প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

মণিপুরে বিবিধ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 04 JAN 2022 3:17PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৪ জানুয়ারি, ২০২১

 

আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত মণিপুরের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী লা গণেশনজি, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী এন. বীরেন সিং-জি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ওয়াই. জয়কুমার সিং-জি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রী ভূপেন্দ্র যাদবজি, শ্রী রাজকুমার রঞ্জন সিং-জি, মণিপুর রাজ্য সরকারের মন্ত্রী শ্রী বিশ্বজিৎ সিং-জি, শ্রী লোসি দিখোজি, শ্রী লেপ্তাও হাওকিপজি, শ্রী অভাংগবাও ন্যুমাইজি, শ্রী এস. রাজেন সিং-জি, শ্রী ভুঁগজাগিন ওয়ালতেজি, শ্রী সত্যব্রত সিং-জি, শ্রী ও. লুখোই সিং-জি, সংসদে আমার সহযোগীগণ, বিধায়কগণ, অন্যান্য জনপ্রতিনিধিগণ আর আমার মণিপুরের প্রিয় ভাই ও বোনেরা! খুরুমজরী!

আমি মণিপুরের মহান ধরিত্রীকে, এখানকার জনগণকে আর এখানকার গৌরবময় সংস্কৃতিকে মাথা নত করে প্রণাম জানাই। বছরের শুরুতেই মণিপুর আসা, আপনাদের সঙ্গে দেখা করা, আপনাদের এত ভালোবাসা পাওয়া, আশীর্বাদ পাওয়া, জীবনে এর থেকে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে? আজ যখন আমি বিমানবন্দরে এসে নেমেছি, সেখান থেকে এখানে এসেছি, প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার পথ, সম্পূর্ণরূপে মণিপুরের জনগণের উচ্ছ্বাস ও প্রাণশক্তি দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি, তাঁদের রং-এ রঙিন হয়ে উঠেছি। একভাবে বলা যায়, এটা ছিল একটা ‘হিউম্যান ওয়াল’।  ৮-১০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ‘হিউম্যান ওয়াল’। এই অভ্যর্থনা, এই শিষ্টাচার, আপনাদের এই ভালোবাসা, আপনাদের এই আশীর্বাদ আমি কখনও ভুলতে পারব না। আপনাদের সবাইকে ২০২২ সালের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

বন্ধুগণ,

এখন থেকে কিছুদিন পর, ২১ জানুয়ারিতে, মণিপুরের পূর্ণ রাজ্য মর্যাদা পাওয়ার ৫০ বছর পূর্ণ হবে। দেশ এই সময় তার স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অমৃত মহোৎসব পালন করছে। সেজন্য এই সময়টি অনেক বড় প্রেরণা অর্জনের সময়। মণিপুর তো সেই রাজ্য যেখানে রাজা ভাগ্যচন্দ্র আর পু. খেতিন্থাংগ সিথলো-র মতো বীরদের জন্ম দিয়েছে। দেশের জনগণের মনে স্বাধীনতা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও বিশ্বাস এখানে মোইরাংগ-এর মাটি যেভাবে জন্ম দিয়েছে তা নিজেই একটি বড় উদাহরণ, যেখানে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ   হিন্দ ফৌজ প্রথমবার ভারতের জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিল, যে উত্তর-পূর্ব ভারত একদিন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ভারতকে স্বাধীন করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া পথের প্রবেশদ্বার ছিল, তা আজ নতুন ভারতের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়নেরও প্রবেশদ্বার হয়ে উঠছে।

আমি আগেও বলেছি যে দেশের পূর্ব অংশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতএকদিন ভারতের উন্নয়নের প্রধান উৎস হয়ে উঠবে। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি কিভাবে মণিপুর এবং উত্তর-পূর্ব ভারত ভারতের ভবিষ্যতের ভাগ্যাকাশকে ক্রমে নতুন নতুন রঙে সাজিয়ে তুলছে।

বন্ধুগণ,

আজ এখানে একসঙ্গে অনেকগুলি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস হল। উন্নয়নের এই ভিন্ন  ভিন্ন মণি-রত্নগুলি, এগুলির মালা যখন গাঁথা হবে, এই প্রকল্পগুলি যখন বাস্তবায়িত হবে, তখন মণিপুরের জনগণের জীবন অনেক সহজ হবে। সনা লৈবাক মণিপুরের গৌরবকে আরও বাড়াবে। ইম্ফলের ‘ইন্টিগ্রেটেড কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’ থেকে শহরের নিরাপত্তাও বৃদ্ধি পাবে আর অন্যান্য পরিষেবাও সম্প্রসারিত হবে। বরাক নদীর ওপর সেতুর মাধ্যমে মণিপুরের লাইফলাইন একটি নতুন ‘অল ওয়েদার কানেক্টিভিটি’ সম্পন্ন পাচ্ছে। থোওবাল মাল্টি-পারপাস প্রোজেক্টের পাশাপাশি তামেনগলোনগ-র ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পের মাধ্যমে এই প্রান্তিক জেলার সকল জনগণের জন্য পরিস্রুত শুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

আপনারা স্মরণ করুন, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত মণিপুরে নলের মাধ্যমে পানীয় জলের সুবিধা কত অপ্রতুল ছিল। মাত্র ৬ শতাংশ মানুষের বাড়িতেই নলের মাধ্যমে জল যেত। কিন্তু আজ কেন্দ্রীয় সরকারের চালু করা জল জীবন মিশন-এর মাধ্যমে মণিপুরের বাড়িতে বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য বীরেন সিং-জির নেতৃত্বাধীন সরকার দিন-রাত পরিশ্রম করছে। আজ মণিপুরের ৬০ শতাংশ বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে গেছে। অতি দ্রুত ১০০ শতাংশ স্যাচুরেশনের মাধ্যমে ‘হর ঘর জল’-এর লক্ষ্যও বাস্তবায়িত হতে চলেছে। এখানেই ডবল ইঞ্জিন সরকারের লাভ আপনারা বুঝতে পারবেন; এটাই ডবল ইঞ্জিন সরকারের আসল শক্তি।

বন্ধুগণ,

আজ যে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন ও শিলান্যাস হল, সেগুলির পাশাপাশি আমি মণিপুরের জনগণকে আরও একবার ধন্যবাদ জানাতে চাই। আপনারা মণিপুরে এমন পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতাসম্পন্ন স্থির সরকার নির্বাচন করেছেন, যেটি সম্পূর্ণ তৎপরতার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছে। এটা কিভাবে হল? এটা আপনাদের প্রত্যেকের এক একটি ভোটের কারণেই সম্ভব হয়েছে। আপনাদের এক একটি ভোটের শক্তি মণিপুরে সেই কাজ করে দেখিয়েছে যা আগে কেউ কল্পনাও করতে পারত না। আপনাদের এই একটি ভোটের শক্তিতেই মণিপুরের ৬ লক্ষ কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পিএম-কিষাণ সম্মান নিধির মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা হস্তান্তরিত হয়েছে। আমার একটু আগেই এরকম কয়েকজন সুবিধাভোগী কৃষকের সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে। তাঁদের আত্মবিশ্বাস এবং তাঁদের উৎসাহ প্রকৃতপক্ষে দেখার মতো ছিল। এসব কিছু সম্ভব হয়েছে আপনাদের এক একটি ভোটের শক্তির ফলেই। এর ফলেই মণিপুরের ৬ লক্ষ পরিবার পিএম গরীব কল্যাণ যোজনার মাধ্যমে বিনামূল্যে রেশনের সুবিধা পাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে প্রায় ৮০ হাজার গৃহ নির্মাণের প্রস্তাব মঞ্জুর হয়েছে। এটাও আপনার সেই একটি ভোটের শক্তিতেই সম্ভব হয়েছে। এখানকার ৪ লক্ষ ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষের আয়ুষ্মান যোজনার মাধ্যমে দেশের অত্যাধুনিক হাসপাতালগুলিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা করা আপনাদের প্রত্যেকের এক একটি ভোটের শক্তিতেই সম্ভব হয়েছে। আপনাদের সেই একটি ভোটই রাজ্যের ১ লক্ষ ৫০ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ এনে দিয়েছে। আপনার একটি ভোটই ১ লক্ষ ৩০ হাজার বাড়িতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে।

আপনার একটি ভোটই স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মাধ্যমে রাজ্যের ৩০ হাজারেরও বেশি বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এটা আপনাদের একটি ভোটেরই শক্তি যার মাধ্যমে করোনার মোকাবিলায় এই রাজ্যের ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বিনামূল্যে টিকার ডোজ পেয়েছেন। আজ মণিপুরের প্রত্যেক জেলায় অক্সিজেন প্ল্যান্টও গড়ে তোলা হচ্ছে। এইসব কিছু আপনাদের এক একটি ভোটের কারণে হয়েছে।

আমি প্রত্যেক মণিপুরবাসীকে এই ধরনের অনেক সাফল্যের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং এবং তাঁর সরকারকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি যে তারা মণিপুরের উন্নয়নের জন্য এত পরিশ্রম করছে।

বন্ধুগণ,

একটা সময় ছিল যখন মণিপুরকে পূর্ববর্তী সরকারগুলি নিজের অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছিল। যাঁরা দিল্লিতে ছিলেন তাঁরা ভাবতেন যে কে এত সমস্যার সম্মুখীন হতে চাইবে? কে এত দূরে আসবে! যখন নিজেদের মধ্যে এরকম অসামঞ্জস্য থাকবে, তখন দূরত্ব তো বাড়বেই। আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হইনি তখনও অনেকবার মণিপুর এসেছি। আমি জানতাম আপনাদের হৃদয়ে কী কী নিয়ে যন্ত্রণা রয়েছে, আর সেজন্যই ২০১৪ সালের পর দিল্লিকে, সম্পূর্ণ দিল্লিকে, সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় সরকারকে আপনাদের দরজা পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। সমস্ত মন্ত্রী, আধিকারিক ও অন্যান্য নেতাদের সবাইকে আমি বলেছি যে এই এলাকায় আসুন, দীর্ঘ সময় থাকুন আর এখানকার প্রয়োজন অনুসারে প্রকল্প রচনা করুন। এটা আপনাদেরকে কিছু দেওয়ার ভাবনাপ্রসূত কোনও নির্দেশ নয়। আমার ভাবনা ছিল আপনাদের সেবক হয়ে যতটা সম্ভব আপনাদের জন্য, মণিপুরের জন্য, উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য ভারসাম্যযুক্ত সমর্পিত মনোভাব নিয়ে, সম্পূর্ণ সেবাভাব নিয়ে কাজ করতে হবে! আর আপনারা দেখছেন, আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাঁচজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী রয়েছেন। তাঁরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলি সামলাচ্ছেন।

বন্ধুগণ,

আজ আমাদের সরকারের সাত বছরের পরিশ্রম গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে পরিলক্ষিত হচ্ছে, মণিপুরেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। আজ মণিপুর পরিবর্তনের, একটি নতুন কর্মসংস্কৃতির প্রতীক হয়ে উঠছে। এই পরিবর্তনই মণিপুরের কালচার বা সংস্কৃতির জন্য, কেয়ার বা যত্নের জন্য, এক্ষেত্রে কানেক্টিভিটি বা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে আর ক্রিয়েটিভিটি বা সৃষ্টিশীলতাকেও ততটাই গুরুত্ব দিয়েছে। সড়কপথ এবং সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নের নানা প্রকল্প, উন্নতমানের মোবাইল নেটওয়ার্ক – এসব কিছু নিঃসন্দেহে মণিপুরের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে তুলবে। ‘সি-আইআইআইটি’ এখানকার যুব সম্প্রদায়ের সৃষ্টিশীলতা এবং উদ্ভাবনের প্রাণশক্তিকে আরও শক্তিশালী করবে। আধুনিক ক্যান্সার হাসপাতাল, কঠিন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং চিকিৎসার জন্য মণিপুরের জনগণকে ‘কেয়ার’ বা সেবার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। মণিপুর ইনস্টিটিউট অফ পারফর্মিং আর্টস-এর স্থাপন আর গোবিন্দজি মন্দিরের পুনর্নির্মাণ মণিপুরের সংস্কৃতিকে সংরক্ষিত করবে।

বন্ধুগণ,

উত্তর-পূর্ব ভারতের এই মাটিতে রানি গাইদিংল্যু বিদেশি শাসকদের ভারতের নারীশক্তির ক্ষমতা প্রদর্শন করিয়েছিলেন, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে অসম লড়াই লড়েছিলেন। রানি গাইদিংল্যু মিউজিয়াম আমাদের নবীন প্রজন্মকে অতীতের সঙ্গে যুক্ত করবে আর তাঁদের প্রেরণাও যোগাবে। কিছুদিন আগে আমাদের সরকার আন্দামান-নিকোবরের মাউন্ট হ্যারিয়েট … আন্দামান ও নিকোবরে একটা পাহাড় আছে, তার নাম হল মাউন্ট হ্যারিয়েট। ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর হওয়ার পরও জনগণ সেই পাহাড়টাকে মাউন্ট হ্যারিয়েট নামেই জানতেন। কিন্তু আমরা ওই পাহাড়টির নাম বদলে মাউন্ট মণিপুর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন বিশ্বের যে কোনও পর্যটক আন্দামান-নিকোবর গেলে মাউন্ট মণিপুর কী, তার ইতিহাস কী, তা জানার চেষ্টা করবে।

উত্তর-পূর্ব ভারতকে নিয়ে পূর্ববর্তী সরকারগুলির নির্দিষ্ট নীতি ছিল। এই নীতি কী ছিল? এই নীতিটি ছিল ‘ডোন্ট লুক ইস্ট’। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতি দিল্লি তখনই শুধু তাকাত যখন এখানে নির্বাচন হত। কিন্তু আমরা উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি গ্রহণ করি, এবং তা বাস্তবায়নের সঙ্কল্প নিই। ঈশ্বর এই অঞ্চলটিকে এত প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়েছে, এত সামর্থ্য দিয়েছে, এখানে উন্নয়নের, পর্যটনের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে! উত্তর-পূর্ব ভারতের এই সম্ভাবনাগুলিকে বাস্তবে রূপে দেওয়ার কাজ দেরীতে হলেও এখন শুরু হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারত এখন ক্রমে ভারতের উন্নয়নের গেটওয়ে বা প্রবেশদ্বারে পরিণত হচ্ছে।

এখন উত্তর-পূর্ব ভারতে অনেকগুলি বিমানবন্দর গড়ে উঠছে। সর্বত্র রেল পৌঁছচ্ছে। জিরিবাম-তুপুল-ইম্ফল রেললাইনের মাধ্যমে মণিপুরও এখন দেশের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে। ইম্ফল-মৌরে হাইওয়েকে এশিয়ান হাইওয়ে হিসেবে গড়ে তোলার কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এই মহাসড়ক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে মজবুত করবে। আগে যখন রপ্তানির প্রসঙ্গ উঠত, তখন দেশের হাতেগোনা শহরগুলির নামই সামনে আসত। কিন্তু এখন ইন্টিগ্রেটেড কার্গো টার্মিনালের মাধ্যমে মণিপুরও বাণিজ্য এবং রপ্তানির একটা বড় কেন্দ্র হয়ে উঠবে। আত্মনির্ভর ভারতকে আরও গতিশীল করে তুলবে। গতকাল দেশবাসী একটি খবর শুনেছে। স্বাধীনতার পর প্রথমবার দেশ ৩০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করে একটি নতুন পরাক্রম স্থাপন করেছে। আজ দেশের ছোট ছোট রাজ্যগুলিও এই অভিযানে এগিয়ে আসছে।

বন্ধুগণ,

আগে মানুষ উত্তর-পূর্ব ভারতে আসতে চাইতেন, কিন্তু এখানে কিভাবে পৌঁছবেন, এটা ভেবেই থেমে যেতেন। এর ফলে এখানকার পর্যটন, এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের অনেক ক্ষতি হত। কিন্তু এখন শুধু উত্তর-পূর্ব ভারতের শহরগুলিই নয়, এখানকার গ্রামগুলিতেও পৌঁছে যাওয়া অনেক সহজ হয়ে উঠছে। আজ এখানে বড় সংখ্যায় জাতীয় মহাসড়কের কাজও এগিয়ে চলেছে, আর গ্রামেও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মাধ্যমে হাজার হাজার কিলোমিটার নতুন সড়কপথ তৈরি হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের মতো সুবিধাগুলি দেশের কিছু অঞ্চলের বিশেষ অধিকার বলে স্বীকৃত ছিল। এখন সেই দেওয়াল ভেঙে এগুলিও উত্তর-পূর্ব ভারতে পৌঁছচ্ছে। এইসব ক্রমবর্ধমান পরিষেবা, ক্রমসম্প্রসারিত যোগাযোগ ব্যবস্থা এই অঞ্চলে পর্যটনকে উৎসাহিত করছে। অনেক বেশি পর্যটক আসছেন। এখানকার নবীন প্রজন্মের মানুষ রোজগারের জন্য নতুন নতুন সুযোগ গড়ে তুলতে পারবেন।

বন্ধুগণ,

মণিপুর দেশকে অমূল্য রত্ন উপহার দেওয়া রাজ্য। এখানকার যুব সম্প্রদায়, বিশেষ করে মণিপুরের মেয়েরা ক্রীড়াক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উড়িয়েছেন। গর্বে গোটা দেশের মাথা উঁচু করেছেন। আজ সারা দেশের খেলোয়াড়রা, নবীন প্রজন্মের মানুষেরা মণিপুরের খেলোয়াড়দের থেকে প্রেরণা নিচ্ছেন। কমনওয়েলথ গেমস থেকে শুরু করে অলিম্পিক্স পর্যন্ত, কুস্তি, আর্চারি এবং বক্সিং থেকে শুরু করে ওয়েট লিফটিং পর্যন্ত মণিপুর দেশকে এম.সি.মেরিকম, মীরাবাঈ চানু, বোম্বেলা দেবী, লায়শ্রম সরিতা দেবীর মতো অনেক উজ্জ্বল তারকা দিয়েছে, বড় বড় চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় দিয়েছে। আপনাদের কাছে এরকম কতো না দক্ষ খেলোয়াড় রয়েছেন যাঁরা যথাযথ গাইডেন্স ও প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ বা উপকরণ পেলে চমৎকার ফল দেখাতে পারেন। এখানে আমাদের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশেষ করে, আমাদের মেয়েদের মধ্যে এমন সব প্রতিভা রয়েছে বলেই আমরা মণিপুরে আধুনিক স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি বা ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের সম্ভাবনাময় যুবক-যুবতীদের শুধু তাঁদের স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ করবে যাতে ক্রীড়া জগতে ভারতের নতুন পরিচয় গড়ে ওঠে। যে নতুন পরিচয় গড়ে উঠবে তা দেশকে নতুন প্রাণশক্তি, নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা যোগাবে; যার নেতৃত্ব দেবে আমাদের এখনকার নবীন প্রজন্ম, আমাদের কন্যারা।

বন্ধুগণ,

কেন্দ্রীয় সরকার যে পাম অয়েল নিয়ে জাতীয় মিশন শুরু করেছে তা থেকেও উত্তর-পূর্ব ভারত অনেক লাভবান হবে। আজ ভারত তার প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য বিদেশ থেকে বড় মাত্রায় পাম অয়েল আমদানি করে। এর ফলে, হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। এই টাকা ভারতের কৃষকরা যাতে পান, ভারত যেন ভোগ্যতেলের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠে, এই লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টা জারি রয়েছে। ১১ হাজার কোটি টাকার এই পাম অয়েল মিশন থেকে কৃষকদের আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক লাভ হবে আর এটাই উত্তর-পূর্ব ভারতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হতে চলেছে। এখানে, মণিপুরেও, এই বিষয় নিয়ে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। অয়েল পাম চাষ এবং নতুন নতুন কারখানা স্থাপনের জন্য সরকার আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে।

আজ মণিপুরের সাফল্য নিয়ে গর্ব করার পাশাপাশি আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে আজ আমাদের সামনে একটি লম্বা সফর সম্পূর্ণ করার আর আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে আমরা কোথা থেকে এই যাত্রা শুরু করেছিলাম। আমাদের মনে রাখতে হবে যে কিভাবে আমাদের মণিপুরকে বিগত সরকারগুলি ‘ব্লকেড স্টেট’-এ পরিণত করে ছেড়েছিল। ওই সরকারগুলি মণিপুরের পাহাড় ও উপত্যকায় রাজনৈতিক স্বার্থে গর্ত খোড়ার কাজ করে গেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে জনগণের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধির ষড়যন্ত্র কেমনভাবে করা হয়েছিল।

বন্ধুগণ,

এখন ডবল ইঞ্জিন সরকারের ক্রমাগত প্রচেষ্টায় এই অঞ্চলে উগ্র-সন্ত্রাসবাদ এবং নিরাপত্তাহীনতার আগুন আর জ্বলছে না। এর পরিবর্তে গোটা মণিপুরে শান্তি এবং উন্নয়নের আলো রয়েছে। সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতে হাজার হাজার নবীন প্রজন্মের মানুষ অস্ত্র সমর্পণ করে উন্নয়নের মূল ধারায় সামিল হয়েছেন। অনেক দশক ধরে যে চুক্তিগুলির প্রত্যাশা ছিল, আমাদের সরকার সেই ঐতিহাসিক চুক্তিগুলিও বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছে। মণিপুর ‘ব্লকেড স্টেট’ থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য পথ খুলে দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হয়ে উঠেছে। আমাদের সরকার পাহাড় ও উপত্যকার মাঝে খনন করা গর্তগুলি বোজানোর জন্য ‘গো টু হিলস’ আর ‘গো টু ভিলেজ’, এ ধরনের অভিযান শুরু করেছে।

এই প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে আপনাদের এটা মনে রাখতে হবে যে কিছু মানুষ ক্ষমতা দখলের স্বার্থে মণিপুরকে আবার অস্থির করে তুলতে চায়। তাঁরা আশায় দিন গুণছেন কখন আবার সু্যোগ পাবেন, কখন আবার অশান্তি খেলা খেলবেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে মণিপুরের জনগণ তাঁদের চিনে ফেলেছেন। এখন মণিপুরের জনগণ এ রাজ্যের উন্নয়নকে আর থামতে দেবেন না। মণিপুরকে আরও একবার অন্ধকারের দিনগুলিতে ফিরে যেতে দেবেন না।

বন্ধুগণ,

আজ দেশ ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’-এর মন্ত্র নিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আজ দেশ সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমে, সকলের উন্নতির  ভাবনা নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছে। সকলের জন্য কাজ করছে, কোনরকম পক্ষপাতিত্ব না করে সমানভাবে কাজ করছে। একবিংশ শতাব্দীর দশক মণিপুরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ববর্তী সরকারগুলি অনেক সময় নষ্ট করেছে। এখন আমাদের আর একটি মুহূর্তও নষ্ট করলে চলবে না। আমাদের মণিপুরে স্থিরতাও বজায় রাখতে হবে, আবার রাজ্যটিকে উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় পৌঁছেও দিতে হবে, আর এই কাজ আমাদের ডবল ইঞ্জিনের সরকারই সবচাইতে ভালোভাবে করতে পারে।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মণিপুরের এরকম ডবল ইঞ্জিনের সরকারের মাথার ওপর আপনাদের আশীর্বাদ বজায় রাখবেন। আরও একবার আজকের অনেকগুলি নানামুখী প্রকল্পের জন্য মণিপুরবাসীদের, আমার প্রিয় মণিপুরের ভাই ও বোনেদের অনেক অনেক শুভকামনা।

থাগতচরী!!!

ভারতমাতার - জয়!!

ভারতমাতার - জয়!!

ভারতমাতার - জয়!!

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1787542) Visitor Counter : 307