প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

নতুন দিল্লিতে ১৭তম ভারতীয় সমবায় কংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 01 JUL 2023 1:32PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি,  ০১  জুলাই, ২০২৩

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস উপলক্ষে আজ নতুন দিল্লির প্রগতি ময়দানে ১৭তম ভারতীয় সমবায় কংগ্রেসে ভাষণ দিয়েছেন। এই কংগ্রেসের মূল বিষয় ভাবনা হল ‘অমৃতকাল : এক প্রাণবন্ত ভারতের জন্য সমবায়ের মাধ্যমে সমৃদ্ধি’। শ্রী মোদী সমবায় বিপণনের জন্য ই-বাণিজ্য ওয়েবসাইট-এর ই-পোর্টাল-এর সূচনা এবং সমবায় সম্প্রসারণ ও উপদেষ্টা পরিষেবা পোর্টাল চালু করেছেন। 

অনুষ্ঠানের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সকলকে অভিনন্দন জানান এবং বলেন যে দেশ একটি ‘বিকশিত ও আত্মনির্ভর ভারত’-এর লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ‘সবকা প্রয়াস’-এর প্রয়োজনের কথা পুনরায় উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী ভারতকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুগ্ধ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দুগ্ধ সমবায়ের অবদান এবং ভারতকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ চিনি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সমবায়ের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমবায় দেশের অনেক অংশে ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করেছে। শ্রী মোদী বলেন, সরকার একটি বিকশিত ভারতের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমবায় ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি জানান, এই প্রথম সমবায় ক্ষেত্রের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রক গঠন করা হয়েছে। এমনকি সমবায় ক্ষেত্রের জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। এর ফলস্বরূপ সমবায়গুলি কর্পোরেট ক্ষেত্রের মতো একই সারিতে উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী সমবায় ক্ষেত্রগুলিকে শক্তিশালী করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে করের হার কমানো হয়েছে। এমনকি সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি নতুন শাখাও খোলা হয়েছে। দোরগোড়ায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবাও পৌঁছে যাচ্ছে। 

এরসঙ্গে যুক্ত থাকা বিপুল সংখ্যক কৃষকদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী গত ৯ বছরে কৃষক কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, আগে কৃষকদের সহায়তার পরিবর্তে মধ্যস্থভোগীদের মাধ্যমে কৃষকদের আয় হ্রাস করা হয়েছে। এখন কোটি কোটি কৃষক সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কিষাণ সম্মান নিধি পাচ্ছেন। গত ৪ বছরে এই প্রকল্পে প্রায় ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০১৪ সালের আগে ৫ বছরের মোট কৃষি বাজেটের ৩ গুণেরও বেশি ব্যয় হয়েছে শুধুমাত্র এই প্রকল্পে।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপি সারের ক্রমবর্ধমান দামের বোঝা কৃষকদের যাতে না বইতে হয় তা নিশ্চিত করা উপায়গুলির কথাও ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, এ দেশের একজন কৃষক আজ এক ব্যাগ ইউরিয়া কেনে মাত্র ২৭০ টাকায়, সেখানে বাংলাদেশের একজন কৃষক  এক ব্যাগ ইউরিয়া কেনে ৭২০ টাকায়। পাকিস্তানে তার দাম ৮০০ টাকা। চীনে ২১০০ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০০ টাকা। কৃষকদের জীবন পরিবর্তনে সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত ৯ বছরে ১০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়েছে শুধুমাত্র সার ক্ষেত্রে ভর্তুকিতে।

কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্ধিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যতে কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কেনা হয়েছে। গত ৯ বছরে কৃষকদের কাছে ১৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ হস্তান্তর করা হয়েছে। দেশের প্রতিটি কৃষক প্রতি বছর যাতে ৫০,০০০ টাকা করে পান তা সরকার সুনিশ্চিত করেছে। 

 প্রধানমন্ত্রী বলেন, অমৃতকালের সময় গ্রাম ও কৃষকদের উন্নতিতে সমবায় ক্ষেত্র বড় ভূমিকা নিতে পারে। সরকার ও সমবায় একত্রে বিকশিত ভারতের স্বপ্নকে দ্বিগুণ শক্তি যোগাবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযানের মাধ্যমে সরকারের কাজে স্বচ্ছতা এসেছে এবং সুবিধাভোগীদের উপকার নিশ্চিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ দরিদ্ররা বিশ্বাস করে যে উচ্চস্তরে দুর্নীতি এবং স্বজন-পোষণ দূর হয়েছে। সমবায়ের ওপর জোর দিয়ে আমাদের কৃষক ও গবাদি পশুপালকারীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। সমবায় ক্ষেত্রকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতি মুক্ত করা অপরিহার্য। এরজন্য ডিজিটাল পদ্ধতির বিষয়ে প্রচার চালাতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। 

প্রাথমিক স্তরে প্রধান সমবায় সমিতিগুলি অথবা প্যাকস (পিএসিএস) স্বচ্ছতার জন্য একটি মডেল হয়ে উঠবে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান ৬০,০০০ হাজারেরও বেশি প্যাকস-এ কম্পিউটারাইজেশন হচ্ছে। কোর ব্যাঙ্কিং এবং সমবায় সমিতিগুলির মধ্যেও ডিজিটাল লেনদেনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

ক্রমবর্ধমান রেকর্ড রপ্তানীর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে সমবায়গুলির অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, উৎপাদন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সমবায়গুলির  করের বোঝা কমানো হয়েছে । রপ্তানী বৃদ্ধিতে দুগ্ধ ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, গ্রামীণ সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর সংকল্প নিতে হবে। শ্রী অন্ন (বাজরা)-র প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে শ্রী অন্ন পরিবেশিত হয়েছিল। ভারতের শ্রী অন্নকে বিশ্বের বাজারে তুলে ধরার জন্য সমবায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। আখ চাষীদের সমস্যা মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। কৃষকদের বকেয়া পরিশোধের জন্য চিনি কলগুলিকে ২০,০০০ কোটি টাকার প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, পেট্রলে ইথানল মিশ্রনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ৯ বছরে চিনি কলগুলি থেকে ৭০,০০০ কোটি টাকার ইথানল কেনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি শুধুমাত্র গম ও চালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারত ভোজ্য তেল, ডাল, মাছের খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ইত্যাদি আমদানিতে ২ থেকে আড়াই লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। এক্ষেত্রে সমবায়গুলিকে ভোজ্য তেল উৎপাদনে দেশকে আত্মনির্ভর করে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। শ্রী মোদী বলেন, সরকার মিশন মোডে কাজ করে চলেছে। সমবায় সমিতিগুলিকে কৃষকদের বৃক্ষরোপণ প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম কেনার সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত ধরনের পরিষেবা এবং তথ্য সরবরাহ করার পরামর্শ দিয়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার কথা উল্লেখ করেন শ্রী মোদী। তিনি বলেন, মৎস্য ক্ষেত্রে ২৫,০০০-এর বেশি সমবায় সমিতি কাজ করে। বিগত ৯ বছরে দেশে মৎস্য চাষ দ্বিগুণ হয়েছে। এই অভিযানে সমবায় ক্ষেত্রের অবদানের  ওপর জোর দেন শ্রী মোদী। সরকার সারা দেশে ২ লক্ষ নতুন বহুমুখী সমিতি তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমবায়ের ক্ষমতা গ্রাম ও পঞ্চায়েত স্তরে পৌঁছে যাবে। 

বিগত কয়েক বছরে এফপিও-তে নজর দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ১০,০০০ নতুন এফপিও তৈরির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ৫,০০০ এফপিও তৈরি হয়েছে বলে জানান শ্রী মোদী। এই এফপিওগুলি ছোট কৃষকদের শক্তি যোগাবে। মধু উৎপাদন, জৈব খাবার, সৌর প্যানেল এবং মাটির পরীক্ষার মতো ক্ষেত্রে কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য গৃহীত পদক্ষেপের কথা প্রধানমন্ত্রী জানান। এইসব ক্ষেত্রে সমবায়ের সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন তিনি। রাসায়নিক মুক্ত চাষের ক্ষেত্রে পিএম-প্রণাম প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রেও সমবায়ের সাহায্যের প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। কৃষি কাজে রাসায়নিক ব্যবহার না করার জন্য প্রতি জেলায় ৫টি করে গ্রাম সমবায়গুলিকে দত্তক নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রী গোবর্ধন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন। এই প্রকল্পে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরিত করার জন্য সারা দেশে কাজ করা হয়। গোবর এবং বর্জ্যকে বিদ্যুৎ ও জৈব সারে পরিণত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত দেশে ৫০টিরও বেশি বায়ো গ্যাস প্লান্ট তৈরি হয়েছে। সমবায় সমিতিগুলিকে এই কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী দুগ্ধ ও পশুপালন ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করে জানান, বিপুল সংখ্যক গবাদি পশুপালনকারী সমবায় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। গবাদি পশুর পা ও মুখের রোগের কারণে এই পশুপালনকারীরা চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিরও সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রথমবার সারা দেশে ২৪ কোটি প্রাণীকে টিকা দেওয়ার জন্য বিনামূল্যে টিকাদান অভিযান শুরু করেছে। 

প্রধানমন্ত্রী অমৃত সরোবর, জল সংরক্ষণ, ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, আমরা যে শস্য উৎপাদন করি তার ৫০ শতাংশেরও কম মজুত করে রাখতে পারি। এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্বের বৃহত্তম শস্য মজুত প্রকল্প নিয়ে এসেছে। কৃষি পরিকাঠামোর জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে এবং বিগত ৩ বছরে তাতে ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। 

ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী সমবায়গুলিকে নতুন ভারতে দেশের অর্থনৈতিক উৎসের একটি শক্তিশালা মাধ্যম হয়ে উঠবে বলে জানান। সমবায় মডেল অনুসরণ করে আত্মনির্ভর গ্রাম গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি। সমবায় ক্ষেত্রে সহযোগিতার উন্নতির পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমবায়কে রাজনীতির পরিবর্তে সামাজিক  ও জাতীয় নীতির বাহক হতে হবে। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ, সমবায় প্রতিমন্ত্রী শ্রী বি এল ভার্মা, এশিয়া প্যাসিফিক-এর আন্তর্জাতিক সমবায় জোটের চেয়ারম্যান, ভারতের জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি সহ অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, পয়লা থেকে দোসরা জুলাই পর্যন্ত এই ১৭তম ভারতীয় সমবায় কংগ্রেসের আয়োজন করা হয়েছে। এই কংগ্রেসে সমবায় আন্দোলন, সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে ওঠার নানান দিক, ভারতের সমবায় আন্দোলন বৃদ্ধির জন্য ভবিষ্যতের নীতি- দিক নির্দেশনা নিয়ে দু দিন ধরে আলোচনা চলবে। 


CG/SS/NS


(Release ID: 1936759) Visitor Counter : 162