প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

'আত্মনির্ভর নারী শক্তি সে সংবাদ' অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের ইংরেজি তর্জমার বাংলা অনুবাদ

Posted On: 12 AUG 2021 5:12PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১২ আগস্ট, ২০২১

নমস্কার,
দেশ যখন স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উদযাপন করছে তখন এই অনুষ্ঠানের অত্যন্ত তাৎপর্য রয়েছে। আমাদের মহিলা শক্তি আগামী বছরগুলিতে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে নতুন উদ্যম গ্রহণ করতে চলেছেন। তাই আপনাদের সঙ্গে কথা বলে আমিও অনুপ্রাণিতবোধ করছি। আজকের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার অনেক সহকর্মী, রাজস্থানের শ্রদ্ধেয় মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরা, সাংসদরা, বিধায়করা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সহ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত কোটি কোটি বোন ও কন্যারা দেশের প্রায় ৩ লক্ষ জায়গা থেকে যোগ দিয়েছেন।
ভাই ও বোনেরা,
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বোনেদের সঙ্গে যখন কথা বলি, তখন আমি তাদের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস রয়েছে তা অনুভব করি। আপনারা নিশ্চয় এটা লক্ষ্য করেছেন এদের মধ্যে এগিয়ে চলার তাড়না রয়েছে, কিছু করার অদম্য ইচ্ছা রয়েছে এবং এটা নিঃসন্দেহে আমাদের সকলের কাছে প্রেরণাদায়ক। এধরণের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিক ইচ্ছা সারা দেশজুড়ে মহিলাদের মধ্যে প্রাণশক্তির প্রতিফলন ঘটায়।
বন্ধুগণ,
করোনার সময় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে আমাদের বোনেরা যেভাবে দেশবাসীর সেবা করেছেন, তা অভূতপূর্ব। মাস্ক তৈরি, স্যানিটাইজার উৎপাদন এবং দুঃস্থ মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতা প্রচারে আপনাদের অবদান নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। আমি দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য একই সঙ্গে এক সুস্থ-সবল পরিবার গড়ে তুলতে সমান ভাবে প্রয়াসী হওয়ার জন্য কোটি কোটি বোনেদের অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
মহিলাদের মধ্যে শিল্পোদ্যোগের সুযোগ আরও প্রসারিত করতে এবং আত্মনির্ভর ভারত গঠনের দৃঢ় সংকল্পে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য বিপুল পরিমাণ আর্থিক সাহায্যের সংস্থান করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং মহিলা কৃষক সংগঠনগুলিকে ১,৬০০ কোটি টাকার বেশি হস্তান্তরিত করা হয়েছে। রাখি বন্ধনের আগে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ হস্তান্তরিত হওয়ার ফলে নিশ্চিয় তাদের জীবনে খুশি আসবে এবং ব্যবসায়িক কাজকর্মে আরও প্রসার ঘটবে। আপনাদের সকলকে আমার শুভকামনা।
বন্ধুগণ,
স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি এবং দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা আজ গ্রামীণ ভারতে এক আমূল পরিবর্তনের সূচনা করেছে। সূচনার এই যাত্রাপথে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি মশাল বাহক হয়ে উঠেছে। মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির এই প্রয়াস গত ৬-৭ বছরে আরও নিবিড় হয়েছে। দেশে প্রায় ৭০ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের ৮ কোটি বোন যুক্ত রয়েছেন। এমনকি, গত ৬-৭ বছরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি বেড়েছে। একই ভাবে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে আমাদের বোনেদের অংশগ্রহণও তিন গুণ বেড়েছে। তবে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূ্র্ণ কারণ, বহু বছর ধরে আমাদের বোনেদের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। যখন আমাদের সরকার গঠিত হয় তখন আমরা এটা জানতে পারি যে, আমাদের এমন কোটি কোটি বোন রয়েছেন যাদের কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। এর ফলে তারা বহু বছর ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সুবিধার বাইরে থেকে গিয়েছেন। তাই আমরা জনধন যোজনার অ্যাকাউন্ট খোলার এক বিরাট অভিযানের সূচনা করি। আজ সারা দেশে ৪২ কোটির বেশি জনধন অ্যাকাউন্ট রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই জনধন অ্যাকাউন্টগুলির মধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশ অ্যাকাউন্টধারী আমাদের মা ও বোনেরা। এই অ্যাকাউন্টগুলিতে কয়েক হাজার কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য হিসেবে জমা করা হয়েছে। একটা সময় ছিল যখন আমাদের মা-বোনেরা সামান্য সঞ্চিত অর্থ রান্না ঘরে কোথাও লুকিয়ে রাখা বাক্সে জমা করতেন। বহু পুরানো এই রীতি এখন ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে এবং রান্না ঘরে লুকিয়ে রাখার পরিবর্তে সেই টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে তারা জমা করছেন।
ভাই ও বোনেরা,
আমরা একদিকে যেমন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছি, অন্যদিকে তেমনই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার পদ্ধতিও সরল করেছি। এর ফলে, লক্ষ লক্ষ মহিলা শিল্পোদ্যোগী মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে কোন গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ সহায়তা পেয়েছেন। একই ভাবে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিও গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ সুবিধা পেয়েছেন। জাতীয় জীবন-জীবিকা মিশনের মাধ্যমে আমাদের বোনেদের যে সহায়তা দেওয়া হয়েছে, তা বিগত সরকারগুলির তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে কোনরকম গ্যারান্টি ছাড়াই প্রায় ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের বোনেদের সততা ও পারদর্শিতার কথা উল্লেখ করা অত্যন্ত জরুরী। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি গত ৭ বছরে ব্যাঙ্ক লোনের অর্থ পরিশোধ করে এক অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। গিরিরাজজী যেমন জানালেন, একটা সময় ছিল যখন ব্যাঙ্ক ঋণের প্রায় ৯ শতাংশই ঋণ খেলাপি হত। অন্য ভাবে বলতে গেলে, ঋণের এই অর্থ আর কখনও পরিশোধই হত না। এখন ঋণ খেলাপি ৯ শতাংশ থেকে কমে প্রায় আড়াই শতাংশ হয়েছে। আজ সারা দেশ আপনাদের শিল্পোদ্যোগী মানসিকতা ও সততার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। তাই আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর সেটি হল, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি আগে কোন গ্যারান্টি ছাড়াই ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ সহায়তা পেত, এখন ঋণ সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। আগে এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, ঋণের জন্য ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করার পর, ব্যাঙ্ক থেকে আপনাকে বলা হয়েছে ঋণের সঙ্গে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করতে এবং অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা জমা দিতে। এখন এরকম ব্যবস্থা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরকম একাধিক উদ্যোগের ফলে আপনারা এখন থেকে আরও বেশি উদ্যোগী হয়ে আত্মনির্ভর অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবেন।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকীতে নতুন লক্ষ্য স্থির করা এবং নতুন উদ্যোমে এগিয়ে চলার সময় এসেছে। তাই বোনেদের সমবেত শক্তিকেও নতুন উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে চলতে সাহায্য করতে হবে। সরকার এমন এক অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে সর্বদাই সচেষ্ট রয়েছে যাতে আমাদের বোনেরা সমৃদ্ধির সঙ্গে  গ্রামের সম্পর্কও আরও নিবিড় করতে পারে। কৃষি ও কৃষি ভিত্তিক শিল্প এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে চিরকালই মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে অপার সম্ভাবনার সুযোগ করে দিয়েছে। গ্রামগুলিতে হিমঘর শৃঙ্খল গড়ে তোলার জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে, কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে, দুধ অপচয় কমাতে প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে, ফলমূল ও শাক-সব্জি প্রক্রিয়াকরণের কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে, এধরণের এমন অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি বিশেষ তহবিলের সাহায্য নিয়ে এধরণের কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারে। এর ফলে, গোষ্ঠীর সদস্যরা এধরণের কেন্দ্র থেকে আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন এবং ন্যায্য মূল্যে এধরণের কেন্দ্র অন্যদের ভাড়ায় দিতে পারবেন। আমাদের সরকার মহিলা কৃষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং তাদের আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ সম্পর্কে সচেতন করে তুলছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ কৃষক এবং গবাদি পশুপালক বোনেরা লাভবান হয়েছেন। কৃষিতে নতুন সংস্কার না কেবল দেশের কৃষি ক্ষেত্র এবং আমাদের কৃষকদের সাহায্যই করবে না, সেই সঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির কাছেও বিপুল সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করবে। এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিও কৃষকদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারবে। সেই সঙ্গে বাড়ি থেকেই বিভিন্ন ধরণের ডালশস্য বন্টন করতে পারবেন। করোনার সময় আমরা এরকম অনেক দৃষ্টান্তের সাক্ষী থেকেছি। এখন আপনারা সরাসরি মাঠ থেকে শস্য সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করতে পারেন অথবা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট বা প্যাকেজিং ইউনিট গড়ে তুলে তা বাজারে সরাসরি বিক্রিও করতে পারেন। অনলাইন ব্যবস্থা এখন বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তাই এই ব্যবস্থাকে আপনারাও সদ্ব্যবহার করতে পারেন। অনলাইন সংস্থাগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করে আপনারা সহজেই প্যাকেটজাত খাবার সরবরাহ করতে পারেন। আপনাদের পাঠানো এই প্যাকেটজাত খাবার অনলাইন সংস্থাগুলি শহরে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেবে। সর্বোপরি আপনি জেম পোর্টালের সাহায্য নিতে পারেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি পণ্য সামগ্রী সরাসরি সরকারকেও বিক্রি করতে পারেন।
বন্ধুগণ,
সরকার এখন দেশেই খেলনা উৎপাদনে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং সবরকম সহায়তা প্রদান করছে। প্রকৃত পক্ষে আমাদের আদিবাসী অঞ্চলের বোনেরা পরম্পরাগত ভাবে খেলনা তৈরির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। তাই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির কাছেও খেলনা তৈরিতে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। একই ভাবে দেশ থেকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক বর্জনে অভিযান চলছে। আমরা সদ্য জানতে পেরেছি যে, তামিলনাড়ু থেকে আমাদের বোনেরা একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক বর্জনে বড় ভূমিকা পালন করছেন। তাই এধরণের কাজে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিও বড় ভূমিকা নিতে পারে। কেবল একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক বর্জনের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলাই যথেষ্ট নয়, সেই সঙ্গে বিকল্প পদ্ধতি খুঁজে বের করতেও কাজ করতে হবে। প্ল্যাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে আপনারা পাটের তৈরি বা অন্যান্য আকর্ষণীয় ব্যাগ ব্যবহার করতে পারি। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে আরও একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার ফলে আপনারা সরাসরি পণ্য সামগ্রী সরকারকে বিক্রি করতে পারবেন। আমি আগেও একথা বলেছি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি সরকারি ই-মার্কেট প্লেস বা জেম ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারে।
বন্ধুগণ,
বর্তমান পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে আমাদের বোন ও কন্যাদের এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। আজ আমাদের বোনেরা আবাসন, শৌচালয়, বিদ্যুৎ, জল, রান্নার গ্যাস প্রভৃতির মত মৌলিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। সরকারও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, টিকাকরণ ও অন্যান্য চাহিদা পূরণের বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন রয়েছে এবং তা পূরণ করতে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। এধরণের মৌলক সুযোগ-সুবিধার ফলে আমাদের মহিলাদের মর্যাদাই কেবল বাড়েনি, সেই সঙ্গে আমাদের কন্যা ও বোনেদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এদের এই আত্মবিশ্বাস খেলার মাঠ থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রেও দেখতে পাচ্ছি। এগুলি সবই আত্মনির্ভর ভারতের ইতিবাচক প্রতীক। এখন আপনারা আপানাদের এই আত্মবিশ্বাস ও প্রয়াসকে অমৃত মহোৎসবের সঙ্গে দেশ গঠনের কাজেও যুক্ত করতে পারেন। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব আমাদের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী থেকে শুরু হয়ে ২০২৩-এর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। ৮ কোটির বেশি বোন ও কন্যাদের সমবেত শক্তি অমৃত মহোৎসবকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। এখন আপনারা আর্থিক দিক থেকে যেমন অগ্রগতি করছেন, তেমনই আপনারা কিছু সামাজিক কাজ গ্রহণ করার ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা করতে পারেন। অবশ্য এর সঙ্গে কোন আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক নেই, কেবল প্রয়োজন সেবার মানসিকতার, যা সামাজিত জীবনে বড় প্রভাব ফেলবে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, আপনারা আপানাদের এলাকায় অপুষ্টির বিষয়ে অভিযান চালিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারেন। আমাদের ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী বোন ও কন্যারা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তা আপনাদের অপুষ্টিদূরিকরণ অভিযান থেকে অনেকটা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। দেশে এখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকাকরণ অভিযান চলছে। সকলকে নিখরচায় টিকা দেওয়া হচ্ছে। তাই যখনই সুযোগ আসবে তখন আপনি টিকা নিন এবং অন্যদেরকেও টিকা নিতে উৎসাহিত করুন।
স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে চলতি বছরের ১৫ আগস্ট থেকে আগামী বছর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন একটি সমাজসেবা মূলক বিষয়টিকে স্থির করে আপনি নিজের গ্রামের জন্য ৭৫ ঘন্টা স্বেচ্ছায় শ্রম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আমি আপনাদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু চাইছি না। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বোনেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, জল সংরক্ষণ, পুকুর ও জলাধারের সংস্কার সম্পর্কে অভিযান চালাতে পারেন। আপনারা মাসে একবার বা দু-বার একজন চিকিৎসককে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন এবং সভা ডেকে সকলকে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারেন। এধরণের প্রয়াস আমাদের বোনেদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এবং তারা নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হয়ে উঠবেন। শিশুদের যত্ন ও পরিচর্যা সম্পর্কে বক্তৃতার আয়োজন করা যেতে পারে। আমি মনে করি, আমাদের বোনেরা যারা এধরণের সমাজ সেবার কাজে যুক্ত রয়েছেন, তারা অন্য কোথাও গিয়ে একই ধরণের সমাজ সেবামূলক কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসতে পারেন। এথেকে প্রকৃত পক্ষে তারাই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবেন এবং লাভবান হবেন। সম্ভব হলে আপনারা কোন একটি ডেয়ারি প্ল্যান্ট পরিদর্শনে যেতে পারেন বা গোবর থেকে গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্রেও যেতে পারেন। আমরা সদ্য একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক বর্জনের বিষয়ে জয়ন্তীজী কিভাবে কাজ করছেন তা দেখে আসতে পারি। আপনারা সম্প্রতি এটাও জেনেছেন যে, কিভাবে উত্তরাখন্ডের একটি বেকারি বিস্কুট উৎপাদন করছে। আপনারা এই বিস্কুট উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারেন। এতে আপনার খরচ বেশি হবে না, কিন্তু আপনার আত্মবিশ্বাস নিঃসন্দেহে বাড়বে। আমি বলতে চাইছি, আপনি যে কাজ করছেন তার থেকে কিছু সময় বের করে দাতব্য কাজে নিজেকে নিয়োজিত করুন, যাতে সমাজও এটা উপলব্ধি করতে পারে যে, আপনি সকলের জন্য কিছু সেবার উদ্যোগ নিয়েছেন।  
আপনাদের প্রয়াসের মধ্যদিয়ে অমৃত মহোৎসবের সাফল্যের মধু সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে এবং আখেরে সারা দেশ উপকৃত হবে। আপনি কল্পনা করুন আট কোটি মহিলার সমবেত শক্তির পরিনতি কী হতে পারে এবং দেশকে তারা কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। আমি এই ৮ কোটি মা ও বোনেদের একথা বিবেচনা করার আহ্বান জানাই যাতে তারা নিজেদের গোষ্ঠীর যেসমস্ত সদস্য পড়তে বা লিখতে পারেন না, তাদের স্বাক্ষর করে তুলতে পারেন। এজন্য আপনাদের অনেক কিছু করতে হবে না, কেবল সামান্য একটি প্রয়াসই যথেষ্ট। আর এই সামন্য প্রয়াস একত্রিত হয়ে এক মহৎ সেবার রূপ নেবে। পরবর্তী সময়ে স্বাক্ষর এই মা-বোনেরাই আবার অন্যদের শিক্ষা দেবে। তাই আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে। আপনাদের কথা আমি যখন শুনছিলাম তখন আমি এটা অনুভব করেছি যে, আপনাদের কাছ থেকে আমিও অনেক কিছু শিখতে পারি। জটিল ও কঠিন পরিস্থিতি সত্বেও আপনারা আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা সত্বেও আপনারা হাল ছেড়ে দেননি, বরং নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের মা ও বোনেদের প্রতিটি কথাই সকলের কাছে অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। আপনাদের কথা শুনে আমিও অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করি। আসন্ন রাখি বন্ধনের জন্য আপনারা আশীর্বাদ করুন এবং আমাদের আরও কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করুন। আমি আগাম আপনাদের রাখি বন্ধনের শুভেচ্ছা জানিয়ে কথা শেষ করছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
বিশেষ দ্রষ্টব্য :  এটি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের খসড়া অনুবাদ। মূল ভাষণ হিন্দিতে দেওয়া হয়েছিল।

CG/BD/AS



(Release ID: 1747818) Visitor Counter : 540