান উৎসব সমন্বয়ের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর হল কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)। এর আওতায় থাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, তিরুবনন্তপুরম বিজ্ঞান উৎসব সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে। বিজ্ঞান জগতের এক অনন্য অনুষ্ঠান হল ভারতীয় আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসব। ২০১৫ সালে এর সূচনা হয়। প্রথমবার আইআইটি দিল্লিতে এর আয়োজন করা হয়েছিল। উত্তর-পূর্ব ভারত এবারই প্রথম এই উৎসবের সাক্ষী হবে। দেশের বৃহত্তম এই বিজ্ঞান উৎসবে প্রতি বছর হাজার হাজার বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ আসেন। তরুণ প্রজন্ম এর থেকে অনুপ্রাণিত হয়। বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিকাশকেও গতি দেয় এই উৎসব।
এবারের বিজ্ঞান উৎসবের মূল ভাবনা – ‘ভারতকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিচালিত বিশ্বজনীন উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করা’। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে শিল্পের বিকাশের মেলবন্ধন ঘটানোর যে লক্ষ্য সরকারের রয়েছে, এর মধ্য দিয়ে সেই ভাবনাই প্রতিফলিত হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক তাদের বিভিন্ন দপ্তরের সাহায্যে প্রতি বছর এই বিজ্ঞান উৎসবের আয়োজন করে। সরকারি সংস্থাগুলি ছাড়াও বিজ্ঞান ভারতী গোড়া থেকেই এই আয়োজনের অংশীদার হয়ে থেকেছে। এছাড়াও, ভারত সরকারের মুখ্য বিজ্ঞান সংক্রান্ত উপদেষ্টা, মহাকাশ দপ্তর, পরমাণু শক্তি দপ্তর, প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন নির্দেশনালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক, কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা দপ্তর, পরিবেশ মন্ত্রক, আয়ুষ মন্ত্রক, বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক ও দপ্তর এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
ভারতীয় আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসবের বিভিন্ন ভাবনা এমনভাবে স্থির করা হয় যাতে তা সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাভাবনায় উৎসাহিত করতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের চাহিদা ও প্রয়োজন মাথায় রেখে এমনভাবে ভাবনাগুলি বাছা হয়, যাতে প্রত্যেকেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার এবং এ সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রয়োজন অনুসারে এবার বেশ কিছু নতুন ভাবনা বিজ্ঞান উৎসবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এবারের একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হল, ‘চন্দ্রযান - চাঁদের সংগ্রহশালা’। এখানে চন্দ্রযান মিশনে ভারতের সাফল্য উদযাপনের জন্য ব্রিটিশ শিল্পী ডঃ লিউক জেরাম চাঁদের একটি মডেল তৈরি করেছেন। ৭ মিটার ব্যাসের এই মডেলটি অবিকল চন্দ্রপৃষ্ঠের মতো দেখতে, যেখানে ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট চন্দ্রযান অবতরণ করেছিল।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও গণিতের ক্ষেত্রে ভারতের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরা হবে।
‘মেক ইন ইন্ডিয়া, মেক ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি অংশগ্রহণ করবে। ভারতকে বিশ্বজনীন ম্যানুফ্যাকচারিং হাব-এ পরিণত করতে কী ধরনের প্রযুক্তি ও লজিস্টিক্স প্রয়োজন, তাই নিয়ে আলোচনা হবে।
নিউ নালন্দা অনুষ্ঠানে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের মধ্যে মতবিনিময় হবে। বিভিন্ন প্রদর্শনী ও শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে পড়ুয়াদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও গণিতের প্রতি উৎসাহ বাড়ানো হবে।
প্রজ্ঞা ভারত অনুষ্ঠানে ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গঠনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কেমন ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন, তা নিয়ে আলোচনা হবে। কৃত্রিম মেধা, জৈব প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, রোবোটিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর মতো অত্যাধুনিক বিষয় নিয়ে কথা হবে এই অনুষ্ঠানে।
নারীশক্তি – এই অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও গণিতের ক্ষেত্রে মহিলাদের অগ্রগতি ও উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য ভারত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কেও জানানো হবে এই অনুষ্ঠানে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হ্যাকাথন – বিকশিত ভারতের ভাবনা – এই অনুষ্ঠানে বিকশিত ভারতের লক্ষ্যকে সামনে রেখে স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের কাছ থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্ভাবনী ভাবনা জানতে চাওয়া হবে। এই নিয়ে প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে। বিজয়ীরা পাবেন আকর্ষক পুরস্কার।
ইয়ং সায়েন্টিস্টস কনক্লেভ – এই অনুষ্ঠানে ৪৫ বছরের কম বয়সী তরুণ বিজ্ঞানী, গবেষক ও উদ্ভাবকদের মধ্যে মতবিনিময় হবে। এতে তরুণ গবেষকরা ভারতের বিজ্ঞান সংক্রান্ত নীতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের সাম্প্রতিক অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বিজ্ঞান উৎসবে চিন্তানায়ক, মন্ত্রী, সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিষদ এবং বিভিন্ন শিল্পের মুখ্য কার্যনির্বাহীদের গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। থাকবে, শিক্ষকদের নিয়ে কর্মশালা। এতে বিজ্ঞান-শিক্ষকদের শিক্ষাদানের আধুনিক পদ্ধতি, কৌশল ও সাজসরঞ্জাম সম্পর্কে অবহিত করা হবে। বিজ্ঞান সংক্রান্ত স্টার্ট-আপগুলি এই উৎসবে তাদের পণ্য ও পরিষেবা প্রদর্শন করার সুযোগ পাবে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও সংস্থা প্রদর্শনীর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তির প্রয়োগ তুলে ধরবে। ভূ-বিজ্ঞান সংক্রান্ত তথ্য আদানপ্রদানের জন্য আয়োজন করা হয়েছে ‘সাগরিকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানেরও।
বিজ্ঞান শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বিজ্ঞানী, গবেষক ও বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, অংশীদারিত্ব এবং ভাবনা বিনিময়ের লক্ষ্যে ‘সায়েন্স বিয়ন্ড বর্ডার্স’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন ভাষার পত্র-পত্রিকা নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে ‘বিজ্ঞান্তিকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের। এখানে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখকদের মধ্যে আলোচনা ও মতবিনিময়ের ব্যবস্থা থাকছে। আয়োজন করা হয়েছে, বিজ্ঞান কবি সম্মেলন এবং বিজ্ঞান সংক্রান্ত নাটক ও শিল্প উপস্থাপনার।
ভারতে পরমাণু শক্তির বিকাশ ও সামনে থাকা প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা কিভাবে করা যায়, তা নিয়ে আলোচনার জন্য থাকছে ফিউশন ফোরাম। এখানে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন, ওষুধপত্র, কৃষি প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরমাণু বিজ্ঞানের প্রয়োগ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা হবে। থাকছে পড়ুয়াদের সঙ্গে বিজ্ঞানীদের মুখোমুখি আলোচনার অনুষ্ঠান। সামাজিক সংস্থাগুলিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারে ব্যবহার করার লক্ষ্যে আয়োজন করা হচ্ছে ন্যাশনাল সোশ্যাল অর্গানাইজেশন্স অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন্স মিট।
‘ভিশন সংসদ’ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা, উপাচার্য, সভাপতি ও কর্তাদের নিয়ে আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। বিজ্ঞান-ভিত্তিক খেলনা ও খেলাধূলার ব্যবস্থাও থাকছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মিডিয়া কনক্লেভে সমবেত হবেন সাংবাদিক ও মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় কিভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে।
ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক কাজকর্ম নিয়ে বিজ্ঞান উৎসবের প্রতিদিন সন্ধ্যায় লেড লাইট শো-এর আয়োজন করা হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিজ্ঞানচর্চার প্রতিবন্ধকতা এবং তা কাটিয়ে ওঠার উপায় নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ আলোচনার। উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকার খাবারদাবার নিয়ে নর্থ-ইস্ট ফুড স্ট্রিটের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৈচিত্র্যপূর্ণ সঙ্গীত, নৃত্য, শিল্প, রীতি, পদ্ধতি ও প্রথা তুলে ধরতে আয়োজন করা হয়েছে নর্থ-ইস্ট কালচারাল ফেস্ট-এর।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রচার এবং প্রসারে এবারের ভারতীয় আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসব এক মাইলফলক হতে চলেছে।
PG/SD/DM
(Release ID: 2078964)
Visitor Counter : 59