প্রতিরক্ষামন্ত্রক
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ২০২৩ বর্ষশেষের পর্যালোচনা
Posted On:
22 DEC 2023 12:22PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জন্য ২০২৩ একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের আত্মনির্ভর, শক্তিশালী, সুরক্ষিত, সমন্বিত ভারত গড়ে তোলার উদ্যোগে এই মন্ত্রকও সামিল হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা এবং সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-এ প্রতিরক্ষা সরজ্ঞাম রপ্তানিতে দেশ এক নতুন রেকর্ড করেছে। সীমান্ত অঞ্চলের পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করা, নারী শক্তিকে কাজে লাগানো এবং প্রাক্তন সৈনিকদের কল্যাণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং-এর নেতৃত্বে প্রতিটি ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য গতিতে লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এই মন্ত্রক।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার জন্য সমর বিষয়ক দপ্তর ভারতীয়করণের পঞ্চম ইতিবাচক তালিকা প্রকাশ করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জাম উৎপাদিত হয়েছে যা এক রেকর্ড। এক্ষেত্রে বিভিন্ন নীতির সংস্কার, অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগী সংস্থাগুলির সহায়তা এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে নতুন উদ্যোগ বা স্টার্ট আপ সংস্থার অন্তর্ভুক্তি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের গৃহীত নীতির ফলে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১৬ হাজার কোটি টাকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি হয়েছে যা এক রেকর্ড। এবারের বাজেটে দেশীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ে ৭৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কর্ণাটকের টুমাকুরুতে হিন্দুস্তান এরোনেটিক্স লিমিটেডের একটি কারখানা জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। এটি ভারতের বৃহত্তম হেলিকপ্টার উৎপাদক কেন্দ্র। এখান থেকে হালকা ওজনের হেলিকপ্টার উৎপাদন শুরু হয়েছে। এই সংস্থার পরিকল্পিত দুই আসন বিশিষ্ট হালকা যুদ্ধ বিমান তেজসে সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং এর উপস্থিতিতে সি-২৯৫ এমডব্লু বিমানটি বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেম লিমিটেড এবং এয়ারবাস ডিফেন্স এন্ড স্পেস সংস্থার যৌথ উদ্যোগে এটি নির্মিত হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পৌ্রোহিত্যে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহ পরিষদ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর পরিচালনগত দক্ষতা বাড়াতে ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে যার মোট আর্থিক মূল্য ১৭,১৭৬ কোটি টাকা। মন্ত্রক হিন্দুস্থান এরোনেটিক্স-এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তি মোতাবেক প্রশিক্ষণের জন্য ৭০ টি এইচটিটি ফর্টি বিমান কেনা হবে। মন্ত্রক লার্সেন এন্ড টুর্বোর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী সমর শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্য ৩ টি জাহাজ কেনা হবে। এর জন্য ব্যয় হবে ৩,১০০ কোটি টাকা। এছাড়াও ডরনিয়ের ২২৮ বিমান, উন্নতমানের আকাশ সমরাস্ত্র ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র উপকূলে টহলদারির জন্য জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে্। ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য কলকাতার গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স এবং মাজগাঁও ডক এন্ড শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড থেকে তৈরি করা জাহাজ ছাড়াও বাহিনীর টহলদারি জাহাজগুলিতে উন্নতমানের সুপার র্যাপিড গান মাউন্ট বসানো হবে।
সীমান্ত অঞ্চলের সুরক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে ১১৮ টি পরিকাঠামো ক্ষেত্রের প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম সহ ১১ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সীমান্ত সড়ক সংগঠন এই প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়ন করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১২,৩৪০ কোটি টাকা সংগঠনের জন্য মঞ্জুর করা হয়েছে। বর্তমান বছরে ৬০১ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারত-চীন সংলগ্ন অঞ্চলকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই সংগঠন কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন সুড়ঙ্গ এবং সেতু নির্মাণ করছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবছরের সেপ্টেম্বরে পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুর এবং বাগডোগরায় ২টি এয়ারফিল্ড জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। সীমান্ত সড়ক সংগঠন বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অত্যাধুনিক ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশীতে নভেম্বর মাসে নির্মীয়মান সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে যাঁরা আটকে পড়েছিলেন তাদের উদ্ধারে সীমান্ত সুরক্ষা সংগঠন বিশেষ ভাবে সক্রিয় ছিল। অমরনাথ যাত্রার বালতাল ট্রেকটিকেও উন্নত করা হয়েছে। আগামী বছর এই পথ দিয়ে অত্যাবশ্যক পণ্য বোঝাই যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
নারীশক্তিকে বিশেষভাবে কাজে লাগানোর জন্য সামরিকবাহিনীতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন সেনা কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। এক পদ এক পেনশন ব্যবস্থাকে ২০১৯-এর পয়লা জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে। এবছরের পয়লা এপ্রিলে পাওয়া প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী ২৫.১৩ লক্ষ পেনশনভোগী এই প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন।
প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন শাখা বছর জুড়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ১৪ ই জানুয়ারী সপ্তম সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তনীদের স্মরণ দিবস উদযাপিত হয়েছে। নতুন দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পৌরোহিত্যে কেন্দ্রীয় সৈনিক বোর্ডের পরিচালন সমিতির বৈঠক ১১ ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। ৬ ই জুলাই ডিআরডিও ভবনে প্রতিরক্ষা দপ্তর একটি চিন্তন শিবিরের আয়োজন করে।
প্রতিরক্ষা সরজ্ঞাম উৎপাদক দপ্তর বিদেশ থেকে আমদানীর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে উদ্যোগী হয়েছে। আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে সামিল হতে গত ১২ ই মে ৯২৮ টি সরজ্ঞামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এগুলি দেশীয় সংস্থার থেকে কিনতে হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সাবলম্বন ২০২৩ অনুষ্ঠানে দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে বেশ কয়েকটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর ফলে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের স্টার্ট আপ সংস্থাগুলি উপকৃত হবে। উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে প্রতিরক্ষা শিল্প সংক্রান্ত ২টি করিডর গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিটি করিডরে ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা সহ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে তার পরিচালনগত প্রস্তুতিকে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে গেছে। অবিরাম জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে সেনাবাহিনীর উদ্যোগের ফলে আজ জঙ্গী সমস্যা হ্রাস পেয়েছে। কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ফলে জঙ্গীরা জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসছেন। ফলশ্রুতিতে উত্তর-পূর্ব ভারতে আফস্পা আইনের আওতায় থাকা অঞ্চলের পরিসর হ্রাস পাচ্ছে। মণিপুরে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রাজ্যের শান্তি ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩৫ হাজার নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২০২৩ সাল ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য ছিল সংস্কারের বছর। এই বছর বাহিনীর পুনর্গঠন এবং তার সর্বোচ্চ দক্ষতাকে কাজে লাগানো, আধুনিকীকরণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, বিভিন্ন ধরণের সংস্কারমূলক কাজের উদ্যোগী হওয়া, মানব সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং সুসংহতভাবে অন্য বাহিনীর সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে সংস্কারমুখী্ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এবছরের অক্টোবর মাসে তানজানিয়ায় একটি মিনি ডিফেন্স এক্সপো-র আয়োজন করা হয়। এই প্রদর্শনীতে ১৯টি ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থা অংশগ্রহন করে। সেপ্টেম্বর মাসে মানেকশো সেন্টারে ২৬টি ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থা যোগদান করে। পুণেতে মার্চ মাসে ভিয়েতনামে সেনাবাহিনীর সঙ্গে এবং সেকেন্দ্রাবাদে সেপ্টেম্বর মাসে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গে মত বিনিময় কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
জাতীয় পণ্য পরিবহন নীতি এবং পিএম গতি শক্তি মাস্টার প্ল্যানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ভারতীয় সেনাবাহিনী। কেন্দ্রীয় সরকারের অন লাইন প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা কর্মযোগী মঞ্চে ১৮০ জন আধিকারিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ‘স্পর্শ’ ব্যবস্থাপণায় সেনাবাহিনীর ৯৫ শতাংশ পেনশনভোগী অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপণাকে আরও কার্যকর করে তোলার জন্য তিন বাহিনীর শর্ট সার্ভিস কমিশনকে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। সেনেবাহিনীতে বিভিন্ন শাখায় মহিলা আধিকারিকরা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। ব্রিটেন, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল ও ফিলিপিন্সের মতো বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জেসিও/এনসিও আধিকারিকরা নানা পাঠক্রমে যুক্তি হচ্ছেন। এর ফলে, বিভিন্ন সামরিক অভিযানে তাদের দক্ষতা বাড়ছে। অগ্নিপথের প্রথম দুটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। ৪০ হাজার অগ্নিবীরকে বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো শুরু হয়েছে। এছাড়াও, ১০০ জন মহিলা সহ অগ্নিবীররা ২টি দলে ভাগ হয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। গতবছরের নভেম্বর মাস থেকে বীরাঙ্গনা সেবা কেন্দ্র তার কাজ শুরু করেছে।
প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কূটনীতি
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের ক্রমশ গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ১১০ টি দেশের সঙ্গে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে। সেনাবাহিনী ২৯ টি যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে। এছাড়াও বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাপনায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্লোবাল সাউথ গোষ্ঠীতে ভারতের নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আফ্রিকার সঙ্গে বিশেষ সামরিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা হচ্ছে। এবছরের বাস্তিল দিবস কুচকাওয়াজে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ৩ বাহিনীর সদস্যরা প্যারিসে কুচকাওয়াজে অংশ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বাস্তিল দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্তিত ছিলেন।
দেশ গড়ার কাজে ভারতীয় সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। মিশন অমৃত সরোবর, সেনাবাহিনীর রেশন ব্যবস্থায় মিলেটের খাদ্যসামগ্রীর অন্তর্ভুক্তি এবং ১৩৪ টি আর্মি পাবলিক স্কুলে বিদ্যাঞ্জলী উদ্যোগ কার্যকর হয়েছে।
অপারেশন দোস্ত অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৯৯ জন সদস্য তুরস্কের হাতে প্রদেশের ইস্কেনদেরুনে একটি হাসপাতাল গড়ে তোলে। ওই হাসপাতালে ফেব্রয়ারী মাসের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নাগরিকদের চিকিৎসা করা হয়। সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগে যথেষ্ট ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। দেশেও বিভিন্ন দুর্যোগে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাজে যোগদান করে থাকেন। এবছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আটকে থাকা পশ্চিমবঙ্গে ৬৯জন এবং আসামে ১৬০জনকে সেনাবাহিনী উদ্ধার করেছে।
নৌবাহিনী
ভারতীয় নৌবাহিনী ভারতীয়করণের মধ্য দিয়ে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে উদ্যোগী হয়েছে। নৌবাহিনী ৩৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশীয় প্রযুক্তিতে উৎপাদিত সামগ্রী ব্যবহার করবে। বর্তমানে এই বাহিনী ক্রেতা নৌবাহিনীর পরিবর্তে উৎপাদক নৌবাহিনী হযে উঠছে। আজ যে ৬৬ টি যুদ্ধ জাহাজ তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে ৬৪ টি এদেশে নির্মিত হচ্ছে। নৌবাহিনীর জন্য যে ৪ টি সমীক্ষক জাহাজ তৈরি করা হয়েছে, তার মধ্যে সান্ধ্যক নির্মাণ করেছে গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স। আগামী জানুয়ারী মাসে এই জাহাজটি নৌবাহিনীতে অন্তর্ঙুক্ত হবে। এর আগে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মূ ১৭ ই আগষ্ট কলকাতায় যুদ্ধ জাহাজ বিন্ধ্যগিরির উদ্বোধন করেন। নৌবাহিনীতে মহিলা আধিকারিকদের অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে বাহিনীতে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে কেন্দ্রীয় সরকার ওশন রিং অফ যোগ-এর আয়োজন করে। এই প্রকল্পে ৩, ৫০০ জন নৌ বাহিনীর আধিকারিক ভারতীয় নৌবাহিনীর ১৯টি জাহাজে যোগাসন প্রদর্শন করে।
নৌবাহিনী বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে বিভিন্ন যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে মালাবার-২৩ কর্মসূচিতে বাহিনীর দুই যুদ্ধ জাহাজ কলকাতা এবং সহ্যাদ্রি অংশগ্রহন করে। গোয়ায় ফরাসি বাহিনীর সঙ্গে বরুণ যৌথ মহড়ায় যুদ্ধ জাহাজ চেন্নাই এবং তেগ অংশগ্রহন করে। মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে গুয়ামে আর একটি যৌথ মহড়ায় ভারতীয় নৌবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।
বিদেশের বিভিন্ন বন্ধু সরকারকে সহযোগিতা
মালদ্বীপকে দক্ষতা বিকাশের কাজে সহায়তা করতে আইএনএস তারমুগলীকে সেদেশের নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। আইএনএস কৃপাণ ভিয়েতনামের নৌবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়। সুরিনামের সশস্ত্র বাহিনীর মানোন্নয়নে তিন বাহিনীর যে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে, সেখানে সিক্স এক্স পেট্রল ক্র্যাপটির মেরামতির প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়। এর জন্য কারিগরিদল পাঠানো হয়েছে।
সুদানে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সেদেশের আধা সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারে নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ পাঠানো হয়। অপারেশন কাবেরী নামের এই অভিযানে তেগ, তারকস এবং সুমেধা যুদ্ধ জাহাজগুলি সুদানে ত্রাণ সামগ্রীও সরবরাহ করেছে। মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় সিতওয়েতে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে ভারতীয় নৌবাহিনী অপারেশন করুণা অভিযানের সূচনা করে।
অন্যান্য গুরুত্পূর্ণ অনুষ্ঠান
নৌবাহিনীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মু আইএনএস দ্রোণাচার্যকে প্রেসিডেন্ট কালারে সম্মানিত করেন। উপরাষ্ট্রপতি শ্রী জগদীপ ধনখড় নৌবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কম্যান্ড সফর করেন। তাঁকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। নৌবাহিনী দিবসে মহারাষ্ট্রের সিন্ধুদুর্গে সমুদ্রের বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলায় বাহিনীর সক্রিয়তা প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ক্রীড়া জগতে নৌবাহিনী
এবছরের এশিয়ান গেমসে ভারতীয়দলে নৌবাহিনীর ১৫ জন সদস্য এবং দুই আধিকারিক যোগদান করেন। তাঁরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করেছেন। এছাড়াও এশিয়ান জুনিয়ার অনুর্ধ ২৩ চ্যাম্পিয়নশীপে এবং একাদশ এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশীপে বাহিনীর সদস্যরা নজরকাড়া সাফল্য দেখিয়েছেন।
ভারতীয় বিমান বাহিনী
আত্মনির্ভরতা
‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রয়াসকে সফল করে তুলতে ভারতীয় বিমান বাহিনী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ‘ইতিবাচক স্বদেশীকরণ তালিকা’ প্রকাশ। পঞ্চম তালিকাটিতে ৯৮টি সরঞ্জাম স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি বিমান বাহিনীর। এছাড়াও সৃজন ডিফেন্স ওয়েব পোর্টালে ৬৩০টি সরঞ্জামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই সামগ্রীগুলি দেশে তৈরির জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনী দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য বেরিলী এবং পুনেতে দুটি আউটরিচ কর্মসূচির আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনীর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে শিল্প জগতের প্রতিনিধিরা মতবিনিময় করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ডিআরডিও-র সঙ্গে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য ২১টি সমঝোতাপত্র সাক্ষরিত হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার উদ্দেশ্যে বিমান বাহিনীর বিভিন্ন সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেশীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে সমঝোতাপত্র সাক্ষরিত হচ্ছে।
প্রজেক্ট সমর কর্মসূচিতে বিমান বাহিনী আকাশ থেকে আকাশে ক্ষেপনাস্ত্র সফলভাবে উৎক্ষেপিত করেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘাতের ফলে বিমান বাহিনীর বিভিন্ন সরঞ্জাম মেরামতে জন্য রাশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হয়নি। এরফলে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা যাতে ভবিষ্যতে আর না হয়, এ কারণে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে যাতে অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পায়। বিমান বাহিনীর জন্য নানা ধরনের বিমান এবং যুদ্ধ বিমান সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিমান বাহিনী তার শাখা সংগঠনগুলিকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এছাড়াও বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নানা মহড়ায় ভারতীয় বিমান বাহিনী অংশ নিয়ে থাকে। ভারত পৃথকভাবে জাপান এবং ফ্রান্সের বিমান বাহিনীর সঙ্গে দুটি মহড়ায় জানুয়ারি মাসে অংশ নিয়েছে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সঙ্গে এবং মার্চে ব্রিটেনের সঙ্গে বহুজাতিক বিমান বাহিনীর মহড়ায় ভারতীয় বিমান বাহিনী যোগ দেয়। এছাড়াও বিমান বাহিনী মিশরের বিমান বাহিনীর সঙ্গে আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়। সারা বছর জুড়ে বিমান বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়।
বিপর্যয়ে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতীয় বিমান বাহিনী বিভিন্ন বিপর্যয়ে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা অভিযান চালিয়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ভারতীয় বিমান বাহিনী ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে অপারেশন দোস্ত অভিযানে অংশ নেয়। ২৭ এপ্রিল সুদানে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আটক ভারতীয়দের উদ্ধারের জন্য অপারেশন কাবেরী অভিযান চালানো হয়। ২২ অক্টোবর ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বিমান বাহিনী অপারেশন অজয় অভিযান সফলভাবে সংগঠিত করে। তেসরা নভেম্বর নেপালে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর ভারতের বিমান বাহিনী সে দেশের ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে অংশ নেয়।
দেশেও বিভিন্ন বিপর্যয়ে বিমান বাহিনী ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফেব্রুয়ারি মাসে লাদাখে প্রবল তুষারপাতের কারনে জাস্কর উপত্যকায় আটকে থাকা যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য বিমান বাহিনীর চিনুক এবং এমআই ১৭ ওয়ান ভি হেলিকপ্টারকে কাজে লাগানো হয়। গোয়া এবং তামিলনাড়ুতে দাবানলের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিমান বাহিনী সহায়তা করে। হিমালচল প্রদেশ, পাঞ্জাবের আম্বালা, মহারাষ্ট্রের ইয়াভাতমাল, তেলেঙ্গানা এবং সিকিমে বন্যা দুর্গতদের সাহায্যার্থে বিমান বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উত্তরখাণ্ডের সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ জন নির্মাণকর্মীকে উদ্ধারের কাজেও বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
দেশ গড়ার কাজে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় বিমান বাহিনীও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে মণিপুরে এবং হরিয়ানার নুহ-তে অশান্ত পরিবেশ থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য বিমান বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হয়। এছাড়াও ছত্তিশগড়ের বিধানসভা নির্বাচন এবং পিএম কেদারনাথ পুনর্গঠন প্রকল্পেও বাহিনীর হেলিকপ্টারগুলি সক্রিয় ছিল।
অগ্নিপথ প্রকল্প
ভারতীয় বিমান বাহিনী অগ্নিপথ প্রকল্পকে সফলভাবে বাস্তবায়িত করেছে। প্রথম ব্যাচের ২৮৮৮ জন অগ্নিবীর তাঁদের প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন এবং বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে তাঁদের পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি এবং আগস্ট মাসে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ব্যাচের অগ্নিবীরবায়ুরা তাঁদের প্রশিক্ষণ শেষ করবেন।
বিমান বাহিনীর দক্ষতা বিভিন্ন প্রদর্শনীতেও তুলে ধরা হয়েছে। এয়ারো ইন্ডিয়া ২৩ এবং ভারত ড্রোন শক্তি ২০২৩-এ বিমান বাহিনী বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার দক্ষতা প্রদর্শন করেছে।
মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য এই প্রথমবার বিমান বাহিনী মহিলা অগ্নিবীরবায়ু নিয়োগ করেছে। বর্তমানে ১৫৪ জন বেলাগাভিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
বিমান বাহিনী দিবসে হিন্দোনে এবং প্রয়াগরাজে বায়ুসেনার ঘাঁটিতে সর্বসাধারণের জন্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বিমান বাহিনীর নতুন প্রতীক কার্যকর হয়েছে। ব্রিটিশ পতাকা সরিয়ে আমাদের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা এখানে ঠাঁই পেয়েছে। ফ্রান্সের প্যারিসে বাস্তিল দিবস কুচকাওয়াজে ১৪ জুলাই বিমান বাহিনীর সদস্যরাও অংশগ্রহণ করেন। এরফলে বিমান বাহিনী বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করে। দুবাই এয়ার শো-তেও বিমান বাহিনী বিশেষ নজর কেড়েছে। হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচিতে ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে বিমান বাহিনীর যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষে জোয়ার, বাজরা এবং রাগির মতো দানাশস্যকে বিমান বাহিনীর রেশনের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
সরকার বিমান বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ডিজিটাল পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে। বিমান বাহিনীতে জৈব জ্বালানীর ব্যবহার নিয়ে কাজ চলছে। লাদাখের নিওমা-তে একটি বিমান ঘাঁটি গড়ে তোলা হচ্ছে।
ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী
স্বশস্ত্র বাহিনীকে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সরকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং টেলি কমিউনিকেশন কনসালটেন্ট ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে একটি চুক্তি সাক্ষর করেছে। উপকূলরক্ষী বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর জন্য গোয়া শিপ ইয়ার্ড লিমিটেডের ৪টি জাহাজ তৈরি করা হচ্ছে। এই জাহাজগুলিতে সব ধরনের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকবে। ঘূর্ণীঝড় বিপর্যয় এবং হামুন-এ ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে উপকূলরক্ষী বাহিনী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাহিনী পশ্চিমবঙ্গে ঘোড়ামারা দ্বীপ, হলদিয়া এবং ফ্রেজারগঞ্জে আটকে পড়া তীর্থযাত্রীদের উদ্ধারের কাজে সাহায্য করেছে। এছাড়াও তামিলনাড়ুর বিভিন্ন উপকূলে ২২৬৬ কেজি সমুদ্র শসা উদ্ধার করা হয়েছে। সোনা, কেন্দুপাতা এবং বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের চোরাচালানও বাহিনীর সদস্যরা আটকে দিয়েছেন।
প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও)
প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা বিমান বাহিনীর জন্য ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপনাস্ত্র আকাশ-এনজি, আইটিসিএম ক্ষেপনাস্ত্র, হাল্কা যুদ্ধ বিমান তেজসের ওপর অ্যাস্ট্রা বিভিআরএএএম ক্ষেপনাস্ত্রের উৎক্ষেপনমূলক সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এছাড়াও বিমান বাহিনীর জন্য স্বল্প পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনারও সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। নৌবাহিনীর জন্য এই সংস্থা মাঝারি পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র এবং বরুনাস্ত্র নামে একটি টর্পেডো উদ্ভাবন করেছে। এছাড়াও এই সংস্থা সেনাবাহিনীর তিনটি শাখার জন্যই নানা ধরনের উন্নত সমরাস্ত্র নিয়ে গবেষনা চালায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন প্রকল্পকে সহায়তা করে। এছাড়াও বি টেক, এম টেক এবং এমএসসি পড়ুয়াদের জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইনটার্নশিপের ব্যবস্থা করে। ডিআরডিও-র উদ্ভাবিত পেটেন্টগুলি ভারতীয় বিভিন্ন শিল্পসংস্থা ব্যবহার করতে পারবে। এরফলে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির কারিগরি ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। বিভিন্ন শিল্পসংস্থার সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে ডিআরডিও নানা ধরনের সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন করতে উদ্যোগী হয়েছে।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের কাজে লাগবে এ ধরনের গবেষণামূলক উদ্যোগে ডিআরডিও সহায়তা করে থাকে। এরজন্য ডিআরডিও ইন্ডাস্ট্রি অ্যাকাডেমিয়া- সেন্টার্স অফ এক্সলেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করা হয়।
জন অভিযোগের নিষ্পত্তিতে গতি আনার জন্য ডিআরডিও একটি বিশেষ কর্মসূচির সূচনা করেছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগের নিষ্পত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন রেকর্ড সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে ডিআরডিও-র বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনী
জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনী বা এনসিসির ইন্টিগ্রেটেড সফ্টওয়্যারের সূচনা করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং। ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের বাস্তবায়নের জন্য এই কর্মসূচি সহায়ক হবে। এনসিসি সারা বছর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ২৬ নভেম্বর বাহিনীর ৭৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করা হয়। এছাড়াও মেগা সাইক্লোথন, থাল সৈনিক ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। ২১ জুন নবম আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে বাহিনীর ১১ লক্ষ সদস্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
সৈনিক বিদ্যালয়
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং ২৩টি নতুন সৈনিক স্কুল খোলার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন। এই স্কুলগুলি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। ইতোমধ্যেই যে ৩৩টি সৈনিক স্কুল রয়েছে সেগুলি পূর্ববর্তী নিয়মে পরিচালিত হবে। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে ১০০টি সৈনিক স্কুল খোলার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্যই এই উদ্যোগ।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সৈনিক স্কুলে ১৬০০র বেশি ছাত্রীরাও পড়াশোনা করছে। যে ৩৩টি সৈনিক স্কুল রয়েছে সেগুলিতে বর্তমানে ছেলেদের সঙ্গে মেয়েরাও পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। সৈনিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে তাঁদের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে যোগদানের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
সরকার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যে ১০০টি সৈনিক স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই স্কুলগুলি গড়ে তোলার জন্য আগ্রহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত https://sainikschool.ncog.gov.in/ - পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করার সুযোগ পেয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ২০২৩ সালে বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে আরো বিশদে জানতে https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1989502 লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।
PG/CB /SG/NS
(Release ID: 1990636)
Visitor Counter : 386